রৌদ্দুরে প্রেমের বৃষ্টি পর্ব-১৮+১৯

0
3122

#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ১৮
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)

বাসর ঘর নামক ফুলের সাম্রাজ্য বসে আছি আমি৷ হালকা অন্ধকার ঘরের মতো আমার মনের প্রতিটি কোণে অস্বস্তি নামক বাক্যটি ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে৷ বেডের প্রতিটা কোণায় কোণায় বিভিন্ন ফুল দিয়ে সাজানো৷ আর রুমের প্রত্যেকটা জায়গায় মোমবাতি আর প্রদীপ দিয়ে সাজানো৷ প্রায় এিশ মিনিট আগে আমাকে কাব্য ভাইয়ার রুমে বসিয়ে দিয়ে গেছে সবাই৷ ভয় হচ্ছে…এতোদিন ঠিক ছিলো সব তবে এই ঘরটায় আসার পর থেকে কেমন যেন লাগছে৷ বাইরে সবার হই হুল্লোড়ের শব্দ ভেসে আসছে৷ তার মধ্যে সিনান,রাহুল ভাইয়ার বলা কথায় বুঝতে পারলাম,টাকা না দিলে বাসর ঘরে ঢুকতে দিবে না তারা৷ কাব্য ভাইয়া পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন৷ আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম৷ এইভাবে টাকা চাওয়া চাওয়ি চলতে থাকলে সময় কেটে যাবে৷ সাদা রঙের একটা ফুল থেকে সুন্দর মন মাতানো সৌরভ ভেসে আসছে৷ সেই ফুল হাতে নিতেই দরজা খোলার শব্দে কেঁপে উঠি৷ জড়োসড়ো হয়ে বিছানার চাঁদর খামচে ধরে বসে আছি৷ এতো জলদি ছেড়ে দিলো ভেবেই অবাক হচ্ছি । আমি কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি না একদম৷ রুমের মধ্যে পায়ের আওয়াজ পাচ্ছি৷ ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজ পেতেই চোখ তুলে তাকিয়ে উনাকে একদম আমার মুখের সামনে দেখতে পেয়ে চিল্লানি দিতেই আমার মুখ আটকে ধরেন উনি৷

–‘ এই… এই স্টপ! চিল্লাছিস কেন? ‘
তার হাত আমার মুখের উপর থাকার জন্য দম বন্ধ হয়ে আসছে৷ আমার অবস্থা বুঝতে পেরে উনি হাত সরাতেই আমি হাফ ছাড়ি৷ রাগী ভাবে বললাম,

–‘ মারতে চান আমাকে? এইভাবে কেও ধরে বুঝি! আর আপনি..না ওয়াশরুমে গেলেন৷ ”

–‘ তুই কি জানিস, তোকে অপরুপ লাগছে৷ ‘
তার মোহময় ঘোর লাগানো কন্ঠের কথা আমার দুনিয়ায় মূহুর্তেই হাজার খানিক ভালোলাগার অনুভূতির প্রকাশ পেল৷ লজ্জায় মিইয়ে গেলাম আমি৷ আমার থুতনিতে উনার হাত দিয়ে উঁচু করে ধরে বললেন,

–‘ তুই নিজেকে দেখেছিস? ‘
আমি চোখ বন্ধ করে বসে আছি৷ আজ অন্যরকমের লাগছে৷ উনি আবার আদুরে ভাবে বললেন,
–‘ এই নীতু,দেখেছিস? তোকে আজ অপরুপ
লাগছে৷ ‘

–‘ ন…না.. দেখি নি৷ ‘

উনি আমার কাছে থেকে সরে গেলেন৷ কিছুক্ষণ নিস্তব্ধতা৷ তাকিয়ে দেখি উনি ড্রেসিং টেবিলের সামনে কিছু একটা করছেন৷ আমি কাঁপা কন্ঠে বললাম,
–‘ আমির আজ আসে নি কেন? তার তো পুলিশ নিয়ে আসার কথা ছিলো৷ ‘
–‘ আসে নি বলে তোর খারাপ লাগছে বুঝি? ‘
উনি পিছন ফিরেই উত্তর দিলেন৷ আমি নিজের ঠোঁট জিভ দিয়ে ভিজিয়ে বললাম,
–‘ উঁহু… নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে তাই বলে জিজ্ঞেস করছি৷ ‘
–‘ কমিশনার এসেছিলো! আমার গেস্ট হিসেবে৷ আর আমির বর্তমান জেলে আছে৷ তোদের কোম্পানিতে যে কেস করেছিলো সেটা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে৷ ‘

বাবার কথা মনে হতেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো৷ যাক এখন একটু টেনশন মুক্ত হবে তার৷ উনি ধীর পায়ে আমার দিকে আগাচ্ছেন৷ আমি উনার পায়ের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে বললাম,
–‘ আমি আমার রুমে যাচ্ছি..! ‘
–‘ কেন? ‘ উনার শীতল কন্ঠের আওয়াজে আবারও কথা আটকে আটকে যাচ্ছে আমার৷ উনি আমার সামনে এসে আবার বসলেন৷ আমি পিছিয়ে যেতেই আমার হাত ধরেন উনি৷ আমি কেঁপে উঠতেই সে মুচকি হাসে৷ আমার সামনে আয়না ধরেন৷ আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকাতেই চোখ দিয়ে ইশারা করেন আয়নার দিকে তাকাতে৷ আমি তাকাতেই আরেক দফা অবাক হয়ে যাই৷ এতোটা নিপুণ ভাবে কেও সাজাতে পারে? হাতে,গলায় ফুলের গহনা ছিলো কিন্তু মাথায় ছিলো সেটা মাএ দেখলাম আমি৷ প্রত্যেকটা জিনিস সুন্দর ভাবে সেট করা৷ কালো আর লাল গোলাপ আমার মাথায়,, খোঁপায় হাত দিতেই উনি বললেন,
–‘ সেখানে গোলাপি আর লাল গোলাপের বাস৷ ‘
আমি নিজের হাতের ফুলগুলো ধরে বললাম,
–‘ আপনি পার্লারে কাজ করতেন? ‘
উনি আমার কথা শুনে কেশে উঠেন৷ আমার দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছেন৷ আমি জোর করে হেসে বললাম,
–‘ না মানে..অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছেন৷ ‘
–‘ সেটা তোকে বলতে বলেছি? ‘
আমি আবার আয়নায় নিজেকে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পরলাম৷ বিয়েতে যে ভাবে সাজার ইচ্ছা ছিলো তার থেকে হাজার গুণ সুন্দর সাজিয়েছেন তিনি আমায়৷ উনি হঠাৎ আয়না সরিয়ে ফেললেন৷ আমার হাত দুটো তার হাতের মধ্যে নিয়ে বললেন,

–‘ আমার রৌদ্দুরে প্রেমের বৃষ্টি হবি? ‘
‘ আমার এক আঁকাশের ডানা মেলা পাখি হবি? ‘
‘ এক পশলা বৃষ্টির স্নিগ্ধতায় মোড়া ভালোবাসা হবি? ‘

আমি উনার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি৷ আজ কেন যেন ওই চোখ দুটো বলে বেড়াচ্ছে, ‘ নীতু তোকে আমি ভালোবাসি৷ ‘

আমি চোখ ফিরাতে পারলাম না৷ তার দিকে তাকিয়ে আছি৷ আমার ঠোঁট কাঁপছে৷ উনি আমার ঠোঁট আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে দিতেই চমকে উঠি আমি৷ আমতা আমতা করে বললাম,
–‘ আমার ভালো লাগছে না..! একদম ভালো লাগছে না৷ আমার যে দম বন্ধ হয়ে আসছে৷ আপনার কথায় কেমন শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে৷ ‘

উনি আলতো করে আমার গালে হাত রাখলেন৷ আমি আবার তার দিকে তাকালাম৷ উনি স্নিগ্ধ কন্ঠে বললেন,
–‘ তোর আর আমার নিয়তি এক তুই জানিস? ‘

আমি দুদিকে মাথা দোলালাম৷ উনি মুচকি হাসলেন৷ আবার বললেন,
–‘ ভিন্ন ভাবে শুরু হওয়া দুনিয়াকে আমি খুব করে চাই..! ‘

আমি চুপ করে তার কথা শুনে চলেছি৷ কথা বলার মাঝেই আমার গালে থেকে হাত সরিয়ে উনি তার পিছনে থেকে তার ডায়েরিটা আনলেন৷ আমার হাতের মাঝে যত্ন করে তুলে দিয়ে বললেন,
–‘ আমার যত্নের এই ডায়েরির ভাজে তোকে চাই৷ ‘

আমি তার দিকে তাকিয়ে ডায়েরি হাতে নিতেই উনি আমার কঁপালে চুমু খেলেন৷ আত্মতৃপ্তি! এতোটা ভালোলাগার ছোঁয়া আমার জীবনে এই প্রথম মনে হচ্ছে আমার৷ আমি স্থির হয়ে বসে আছি৷ ধীরে ধীরে বললাম,
–‘ কিন্তু ডায়েরি তো আপনার৷ ‘
–‘ উহু! তোর৷ ‘
আমি ডায়েরি খুলতেই উনি গম্ভীর ভাবে বললেন,
–‘ তোকে দিয়েছি…তার মানে এই না এখনই খুলতে হবে৷’
–‘ মানে? ‘
–‘ ঘুমিয়ে পড় নীতু৷ ‘

উনি আবার আমার দিকে ঝুঁকলেন৷ গভীর ভাবে চুমু খেলেন৷ হৃদপিন্ড তড়িৎ গতিতে ধুক করে উঠলো৷ আবার সেই ভালোলাগার ছোঁয়া৷ আমায় ছেড়ে উনি কিছু না বলেই বারান্দায় চলে গেলেন৷ একটু পর গিটারের আওয়াজ তারপর আমায় ডাকলেন উনি৷ আমি চমকে উঠে ভারী লেহেঙ্গা ধরে উঠে তার কাছে যাই! আমি তার পাশে দাড়াতেই পাশে থাকা বেতের মোড়ায় বসতে বললেন৷ আমি বসতেই উনি গেয়ে উঠেন,

~আমি চোখ বুজেই সপ্ন দেখেছি…
সেই সপ্নের আলোতে তোমায় খুজেছি…!
আমি না বুঝেই ভালোবেসেছি
~রৌদ্র ছায়া কাব্যে তোমায় খুজেছি……
বলা হলো না কতো না বলা কথা!
জানি না তুমি আসবে কি ফিরে আর……’

উনি থেমে গেলেন৷ আমি মোহে পড়ে গিয়েছিলাম তার কন্ঠের৷ হঠাৎ থেমে যেতেই আমি নড়েচড়ে বসি৷ উনি বললেন,

— ‘ দরজা খুলে তোর রুমে চলে যা নীতু৷ ‘
আমি অবাক হয়ে গেলাম৷ সাথে কেমন অপমান ফিল হলো৷ এইভাবে কেও বলে এতো সুন্দর একটা মূহুর্তে৷ আমি অভিমানের সুরে বললাম,
–‘ কেন? ‘
উনি গিটার পাশে রেখে বললেন,
–‘ আমার শূন্যতা মেনে নিতে পারবি হঠাৎ করে? তাই দূরে থাকাই ভালো৷ ‘

আমার বুকের মাঝে হু হু করে উঠলো৷ উনার দূরত্ব কথাটা কেমন বিষাদময় লাগলো আমার কাছে৷ আমার কি হলো জানি না, উনার হাত দুটো ধরলাম আমি৷ তিনি চমকে উঠে তাকালেন৷ আমি বললাম,

–‘ শূন্যতা পূরণ করার জন্য আপনাকে চাই কাব্য ভাই৷ শূন্যতা কথাটা আমার বড্ড ভারী লাগছে যে৷ ‘

মূহুর্তেই সেই চমকানো ভাবটা কেটে গিয়ে তার মুখে হাসি ফুঁটে উঠলো৷
–‘ বাসর বাসর ফিলিংস হচ্ছে তোর? ‘

আমি উনার হাত ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে গিয়ে বললাম,
–‘ আপনি অসভ্য কাব্য ভাই…প্রচন্ড পরিমাণের অসভ্য৷ ‘

উনি হঠাৎ আমায় একদম কাছে টেনে নিলেন৷ আচমকা এমন হওয়ার আমি তার শার্ট খাঁমচে ধরি৷ উনি আমার ঘাড়ে মুখ গুজে ফিসফিস করে বললেন,
–‘ অসভ্য হওয়া তো শুরু মাএ! তোর যে উপায় নেই নীতু…! ‘

আমি উনার থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করলাম৷ উনি আমার কোমড়ে হাত রেখে আরেকটু জড়িয়ে ধরলেন৷ আমি কাঁপা কন্ঠে বললাম,
–‘ ছা…ড়ুন কাব্য ভাই… আমার ভালো লাগছে না৷ ‘
উনি ছেড়ে দিলেন আমায়৷ চোখ তুলে তাকালেন না আমার দিকে৷ আমার কেমন খারাপ লাগা শুরু হলো৷ উনি আবার গম্ভীর ভাবে বললেন,
–‘ আ’ম সর‍্যি…তুই ঘুমিয়ে পড়৷ ‘

আমি আর কিছু বলার আগে উনি উঠে সোফায় শুয়ে পড়লেন৷ আমি কি করবো? ভেবে পাচ্ছি না যে! উনার কি খারাপ লাগলো? কিন্তু এমন টা তো হওয়ার ছিলো না৷ আমি বারান্দায় বসে আছি৷ এখান থেকে কাব্য ভাইয়ার মুখ দেখা যাচ্ছে৷ নিষ্পাপ তার মুখ! চুল গুলো ছুঁয়ে যাচ্ছে তার কপালের মাঝে৷ তার কাছে আসা অস্বস্তি দিলেও ভালোলাগার তীব্র গন্ধ ছুটে চলে আমার মাঝে৷ আমি ধীর পায়ে উনার কাছে সামনে গিয়ে বসি৷ গভীর ভাবে তাকে দেখে চলেছি…! হুট করে আমি উনার কঁপালে পড়ে থাকা চুল গুলো সরিয়ে চুমু দিয়ে বসি৷ উনি ঘুমের মাঝেই কঁপাল কুঁচকে ফেললেন৷ আমি নিজের করা কাজে নিজেই লজ্জায় মরে যাচ্ছি৷ ইশ! উনি কি ভাববেন?

চলবে….

#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ১৯
#রুবাইদা_হৃদি(ridy rahman)
চারদিকে ঘুমন্ত নগরী৷ আর এইদিকে আমি নির্ঘুম৷ আমায় আঁকড়ে ধরে শুয়ে আছেন কাব্য ভাইয়া৷ আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই উনি আরো কাছে এগিয়ে আসেন৷ আর অল্প একটু জায়গা বাকি সোফার৷ আরেকটু এগিয়ে আসলে নির্ঘাত আমার উপরে পড়বেন৷ তার কঁপালে চুমু দেওয়া মহা অন্যায় হয়েছে৷ যদি আমি চুমু না দিতাম তাহলে উনার হাতের বাঁধনে আটকা পড়তাম না৷ উফ! কি জ্বালায় পড়লাম,, সারাদিনের বিভিন্ন কাজে অনেক ক্লান্ত হয়েছে নিশ্চয়৷ এইজন্য কাঁচা ঘুম থেকে উঠানোর ইচ্ছা মোটেও করছে না আমার৷ তার উষ্ণ নিশ্বাস আমার মুখে আছড়ে পড়ছে৷ অন্য অনুভূতি! সে ঘুমে তবুও মনে হচ্ছে, তার নিশ্বাস গুলো দিয়ে আমায় ইচ্ছা করেই জ্বালাচ্ছেন৷ তার খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলো হঠাৎ ছুঁয়ে দেওয়ার ইচ্ছা হলো৷ কানের পিঠের সেই তিল টাকেও ছুঁতে ইচ্ছা হচ্ছে৷ তার গালে হাত বুলাতেই আমার হাতের তালুতে সুরসুরি লাগতেই হাত সরিয়ে নেই আমি৷ আর উনি নড়েচড়ে উঠেন৷ আমি আবার চুপ করে বসে থাকি৷ ঘুমের মাঝেও সে হাসে…! সেই মুচকি হাসি। তার জাম রাঙা ঠোঁট গুলো শুকিয়ে গিয়েছে৷ আমি আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে দিতেই উনি চুমু দেন৷ আবারো বিদুৎ খেলে গেলো আমার মাঝে আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে সাথে সাথেই হাত সরিয়ে নেই৷ সপ্ন টপ্ন দেখছেন নাকি উনি? আমি আবার তাকাতেই দেখি মুচকি হাসছেন। আমি এবার নিজের ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি। আদেও কি উনি ঘুমিয়েছেন বোঝার জন্য আবার একটু উনার গালে হাত রাখি। না ..! সত্যি ঘুমিয়েছেন। নীতু,সকাল ছাড়া তোর ছাড়া পাওয়ার উপায় নেই। কি দরকার ছিলো উনার কাছ আসার? তার মুখ আর আমার মুখের মাঝে দু ইঞ্চি পরিমাণের জায়গা খালি আছে কিনা সন্দেহ। থেকে থেকে আমার কঁপালে তার ঠোঁট ছুয়ে যাচ্ছে । এইবার আমার অস্বস্তির পরিমাণ বেড়ে গেলো হু হু করে । কেমন লজ্জা লাগছে সাথে অনুভবের নিদারুণ সূক্ষ্ম ভালোলাগার ছোয়া ।তার ঠোঁট জোড়া আবার আমার কঁপালে ডিপ ভাবে লাগতেই আমি কেঁপে উঠি। উনি আবার মুঁচকি হাসছেন। অসভ্য মানুষ..! তারমানে ঘুমান নি। আমি রাগীভাবে বললাম,

–‘ আপনি ঘুমান নি ? ছাড়ুন আমায় …! কি মিথ্যুক ভাবা যায়,ঘুমের ভান ধরে আছে। ‘

উনি ছাড়লেন না আরো একটু আঁকড়ে ধরলেন আমায়। আমি উনার বুকের মধ্যে হালকা ধাক্কা দেই যাতে ছেড়ে দেন আমায়। উহু..! সে না ছেড়ে আরো কাছে টেনে নিলেন আমায়। আবার সেই অনুভূতি ! বুকের বা পাশে হৃদপিন্ডের ধুক ধুক আওয়াজ । শুধু আমার না কাব্য ভাইয়ার বুকের বা পাশের যন্ত্রটাও আমার যন্ত্রের মতোই সমান তালে ধুকপুক করছে । উনার অস্বস্তি হচ্ছে আমার মতো? আমার ভাবনার মাঝেই উনি চোখ বন্ধ করে উত্তর দিলেন,

–‘ হার্ট দুটোকে বল, তাদের মালিকদের রোমান্স করতে দিতে । এতো ধুক ধাক শব্দ করলে তাদের মালিকদের রোমান্সে ব্যাঘাত ঘটে তারা জানে না?অশিক্ষিত হার্ট …!’

তার এমন কথা শুনে আমি হেসে উঠি। হার্ট ও অশিক্ষিত হয় বুঝি?
–‘ হ্যাঁ হয়! মোর হৃদপিন্ডের রাণী। ‘ উনি আমার মুখের উপর ফুঁ দিয়ে বললেন কথাটা । আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম মূহুর্তেই । কাঁপা ভাবে বললাম,

–‘ অশিক্ষিত হোক আর শিক্ষিত … তার মালিক কিন্তু দারুণ অভিনেতা । ‘
আমার কথা শুনে উনি হা হা করে হেসে উঠলেন। আমি চোখ পিটপিট করে খুলে সেই উঁচু দাঁতের হাসি দেখলাম। হাসলে তাকে এতো সুন্দর লাগে কেন? আমার কেমন হিংসে হয়।

–‘ আমার সব তো তোর ,তাহলে হিংসে করিস কেন ? হিংসুটে।’
আমি কম্পিত চোখে তার দিকে তাকালাম। মনে কথা উনি শুনলেন কি করে।
–‘ আমার মনের কথা আপনি শুনলেন কি করে ?’
–‘ মনে মনে বলেছিস বুঝি? ‘
–‘ হ্যাঁ ,শুনলেন কি করে? এই আপনি কি ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে ,পার্লার আর মনোবিজ্ঞানী হওয়ার চেষ্টা করছেন?’

আমার কুচকানো কঁপালের মাঝে আবার কিস করে বললেন,
–‘ বউয়ের জন্য তো আমি সব হতে রাজী ।’

তার কথায় আমার চোখে মুখে লজ্জার আবরণ পড়লো। লজ্জায় মিইয়ে গেলাম। এখন তার কথা গুলো শুনে মনে হচ্ছে,’ তার কথা শোনার জন্যও তাকে আমার চাই ।’

একদিনের ব্যবধানে তাকে এতোটা কাছের কেন মনে হচ্ছে? এইটা কি কবুল বলার জন্য? হ্যাঁ, ওই একটা শব্দের জোড় অনেক। যেটা সহজেই একটা মানুষের আত্মার সাথে অন্য একটা মানুষের আত্মার মিল করিয়ে দেয়। হাজার অজানা কারণ এই একটা শব্দের কাছে ফিকে মনে হয়। আমি হাসলাম। জানি না ,তবে আজ তাকে নিজের বলে মনে হচ্ছে ।

~” তোর নামের শহরের অজানার ভীরে, ”
রাখবি কি আমায়…..!
ওওও রাখবি কি আমায়?’
~” ছোট শহর জানে ,আমার অজানা মনের কথা,
সেই শহরের ভীড়ে খুজে পেয়েছি তোর নামের কথা…! ”
~” ওওওও রাখবি কি আমায়?
তোর নামের শহরের অজানার ভীরে,,
রাখবি কি আমায়? ”
~” ভালোবাসার ছোট শহরে, তোর ঠোঁটের হাসির
অজানার কারণে ….!
ওওওও রাখবি কি আমায় !”
~ ” তোর ভালোবাসার দ্বীপ্রহরে, থাকবো তোর মনের অজানায়,
ওওও রাখবি কি তোর মনের কোঠায়,,,
থাকবো আমি তোর শহরের ভালোবাসা মোড়া পাতায়…!”
~ ” ওওও রাখবি কি আমায় ?”
( গানটা কিন্তু আমি লিখেছি🙃)

আমি থমকে গেলাম..!পুরোটা গান আমার দিকে তাকিয়ে গেয়েছেন উনি খালি গলায় । প্রত্যেকটা কথা যেন আমাকে নিয়ে লেখা । আমার চোখের কোণ বেয়ে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়তেই উনি চোখের নিচে চুমু দিলেন। পানিটুকু গড়াতে দিলেন না। আমি কেঁপে উঠে তার চোখের দিকে তাকালাম। একরাশ লজ্জা আমায় ঘিরে ধরলো মূহুর্তেই। কি করবো ভেবে পেলাম না। উনার বুকের মাঝেই মুখ লুকাতেই উনি টাল সামলাতে না পেরে আমার উপর পড়ে গেলেন । আচমকা এমন হওয়ায় ভয় পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরি আমি । ভাগ্যিস আমার উপরে পড়েন নি । তাহলে আজ চ্যাপ্টা হওয়া থেকে কেও বাঁচাতে পারতো না আমায়। উনি হাসছেন । আমি তার বুক থেকে মাথা উঠিয়ে তাকালাম। উনি হাসতে হাসতেই উত্তর দিলেন,

–‘ লজ্জা পেলে তোকে রেড ভেলভেট কেক লাগে জানিস ? একদম টুপ করে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা হয়। ‘

আমি আবার লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। উনি আবার বললেন ,
–‘ এখন কিন্তু সত্যি সত্যি খেয়ে ফেলবো । ‘

আমি অন্যদিকে মুখ ঘুরালাম । শীতল ভাবে বললাম,
–‘ আমার উপরে থেকে উঠুন ।’
–‘ আজ সারারাত এইভাবে থাকবো । ‘
–‘ আমার ঘুম পাচ্ছে…!’
–‘ ঘুমিয়ে পড় !’
–‘ প্লিজ…’
উনি আমার মুখ তার দিকে ঘুরিয়ে বললেন,
–‘ এক শর্তে উঠতে রাজী !’
আমি থেমে থেমে বললাম,
–‘ কি শর্ত?’
উনি এক গাল হেসে বললেন, ‘ আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে আমার ইজ্জত হরণের চেষ্টা করেছিস …! ‘

আমি হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে বলালাম,
–‘ একদম না, আপনার কঁপালে মশা ছিলো সেটা সরিয়েছি। ‘
উনি নাক ছিটকে বললেন,

–‘ ইয়াক ছি:! নীতু তুমি মশা তাড়ানোর বদলে খেয়েছিস !’
–‘ আপনার মাথা …! আমি তো চু…’

নিজের কথার জালে নিজে ফেঁসেছি । উনি হাসলেন আবার । ঘর কাঁপানো হাসি। আমি আবার লজ্জায় পুরো মুখ হাত দিয়ে ঢেকে ফেললাম। উনি হাত সরিয়ে দিয়ে বললেন,
–‘ ঘুমের মাঝে যে কাজ করেছিস সেইটা এখন করতে হবে। গুনে গুনে পাঁচটা তাও,,,

উনি নিজের ঠোঁট ইশারা করতেই আমি ব্যাথাতুর কন্ঠে বললাম,
–‘ আমার বুকে ব্যথা করছে ! ‘
উনি আতংক নিয়ে তাকালেন। তড়িঘড়ি করে উঠে বসলেন। ভয় মাখা কন্ঠে বললেন,

–‘ গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা? ঔষুধ এনে দিবো । ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করিস না কেন? এই জন্যই তো ব্যথা করছে । ‘

উনার কেয়ারিং কথা শুনে কেমন ভালোলাগার অনুভূতি ছেয়ে গেলো। আমি তাও নিজের ভালোলাগা দূরে সরিয়ে উঠে দাড়িয়ে পড়লাম। উনিও আমার সাথে উঠে দাড়াতেই এক দৌড়ে বেডে শুয়ে পড়লাম । উনি তাজ্জব হয়ে দাড়িয়ে আছে! মিথ্যা বুঝতে পেরে হু হা করে হেসে উঠলেন। আমি চোখ খুলে তাকিয়ে আবার বন্ধ করতেই উনি বললেন,

–‘ আজ মিথ্যা বলে পালিয়েছিস..! তবে কাল ? তারপরে? আমার কাছেই আসতে হবে তোর ।’

কথা গুলো শুনেও আমি ঘুমের জন্য প্রস্তুতি নিলাম। উনি আমার পাশে আসতেই আমি বেডের সাথে একদম লেগে শুয়ে থাকি । উনি আমার উপর কাঁথা টেনে দিয়ে বালিশ নিয়ে সোফায় চলে যেতে নিলেই আমি বললাম,

–‘ এতো বড় বেডে এক সাইডে আপনার জায়গা হবে ।’
উনি শুধু হাসলেন। মাঝে কোলবালিশ দিয়ে শুয়ে পড়তেই আমি চোখ খুলে তাকিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলি । নীতু ইউ ফিল ইন লাভ ? ইয়াপ,,আই ফিল লাভ অন হিম ।’
নিজের মনেই কথা গুলো বিরবির করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
__________________________

ড্রাইনিং টেবিলে সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মোস্তাকিম ভাইয়া রুটি মুখে না দিয়ে হাতে নিয়ে মুখের সামনে ধরে বসে আছেন। আর সিনান আর রাহুল ভাইয়া ফিসফাস করছেন । ইরা মুচকি হাসছে । বাবা আর ফুঁফা বাইরে কোথাও একটা গিয়েছেন আর ফুঁপি রান্নায় ব্যস্ত । আমি লজ্জায় মাথা নীচু করে বসে আছি। কারণ,কাব্য ভাইয়া আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছেন। বড়রা কেও নেই তাহলে কি ভাবতো ভেবেই আমার মাটির নিচে ঢুকে যাওয়ার তীব্র ইচ্ছা হচ্ছে। সিনান ভাইয়া দাঁত কেলিয়ে বললেন,

–‘ আহা! আমার বেঁচারা প্রাণপ্রিয় বন্ধু ,সারারাত কাজের জন্য ঘুমাতে পারে নি একদম । তাই খাবার টেবিলে ঘুমাচ্ছে।’

সিনার ভাইয়ার কথার মাঝেই মোস্তাকিম ভাইয়া রুটি মুখে পুড়ে বললেন,
–‘ ওও এই ব্যাপার । আমি তো অন্যকিছু ভেবেছিলাম।’

উনাদের কথা শুনে কাব্য ভাইয়া কে উঠিয়ে পানিতে চুবাতে ইচ্ছা হচ্ছে আমার । ইরা আমার খোঁচা মেরে বলল,
–‘ হাও রোমান্টিক ইয়ার..! ‘
আমি চোখ বড় বড় করে তাকাতেই ও জুস ঢালতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফুঁপি খাবার নিয়ে আসতেই সব চুপ হয়ে যায়। আমি আরেকদফা লজ্জায় পড়ার আগেই ফুঁপি পরিস্থিতি সামলাতে রাগী সুরে বলল,

–‘ কাব্য এই কাব্য…! খাবার টেবিলে কিসের ঘুম? সেই ছোট বেলার মতো । টেবিলে ঘুমানোর অভ্যাস এখনো রয়ে গেছে।’

সবাই ফুঁপির কথা শুনে একসাথে ” ও “বলে উঠেতেই কাব্য ভাইয়া ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
–‘নীতু, কাল রাতে আমাকে ধোঁকা দেওয়ার শাস্তি এইটা । ‘

ফুঁপি তাকে ডেকেই চলে গিয়েছিলো। ইশ! থাকলে কি অবস্থা হতো ভেবেই উনার মাথা আমার কাঁধ থেকে নামিয়ে দিয়ে আস্তে করে বললাম,
–‘ আপনার শাস্তি আপনার পকেটে রাখুন । অসভ্য লোক একটা । নিজে ঘুমাচ্ছেন আর কথা শুনতে হচ্ছে আমায়। ‘

উনি মাথা নীচু করেই ঘুম কন্ঠে জোরে উত্তর দিলেন,
–‘ এই কেও উল্টা-পাল্টা বকবি না ! নীতু লজ্জা পাচ্ছে ।’

উনার বেখেয়ালি কথা শুনে পাশে থাকা গ্লাসের পানি উনার দিকে ছুড়ে মারি আমি । সাথে সাথেই চমকে উঠে তাকায়। আমার দিকে গরম চোখে তাকাতেই সবাই হেঁসে উঠে। সবার মুখে দিকে গরম চোখে তাকাতেই সবাই উঠে চলে যায় । উনি আমার দিকে তাকাতেই আমিও উঠে চলে যেতে নিলেই আমার ওড়না ধরে তার ভেজা মুখ মুছেন। আমি ছাড়াতে চেষ্টা করলেই উনি হাতে পেঁচান। ধপ করে চেয়ারে বসে পড়তেই উনি আবার আমার কোমর একহাতে পেঁচিয়ে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
–‘ এখন এইভাবে বসেই খাবি । পাক্কা দু ঘন্টা আমার সাথে বসে থাকবি। এক পা বাড়াবি তো ….সেটা রুমে নিয়ে বুঝিয়ে দিবো।’
আমি ঢোক গিলে ওইভাবেই বসে রইলাম। ফুঁপি বা কেও এসে এইভাবে দেখলে কি ভাববে ভেবেই কান্না কান্না পাচ্ছে। ঠিক ভাবে খেতেও পারছি না উনি আমার কোমরে সুরসুরি দিচ্ছেন থেকে থেকে । আমি ছাড়তে বললে বলেন,

–‘ চুমু খেতে না চাইলে রুটি খা ..!’
চলবে,,,,,
( গানটা জানি না কেমন হয়েছে! ওই গানের মধ্যে কাব্যের অনেক অনুভূতি আছে কিন্তু🙊
সে যাই হোক,কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন আর ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে