রূপকথা পর্ব – ১৩ (শেষ পর্ব)

0
991

#রূপকথা
#লেখিকা-DI YA
#পর্ব-১৩ (শেষ পর্ব)

মিটিং রুমের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে একজন বলতে লাগে,

ওহহ সরি সরি আমার জন্য আপনাদের ওয়েট করা লাগছে। এখন আমি এসে পরেছি। তো মিটিং শুরু করা যাক – ভেতরে প্রবেশ করা মেয়েটি বলে উঠে।

হঠাৎই মিটিং রুমে পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে চমকে উঠে রোদ। কথার কন্ঠস্বরের মতো পুরো।রূপের মুখে হাসি ফুটে উঠে। সামনে তাকাতেই রূপ চমকে উঠে। হ্যা রূপের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কথা। রূপ এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না। কথা, কথা এখানে কি ভাবে। আচ্ছা কথার এখানে থাকার কারণ কি ? আর এখানে থাকলে কথা একদিন ও আমাদের কারোর খোঁজ নেই নাই কেন ? যোগাযোগ করেনি কেন আমাদের সাথে ? রূপের মাথায় এক ঝাঁক চিন্তা এসে বাসা বেধে বসলো।তখনি জায়ান খান তাদের সাথে কথার পরিচয় করিয়ে দিলো। জায়ান বললো,,

এই যে এটা হচ্ছে আমার ছোট বোন।জারা খান। ও এখন পড়াশোনার পাশাপাশি বিজনেস জয়েন করেছে আমাদের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব মিটিং আর প্রজেক্টের কন্ট্রাক্ট এসবকিছুই জারা করে – জায়ান খান

রূপ বুঝলো এখানে এসব ব্যাপারে কথা বললে শুধু শুধু সিনক্রিয়েট আর একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে যাবে।যা করা লাগবে। সবকিছু ধীরে ধীরে ভেবে চিন্তে করতে হবে। একটা ভুল পদক্ষেপ নিলেই হয়তো সব কিছু শেষ হয়ে যাবে। তাই রূপ আপাতত কিছু করবে না।

তো এখন আমরা মিটিং টা শুরু করি – রাহুল

হ্যা অবশ্যই – জারা

তারপর জারা প্রজেক্ট সম্পর্কে সবকিছু বলা শুরু করলো। রূপ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কথার দিকে। সত্যি ও খুব সুন্দর আর সুস্পষ্ট করে সবকিছু বুঝিয়ে বলছে। রূপ বুঝতে পারলো এই অল্প সময়েই জারা বেশ অভিজ্ঞ হয়ে গিয়েছে এসব ব্যাপারে।

তো আশা করি আপনারা সবকিছু বুঝেছেন। আর এই ডিলের আসল কারণ হচ্ছে আমার আব্বু আম্মু এখন বিডিতে যেতে চায়।সেখানে থাকতে চায়।তাই আমি আর ভাইয়া ঠিক করেছি আমাদের মেইন অফিস ওখানেই ট্রান্সফার করবো। আর এখানে জাস্ট আমাদের অফিসের একটা পার্ট থাকবে। বিডিতে যেহেতু যাব তো আমরা একটা ডিল আগেই ফাইনাল করে রাখতে চাচ্ছি।এখন আপনারা আপনাদের মতামত দেন – জারা

আমি রাজি।ডিল ফাইনাল – রূপ

থ্যাংক্স মিস্টার – জারা

তারপর তারা ডিল ফাইনাল করে সবরকম ফর্মালিটি শেষ করে মিটিং রুমের বাইরে চলে আসলো । রূপ জায়ানের কাছে গিয়ে জায়ানের উদ্দেশ্য বললো,

ডিল তো ফাইনাল হয়ে গেলো।এখন আমরা আসি। কালকে আবার আসবো অফিসে কেমন – রূপ

জি অবশ্যই ডিল যখন ফাইনাল। তখন তো আসা যাওয়া হবেই। কিন্তু আমার একটা রিকোয়েস্ট আছে আপনার কাছে – জায়ান খান

জি বলো কি রিকোয়েস্ট – রূপ

আমি আপনাকে আজকে রাতে ডিনারের জন্য আমার বাসায় ইনভাইট করলাম।আপনারা আসলে খুব খুশি হবো। আপনারা দুজন প্লিজ রাতে আমাদের ফ্যামেলিকে জয়েন করবেন – জায়ান খান

অবশ্যই আসবো – রূপ

আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিবো। ড্রাইভার আপনার বাসার নিচেই থাকবে। কোনো সমস্যা নেই – জায়ান খান

ওকে। এখন হোটেলে ফিরতে হবে। রাতে দেখা হবে – রূপ

জি – জায়ান খান

~~~~

তারপর রূপ আর রাহুল অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। রূপের মুখে রয়েছে হাসি। সে এমনটাই চাচ্ছিল। কথার বাসা গিয়ে ওর বাবা মার সাথে কথা বললেই জানা যাবে কথাই জারা নাকি দুজন ভিন্ন। এসব ভাবছে আর একা একাই হাসছে। রাহুল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রূপের দিকে। আজকে রূপের প্রত্যেক টি আচরণ রাহুলকে অবাক করে দিচ্ছে। রূপ অফিসের বস হয়ে জয়েন করার পর থেকে রাহুল রূপের এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করছে।এতদিনে আজ সে প্রথম রূপের মুখে হাসি দেখলো। সত্যি মানুষ টা যতটা না সুন্দর তার থেকে অধিক সুন্দর হচ্ছে তার হাসিটা।সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে রাহুল এটা ভেবে যে তার স্যার কারোর ইনভাইট একসেপ্ট করেছে।যতগুলো ডিল এর আগে রূপ করেছে সবগুলোর ক্ষেত্রে সে কোনো না কোনো অযুহাত দেখিয়ে এসব থেকে দূরে থাকতো। অনেক বলে ও তাকে রাজি করানো যেতো না।আর আজকে প্রথম বার বলাতেই রাজি হয়ে গেলো।

রাত ৮ টা বাজে। জায়ানের পাঠানো গাড়িতে করে রূপ আর রাহুল রওয়ানা দিয়েছে জায়ানদের বাসার উদ্দেশ্য। তার মনে প্রচুর আগ্রহ কাজ করছে সবকিছু জানার। রূপদের হোটেলে থেকে জায়ানদের বাসায় পৌছাতে প্রায় এক ঘন্টা সময় লেগেছে রূপদের। গাড়ি থেকে নামতেই মিস্টার জুয়েল খান আর জায়ান তাদের দিকে এগিয়ে আসে। রূপ তাদের জন্য নিয়ে আসা গিফটগুলো দিতেই জুয়েল খান বলে,

এসবের কি দরকার ছিল বলো তো বাবা।তোমরা এসেছো এতেই আমি অনেক খুশি।চলো বাসার ভেতরে চলো – জুয়েল খান

সবাই বাসার ভেতরে যায়। তারপর সবাই গল্প করতে থাকে নানান ব্যাপারে। তারপর জুয়েল খানের বউ কিচেনে চলে যায় ডিনার রেডি করে টেবিলে আনার জন্য। জারা ও উনাকে হেল্প করতে যায়।আর জায়ানের ফোনে কল আসায় জায়ান বাইরে চলে যায়।তখন রূপ জুয়েল খানকে উদ্দেশ্য করে বলে,

আঙ্কেল আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল – রূপ

হ্যা বল – জুয়েল খান

না আঙ্কেল একটু আলাদা কথা বললে ভাল হতো – রূপ

আচ্ছা তুমি আমার সাথে আসো – জুয়েল খান

তারপর তিনি রূপকে তার রুমে নিয়ে আসে। রুমে এসে রূপ বলতে শুরু করে,

আঙ্কেল জারা কে ? – রূপ

মানে জারা আমার মেয়ে। ও না তোমার সাথে অফিসে পরিচিত হয়েছিল – জুয়েল খান

না আঙ্কেল আমি তা বলছি না। আমি বলতে চাচ্ছি জারা কি সত্যি আপনার মেয়ে নাকি অন্য কিছু – রূপ

কি বলতে চাচ্ছো তুমি ? – জুয়েল খান

আঙ্কেল আমার কথা খারাপ ভাব্বেন না।দাঁড়ান আপনাকে আমি কিছু ছবি দেখাচ্ছি – বলে রূপ নিজের ফোনে থেকে তার আর কথার কিছু ছবি দেখালো।

আঙ্কেল এ হচ্ছে কথা। আমার ভালোবাসার মানুষ। এক বছর আগে একটা এক্সিডেন্ট করে সে তারপর আমি তাকে হারিয়ে ফেলি। আর খুঁজে পায়নি তাকে। আর জারা তো সম্পূর্ণ – রূপকে বলতে না দিয়ে জুয়েল খান বলে উঠে,

হ্যা জারা সম্পূর্ণ কথার মত দেখতে।মানুষ যখন একটাই তাহলে ভিন্ন দেখতে কি ভাবে হবে বলো। জারাই কথা।এক বছর আগে আমার গাড়ির সাথেই ওর এক্সিডেন্ট হয়।তারপর অনেক হসপিটাল ঘুরে ও ওকে ভর্তি করাতে পারিনি।তাই এখানে আমার পরিবারের কাছে নিয়ে আসি।এখানেই ওর সম্পূর্ণ চিকিৎসা হয়। ও ঠিক তো হয় কিন্তু ওর স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলে।এখানের অনেক নামকরা ডাক্তার দেখিয়েছি আমরা। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।ওর অতীত ওর মেমোরি থেকে হারিয়ে গিয়েছে। এসব আর কখনো ও মনে করতে পারবেনা। ওকে পাওয়ার পর থেকে শেষ পযন্ত সবকিছুই কথা জানে। ও যেহেতু কিছু মনে করতে পাচ্ছিল না তাই আমার স্ত্রী ওর নাম দেয় জারা।সেই থেকে ও আমাদের মেয়ে হয়ে আমাদের সাথেই থাকে।- জুয়েল খান

তারপর জুয়েল খানের সাথে আরো কিছু কথা বলে রূপ চলে আসে। এর দুদিন পর সব কাজ শেষ করে রূপ আর রাহুল দেশে চলে আসে। রূপ দেশে এসে সবাইকে সবকিছু জানায়। তার এক সাপ্তাহের মাথায় জুয়েল খানের পুরো পরিবার দেশে চলে আসে। জুয়েল খান ও উনার পরিবার আর কথাকে ওর অতীতের সবকিছু জানায়। দুই পরিবার কথা বলে ঠিক করে রূপ কথা এবং আদ্র আর আরশির বিয়ে একসাথেই হবে।দেখতে দেখতে বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়ে যায় তাদের।

বাসর ঘরে প্রবেশ করে রূপ দেখে কথা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। রূপ তার কাছে এগিয়ে গিয়ে তার পাশে দাড়ায়।কথা তাকে দেখে বলে উঠে,

অতীত আমি জেনেছি। কিন্তু তা আমি কখনো মনে করতে পারবনা। এটা আপনি জানেন।কিন্তু আমি চাই বাকিটা জীবন আপনার সাথে রূপের কথা হয়ে কাটিয়ে দিতে -কথা

রূপ কথাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,

আজ অবশেষে এতকিছুর পর #রূপকথার কাহিনি পূর্ণতা পেলো। কথা দিলাম সবসময় পাশে থাকব।

সমাপ্তি🥰🥰

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে