রিভেঞ্জ পর্বঃ ০১

0
3927

রিভেঞ্জ পর্বঃ ০১
– আবির খান

সকাল ৯.১০ মিনিট,

মাঃ নেহাল, বাবা উঠ আর কতো ঘুমাবি?? ভার্সিটিতে যাবি না?? উঠ বাবা।

নেহালঃ মা আর একটু ঘুমাতে দেওতো। রাতে অনেকক্ষন পড়ছি। এখন ঘুমাবো।

মাঃ তুই কি আমাকে বোকা ভাবিস?? আমি তোর মা। তুই কোথায় কি করিস সব আমার জানা আছে। তুই কাল রাত ১ টায় পার্টি করে বাসায় আসছিস। বলবো তোর বাবাকে??

নেহাল একলাফে উঠে বসে। উঠে মায়ের দিক তাকিয়ে চোখ ডলছে। আর বলল,

নেহালঃ এতো রাতে তুমি জেগে ছিলে কেনো??

মাঃ একমাত্র ছেলে তুই আমার। তুই না ঘুমালে আমার কি ঘুম আসে বল??

নেহালঃ মা তুমিও না। অনেক সিনেমাটিক।

মাঃ হ্যাঁ আমিতো সিনেমাটিক। দেখিস তোর বউই তোকে সোজা করবে। তোর যত বদঅভ্যাস আছে সব তোর বউ ছোটাবে দেখিস।

নেহালঃ হা হা হা। কি যে বলো না মা। এত্তো সহজ নেহাল চৌধুরীকে বাগে আনা। ইম্পসিবল।

মাঃ দেখবো নে। এখন উঠ বাবা তাড়াতাড়ি। তোর বাবা নাস্তার টেবিলে আসছে যদি তোকে না পায় বুঝিসই তো। তাড়াতাড়ি আয়।

নেহালঃ আগে বলবা না। তুমি যাও আমি আসছি।

নেহালের মা চলে গেলে নেহাল তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হতে চলে যায়।

এই হলো নেহাল। পৃথিবীতে কাউকে ভয় পায়না শুধু বাবা ছাড়া। নেহাল ওর বাবাকে বাঘের মতো ভয় পায়। নেহাল এখন ৪র্থ বর্ষের ছাত্র। ওর পড়াশোনার ব্রেন অনেক ভালো। তবে ঘুরাঘুরি, আড্ডা, মাস্তি, ফান এসব যেন এখন ওর রক্তে মিশে গেছে। বন্ধু-বান্ধবের কোনো কমতি নেই নেহালের। নেহালের বাবা দেশের অনেক বড় একজন শিল্পপতি। টাকা পয়সা, ধনসম্পদের কোনো অভাব নেই নেহালের বাবার। নেহাল বাবা-মার একমাত্র সন্তান হওয়ায় টাকা পয়সার কোনো অভাব আজ পর্যন্ত দেখেনি। তাই হয়তো একটু অন্যদিকে চলে গিয়েছে। অন্যদিক বলতে মাদকের দিকে না। বরং নেহাল আরো ওর যত বন্ধুরা মাদক নিতো তাদের আরো মাদকাসক্তি দূর করেছে। এবং এখন তাদের নিয়েই এই ঘুরাঘুরি আর মজামাস্তি করে। নেহাল ছেলে হিসেবে অনেক ভালো। তবে অনেকটা জেদি আর প্রচন্ড রাগী। নেহাল যা চায় সেটা যেভাবে হোক ওর পেতেই হবে। ওর এই জেদ আর রাগের জন্য ভার্সিটিতে ওকে সবাই ভয় পায়।

নিচে খাবার টেবিলে,

বাবাঃ কি ঘুম ভাঙলো তোর??

নেহালঃ সরি বাবা, রাতে অনেক পড়েছিতো তাই।

নেহালের কথা শুনে ওর মা কাশাকাশি শুরু করে দেয়।

বাবাঃ কি হলো তুমি এভাবে কাশছে কেনো??

নেহাল মায়ের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে।

মাঃ না এমনিই কাশি এসেছে তাই।

বাবাঃ আচ্ছা। তা নেহাল ভার্সিটি কেমন যাচ্ছে??

নেহালঃ জ্বি বাবা ভালো।

বাবাঃ তাড়াতাড়ি ভার্সিটি টা শেষ কর। তারপর আমার কাজ তুই ধরবি।

নেহালের মা নেহালের দিকে তাকিয়ে হাসছে। আর মনে মনে বলছে, ও ধরবে ওনার কাজ হা হা।

নেহালঃ জ্বি বাবা অবশ্যই৷ বাবা একটা কথা ছিলো।

বাবাঃ হুম বল।

নেহালঃ কার্ডের ব্যালেন্স শেষ।

বাবাঃ আচ্ছা আমি বলে দিবো নে।

নেহালঃ থ্যাংক উই বাবা।

বাবাঃ থ্যাংকস এ চলবে না। ভালো রেজাল্ট চাই।

নেহালঃ জ্বি।

এরপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে নেহাল ওর বাবা-মাকে বিদায় দিয়ে ফুল বাইকার গেটআপে বেরিয়ে পরে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। ডার্ক ব্লাক কালারের কাওয়াসাকি নিঞ্জা বাইক নিয়ে চলে যায় নেহাল ভার্সিটিতে।

ভার্সিটিতে,

নেহাল বাইক পার্ক করে ভার্সিটির ভিতরে ঢুকতেই একটা মেয়ের দিকে নজর যায় নেহালের। নেহাল দেখে, মেয়েটাকে কিছু ছেলে খারাপ ভাবে টিজ করছে। বাস নেহালের মাথা সাথে সাথে গরম হয়ে যায়। বাইকটা রেখেই সোজা ওই বখাটে ছেলেদের কাছে গিয়েই সেকি মার। একদম আধ মরা করে ফেলেছে ছেলেগুলোকে। ছেলেগুলো কোনোরকম মেয়েটার কাছ থেকে মাফ চেয়ে চলে যায়।

মেয়েঃ ভাইয়া আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ছেলেগুলো আমি ভর্তি হয়েছি পর থেকেই আমাকে ডিস্টার্ব করতো। আপনি আজ ওদের উচিৎ শিক্ষা দিয়েছেন ভাইয়া।

নেহালঃ আরে ভাই বলছো না অাবার ধন্যবাদ কিসের। আমি আজ থেকে তোমার ভাইয়ের মতো কোনো সমস্যা হলে বলো। আর তুমি মনে হয় নতুন না??

মেয়েঃ জ্বি ভাইয়া। ১ সপ্তাহ হলো ভর্তি হয়েছি।

নেহালঃ আচ্ছা। কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলো। আমি নেহাল। আমাকে নেহাল ভাইয়াই বলো।

মেয়েঃ আচ্ছা ভাইয়া। আমি প্রেমা।

নেহালঃ আচ্ছা প্রেমা, তাহলে তুমি এখন ক্লাসে যাও।

সাদিয়াঃ জ্বি ভাইয়া।

প্রেমা ক্লাসে গেলে নেহাল ওর বন্ধুদের কাছে যায়। ওদের ক্লাস শুরু হতে এখনো অনেক দেরি আছে।

ক্যানটিনে,

শামিমঃ কিরে নেহাল এতো রেগে আছিস কেন??

নেহালঃ আরে বলিস না কিছু বখাটে ছেলে একটা মেয়েকে টিজ করতে ছিলো।

সালমানঃ মামাহ পোলাগুলা এখন কোন হাসপাতালে?? মজা করে।

রাফিঃ আছে আশেপাশের কোনো হাসপাতালেই। হাহা।

নেহালঃ হাহা। তোরাও না। আচ্ছা শুন আজ সিনেমা দেখতে যাবো। বল কে কে যাবি??

নিলয়ঃ তুই যাবি আর আমরা যাবো না। আমরা সবাই একসাথে যাবো।

নেহালঃ আচ্ছা চল তাহলে। তোরা গাড়িতে যাস আমি বাইকে যাবো।

সালমানঃ আচ্ছা। তাহলে আমার গাড়িতেই চল তোরা।

শামিমঃ আচ্ছা। কিন্তু ক্লাসের নোটস??

নেহালঃ ওটা আমি ব্যবস্থা করবো নে। আর আজকে তেমন একটা ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস নেই। এখন চল ৩০০ ফিট থেকে ঘুরে আসি। অনেক দিন যাওয়া হয়না।

রাফিঃ হ্যাঁ চল।

নেহালের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হলো এই ৪ জন। শামিম, সালমান, রাফি আর নিলয়। সবাই একই বয়সের। আর সবাই ধনী পরিবারের ছেলে। তবে সবচেয়ে ধনী নেহাল। তবে ওদের মাঝে কোনো অহংকার নেই। ওরা সাধারণ ভাবেই চলে।।

এরপর সবাই ভাসিটি থেকে একসাথে বেরিয়ে গেলো ঘুরতে। ৩০০ ফিটে ঘুরে ওরা চলে গেলো সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখতে।

নেহালঃ তোরা দাঁড়া আমি টিকিট নিয়ে আসি।

সালমানঃ আরে তোর যেতে হবে না। আমি আনছি।

নিলয়ঃ আরে না না আমি আনছি। তোরা থাক।

শামিমঃ না না আমি আনবো।

রাফিঃ আমি আছি কি করতে আমিই আনবো।

নেহালঃ ভাই কারো আনতে হবে না আমিই আনছি। তোরা খাবার কিছু কিনে আন।

সালমানঃ আচ্ছা আচ্ছা।

নেহাল টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। এত্তো বড় লাইন। সামনে অন্তত ১০ জন আছে ওর। নেহালের অস্থির লাগছে। তাই নড়াচড়া বেশি করছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। হঠাৎই পিছন থেকে একটা মেয়ে বলে উঠে,

মেয়েঃ আপনি কি বানর নাকি!!!

চলবে…?

কোনো ভুল হলে জানাবেন।

সবার অনেক বেশি সাড়া চাই। এই গল্পটি আপনাদের অনেক মজা দিবে। সাথে থাকবেন। আর কেমন লেগেছে জানিয়েন কিন্তু। ?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে