রহস্য পর্ব-২

0
2047

রহস্য পর্ব-২
#Sabiha_Rahman_Susmita

-কিরে শোহিনী,এত দেরী হলো যে আজ?

শোহিনী হঠাত কেমন যেন আমতা আমতা করে বলল স্টুডেন্ট এর এক্সাম চলছে, তাই দেরী হলো।
আচ্ছা,মা,আমার লাল রঙের কামিজ টা কি টেইলার্স থেকে আনা হইছিল?

-না,কালকে নিয়ে আসিস আসার সময়।কেন?লাল জামা দিয়ে কি করবি?কোথাও ঘুরতে যাবি?

-না,এমনি জিজ্ঞেস করলাম।আচ্ছা,ক্ষুধা লাগেছে,খেতে দাও।

খাওয়ার টেবিলে খাওয়ার শুরুতে শোহিনী আস্তে করে বিসমিল্লাহ বলে যখন খাবার মুখে দিল মোহিনী ব্যাপার টা লক্ষ্য করল।কিন্তু সবসময় মুসলমান ফ্রেন্ডসদের সাথে মেলামেশা করে তাই হয়তো ভুলে বলেছে এই ভেবে আর কিছু বলেনি।

পরদিন থেকে আস্তে আস্তে লুকিয়ে লুকিয়ে জামা কাপড় গুছাতে লাগলো শোহিনী।

রিজভি যখন সুইসাইড এর কথা শুনে নিচে গেলো তখন নিচের উৎসুক মানুষের কাছ থেকে জানতে পারল সেই ফ্ল্যাটের ই একটা মেয়ে সুইসাইড করেছে যে ফ্ল্যাটের ২ টা বোন কে সে বারান্দায় দেখতো।কেন যেন অনেক বেশি খারাপ লাগতে লাগল রিজভির।তার মত হতাশ মানুষের অবশ্য ভালো লাগা খারাপ লাগা সবই সমান।

এই সাত সকালেই চারিদিকে রোদের প্রচন্ড তাপ,সরকারী অফিস বলে এই উঠতি শহরের থানায় কোনো এসি নাই।এই গরমে মাথা গরম করে বসে আছে ময়মনসিংহের গুলবাগ থানার ওসি আজমল সাহেব।বয়স চল্লিশের উপর হবে,মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি।কপালে বেশ কয়েকটা ভাজ,চেহারায় সারাক্ষণ একটা বিরক্তি ভাব।
চা তে চুমুক দিতে দিতে সাব ইন্সপেক্টর রফিক কে বলতে লাগল,
” কি যুগ আইলরে?কালকে দুপুরে ১টা খুন এর তদন্ত পরল ঘাড়ের উপ্রে। আর রাতে ২টা রেইপ কেইস শুইনা ঘুমাইতে গেলাম,১টা মেয়েরে নাকি মাইরা ফেলছে,আর আরেকটা হাসপাতালে।অবস্থা নাকি ভালো না।তুমি একটু খবর নিও।আমি দেখি রেইপ কেইস গুলা কোনো ইনভেস্টিগেটর রে দিতে পারি নাকি।
এমন সময় থানার ফোন বেজে উঠলো- “হ্যালো,গুলবাগ থানার ওসি বলছি।হ্যাঁ?কি বলেন?আচ্ছা,আমি ৩০ মিনিটের ভিতর ফোর্স পাঠাচ্ছি।”

-কি হয়েছে স্যার?আবার কোনো ঝামেলা?

-আর বইলো না,খুন-ধর্ষণ নিয়া ই বাঁচতাছি না।আবার এখন আইছে সুইসাইড কেইস।কোনটা রাইখা কোনটা সামলামু কউ তো?আচ্ছা,চলো গাঙিনার পার যাওয়া লাগব।ওখানে যে ১৪ তলার ৩ টা বিল্ডিং উঠছে,সেইখানে বলে সুইসাইড করছে।

স্পটে গিয়ে আজমল সাহেব দেখলেন একটা সুন্দরী ছিপছিপে গড়নের মেয়ের গলায় ওরনা, ফ্লোরে পরে আছে, হাতের পাশে একটা ট্যাবলেটের কৌটা যেটার মুখ খোলা ও পাশে কিছু ট্যাবলেট পরে আছে।অদ্ভুত ব্যাপার টা হচ্ছে মেয়েটার পেটের উপর একটা বিড়ালের বাচ্চা পরে আছে।বিড়ালটা মৃত,মুখ থেকে ফেনা বের হওয়া অবস্থায় পরে আছে।

-মেয়েটার নাম কি বলেছিল?রফিক?

-শোহিনী স্যার।

-আচ্ছা,চলো ওর বাবা-মা এর সাথে কথা বলি।

পাশের রুমে গিয়ে দেখে এক মধ্যবয়সী মহিলা অজ্ঞানের মত পরে আছে,তার মাথায় পানি দিচ্ছে এক তরুনী। পাশে বসে আছেন ভদ্রলোক,অজিত দেবনাথ,অর্থাৎ শোহিনীর বাবা। নমস্কার জানিয়ে সোফায় বসলো আজমল সাহেব।
বলতে শুরু করল-

-কিভাবে হলো এমন?কখন টের পেলেন?

এইটুকু বলতেই মহিলাটা উঠে আবার চিৎকার করে বিলাপ করতে শুরু করল।হঠাত আজমল সাহেবের কাছে এসে হাতে পায়ে ধরতে শুরু করলে পাগলের মত আর কান্না করে বলতে লাগল-সাব,ঠাকুরের দিব্বি,আমার মেয়েটা অনেক ভালো মেয়ে ছিল,কেন এমন হলো গোওওওও….

“এই মোহিনী,যা তোর মা কে ভেতরের রুমে নিয়ে যা।আমি একটু উনাদের সাথে কথা বলি।” এই বলে আজমল সাহেবের দিকে অসহায়ভাবে তাকালেন অজিত বাবু।

-স্যার,আমার মেয়েটা খুব লক্ষ্মী ছিল, কেন যে এমন করল কেউ বুঝতে পারছিনা।

-আচ্ছা,শান্ত হোন অজিত সাহেব।আমরা লাশ টা নিয়ে গিয়ে পোস্টমর্টেম করি,তারপর নাহয় বাকি তদন্ত করব।
(আস্তে ধীরে কথাগুলো বলল আজমল খান)

-স্যার,আমার স্ত্রী টা মারা যাবে যদি শুনে তার মেয়েত শরীর কাটাছেঁড়া হবে,পোস্টমর্টেম হবে।দয়া করে স্যার এসব করবেন না।একটু দেখুন আমাদের বিষয় টা।

-আচ্ছা,তবে তো একটু ঝামেলার ব্যাপার।

-স্যার,একটু বসুন,আমি আসছি।
মিনিট দুয়েক পর আজমল সাহেব হাতে একটা খাম নিয়ে ফিরে এসে বলল-স্যার এখানে পঞ্চাশ হাজারের মত আছে,আপনি এটা রাখুন,থানায় যা খরচ করা লাগে করুন।আরো দরকার হলে আমি কাল/পরশু দিয়ে আসবো।কিন্তু তবুও আমার মেয়েটাকে শান্তিতে চিতায় যেতে দিন।

-আচ্ছা,তবে দেখা যাক কি করা যায়।
চলো রফিক।
ফিরে চলে যাবার সময় আবার কি মনে করে আজমল সাহেব পিছনে ফিরে অজিভ বাবু কে জিজ্ঞেস করলেন বিড়াল টা কিভাবে মারা গেলো।
অজিত বাবু জানালেন বিড়াল টা শোহিনীর সবচেয়ে প্রিয় জিনিস ছিল,বিষ খাওয়ার পর শোহিনীর মুখ থেকে ফেনা বের হয়েছিল,সেগুলো বিড়াল টা চেটে খেয়ে এই অবস্থা।

গাড়ি ড্রাইভ করছে রফিক,গাড়িতে উঠে যেন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো আজমল সাহেব।
-বুঝলে রফিক,এত এর কেইসের ভীরে এসব সুইসাইডাল কেইস নিয়ে এখন আর ভাবার সময় ছিল না।যাক,ভালো ভিকটিম এর বাবা আগে থেকেই সব মিটমাট করে দিল,আমাদের ও পকেট কিছুটা ভরলো।কি বলো?হা হা হা।

-কিন্তু স্যার,তারা কি কিছু চেপে যেতে চাইছে?

-কি যে বলো না?অতসব ভেবে আমাদের কাজ নেই।চলো সামনের চায়ের দোকানে ২ কাপ চা খেয়ে নিই।

” অর্কিড লুম” এর ১৩ তলার কোনার ফ্ল্যাট এ ৩জন ব্রাহ্মণ এখন বসে আছে ড্রয়িংরুমে। কাঁদো কাঁদো চেহারায় তাদের সামনে অজিত বাবু বসে আছে।

মুখ শক্ত করে বড় ব্রাহ্মণ(নিখিল চৌধুরী) বলতে লাগলেন

-শুনুন অজিত বাবু,আমাদের চিতা কে পাপী করবেন না।পাপাচারে এভাবে নষ্ট করতে দিতে পারি না।এই মেয়ে আত্মহত্যা করেছে,এই লাশ আমাদের চিতায় নয় শুধু,কোনো চিতায় ই পোড়ানো সম্ভব নয়।তাহলে অমঙ্গল হবে সকলের।

-তবে কি করব গুরুজী?

-আমাদের চিতা থেকে একটু দূরে একটা জঙ্গল আছে,সেখানে এই লাশ পুঁতে দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারি। এর বেশি আমাদের দ্বারা সম্ভব হবে না।

কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে অজিত বাবু মত দিলেন।

শোহিনী কে মাটিতে পুঁতে রাত ৯টায় বাসায় ফিরলেন অজিত বাবু। মোহিনী কে একটা টাকার বান্ডেল দিয়ে বলল আলমারি তে রাখতে।আলমারিতে টাকা রাখতে গিয়ে মোহিনী এমন একটা ছোট্টো নীল রঙের সুন্দর বক্স পেলো,বক্স খুলে এমম এক জিনিস দেখতে পেলো যা দেখে তার সকল কান্না যেন ভিতরে গিয়ে আরো ফুলতে লাগলো।হাত পা ঠান্ডা হতে হতে বসে পরল মেঝেতে।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে