রঙ তুলির প্রেয়সী ৫.

0
2272

রঙ তুলির প্রেয়সী
৫.

রুম থেকে বেরিয়েই আদিয়ার মুখোমুখি হলো তিথি। আদিয়া বললো, ‘কীরে? ঘুম হইছে? আস্তে আস্তে তৈরি হ, আজকে থেকে তো পড়তে বসবি আমার সাথে।’

‘আরে রাখ তোর পড়া। আমি এখন অনেক বড় মিশনে যাচ্ছি।’

‘মিশন? কিসের?’

‘তোদের মোগ্যাম্বো আমারে চ্যালেঞ্জ করছে। আমি নাকি ওকে দাবাতে হারাতে পারবোনা।’ দু’হাতে কোমর ধরে বললো তিথি।

আদিয়া হাঁটা থামিয়ে প্রথমে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর চোখ ছোট ছোট করে জিজ্ঞেস করলো, ‘মোগ্যাম্বো?’

‘আরে তোদের বড়টা রে। হাঁটা থামালি কেন চল। পরে বলবে ভয় পেয়ে যাচ্ছিনা।’

হো হো করে হেসে উঠলো আদিয়া। হেসে হেসে জিজ্ঞেস করলো, ‘এটা কেমন নাম দিলি?’

‘তোর ভাইরে দেখার পরে এরথেকে ভালো নাম আমার ডিকশনারিতে পাই নি।’

‘শুধুশুধু চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্ট করেছিস। হারবিই তুই।’ বলে হাঁটা শুরু করে আদিয়া। তিথি একটা মুখ ভেংচি দিয়ে বললো, ‘দেখা যাবে।’

জাওয়াদের রুমে ঢুকেই কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা বারান্দায় চলে গেল তিথি। আদিয়াও গেল পেছন পেছন। তিথিকে দেখেই রিয়াদ বললো, ‘এতোক্ষণে এলে?’

জাওয়াদ বললো, ‘আমিতো ভাবলাম দাবার ট্রেনিং নিতে গেলে নাকি আমাকে হারাবে বলে।’ কথাটা একদম তিথির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো জাওয়াদ। এই প্রথম জাওয়াদ তিথির চোখে চোখ রেখে কথা বললো। তিথির যেন কেমন একটা করে উঠলো বুকের ভেতর। সে তড়িৎ চোখ সরিয়ে বললো, ‘আসার সময় এই আদিয়া গল্প জুড়ে দিয়েছিলো তাই একটু দেরি হয়েছে।’

‘এবার খেলা শুরু হোক। আই অ্যাম সো এক্সাইটেড!’ উৎসাহ নিয়ে বললো আদিয়া। রিয়াদ বললো, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ। এইযে তিথি বসো এখানে তুমি। আমি আদিয়ার পাশে যাই।’ বলে আদিয়ার পাশের চেয়ারে গিয়ে বসলো সে।

খেলা শুরু হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই একে একে তিথির সব সৈনিক মারতে লাগলো জাওয়াদ। তিথির চোখে হেরে যাওয়ার আতঙ্ক। জাওয়াদের ঠোঁটে বিজয়ের হাসি। একসময় ঠোঁটে মুচকি হাসি নিয়ে শেষ চাল চেলে বলে উঠলো জাওয়াদ, ‘উপ্স! চেক মেট!’
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
‘না হবেনা। আমি মানিনা!’ উঠে দাঁড়িয়ে কোমরে দু’হাত রাখলো তিথি। কপাল কুঁচকে তাকালো জাওয়াদ। আদিয়া আর রিয়াদ অবাক হলো। রিয়াদ বললো, ‘কী হলো তিথি?’

তিথি কথার উত্তর না দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘উনি সবসময় কি সাদা গুটিই নেয়?’

‘হ-হ্যাঁ, কিন্তু কেন বলোতো?’

‘এইতো! আগেই বুঝেছি। যতো জিতাজিতি সব এই গুটির জন্য। আমি সাদা গুটি নিবো। আরেক ম্যাচ হবে। এবার দেখবো!’ চেয়ারে বসে বললো তিথি। অবাক চোখে তাকালো জাওয়াদ। কিছুই বুঝতে পারছেনা সে। রিয়াদের দিকে তাকালো। রিয়াদ ইশারায় কিছু একটা বললো। তারপর তিথির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আচ্ছা ঠিক আছে তুমি সাদা গুটিই নাও।’

আবার খেলা শুরু হলো। এবার তিথি প্রথমেই জাওয়াদের একটা সৈনিক মেরে দিলো। তারপর খুশিতে বাক-বাকুম হয়ে রিয়াদ আর আদিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ইয়েস!’ হাসলো ওরা দুজনে। জাওয়াদ শুধু একটা অদ্ভুত চাহনি দিলো, কিছু বললোনা। আদিয়া হাসছে, খুব হাসছে। তবে সেটা অন্য কারণে। তার মাথায় ঘুরছে অনেক চিন্তা। সে তাকিয়ে আছে তিথির দিকে।

একইভাবে আগের মতোই হারিয়ে দিলো জাওয়াদ তিথিকে। তারপর মুখে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি নিয়ে বললো, ‘এটা লুডু না। এটা দাবা।’

তিথি কথাটা কানে না নিয়ে দাবার বোর্ডটা হাতে তুলে এটার চারিদিকে কপাল কুঁচকে দেখতে লাগলো কিছু একটা। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। আদিয়া বললো, ‘কী করছিস এগুলো?’

তিথি বোর্ডটা নাড়তে নাড়তে বললো, ‘দেখছি, তাবিজ টাবিজ কিছু লাগানো আছে নাকি। তাবিজ তো নেই, আমি শিওর পানি পড়া ছিঁটিয়ে রেখেছে।’

‘মানে?’ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো জাওয়াদ।

তিথি বললো, ‘মানে সবাইকে এভাবে বারবার হারাচ্ছেন। নিজে একবারও হারছেন না। ডালমে কুচতো কালা হে। নিশ্চয়ই তাবিজ টাবিজ বা পানি পড়া ছিঁটিয়েছেন বোর্ডে তাই এমন।’

বিষ্ময়ে বাকরূদ্ধ হয়ে গেল জাওয়াদ। কিছুই বলতে পারছেনা সে। মানে, সিরিয়াসলি? সামান্য দাবার জন্য সে তাবিজ করবে? পানি পড়া… চোয়াল শক্ত হয়ে এলো জাওয়াদের। সে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো রিয়াদ আর আদিয়ার দিকে। দেখলো ওরা দুজন মুখ চেপে হাসছে। এতো হাসি হাসছে যে ওদের শরীর কাঁপছে। জাওয়াদের রাগ বেড়ে গেল। সে একটা আগুন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তিথির দিকে। তারপর সেখান থেকে উঠে চলে গেল। তিথি মুখ ভেংচি দিয়ে বিড়বিড় করলো, ‘নামটা একেবারে পারফেক্ট! মোগ্যাম্বো!’

জাওয়াদ চলে যাওয়ার পর রিয়াদ আর আদিয়া মুখ থেকে হাত সরিয়ে জোরে জোরে হাসতে লাগলো। রিয়াদ হাসতে হাসতে হাসতে বললো, ‘আমি কিন্তু তোমার ফ্যান হয়ে যাচ্ছি তিথি।’

তিথি কিছু বললোনা। হাসলো। আদিয়া বললো, ‘জানো ছোট ভাইয়া, তিথি বড় ভাইয়ার নাম কি দিয়েছে? মোগ্যাম্বো!’ বলে আরেক দফা হাসতে লাগলো আদিয়া। হাসতে লাগলো রিয়াদ আর তিথি ও। এমন সময় রিয়াদের কাছে একটা কল এলো। কথা শেষ করে আদিয়াকে রিয়াদ বললো, ‘নাহিদ আসবেনা আজ।’

আদিয়া জিজ্ঞেস করলো, ‘কেন?’

‘কী একটা জরুরি কাজ।’

‘ও।’ আদিয়ার মুখটা কেমন ছোট হয়ে গেল। তিথি জিজ্ঞেস করলো, ‘নাহিদ কে?’

‘তোমাদের টিচার।’ বলে হেসে সেখান থেকে উঠে গেল রিয়াদ। আদিয়া তিথিকে বললো, ‘চল নিচে যাই।’

জাওয়াদের ঘর থেকে বেরোনোর সময় দেয়ালে একটা ছবি দেখে তিথি আদিয়াকে জিজ্ঞেস করলো, ‘এটা কার ছবি রে?’

‘কাজিন।’ বলে মুচকি হাসলো আদিয়া।

‘এখানে টানানো কেন? মনে হচ্ছে তো রঙ তুলির আঁকা।’

‘ঠিকই ধরেছিস। চল চল তাড়াতাড়ি।’ বলে যতো দ্রুত সম্ভব সেখান থেকে বেরিয়ে গেল আদিয়া। তিথি একবার ভালোকরে দেখলো ছবিটা। তারপর সেও বেরিয়ে গেল।
__________________________

ফোঁস ফোঁস করতে করতে রান্নাঘরে এসে ফ্রিজ খুলে ঢকঢক করে ঠাণ্ডা পানি গিলতে লাগলো জাওয়াদ। কপালের রগ দপদপ করছে। রিয়াদ একপাশে দাঁড়িয়ে ঠোঁট টিপে হাসছে। মুনতাহা জাওয়াদকে এমন করতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হয়েছে?’

‘তোমার ছেলে সবসময় জিতবে বলে দাবার বোর্ডে পানি পড়া ছিঁটিয়ে রেখেছে মা।’ বলে হাসতে লাগলো রিয়াদ। কটমট করে তাকালো জাওয়াদ। বললো, ‘রিডিকিউলাস!’

‘ওহ স্যরি।’ বলে হাসি আটকানোর ব্যার্থ চেষ্টা করে রিয়াদ। মুনতাহা বললেন, ‘কীসব পাগলের মতো কথা বলিস?’

‘আমি বলি নি। তিথি বলেছে। জাওয়াদ এর কাছে হেরে গিয়ে।’

মুনতাহা একবার জাওয়াদের দিকে তাকালেন। উনার হাসি পাচ্ছে খুব। তবুও হাসি চেপে জাওয়াদের পাশে গিয়ে বললেন, ‘ও ছোট। আদিয়ার বয়েসি। মা বাবা কেউ নেই। পরিবারের সবাই তাড়িয়ে দিয়েছে দূরদূর করে। মেয়েটা খুব চঞ্চল আর প্রাণবন্ত। এমন একটা ফুলের মতো মেয়ের জীবনে এতো কষ্ট। ওর মা জানে ওর কোথাও জায়গা হবেনা। তাই আমাকে চিঠি লিখে গেছে। আর ওর মা অনেক কিছু করেছে আমার জন্য, যার ঋণ শোধ করার মতো না। ওর সাথে মিলেমিশে থাকতে পারবিনা?’

‘একদম। তিথি খুবই ইন্টারেস্টিং মেয়ে। তুই একটু ইজিলি ওর সবগুলো কথা নিস। এভাবে রাগিস না। রাগিস দেখেই রাগায়। বাচ্চা তো! ওর সাথে রাগারাগি তোকে মানায়?’ বললো রিয়াদ।

জাওয়াদ একটা বড় নিঃশ্বাস নিলো। তারপর হেসে বললো, ‘আচ্ছা ওকে ঠিক আছে। আমি এখনথেকে ইজিলি নেবো।’

স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলেন মুনতাহা। হাসলো রিয়াদ।
______________________

হাতে একটা টাইগারের বোতল নিয়ে সেটাতে চুমুক দিতে দিতে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছিলো জাওয়াদ। দেখলো তিথি দাঁড়িয়ে আছে নিজের রুমের সামনে। হাতে একটা কলম। সেটা নাড়িয়ে নাড়িয়ে কিছু একটা বিড়বিড় করছে। আরকটু কাছে যেতেই শুনতে পেলো তিথি গান গাইছে, ‘মেরি পাতলি কামার মেরি…’ জাওয়াদকে দেখেই গান বন্ধ করে দিলো তিথি। সরু চোখে তাকালো ওর দিকে। জাওয়াদ এর কেন যেন হাসি পেলো। সে হেসে তিথিকে পার করে নিজের রুমের সামনে গেল। পরক্ষণেই আবার মাথায় দুষ্টুমি চাপলো জাওয়াদের। পেছন ফিরে তাকালো। দেখলো তিথি তাকিয়ে আছে তার দিকে। জাওয়াদ টাইগারের বোতলে একটা চুমুক দিলো। তারপর মাথা কাত করে তিথির পা থেকে মাথা অবধি তাকালো। তিথির কেমন অস্বস্তি লাগলো। সে একবার নিজের পরনের টপসটা টেনে ঠিক করে নিলো। জাওয়াদ একইভাবে মাথা কাত করে তিথির কোমরের দিকে তাকালো। তারপর মাথা নাড়িয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে নিজের রুমে চলে গেল। তিথি যেন একটা চারশো চল্লিশ ভোল্টের শক খেলো। মোগ্যাম্বোটা এভাবে ওর কোমরের দিকে তাকিয়ে হেসে কী বোঝাতে চাইলো? মজা করলো? এতো জঘন্য মজা? মানে কী বোঝালো তিথি মোটা? রাগ চড়ে গেল তিথির। সে চিৎকার করে বললো, ‘এইযে এই শুনুন আপনি হাসলেন কেন?’ বলতে বলতে জাওয়াদের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই জাওয়াদ তিথির মুখের ওপর ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো। হা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো তিথি। তারপর জাওয়াদের রুমের দরজায় একটা লাথি দিয়ে হনহন করে হেঁটে চলে গেল সেখান থেকে।

বিছানায় বসে হাসতে লাগলো জাওয়াদ। হাসতে হাসতে নিজে নিজেই বললো, ‘মেয়েটা বড্ড পাগল আছে!’ তারপর একটু থামলো। তারপর আবার বললো, ‘বাচ্চা!’
_______________

চলবে……..
@ফারজানা আহমেদ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে