রং বদল পর্ব-১০

0
1311

#রং_বদল
#IH_Iman_Haque
#পর্ব_১০

তুমি খাবার টেবিল থেকে না খেয়ে, চলে আসলে কেনো?

না,খেয়ে মানে আমি তো অনেক খেয়ে আসলাম।তবুও না খেয়ে আসলাম বলতেছো।

তোমার জন‍্য কতো কিছু রান্না করেছিলো আমার খালা-ফুপিরা আর তুমি না খেয়ে চলে আসলে ওরা কষ্ট পাবে না।

কষ্ট পাবে মোটেও না আজকে তো আমাকে ওরা খাওয়াতে খাওয়াতে মেরেই ফেলতো ওখান থেকে চলে না আসলে,আজকে আমি পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে বাধ‍্য হতাম।এমনিতে জোড় করে যেগুলো খাওয়াচে সেইগুলোই বেশি হয়ে গেছে দেখো না ঠিক মতো শুয়ে থাকতেও পারতেছি না,শুধু বমি বমি ভাব হচ্ছে।আমার কষ্ট হচ্ছে আর তুমি মজা নিচ্ছো বউ (মায়া লাগার মতো করে কথাগুলো বলতেছি )

আচ্ছা দারাও আমি তোমার জন‍্য লেবুর পানি এনে দিচ্ছি (হেসে হেসে বলতেছি আমার স্বামীর অবস্হা দেখে না হেসে পারলাম না।)

তুমি হাসতেছো ঠিক আছে আমারো একদিন আসবে হুম।

আচ্ছা আর হাসবো না,তুমি শুয়ে থাকো আমি লেবুর পানি নিয়ে আসতেছি তোমার জন‍্য।

আল্লাহ্ গো আমাকে মেরে ফেলছে শশুর বাড়ির লোকেরা আল্লাহ্ এত খাবার কেউ খাওয়ায়।

একটু পরে জান্নাতুন কোথায় থেকে এসে বলতেছে,

এই যে আমার প্রানের স্বামী ধন,এই নিন লেবুর পানি খেয়ে নিন ঠিক হয়ে যাবে।

আমি জান্নাতুন এর হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে পানিগুলো খেয়ে ফেললাম।আচ্ছা তোমার বোন গুলো এতো শয়তান কেনো বলো তো ওরা আমাকে জোড় করে বেশি খাওয়াইছে।

কেনো তুমি না, তখন বললে তোমার শালিরা নাকি খুবেই সুন্দর,অনেক ভালো তাহলে এবার বুঝলে ঢেলাটা কাকে বলে।আমি আগে থেকে জানতাম ওরা এই রকমে,

উপরে সাদা চামরা দেখে মানুষকে ভালো মনে করে বোকামী করেছি গো বউ।আর তুমিও তো আমার অবস্হা দেখে মুচকি মুচকি হাসতেছিলে,আমার মনে হচ্ছে তুমিও ওদের সাথে হাত মিলিয়েছো।

আরে না,ওদের সাথে কেনো আমি হাত মিলাবো।শুধু এতোটুকু বলেছে যা হবে তা দেখে যেথে,তাই আমি চূপ করে দেখে গেছি,

তুমি বউ হয়ে স্বামী উপরে অত‍্যাচার হচ্ছে এটা দেখে থাকতে পারলে।যাও তুমি আমার বউ না,

ওলে আমার সোনা রে,আমার উপরে রাগ করেছো,আসো তোমার রাগ ভেঙ্গে দেই।

লাগবে না, আমার রাগ ভাঙ্গাতে,
.
সত‍্যি,

সত‍্যি না তো মিথ‍্যা,

ঠিক আছে আমিও দেখতেছি কেমন করে আমার উপরে রাগ করে থাকতে পারো।এই কথা বলে আমার স্বামীর বুকের উপরে বসে দুইহাত দুদিকে চেপে ধরে একদম ওনার মুখের কাছে আমার মুখটা নিয়ে গিয়ে বলতেছি,
তোমার আজকে সব লুটে ফুটে নিবো,

আরে এগুলো তুমি কি বলো,এটা তো ছেলেদের ডাইলোক তোমাদের না?মেয়ে হয়ে ছেলের কি লুটে নিবে আবার?

যা আছে তাই লুটে নিবো,

ঠিক আছে নিও, কিন্তু আমার বুকের উপর থেকে আগে নামো তো আমার দম বন্ধ হয়ে আসতেছে।

নামবো না,

যদি আমি মরেরররররর,

এই কথা বলার আগে আমি আমার স্বামী ঠোঁট আর আমার ঠোঁট এক করে দিলাম।প্রায় পাঁচ মিনিট পরে ছেড়ে দিলাম।

বউ তুমি এইডা কি করলা?অবলা একটা ছেলেকে রুমে একা পেয়ে সব লুটে নিলে আল্লাহ্ আমাকে আর কেউ বিয়ে করবে না,আমার সব শেষ করে দিয়েছে এই মাইয়া।

ফাজিল ছেলে কোথাকার বউ পাশে আছে তারপরেও নাকি বলে কেউ বিয়ে করবে না।ঝাটা দিয়ে পিটালে তোমার শয়তান পালাবে।ঝাটাটা কি আনবো নাকি?

বউ এবা ক্ষেপে গেছে আর ফাজলামি করা যাবে না পরে কপালে শনি,রবি,রাহু সব চলে আসবে।টপিং চেন্জ করার জন‍্য বলতেছে,

বউ তোমার ঠোঁটে কি মধু আছে নাকি, আমার ঠোঁটগুলো মিষ্টি মিষ্টি লাগতেছে কেনো ?

জানি না,আর একবার খাবে নাকি।

সি সি মানুষ ভূল একবারে করে বারবার না,তোমার ঠোঁটের পচা লিপস্টিক খেলে আমার পেট নষ্ট হয়ে যাবে।

যদি আমার ঠোঁটের লিপস্টিক পচা হয় তাহলে যখন কিচ করলাম তখন বলো নি কেনো।

তখন বুঝতে পারি নি,

তুমি কিন্তু আমার রাগ উঠাচ্ছো এর ফল ভালো হবে না,

কি ভালো হবে না শুনি?ভাই এই কথা বলার সাথে সাথে বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো দুইজনার বালিস দিয়ে মারামারি।প্রথমে শুরুটা জান্নাতুন এ শুরু করেছিলো তারপর আমি। প্রায় বিশমিনিট ধরে বিশ্ব যুদ্ধ চললো,যুদ্ধ শেষ হলো চারপাশে আজানের ধ্বনি শুনে।যহরের আজান চারপাশে দিচ্ছে।

এই তুমি নামাজে যাবে না,

হুম যাবো তো,

তাহলে আসো তোমাকে পান্জাবি, টুপি,আতর মেখে রেডি করে দেই তুমি ওজু করে আসো।

আমি ওজু করে আসলাম বাথরুম থেকে।তারপর এক এক করে সুন্দর করে পান্জাবি, টুপি,আতর মেখে দিচ্ছে।আমি শুধু জান্নাতুনকে দেখতেছি কতো কেয়ার করতেছে।আমার মতে প্রতিটা স্ত্রীর এটা অধিকার বা করা দরকার যে তাদের স্বামীদের মসজিদে যাওয়ার জন‍্য তৈরি করে দেওয়া।একটা স্বামী তার বউকে যথেষ্ট সম্মান এবং ভালো বাসে।তাই প্রতিটা মেয়েকে স্বামীর ভালোবাসা আর সম্মানকে কাজে লাগিয়ে জোড় করে হলেও মসজিদে পাঠায় দিন।প্রতিটা নারী-পুরুষের নামাজ আল্লাহ্ তায়া’লা ফরজ করে দিয়েছেন।কিন্তু আমরা নামাজ না,পড়ে স্ত্রীর আচল ধরে শুয়ে থাকি।যাদের আবার নতুন বিয়ে হয়েছে রমাজান মাসে হারাম-হালাল কিছু বুঝে না।।বউ এর যদি ইসলাম সম্পের্কে ধারনা না থাকে, তাহলে স্বামী কিভাবে ভালো পথে আসবে,কিভাবে সংসার সুখ-শান্তি আসবে।এটা সব সময় মনে রাখবেন একজন মেয়ে তার স্বামী কে একমাত্র পারে ভালো পথ দেখাতে,খারাপ পথ থেকে ভালো পথে আনতে।তাই প্রতিটা নারীকে বলবো আপনাদের স্বামী দের নামাজ পড়তে বলুন না, যেথে না চাইলে জোড় করে পাঠান দেখবেন আপনার স্বামী কে ঠিকে হেদায়েত দিবেন আল্লাহ্।
কি হলো দাড়িয়ে দাড়িয়ে এভাবে কি দেখতেছো আমাকে?

কিছু না,আচ্ছা বউ তুমি আমাকে এভাবে প্রতিদিন তৈরি করে দিবে আমি যখন নামাজে যাবো।

হুম দিবো,তুমি যাচ্ছো আল্লাহ্ ইবাদত করতে,আমি যদি তোমাকে মসজিদে যাওয়ার সময় সাহায‍্য করি তাহলে আমিও আল্লাহ্ থেকে একটুও হলেও সোয়াব পাবো।অনেক গল্প করলে এখন তুমি মসজিদে যাও।

তারপর আমি বাসা থেকে বাহির হয়ে সোজা মসজিদে যাচ্ছি।মসজিদটা বাসার পাশেই ছিলো তাই যেথে টাইম লাগে নি।মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে আবার বাসায় আসলাম।বাসায় এসে আবারো জোড় করে খাবার খেতে বসালেন আমাকে।ইচ্ছা না থাকার শর্তে খেতে হলো।বেশি খাই নি অল্প খেয়েছি,এবার কেউ মজা করে নি।মনে হয় জান্নাতুন মজা করতে নিষেদ করেছে।খাওয়া শেষ করে আমরা দুইজনে রুমে চলে আসলাম।রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।কখন যে ঘুমাই গেছি নিজেই জানি না।হঠাৎ করে ঘুমটা ভেঙ্গে যায় ঘড়িতে দেখি ৫ঃ১০ বাজে আসরের আজান হয়ে গেছে তাহলে কেউ ডাকলো না।আরে জান্নাতুন আবার কই গেলো ও তো আমার সাথে শুয়েছিলো কোথায় গেলো আবার।মনে হয় নিচে গেছে কাজ করতে।আমি বাথরুম থেকে ওজু করে এসে রুমে আসরের নামাজটা পড়ে নিলাম।নামাজ পড়ার পড়ে ভাবলাম একটু ছাদে যাবো।তারপর রুম থেকে বাহির হয়ে সোজা ছাদে চলে আসলাম।ছাদে এসে দেখি পুরো ছাদে ফুলের টবে ভর্তি।ভিন্ন ভিন্ন ফুলের কাছে ভিন্ন ভিন্ন ফুল ধরেছে,ফুলগুলোর সুবাস পূরো ছাদে ছড়িয়ে পড়েছে।একবারে ফুলের সুবাসে মাতাল করে তুলতেছে।পশ্চিম দিকে দেখতেছি সূর্য লাল বর্ন ধারন করছে।দেখতে অনেক সুন্দর লাগতেছে।এখান থেকে প্রকৃতি উপভোগ করতে অনেক সুন্দর লাগতেছে।

দুলাভাই আপনি এখানে আর আমি পূরো বাসা খুজে বেড়াচ্ছি।

পিছনে ঘুরে দেখি,এইটা সেই মেয়েটা যে আমাকে চোখ টিপা দিয়েছিলো।

এই নেন আপনার কফি আপু পাঠিয়েছে আপনার জন‍্য।

আমি মেয়েটার হাত থেকে কফির গ্লাসটা হাতে নিয়ে চূপ করে আছি ।

আমার নাম মনি,আমি আপুর খালাতো বোন লাগি।আজকের শয়তানির জন‍্য ছরি।

আমি চূপ করে দাড়িয়ে আছি।কথা বলতেছি না কারন ওদের সাথে কথা বলতে নিষেদ করেছে।

কি দুলাভাই আপনার শালির সাথে কথা বলবেন না?

তবুও চূপ করে আছি।

কথা বলেন না হলে,আপুকে বলে দিবো আপনি আমাকে প্রেমের প্রোস্তাব দিয়েছেন।

এবার চূপ করে থাকতে পারলাম না।কথা বলতে বাধ‍্য হলাম,
আমি আবার কখন তোমাকে প্রোস্তাব দিলাম মিথ‍্যা বলতেছো কেনো।

বলেন নি কিন্তু আমি বলবো আর আপনার সাথে কিছু বলার ছিলো,

হুম বলো,

আমি সত‍্য কথা বলতে ভয় পাই না,তাই সোজাসুজি বলতেছি আপনাকে প্রথম দেখায় ভালো লেগেছে আমার তাই আপনি আমার সাথে প্রেম করবেন।আর এই কথা যদি আপুকে বলতেছেন তাহলে আপনার খবর আছে।

এটা সম্ভব না তোমার বোন শুনলে কষ্ট পাবে।

আমি জানি না কি করবেন,আপনাকে একদিন টাইম দিলাম ভাবার জন‍্য?

আরে মনি শুনো এই চলে গেলো ধুর কি ডেন্জার মেয়েরে বাবা লজ্জা-শরম কিছুই না।বড় বোনের জামাইকে প্রেমের প্রোস্তাব দেয়।কফি খাচ্ছি আর ভাবতেছি কি বলে গেলো মনি?

অনেকবার ভাবলাম একটা কথা গল্পটা বড় করতে গেলে ভিলেন দরকার।তাই আমি ভাবতেছি গল্পে একটা ভিলেন আনবো।গল্পের মধ‍্যে ভিলেন এনলে কেমন হয় পাঠকদের মন্তব‍্য দেখতে চাই।

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে