রং বদল পর্ব-০২

0
4517

#রং_বদল
#IH_Iman_Haque
#পর্ব_০২

ধূর কি এক জেদি লোক, যেটা ভাবে ওটাই করে,আমার কথা একটুও শুনলো না?ধূর ভালো লাগে না,যাই বাথরুমে ফ্রেস হয়ে আসি এগুলো বিরক্তকর জিনিস কেনো যে, এতো ভারি ভারি জিনিস বিয়েতে বউকে পড়ানো হয়।
বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে রুমে এসে আরো অবাক হলাম কারন ওনি বিছানায় বসে আছে আর ওনার হাতে একটা পেকেট।হয়তো ওনি প‍্যাড নিয়ে এসেছেন।

আপনি এতো তাড়াতাড়ি আসলেন!

হুম কেনো,তাড়াতাড়ি আসছি দেখে কোন সমস‍্যা নাকি।আর এই নেও তোমার প‍্যাড।

আপনি কি তাহলে সত‍্যি সত‍্যি আপনার বোনের থেকে প‍্যাড নিয়ে আসলেন?

হুম,কেনো সন্দেহ হচ্ছে নাকি।তোমাকে তো বললাম সব খুলে তাও অবিশ্বাস করতেছো।আবার বলেও গেলাম আমি এশার থেকে প‍্যাড আনতে যাচ্ছি।ওর কাছ থেকে তো আনলাম।

আচ্ছা মানলাম আপনার লজ্জা-শরম কিছুই নাই কিন্তু আমার তো আছে নাকি,সকালে আমি কেমন করে এশার সামনে যাবো।কিভাবে কথা বলবো,আপনার জন‍্য আমি,

আমার জন‍্য কি?তোমার ভালোর জন‍্যই তো করলাম এখন দোষ দিচ্ছো আমাকে।এশার সাথে কথা বলবে কিভাবে মানে,এখন যেভাবে আমার সাথে কথা বলতেছো, সেভাবে এশার সাথেও কথা বলবে।

আপনার সাথে আমি কথায় পারবো না।এখন সরেন আমি বিছানায় ঘুমাবো।

বিছানায় তুমি কি একাই ঘুমাবে নাকি, আমিও তো ঘুমাবো?আর এটা কি করবো আমি এখন?

আপনি না সরলে আমি কিভাবে বিছানায় উঠবো।বিছানায় আপনিও ঘুমাবেন আমিও ঘুমাবো এবার হয়েছে।

হুম বুঝতে পারছি।আচ্ছা বলো না, এটা কি করবো?(প‍্যাড এর কাগজটা দেখায় বলতেছি)

আপনি ওটা টেবিলের উপরে রাখেন,হাতে ধরে না রেখে।

এই নেও টেবিলের উপরে রেখে দিলাম।এবার ঘুমানো জাগ।

হুম কিন্তু,

আবার কিন্তু কি?

বিছানাটা চেন্জ করতে হতো না (বিছানা চেন্জ করার কথা বলে আমি মাথা নিচ করে আছি )

আচ্ছা আমি তো তোমার স্বামী তাই না।

হুম আপনি তো আমার স্বামী।

তাহলে আমার সামনে এতো লজ্জা পাও কেনো।স্বামী হচ্ছে কি জানো,ভালো একটা বন্ধুর মতো,যাকে মন খুলে সুখ-দুঃখের কথা শেয়ার করা যায়।যেমন ধরো তোমার স্কুল-কলেজ লাইফের বন্ধুদের জীবনের সব কিছু শেয়ার করো,তেমনি একটা মেয়ে বিয়ের পরে স্বামী কেউ সেভাবে বন্ধু ভেবে সব কিছু শেয়ার করলে সম্পর্ক আরো গভীর হয়।সেই জন‍্য বলি কি, আগে একজন বন্ধু হিসাবে দেখো, তারপর না হয় স্বামী মানিও সমস‍্যা নাই?

ঠিক আছে আপনাকে তাহলে বন্ধু হিসাবে দেখবো।

তাহলে আজ থেকে আমরা বন্ধু।

হুম বন্ধু।তাহলে আপনি আমার সাথে হাত মিলান।কারন বন্ধুত্ব শুরু করতে হলে হাত মিলাতে হয়।

তাহলে হাতটা মিলাইতে দেড়ি কেনো (তারপর জান্নাতুন এর সাথে হাত মিলালাম )

আচ্ছা নতুন বিছানা কি আছে রুমে?

দেখতে হবে,থাকলেও থাকতে পারে।

তাহলে আপনি একটু খুজেন কারন এই বিছানার চাদরে ঘুমানো যাবে না।

ঠিক আছে।(তারপর আমি আলমারিতে বিছানার চাদর খুচতেছি।শেষে একটা বিছানার চাদর খুজে পাইলাম )

এই নেও বিছানার চাদর।

ওকে দেন আমি বিছাই দিচ্ছি ।(আমি ওনার থেকে বিছানার চাদরটা নিয়ে বিছানার উপরে বিছায় দিলাম আগেরটা চেন্জ করে )

তাহলে এখন ঘুমাতে কোন সমস‍্যা নাই।

হুম।তারপর আমরা দুইজনে লাইট ওফ করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।প্রায় ২০ মিনিট হলে গেলো কিন্তু দুচোখে ঘুম কিছুতেই আসতেছে না।ওনি আমার পাশে শুয়ে আছেন।অন্ধকারের জন‍্য বুঝতেই পারতেছি না,ওনি ঘুমিয়েছেন নাকি জেগে আছেন।বিয়েটা করেছি ভালো হয়েছেন কারন এতো ভালো একটা স্বামী পাবো সেটা কখনো কল্পনাও করতে পারি নি।আল্লাহ্ কাছে শুকরিয়া আদাই করি এতো ভালো স্বামী দেওয়ার জন‍্য।বাসর রাত নিয়ে হাজারো মানুষের হাজারো স্বপ্ন থাকে, তেমনি আমার স্বপ্ন ছিলো একটা আদর্শ স্বামী জীবনে পাওয়া।আমি সেটা পেয়ে গেছি। সব মেয়ে চাই তার স্বামী তাকে সবসময় কেয়ার করুক,ভালোবাসুক এই রকম স্বামী পেয়েছি আমি আলহামদুলিল্লাহ্।,কিছুতেই চোখে ঘুম ধরতেছে না,কি করি,কি করি হ‍্যা ওনাকে ডেকে তুলে গল্প করতে হবে তাহলে আজকে রাত পার হয়ে যাবে।
এই যে শুনছেন,এদিকে একটু ঘুরেন না।

কি হয়েছে এতো রাতে ডাকতেছো কেনো?

এতো রাত মানে এই তো ঘুমালাম আর আপনি বলতেছেন এতো রাত।এই শুনেন না,আমার না ঘুম ধরতেছে না।

তোমার ঘুম ধরতেছে না তো আমি কি করবো,ঘুমাও না এমনিতে সারাদিন অনেক কাজ করেছি তাই ডিস্টাব করো না তো ঘুমাও।

আপনি না বললেন,আপনি আমার বন্ধু তাহলে আমরা কষ্ট হচ্ছে আর আপনি ঘুমাচ্ছেন।এই তাহলে বন্ধু আমার।

আচ্ছা বলো আমাকে কোথায় কি লেখা আছে বন্ধুকে আপনি করে বলতে?বন্ধু যদি বন্ধুকে আপনি বলতে পারে তাহলে আমি কেনো বন্ধুর কষ্টে ঘুমাতে পারবো না।

বন্ধু হয়েছি তো কি হয়েছে, আপনি তো আমার বড় আবার স্বামী ও তাই আপনি করে বলতেছি?

আমাকে যদি আর একবার আপনি করে বলো তাহলে,এই যে আমি ঘুমালাম আর কথা বলবো না তোমার সাথে।

এই রকম করিয়েন না প্লিজ,আচ্ছা বলেন আমি আপনাকে কি বলে ডাকবো?

তুমি বলো যে,স্কুল-কলেজ লাইফের বন্ধুদের কি বলে ডাকতে?

কেনো নাম ধরে ডাকতাম আর তুই করে বলতাম।

তেমনি তুমি আমাকে তুই করে বা নাম ধরে ডাকতে পারো।

আমি আপনাকে তুই করে ডাকতে পারবো না,কারন বাহিরের মানুষ শুনলে কি বলবে?

বাহিরের মানুষ শুনবে কেমন করে,যদি আমরা বাহিরে যাই তাহলে তুমি আমাকে তুমি করে বলবে আর কেউ না থাকলে তুই।

ঠিক আছে তাহলে তুই করেই বলবো আপনাকে।

আবারো আপনি,

ছরি,ছরি ভূল করে মুখ দিয়ে বাহির হয়ে গেছে।আচ্ছা আপনি তো আমার বন্ধু তাই না,তাহলে একটা প্রশ্ন করি?

হুম কেনো বিশ্বাস হয় না, আমি তো তোমার বন্ধুই তাই যেকোন প্রশ্ন করতে পারো,

তাহলে তুই কি কখনো প্রেম করেছিস আমাদের বিয়ের আগে?

সত‍্য বলবো না মিথ‍্যা,

মিথ‍্যা কেনো বলবি,

সত‍্য বলতে ক্লাস ৯-১০ এই দুই বছর একটা হিন্দু মেয়ের সাথে প্রেম করেছিলাম।

কি তুই দেশে কোন মেয়ে পাস নাই,শেষে হিন্দু মেয়ের সাথে?

আরে ক্লাস ৯-১০ হচ্ছে একটা ছেলে-মেয়ের ভালোলাগার বয়স।তেমনি তখনো আমার ভালোলাগার বয়স ছিলো, একটা হিন্দু মেয়েকে ভালো লেগেছিলো তারপর শুরু হয় ভালোবাসার কাহিনী।আর এটা তো সবাই জানে,প্রেম-ভালোবাসা কখনো জাতি -পাতি মানে না।

এখনো মেয়েটার সাথে কথা বলিস।

না, বিয়ে হয়ে গেছে আর একটা বাচ্চাও হয়েছে তাই কথা হয় না ।আর প্রতিটা মেয়ে সংসার জীবনে পা রাখলে অতীতে কি হয়েছে তা সহজে ভূলে যায়।শুধু ছেলেরাই বুকে ভালোবাসা চেপে রেখে দেয়।

এখনো কি তুই ওকে ভালোবাসি,মনে পড়ে তার কথা?

মনে পড়বে না,প্রথম ভালোবাসা ছিলো আমার আর প্রথম ভালোবাসা কখনো ভূলা যায় না।পৃথিবীর কোন মানুষ বলতে পারবেনা তার প্রাক্তনকে ভূলতে পেরেছে।প্রক্তন কি যে যাদু করে তাদের কখনো ভূলা যায় না।

আরে তুই কান্না করতেছিস কেনো।

প্রাক্তনের কথা মনে পড়লে আমার কান্না চলে আসে।

অন‍্যসময় কান্না করিস ভালো কথা কিন্তু বাসর রাতে বউ এর সামনে তুই প্রাক্তনের কথা ভেবে কান্না করতেছি।

এখন যে আমার পাশে আছে, সে আমার বউ না একজন ভালো বন্ধু তারপর বউ।

ওরে আমার সোনা রে,আয় একটু কাছে আয় তোকে জড়াই ধরি।

হয়েছে তোকে জড়াই ধরতে হবে না।

ঠিক আছে এখন চোখে পানি মুচে ফেল,স্বামী কাঁদলে বউ এর বুঝি কষ্ট হয় না।

এই নে চোখের পানি মুচে ফেললাম।

মনে কর আমি এখন তোর বন্ধুর না,আপনার বউ আমি যদি আপনার প্রাক্তনের কথা বলতাম তাহলে কি আপনি আপনার প্রাক্তনের কথা বলতেন। ( বউ এর কেরেক্টর চলতেছে তাই আপনি।আবার কেউ ভাবিয়েন না,তুই থেকে আপনিতে গেলো কেমন করে )

অবস‍্যই বলতাম কারন একটা স্ত্রী তার স্বামীর অতীত বিষয়ে সব কিছু জানার অধিকার আছে কারন ,স্ত্রী যদি তার স্বামীর অতীতের খারাপ বিষয়গুলো কারো থেকে জানতে পারে তাহলে আমি নিচ্চিত যে, হয় স্ত্রী স্বামীর উপরে সন্দেহ করবে, না হলে সংসারে অশান্তী শুরু করে দিবে তাই আমি বলি কি প্রতিটি ছেলে তার স্ত্রীকে তার অতীতের বিষয়ে জানো দরকার।যখন আপনার অতীত বিষয়ে জানাবেন আপনার স্ত্রীকে তখন হয় তো একটু মন খরাপ হতে পারে কিন্তু পরে ঠিকে মেনে নিবে।

#চলবে,,,?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে