রংধনুতে প্রেমের বাড়ি পর্ব-১৩

0
2361

#রংধনুতে_প্রেমের_বাড়ি
#পর্ব_১৩
#ফারজানা_মুমু

শান্ত সকাল। খাবার টেবিলে চুপচাপ বসে আছে চৈতি-চয়ন। ঝুমুর খাবার টেবিলে রাখল কিন্তু বসল না। চয়নকে শুনিয়ে শুনিয়ে চৈতিকে বলল, আমার দাদাভাই চলে গেছে চৈতি। তোমার ভাই এখন আরামে খেতে পারবে। বলো খাবার খেয়ে শরীরে শক্তি বাড়াতে। আমাকে তো আবার মা’রতে হবে তাই না? চুপচাপ বসে থাকলে বউ পি’টাতে পারবে না।

নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে রইল চয়ন। নিশ্চল চোখজোড়া তুখর করে চেয়ে আছে বলল, চৈতি তোর ভাবীকে বল খোঁ’চা মে’রে কথা না বলতে। আমি অন্যায় করেছি সেজন্য ক্ষমাও চেয়েছি।
-” চৈতি তোমার ভাইকে বলো ভুজুং-ভাজুং কথা আমায় না বলতে। মে’রে-ধেরে এখন আসছে ক্ষমা চাইতে। বীর পুরুষ। খু’নি খু’ন করে লা’শের পাশে বসে যদি বলে ভুলে খু’ন করে ফেলেছি ক্ষমা করে দাও তখন কী লা’শ ক্ষমা করে দিতে পারবে?

চুপচাপ বসে থেকে ভাই-ভাবীর নালিশ শুনে যাচ্ছে চৈতি। মাথা গরম হবার উপক্রম। তারা নিজেরাই বলে যাচ্ছে কিন্তু পিয়ন তাকে বানাচ্ছে। কণ্ঠ কঠিন করে বলল, তোমরা খাবে নাকি উঠে যাব? বুড়ো বয়সে ভীমরতি ধরেছে তোমাদের ।

চৈতির শক্ত কথায় কাজ হলো না। ঝুমুর শুনেও না শোনার ভান করে বলল, আমি খাব না চৈতি। আমার দাদাভাইকে যে বাসায় অপমান করা হয় আমি তার সংসারের ভাত মুখে তুলব না।

চয়ন এবার চটে গেল। মুখে ফুটলো বিরক্তির রেশ। খেঁক করে শব্দ করল। জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে রাগের পাল্লা হালকা করে বলল, ঝুমুর তুমি বারবার এক কথা তুলছো কেন? ভালো করেই জানো কেন তোমার দাদাভাইকে বাসা থেকে যেতে বলা হয়েছে। সে আমার বোনের দিকে নজর দিয়েছে।

অন্ধকার ঘনিয়ে আসল চৈতির সামনে। এখন অক্ষরের নামে কু-কথা শুনতে চাচ্ছে না। প্রিয় ভাইয়ের মুখে প্রিয় মানুষটির কু-কথা মানতে পারছে না। বক্ষস্হল ধুক-ধুক করল প্রবল শব্দে। বিমূঢ়তা চোখে মুখে স্পষ্ট বলল, আমায় রুমে যেতে হবে ভাইয়া। শান্তা-কান্তা ফোন দিচ্ছে হয়তো।

চয়ন থামালো না। সে জানে চৈতি কেন চলে যাচ্ছে তবে গমগম কণ্ঠে বলল, খাবারের প্লেট সাথে নিয়ে যা। না থাকা যাবে না আমার বাসায়।

প্লেট হাতে চৈতি চলল নিজ রুমে তবে খাবার তার গলা বেয়ে নিচে নামবে না। বিয়ের কথা জানাজানি হলে নিশ্চয় তু’ফান শুরু হবে। তখন কী থামাতে পারবে চয়নকে?

চৈতি চলে যাবার পর ঝুমুর প্রশ্ন করল, তুমি যখন দাদাভাইয়ের বোনের সাথে প্রেম করছিলে তখন কই ছিল তোমার মনষ্যবোধ চয়ন? তখন ঠিকই তো আমায় নিয়ে পালিয়েছিলে।

নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করল চয়ন। চোখ-মুখ খিচে উত্তর দিল, তোমার সাথে আমার বয়সের পার্থক্য বেশি ছিল না ঝুমুর কিন্তু তোমার ভাইয়ের সাথে আমার বোনের বয়সের তফাৎ অনেক।
-” শুধুই কী বয়সের জন্য আমার দাদাভাইকে তোমার অপছন্দ চয়ন?
-” সত্যি বলতে নয়। তোমার ভাইকে আমার সহ্য হয় না। শুরু থেকেই ওনি আমার সাথে মিসবিহেভ করে আসছেন। তাছাড়া ওনার রাগ সম্পর্কে তুমি জানো না ঝুমুর। অক্ষর স্যারের রাগের জন্য অনেক নিরপরাধ মানুষ প্রা’ণ হারিয়েছে। আমি চাই না আমার বোন একজন খু’নিকে বিয়ে করুক। জানি তোমার ভাইকে নিয়ে বাজে কথা বলছি তোমার শুনতে খারাপ লাগছে কিন্তু আমার কিচ্ছু করার নেই। বোনকে ভালো রাখতে তোমাকে যদি হা’রাতে হয় আমি হারাবো। মায়ের শেষ ভরসা আমার চৈতি। মাকে কষ্ট দিয়েছি কিন্তু চৈতিকে দিবো না।

কথাগুলো বলে চয়ন উঠে দাঁড়াল। সদর দরজায় পা বাড়িয়ে একবার পিছনে তাকাল দেখল ঝুমুর বিস্ময় অশ্রু নয়নে তারই যাবার পানে তাকিয়ে আছে। বুকের বাঁ পাশে চিনচিনে ব্যাথা শুরু হলো। ব্যাথাকে পাত্তা না দিয়ে চলে গেল নিজ কর্মে চয়ন।

চয়ন চলে যাবার পরেই ঝুমুর হাসলো। বিড়বিড় করে বলল, বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
বের দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া,
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শীষের উপরে
একটি শিশির বিন্দু।

-” দাদাভাইয়ের কাছে চৈতির সুখ কিন্তু তুমি বুঝছো না চয়ন। নিকটের সুখ তোমার চোখে পড়ছে না। হাহ।

******

জঙ্গলের ভিতরে লা’শ পাওয়া গেছে। ছেলেটির ক’পাল বরাবর তিনটি গু’লি। শরীর পঁ’চা শুরু করে দিয়েছে। বিভৎস বাজে গ’ন্ধ। চয়ন ও অক্ষর মুখে রুমাল চেপে ধরেছে। অক্ষর চয়নের দিকে তাকিয়ে বলল, লা’শটি চেক করতে বলো কাউকে।
-” জি স্যার।

অক্ষর লা’শটির দিকে মনোযোগ সহকারে দেখল কিছুক্ষণ। ছেলেটির বয়স তেইশ কিংবা চব্বিশ হবে। ছেলেটিকে কোথাও দেখেছে বলে মনে হচ্ছে তাঁর। চোখ বন্ধ করে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সজাক করার চেষ্টা করল। হঠাৎ ভেসে উঠল পুরনো এক মুহুর্ত। দু-চোখ আপনাআপনি বড় হলো। চয়নকে ভালো করে দেখে আড়ালে ডাকল। ঠোঁটের কোণায় মৃদু হাসি ঝুলিয়ে বলল, ছেলেটাকে চিনতে আমি ভুল করিনি চয়ন।

চয়ন অক্ষরের হাসিতে সায় দিয়ে জানালো, আমাকে সাহায্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ স্যার। সেদিন যদি খোঁজ আপনি না দিতেন তাহলে সে আজও বেঁ’চে থাকতো। ম’য়’না’ত’দ’ন্তে’র দরকার আছে কী?

শান্ত হাসি ধা’রালো হলো। চোখে ফুটলো হিং’স্রতা। স্মিথ ধারালো কণ্ঠে জবাব দিল, প্রমাণ যেখানে নেই সেখানে ম’য়’না’ত’দ’ন্ত করা বিলাসিতা চয়ন। খু’ন নয় আত্ম’হ’ত্যা বলে চালিয়ে দাও।
-” ওকে স্যার।
-” শুনো, আমাকে আজকে আরেকটি ইম্পর্ট্যান্ট কাজে যেতে হবে তুমি সবদিকে নজর রেখো। উপরমহলের ডাক পড়েছে আমার।
-” ওকে স্যার।

অক্ষর বেরিয়ে পড়ল। চৈতির সাথে দেখা করার কথা কিন্তু কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ার ফলে আজ আর দেখা করাটা হবে না। জয়-বিজয়ের বিয়ে উপলক্ষে অবশ্য দু’দিনের ছুটির ব্যাবস্থা করে রেখেছে তাইতো দু’দিনের কাজটা এখন বেশ জটিল হয়ে পড়েছে। একটি রেঞ্জের প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ সে, কাজের ঝামেলা তো বেশিই থাকে। কয়েকদিন চৈতিকে সময় দেওয়ার ফলে কাজ জমেছে অনেক।

******

শপিং মলে দাঁড়িয়ে আছে শান্তা-কান্তা। চৈতি ফোন দিল অক্ষরকে কিন্তু অপর পক্ষের ব্যাক্তিটির ফোন বন্ধ। কণ্ঠে ভীড় জমলো উৎকন্ঠা, আমার ফোন কেন ধরছেন না ওনি?

কান্তা বলল, ডিউটিতে আছেন হয়তো। চিন্তা করিস না।

শান্তা চৈতিকে এক পরখ দেখে প্রশ্ন ছুঁড়লো, বিয়েটা সত্যিই হয়েছে?

চৈতি ঘাড় কাত করে বলল, তোদের যমজ জামাইরা সাক্ষী ছিল। আচ্ছা দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই চল কিনাকাটা করা যাক।

দুজনেই বলল, হুম।

তিনজন মার্কেটের ভিতরে প্রবেশ করল। প্রথম তারা গায়ে হলুদের শাড়ি কিনবে। শাড়ির দোকানে গিয়ে শান্তা ঝ’গড়া বাঁধাল দোকানদারের সঙ্গে। শাড়িটার দাম চার হাজার টাকা কিন্তু শান্তা, মা-আন্টি টাইপ মুখ কুঁচকে বলল, চারশো টাকা দিবেন? তিনটে নিবো।

দোকানদার বলল, আপু আপনি ভুল দোকানে চলে আসছেন। একানে যাকাতের কাপড় পাওয়া যায় না।

ব্যাস শুরু করে লংকান্ড। শান্তা শাড়ি এটাই নিবে কিন্তু দোকানদার চারশো টাকায় শাড়ি দিবে না। কান্তা-চৈতি থামাতে চাইলে উল্টো ধ’মকে উঠে শান্তা। দোকানদার ছেলেটা দম ছেড়ে বলে, আপনার কার্বন কপি আপুটা ভীষন ভালো কিন্তু আপনি তো জাঁ’দ’রে’ল মহিলা।

শান্তা তেড়ে আসে বলে, ওইটা তো বলদ তাই ভালো। আমি চালাক সেজন্যই আপনাদের চালাকি ধরে ফেলেছি। ধা’ন্দা’বা’জ লোক। আমি এক্ষুনি আপনাদের নামে মা’মলা করব।

-” মামলা করতে হবে না। তোমার যা পছন্দ নিয়ে যাও।

পিছন থেকে শব্দ আসলো। তিনজন পিছনে ফিরে দেখল জয়-বিজয় দাঁড়িয়ে আছে। শান্তা ভ্রু ভাঁজ করে প্রশ্ন করল, তোমরা এখানে কী করছো?

##চলবে
®ফারজানা মুমু

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে