যুগলবন্দী পায়রা পর্ব-০৭

0
657

#যুগলবন্দী_পায়রা🕊️
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
#পর্ব-৭

ইয়ামিন দাঁড়ালো না দৌঁড়ে গেলো সেদিকে আর তখনি দেখলো মহুয়া একটি পাথরের উপর উঠে বসে আছে আর”সু সু” করে কিছু একটা তাড়াচ্ছে। ইয়ামিনের কুঞ্চিত ভ্রু আরো কুচকে এলো কাছে যেয়ে প্রশ্ন করলো,

“আপনি ঠিক আছেন? কি হয়েছে?”

মহুয়া ভয়ে চোখ গোল গোল করে ফিসফিস করলো,

” ওখানে সসসাপ!”

ইয়ামিনের চমকে গেলো। বিস্মিত গলায় বলল,

“কোথায়?”

মহুয়া ভয়ে ভয়ে হাত উঁচা করলো। ইয়ামিন তাকাতেই সাপটি তাদের দিক ফোঁস করে উঠলো। ইয়ামিন নিজেও লাফ দিয়ে আরেকটি পাথরে উঠে বসে পড়লো! বিড়বিড় করে বলে,

“সাপে আমার বড্ড ভয় মিস মহুয়া। ফোবিয়া আছে খু্ব! প্লিজ হেল্প মহুয়া!”

মহুয়া অবাক হয়ে তাকালো। এই ছেলে বলে কি?

” আপনি সাপ দেখে ভয় পান?”

ইয়ামিন বিরক্তি নিয়ে বলল,

“আমি কি ইংরেজি বলেছি মিস?”

মহুয়া অবাক চোখে হাসলো। বলল,

“আপনিও তাহলে কিছু দেখে ভয় পান!হে হে। ”

ইয়ামিন রাগান্বিত দৃষ্টি ছুড়লো মহুয়ার দিকে।কিন্তু কিছু বলল না। মহুয়াই বলল,

এখন কি করবো? বৃষ্টিতে তো আবার ভিজে যাচ্ছি? এখানেই কি বসে থাকতে হবে?”

ইয়ামিন এবার-ও কিছু বলল না। মহুয়া ছোট শ্বাস ছেড়ে পাশে থাকা পাথড় ছুড়ে মারলো। ইয়ামিন চেচিয়ে উঠলো,

“এই কি করছেন? পাথর ছুড়ছেন কেন?”

মহুয়া অকপটে বলল,

“তাড়াবার চেষ্ট করছি!”

“আপনি মোটেও তাড়াচ্ছেন না। উল্টো দাওয়াত করছেন আসুন সাপ মশাই আমাদের খান!”

মহুয়া হো হো করে হেসে দিলো। বলল,

” এতো ডেঞ্জার মুডে এত ফানি কথা কেউ বলতে পারে জানা ছিলো না।”

ইয়ামিন রেগে গিয়ে বলল,,

“আমি সিরিয়াস মিস মহুয়া! ”

মহুয়া আর কিছু বলল না। সে আগের মতোই পাথর টুকরো ছুঁড়তেই। সাপটি চলে গেলো। দুজনেই স্থীর শ্বাস ছাড়লো।দুজনেই ফিরে এলো সেই ঘরটিতে। মহুয়া আগের মতোই আগুনের পাশে বসে পড়লো। ইয়ামিন লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো মাচার উপর। ধীরে ধীরে রাত বাড়তে লাগলো। ঠান্ডা বাড়তে লাগলো। দূর কোথা থেকে ভেসে আসতে লাগলো শেয়ালের হাক। মহুয়ার বুক কেঁপে উঠছে। ইয়ামিন ঘুমিয়ে গেছে মনে হচ্ছে। মহুয়া বাহিরে তাকালো বৃষ্টির বেগ বাড়াচ্ছে। মহুয়া আগুনের বেগুনি রশ্মির মাঝে বাহিরে বৃষ্টি দেখছে।মনের মাঝে বিষন্নতা ঝেঁকে বসেছে। মনে পড়চ্ছে সূবর্ণ অতীতের কথা। সেদিন-ও বৃষ্টি ছিলো। ঘরের কোনে থাকা ছোট্ট মিউজিক প্লেয়ারে বাজছিল হেমন্ত কুমারের গাওয়া বিখ্যাত গান,

এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকেনাতো মন
কাছে যাবো কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ?
এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকেনাতো মন
কাছে যাবো কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ?

আনমোনা হয়ে মহুয়া জানালার ধারে দাঁড়িয়ে দু হাত মেলে বৃষ্টি স্পর্শ করলো। ঠোঁটে বাঁজলো মিউজিক প্লেয়ারের গানটি। মুচকে হেসে চোখ বুঝে উপভোগ করলো আবেশে। এমন সময় পালক ঝাপটে উপস্থিত হলো পায়রা। বৃষ্টি ভিজে জুবুথুবু। পায়রাটিকে দেখেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফোঁটে মহুয়ার।কাছে এসে কোলে তুলে নিলো। পায়ে বেঁধে দেয়া চিঠি পেয়ে লাজুক হাসলো। প্রথম প্রেমে পড়লে যেমন অনুভূতি হতো ঠিক তেমন অনুভূতি হচ্ছে। প্রেমের শুরুটাই হচ্ছে তাদের কদিন যাবত। অথচ চিঠি পড়লে মনে হয় কত বছরের চেনা এই মানুষটি। মহুয়া চিঠির ঘ্রাণ নিলো। আজ কাঠগোলাপ ফুলের ঘ্রাণ পাচ্ছে চিঠি থেকে। প্রতিবারই এমনটি হয়। চিঠি পাবার পর ভিন্ন৷ ভিন্ন ফুলের সু ঘ্রাণ নাকের মাঝে খেলা করে। মহুয়া এবার চিঠি মেলে ধরলো। সেই চেনা পরিচিত গোটা গোটা অক্ষরে সাজানো মনের অনুভূতি কি সুন্দর লিখে ফেলেছে ছেলেটি। মহুয়া হাসলো। সামন পড়ে থাকা ভেঁজা চুল গুলো গুঁজে নিলো কানের পিছনে। হুহু বাতাসে তাও যেন এলো মেলো করে দিচ্ছে চুল। এবার আর সরাতে ইচ্ছে করলো না। জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে পড়তে লাগলো,

মরিচীকা,

আমার বড্ড ভয় কি জানো? বৃষ্টি। বৃষ্টির ঝুমঝুম শব্দ আমার কানে বাজে। বৃষ্টিতে ভিজলে গায়ের কাপড় ভিজে শরীর ঘিন ঘিন করে। কাঁদা-মাটি পায়ে লাগবে বলে আমি রাস্তা বদলে ফেলি। অথচ এ বৃষ্টি আজ ভালো লাগচ্ছে। ছুঁতে মন চাইছে। গা ভিজিয়ে ছাদে বসে উপভোগ করছি। বিশ্বাস কর এমন শান্তি কখনো হয়নি! বলতে পারবে? কেন হচ্ছে এমন? কেন মনের মাঝে এই বৃষ্টি স্বচ্ছ রং রাঙিয়ে তুলেছে? সকল কষ্ট, দুঃখ মিটে গেছে? কেনো? বলতে পারবে কি? আচ্ছা? এমনটি এ জন্য তো নয়? তুমি আমার জীবনে উড়ে চিঠি হিসেবে এসেছো বলে? আচ্ছা তুমি এই বৃষ্টি স্পর্শ করেছিলে? তাই কি শান্তি লাগচ্ছে আমার বৃষ্ট বিলাস করতে?

ইতি,

তোমার নিশ্চুপ পাগলাটে প্রেমিক।

মহুয়া সেদিন বুকের মাঝে চেপে ধরে কেঁধে ছিলো। চটপট কাগজে কলম তুলে লিখে ফেলেছিল,

আমার নিশ্চুপ পাগলাটে প্রেমিক,

আমি তোমাকে বড্ড ভালোবাসি। এই বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা তার সাক্ষী। সাক্ষী এই মেঘলা আকাশের মেঘ। সাক্ষী তোমার শুভ্র পায়রা! সাক্ষী এই বন্ধ রুম। সাক্ষী দক্ষিণের খোলা জানালা। সাক্ষী আমার মন। বড্ড ভালোবাসে ফেলেছি তোমাকে। আমার শহরের প্রতিটি কোনা কোনা আজ সাক্ষী হবে তোমার আমার অদৃশ্য ভালোবাসার। আমার ভালোবাসার শহরে তোমার নিমন্ত্রণ।

ইতি,

মরিচীকা

হঠাৎ হেঁচকা টান মেরে গায়ের ওরনা দূরে ফেলে দিতেই মহুয়ার ভাবনায় ভাঙ্গন ধরে। আকাশ সমান বিস্ময় নিয়ে তাকাতেই ভেসে উঠে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠা আগুন। মহুয়া হতভম্ব হয়ে মুখ হাত চেপে ধরে। এতটাই ভাবনায় হারিয়ে ছিলো যে ওড়না ছিটকে আসা আগুন লেগে যায় তা বুঝতেই পারেনি মহুয়া। ইয়ামিনের পোড়া গন্ধ নাকে লাগতেই তন্দ্রা ছুটে যায়। মহুয়ার দিক তাকিয়ে বুক কেঁপে উঠে। মেয়েটির ওড়নায় আগুন লেগেছে। তথচ মেয়েটি মুচকি হাসচ্ছে। সে কি পাগল!ইয়ামিন তপ্ত কন্ঠে বলল,

” আপনার কি সমস্যা মিস? আগুন লেগে গেছে কতখানি খবরই নেই আপনরা? আর ইউ মেন্টালি সিক? ”

মহুয়া কথা বলতে ভুলে গেছে যেন। ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে ওড়নার দিক। ইয়ামিন মহুয়াকে ঝাঁকি দিলো। মহুয়া হু হু করে কেঁদে ইয়ামিনকে জড়িয়ে ধরলো। ইয়ামিন কিছুই বুঝলো না। মহুয়া এভাবে জড়িয়ে ধরাতে অস্থিরতা লাগচ্ছে তার কাছে। ইয়ামিন পড়লো বিপাকে।এবার কন্ঠে খাদে নামিয়ে বলল,

“মিস কি হয়েছে? কাঁদচ্ছেন কেনো?”

মহুয়া বিড়বিড় করছে এবার। বলল,

“আমার মা পুড়ে যাচ্ছে বাঁচান তাকে! আমার মা!”

বারবার আওড়ানো কথা গুলো কিছুটা ধরতে পাড়লো ইয়ামিন। হয়তো এভাবে আগুন লাগেয় তার কোনো অতীত মনে পড়ে গেছে? ইয়ামিন আবার বুঝাতে চাইলো। তার আগেই শরীরের ভর ছেড়ে দিলো মহুয়া। ইয়ামিন হতবিহ্বল হয়ে ধরে আছে। কি করবে সে? মেয়েটি যে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। এবার?? এই গহীন জঙ্গলে এই মেয়েকে নিয়ে যেন গভীর জলে পড়লো। রাগে বিরক্তিতে কঁপাল কুঁচকে বিড়বিড় করে নিজেকেই গালি দিলো! কি দরকার ছিলো এখানে আসার?

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে