যুগলবন্দী পায়রা পর্ব-০২

0
865

#যুগলবন্দী_পায়রা🕊️
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
#পর্ব-২

মহুয়া দৌড়াচ্ছে। তার পিছনে ছুটছে কিছু বখাটে ছেলেপুলে। মহুয়া ভয়ে আত্মা কাঁপচ্ছে। ইতি মধ্যেই রাস্তা ঘাট ফাঁকা হয়ে গেছে। চারিদিকে ঘন জঙ্গল আর দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু গাছ গুলোর ছায়া ছাড়া কিছুই চোখে পড়চ্ছে না। নিজের কঁপালে নিজেই চাপড়াচ্ছে সে। বাস নষ্ট হয়ে গেছে অর্ধেক রাস্তায়। প্যাসেঞ্জাররা তুলকালাম বাজিয়ে গাড়ির ড্রাইভারকে গালি-গালাজ করে যে যার পথে হাটা ধরেছে। মাঝ নদীতে পড়েছে মহুয়া। একা একা পা বাড়াতেই নজরে পরেছে কিছু বখাটেদের। সামনের উঁচু টিলার উপর বসে তারা জুয়া খেলছিল। মহুয়াকে দেখেতেই হুরমুরিয়ে নেমে আসে। মহুয়া ভয়ে মনে মনে আল্লাহকে ডাকলো। একরাতে এত কিছু নিতেই পারছেনা। মস্তিষ্ক খালি খালি লাগচ্ছে সে বার বার পিছনে ফিরে তাকাছে তো পা ছুটাচ্ছে। কিন্তু আজ যেন বিপদ তার শেষ হবারই নয়। আকাশের বুক চিঁড়ে বেড়িয়ে আসচ্ছে আক্রোশ। বাজ ফালিয়ে কোথাও করে দিছে আলোকিত চারিদিক। ঝড়ো হাওয়া বইছে। ঘন কালো মেঘ জমে চাঁদ ঢেকে আড়াল করে দিচ্ছে। মহুয়ার হাঁপিয়ে গেছে পা যেন আর চলছেই না। কোন পথ ছেড়ে কোন পথে চলে এসেছে? কিছুই জানা নেই তার। মহুয়া দাঁড়িয়ে পড়লো। ছেলে গুলো চলেই এসে, প্রায় তাকে ছুঁই ছুঁই । মহুয়া হু হু করে কেঁদে আবার ছুটলো। চোখের সামনে ক্রমসেই অন্ধকার হয়ে আসচ্ছে। ঠিক সেই মুহূর্তে শুরু হয়ে গেল তুমুল বৃষ্টি। আর দূর্ঘটনা ঘটলো তখনি। ধাপিয়ে আসা কালো রঙ্গা মার্সেডিজের সাথে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে দূরে যে পড়লো মহুয়া। আধো খোলা চোখ দিয়ে দেখলো, এক জোড়া পা দ্রুত তার সামনে এসে থামলো। মহুয়ার দিকে ঝুঁকে ঠোঁট নাড়লো। মহুয়া পিটপিট করে শুধু সামনে থাকা ছেলেটির দিক তাকালো, আবার চোখ ফিরিয়ে ছেলেটির পিছনে তাকালো। তার পিছু নিয়া বাখাটে গুলো চলে যাচ্ছে উল্টো পথে। মহুয়া হাফ ছাড়লো। কিছু বলতে চাইলো, মাথা যন্ত্রণা করছে খুব কিন্তু মুখে রা নেই। বাক শক্তি বুঝি হারিয়ে ফেলেছে সে? মহুয়া আবার তাকালো। ঝংকার তুলা কন্ঠময় বলে যাচ্ছে,

” মিস আর ইউ ওকে? এভাবে ছুটছিলেন কেনো?”

মহুয়ার কানে পৌঁছাল কিনা বুঝা গেলো না।শুধু ভয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। চোখে মুখে ভয়ের ছাপ মহুয়ার। বৃষ্টিতে সারা শরীর ভিজে গেছে।কাপড় লেপ্টে আছে সারা অঙ্গে। ছেলেটিকে এতো কাছে দেখে ভয় ঝেঁকে বসেছে, আচ্ছা সেকি মহুয়ার ক্ষতি করবে? আজ রাতে ঘটে যাওয়া বার বার ঘটনা গুলো কি আবার পুনরাবৃত্তি হবে? ছেলেটি আবার ডাকলো। মহুয়া ছেলেটির দিক তাকিয়ে রইলো। চোখে মুখে কত শুদ্ধতা, শুভ্রতা। এ ছেলেটি হয়তো আলাদ। সত্যি কি তাই? পুরুষ জাতির উপর আজ বড্ড ঘৃণা হচ্ছে মহুয়ার। বুঝে উঠতেই পাড়চ্ছে। কিছু বলতে নিলো মহুয়া তার আগেই জ্ঞান হারালো।

———-

মনটা আজ বড্ড বিষন্ন ইয়ামিনের। বরাবরের মতো তার মা বিয়ে নিয়ে প্যাচ প্যাচ শুনতে অসহ্য হয়েই বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পড়ে সে। তার এক কথাই সে বিয়ে করবে না। আর তার মা নাছর বান্দা। প্রতিদিন ইনিয়েবিনিয়ে বিয়ের কথা তুলবেই।আজো -ও একগাদা মেয়েদের ছবি নিয়ে হাজির হয় তার ঘরে। তাই আজ এক প্রকার ঝগড়া করেই বের হয়েছে বাসা থেকে। এর মাঝেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে তুমুল ভাবে। বড্ড উদাসীনতা রোগো মাথার চুল টানতে টানতে গাড়ি চালচ্ছিলো সে। কোথা থেকে ছুটে একটি মেয়ে গাড়ি সামনে আসতেই ব্রেক কোসলো ইয়ামিন। দরজা ঠেলে বের হয়ে কাছে আসতেই বুক ধক করে উঠলো।বৃষ্টি তেজ তখন তীব্র। মেয়েটি বেঁচে আছে না মরে গেছে বুঝার জন্য ঝুকলো। মেয়েটি পিটপিট করে তাকিয়ে আছে রাস্তার ধারে থাকা স্টেডিয়াম লাইটের হলতে আলো একটি উজ্জল মুখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। মেয়েটি ঠোঁট নারছে কি বলচ্ছে বোধগাম্য হলো না ইয়ামিনের। মেয়েটি এবার চোখ বুঝে নিলো। নিস্তেজ হয়ে পরে রইলো মাটিতে। বৃষ্টির পানিতে ভেসে যেতে লাগলো রক্ত। ছেলেটি অবাক হয়ে গেলো। মহুয়ার মুখে পড়ে থাকা চুল সরাতেই ভেসে উঠলো ক্ষত স্থানটি। বুকে মাঝে কেমন জানি করে উঠলো ইয়ামিনের। নাকের সামনে কাঁপা কাঁপা হাত এগিয়ে দিলো। শ্বাস নিচ্ছে দেখে সুস্থির ফিরে পেলো। কোনো কিছু না ভেবেই কোলে তুলে নিলো তাকে। গাড়ির পিছনের সিটে শুয়ে গাড়ি ঘোরালো।

——

চিঠি পড়ে সেদিন থম মেরে বসে থাকে মহুয়া। সারা রাত ভাবে কে এই ব্যক্তি? কে এই প্রেমিক মানুষ? যার ভিতরে এতোটা ভালোবাসা তারাথায় ভনভন করে ঘুড়তে থাকে প্রতিটি শব্দ। মস্তিষ্ক শিরায় উপশিরায় জানান দেয় লোকটি তার প্রিয়তমার ভালোবাসায় কাতর। নয়তো বড্ড পাগল বা পাগল প্রমিক।আবার সব পাগলরা প্রেমিক হয় না। আর কেউ কেউ হয় ভবের পাগলো। এমন অনেকেই আছে যারা হয় নিশ্চুপ পাগল প্রেমিক। নিঃশব্দে শুধু ভালোবেসে যেতে পারে এরা আজীবন। লোকটিকে মহুয়া সেই ক্যাটাগরিতেই ফেললো। নিশ্চুপ পাগল প্রেমিক। সারা রাত এসব ভেবে ভোর রাতে কলম উঁচিয়ে সেও লিখে ফেললো কয়েক লাইন। লোকটিরও জানা দরকার? তার পায়রা তার চিঠি ভুল ঠিকানায় এনেছে।মহুয়া লিখলো,,

মিঃ প্রিয়তমার প্রিয়তম,

“মধ্যযুগে চিঠি প্রচলন ছিলো জানতাম। ডিজিটাল যুগেও যে কেউ তার অনুভূতি এতো সুন্দর করে সাদা কাগজে তুলে ধরতে পারে সে মানুষটি নিজ মনের সাথীকেও ভালবাসাতে পারে অসীম তা স্পষ্ট। যদি-ও চিঠি ভুল মানুষটির কাছে এসেছে। পড়েও ফেলেছি তার জন্য দুঃখীত। তবে দোয়া করি! দুনিয়ায় যেই প্রান্তেই আপনার প্রিয়তমা থাকুক না কেন। তার কাছে আপনার মনের উড়ে চিঠি পৌছে আপনার কাছে ফিরে আসুক।

ইতি
প্রিয়তমার চিঠি ভুল ঠিকানায় আসা আর সেই ভুল ঠিকানার মালিক,
মরিচীকা।

চিঠিটি লিখে চটপট পায়রার পায়ে বেঁধে উড়িয়ে দিলো মহুয়া। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ভোরের আলোর সাথে তাল মিলিয়ে ছুটে চলতে দেখতে লাগলো পায়রাটিকে। মনের মাঝে আনন্দের রেশ সেদিন সারাদিন কেঁটে ছিলো। চিঠির জবাব পাবে না ভেবেও সারাদিন এই ভাবনায় কাঁটিয়ে দিয়েছিলো মহুয়া। সেই অপেক্ষা যেন ছিলো মিষ্টি এক অনুভূতি। আর মুখের লাজুক হাসি।

স্বপ্নের মাঝে পুরোনো কিছু স্মৃতি ভেসে উঠতেই ঘুমের মাঝে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলো মহুয়ার। তার সামনেই সোফায় বসে থাকা বড্ড বিরক্ত ইয়ামিন বিস্ময়ে বিমুঢ়। একটা অসুস্থ মেয়ে কিভাবে ঘুমের মাঝে হাসতে পারে? যদিও সে মেয়েদের বড্ড অপছন্দ করে। কিন্তু মেয়েটিকে তার কেন যেন অন্যরকম লাগচ্ছে। তার কারণটা কি? নিতান্তই মেয়েটির বাচ্চা মুখ নাকি তার দূর্দশা? ইয়ামিন মাথা চেপে ধরলো নিজেকে নিজেই গালি দিয়ে বলল,,

“হোয়াট ম্যান? তুই আবার মেয়েদের নিয়ে ভাবচ্ছিস? ইট,স হার্মফুল! ভেরি হার্মফুল!”

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে