যদি তুমি বলো পর্ব-৮+৯

0
207

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৮
আফনান লারা

পরেরদিন আদিল তিথিকে একটা নির্জন জায়গায় দেখা করতে বলে।জায়গাটি খুব বেশি দূরে না হলেও তিথির অপরিচিত।সে কোনোদিন ঐ জায়গায় যায়নি।যেতে ভয় হচ্ছিল,সে আদিলকে বলেও দিয়েছিল অন্য জায়গায় দেখা করতে কিন্তু আদিল নাকি তার ফিলিংস পাবলিক প্লেসে কনফেস করতে পারবেনা।এত দিনের চেনা বলে তিথি আর মানা করলোনা।ভাবলো আদিল তো আর চরিত্রহীন না।সেটা হলে এতদিনে সে ঠিকই বুঝতো।

এসব ভেবেই তিথি একা একাই ঐ নির্জন জায়গায় এসে পৌঁছায়।মেইন রোড থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটারের মতন পথ হাঁটতে হয়।তারপর আসে একটা ছোটখাটো নদী।নদীর সামনে বড় বড় ভিনদেশী গাছ।সম্ভবত এটা কোনো ধনী ব্যাক্তির নিজস্ব সম্পত্তি।সুন্দর করেই ফলফলাদির গাছ দিয়ে নদীর এপাশটা ভরাট করেছে।
তিথি নদীরের শান্ত ঢেউয়ের বাতাসে হাঁটতে হাঁটতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করছিল।বেশ কিছু সময় পর তার ফোনে কল আসে আদিলের।
আদিল জানতে চায় সে পৌঁছেছে কিনা।তিথি ওকে দ্রুত আসতে বলে তখন।কারণ তার বাসায় ফিরে তানিয়ার বিয়ের শপিংয়ের জন্য যেতে হবে।
আদিল ওকে পাঁচ মিনিটে আসার কথা বলে কলটা কাটে।তিথি এবার নদীর খুব কাছে এসে স্বচ্ছ পানির দিকে চেয়ে ছিল।তার বারবার মনে হচ্ছে আশেপাশে কেউ তাকে দেখছে।অথচ কোথাও কারোর কোনো উপস্থিতি নেই।
হঠাৎ কারোর পায়ের শব্দ পেয়ে তিথি পেছনে তাকায়।আদিলকে সামনে দেখে দম ফেলে সে।
এরপর ব্রু কুঁচকে বলে,’বলো কি বলবে।’

‘তিথি তুমি কি সত্যিই আমায় ভালবেসে ফেলেছো?’

‘এইসব কেমন কথা?’

‘জাস্ট আনসার টা দাও’

‘আমি তোমায় ভালবেসেছি কিন্তু তুমি তো বাসোনি।নাটক করেছো’

আদিল হাসি দিয়ে বলে,’হ্যাঁ,আমি বাসিনি।তবে এটা সিওর যে তুমি বেসেছো?’

‘অবশ্যই,আমি তো আর তোমার মতন নাটক করিনি’

আদিল তখন একটা জয়ের হাসি হেসে তিথিকে ওখানে রেখেই চলে যাওয়া ধরে।তিথি আগাগোড়া কিছুই বুঝলোনা।আদিল তো তাকে কত কথা বলার জন্য এখানে নিয়ে এসেছে।তাহলে এখন আবার চলে যাচ্ছে কেন?
তিথি ছুটে এসে আদিলের সামনে দাঁড়ায় এরপর বলে,’এটা বলার জন্যই এত দূর আনলে আমায়?’

আদিল তিথির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ তারপর বলে,’আচ্ছা আমি যদি বলি আজ আমার সাথে এই জায়গায় থেকে যেতে।সারাটা বিকেল,সারাটা রাত।থাকবে? ‘

‘মানে কি বুঝাতে চাইছো?’

‘মানে এই যে আমার সাথে একটা রাত কাটাতে পারবে?তুমি তো বলেছো আমায় সত্যিকারের ভালবাসো!’

তিথির মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে।সে আদিলের মুখ থেকে আর কথা বের হতে দেয়নি।মুখের উপর দুটো থাপ্পড় মেরে দিয়েছে ততক্ষণে।এরপর চিৎকার করে বলে,’মানুষ যাকে ভালবাসে,সে মানুষটা যদি তাকে একই রকম ভাবে ভালবাসতো তবে তোমার এই প্রস্তাব ঠিক ধরা যেতো। থাকতাম এক রাত!তাছাড়া ভালবাসার মানুষকে কেউ অবৈধ আকারে চায়না কখনওই।সবসময় বৈধ আকারে চায়।
কিন্তু তুমি তো বলেই দিয়েছো,তুমি আমায় ভালবাসো না
তবে এক রাত কেন!একটা ঘন্টাও আমি তোমার সাথে কাটাতে প্রস্তুত নাহ।তুমি এতদিন সাধু সেজে এখন আসছো সোজা একসাথে থাকার প্রস্তাব নিয়ে?তোমার ভাগ্য ভাল আমি আজকে দামী হিল পরে এসেছি।নাহয় স্যান্ডেল থাকলে ওটা দিয়ে পিটিয়ে স্যান্ডেলের ফিতা ছিঁড়ে ফেলতাম।সময় থাকতে আমার চোখের সামনে থেকে সরো।’

এট বলে তিথি নিজেই উল্টো দিকে হাঁটা ধরে।আদিল দাঁড়িয়ে থেকে ওর চলে যাওয়া দেখছিল।
তখন ওর পাশে এসে দাঁড়ায় ইশান।এরপর বলে,’পরিকল্পনায় একটা ভুল হয়ে গেলো।বড় ভুল!তোমার বলা উচিত ছিল তুমি ওরে অনেক ভালবাসো। আমি শুধু দেখতে চাই সে তোমার সাথে থাকতে রাজি হয় কিনা!ভুলটা কেন করলে!’

আদিল মাথায় হাত দিয়ে বললো তার আসলেই ভুল হয়ে গেছে।তারা যখন এসব আলাপ করছিল তখনই হটাৎ ইশান দেখে তিথি ঐ পথ থেকেই উধাও।এতক্ষণ ওকে হেঁটে চলে যেতে দেখছিল তারা।মূহুর্তের মধ্যে কোথায় উধাও হয়ে গেলো মেয়েটা!
ইশান আদিলকে রেখে তিথিকে খুঁজতে ছুটলো।একসাথে খোঁজার উপায় নেই।
চারদিকে রাস্তা গেছে।সে কোন রাস্তাতে গেছে সেটা বোঝা মুশকিল।
ইশান তাও অন্ধকারে তীর ছোঁড়ার মতন একটা রাস্তার দিকে পা বাড়ায়।
তিথির নাম ধরে ডাকতে ডাকতে সে রাস্তাটার শেষ প্রান্তে চলে আসে।এখানটায় একটা পুরান ফ্যাক্টরি ছাড়া আর কিছুই নেই।ফ্যাক্টরিটা তালাবন্ধ। ইশান ওটার চারপাশে ঘুরে এসে ফিরে আসার জন্য পেছনে মুড়তেই দেখে তিথি দাঁড়িয়ে আছে।
ইশান ওকে দেখে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেও ভাবতে থাকে এবার তার কি হবে।সে তো ধরা খেতে চায়নি।

‘সেদিন আমাকে লিফট দেয়া সেই ছেলেটা আর এই ছেলেটা তাহলে একই?হাতের ব্রেসলেটটাও একই!’

ইশান চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।তিথি কাছে এসে ইশানের মাথার ক্যাপটা টান দিয়ে সরিয়ে বলে,’এই ফাটা দাগটা আমিই দিয়েছিলাম তাই না?’

ইশান ক্যাপটা আবার পরে বলে,’কিসব বলছো?মোটেও তেমন কিছুনা।আমার জন্মদাগ এটা’

‘তাই?’

তিথি এবার আরও কাছে এসে ইশানের কপালে চাপ দিলো জোরেসোরে।ওমনি ইশান ব্যাথায় কুঁকড়ে ওঠে।
তিথি মুচকি হেসে বলে,’জন্মদাগে চাপ দিলে ব্যাথা হয়?’

ইশান কিছু বলেনা।তিথি এবার ওর মাস্কটা ধরতে নিতেই ইশান ওর হাত ধরে বলে,’আমি দিলেই তবে পারবে,তার আগে এত বেশি করতে পারবেনা ‘

এই বলে ইশান সামনের দিকে হাঁটা ধরে।তিথি ও ওর পিছু আসতে আসতে বললো,’আমার পিছু নিয়ে কি লাভ হচ্ছে আপনার? কি বুঝাতে চান আপনি?তুমি বলবো নাকি আপনি?আসলে আপনার বয়স কত!’

ইশান চুপচাপ হাঁটছে।তিথি আবার বললো,’কতদিন হলো আমাকে এভাবে ফলো করছেন?উত্তর দিন!’

ইশান যেতে যেতে তিথির সামনে থেকে উধাও হয়ে যায়।কোথাও সে নেই।তিথি ওর হাঁটার গতির সাথে না পেরে পিছিয়ে গেছিলো।এখন কোথাও সে ইশানকে দেখছেনা।
কিন্ত তিথি জানে সে কি করলে ইশানকে আবারও হাতের কাছে পাবে।
তাই সে মেইন রোডে এসেও আবারও সেই নির্জন জায়গাটিতে প্রবেশ করে।যতদূর চোখ যায়,সে হাঁটতে থাকে।
সে জানে,ইশান তার পিছু নেবেই।

এদিকে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় তিথি জেদের বশে পড়ে এতদূর এসে এখন মনে মনে পস্তাচ্ছে।মানুষের ভয় আছে,ভূতের ভয় আছে।
এই ছেলেটাকে হাতের নাগালে পাবার জন্য আর কি যে করতে হবে তাকে!
ভূত টূত নাকি!এই আসে,আর এই হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।
এসব ভাবতে ভাবতে তিথি থেমে গেলো।
পাঁচ ছয়টা লোক কাঁধে জাল নিয়ে ওখান দিয়ে যাচ্ছিল।তিথিকে দেখে তারাও থেমে যায়।এখন ওখানে থাকা অবস্থায় কিরকম বিশ্রি ভাবে তারা তিথির দিকে তাকিয়ে ছিল।
সন্ধার অন্ধকারে ঐ কালো কুচকুচকে লোকগুলোর লালসা তিথি দেখতে না পেলেও তার বুকের ভেতর ভয় কাজ করছিল।ঢোক গিলে সে আশেপাশে তাকায়।
তাহলে কি ওর ধারণা ভুল!ইশান আজ আর এদিকে আসবেনা।
এখন এদের থেকে কিভাবে বাঁচা যায়!
তিথি এক পা এক পা করে পিছিয়ে দিলো এক দৌড়।কিন্তু তার দূর্ভাগ্য ঐ পথের উঁচুনিচু রাস্তায় হোচট খেয়ে সে পড়ে বেশিদূর যেতে পারেনি। হাত ছিলে গেছে, সাথে মনে হয় পায়ের নখেও কিঞ্চিত ব্যাথা সে পেয়েছে।
আশপাশ থেকে মাছোর তীব্র গব্ধ ভেসে আসছিল তার মানে ঐ লোকগুলো তিথির খুব কাছে চলে এসেছে।
তিথি এখন কি করবে!

লোকগুলো তিথিকে দেখে চুপচাপ চলে গেছে।ওরা চলে যাবার পর তিথি উঠে বসে ভাবছে তারা কিছু করলোনা কেন?
তারপর ইশানের কথা মাথায় আসায় তিথি উঠে চারিদিকে খোঁজ করলো ওর।কিন্তু কোথাও তো কেউ নেই
তবে লোকগুলো এভাবে তেড়ে এসেও কিছু না করার কারণ কি!
নিশ্চয় ইশান আশেপাশেই আছে।ওকে দেখেই চলে গেছে।

অন্ধকার বেড়ে যাওয়ায় তিথি আর ওকে খুঁজে সময় বাড়ালোনা।কি করে যে এত জলদি সময় কেটে গেল!মেইন রোডে এসে তিথি গাড়ীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে এবার।
এটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।আদিল তাকে এমন একটা জায়গায় এনে ছেড়ে গেছে যেখানে লোকাল গাড়ী পাওয়াই যায়না।সন্ধ্যায় সবাই শপিংয়ে যাবে বলেছিল।তার এমনিতেও অনেক দেরি হয়ে গেছে।বাসায় না গিয়ে সোজা শপিংমলে উপস্থিত হতে হবে।

তিথি গাড়ীর অপেক্ষায় রোডের পাশের মাইলফলকে উঠে বসে আছে।পা ব্যাথা হয়ে গেছে তার।অন্ধকার হতে হতে এবার এমন হলো যে তিথি দূর পাল্লার গাড়ীর আলো ছাড়া আর কিছুই দেখছেনা।
‘ঐ আদিলের বাচ্চা আর একদিন বলুক দেখা করবে!যমুনা নদীর পানি গেলাবো ওরে!শখ কত আমার সাথে শুবে!’

তিথি দাঁতে দাত চেপে পা দোলাচ্ছিল,তখনই ইশান গাড়ী এনে তার সামনে দাঁড় করায়।
গাড়ীর ভেতর আলো জ্বলছিল বলে ইশানকে সে দেখেছে।এরপর মাইলফলক থেকে নেমে সে বললো,’আপাতত ক্লাসমেটই ভাবি!!
এখনও যাওনি তুমি?আমি জানতাম।আমাকে ফলো করতেছিলা তাই না?’

ইশান চুপ করে সামনে তাকিয়ে আছে।তিথি গাড়ীর দরজা ধরে বলে,’আমাকে ঐ নির্জন এলাকায় একা ছেড়ে দিয়ে এসেছো,এখন আবার লিফট দিতে চাও!বাহ!’

কথা বলতে বলতে তিথি গাড়ীর দরজাটা খোলার অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ।
ইশানকে বকাঝকা করতে করতে সে দরজাটা খোলার কাজ করছিল।কিন্তু কোনোমতেই পারছেনা সে।
ইশান এবার বিরক্ত হয়ে একটু ঝুঁকে দরজাটা ভেতর থেকে খুলে দেয়।
এরপর বলে,’পুরান অভ্যাস এখনও যায়নি’

এটা শুনে তিথি কপাল কুঁচকে বলে,’পুরান অভ্যাস মানে!’

চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৯
আফনান লারা

গাড়ীতে নিরবতা চলছে দুজনেরই।কিন্তু তিথি মোটেও চুপচাপ বসে নেই।সে তার ব্যাগে থাকা আয়নাটাকে বাম পাশে নিয়ে সেই আয়নায় ইশানের চোখগুলো দেখছে।এই চোখ তার অনেক চেনা মনে হয় কিন্তু সেই মানুষটা কে ছিল ওটাই মিলাতে পারছেনা।ইশান যেন বুঝে গেলো।সে তিথির আয়না বরাবর তাকালো এবং তিথির এই কার্যকলাপে অবাক হলোনা একটুও।যেন সে অনেক আগে থেকেই জানতো।
তিথি হকচকিয়ে চশমাটা তুলে নিজের লিপস্টিক ঠিক করার নাটক করছে।
ওমনি ইশান এক হাত গাড়ীতে রেখে আরেক হাত এগিয়ে তিথির লিপস্টিকে আঙ্গুল দিয়ে লেপটে বললো,’এবার দেখো আয়নায়,ঠিক আছে কিনা’

‘আশ্চর্য! এমন করলে কেন?’

‘তোমার লিপস্টিক ঠিক আছে তাও তুমি আয়নায় সেটা দেখার নাটক করছিলে।তাই আমি সত্যি সত্যি লিপস্টিক এলোমেলো করে দিলাম যাতে করে তোমার আয়না দেখা সার্থক হয়’

ইশানের এমন উদ্ভট কথায় তিথি রেগে আগুন।তাও কিছু বলতে পারলোনা।কারণ সে এই ছেলের গাড়ী করে ফিরছে।এখন বেশি তালিবালি করলে তারে হয়ত মাঝ পথেই নামিয়ে দেবে।

তিথি ঢোক গিলে গেলো পুরো রাগটা।এরপর হাত দিয়ে ঠোঁট ঠিক করে মূর্তির মতন বসে থাকলো।
ইশান মিটমিট করে হাসতে থাকে।
তিথি ইশানের গাড়ীর সামনের গ্লাসে হাত রেখে বলে,’ঠিক করে ফেলেছেন?’

‘হ্যাঁ।আচ্ছা একটা কথা জানো তিথি?’

‘কি?’

‘কাঁচ ভাঙ্গলে বিয়ে দ্রুত হয়।’

‘তোহ?কার বিয়ে হবে?আমার তো হচ্ছেনা।আমার ছোট বোনের বিয়ে হচ্ছে তবে’

‘তোমারও হবে অপেক্ষা করো’

‘আমার না হয়ে তোমার হোক।আমার বাবা এখন বিয়ে করার কোনো ইচ্ছা নাই।
—–
ইশান তিথিকে শপিংমলের সামনে নামিয়ে দেয়।তিথি পেছনে ফিরে বলে,’তোমার মুখ ঢেকে রাখো কেন?কপালের জন্মদাগের মতন মাস্কের ভেতরেও কি জন্মদাগ আছে?

ইশান কিছু না বলেই ওখান থেকে চলে যায়।
তিথি এরপর ঠিক করে যে করেই হোক এই ছেলের মুখটা দেখে নিতে হবে।তবেই যত রহস্যের গোড়া আছে সব সমাধান হবে।

তিথিকে শপিং মলের বাহিরে দেখে তানিয়া বের হয়ে এসে বকাঝকা শুরু করে দেয়।তার আসার কথা ৭টায়।এখন বাজে সাড়ে আটটা।
তিথি কানে ধরে ক্ষমা চায়।খুব একটা দেরি হয়নি,সবাই বেনারসী পছন্দ করতে ব্যস্ত এখন।
তিথিকে নিয়ে তানিয়া সেই জায়গায় এনে বসায়।তানিয়া বলে ওর পছন্দ খুব একটা মানানসই না।তিথি যেন ওর হয়ে পছন্দ করে দেয়।
তিথি সব শাড়ীতে চোখ বুলিয়ে একটা শাড়ীতে হাত রাখে।ওমনি পাশ থেকে একজন ভদ্রমহিলাও শাড়ীটা ধরে নেয়ার জন্য।

তিথি পাশে তাকায়,তাকিয়ে দেখে মিসেস আরাফাত।
ওনাকে দেখে তিথি প্রথমে চিনতে না পারলেও দু মিনিটের মাঝামাঝিতে চিনে ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে।এরপর সালাম দেয়।
মিসেস আরাফাত ওর সালাম নেয় এরপর চশমাটা ঠিক করে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেন তিনি। যেন তিনি ওকে দেখতেও চাননা,কথা তো দূরে থাক।

তিথি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওনার দিকে।ওর মা,বোন বাবা কেউই মিসেস আরাফাতকে দেখেননি।তিথি একাই দেখেছে।

তিথি ও কিছু আর বললোনা।সে বসে পড়লো আগের জায়গায়।মিসেস আরাফাত ঐ শাড়ীটা কিনে তিথিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললেন,’মুনিয়া এদিকে আয় তো!দেখি তোকে কিরকম লাগে।আমার ইশতিয়াকের বউ বলো কথা!’

এ কথা শুনে তিথি আরও অবাক হয়ে যায়।তাকিয়ে থাকে এক দৃষ্টিতে এরপর চারিদিকে তাকায় সে।কোথাও ইশতিয়াকে সে দেখেনা।
হুট করে তানিয়া এসে ওকে ঝাঁকুনি দিয়ে জানতে চায় তার কি হয়েছে।শাড়ী চয়েস কেন করছেনা।
তিথি কোনো মতে একটা শাড়ী বেছে দেয় ওকে।

ইশতিয়াকের বিয়ে!
মুনিয়া শাড়ীটা আয়নার সামনে গিয়ে গায়ে জড়িয়ে দেখছিল।
মিসেস আরাফাত মুখ বাঁকিয়ে আবারও বললেন,’দেখলেন রফিক সাহেব!আমার ছেলের বউকে?কোটিতে একটা।যেমন সুন্দর,তেমনি শিক্ষিত।ও তো মাস্টার্স করতে বিদেশ চলে যাবে।সেটা জানেন?
ইশতিয়াকের সাথেই চলে যাবে।আমি বাপু সেই রকমের শাশুড়ি না যে ছেলের বউকে আটকে রাখবো।ওদের যদি ইচ্ছা থাকে বিদেশ যাবার,তবে যাবে।সমস্যা নেই,আমি আটকাবোনা।’

তিথি চুপচাপ সব শুনছে আর মুনিয়াকে দেখছে।খুব ইচ্ছে হলো ইশতিয়াককে দেখার।সে এখন কেমন আছে!কোথায় আছে!
বেশ কিছু সময় পর ওপারে একজন লোককে সে বিল পে করতে দেখে।পরনে নীল রঙের শার্ট।মুনিয়া ছুটে গিয়ে লোকটার পাশে দাঁড়ায়।ওর জন্য মুখ দেখা যাচ্ছিল না।তিথি বুঝে যায় ওটাই ইশতিয়াক।
সে ও ওদিকে এগোয় দেখার জন্য।কিন্তু আফসোস সে দেখতে পাবার আগেই লোকটা কোথায় যেন চলে গেছে।কোথাও আর সে নীল রঙের শার্টট পরা কাউকে দেখতে পেলোনা।
তানিয়া তখন তিথিকে ডাকতে এসে বলে তারা জুয়েলারি সেকশনে যাবে।সে যেন দ্রুত আসে।সময় নষ্ট না করে।

তিথি ওদিকটা দেখতে দেখতেই চলে যায়।

——
গাড়ীতে মিসেস আরাফাত বললেন,’মুনিয়াকে এই শাড়ীতে বেশ মানাবে ‘

ইশাহ চুপচাপ গাড়ী চালাচ্ছিল।সে জানতোনা মা এই শপিংমলে এসেছে।অর্ধেক পথ যাবার পর মা কল দিয়ে জানান উনি এখানে আছেন।এদিকে তিথিও এখানে।তাই ইশান মল থেকে নতুন আরেকটি জামা কিনে পরে নেয় যাতে তিথি ওকে চিনতে না পারে।

এক সময়ে মা হঠাৎ করে বললেন এই শাড়ী নাকি মুনিয়ার বিয়ের শাড়ী।তখন ইশান বলে,’ভালোই তো,তবে মুনিয়ার বিয়ে খাচ্ছি আমরা’

এ কথা শুনে পরক্ষনেই মা বললেন, ‘ওর বিয়ে মানেই তো তোর বিয়ে!’

এ কথা শুনে ইশান গাড়ী থামিয়ে দেয়।এরপর বলে,’আগেও বলেছি আমি ওরে বিয়ে করতে পারবোনা’

‘পারতে হবে,আমার ও তো শখ জাগে একটা পুত্রবধুর।তোর বিয়ে হবে,বাচ্চা হবে ছোট ছোট বাচ্চাগুলো সারা বাসায় ঘুরঘুর করবে।আমার এখন বয়স হয়েছে।এসব শখ করা কি অস্বাভাবিক? ‘

ইশান কিছু বলেনা গাড়ীটা আবারও স্টার্ট দেয়।
——–
বাসায় ফিরে তিথির পুরো পরিবার এতটাই ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত ছিল যে সবাই না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে।পরেরদিন সকাল দশটা বেজে গেলেও কারোর ঘুম ভাঙ্গেনা।
বুয়া এসে দরজা ধাক্কিয়ে চলেও গেছে,তাও কেউ ওঠেনি।
ঠিক দশটা দশ মিনিটে তিথির বাবা সবার আগে ঘুম থেকে ওঠেন।এরপর চোখ ঘঁষতে ঘঁষতে তিনি ডাইনিংয়ের কাছাকাছি আসেন তখনই কলিংবেল বাজার আওয়াজটা তিনি পান।
পানির বোতলটা হাতে নিয়েই তিনি যান দরজা খুলতে।
খুলে দেখেন দুজন ভদ্র মহিলা আর একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
তারা সালাম দিয়ে দিলো সবার আগে।তিথির বাবা সালাম নিয়ে ওনাদের ভেতরে আসতে বললেন।তিনি তখনও ঘুমের ঘোর থেকে বাহিরে বের হতে পারেননি।হা করে শুধু মেহমানদের মুখ দেখে চলেছেন।মহিলা দুজন আর সে মেয়েটি এসে বসে সোফায়।তারপর মহিলা একজন বললেন,’আপনার বড় মেয়ে বাসায় আছে?’

‘তিথি?আছে তো।আপনারা চেনেন ওকে?’

‘জ্বী চিনি।আমি হলাম করুনা হাওলাদার।আমার বাড়ি খুলনায়।এখানে আমার বোনের বাসায় এসেছি।তো ভাবলাম বোনের ছেলের জন্য একটা মেয়ে বেছে দিই,আমি নাকি ভাল বাছতে পারি।সে সূত্রে আপনাদের মেয়ের কথা শুনলাম।’

তিথির বাবার এবার যত ঘুম ছিল সব উঠে গেছে।তিনি হাতের বোতলটা রেখে ওনাদের পাশের সোফায় বসে পড়লেন।এরপর জানতে চাইলেন ছেলে কি করে।

ছেলের খালা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন,’ব্যবসা করে।বিরাট বড় ব্যবসা’

‘কিসের ব্যবসা?’

‘ব্যবসাটা আসলে বিদেশে,জাপানে।জাপানের একটা নাম করা নুডুলসের কারখানার মালিক আমাদের ছেলে।’

খালা ২য় জন মশকরা করে বললেন,’চিন্তা করবেন না।আপনার মেয়েকে সারাদিন ঐ নুডুলস খেতে হবেনা।আমাদের ছেলে তারে দুনিয়ার সব খাবারের টেস্ট করাবে।’

এই বলে সবাই হাসাহাসি শুরু করে দেয়।
তিথির বাবা বুঝতেছেন না কি করবেন।তারপর ভাবলেন একবার তিথির মাকে ডেকে আনলে ভাল হয়।এই বলে তিনি চলে গেলেন ভেতরের রুমের দিকে।

রিদম ব্রাশ মুখে ঢুকিয়ে ওখান দিয়ে যাচ্ছিল।সোফা দখল করে তিনজন নারীকে দেখে সে থেমে যায়।চোখ ডলে বলে,’আপনারা কি সত্যি এসে বসে আছেন নাকি আমি স্বপ্ন দেখছি?’

‘আমরা তো হুর পরী না বাবা।স্বপ্ন হবার কি আছে?

‘কখন বললাম আপনারা হুর পরী?দেখে তো শাঁকচুন্নি ইয়ে মানে আন্টি মনে হয়।’

শাঁকচুন্নি কথাটা সে গালের ভেতরে রেখেই বললো।কেউ শুনলোনা।শুধু শুনলো রিদম আর গল্পের পাঠকেরা।

বড় খালা বললেন,’তা তোমার নাম কি বাবা?’

রিদম মুখের ভেতর থেকে ব্রাশ বের করে কাছে এসে হাত বাড়িয়ে বললো,’হ্যালো কিউটিস!আই এম মুখেশ আম্বানি’

চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে