মেঘের ভেলায় চড়ে পর্ব-০৭ + বোনাস পর্ব

0
738

#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_07
#Ariyana_Nur

ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ‍্যে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে দোয়া দুরুদ পরছে মুনিয়া বেগম।টেনশন আর ভয়ে তার কলিজা শুকিয়ে রয়েছে।রাই যে বাসা থেকে রাত বেরাতে বের হয়েছে সেটা শুধু তীব্র, তিহান,ফাইজা আর সে জানে।বাসার বড় দুই কর্তাকে তারা কথাটা জানায় নি।ফারুক খান কথাটা জানলে মুনিয়া বেগম না হয় ফারুক খান কে কোন মত সামলে নিবে কিন্তু ফরিদ খান?সে যদি জানতে পারে বিয়ের রাতেই নতুন বউ কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়েছে তাহলে তো সে বাসায় তান্ডব শুরু করে দিবে।এসব ভাবতেই যেন মুনিয়া বেগম এর শরীর কাটা দিয়ে উঠল।দেয়ালে টানানো ঘড়িটায় ধং করে উঠতেই মুনিয়া বেগম এর অস্থিরতা আরো বেড়ে গেলো।রাত একটা বেজে গেছে এখনো কারো কোন খবর নেই।রাইকে ওরা খুজে পেয়েছে কি না সেটাও মুনিয়া বেগম জানে না।মুনিয়া বেগম বসে বসে হাফসাফ করতে লাগলো।নিজের অস্থিরতা দূর করতে না পেরে পাশ থেকে মোবাইল হাতে তুলে নিল।তিহান এর নাম্বার খুজে কল করার আগেই একটা ভাড়ি কন্ঠে ভেসে এল…….

—কে ওখানে?

কন্ঠটা চিনতে মুনিয়া বেগম এর ভূল হল না।মুনিয়া বেগম কিছুটা ভয়ে ভয়ে বলল…..

—দ-দাদা আমি।

ফরিদ খান ড্রয়িং রুমের লাইট অন করে মুনিয়া বেগম এর দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গম্ভীর গলায় বলল…….

—এতো রাতে এই অন্ধকারের মধ‍্যে বসে বসে কি করছো?

ফরিদ খানের কথা শুনে মুনিয়া বেগম এর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।না জানি এখন সব সত‍্য তার সামনেই না চলে আসে।কথায় আছে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধে হয়।মুনিয়া বেগম কিছুটা তুতলিয়ে হাতে থাকা তজবীটা দেখিয়ে বলল…….

—ঘুম আসছিলো না।তাই এখানে এসে বসে তজবী পরছি।

মুনিয়া বেগম এর কথাটা ফরিদ খানের বিশ্বাস হল না।ফরিদ খান মুনিয়া বেগম এর দিকে সন্দেহর চোখে তাকিয়ে বলল……

—তোমার ছেলেরা বাসায় আছে তো?না কি রাতে বেরাতে বাসা থেকে বের হয়েছে?

মুনিয়া বেগম যেই ভয়টা পাচ্ছিল সেটাই হল।সে শুকনো ঢোক গিলে বলল……

—হ‍্যা দাদা ওরা রুমেই আছে।এতো রাতে আর কোথায় যাবে।আপনি চাইলে চেক করে দেখতে পারেন।

—থাক তার আর দরকার নেই।মুখের কথাই বিশ্বাস করে নিলাম।

—দাদা আপনি এতো রাতে এখানে?না মানে কিছু লাগবে?

ফরিদ খান হাতের খালি জগটা দেখিয়ে বলল……

—ঐ একটু পানি নিতে এসেছিলাম।

মুনিয়া বেগম ফরিদ খানের হাতের থেকে পানির জগটা এক প্রকার ছিনিয়ে নিয়ে বলল……

—মাফ করবেন দাদা।আজ একেবারে মাথা থেকেই বের হয়ে গেছে আপনার রুমে পানি রাখার কথা।আপনি যান আমি পানি নিয়ে আসছি।

—সমস‍্যা নেই।সারাদিন যেই ধকল গেছে তোমার উপর।বড় ছেলের বিয়ে বলে কথা।

ফরিদ খান তাস‍‍্যিল‍্য ভাবে শেষের কথা টা বলে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।ফরিদ খান যেতেই মুনিয়া বেগম বড় করে একটা নিশ্বাস নিলো।এতোক্ষন যেন তার দম আটকে ছিলো।কিচেনের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বিরবির করে বলল……

—বাদর ছেলেগুলো আয় আজ বাসায় তোদের আমি দেখে নিব।

_______

রাস্তার পাশে একটা বেঞ্চের উপর বসে রয়েছে রাই।তার সামনে কোমড়ে হাত রেখে দাড়িয়ে ফোস ফোস করছে ফাইজা।ফাইজা তেজি গলায় বলে উঠল……

—ইডিয়েট,মাথামোটা তুই ঐ রুমা শাকচুন্নির কথা বিশ্বাস করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলি?একবারো আমায় কথাটা জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না।তোর কি মনে হয় আমি সব জেনে শুনে তোকে ভাইয়ার সাথে বিয়ে দিয়েছি?দেখ রাইজু!আমি তোকে আগেও বলেছি এখনও বলছি। তুই আমার বোনের মত।তোকে সব সময় আমি আমার বেষ্টু+বোন মনে করি।আর ভাইয়া।সে তো আমার বড় ভাইয়ের মত।আমি কখনোই চাইবো না আমার একটা ভূলের কারনে তোদের জীবনে কোন কষ্ট হোক।কি করে পারলি তুই একটা অচেনা অজানা মেয়ের কথা শুনে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিতে?

(রুমা,তীব্রর আত্মীয়।তীব্র কে অনেক আগের থেকে পছন্দ করে।তীব্রর বিয়ে দাওয়াত পেয়ে পরিবার সহ তীব্রদের বাসায় আসে।আড়ি পেতে তিহান আর ফাইজার কথা শুনে রাই এর পুরো ব‍্যপারটা বুঝতে পারে।সুযোগ বুঝে রাইকে একা পেয়ে রাই এর সামনে কেদে কেদে বলে,তীব্রর সাথে তার সম্পর্ক আছে।তীব্র রাইকে বাচাতে একমাএ বাধ‍্য হয়ে এই বিয়েটা করছে।তীব্র আর নিজের সম্পর্কে বানিয়ে বানিয়ে ইচ্ছে মত কথা শুনিয়ে দেয় রাইকে।রাই এর হাত আকড়ে ধরে কান্না করে বিনতী করে বলে তাদের জীবন থেকে চলে যেতে।সব শুনে রাই এর মাথায়
যেন আকাশ ভেঙে পরে।তার জন‍্য দুটো মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।তার জন‍্য তাদের একটু একটু করে গড়ে ওঠা সম্পর্ক,স্বপ্ন ভেঙে যাবে তা সে কখনোই চায় না।তাই তো সে সবার অগোচরে রাতের আধারে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।প্রথমে রাই ফাইজা কে কিছুই বলতে চায় নি।ফাইজার জোড়াজুড়িতে বাধ‍্য হয়ে ফাইজাকে সব বলে।)

ফাইজার কথার শুনে রাই কোন কথা না বলে নিরবে চোখের জল ফেলছে।রাইকে চুপ করে থাকতে দেখে ফাইজা ধমক দিয়ে বলল…….

—এখনো স্টেচু হয়ে বসে রয়েছিস কেন?বাসায় যাওয়ার ইচ্ছা নাই নাকি?

তিহান ফাইজাকে থামিয়ে বলল……

—আহ ফাইজা অনেক হয়েছে।ভাবি বাসায় চল।অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে।মা আমাদের জন‍্য অপেক্ষা করছে।

তিহানের কথায়ও রাই এর মাঝে কোন ভাবান্তর হল না।সে আগের মতই বসে রইল।একবার বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলে বের হয়ে পূনরায় সেই বাসায় কোন মুখ নিয়ে যাবে সে?তীব্র,রাই থেকে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে ছিলো।রাইকে একি ভাবে বসে থাকতে দেখে কোন কথা না বলে বড় বড় কদম ফেলে রাই এর সামনে এসে ঝড়ের গতিতে রাইকে কোলে তুলে নিল।তীব্রর কাজে রাই হকচকিয়ে গেলো।মুহূর্তেই নামার জন‍্য ছটফট করতে লাগলো।কিছু বলার জন‍্য মুখ খোলার আগেই তীব্র রাই এর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল…….

—ফাইজা!তোমার বান্ধবীকে বলে দাও এতো রাতে এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে তার কান্না দেখার ইচ্ছা আমাদের কারো নেই।যত কাদতে ইচ্ছে হয় সে জানো বাসায় বসে কাদে।

তীব্রর কথা ও কাজে তিহান,ফাইজা মিটমিট করে হাসতে লাগলো।আর রাই হা করে তীব্রর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।

________

তীব্র পিছনে কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে রাই।মুনিয়া বেগম রাই এর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল…….

—বাড়ির কাউকে কিছু না বলে কোথায় গিয়েছে তুমি?

মুনিয়া বেগম এর কথার প্রতি উওরে রাই মাথা নিচু করে চুপ করে রইল।রাইকে কিছু বলতে না দেখে তীব্র চিচিয়ে চিবিয়ে বলল……

—ছোট মা!তোমার নতুন বউকে পগলা মশায় কামড়িয়ে ইনভাইট করেছিলো তাদের সাথে পার্টি করার জন‍্য।তাই পাগল হয়ে রাতে বেড়াতে রাস্তার মশাদের সাথে পার্টি করে গিয়েছিলো।

মুনিয়া বেগম তীব্রর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলল…..

—চুপ কর তুই।নিশ্চই তুই উল্টাপাল্টা কিছু বলে মেয়েটার মাথা খারাপ করে দিয়েছিস।তাই সে তোর সাথে রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।

তীব্র বিরবির করে বলল…….

—যার মাথা এমনিতেই খারাপ তার মাথা নতুন করে আর কি খারাপ করবো।

কথাটা মুনিয়া বেগম না শুনলেও রাই ঠিকই শুনতে পেল।মুনিয়া বেগম তীব্রর দিকে কপালে ভাজ ফেলে তাকিয়ে বলল……

—কিছু বললি?

তীব্র সাথে সাথে দুদিকে মাথা নাড়িয়ে না করল।মুনিয়া বেগম রাই এর মাথায় মমতার হাত বুলিয়ে কোমল গলায় বলল…….

—তোমাদের মাঝে কি হয়েছে তা আমি জানি না মা।আর না জানতে চাইবো।শুধু এতোটুকু বলল,বিয়ে হল এক পবিত্র বন্ধন।তোমরা একে অপরের সাথে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একে অপরের পরিপূরক হয়ে গেছো।শোন মা একটা কথা বলি।জীবনে চলার পথে একে অপরের সাথে ছোট ছোট ঝগড়া,লড়াই মান-অভিমান হতেই থাকবে।তাই কখনো রাগ করে দূরে যাওয়ার কথা মাথায় আনবে না।মনে রাখবে মান-অভিমান ভালোবাসা কমায় না আরো বাড়িয়ে তোলে।

________

রাত ৩:১৫মিনিট।বেডের এক পাশে জড়সড় হয়ে বসে রয়েছে রাই।না চাইতেও চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে নোনা জল।ভাগ‍্য তাকে আজ কোথার থেকে কোথায় এনে দাড় করেছে।ভাগ‍্যের কি নির্মল পরিহাস।কাল যে বাসায় অভাগা হয়ে অশ্রয় নিয়ে ছিলো আজ সে সেই বাসায় বউ।হঠাৎ ফাহাদ এর কথা মনে পরে গেলো।সারাদিনের টেনশনেতো বড় টেনশন ফাহাদ এর কথা ভূলেই গিয়েছিলো সে।ফাহাদ এর কথা মনে পরতেই চোখে মুখে ভয়ের ছাপ চলে আসলো।মনে মনে নানান কথা ভাবতে লাগলো।ফাহাদ কি তাকে খুজছে?তার থেকে পালিয়ে বেড়ানোর কারনেই ফাহাদ রাইকে নানান ভাবে শাস্তি দিত।এখন তো সে একেবারে পালিয়ে এসেছে।যদি তাকে খুজে পায় তখন তাকে কি করবে ফাহাদ?একেবারে মেরে ফেলবে নাকি অন‍্য কোন শাস্তি দিবে?ফাহাদ কে নিয়ে বেশি কিছু ভাবার আগেই মুখে ঠান্ডা পানির ছিটা লাগতেই রাই কেপে উঠল।তীব্র মাত্রই সাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে।রাই এর সামনে এসে হাত দিয়ে চুল ঝাড়ছে।রাই তীব্রর দিকে একপল তাকিয়ে কিছুটা নড়েচড়ে আগের মতই বসে রইল।তীব্র হাই তুলে বলল…….

—ঐ পাশে যাও।আমি ঘুমাবো।

তীব্রর কথা শুনে রাই তীব্রর দিকে তাকাতেই তীব্র বিরক্তির সুরে বলল……..

—আমি সব সময় এই পাশেই ঘুমাই।আমার ঐ পাশে ঘুম আসে না।যদি এটা ভেবে থাকো আমি নাটক,সিনেমার মত তোমায় এই বিশাল বেডে হাত পা ছড়িয়ে আরাম করে ঘুমাতে দিয়ে আমি নিচে অথবা সোফায় ঘুমাবো তাহলে তুমি ভূল।আমি নাটক,সিনেমার হিরোদের মত অতো মহান না।বড় কথা আমি হিরোই না।আর হ‍্যা ঘুমোলে আমার হাত পা ঠিক থাকে না।ঘুমের ঘরে হাত-পা লাগলে সরি।আরে আমিও না কি সব বলি।তুমি তো অন‍্য কেউ না হাত লাগলেই কি না লাগলেই কি।আমারই তো অর্ধাংশ তুমি।(চোখ মেরে)

তীব্রর কথা ও কাজে রাই এর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।মনে মনে বলতে লাগলো…….

—এ আবার কোন লোকের পাল্লায় পরলাম আমি?

#চলবে,

(বানান ভূলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন‍্যবাদ)

#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Extra_Part
#Ariyana_Nur

—আমরা কোন ভূল করলাম না তো তিহান?

ফাইজার কথা শুনে তিহান চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে পাশে শুয়ে থাকা ফাইজার দিকে তাকিয়ে বলল……

—তোমার কেন মনে হচ্ছে আমরা ভূল করেছি?

ফাইজা চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে মিনমিনে গলায় বলল…….

—আমার নিজের কাছে নিজেকে অনেক ছোট মনে হচ্ছে তিহান।আমি রাইজুর সাথে চোখ মিলাতে পারছি না।ওর দিকে তাকালেই মনে হয় ওর ঐ মায়াবী চোখজোড়া আমায় বলছে তুই ও আমার সাথে বেইমানী করলি ফাইজু?আমার বিশ্বাসের অমর্যাদা করলি।আমি কাজটা ঠিক করিনি তিহান।মোটেও ঠিক করেনি।রাইজু বিশ্বাস করে আমার কাছে এসেছিলো আর আমি?আমি কি করলাম?নিজের ফ‍্যামিলি নিজের ঘর বাচানোর নানান মিথ‍্যে অজুহাত দিয়ে ওকে বিয়ে করার জন‍্য বাধ‍্য করলাম।রাইজু মুখে না বললেও আমি জানি, একমাত্র আমার ঘর বাচানোর কথা শুনে ও বিয়েতে মত দিয়েছে।তা না হলে ও এই বিয়ে কিছুতেই করতো না।আমার কাজে ও খুব কষ্ট পেয়েছে তিহান।নিজের কাজে নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে।

তিহান ফাইজার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।ড্রিম লাইটের আলোতে ফাইজার অস্রুভেজা চেহারা দেখে তিহানের মুখটা মলিন হয়ে গেলো।ফাইজার কথাই বুঝা যাচ্ছে ফাইজা অনেক কষ্ট পাচ্ছে।তিহান উঠে বসে ফাইজাকে টেনে তুলে ফাইজার চোখের জল মুছে দিয়ে ফাইজাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল…….

—তুমি যা করেছো সব তো ভাবির ভালোর জন‍্য করেছো।তাহলে কেন নিজেকে ছোট মনে করছো তুমি?

ফাইজা ফুপিয়ে বলে উঠল…….

—ভালোর জন‍্য করি আর যাই করি।যা করেছি সেটা তো অন‍্যায় তিহান?একটা মেয়ে অসহায় অবস্থায় আমার কাছে আশ্রয় নিলো।আর আমি কি করলাম?মেয়েটার অমতে মেয়েটাকে অন‍্য এক সম্পর্কে জড়িয়ে দিলাম।সবাই না জানলেও আমি তো জানি মেয়েটা কোন অবস্থা থেকে এখানে এসেছে।কি করে আমি এমন জঘন‍্য একটা কাজ করতে পারলাম।

তিহান ফাইজার মাথায় হাত বুনিয়ে দিতে দিতে বলল…….

—তুমি একা কেন নিজেকে দোষারোপ করছো ফাইজা।ভূল তো আমিও কিছু কম করিনি।একমাত্র আমার জন‍্য আজ ভাবির এই অবস্থা।সেদিন যদি আমি ভার্সিটিতে এমন মজা না করতাম তাহলে মনে হয় না এমন কিছু একটা হত।তাছাড়া তোমার সকল কাজে আমিই তো তোমায় সাহায‍্য করেছি।ভাবিকে তুমি বাধ‍্য করেছো বিয়ে করতে আর ভাইয়াকে আমি।

কথাগুলো বলেই তিহান একটা চাপা নিশ্বাস ছাড়লো।তিহান কথার প্রতিউওরে ফাইজা কিছু না বলে নিজের মত কেদে বুক ভাসাতে লাগলো।তিহান কিছুক্ষন চুপ করে থেকে কোমল গলায় বলল…….

—ফাইজা!তুমি জানো ভাইয়া আমার জন‍্য কি?আমার নিজের কষ্ট আমি সহ‍্য করতে পারলেও ভাইয়ার একটু কষ্টও আমার সহ‍্য হয় না।সেখানে তুমিই বল আমি কি ভাইয়ার খারাপ চাইতে পারি?তুমি চাও ভাবি যেন ভালো থাকে।তার কালো অতীত ভূলে সুন্দর একটা জীবন গড়তে পারে আর আমি চাই আমার ভাইটা যেন সব সময় হাসিখুশি থাকে।তার ঐ মুখে যেন কখনো আধার এসে ভিড় না জমায়।আমরা যা করেছি ভাইয়া আর ভাবির কথা ভেবেই সব করেছি।তাদের ভালো চেয়েই করেছি।কিন্তু আমাদের কাজের ধরন ভূল ছিলো।কারো ভালো করতে গিয়ে একটু আকটু ভূল করা তো দোষের নয়?

—যদি তারা আমাদের ভূল বুঝে?ভূল বুঝে আমাদের দূরে ঠেলে দেয়?

—সেসব নিয়ে এখন এতো ভেবো না তো।পরের টা পরে দেখা যাবে।তখন না হয় কিছু একটা করে তাদের বানিয়ে নিব।

ফাইজা তিহানের মুখের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল…….

—ভাইয়া রাইজুকে মেনে নিবে তো তিহান?সব ঠিক হবে তো?

তিহান ফাইজাকে একটা মুচকি হাসি উপহার দিয়ে বলল……

—দোয়া কর সব যেন ঠিক হয়ে যায়।আমরা যেনমটা চেয়েছি তেমনটাই যেন হয়।

ফাইজা দু’হাত মোনাজাতে মত করে তুলে বলল…….

—আমিন।

________

তীব্র রাই এর ভীত মুখ এর দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসতে লাগলো।রাইকে আরেকটুকু বিব্রত করতে রাই এর সাথে লেগে সটান হয়ে শুয়ে পরল।সাথে সাথেই রাই ছিটকে সরে লাফ দিয়ে বেড থেকে নিমে পরল।রাই এর কাজে তীব্র শব্দ করে হেসে উঠল।তীব্র কাজে রাই বোকার মত তীব্রর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।তীব্র হাসতে হাসতে উঠে বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে বলল……

—সরি, সরি মজা করছিলাম।তুমি যে এমন ভয় পাবে তা ভাবতে পারিনি।মজা করার জন‍্য সরি বিয়াইন সাহেবা।

তীব্রর কথা শুনে রাই এর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।মনে মনে বলতে লাগলো……

—একটু আগে বললো বউ এখন বলছে বিয়াইন সাহেবা।লোকটি কি পাগল নাকি?সাইকোর হাত থেকে পালিয়ে মেন্টেল এর হাতে এসে পরলাম নাতো?

তীব্র রাই এর মুখের সামনে চুটকি বাজিয়ে বলল…….

—ও হ‍্যালো! আমার দিকে এমন টুকুর টুকুর করে তাকিয়ে আছো কেন?নজর লেগে যাবে তো।

তীব্রর কথা শুনে রাই সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেলল।রাই নিজের কাজে নিজেই বিব্রত বোধ করছে।রাই কি বলবে কি করবে সে সব ভাবতে ভাবতে দাড়িয়ে কাচুমাচু করতে লাগলো।

তীব্র সোজা হয়ে বসে রাইকে বসতে ইশারা করে সিরিয়াস হয়ে বলল…….

—তোমার সাথে কিছু কথা আছে?এখন বললে তোমার কোন অসুবিধা হবে না তো?

তীব্রর কথা শুনে রাই মাথা নাড়িয়ে না করল।যার মানে তার কোন অসুবিধে হবে না।

তীব্র কিছুটা সরে বসে পূনরায় রাইকে বেডে বসতে ইশারা করে বলল…..

—বসো।

তীব্রর কথা শুনে রাই গুটিগুটি মেরে বেডের এক কোনে গিয়ে বসল।তীব্র বড় করে একটা নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে কিছুটা প্রস্তুত করে বলল…….

—দেখো রাই!আজ আমাদের জীবনে যেটা ঘটছে না সেটার জন‍্য তুমি দায়ী আর না আমি।আমরা দুজনই পরিস্থিতির স্বীকার ছিলাম।হয়তো আমাদের ভাগ‍্যে এমন ছিলো।তাই আমাদের এমন এক পরিস্থিতিতে এনে দাড় করিয়েছে।যেখানে আমাদের মত দুজন অচেনা অজানা মানুষকে পবিত্র কালামের সাক্ষীতে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ করেছে।আমি জানি তোমার পক্ষে এতো তাড়িতাড়ি সব মেনে নেওয়া সম্ভব।সত‍্যি বলতে আমার পক্ষেও এতো তাড়াতাড়ি সব মেনে নেওয়া সম্ভব না।তাই বলে কি আমরা আমাদের এই পবিত্র বন্ধনের সম্পর্ক শুরু হতেই শেষ করে দিব?আমি জানি না তোমার মনে কি আছে?আমি শুধু আমার মনের কথা বলছি।আমার মতে যেভাবে চলছে সব সেভাবেই চলতে দাও।যে যেটা ভাবছে তাকে সেটা ভাবতে দাও।বাকিটা না হয় পরে দেখা যাবে ভাগ‍্য আমাদের কোন মোড়ে নিয়ে দাড় করায়।একটা কথা কি জানো,অনেক সময় চেনা মানুষটাও অচেনা হয়ে যায়।আবার অচেনা মানুষটাও অনেক কাছের হয়ে যায়।মনের খবর কেই বা বলতে পারে বল?কে তোমায় কতটা ভালোবাসে?

কথাগুলো বলে তীব্র কিছুক্ষন চুপ করে বসে থেকে বেড থেকে নামতে নামতে বলল…….

—অনেক রাত হয়েছে শুয়ে পর।

কথাটা বলে এক মুহূর্ত দেড়ি না করে রুম থেকে বের হয়ে দরজা নক করে চলে গেলো।রাই বোকার মত দরজার দিকে তাকিয়ে রইল।মাথায় শুধু তীব্রর একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে…….

—মনের খবর কেই বা বলতে পারে কে তোমায় কতটা ভালোবাসে?

_______

হাত পা বাধা অবস্থায় চেয়ারের সাথে বসে রয়েছে দিপা বেগম।ভয়ে তার চেহারা একটুখানি হয়ে রয়েছে।ফাহাদ হাতে ধাড়ালো এক ছুড়ি নিয়ে তাকে ঘিড়ে চক্রর কাটতে কাটতে বলল……

—ফুপি!তুমি কি আমার রাই পাখিকে পালাতে সাহায‍্য করেছো?

দিপা বেগম ফাহাদ এর কথা শুনে শুকনো ঢোক গিলে তোতলাতে তোতলাতে বলল……

—এসব তুই কি বলছিস ফাহাদ বাবা?আমি কেন রাই কে পালাতে সাহায‍্য করবো?

ফাহাদ দিপা বেগম এর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলল……

—তুমি তাহলে আমার পাখিকে পালাতে সাহায্য করোনি?

দিপা বেগম মাথা নাড়িয়ে না বলল।

ফাহাদ ইনোসেন্ট ফেস করে বলল…….

—তাহলে আমি তোমায় বেধে রেখেছি কেন?সরি ফুপি।ভেরি ভেরি সরি।আমি বুঝতে পারিনি।না বুঝেই তোমার কষ্ট দিয়ে ফেললাম।

কথাটা শেষ করতে না করতেই ফাহাদ দিপা বেগম এর হাতের উপর ছুড়ি চালিয়ে দিল।সাথে সাথেই দিপা বেগম গগন ফাটানো চিৎকার দিয়ে বলে উঠল…….

—ফাহাদ বাবা!আমি কিছু করিনি।মনজুর মা (কাজের মহিলা) রাইকে পালাতে সাহায‍্য করেছে।

দিপা বেগম এর কথা শুনে ফাহাদ হাতে থাকা ছুড়িটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে দিপা বেগম এর সামনে ঝুকে দাড়ালো।দিপা বেগম এর কাটা হাত শক্ত করে চেপে ধরে ফিসফিস করে বলল…….

—এইটুকু কথা বলতে এতো দেড়ি লাগে?আগে বলে দিলেই তো তোমায় আঘাত করতাম না।তুমি জানো না মিথ‍্যে আমার পছন্দ না তাহলে কেন বললে ফুপি?

ফাহাদ এর ফিসফিস কথা শুনে দিপা বেগম এর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসতে লাগলো।ফাহাদের থেকে এই কথা গোপন করার কারনে যে তার জন‍্য আরো বড় কিছু অপেক্ষা করছে সে কিছুটা হলেও সে আচ করতে পারলো।

#চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে