মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-৪২+৪৩

0
270

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৪২
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

একটা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ঠিকানাটা ভালো করে দেখে নিল মেঘলা।

ছোঁয়াঃ বাড়ি দেখে তো বেশ বড়লোক মনে হচ্ছে।
মহুয়াঃ হুম শুধু মনটা ছোট।
মেঘলা চলো যাওয়া যাক।
ছোঁয়া থেমে বলে উঠলো, ‘ বাই চান্স মহুয়া কে দেখে ও-ই লোক চিনি ফেললো তারপর কি হবে!.?’
মেঘলাঃ কিছু হবে না শুধু নিজের মুখ বন্ধ রাখ আর মহুয়া মাক্স পড়ে নাও।
মহুয়াঃ আগে ওই লোকের কথা মাথায় আসলে বোরকা পড়ে আসতাম যদি চিনে ফেলে।
ছোঁয়াঃ চিনে ফেললে আর কি কাজী ডেকে জোর করে বিয়ে করে নিবে এই শেষ বয়সে দুই পাশে দুই সুন্দরী বউ বাহ্ বাহ্ বুড়ার তো চাঁন কপাল।

ছোঁয়ার কথা শুনে মহুয়া রেগে তাকালো পর মুহূর্তে সবাই আবার এক সাথে হেঁসে উঠলো।

দারোয়ান প্রথম ওদের ঢুকতে দিতে চায়নি মিমের কাজিন বলে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে ঢুকলো। বিশাল বড় বাড়ি, দুই পাশে কি সুন্দর ফুলের বাগান মাঝে বাড়িতে প্রবেশ করার রাস্তা।
ছোঁয়াঃ মহুয়া সুন্দরী তুই তো এই বাড়িতে রাণী হয়ে থাকতি রে কি সুন্দর।
মহুয়াঃ ছোঁয়া তোমাদের বাড়িটা এটার থেকেও বেশি সুন্দর।
ছোঁয়াঃ হুহ্ কচু এতো সুন্দর ফুল বাগান তো নেই। এক পাশে ফুল বাগান আর এখানে দুই পাশে।
মেঘলাঃ ঠিক আছে ছোঁয়া দেখি এই বাড়িতে আর একটা সুগার ডেডি পাই কিনা। পেলে তোকে আজকেই এই বাড়ির রাণী বানিয়ে দিয়ে যাব।
ছোঁয়াঃ ছিঃ ভাবি।
মেঘলাঃ হিহিহি তুমি তো বাড়ি দেখে আপসোস করতেছো।
ছোঁয়া মুখ ভেকে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,’ কিউট, হ্যান্ডসাম ছেলে থাকলে নিষেধ করতাম না।’
মেঘলাঃ তাহলে আমার দেবরের কি হবে শুনি.??
মহুয়াঃ দেবর,!.?
মেঘলাঃ ছাড় এখন সব কিছু নিজেদের কাজ শেষ করি আগে।

বাড়ির মেইন দরজা খুলা তিনজন একসাথে ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করতেই একটা প্লেট এসে পড়লো মহুয়ার কপালে। ব্যাথায় আহ্ বলে কপাল চেপে ধরলো মহুয়া।

ছোঁয়া মেঘলা অবাক হয়ে সামনে তাকালো বাড়ির সব লোক ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। কাজের লোকরা ভয়ে কাঁপছে।

মেঘলা এসে মহুয়ার কপাল দেখলো অনেকটা ফোলে গেছে রাগে সামনে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই একজন মধ্য বয়স্ক লোক বলে উঠলো, ‘ মেয়েটাকে সোফায় বসিয়ে কপালে পানি দাও।’

মিম দৌড়ে ওদের সামনে এসে বললো,’ সোফায় বসুন আমি পানি নিয়ে আসছি। ‘
মহুয়া স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো মিমের দিকে মুখ থেকে সব কথা যেন হারিয়ে ফেলেছে।
মিমের শরীরে দামী শাড়ি,গহনা। মুখে কালচে অসংখ্য দাগ, ঠোঁটের নিচে রক্ত জমাট বেঁধে আছে।

দামী শাড়ি,গহনা কি সুখ আনতে পারে.? টাকা পয়সা কি মনের শান্তি আনতে পারে.? এই বিশাল বড় বাড়ি কি জীবনে আনন্দ দিতে পারে..?

মিম দৌড়ে পানি এনে দিতে চাইলে মহুয়া থামিয়ে বললো,’ আমি ঠিক আছি।’

কন্ঠ শুনে মিমের হাত থেকে গ্লাস নিচে পড়ে গেল। এতোক্ষন কষ্টে আঁটকে রাখা জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো।

” এটা কি করলেন আপনি!!.?? অন্যের জিনিস ভাঙতে তো গায়ে লাগবে না। জানেন এই গ্লাসের দাম কতো.? আপনার মতো দশটা মেয়েকে বিক্রি করলেও একটা গ্লাসের দাম আসবে না। ”

মেঘলা টেবিলে বসে ফুঁসতে ফুঁসতে রেগে কথাগুলো বলা ছেলেটার দিকে তাকালো।

ছোঁয়াঃ এইগুলো কেমন আচরণ!.?
মেঘলা চুপ করে পরিস্থিতি বুঝতে চাইলো। আসলে এতোক্ষন এখানে হচ্ছিল কি.? কে প্লেট ছুড়ে মারলো।?

~ মাহিন তুমি দিন দিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছ বাহিরের মানুষের সামনে এইগুলো কেমন আচরণ!.?
~ প্লিজ আপনি চুপ থাকুন আর আপনার বউকে বলে দিবেন আমার সামনে যেন কখনো না আসে।
~ মাহিন দাদুভাই খাবার শেষ করে রুমে যাও।
~ এই মহিলার হাতের রান্না আমি খাব ভাবলেন কিভাবে দাদু। উনি হাজার চেষ্টা করলেও আমার মায়ের জায়গা নিতে পারবে না।

মধ্য বয়স্ক লোকটা বলে উঠলো, ‘ আপনারা কে.??’
মেঘলাঃ আমরা মিমের কাজিন।

লোকটা হঠাৎ রেগে গেল, ‘ এদের ভেতরে আশার জায়গা কে দিয়েছে.? দারোয়ান কোথায়.?
ছোঁয়াঃ আস্তে দাদাভাই আমরা শুধু একটু দেখা করেই চলে যাব।
মিম ভয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,’ আ..আমি কি..ছু জা জানিনা বিশ্বাস করু…ন।’

মহুয়াঃ মিম কিছু জানেনা আমরা ওর সাথে যোগাযোগ না করেই এসেছি। কেন আমার বোনকে আমি দেখতে আসতে পারি না.?
~ তুমি কে.?
~ আমি মিমের বোন।
~ পালিয়ে যাওয়া মেয়েটা।
মহুয়া চুপ করে রইলো।

মাহিনঃ যতসব ছোটলোকের কাজ কারবার।
মহুয়া দাঁড়িয়ে মিমের হাত ধরে বলে উঠলো, ‘ আজ এই মুহূর্তে আমি নিজের সাথে মিম কে নিয়ে যাচ্ছি পারলে কেউ আটকিয়ে দেখাক।’

লোকটা রেগে মহুয়ার হাত থেকে মিমের হাত ছাড়ানোর জন্য হাত বাড়াতেই মেঘলা লোকটার হাত শক্ত করে ধরে ফেললো।

মাহিন বসে বসে তাদের ড্রামা দেখছে।

উপর থেকে একটা মেয়ে চিৎকার চেচামেচি করে নামছে আর মিমের নাম নিয়ে গালি দিচ্ছে।
~ আব্বু আপনি এখানে আর আমি আমার ড্রেসটা খুঁজে পাচ্ছি না আপনার বউ কোথায় রেখেছে.?

~ ঠিক ভাবে কথা বলো তোমার আম্মু হয়।
লোকটা দারোয়ানকে কল দিয়ে বললো জলদি এদের বের করে দিতে।

মেঘলা ব্যাগ থেকে নিজের আইডি কার্ড বের করে দেখালো।
সাথে সাথে লোকটা চুপ হয়ে গেল।
মেঘলাঃ আমি একজন সিআইডি অফিসার বেশি বাড়াবাড়ি করলে….
লোকটার মেয়ে রেগে বলে উঠলো, ‘ এখানে হচ্ছেটা কি.?’
ছোঁয়া মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপনার ড্রেসআপ নিয়ে আলোচনা চলছে।’

মহুয়া মিমের হাত ধরে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় মাহিন ছেলেটা পেছন থেকে ডাক দিলো।

~ মাক্সটা খুলুন।
মহুয়া ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই ছেলেটা নিজের পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে এটার ভেতর থেকে একটা ছবি বের করে মহুয়ার সামনে রেখে বললো,’ এটা আপনি.? ‘
মহুয়া অবাক হয়ে বললো,’ আপনার মানিব্যাগে এই ছবি!.?’
মাহিনঃ আপনার.?
মহুয়া রেগে ছবিটা হাতে নিয়ে ছিড়ে ফেললো।
মাহিন হেঁসে বলে উঠলো, ‘ আরও আছে। মাক্স খুলতে বলে ছিলাম না হয় এখান থেকে এই মহিলা যাবে আপনি বের হতে পারবেন না।
মহুয়াঃ দেখা যাক কে বের হয় আর কে না হয়।
ছোঁয়া, মেঘলা বের হয়ে এসে বললো,’ চলো।’
মাহিনঃ আপনারা সবাই বের হন শুধু এই মেয়ে থাকবে।
মেঘলা ছেলেটার দিকে ভালো করে তাকালো বয়স কতো হবে.? ২৫! মিমের থেকেও বড় আর এ-ই ছেলের মা নাকি ১৭ বছরের একটা বাচ্আা মেয়ে!। টাকা থাকলে সবই সম্ভব।

ছোয়াঃ কি আজব আরেক ঝামেলা।
মহুয়ার রাগে ইচ্ছে করলো ছেলেটার চোখের সাথে সাথে হাত পা ভেঙে দিতে।

ছেলেটা হেঁসে বলে উঠলো , ‘ আচ্ছা এই মহিলাকে নিয়ে যাচ্ছেন আর কখনো যেন এই বাড়িতে না দেখি। আর আপনার সাথে খুব জলদি দেখা হবে।’

ছোঁয়া গেইট থেকে বের হয়ে বলে উঠলো, ‘ বাপ বেটা সব গাঞ্জাখোর। তাকানোর, কথা বলার স্টাইল দেখলেই ঘা জ্বলে উঠে।

___________

মিম কে দেখেই ওর আম্মু জড়িয়ে ধরলেন বুকের সাথে। মিমও মাকে দেখেই কান্না শুরু করলো। জেনো কতো বছর পর মা মেয়ের মুখ দেখছে।

মেঘলা বললো খুব জলদি সব ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে। মিমের ডিভোর্স করিয়ে কলেজে ভর্তি করিয়ে দিবে।

মিমঃ এতো জলদি উনি ছাড়বে না এতো সহজে নয়।
মেঘলাঃ এই বিষয় তোমার ভাবতে হবে না। তোমার পুরো জীবন সামনে পড়ে আছে উঠে নিজের পায়ে দাড়াও আমি সব ঠিক করে দিব। নিজে শক্ত হও।

এই রাতটা থেকে পরের দিন সকালে নিজেদের শহরে চলে গেল ছোঁয়া, মেঘলা।

মিম আগের সব অন্যায়ের জন্য ক্ষমা চাইলো মহুয়ার কাছে।

__________

দিন গিয়ে রাত নামছে, রাত গিয়ে দিন দেখতে দেখতে ১৫দিন চলে গেল।

সকাল থেকেই বাড়ি সাজগোছ শুরু হলো।

মহুয়া বেশ কয়েকবার মামিকে জিজ্ঞেস করলো বাড়িতে কি কোনো অনুষ্ঠান আছে.??
মামি শুধু কথা এড়িয়ে যাচ্ছে।

বাড়িটা খুব সুন্দর করে সাজানো শেষ। পুরো বিয়ে বাড়ির মতো করে বাড়ি সাজানো হলো।

মহুয়া মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো একদিনও আহনাফ কল বা মেসেজ দেয়নি। এই ১৫দিন পনেরো বছরের মতো ছিল।

মিম এসে মহুয়ার পাশে বসে বলে উঠলো, ‘ আপু হাতটা দাও।’
মহুয়া হাতের বইটা রেখে মিমের দিকে তাকালো।
মিমঃ দাও না।
মহুয়াঃ আমাকে না জানিয়ে কি হচ্ছে বাড়িতে মিম!.?
মিমঃ তেমন কিছু না আগামীকাল ভাই ভাবি আসবে। ভাবি বললো বাড়িটা বিয়ে বাড়ির মতো সাজাতে। এখন দাও তোমার হাতে মেহেদী দিয়ে দেই।

মহুয়া নিষেধ করতে চাইলো কিন্তু মিমের মুখের দিকে তাকিয়ে নিষেধ করলো না। চঞ্চল মেয়েটা কেমন গম্ভীর হয়ে গেছে এই প্রথম কাছে এসে আবদার করেছে কিভাবে নিষেধ করবে!?

মহুয়া হাত বাড়িয়ে দিল খুব সুন্দর করে মিম দুই হাত ভর্তি মেহেদী দিয়ে দিল।
মিমঃ তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে আপু।

বিনিময় মহুয়া মুচকি হাসলো।

_____________

মেঘলা রাত বারো টায় বাড়িতে আসলো৷ বাড়ির দিকে তাকিয়ে অনেক অবাক হলো। আজ সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় আব্বুকে দেখেছে কিছু লোক এসেছে এতোটাও গুরুত্ব দেয়নি। এখন বাড়ি এভাবে এতো সুন্দর করে সাজানো কেন.? মেঘলা গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে আশপাশে চোখ বুলিয়ে বাড়িতে আসলো।

বাসায় এসে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস না করে নিজের রুমে গেল। রুমে গিয়ে আরও অবাক হলো বিছানায় গোলাপ ছড়িয়ে আছে মেঘলা বিছানার পাশে গিয়ে ফুলগুলো হাতে নিল। ফুলের নিচে খুব সুন্দর একটা চিরকুট। চিরকুট খুলেই দেখলো লেখা ” অপেক্ষা ”

চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৪৩
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

সকাল সকাল দারোয়ানের কল পেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো মেঘলা।

এলোমেলো চুলগুলো সামনে এসে পড়ে আছে, চোখ গুলো লাল হয়ে আছে সাজ্জাদের।

সাজ্জাদের এমন অবস্থা দেখে অবাক হলো মেঘলা। দ্রুত ওর সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’ কি হয়েছে…!!?’

সাজ্জাদ কেমন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো মেঘলার শ্যামবর্ন মুখটার দিকে।
মেঘলা কিছু বলার আগেই সাজ্জাদ বলে উঠলো, ‘ আপনি রাজি! আপনি রাজি মেঘলা!.? এখানে আপনাকে জোর করা হলে আমাকে বলুন আমি সব কিছু ঠিক করে দিব।’

মেঘলা কিছুই বুঝতে পারছে না। সাজ্জাদ কিসের কথা বলছে.?

সাজ্জাদঃ মেঘলা..
মেঘলাঃ আপনি কিসের কথা বলছেন.? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

সাজ্জাদঃ আপনি সত্যি বুঝতে পারছেন না!.?
মেঘলা মাথা নেড়ে না বুঝালো।
মেঘলাঃ বাসায় আসুন বসে কথা বলি।
সাজ্জাদঃ আপনি তো বলে ছিলেন তিন মাস পর ডিভোর্স তাহলে আবার বিয়ে কেন.?
মেঘলাঃ মানে…? আমি আপনাকে কখন বলেছি? আর কিসের কথা বলছেন.?

সাজ্জাদ বাড়ির দিকে তাকিয়ে হাসলো তারপর মেঘলার দিকে তাকিয়ে আঙ্গুল দিয়ে বাড়ির সাজগোছ দেখিয়ে বললো,’ তারপরও আমার বুঝিয়ে বলতে হবে মেঘলা। আপনি একজন সিআইডি হয়ে এতোটুকুও বুজেন না!.?

মেঘলা চুপ হয়ে গেল। মনের ভেতর উঁকি দিয়ে থাকা সব সন্দেহ প্রশ্ন কেমন সত্যি হয়ে যাচ্ছে।

সাজ্জাদ দুই পা এগিয়ে এসে মেঘলার হাত ধরতে নিলে মেঘলা পিছিয়ে গেল।

মেঘলাঃ সাজ্জাদ বাসায় যান আপনাকে দেখে অসুস্থ মনে হচ্ছে।
সাজ্জাদঃ আমার সুস্থ হওয়ার সব কিছু আপনার হাতে আপনি আমার হয়ে যান মেঘলা আমি সুস্থ হয়ে যাব।
মেঘলাঃ আমি আপনার বন্ধুর ভাইয়ের বউ আপনার লজ্জা থাকা উচিত সাজ্জাদ।
সাজ্জাদ তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো, ‘ এটা বিয়ে নয় গেইম ছিল।’
মেঘলাঃ আপনাকে আমি কখনো বলেছি গেইম ছিল.? কখনো বলেছি এই বিয়ে আমি মন থেকে মানি না.? কখনো বলেছি.? অন্যের বউয়ের দিকে নজর দেওয়া পুরুষদের পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ আমি মনে করি। বিয়ে যেভাবেই হোক আমি কারো বউ নিজের চোখ সংযত করুক। আমার চোখের সামনে দ্বিতীয় বার যেনো আপনারকে কখনো না দেখি।
সাজ্জাদ আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেঘলার দিকে।
মেঘলা রেগে গেইট শব্দ করে বন্ধ করে ভেতরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।
সাজ্জাদ গেইটের বাহির থেকে তাকিয়ে আছে সাজানো বাড়িটার দিকে।
এই প্রথম কাউকে মনে ধরে ছিল, ভালো লেগে ছিল আর তাকেই এভাবে হারাতে হচ্ছে!

মেঘলা বাসায় এসে রায়হান সাহেবের সাথে রাগারাগি করে নিজের রুমে চলে গেল। সে বুঝতে পারছে না এখানে লুকোচুরি কেন খেলা হচ্ছে.??? সব রাগ গিয়ে জন্মালো শ্রাবণের উপর। শুধু একবার সামনে পাই মেঘলা কি সেটা বুঝিয়ে দিবে।

_____________

ছোঁয়া সোফায় বসে টিভি দেখছে আর চা খাচ্ছে।
নির্জন এসেই ছোঁয়ার পাশে বসে পড়লো।
ছোঁয়া নাকে হাত দিয়ে বলে উঠলো, ‘ ছিঃ দূরে গিয়ে বস না ঘা থেকে বিশ্রী গন্ধ আসছে।’

নির্জন রেগে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ এই গন্ধ শোনার জন্য কতো মেয়ে পাগল জানিস.? তুই জানবি কিভাবে তুই তো মেয়েই না, মেয়েদের কাতারেই পড়িস না, এটা কে গন্ধ নয় ঘ্রাণ বলে। আর মেয়েরা ছেলেদের এই ঘ্রাণেই পাগল। ‘
ছোঁয়া হ্যাঁ করে নির্জনের কথা গুলো শুনে হুঁ হুঁ করে হেঁসে উঠলো।
ছোঁয়াঃ ভাই উল্টা পাল্টা কি খেয়ে এসেছিস বলতো.? তোর পাশে বসেই আমার বমি আসতেছে।
নির্জন ইচ্ছে করে ছোঁয়ার ঘা ঘেঁষে বসলো। ছোঁয়া দূরে সরে যেতে চাইলে নির্জন ছোঁয়ার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের উপর এনে ফেললো।
ছোঁয়া চেঁচামেচি শুরু করলো ছেড়ে দিতে।
নির্জনঃ ছোঁয়া..
ছোঁয়া চুপ হয়ে গেল হৃদপিণ্ড থমকে গেল, কেমন উদাসীন দৃষ্টিতে তাকালো নির্জনের দিকে।
নির্জন ছোঁয়ার মুখের উপর ফু দিয়ে চুল গুলো উড়িয়ে দিল।
সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিল ছোঁয়া।
নির্জন তা দেখে মুচকি হাসলো। ধীরে ধীরে ছোঁয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ বিশ্রী ঘ্রাণে মাতার মাতার স্মেল আছে নারে ছোঁয়া!! ‘

ছোঁয়া লজ্জায় নির্জনের থেকে দূরে সরে যেতে চাইল।নির্জনের এক হাত ছোঁয়ার কোমরে অন্য হাত ঘাড়ে। নির্জন ছোঁয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তাকা আমার দিকে।’
ছোঁয়া লজ্জায় মাথা তুলতে পারছে না।
নির্জনঃ একবার তাকা।
ছোঁয়াঃ উঁহু..
নির্জনঃ ছোঁয়া রাণী আপনি তাকাবেন আপনার জাহাপনার দিকে।
ছোঁয়া নির্জনের দিকে না তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আম্মুওও!!’

সাথে সাথে নির্জন ওকে ছেড়ে দিল।
ছোঁয়া ছাড়া পেয়ে সাথে সাথে দাঁড়িয়ে মুখ ভেংচি কেটে বলে উঠলো, ‘ আসছে আমার জাহাপনা হতে ভিতুর ডিম..’
নির্জনঃ ছোঁয়া এটা চিটিং…
ছোঁয়া সোফা থেকে বালিশ নিয়ে ছুড়ে মারলো নির্জনের দিকে।

______________

মহুয়া রেগে বসে আছে কি আজব! মামিকে জিজ্ঞেস করলো বাড়িতে কি হচ্ছে..? মামি হাসতে হাসতে উত্তর দিল মিমের বিয়ে। মানে কি..? ডিভোর্স হয়নি এক জনের সাথে আবার বিয়ে! আর মিম আজও ভালো হলো না বিয়ের কথায় নাচতে নাচতে কিভাবে রাজি হলো.? এতো কিছুর পরেও এই মেয়ে ভালো হবে না।

দুপুরের দিকে পার্লার থেকে দুইটা মেয়ে এসে হাজির হলো মহুয়ার রুমে।
মহুয়া ভ্রু কুঁচকে তাকালো তাদের দিকে।
তাদের পেছন পেছন এসে হাজির হলো মিম আর ওর দুই ভাবি।
মহুয়াঃ এরা কারা.??
মিমঃ ভাবিদের সাথে পরিচয় হয়ে যাও।
মহুয়া কথা বললো ভাবিরাও ভীষণ মিশুক।

মিমঃ তোমার জন্য আজ অনেক বড় সারপ্রাইজ আছে।
মহুয়া একটু হাসলো যদিও এখন মিম কে দেখলেই রাগ হচ্ছে তাও জোর পূর্বক হাসলো।

ভাবিঃ মহুয়া দেখো তো সব কিছু পছন্দ হয় কিনা! অবশ্য প্রিয় মানুষের আনা সব কিছুই পছন্দ, অপছন্দ জিনিসটাও পছন্দ হয়ে যায়।
মহুয়াঃ মানে.??
মিম চোখ ঘুরিয়ে ভাবিকে কিছু একটা ইশারা করতেই ভাবি চুপ হয়ে গেল।

তারা জোর করেও কেউ মহুয়াকে কিছু পড়াতে পারলো না। মহুয়া উল্টো রেগে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। কিসের সারপ্রাইজ! উল্টো মনে হচ্ছে মিমের নয় বিয়েটা ওর।

সময় গড়িয়ে যায় রুম থেকে নিচের হৈচৈ শুনতে পায়। তাহলে কি জামাই চলে এসেছে.? একবার কি গিয়ে দেখা উচিত!.? সব কিছু ছেড়ে ধপ করে বিছানায় বসে মোবাইল হাতে নিল। আজকে আহনাফ কে একটু বেশিই মিস করছে।

কিছু সময় পর দরজায় নক হতেই মহুয়া বিরক্তিকর দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকালো। উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই ভূত দেখার মতো চমকে তাকিয়ে রইলো।

______________

মেঘলা খুব সুন্দর করে সেজেছে বিয়ে সাজগোজ নিয়ে কখনো সখ ছিল না মেঘলার তারপরও আজ সে মন ভরে সেজে নিচ্ছে। শ্রাবণ কি মনে করেছে সে মেঘলাকে চমকে দিবে!.? মোটেও না আজ মেঘলা ওকে চমকে দিবে। নিশ্চয়ই মেঘলা কে দেখেই শ্রাবণ ভাঙা মন নিয়ে বলবে ” মেঘলা তুমি অন্য কারো জন্য এতো ভারিভারি সাজে সেজেছো!.? নিশ্চয়ই ছ্যাঁখা খাওয়া লোকদের মতো বড় বড় ডায়লগ দিবে ভাবতেই হাসি পেল মেঘলার।

নিচে হৈচৈ শুনে রুম থেকে বাহির হয়ে ছাদে গেল। পেছন পেছন পার্লারের মেয়েরাও গেল। ওরা নিশ্চয়ই ভাবছে কি উদ্ভুত মেয়ে নিজের বিয়ের সাজ নিজে সাজছে তাহলে আমাদের বসিয়ে রাখছে কেন.? মেঘলা পেছনের দিকে তাকিয়ে একটা মেয়ের হাতে মোবাইল দিয়ে বললো,’ ভিডিও করুন তো, এটাই আপনাদের কাজ।’

পার্লারের লোকদের ফটোগ্রাফার বানিয়ে দিল!

~ আপু আমাকে দেন আমার তো ছোট থেকেই ফটোগ্রাফার হওয়ার সখ ছিল। যদিও আপনার বিয়েতে অনেক ফটোগ্রাফার এসেছে তবে সব নিচে আপনার কাছে কিছুই নেই।

মেঘলা হেঁসে বললো,’ বিয়েটা শুধু ছেলে আর ছেলে পক্ষের হচ্ছে তাই সব কিছু ওদের হাতে। ‘
~ এটা কেমন বিয়ে.?
মেঘলা হেঁসে বললো,’ এটাই তো মজার। ‘
~ আপনি দেখছি অনেক খুশি বিয়েতে।
আরেকটা মেয়ে বলে উঠলো, ‘ জামাই তো নয় যেনো নায়ক।’
মেঘলা হেঁসে বললো,’ তাই নাকি.?’
~ কেন আপু আপনি এখনো নিজের জামাই দেখেন নি.?
মেঘলা ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো, ‘ নাহ্..!’

___________

মহুয়া সামনে আহনাফ কে দেখেই খুশি হলেও অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিল।
মহুয়াঃ আপনি এখানে.?
আহনাফ এক হাতে কপাল স্লাইড করে বলে উঠলো, ‘ রেডি হওনি কেন.?’
মহুয়াঃ আজ তো আপনার বিয়ে ছিল! এখানে কেন.?
আহনাফ হেঁসে বলে উঠলো, ‘ বউ সাজছে না তাই বিয়ে ছেড়ে বউয়ের কাছে চলে আসতে হয়েছে। ‘
মহুয়াঃ মানে.?
আহনাফঃ মানে, বউ আমার সামনে দাঁড়িয়ে মানে! মানে! করছে তাও বর চিনছে না।

মহুয়ার মুখ আপনা আপনি হা হয়ে গেল।

আহনাফ রুমে ডুকে দরজা বন্ধ করে দিল।
আহনাফ মহুয়াকে বিছানায় বসিয়ে সব কিছু ওর সামনে রেখে বললো পাঁচ মিনিটে রেডি হও।
মহুয়া রেগে আহনাফের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমি কিছু পড়বো না। ‘
আহনাফঃ কেন.?
মহুয়াঃ আপনারা সবাই আমাকে বোকা বানালেন.?
আহনাফঃ আমরা তো শুধু সারপ্রাইজ…
মহুয়াঃ থামুন প্লিজ।আপনার সারপ্রাইজ কারো কাছে বিষের থেকেও বিষাক্ত ছিল। কতোটা কষ্ট পেয়েছি জানেন.!!
আহনাফ মহুয়া সামনে বসে ওর গালে হাত রাখতেই মহুয়া ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।
আহনাফঃ সরি মেহু..
মহুয়া আহনাফের হাত সরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে কাঁদছে।
আহনাফঃ যতো শাস্তি দেওয়ার বাড়িতে গিয়ে দাও তাও রেডি হয়ে নাও, সবাই বসে আছে তোমার অপেক্ষা করছে।

মহুয়া সবার কথা ভেবে রাডি হতে শাড়ি হাতে নিল।

মহুয়া রেডি হয়ে প্রথম আহনাফের সামনে আসলো। সাথে সাথে আহনাফ কথা বলতে ভুলে গেল৷ বুক পকেট থেকে হাত দিয়ে কিছু খুঁজলো।

“তোমার ঐ চোখ দেখে আমি সব ভুলে গেছি।আর তোমার জন্য বেলি ফুলের মালা কিনে ছিলাম নিয়ে আসতে ভুলে গেছি। আর তুমি এতোই সুন্দরী কি বলবো হায় আল্লাহ..
ছাড়ো এইসব,,,,,
আমি পরের লাইন ভুলে গেছি।

মহুয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে নিল।

____________

নির্জন সেই ভাবসাব নিয়ে মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করতে গেলেই ছোঁয়া মাঝে গিয়ে গন্ডগোল করে দিচ্ছে।
নির্জনঃ তোর সমস্যা কি.?
ছোঁয়াঃ আমার তো কোনো সমস্যা নেই শুধু তোর মতো ফ্লার্ট বাজের হাত থেকে মেয়েদের রক্ষা করছি।
নির্জন পাশ থেকে একটা ফুল এনে ছোঁয়ার কানে গুঁজে দিয়ে বলে উঠলো, ‘ এখন তোকে রক্ষা করবে কে.!??’

চলবে…

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে