“মেঘলা আকাশ”পর্ব ১

0
2780

“মেঘলা আকাশ”পর্ব ১

“ভাইয়া, এইবার বিয়ে হবে তো?”
ওরা দরজার কাছে আসতেই লাফিয়ে উঠে বলল মায়া। চাচু একরাশ বিরক্তি নিয়ে তাকালেন। সে পরোয়া করল না। ভাইয়ার পাশে এসে নয়ন ভাই মিষ্টি হেসে বলল, “এবার কিন্তু তোমার একটা বান্ধবী আসছে।”
“সত্যি? অবশেষে বিয়ে করছ তো?” সে ভাইয়ার হাত ঝাঁকি দিলো।
ভাইয়া বলল, “মজা করিস না তো। ভেতরে যেতে দে।”
সাথে সাথে গম্ভীর চাচুও বললেন, “হ্যাঁ, আমাদের ভেতরে ঢুকতে দিলে ভালো হয়।”
অগত্যা সে সরে দাঁড়াল। কিন্তু ভাইয়াকে ছাড়ল না, “বলো না –হবু ভাবি কেমন।”
“তুই অবশ্যই জানিস। এই যাবৎ কেন তিনটা মেয়েকে রিজেক্ট করেছি। এইবার কিন্তু তা হয়নি। ও আমার আর আমার পুচকে বোনটার জন্য পারফেক্ট একটি মেয়ে।”
খুশিতে সে আত্মহারা হয়ে গেল। অবশেষে বাসায় একজন আসবে যার সাথে রাতদিন গল্প করা যাবে। এরপর সে ছাদে ভাইয়াকে কষে ধরে বসল, “কী কী হয়েছে সবকিছু বলো।”
“কী আর হবে। আমরা তিনজন গেলাম। ওরা নাফিসাকে ডেকে আনল..”
“ও..হো.. নাফিসা।”
“চুপ! একটু বেশি বেড়ে গেছিস।”
“তারপর কী হলো?” তার মুখে হাসিটা এখনও লেগে আছে।
“ও আমাদের সাথে খুব সুন্দর আর ভদ্রভাবে ব্যবহার করেছে। কথা বেশি বলে না। তবে আবার হাসিখুশিও থাকে। চাচু তো এককথায় বলে দিলেন, মেয়েটি ঠিক আছে।”
“যাহ্ বাবা। শুধু ঠিক আছে বলেছেন?”
“চাচুকে চিনিস না?” ভাই-বোন দু’জনই হো হো করে হেসে উঠল। কারণ চাচুর স্বভাব এমনই গম্ভীর, যাঁর কথাগুলো আঁট-আঁট। এমন সময় নয়ন ভাই এসে যোগ দিলো, “তোমরা কী নিয়ে হাসাহাসি করছ?”
“ভাইয়া বলছিল, আপনি নাকি একসাথে এক প্লেট মিষ্টি সাবাড় করেছেন।”
তার মুখ লাল হয়ে গেল, “এমনটা নয়।”
কিন্তু তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে, অবশ্যই খাবার দেখে তখন নিজেকে সংবরণ করেনি। তাকে হারে হারেই চেনা আছে।
ভাইয়া বলল, “তোরা কথা বল। আমি নিচে যাই। দোকানে যেতে হবে।”
অতঃপর খোলা আকাশের নিচের এই ছাদে দুটো বেতের চেয়ারে দু’জন মানুষই রয়ে গেল।
নয়ন ভাই মিষ্টি হেসে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল, “মায়া, মেয়েটি কিন্তু খুব ভালো। তোমার জন্য আমার অনেক… ভালো লাগছে।”
মায়া নীরবে তার দিকে তাকাল। সে জানে, নয়ন ভাই আরও কিছু বলবে। একসময় যে কিনা এখানে প্রতিনিয়ত আসত এবং ইদানীং কাজের চাপে আসা হয়নি, তার পেটে তো অনেক কথাই ভিড় জমানোর কথা।
“তুমি যে ভাবি হিসেবে বান্ধবী চেয়েছিলে, এই মেয়েটি তেমনই।”
“হু, ভাইয়া বলেছে।”
তারপর ওরা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল।
অবশেষে নয়ন ভাই নীরবতা ভাঙল, “তো, পড়াশোনা কেমন চলছে?”
“পড়াশোনা?” সে ভ্রূ কুঁচকাল, “এইমাত্র আমি এইচএসসি দিলাম। ভাই মনে হয় পাল্টেছেন। আগে তো সব খবরাখবর রাখতেন।”
“ওহ্ না। রাখি। মাথায় ছিল না।”
“মাথায় ছিল না নাকি… ভাইয়া আমাকে বলেছে, আপনার উপর চাপ পড়ছে।”

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

“ক-কেমন?”
“কেমন আবার? বিয়ের। শুনলাম, আপনার মা ইদানীং আপনাকে আরেকটা মেয়েকে জোর করে দেখাতে নিয়ে গেছেন।”
সে আশ্চর্য হয়ে মায়ার দিকে তাকাল, “অবিশ্বাস্য! রাজিব কি কিছুই লুকাতে পারে না?”
“ভাইয়ার সম্বন্ধে তার অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে আপনিও কিন্তু কম জানেন না। আমি ছাড়া আপাতত তার আছেই বা কে।”
“হু তা ঠিক। আমার ভয় হয়, কেউ যাতে তোমাদের মাঝে চলে না আসে।”
“তার আসার অধিকার আছে। ভাইয়া তার স্ত্রীকে যাই ইচ্ছা হয় শেয়ার করতে পারেন।”
“তাহলে সে তোমার সাথে কথা বলা কমিয়ে দিলে কিছু মনে করবে না?”
“সময়ের সাপেক্ষে দেখা যাবে।”
“তুমি মেয়েটা খুব ভালো।”
মায়া হাসল। নয়ন ভাই তার দিকে তাকাতে চেয়েও তাকাতে পারল না। ইতস্তত করে চায়ের কাপ রেখে চলে গেল, একপ্রকার পালানোর মতো করেই। মায়া চেয়ার থেকে ওঠে এসে রেলিঙের সামনে দাঁড়াল। ভাইয়ার বাইকটা এইমাত্র গেইট পার করে গেছে। আহ্! ব্যস্ত মানুষ, কাপড়ের দোকানের মালিক। মায়ার কাছেই এখন সবাইকে খবর দিতে হবে। সে নিচে গিয়ে চাচুর কাছে জানল, বিয়ের ডেট সাতদিন পর ফিক্স করা হয়েছে। অর্থাৎ আজকে আত্মীয়দের জানিয়ে দিলে আস্তে-ধীরে আয়োজন শুরু করতে হবে।
তার কাছে ফোন করতে হলো না। বীথি আপা নিজেই কল করে বলল, “ভাইয়ার খবর বল। শুনলাম, একটি মেয়েকে দেখতে গেছে। এইবারের জনকে কেমন লেগেছে?”
“ভাইয়াকে হাসিখুশি দেখাচ্ছে। চাচুও বলেছেন, মেয়েটি ঠিক আছে। এখন বাকিটা বুঝে নাও।”
“ওয়াও, আমার কিন্তু খুব মজা লাগছে। ফাইনালি। একমাত্র ভাইয়ের বিয়ে.. উফ, আই কান্ট ওয়েট।”
“মাত্র এক সপ্তাহ ওয়েট করতে হবে।”
“ওয়াও ওয়াও। একটা ভাবি। ওয়াও।”
“আমিও খুব এক্সাইটেড। রিশু কেমন আছে?”
“দুষ্টুটার কথা বলিস না। উল্টো আমি কেমন আছি তাই জিজ্ঞেস কর।”
“হা হা হা।”
“ও হ্যাঁ, সাথীকে বলেছিস?”
“মেজ আপার সাথে আবার রাগারাগি হয়েছে। সেই সাহেবাকে তুমিই বলো। আমি বাকিদের বলছি।”
“ওকে।”
মায়া একে একে সব আত্মীয়কে বলতে লাগল, ভাইয়ার বিয়ের ডেট নির্ধারিত হয়েছে। এরই মাঝে আরেকবার নয়ন ভাইকে বাইরের উঠানে দেখা গেল। মনে হয়, আর বাসায় যাবে না। প্রথমত হয়তো মনে মায়ের ভয় ঢুকেছে, দ্বিতীয়ত নির্দিষ্টভাবেই ভাইয়ার বিয়ে উপলক্ষে এখানে সপ্তাহ খানেক থাকার প্ল্যান করে থাকতে পারে। মায়া তার তিন অন্তরঙ্গ বান্ধবীদেরও জানিয়ে দিলো। রাইসা, আতিকা ও জেরিন পরশুই প্যাকিং করে চলে আসবে।
পরদিন মা ভাবির ছবি দেখালেন। তার গায়ের রং কিছুটা মায়ার মতোই, উজ্জ্বল সোনালি। তাছাড়া চোখেমুখে ভদ্র একটা ছাপ আছে, যা দেখে নিরস মায়ের মুখের এককোণে হাসি ফুটে উঠল। ভাই-বোনের মধ্যে সাথী আপা ব্যতীত আর কেউই তাঁর নিরস দিকটা পায়নি। বাকিরা খুবই চঞ্চল। একসময় বীথি আপা সবাইকে মাতিয়ে রাখত। মায়াও কিছুটা তেমন। এই দু’জনকেই তাদের চাচু জামাল মোটেই পছন্দ করেন না। যাইহোক, বাবা খুশি হবেন পুত্রবধূর ছবি দেখে। মায়া তার বাবার কাছে গেল।
তিনি রীতিমতোই হুইলচেয়ারে বসে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। মায়াকে দেখলে তাঁর পাথরের মতো মুখটায় হাসি ফুটে উঠল। মায়া তাঁর পায়ের কাছে বসে বাবাকে ছবি দেখাল।
“দেখুন বাবা, আমাদের নতুন সদস্য কতটা সুন্দর।”
বাবা চোখে চশমা দিয়ে দেখলেন, “বাহ্, বৌমা খুব মিষ্টি তো। যাক, এতদিন আমাদের ছোট পরিবারটা বড় হতে চলেছে।”
“বাহ্, ছোট কবে ছিল? আমি ছিলাম না কয়েকজনের জায়গা দখল করে? এক মিনিটও এই বাসায় নিস্তব্ধতা ছিল? সবসময় বান্ধবীদের নিয়ে আড্ডা দিতাম, হৈ হল্লোড় করতাম।”
তিনি আবারও ব্যথিত হলেন, ঠিক যেমনটা প্রতিবার হন। “একসময় বীথি আর সাথীও ছিল এই পরিবারে। তুই আর বীথি আমার মুখে সবসময় হাসি লেগে থাকার কারণ ছিলি। এরপর বীথি মা চলে যাওয়ায়…”
“ওহহো, বাবা। ও তো প্রায়ই আপনাকে দেখতে আসে। আর আমি আছি না!” সে জানে, বাবা বীথি আপাকে সবসময় কতটা মিস করেন।
“বীথি এখন এই বাড়ির নয়। আর তুইও আমাকে শিগগিরি একা করে চলে যাবি। পরিবারটা আস্তে আস্তে ছোট হয়েই যাচ্ছে। যাক, এখন একটা বৌমা আসবে জেনে খুশি লাগছে।”
মায়া দেখল, তার বাবার মুখের নরম চামড়ায় অনেক ভাঁজ পড়েছে। চিন্তাই হয়তো এর একমাত্র কারণ। বীথি আপার সাথে করা অন্যায়ের কথা তিনি হয়তো কখনও ভুলতে পারবেন না, তা আপা যতই তাঁকে ক্ষমা করে থাকুক। এখনও ওই ঘটনাটা তাঁর মনে দাগ কেটে রয়েছে। কীভাবে তিনি চাচুর মতোই কঠোর ভাবে আপাকে শাসন করেছিলেন। আপা তার পছন্দের ছেলেটিকে বিয়ে করতে পারেনি। বাবা আর চাচু সে সময় আপার ভাঙা মনকে ডিঙিয়ে তাকে এক আগন্তুকের সঙ্গে বিয়ে করিয়ে দিলেন। এরপর কয়েক মাস আপা কারও সাথে কথা বলেনি। তাছাড়া আপা থাকতে এই পরিবারে যে হাসিখুশি ভাবটা ছিল, তা তিনি তার সাথে নিয়ে গেলেন। বাবাও তার ভুল বুঝতে পেরে বিমর্ষ হয়ে পড়লেন। এই অবস্থায় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যায়। বাবার পা অকেজো হয়ে যায়। বীথি আপা তাঁকে ক্ষমা করে দিলেও এখনও অবধি তাঁর মনের মাঝে হাহাকার করে। এসবকিছুই তাঁকে আরও বৃদ্ধ করে তুলেছে। তাঁর কপালের ভাঁজ দেখেই বুঝা যাচ্ছে, তাঁর মনে কতখানি ক্লেশ আছে। মাঝে মাঝে তাঁর কথায় বুঝা যায়, তিনি মৃত্যু কামনা করছেন। শুধু বীথি আপার ব্যাপারেই নয়, বয়স কম থাকতে তিনি ভাইয়াকেও অনেক সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছিলেন। কিন্তু এসব কেউ এখন গায়ে মাখে না। শুধরে যাওয়া লোকের অতীতের ভুলগুলোর কথা তুলে অশান্তি সৃষ্টি করার কোনো মানে হয় না। কিন্তু প্রতিবারের মতোই মায়াকে একটি প্রশ্ন গম্ভীর করে তুলল। আপা আর ভাইয়ার পর এবার তার পালা নয়তো?
অন্যমনস্ক হয়ে সে উঠে চলে যেতে উদ্যত হলো; তার দৃষ্টি শূন্যতে। এমন সময় বাবার ডাকে সে সম্বিত ফিরে পেল।
“মা?”
এই ডাকটা শোনে সে তৎক্ষণাৎ ভাবল, অযথা এসব কিছু ভাবার কোনো মানে হয় না। ভবিষ্যতের কথা ভেবে বর্তমানকে কেন খারাপ করবে? সে জীবনের কাছে একটি শিক্ষা নিয়েছে যে, আগামীতে যা আসবে তা নিয়ে ভেবে বর্তমানে ভয় কিংবা দুঃখ পেয়ে বর্তমানকে নষ্ট করা বুদ্ধিমত্তার কাজ নয়।
সে হাসিমুখে বাবার সামনে আবার বসে পড়ল। “বলুন।”
তিনি তার মাথায় হাত রাখলেন, “আমি জানি তুই কি ভাবছিলি। আমি যথেষ্ট শিক্ষা নিয়েছি। আমি বেশ কয়েকটা মনের সাথে অন্যায় করেছি। এখন আর একই ভুল করব না। আজ আমি তোকে অনুমতি দিচ্ছি, তোর জীবনে যেই ন্যায়ের পথ তোকে সুখ দেবে, তুই স্বেচ্ছায় সেই পথে চলতে পারবি। কারও অনুগামী হতে হবে না। আমি তোকে স্বাধীনতা দিলাম, নিজের পছন্দানুযায়ী চলার।”
মায়ার চোখে পানি টলমল করতে লাগল। সে কি স্বপ্ন দেখছে? সবসময় সে ভেবে এসেছে, অন্তত চাচু হলেও তার জীবনের সাথে বড় কোনো অন্যায় করবে। কিন্তু আজ বাবা তাকে কেবল তাঁর নয়, চাচুর শাসন থেকেও মুক্ত করে দিয়েছে। সে ওঠে বাবাকে একবাহু চেপে জড়িয়ে ধরল। তার চোখের পানি তাঁর পাঞ্জাবিতেই পড়ল। বাবা এখনও মাথা থেকে হাত সরাননি।
মায়া রুম থেকে বেরুলে দেখতে পেল, চাচাতো বোন মাইশা দোয়ারে দাঁড়িয়ে আছে। বাইরের দিকে কী যেন একদৃষ্টে চেয়ে আছে। মায়া তাকে ডিস্টার্ব করতে চাইছে না। কিন্তু এই দরজা দিয়েই তো সে বাইরে যেতে পারবে। হ্যাঁ, এই বাসাটির সামনে একটিই দরজা। এই বাসায় দুই পরিবার বাস করলেও তারা কিছুটা যৌথের মতোই। একে অন্যের পরিবারে অবদান কিংবা হস্তক্ষেপ সবই আছে, কিন্তু কথাবার্তা তেমন নেই। সবসময় তাদের ফ্ল্যাটটা নিস্তব্ধ থাকে যেন এখানে কেউ থাকে না বা কেউ মারা যাওয়ায় শোকাহত। দুইপাশে কথাবার্তার লেনদেন খুব একটা নেই। অথচ তার চাচু সহজেই এই পরিবারের মান-সম্মানের দায়িত্ব নিয়েছেন। বাবা হুইলচেয়ারে বসার পর থেকে তো তিনি আরও তাদের ঘাড়ে ভর করে বসে অতিরিক্ত অধিকারভুক্ত হয়েছেন। মায়ার মন সমালোচনা করতে চায় না। কিন্তু লোকটি যদি তাদের সুখের কথা একটুও ভাবতেন, তবে সে অনেক কৃতজ্ঞ হতো তাঁর প্রতি।
সে মাইশার পেছনে গেলে বুঝল।
“যদি ইচ্ছা হয়, তবে ভাইয়ার সাথে কথা বলো।” তার কথায় মাইশা চোখ সরাল, যেখানে নয়ন ভাইয়া বসে বাচ্চাদের খেলা দেখছে।
মাইশা ইতস্তত করল। এরপর কিছু হয়নি এমন ভাব করে ভেতরে চলে গেল। কেবল তার পরিবার থেকেই নয় নিজের পরিবার থেকেও চাচু সুখগুলো শোষণ করে নেন। এজন্যই মাইশা ছেলেদের সাথে কথা বলতে ভয় পায়।
নয়ন ভাইকে রোদে আরেকটু ফর্সা দেখাচ্ছে। তার মুখে বিশেষত্ব একটু কমই আছে। ডাগর ডাগর দুটো চোখ, ঠোঁট-নাকও বড় আর মোটা। উচ্চতায় তেমন একটা লম্বা নয়। কিছুটা স্বাস্থ্যবানও বটে। যদি স্বাস্থ্যবান না হতো, তবে এই চেহারা হয়তো তাকে মানাতই না। তবু এই লোকটির মুখের সহজ-সরল ভাব তাকে বিশেষ করে তুলেছে। মায়া বেরুতেই সে তাকে ইশারায় ডাকল। মায়াও ইশারায় বলল, সে কেবল একটু বাতাস নিতেই বাইরে বেরিয়েছে। নয়ন স্বভাবসুলভই মৃদু হেসে পুনরায় খেলা দেখতে লাগল।
সন্ধ্যায় সে মায়ের সাথে বকবক করতে করতে নাস্তা বানাল। অর্ধেক পাকুড়া নয়ন ভাই সাবাড় করে দেয়। তার ভাইয়া দুটো মুখে দেওয়ার পর মায়া বিয়ের নাম করে আরও দুটো মুখে চেপে ঢুকিয়ে দিলো। ভাইয়ার বেলুনের মতো ফুলন্ত দুই গাল দেখে সে আর নয়ন ভাই হাসিতে ফেটে পড়ল।
“আহ্! তোরা আমার ছেলেকে জ্বালাস না তো।” মা বলে উঠলেন।
মায়া আর নয়ন ভাই হাসিকে এতোই তীব্র করল যে, ভাইয়া হাসি চাপাতে না পেরে তার মুখ থেকে সবগুলো বেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ল। নয়ন ভাইয়ের হাসি থেমে গেল। মুখে অর্ধেক কুলি করায় বেচারা হতবাক। এখন তার অবস্থা দেখে হাসিতে ভাইয়া মায়ার সাথে যোগ দিলো। নয়ন ভাইও সলজ্জ হয়ে মুখ থেকে ওসব সরিয়ে মৃদু হাসল।
“আহ্! তোরা থাম।” মা তাকে বললেন, “বাবা, যাও মুখ ধুয়ে ফেল। কিছু মনে করো না।” কিছু মনে করার কথাও নয়। এসব ঘটনা অহরহ ঘটে। নয়ন ভাই এমন একটা মানুষ, তাকে ইট মারলে পাটকেল খেতে হয় না।
সে গেলে মায়া অবশেষে ভাইয়াকে বলল, “আমার বান্ধবীরা কাল চলে আসবে। তোমার আর কোনো বন্ধুই কি আসবে না? তোমার না অনেক অন্তরঙ্গ বন্ধু আছে? শুধু এই হাবাটাই কি থাকবে?”
হাবা বলায় ভাইয়া বাঁকা চোখে তাকাল, “আসবে। প্রায়ই তো নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত। বাকিরা বলছে, একেবারে বিয়েতেই আসবে। তাছাড়া আমাদের রুম তো কেবল চারটিই। তবে হাবীব আসবে।”
“হাবীব ভাই? উনি আসলেই কি থাকবেন?”
“হ্যাঁ, এইবার থাকবে। ওর মনের অবস্থা ভালো নেই। ও বরং তার যান্ত্রিক জীবন থেকে বেরিয়ে এখানে বেড়ালে ভালোই বোধ করবে। সে এককথায় রাজি হয়ে গেছে। ওহ্ হ্যাঁ, ওর বোনকেও ইনভাইট করেছি।” ভাইয়া একটা মুখভঙ্গি করল যে, মায়া অর্থটা ধরতে পারল না।
“কোনো সমস্যা?”
“মেয়েটি হাবীবের মতো কিছুটা উদার হলেও যেকোনো জায়গায় এডজাস্ট করতে পারে না। এই একটু খিটখিটে স্বভাবের।”
নয়ন ভাই চলে এলো। তাকে দেখে ভাইয়ার মুখের উদাসীনতা কেটে গেল। মায়ার মতোই ভাইয়া বন্ধুদের সঙ্গ পেলে খুব আমোদে থাকে। মনে আছে, একবার তার চার বন্ধু একত্রে বেড়াতে এসেছিল। ছেলেদের জন্য দু’রুমে খাট কেবল দুটোই ছিল। ভাইয়ার একটিতে দু’জনের সাথে গাদাগাদি করে থাকতে হয়েছে। তবু থেকেছে। এরপর যদিও চাচু বাসায় কিছু মেয়ে থাকায় ভাইয়ার এই কাণ্ড মোটেই পছন্দ করলেন না, তবু ভাইয়া সুখে ছিল, গায়ে মাখল না তাঁর তিক্ত কথাগুলো।
কিন্তু একটা চিন্তা মায়ার মাথায় রয়ে গেল, হাবীব ভাইয়ের বোনের কথা বলে ভাইয়ার মুখে বিরক্তির ছাপ কেন পড়ল।
(চলবে…)
লেখা: ফারিয়া কাউছার

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে