“মেঘনাদ”পর্ব ৫…

0
585

“মেঘনাদ”পর্ব ৫…

আজ কলেজে গেলাম না। কারও উপর আমার নজর রাখতে হবে। দেখতে হবে সাবরিনারা এখানে আসে কিনা। এখানে তাদের আসা-যাওয়া থাকলে আমার সরে পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ আবির স্যার যদি আমাকে একবার সন্দেহ করে বসেন, তবে আমার সম্বন্ধে সাবরিনার জানতে দেরি লাগবে না।
আবির স্যার কলেজে যাওয়ার সময় হলে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লেন। এখানেরা তারা ছাড়াও আরও অনেক মানুষ থাকে। আমি তাদের আশেপাশে থাকলে আমার সুগন্ধটা তারা ধরে ফেলতে পারবে, যদিও সাবিলা বুঝতে পারবে না। কিন্তু একবার যদি বুঝতে পারতাম, কোথায় তাকে একা পাব। আমি সারাটা সময় তাদের ওপর নজর রাখলাম। আবির স্যারের আসার অপেক্ষা করতে হবে। তিনি এলে সাবিলাকে নিয়ে হয়তো বেরুবেন বা কোনো একটা ক্লু পাব। দুপুরটা গড়িয়ে যাচ্ছিল। ফাইনালি বাড়িটির মূল রাস্তা দিয়ে আবির স্যার ঢুকলেন। কিন্তু তিনি কী ভেবে যেন জঙ্গলের দিকে তাকালেন, যেখানে আমি দাঁড়িয়েছিলাম। আমি তাড়াতাড়ি সরে পড়লাম। আহ্! আমি অদৃশ্যই হতে ভুলে গিয়েছিলাম। এখন এখানে থাকা আর উচিত নয়। বিরক্ত লাগছে। বাকিটা পরে দেখে নেবো। আমি মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি উপরে থেকে না হেঁটেই দ্রুত স্থানান্তর হতে লাগলাম। একসময় প্রাণীদের থাকা সাধারণ জায়গাটায় পৌঁছলে অদৃশ্যমান হয়ে বাকিটা পথ পাড়ি দিলাম।
বাসায় এসে মায়ের সাথে সংযোগ ঘটালাম। আমি তাঁকে যখন-তখন ডাকতে পারি না। কারণ তিনি পূর্বপুরুষ; সর্দারের সঙ্গে থাকেন। সেসময় আমার সাথে কথা বললে আমাদের ভুবনের যে কেউ ধরে ফেলতে পারবে, আমি কোথায় আছি তা মা জানেন। ভাগ্যিস এইসময় তিনি একা ছিলেন।
“কী হয়েছে ধ্রুব?”
“মা, সাবরিনারা কি এখানে আসা-যাওয়া করেন?”
“হয়তো করে। একবার জেনেছিলাম, সর্দার তাদের পারমিশন দিয়েছে, সাবিলার দেখাশোনা করার জন্য।”
“তারা কখন আসে বা কতক্ষণ থাকে?”
“আমি তো জানি না। এখানে এতোগুলো পরীর ভিড়ে তাকে তো আলাদাভাবে দেখি না। বোধহয়, সে অন্ধকার থাকতেই যায় আর অন্ধকার হলে ফিরে আসে। এখানে সে সবচেয়ে ছোট পূর্বপুরুষ হওয়ায় এখনও তাকে নিয়ম বানানোর ক্ষেত্রে অধিক প্রাধান্য দেওয়া হয় না। ওদের কথা কেন জিজ্ঞেস করছ?”
“আমি ওই জায়গাটায় এতবছর আছি, যেখানে তাদের আসা-যাওয়া থাকে।”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

“এটা তোমার ভুল নয়। জায়গাটাই আমাদের জাতের অনুকূলে। আমার লাগছে না, সাবরিনাকে তোমার ভয় পাওয়া উচিত। সে পৃথিবীকে তোমার মতোই অনেক ভালোবাসে।”
আমি চিন্তায় পড়লাম, তারা এভাবে ঘরবন্দি হয়ে কেন থাকে? সাবিলাকে কখনওই দেখলাম না। সে কেমন অসুস্থ? তার শরীরে কি মানুষের মতোই রোগ বাসা বাঁধতে পারবে? আমি সন্ধ্যার দিকে আবারও একবার গেলাম। দশটা মিনিট আমি কিছু আওয়াজ শুনে গেলাম। কেউ একজন মাঝে মাঝে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছে। দু’তলা থেকেই এই আওয়াজ আসছে। আমি কি যাব? ওখানে কি মানুষ আছে? হঠাৎ দেখলাম, আবির স্যারদের সাথে আলিয়াও এই বাসায় আসছে। ভুল দেখছি না তো? তারা তো অনেক গোপনে থাকে। আলিয়া কি ওদের সত্য জানতে পেরেছে? আলিয়া ওদের সাথে ঢোকার পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছিল, বেরুচ্ছে না। সে নিছক কোনো কাজে আসেনি। আমি বাড়িটির একদম নিকটেই অদৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। ভেতর থেকে সমভাবে কারও যন্ত্রণায় ছটফট করার আওয়াজ বেরিয়ে আসছে। সেই সাথে অনেকগুলো গলার স্বর শুনতে পাচ্ছি। আমি আলিয়ার গলার আওয়াজকে ভালো করেই চিনি। সেও কথা বলছে। কী নিয়ে? একসময় এক ধুপ করে আওয়াজ হয়ে চারিদিকটা নিস্তব্ধ হয়ে গেল, যেন কিছু একটা দেয়ালে আচঁড়ে পড়েছে। এরপর আলিয়া দৌড়ে নিচে এলো। তাকে আতঙ্কিত দেখাচ্ছে এবং তার চোখেমুখে ছটফটানোর ছাপ। সে ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে বুকে ঠান্ডা বাতাস ঢোকাচ্ছে। সে হয়তো কিছু একটা দেখেছে। হয়তো কাটাছেঁড়ার মতো কিছু। একটি মেয়ে তার জন্য পানি নিয়ে এলো। সে পানি খেয়ে তৃপ্ত হয়ে ফিরে গেল। আমি ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল। সত্যই দেখছি, কিন্তু পুরোপুরি নয়। এভাবে পুরোপুরি সত্যটা না দেখে বাইরে উদ্বিগ্নতা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকায় বিরক্ত লাগছে। আমি ফিরে এলাম, কিন্তু আলিয়ার বাসার সামনে। আমার জানতে হবে, সে কী দেখেছে। রাত কিছুটা গড়িয়ে গেলে আমি ওকে আরিয়ান স্যারের গাড়ি করে আসতে দেখলাম। স্যারকে দেখে লাগছে, তিনি যেন অস্বস্তি বোধ করছেন। আলিয়া তো এমন মেয়ে নয়, যার প্রতি কারও সামান্য ঘৃণাও থাকবে! সে বাসায় যাওয়ার পর তার গলার আওয়াজ শুনে গেলাম। সে হয়তো তার বাবার সাথে আর রেগে নেই।
হলরুমের টুকটাক শব্দ হলো। হয়তো মানুষেরা খাবার খাচ্ছে। একসময় আমি কাঁচের কিছু ভাঙার আওয়াজ পেলাম। কী জানি, ওখানে কী হচ্ছে। আঙ্কেলের আওয়াজও শোনা গেল, তিনি আলিয়াকে ডাকছেন। জিনিসটা কি আলিয়াই ফেলেছে? রাগটা কি অবশেষে তার রূপ দেখিয়েছে? আমি মাটিতে কিছুটা চাপ দিয়ে তার বেলকনিতে উঠে এলাম। সে সবসময় বেলকনির ওপাশের পর্দাটা সরানোই রাখে। আমারই সুবিধা হলো। কিন্তু আমি উদ্ভট একটা গন্ধ পেলাম। আমার যদি মানুষের মতোই মুখে থুতু থাকত, তবে আমি ফেলতাম। তাড়াতাড়ি বেলকনি থেকে লাফ দিলাম। এমন সময় আলিয়াও বেলকনিতে এলো। ভাগ্যিস!
সে এই ঠান্ডায় ওই দুর্গন্ধ থাকার সত্ত্বেও নির্বিঘ্নে প্রফুল্ল মেজাজে দাঁড়িয়ে আছে। গন্ধটা কি তার নাকে লাগছে না? কিছুক্ষণ পর সে বাড়ির সামনে তাকাল। রাস্তার আগে তাকিয়ে দেখলাম, পিংক কালার গাউন পরা একটি মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে। আসিয়া! আলিয়া সত্যই বলেছিল। সে বায়ুর সাথে মিশে আছে। তাকে ভেদ করে আসা ওর পেছনের রাস্তাটাও আমি দেখতে পাচ্ছি। আলিয়ার চোখ ছলছল করতে লাগল। সে উপর থেকেই চিৎকার করে বলল, ‘আসিয়া, আই অ্যাম রিয়েলি সরি।’ সে কী করছে? তার বাবা শুনে ফেলবে তো।
আসিয়া ভ্রূ কুঁচকিয়ে তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। সে ভাবছে, “আমি আলিয়ার পাশে কেন যেতে পারছি না? সে আমায় আবারও কি ধাক্কা দেবে?”
আলিয়া বোনকে দেখতে পেয়েও দৌড়ে এলো না। সেও হয়তো মনে করে, সে আসিয়াকে ধাক্কা দিতে পারে। ওর কী হয়েছে? ও তো একটা ভালো এবং সুস্থ মেয়েই ছিল। কারও দরজায় বাড়ি দেওয়ার আওয়াজে আলিয়া পেছনে ফিরল। তার বাবা ডাকছে। আসিয়া উধাও হয়ে যাওয়ায় বাবার প্রতি তার রাগ উঠল। বেলকনিতে উঠে দেখলাম, সে তার বাবার সাথে খুব খারাপভাবে কথা বলছে।
দাঁত চেপে সে বলল, ‘কী হয়েছে?’
‘চিৎকার করেছিলি কেন? কোনো সমস্যা হয়েছে কি?’
‘তাতে আপনার কী?’
সে দরজা বেঁধে দেয়। আঙ্কেলও অস্বস্তি বোধ করেছিলেন। আলিয়ার কাছ থেকে কি দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে? সে এসে শুয়ে পড়ল। লাইট অন রেখে সে অনেকক্ষণ চিন্তা করল। সাবিলাদের নিয়ে নাকি… আমাকে নিয়ে? সে একটু-আধটু মুচকি হাসছে। একসময় সে পরীদের মতো করেই ঘুমিয়ে পড়ল। শান্তির ঘুম সে ঘুমাচ্ছে। মেয়েটা সম্ভবত কাউকেই কিছু বলেনি। তাহলে আমি অহেতুকই ভয় পাচ্ছি। আমি চলে এলাম।
সকালে সে আমায় ফোন দিলো কলেজে যাচ্ছি কিনা জিজ্ঞেস করার জন্য। জানি না, সে আমার কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করবে কিনা। আমি কিন্তু পালাব না। প্রতিবার পালিয়ে বিপদ আরও বাড়াই। আমি তাকে বললাম, ‘আমি তো তোমাদের বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়েই যাই। তোমাকে একেবারে পিক করে নিই?’
সে রাজি হয়ে গেল। সে কলেজে যেতে শুরু করেছে বিধায় আঙ্কেলও হয়তো খুশি হচ্ছেন। রীতিমতো আমি আর জিসান কলেজের জন্য মাইক্রোতে করে বেরিয়ে পড়ি। আলিয়াকে পিক করাতে তার কোনো আপত্তি নেই। আমরা গাড়ি করে পৌঁছানোর পর আলিয়া গাড়িতে ওঠে আমার পাশে বসল। পলাশ ভাই গাড়ি চালাতে শুরু করল। আমি কালকের বীভৎস দুর্গন্ধটাই পেলাম। আলিয়া থেকেই কি এটা বেরুয়? আমি শ্বাস নেওয়া বন্ধ করে দিলাম। এটার কোনো প্রতিক্রিয়া আমার হয় না। কারণ আমি যেখানে থাকতাম, ওখানে অক্সিজেনের প্রয়োজন হতো না। দেখলাম, জিসান আর পলাশ ভাই অস্বস্তি বোধ করছে। আলিয়ার কাছে হয়তো তার নিজের গন্ধটাই লাগছে না। আমি দীর্ঘক্ষণ পর বললাম, ‘আলিয়া, তুমি কি পারফিউম ইউজ কর না?’
‘না। আমি ন্যাচারাল থাকতে পছন্দ করি।’ ব্যাপারটা আমার ভালোই লাগে। কিন্তু গন্ধটা…
‘এতটা ন্যাচারাল থাকাও ভালো নয় যে, ঘামের দুর্গন্ধটার মাধ্যমে আরেকজনকে নাক বন্ধ করতে বাধ্য করবে।’
‘ঘাম? এই শীতে আমি ঘামছি না। আর ডাভ সোপ দিয়ে গোসল করে এসেছি।’
সে চুলের গন্ধও নেয়। আমি জানি, সে সত্য বলছে। কিন্তু আমি জিসানের সামনে আমার ফ্রেন্ডকে নীচু করতে চাই না। আমরা কলেজে পৌঁছলাম। সাঈদ আগে যেভাবে হাত প্রসারিত করে একগাল হাসি নিয়ে আলিয়াকে ওয়েলকাম করত, আজও সেভাবে করল। কিন্তু যেই ওর পাশে আলিয়া গেল, সে বলল, ‘আলিয়া, তুমি কি ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থেকে উঠে এসেছ?’
‘না তো।’
গন্ধটার কারণে সে হয়তো এখনই বমি করে দেবে। আলিয়া তা বুঝে তাড়াতাড়ি সরে পড়ল।
আমরা রীতিমতো ক্লাস করতে গেলাম। আলিয়ার দিকে আমি নজর রাখছিলাম, ওর গন্ধটার কারণে সমস্যা হচ্ছে কিনা দেখতে। তার পাশে বসে মৌমিতার বারবার অস্বস্তি ফিল করাটা ওর ভালো লাগছিল না। ওর জন্য আমার খুব খারাপ লাগে। সে একসময় সিট বদল করল। ছুটি শেষে সে যখন বাকি সহপাঠীর সাথে কথা বলছিল, তখন আমি ওর আর জিসানের জন্য কলেজের অন্য ভবনের সামনে দাঁড়ালাম।
বারান্দার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, আলিয়া দ্রুত বেগে হেঁটে আমার দিকে আসছে। সে কাছে এলে বিস্ময় নিয়ে বললাম, ‘তুমি কি কাঁদছ?’
সে জবাব না দিয়েই গেইটের দিকে পা বাড়ায়। আমি তার হাতের কনুই ধরে ফেললাম। সে ঘুরে তাকালে আমি হাতটা নামিয়ে ফেললাম, ‘তোমাকে আমিই নিয়ে এসেছিলাম। আমি ড্রপ করে দেবো। তার আগে বলো, কী হয়েছে? কেউ কি কিছু বলেছে?’
‘কে বলেনি তাই জিজ্ঞেস কর।’
‘কী হয়েছে?’
‘আমার কাছ থেকে নাকি দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বিশ্বাস করো, আমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আছি। এই যাবৎ আমি পারফিউম ছাড়া কি চলাফেরা করিনি?’
‘ওহহো, তুমি এই সামান্য বিষয় নিয়ে কেঁদো না প্লিজ। দেখো, গন্ধটা আমার কাছে তো লাগছে না।’
‘তাহলে সকালে গাড়িতে আসার সময় অমনটা বললে কেন?’
‘আরে, ড্রাইভার আর ভাইয়া অস্বস্তি বোধ করছিল বিধায়… ওসব ছাড়। তুমি বলো, তুমি সুস্থ আছ তো?’
‘হ্যাঁ।’
‘কেমন? তোমার চোখের নিচে তো কিছুটা কালচে দেখাচ্ছে।’
‘হয়তো আসিয়াকে মিস করার কারণে।’
‘সে কি আর দেখা দেয়নি?’
‘কালরাত আরেকবার দেখেছিলাম। কিন্তু সে আমার থেকে দূরে ছিল।’
‘ওহ্। দেখ, কী হয়। তবে প্লিজ বলব, নিজের খেয়াল রেখ। উল্টাপাল্টা কিছু করো না।’
জিসান ভাই এসে বলল, সে বন্ধুর সাথে বাইকে করে চলে যাবে। আমি জানি, এটা আলিয়ার কারণেই। আমি এবং আলিয়াই গাড়িতে উঠলাম। আলিয়া অসুস্থ বোধ করায় বললাম, ‘তোমার হাতটা একটু দেবে?’
‘কেন?’
‘তোমার স্বাস্থ্য পরখ করব। দেখি, কাজ করে কিনা।’ তার বামহাতটা দিলে বললাম, ‘সুতাটি কোথায়?’
‘ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে।’
‘আমার লাগছিলই।’
‘মন খারাপ করো না।’
‘আরে না, তোমার নিজ স্বাধীনতা অনুযায়ী তোমার যা ইচ্ছা হয়, করতেই পারো।’ ওর থেকে একটা বিকর্ষণ কাজ করলেও আমি হাতটা ধরে সময় সময় তার হৃদকম্পন অনুভব করতে লাগলাম। দশ মিনিটের রাস্তা পার করে আলিয়ার বাসার সামনে গাড়ি থামলে দুইজনই নেমে পড়ি। আমি প্রস্তাব দিলাম, ‘আমি কি তোমার বাসায় গিয়ে কিছুক্ষণ বসতে পারি?’
‘কেন নয়?’
আমরা বাসায় পৌঁছলে আলিয়া রুমে এসে অ্যাপ্রোন না খুলেই বিছানায় শুয়ে পড়ল। সে সত্যিই অসুস্থ। বারবার কপাল ধরছে, যেন ব্যথা করছে। তার পাশে আমার থাকা উচিত। তার মানসিক অবস্থা খারাপ। আসিয়া.. দুর্গন্ধটা.. আমি বিছানার একপাশে বসলাম।
‘তো কি জানলে? আমার হাত কী জানাল?’
বললাম, ‘তোমার কি ঘুম আসছে?’
‘না, মাথাটা ভারী হয়ে আছে।’
‘এমনি কি ঘুমে কোনো পরিবর্তন এসেছে?’
‘হ্যাঁ, আমি আজকাল বেশি ঘুমাই।’
‘মিলে যাচ্ছে। আই থিংক, আমার লজিক কিছুটা কার্যকর হবে। দেখ, আমি গোটা দশটা মিনিট ফিল করেছি, তোমার মস্তিষ্ক স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি উত্তেজিত। আমি অবাক আর চিন্তিত, একটা সেকেন্ডের জন্যও তোমার মস্তিষ্ক স্বাভাবিক ছিল না, যেন তুমি কিছু একটার বিরুদ্ধে লড়ার প্রবল চেষ্টা করছ, হয়তো সফলও হচ্ছ। এটা যে কারও দ্বারা সম্ভবও নয়। তোমার কাজটা অনেক কঠিন, যে কারণে তোমার মস্তিষ্ক বেশিক্ষণ লড়ে যেতে পারছে না। মস্তিষ্কের ক্লান্তির কারণে তুমি অসুস্থ বোধ করছ। মাথা ভারী লাগা, কপাল ব্যথা হয়ে যাওয়া এসব মস্তিষ্কের পরিশ্রমের কারণেই সৃষ্ট। তুমি কি ভাবছ একটু বলো? তুমি কি অনেক বেশি চিন্তিত?’
‘না তো।’
‘তবে তুমি স্বাভাবিক মানুষের মতো কেন বেহেভ করছ না? তুমি কি আসিয়াকে বেশি মিস করছ?’
‘হুম। যদিও সে আমার সাথে নেই, আমি তাকে অনেক ভালোবাসি।’
‘কীভাবে পার?’
‘আসল ভালোবাসার জন্য শরীরের প্রয়োজন হয় না।’
‘তাই?’ বিড়বিড় করলাম, ‘মানুষের মাঝে কত ইন্টারেস্টিং ব্যাপারই না থাকে!’
আমি তার কপাল টেপে দিতে লাগলাম। তার দুঃখ বুঝার তো কেউই নেই। এমন সময় তার বাবা এলেন। আমি একবিন্দুও নড়লাম না। কারণ তিনি মাইন্ড করছেন না। তিনি ডাক্তার আনতে চাইলে আলিয়া নিষেধ করে দেয়। আমার সেবা পেয়ে আলিয়া রিলেক্সড ফিল করায় তিনি চলে গেলেন। অভিভূতও হলেন, আমার সেবায়। তাকে ছোঁয়ার কারণে সেই বিকর্ষণটা আবারও অনুভব করছি। আলিয়া আমায় উদ্ধার করল, ও আমার হাতটা সরিয়ে দিয়ে। সে বেশ কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে চেয়ে রইল। তাকেও দেখে থাকতে খুব ভালো লাগছে।
‘এভাবে কী দেখছ?’
‘তোমাকে।’
ভ্যাবাচ্যাকায় পড়লাম, ‘কেন?’
‘তোমাকে এঞ্জেল হিসেবে কখনও দেখিনি। তাই।’
আমি চারিদিকটা শূন্য দেখতে শুরু করলাম। চারিদিকটা যেন মরুভূমি। সে কি আমাকে চিনতে পেরেছে? ‘মানে? বুঝিনি।’
‘ধ্রুব, ভয় পেয়ো না প্লিজ… আমার বন্ধু। আমি কাউকে কিছু বলব না।’
ঢোক গিললাম, ‘তুমি আজকাল কি আবির স্যারদের বাসায় যাও?’
‘হ্যাঁ। তাদের সত্যও আমি জানি। তুমি ওদের ওপর নজর রাখছিলে। রাতে ওখানে আমার আগমনও দেখেছিলে। তাই না?’
আমি অন্যদিকে মুখ ফেরালাম। মেয়েটা কতকিছুই না খেয়াল করে? তবে আমি তো দেখা দিইনি।
‘তুমি ওদের ভয় কেন পাও বল তো? সাবিলা প্রায় তোমারই মতো।’
‘তুমি অনেককিছুই জানো না। আমি আমার নিজের জাতের লোকের আশেপাশে যেতে চাই না।’
‘কেন?’
‘এটা বলো, সাবিলার সত্য তোমায় কে বলল?’
‘ওর ডানা গজিয়েছে। আমি ওর মা-বাবাকেও দেখেছি।’
আমার মুখে আতঙ্ক ছেয়ে গেল, আমি ওখানে থাকতে তারাও ছিল! ‘ওরা কবে কীভাবে এলো?’
‘সাবিলাকে দেখতে এসেছিল। হয়তো অদৃশ্য হয়ে। তোমরা কি একে অপরকে দেখতে পাও না?’
‘পাই। অদৃশ্য কয়েকভাবে হওয়া যায়। একভাবে, মানুষ দেখতে না পেলেও আমরা আমাদের দেখতে পাই। আরেকভাবে, আমাদের জাতের অদৃশ্য কাউকে মানুষ কি আমরাও দেখতে পাই না। আমি বুঝছি না, আমাদের তো নিষেধাজ্ঞা আছে। তবে ওরা তোমায় সত্য কেন বলেছে!’
‘ওরা বলেনি। আমি নিজেই জেনেছি।’
আমার কিছুটা রাগ হলো। ‘ইউ আর ইম্পসিবল।’
‘তাদেরও জানিয়েছি, আমি কাউকে কিছুই বলব না। তারা বলেছে, তোমাদের সর্দার হয়তো আমাকে পড়তে পারবে না। আর আমি এতটা জ্ঞানী নই। আমি তোমাকে আসল রূপে জঙ্গলে দেখে তোমার সাথে সাবিলার মিল পেয়ে তোমাদের চিনতে পেরেছি।’
‘ওহহো, কেন যে জঙ্গলে কেউ নেই ভেবে নিজের শক্তির ব্যবহার করছিলাম!’
সে হাসল। খুব সুন্দর তার হাসি। হয়তো আমি ওকে সাধারণ মানুষের চেয়ে ঘনিষ্ঠ ভাবি বলেই।
‘জানো, সাবিলা আমার ভালো এক বন্ধু হতে চলেছে।’
‘কনগ্রাচুলেশনস।’ ব্যঙ্গ করে বললাম, ‘মনে হয়, পৃথিবীতে এসেছ কেবল অমানুষদের সাথেই বন্ধুত্ব করতে।’
‘হা হা হা। তুমি জানো, তুমি আর.. সাবিলা আমার পাশে থাকলে আমার খুব ভালো লাগে। লাগে আমি কখনও কিছুই হারাইনি। হারালেও হারানোর বিনিময়ে পেয়েছি।’
‘আচ্ছা, প্লিজ, ওদের আমার কথা জানিয়ো না।’
‘ঠিকাচ্ছে…’
আমর মুখে স্বস্তি ফিরে আসে। আমি এমনিতেই ওকে অজান্তে অনেক আগে থেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছি। তাইতো, কখনও হুমকি দিইনি। ‘কালও কি আমি তোমায় পিক করব? যদি মাইন্ড না করো।’
‘আমি কলেজে যাব না।’
‘কেন?’
‘আজকে যা হয়েছে… আমি আর রিপিট করতে চাই না। পড়াশোনা তো কোথাও চলে যাচ্ছে না। আমি নিজেকে রিকভার করতে চাই। অন্তত একটি মাস..’
‘তাই ভালো। তোমার রেস্ট করা উচিত। আমিও কলেজে তেমন যাই না। পরীক্ষার এখনও অনেক সময় বাকি আছে। আমি তোমার আশেপাশেই থাকব।’
‘এই.. আমার ওপর নজর রাখার দরকার নেই। আমি সত্যিই কাউকে কিছু বলছি না।’ আমি তোমার নজর রাখা তো বন্ধ কবেই বন্ধ করেছি।
‘আই রিয়েলি কেয়ার ফর ইউ। আমরা মানুষের মতো স্বার্থপর নই।’
‘তাহলে দেখি তোমাকে পেয়ে আমি ধন্য।’
আমাকে পেয়ে ধন্য ভাবছে? উল্টো আমিই ধন্য, যে আমার সত্য জানে তাকে বন্ধু হিসেবে পেয়ে। ‘মানুষগুলো ভালোও বটে।’
সে আমার কথার অর্থটা বুঝে হাসল। সে অনেক ফ্রেন্ডলি! সে অনেক নিশ্চিন্ত বোধ করায় আমি চলে এলাম।
(চলবে)
লেখা: ফারিয়া কাউছার