মুগ্ধতার এক বিকেল পর্ব-১১

0
82

#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (১১)

সায়রা আর আমিরা পুরো তৈরি। তাদের দুজনকেই ভীষণ সুন্দর লাগছে। তিনদিনের ট্যুর ওদের। আজকে সবাই মাইক্রোবাসে করে যাবে। বলা যায় এটা জন্মদিনের অনুষ্ঠান কম,ভ্রমণ বেশি। অন্য রকম এক উত্তেজনা কাজ করছে।

“সায়রা দাঁড়া।”

জুথি কিছু খাবার নিয়ে এসেছে। সেটা ব্যাগে তুলে দিয়ে দোয়া পড়ে ফু দিয়ে দিল।

“উফ ভাবি। তুমি কেমন মায়ের মতন করো।”

“মায়ের চেয়ে কম কীসের? আমার যখন বিয়ে হয় তখন তোর বয়স কত?”

সায়রা হাসল। মনে করে বলল,”তিন?”

“হুম। তিন বছরের ছিলি। আমাকে ভাবি কম মা বেশি মনে করতি।”

সায়রা আবার হাসল। আমিরা ও তৈরি হয়ে এসেছে। মেয়েটির প্রতি শুরুর দিকে বিশেষ এক রাগ অনুভব হলেও এখন আর তেমনটি লাগছে না জুথির। তবে বিশেষ কোনো ভালোবাসা ও অনুভব হয় না। এই অনুভব না হওয়ার পেছনেও যে বিশাল কাহিনী জড়িয়ে। সব স্মরণ করে জুথি দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। মানুষের জীবন বড়ো আশ্চর্যের!

জুঁই আর মাহিম ও এসেছে। তারা কিছু চকলেট এনে দিয়েছে আমিরাকে। পথে খাওয়ার জন্য। মারুফ নেই। অফিসে গিয়েছে। তবে সকালে এক হাজার টাকা রেখে গেছে। বলেছে সায়রাকে দিতে। সেটাই মনে করে এনে দিল জুথি।

“ভাইয়া, আবার টাকা কেন রাখতে গেল।”

“নিয়ে যা। পথে দরকার হলে।”

টাকা নিয়ে ব্যাগ গুলো হাতে তুলল সায়রা। সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,”আসছি রে। ভালো হয়ে থাকবি। কোনো দুষ্টুমি না।”

আগে থেকেই রিকশা ঠিক করা ছিল। সেটায় ওঠে বসল ওরা। রিকশা চলতে শুরু করেছে। মৃদু একটা হাওয়া চোখ মুখ ছুঁয়ে দিচ্ছে। ভালো লাগায় মন তৃপ্ত পেল যেন।

“আমরা সমুদ্র দেখব মিমি?”

“এখনো বলতে পারছি না রে। তবে কক্সবাজার যেহেতু যাব সেহেতু একটা কিছু তো দেখা হবেই।”

আমিরার চোখে মুখে উচ্ছ্বাস। মা বলেছিল এ বছর তারা সমুদ্র দেখতে যাবে। তারপর পাহাড়। একে একে সব ঘুরে দেখবে তারা। অথচ কোথায় হারিয়ে গেল মা? আর কোথায় বা হারিয়ে গেল বাবা। মা ছাড়া এতিম সে,মন খারাপ করে রইল। মনে মনে বলল,”আমাকে সাথে কেন নিলে না মা? তোমাকে যে বড্ড মনে পড়ে আমার। বড্ড মনে পড়ে।”

বাসার সামনেই দুটো মাইক্রোবাস রাখা। মানুষ জনে ভরা। সায়রা রিকশা থেকে নেমে বলল,”দাঁড়া রনু আপুকে কল করি। কোনটায় ওঠব।”

ও কল করতে অন্যদিকে ফিরল। তখনই বাসা থেকে বের হয়ে এল অনুভব। আমিরা ব্যাগ পত্র হাতে দাঁড়িয়ে। অনুভব ওর কাছে এল। আমিরা চোখ পিট পিট করে চাইল। ছেলেটা এত লম্বা কেন আর চিকন কেন!

“নাম কী?”

“আমিরা।”

“এখানে দাঁড়িয়ে কেন?”

এ প্রশ্নের জবাব দিল না আমিরা। অনুভব বুঝল মেয়েটি তার জবাব না দিয়ে অন্যায় করেছে। তাই মুখশ্রী গম্ভীর করল।

“কার সাথে এসেছ?”

আমিরা এবার ও জবাব দিল না। শুধু চাইল অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা সায়রার দিকে। পেছন দিকে ফিরে থাকায় সায়রাকে চিনল না অনুভব। তবে আমিরাকে ভয় দেখাতে দুষ্টুমি বুদ্ধি মাথায় আনল।

“আমিরা, তোমার মাথায় সাপ।”

সাপের কথা শুনে ভয় পেয়ে গেল আমিরা। চিৎকার করে ওঠল। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এল সায়রা। আমিরাকে জড়িয়ে ধরে বলল,”কী হয়েছে? এই আমিরা। এমন কেন করছিস?”

“মিমি সাপ, আমার মাথায় সাপ। মিমি, মিমি।”

“সাপ,কোথায় সাপ?”

“মিমি সাপ।”

আমিরা সাপ খুব ভয় পায়। ছোট থেকেই। তাই বেশি প্যানিক করে ফেলেছে। পাশে দাঁড়িয়ে আছে অনুভব। ও একটু বেশিই অবাক হয়েছে। সামান্য সাপের কথা শুনে বাচ্চাটি কী না দিন দুনিয়া এক করে ফেলল! কিয়ৎ কাল পর শান্ত হলো আমিরা। কান্নায় চোখ মুখ মেখে আছে।

“কীসের সাপ? ভয় পাচ্ছিলি কেন?”

আমিরা অনুভবের দিকে দৃষ্টি ফেরাল। সায়রা এত সময় পর চিকনা ছেলেটাকে দেখতে পেল।

“কী?”

“ও বলেছে। আমার মাথায় সাপ।”

সঙ্গে সঙ্গে আমিরার কথার প্রতিবাদ করে অনুভব বলল,”আমি কখন বললাম?”

সায়রা বুঝতে পারল বিষয়টা। আমিরার মিথ্যে বলার কারণ নেই। বিপরীতে মিথ্যেটা অনুভব ই বলতে পারে। কোনো কারণ ছাড়াই।

“এসবের কোনো মানে হয়? তুমি এটা কেন বললে?”

“আমি বলি নি।”

“আমিরা মিথ্যে বলে না।”

“তো আমি বলি?”

“হ্যাঁ। মাত্রই বললে মিথ্যেটা।”

অনুভব অন্য দিকে ফিরে রইল। সায়রা বিরক্তি নিয়ে আমিরাকে নিয়ে গাড়িতে ওঠল। তারা একটু লেট করে ফেলায় সবাই বাসে ওঠে বসেছে। একদম শেষের দিকে তিনটে সিট খালি। আমিরা আর সায়রা সেখানেই ওঠে বসল। অনুভব হেলে দুলে গাড়িতে ওঠে দেখল একটি মাত্রই সিট খালি। ও হতাশ হলো। আমিরা আর সায়রা ও হতাশ। এই তিনজন কে এতটা পথ নাকি পাশাপাশি বসে যেতে হবে। হায়রে ভাগ্য!

অনুভব শরীর বিশেষ এক ধরনের পারফিউম ব্যবহার করেছে। যার সুবাস সায়রার মাথা ধরিয়ে দিল। ও বেশ বিরক্ত, আহত। বার বার মুখশ্রীতে সেটা ফুটিয়ে তুলছে। আর সেটা অনেক সময় ধরেই লক্ষ্য করছে অনুভব। সে অপমানিত বোধ করছে। এবার কথাটা বলেই ফেলল।

“এই তোমার সমস্যা কী? এমন কেন করছ?”

“তোমার গায়ের বাজে পারফিউম।”

এ কথা বলতেই অনুভব চোখ ছোট ছোট করে চাইল। বাজে ফারফিউম! এটা ভীষণ দামি এক ব্র্যান্ডের সুগন্ধি। আর সেটাকে কী না বাজে বলছে মেয়েটা! ও চোখ মুখ শক্ত করে রইল। যেন অপমানটি হজমের চেষ্টা চলছে।

দুটো মাইক্রোবাস নিয়ে যাচ্ছে ওরা। মোট ৩২ জন। এখন দুপুরের সময়। স্বাভাবিক ভাবেই লাঞ্চ করার জন্য গাড়ি থামানো হলো। ওরা কত দূর এসেছে সায়রা জানে না। তবে শহর ছেড়ে গ্রামীণ এক পরিবেশ। ভালো লাগছে।

“আমিরা এদিকে আয়।”

আমিরাকে কাছে নিয়ে নিল সায়রা। বলল,”ওখান টায় দাঁড়া।”

মিমির কথা মতন দাঁড়াল আমিরা। সায়রা চট করে দুটো ছবি তুলে নিল।
“দারুণ আসে তো। আমাকে ছবি তুলে দে।”

সায়রা গিয়ে দাঁড়াল। তবে আমিরা ভালো করে ছবি তুলতে পারছে না। একবার দুবার করে অনেক গুলো ছবি তুলল তবে সায়রার পছন্দ হলো না। ওদের ওই কাহিনী দেখে হেসে ম রে যায় অনুভব। সায়রা চোখ গরম করে তাকায়। এই ছেলেটির সমস্যা কী?

লাঞ্চে অনেক বেশি খেতে পারছে না সায়রা। আমিরা ও তাই। দুজনেই একটুখানি খাবার নিয়েছে। রনু সেটা দেখে বলল,”এইটুকুই খাবে তোমরা?”

“আমরা একটু কম খাই আপু।”

“তোমরা যে কি। এই বয়সেই ডায়েট শুরু! ডায়েট তো আমাদের করা উচিত। অথচ দেখ,জিহ্বা সামলাতেই পারি না।”

রনুর কথায় হেসে নিল সায়রা। আমিরা খাওয়া শেষ করে বলল,”মিমি, ঐ ছেলেটার জন্মদিন?”

একটু দূরের টেবিলে বসে আছে আরহাম। সায়রা লক্ষ্য করে বলল,”হুম।”

“ওর সাথে কেউ খেলতে চায় না?”

“না রে। একটু অন্য রকম দেখে স্কুলের বন্ধুরা খেলতে চায় না।”

“ইস। আমার স্কুলে হলে আমি ওর সাথে খেলতাম।”

আমিরার চোখে মুখে আফসোস। সায়রা হাসল। এটা ভেবে খুশি হলো এই ছোট্ট আমিরাও মানুষ কে সহজ ভাবে নিতে শিখেছে। তার মাঝে, স্পেশাল চাইল্ড বলে কিছু নেই।

লাঞ্চ করে ওরা আবার মাইক্রোবাসে ওঠে বসেছে। আমিরা আর সায়রা দুজনেই গ্রামীণ পরিবেশ পছন্দ করে। তাই দুজন দুপাশের জানালার সিটে গিয়ে বসে পড়েছে। যাতে পরিবেশ উপভোগ করতে পারে। অনুভব ওঠে দেখল সায়রা তার জায়গায় বসেছে।

“এটা তো আমার জায়গা।”

“লেখা আছে?”

“আশ্চর্য! আমি তো এখানে বসে এসেছি।”

“এখন মাঝে বসো।”

“মানে কী? তোমাদের দুজনের মাঝে বসব আমি?”

“সমস্যা কী?”

“উফ, অসহ্য।”

অনুভব মাঝেই বসল। সায়রা আর আমিরা দুজনেই হাসছে। তারা ভাবতেও পারে নি অনুভব মেনে যাবে। যা ঘাড়ত্যাড়া ছেলে!

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে