মিসেস চৌধুরী পর্ব-১৬

0
1608

#মিসেস_চৌধুরী
#Part_16
#Writer_NOVA

পরের দিন………

আকশি ও আদিয়াত একটা দরকারী কাজে অফিসে এসেছে। কিন্তু অফিসের একজন কর্মচারী থেকে জানলো আজও ফিহা অফিসে আসবে না।আদিয়াত চলে যেতে নিলে আকশি ওকে টেনে ভেতরের দিকে নিয়ে গেল।

আদিয়াতঃ টেনে এখানে নিয়ে এলি কেন?
আকশিঃ আমরা এখানে কেন এসেছি তুই ভূলে গেছিস। কাজ না করে চলে যাবো।
আদিয়াতঃ কিন্তু ফিহাতো নেই।
আকশিঃ ফিহা না থাকায় তো সুবিধা হয়েছে। এখন আমরা অনায়াসে কেবিনে গিয়ে আমাদের কাঙ্খিত জিনিস পেয়ে যাবো।
আদিয়াতঃ ফিহা থাকলে কেবিনে ঢুকতে সুবিধা হতো।এখন কেবিনে ঢুকলে চোর সন্দেহ করে গণধোলাই ফ্রী তে পেয়ে যাবি।আগেরবার দারোয়ানের ধাওয়ার কথা এত তাড়াতাড়ি ভূলে গেলি।
আকশিঃ চুপ কর।আমাকে একটু ভাবতে দে।

নিজের চুলগুলো হালকা ঝাড়া দিতে দিতে ভাবতে লাগলো আকশি। এবার ভাবছেন তো কি এমন দরকারী কাজ পরলো ওদের। দরকারী কাজটা হলো রিয়ানা সেদিন ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত ফিডারটা যা দোলনার নিচে ফেলেছিল সেটা আদিয়াত দেখে ফেলেছিল।তবে ফিডার দেখে নি।রিয়ানা যে কিছু একটা পা দিয়ে ঠেলে ভেতরে ঢুকিয়েছে সেটা দেখেছে।কিন্তু কি?সেই রহস্যের সমাধান করতে আজ এখানে এসেছে। তখন মিটিংয়ের চিন্তায় আদিয়াত ব্যাপারটা ভূলেই গিয়েছিলো।রাতে আকশিকে কথাটা বলতেই আকশি ব্যাপারটা নিয়ে খুব সিরিয়াস হয়ে যায়।তাই সকাল সকাল অফিসে চলে এসেছে।

আকশিঃ পেয়ে গেছি!!!
আদিয়াতঃ কি পেয়েছিস?
আকশিঃ আমরা এখন আবদুল চাচাকে গিয়ে বলবো গত পরশু আমারা ফিহার কেবিনে ভুলে আমাদের ফাইল রেখে চলে গেছি।তাই এখন আমাদের ফাইলটা নিতে হবে।
আদিয়াতঃ আইডিয়াটা মন্দ নয়। চলে কোন রকম আর কি।তবে বেশি ভালো নয়।
আকশিঃ ঘুষি মেরে তোর মুখের আদল বদলে দিবো।ফাইজলামি না করে জলদী চল।রিয়ানা নিশ্চয়ই অনির ক্ষতি করতে এসেছে। মেয়েটা একটুও ভালো নয়।রিয়ানাকে আমি হারে হারে চিনি। নিজের স্বার্থের জন্য অন্যের ক্ষতি করতে এক ফোঁটাও বুক কাঁপবে না।হোক সে বড় মানুষ কিংবা বাচ্চা।
আদিয়াতঃ এখানে দাঁড়িয়ে মহান ব্যাক্তিদের বড় বড় ভাষণ না দিয়ে ভেতরে চল।

দুই বন্ধু একসাথে আবদুল আজিজ সাহেবের কেবিনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

আকশিঃ আসতে পারি মি.আবদুল আজিজ।
আবদুলঃ আরে মি.পাটোয়ারী। আসুন আসুন।হঠাৎ কি মনে করে?আরে দাঁড়িয়ে কেন, বসুন।
আদিয়াতঃ গত পরশু যখন আমরা সবাই মিলে কোম্পানির ওনারের কেবিনে গিয়েছিলাম তখন আমরা ভূলে আমাদের জরুরি একটা ফাইল রেখে গেছি।সেটা এখন আমাদের অনেক প্রয়োজন।
আবদুলঃ ওহ এই ব্যাপার।আপনারা বসুন।কোথায় আছে বলুন আমাকে?আমি সিকিউরিটি পাঠিয়ে নিয়ে আসতে বলছি।
আকশিঃ নাআআআআআ।(চিৎকার করে)
আবদুলঃ কি হয়েছে মি.পাটোয়ারী?
আদিয়াতঃ এই গাধা এতো জোরে চিৎকার দিলি কেন?প্রেমে পরে কি বুদ্ধি সব লোপ পেয়েছে। (ফিসফিস করে)
আদিয়াতঃ সরি মি আবদুল। আসলে আমরা ফাইলটা কোথায় রেখেছি সেটা ভূলে গেছি।সিকিউরিটি খুঁজে পাবে না।তাই আমার ভাই এতো জোরে চিৎকার দিলো।
আবদুলঃ ঠিক আছে তাহলে আপনারা যান।
আদিয়াতঃ আপনি চাইলে আমাদের সাথে আসতে পারেন।যদি আপনার আমার কথা বিশ্বাস না হয়।
আবদুলঃ না না ঠিক আছে। আমি আপনাদের বিশ্বাস করে যেতে দিয়েছি এবার আপনারা আমার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখলেই হবে।
আকশিঃ কোম্পানির ওনার আসে নি কেন?
আবদুলঃ ছোট বউমার শরীরটা ভালো নয়।
আকশিঃ কি হয়েছে ফিহার?(ব্যস্ত হয়ে)
আবদুলঃ 🤨🤨
আদিয়াতঃ 🤦‍♂️🤦‍♂️
আবদুলঃ কি বললেন আপনি?
আদিয়াতঃ কোথায় কিছু বলেনি তো?ভাই জিজ্ঞেস করলো আপনাদের ওনারের কি হয়েছে?
আবদুলঃ বউমার প্রচন্ড মাথা ব্যাথার কারণে আজ অফিসে আসবে না।
আদিয়াতঃ আমরা তাহলে আসছি।অনেক কাজ বাকি আছে আমাদের।

আদিয়াত কথাটা আকশির দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।আরেকটু হলে ধরা পরে যেতো।এই আকশি মাঝে মাঝে কোথায় কি বলতে হয় সেটা ভূলে যায়।সবসময় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।আর সবকিছু আদিয়াতের সামলাতে হয়।রুমের বাইরে এসে আদিয়াত চোখ দুটো ছোট ছোট করে আকশির দিকে রেগে তাকালো।

আদিয়াতঃ তোর কমোন সেন্সগুলো কি প্রেমে পরার পর উড়াল দিয়ে তোকে ছেড়ে চলে গেছে। তুই কি বলে ফেলেছিস তোর ধারণা আছে। ভাগ্যিস চাচা ভালো করে শুনতে পায়নি।নয়তো আজ কপালে শনি ছিলো।
আকশিঃ ফিহা অসুস্থ, এই খবরটা শুনে আমি চুপ থাকবো।আমার যে কি টেনশন হচ্ছে।
আদিয়াতঃ চুপ থাকবি কেন?একটা ঢোল আন।পুরো অফিস ঢোল পিটিয়ে খবরটা সবাইকে জানিয়ে দিয়ে আয়।তোর নির্বুদ্ধি কর্মকান্ড দেখলে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। তোর পাল্লায় পরে এবার যে মিথ্যে কথা বলেছি সারাজীবন মনে হয় না এতো মিথ্যে কথা আমার বলা হয়নি।
আকশিঃ আহারে!! তুই তো সাধু মানুষ। একটা মিথ্যা কথাও বলিস না।
আদিয়াতঃ তোর জন্য বলতে হয় এখন।মুখ ফসকে উল্টো পাল্টা কথা বলিস।আর সেগুলো আমাকে হ্যান্ডেল করতে হয়।
আকশিঃ হয়েছে, আমাকে সাহায্য করে তো হাতেম তাঈ হয়ে গেছিস।এবার দুজন এখানে লড়তে থাকলে আমাদের কাজ আজকে আর হচ্ছে না।জলদী চল।

দুজন রুমে এসে দরজা আটকে দিলো।হন্যি হয়ে এদিক সেদিক ফিডারটা খুঁজতে লাগলো। যদিও ওরা জানে না সেটা ফিডার ছিলো।

আদিয়াতঃ আকশি তোর কি হয়েছে রে?আমার মনে হচ্ছে তোর মাথা গেছে। আমি আজি পাবনার হেমায়েতপুরে তোর জন্য একটা সিট বুকিং করতে হবে।(রেগে)
আকশিঃ তুই আজকে আমার পেছনে পরেছিস কেন?আমি তোর কোন বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছি।
আদিয়াতঃ না তোকে মাথায় তুলে নাচবো।আমি তোকে বলেছি রিয়ানাকে আমি দেখেছি দোলনার নিচে কিছু ফেলতে।আমরা দুজন মিলে দোলনার নিচে খুঁজবো। সেটা না করে তুই টেবিলের ড্রয়ারে কি খুঁজছিস😤?
আকশিঃ আমি শুধু এই জন্য আসিনি।আমার একটা দরকারী কাগজ লাগবে।সেটা খুঁজতেও এসেছি। টাকা পয়াসা হাতে নেই। ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে কাগজটা লাগবে।না জেনে কমপ্লিমেন্ট করাটা তোর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
আদিয়াতঃ হয়েছে, হয়েছে। তোরা পাতানো জামাই, বউ কখন কি করিস সেটা আমার মাথায় ঢুকে না।যেমন তুই তেমনি তোর ঐ বউ ফিহা।তবে ফিহা তোর থেকে বেশি কমোন সেন্স নিয়ে চলে।তুই তো শালা, দিনকে দিন বুদ্ধ আর হাঁদারাম হচ্ছিস।
আকশিঃ একবার অফিস থেকে বের হতে দে।তারপর দেখ তোর কি অবস্থা করি।তোর মুখের আশেপাশে লাল, লাল দাগ দেখতে পাবি।
আদিয়াতঃ 😡😡
আকশিঃ চুপচাপ কাজ কর।নয়তো আমার চেয়ে বেশি খারাপ কেউ হবে না।সারাক্ষণ শুধু বকবক করিস।

আকশি ও আদিয়াত দুজন কাজে লেগে পরলো।আগেই বলেছি ফিহার কেবিনের দিকে সাধারণত মানুষ বেশি একটা আসে না। আদিয়াত উবু হয়ে দোলনার নিচে খুঁজতে লাগলো। একসময় কোণার দিকে একটা ফিডার দেখতে পেলো।ফিডারটা হাত দিয়ে এনে জোরে চেঁচিয়ে আকশিকে ডাকলো।

আদিয়াতঃ আকশি ই-ই ই-ই!!! (চিৎকার করে)
আকশিঃ এতো জোরে চিৎকার করছিস কেন হারামজাদা? গণপিটনু খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে।
আদিয়াতঃ হারামী রুম সাউন্ড প্রুফ করা। এখন যদি আমরা কেবিনের ভেতরে বক্সে জোরে গান ছেরে উরা ধূরা ডান্সও করি তাও কেউ জানবে না।
আকশিঃ আর জ্ঞান বিতরণ করতে হবে না মহাশয়।কেন ডাকিয়াছেন তাহা বলিয়া আমাকে উদ্ধার করুন।
আদিয়াতঃ এদিকে আয়।
আকশিঃ কেন?
আদিয়াতঃ আসতে বলছি আসবি।এত প্রশ্ন করিস কেন?দেখে যা জলদী করে।

আকশি একরাশ বিরক্তি নিয়ে আদিয়াতের সামনে এসে দাঁড়ালো। আদিয়াত হাতে থাকা ফিডারটা দেখিয়ে বললো।

আদিয়াতঃ আমি সঠিক দেখেছিলাম।এই যে দেখ। এই ফিডারটাই রিয়ানা দোলনার নিচে ফেলে দিয়েছিলো।
আকশিঃ রিয়ানা কি তাহলে অনিয়ার সর্বনাশ করতেই এসেছিলো।যদি এমনটা হয় তাহলে রিয়ানাকে আমি খুন করে ফেলবো।ওর এত বড় সাহস আমার ভাতিজীর ক্ষতি করতে এসেছে।অনেক বড় ভূল করেছে রিয়ানা।এর শাস্তি ওকে অবশ্যই পেতে হবে।
আদিয়াতঃ দুধের কালারটা কিছুটা বিবর্ণ হয়ে গেছে। আমি সিউর রিয়ানা এটার সাথে কিছু মিশিয়েছে।এই মেয়ে মোটেও ভালো নয়।অনেক স্বার্থপর।
আকশিঃ এক কাজ কর আদি।তুই এই ফিডারটা দুধ সহ ফরেনসিক ল্যাবে পাঠিয়ে দেয়।এখন তারাই বলতে পারবে ফিডারের দুধের মধ্যে কি মেশানো আছে।
আদিয়াতঃ আচ্ছা। তুই কি তোর কাগজটা খুঁজে পেয়েছিস?আমাদের এখন বেরুতে হবে।
আকশিঃ হুম আমি পেয়ে গেছি।চল তাড়াতাড়ি। ফিডারটা পকেটে ঢুকিয়ে ফেল।কেউ যাতে না দেখে।আমি বাসায় ফিরে যাবো আর তুই ফরেনসিক ল্যাবে চলে যাবি।

দুইজন খুব সাবধানে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো।ফিহার কেবিনে কোন সি সি টিভি ফুটেজ নেই। যার কারণে ওরা বেঁচে গেলো।নয়তো ঘটনার মোড় উল্টো দিকে ঘুরে যেতো।ফিহা নিজের কেবিনে সি সি টিভি ফুটেজ পছন্দ করে না।

অন্য দিকে……

ফিহার মাথাটা আজ অসহ্যকর ব্যাথা করছে। যার কারণে অফিসে যায় নি।হঠাৎ করে কেন মাথা ব্যাথা শুরু হলো তা বুঝতে পারছে না।এদিকে অনিয়াও অনেক জ্বালাতন করছে।কোন সার্ভেন্টের কোলে যাচ্ছে না,টেবলেটর সাথে থাকছেও না, খেলছে না।দোলনায় রাখলেও চিৎকার করে কাঁদছে। ফিহা কোলে তুলে নিলে শান্ত হয়ে যায়।কিন্তু ফিহা অসহ্যকর মাথা ব্যাথা সত্ত্বেও অনিকে কোলে নিয়ে রাখছে।সাফানকে কল করে আজ চলে আসতে বলেছে ফিহা।সাফান থাকলে হয়তো একটু রেস্ট নিতে পারবে।সাফান বাচ্চা অনেক পছন্দ করে। সাফান ছাড়াতো আপন বলতে ওর কেউ নেই।

ফিহাঃ মাথা ব্যাথা তো কমার নাম নিচ্ছে না। ঔষধ খেয়েও কাজ হলো না।আচ্ছা একটু মাথায় কি তেল দিবো।যদি মাথাটা শান্তি লাগে।

অনিয়াকে কোলে নিয়ে বেড থেকে নামলো।মাথার চুল এলোমেলো।কপালের সামনের বেবি চুলগুলো এসে চোখ ঢেকে ফেলেছে। মুখ,চোখে একরাশ বিষন্নতা।তেলের বোতল হাতে নিয়ে বেশ কিছুটা তেল নিয়ে মাথায় দিলো।২য় বার দেয়ার সময় অনি মোচর দিয়ে হাত ঝাড়া মেরে তেলের বোতলটা ফেলে দিলো।বোতল থেকে অনেকখানি তেল মেঝেতে পরে গেল।ফিহা বোতল তুললেও পরে থাকা তেল খেয়াল করলো না।সাধারণত টাইলসের মেঝেতে তরল জাতীয় কিছু পরলে দেখা যায় না।তেলের বোতলটা পাশে রেখে সাফানকে কল করলো।

ফিহাঃ হ্যালো সাফান, কোথায় তুই? এত দেরী লাগে তোর আসতে?
সাফানঃ আমি তোদের সদর দরজা দিয়ে মাত্র ঢুকেছি।আর দুই মিনিট অপেক্ষা কর আমি চলে এসেছি।
ফিহাঃ আচ্ছা, জলদী আয়।আহহহহহহহহহহ

একটা আর্তচিৎকারে সারা চৌধুরী বাড়ি স্তব্ধ হয়ে গেলো।সাথে অনির কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।

সাফানঃ হ্যালো ফিহু, ফিহু। কি হলো তোর?কথা বলছিস কেন?ফিহু, ফিহু কি হয়েছে? (ভয় পেয়ে)

ফিহা কথা বলবে কি করে? অসাবধান বশত তেলের মধ্যে পা স্লিপ কেটে ফিহা পড়ে গিয়েছে। অনিয়া মায়ের চিৎকারে ভয় পেয়ে কান্না করছে।প্রচন্ড ব্যাথা পেয়ে ফিহা অজ্ঞান হয়ে যায়।তবে অনির কিছু হয়নি।কারণ অনিয়াকে ফিহা নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছিলো।এখনও অনিয়া ফিহার বুকের ওপর শুয়ে আছে।জ্ঞান হারানোর আগেও ফিহা শক্ত করে অনিয়াকে নিজের সাথে ধরে রেখেছে। যাতে অনির কিছু না হয়।ঝাপসা চোখে ফিহা দেখতে পেলো সাফান পাগলের মতো দৌড়ে ওর দিকে এগিয়ে আসছে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে