মায়া পর্ব ৩

0
1005

গল্প :- মায়া
পর্ব :- ০২
লেখিকা :- তাসনিম রাইসা
.
.
.
-: যখন রান্না ঘরে প্রবেশ করবে তখন, তার বড় ভাবি কাকে যেন বলছে’ আনোয়ার এটা একটা কাজ করলো? মেয়ে সহ বিয়ে করা মেয়েকে বিয়ে করলো।
– কথাকে রুমে ডুকতে দেখে চুপচাপ হয়ে গেল।

– পরের দিন কথা তাদের বাসায় যেতেই ‘ রাইসা দৌড়ে এসে কথাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল ‘ মম তুমি কোথায় ছিলে? আর আমাকে ছেড়ে যাবে না তো?

– রাইসার এই কথার কোন উওর নেই কথার কাছে। রাইসাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে নিরবে চোখের অশ্রু জড়াচ্ছে। কখনো ভাবেনি এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে সে। রাইসাকে কুলে নিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে আসে।

-বাড়ির সবাই হাসিখুশি। নতুন জামাইয়ের জন্য কথার মা রান্না করতে ব্যস্ত। বাড়িতে খুশির আমেজ চলছে। রাইসার কথার কুলে বসে আছি আর একেক সময় একেক প্রশ্ন করছে। দিনটা ভালোভাবে কাটলেও বিপত্তি লাগলো রাতে।
রাতে সাতবছর বয়সি রাইসা কথার বুকে শুয়ে আছে। রাত প্রায় দশটা বাজে। কথা রাইসার মাথাই হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রাইসা ঘুমাচ্ছে। রাইসার ঘুমন্ত চেহারাটা আজ কেন জানি বড্ডবেশি সুন্দর লাগছে। হঠাৎ রুমে আনোয়ার প্রবেশ করলো। আনোয়ার এসেই রাইসাকে দেখে বললো’ রাইসা এখানে কেন? রাইসাকে তার নানুর কাছে দিয়ে আসো।

– কথা মাথাটা নিচু করে বললো’ থাক না কাল তো চলেই যাবো। ‘

– তুমি থাকো মেয়ে নিয়ে আমি থাকব না এই রুমে।
– কি তুমি রাগ করছেন কেন?
– রাগ কেন করবো? তুমি মেয়ে নিয়ে শুয়ে থাকো ।
– তুমি না বলেছিলে রাইসা তোমারো মেয়ে?
– বিয়ের আগে ওসব বলাই যায়। তাই বলে অন্যজনের জন্ম দেয়া মেয়ের মুখে বাবা ডাক শুনবো?

– কথা কিছু না বলে, রাইসাকে তার মায়ের রুমে রেখে আসল।

– কথা রুমে আসতেই আনোয়ার দরজা লাগিয়ে দেয়। দরজা বন্ধ করে কথাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বলতে লাগল ‘ জানো কথা এই দিনটির অপেক্ষা দীর্ঘ দশবছর ধরে করছি।
– মানে কি বলছো এসব?
– হুম ঠিক বলছি, কলেজে প্রথম যেদিন দেখি সেদিনই তোমার প্রেমে পড়ে যায়। প্রস্তাবও দেয়। কিন্তু তুমি আমার মুখের উপর চিঠি ছুড়ে মারো। সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম বিয়ে যদি করতে হয় তোমাকেই করবো। কিন্তু তুমি কি করলা রাজকে বিয়ে করে নিলা। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস রাজ ঢাকা থেকে ফেরার পথে লঞ্চ ডুবে মারা যায়। তার লাশটাও খুঁজে পাওয়া গেল না। শেষ দেখাও দেখতে পেলে না।

– আনোয়ার প্লিজ চুপ করো এসব বলো না।
– কি খুব কস্ট হচ্ছে? কস্ট পেয়ো না বেবী। তোমাকে আজ আদরে আদরে ভরিয়ে দিবো।

– আজ না ভালো লাগছে না। এখন তো তোমার বউ আজ না কাল হবেই তো।

– এই মা—!* চুপ কর। তোকে বিয়ে কি তোর রুপ দেখার জন্য করেছি?
– কথা কিছু বলতে পারছে না। আনোয়ার তার পুরুষত্ব প্রমাণ করছে।

– হঠাৎ দরজার ওপাশ থেকে আদো আদো কান্না জনিত কন্ঠে ভেসে আসছে ‘ মা মা দরজা খুলো। আমি তোমার কাছে যাবো। দরজার ওপাশ থেকে কথার মা বলছে নানা ভাই এখন ঘুমাও সকালে তোমার মার কাছে যেয়ো। তোমার মা এখন ঘুমাচ্ছে।
– না না আমি যাবো না আমি মা’র বুকে ঘুমাবো। মা মা দরজা খুলো মা। দরজা খুলো তুমি কালকেও আমাকে বুকে নিয়ে ঘুমাওনি। মা আমার কি কস্ট হয় না? তুমি জানো না মা আমি তোমার বুক ছাড়া ঘুমাতে পারি না। নানু তুমি যাবে এখান থেকে? দেখো আমার মা ঠিক আমাকে বুকে নিয়ে ঘুমাবে।

– কথার বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে। কিন্তু কথা উঠতে পারছে না। কথার মুখটা চেপে ধরে আছে। আনোয়ার তার শরীরের চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত। বারবার রাজের চেহারাটা চোখে ভাসছে।

– এদিকে রাইসা দরজার ওপাশ থেকে ডেকেই যাচ্ছে। মা রাইসাকে একটা থাপ্পর দিয়ে রুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।

– এদিকে আনোয়ার তার চাহিদা মিটিয়ে ওপাশ ফিরে শুয়ে রইল।

– কথার দু’চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। আল্লাহ এ কোন পরীক্ষায় ফেললো তাকে। বার বার রাজের কথা মনে পড়ছে। রাইসাকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখেছিল। জন্মের আগেই নাম ঠিক করে রেখেছিল। কিন্তু আল্লাহ তাকে নিয়ে নিলো। কথার বিবাহিত জীবনে একটি রাতও রাজের বুক ছাড়া ঘুমায়নি কথা। তার বালিশটা ছিল রাজের বুক। কিন্তু আজ বিবাহিত হয়েও সে ধর্ষিত হচ্ছে।

– এখনো মনে পড়ে যেদিন ওকে প্রথম বললাম জানো রাজ’ আমাদের চার পা থেকে ছয় পা হতে যাচ্ছে। রাজ কিছু না বলেই ঘর থেকে বের হয়ে গেল। আমি ক্ষানিকটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। ভাবলাম খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাবে। কিন্তু তারমাঝে কিছুই দেখতে পেলাম না।

– আমি মন খারাপ করে শুয়ে আছি, হঠাৎ দেখলাম পাশের রুম থেকে ফিসফিস আওয়াজ হচ্ছে। বিছানা থেকে উঠে গিয়ে দেখি, রাজ নামায শেষ করে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে কাঁদছে।

– মোনাজাত শেষ করে রাজ আমার কপালে চুমু দিয়ে বললো’ জানো কথা আজ আমি অনেক খুশি। তাই দু’রাকাত নফল নামায পড়ে নিলাম।

– রাজের আল্লাহর প্রতি আনুগত্য দেখে দু’চোখ বেয়ে জল নেমে আসল। সত্যিই আমি পেয়েছি ঝিনুকে থাকা মুক্তা।

– দিনগুলি ভালোই কাটতেছিল। হঠাৎ একদিন জরুরি কাজে ঢাকা যায়। পরের দিন ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে লঞ্চ ডুবে যায়। আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি। সবসময় ভাবতাম সে মরিনি। কিন্তু নদী আমার সব কেড়ে নিছে। তখন রাইসা চার মাসের পেটে। মা বলছিল সন্তানটা নস্ট করে ফেলতে।

– দেখতে দেখতে রাইসার জন্ম হয়। পরিবারের অবস্থা ভালো ছিল না। তাই নিজে একটা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে পড়িয়ে নিজের খরচ চালাতাম। কিন্তু রাস্তা ঘাটে অনেকে অনেক বাজে কথা বলতো।

-কেউ কেউ বলতো ‘ স্বামী ছাড়া আর কতদিন? আমাকে দিয়ে দেখতে পারো। ‘ খুব কস্ট হতো তাদের কথা শুনে। বাড়িতে বিয়ের অনেক প্রপোজাল আসতো। দেখতে সুন্দর ছিলাম বলে। কিন্তু মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আর রাজের শুদ্ধতম ভালোবাসা আমাকে নতুন করে বাঁচতে শেখালো। কিন্তু হঠাৎ একদিন রাইসার পেটের বাম সাইন্ডে প্রচন্ড ব্যাথা উঠে ””’
.
.
চলবে……….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে