মায়াদেবের মায়া পর্ব-০২

0
2344

#মায়াদেবের_মায়া
#পর্ব_২
#তাহমীম

– এখনো ভালোবাসিস নিঝুমকে?
– হুম ফুপিমা। আমি মায়াদেবকে ছাড়া কাউকে ভালোবাসতে পারবো না। তোমরা প্লিজ আমাকে বোঝার চেষ্টা করো। বুঝতে শিখার আগে ও পরে থেকে আমি শুধু তোমার ছেলেকেই ভালোবেসেছি। এখন আমি অন্য কাউকে কি ভাবে বিয়ে করবো।

মুনিয়া আহমেদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিরবতা কাটিয়ে
– ভুলে যা নিঝুমকে।

মায়ার চোখ দুটোতে হঠাৎ করে বিন্দু বিন্দু জল জায়গা করে নিলো। শত আলোর দিশা মনে হচ্ছে হঠাৎ করেই নিভে গেছে
– কি বলছো ফুপিমা ( করুন চোখে মুনিয়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে)
– ঠিকি বলছি মায়া, নিঝুমকে ভুলে যা। আমান হসপিটালের সিটে শুয়ে আছে তোর জন্য সুইসাইড করতে গিয়ে। আমি তোর সাথে নিঝুমের বিয়ে ঠিক করতে না গেলে হয়তো ও এখন ভালো থাকতো সুস্থ থাকতো। আমার বড় ভাইয়ের একটা মাত্র ছেলে ওকে আমি নিঝুমের থেকে ও বেশি আদর যত্ন করে বড় করেছি। ওর কিছু হলে আমরা কেউ মেনে নিতে পারবো না। ও তোকে অনেক ভালোবাসে।
– কিন্তু ফুপিমা আমি তো শুধু তোমার ছেলেকেই ভালোবাসি।

মুনিয়া আহমেদ চোয়াল শক্ত করে উঠে দাঁড়িয়ে
– নিঝুম কি তোকে বলেছে সে তোকে ভালোবাসে?
মায়া মাথা নিচু করে ফেলে। কি বলবে মায়া ? নিঝুম তো কখনোই মায়াকে বলেনি সে মায়াকে ভালোবাসে। নিঝুম ভালোবাসলে হয়তো মায়া সারা দুনিয়ার সাথে লড়াই করতে পারতো। কিন্তু এখন সে কার জন্য লড়াই করবে? মায়া ভেবে নিতো হয়তো সে ও ভালোবাসে। তাহলে তার ভাবনা কি ভুল?

– কি হলো মায়া চুপ করে আছিস কেন? নিঝুম কি তোকে বলেছে?
– উমহু। ( চোখ মুছে)
– তাহলে কেন এই ভালোবাসা নিয়ে পড়ে আছিস? নিঝুমকে ভুলে যা ও তোকে ভালোবাসে না। আর ভালোবাসলে ও নিঝুম আমানের মতো পাগলামি করবে না ও নিজেকে বুঝিয়ে নিবে। আমার মনে হয় ও তোকে ভালোই বাসে না দেখিসনি কি বললো ও সেদিন তোকে? আমানকে বিয়ে করে নিতে। সবার ভালোর জন্য বলছি তুই নিঝুমকে ভুলে যা।

– সবার ভালোর জন্য আমাকে বলি দিচ্ছো? বাহ, আমার কথার আমার ভালোবাসার কোন মূল্য নেই তোমাদের কাছে? আমানকে আমি শুধু ভাই হিসেবে জেনে এসেছি এখনো তাই মানি।

মুনিয়া আহমেদ মুখ শক্ত করে

– আমার এর থেকে বেশি কিছু বলার নেই। পানি মাথার উপর দিয়ে গড়াবার আগে সামলে নে।
– আমি শুধু মায়াদেবকেই ভালোবাসি ফুপিমা। তোমারা যদি আমায় জোরাজুরি করো আমানকে না আমায় হারাবে।

কথা গুলো বলে মায়া চোখ মুছতে মুছতে রুম থেকে বেরিয়েই দেখে সামনে নিঝুম অফিসের জন্য রেডি হয়ে এসেছে। ডার্ক ব্রাউন কালারের সুট পরেছে, কালো চুলগুলো সব সময়ের মতো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে কপালে। এই মানুষটাকে সব সময় এতো ভালো লাগে কেনো জানা নেই মায়ার।

মায়া নিঝুমকে না দেখার মতো ভান করে চলে যেতে নিলেই
নিঝুম পিছন থেকে বলে উঠে
– কোথায় যাচ্ছো?

মায়া একটু দাঁড়িয়ে পিছনে না ফিরেই
– বাড়ি
– বিকেলে যাবার কথা তোমার
– মানুষ সব সময় সব কথা রাখে না।
– আচ্ছা চলো আমি পৌঁছে দিচ্ছি, আমি অফিসেই যাচ্ছি রাস্তায় আমানকে ও হসপিটালে দেখে যাবো।
– লাগবে না আমি একা যেতে পারবো।

কথা গুলো বলে পিছনে ফিরে এক মুহুর্তের জন্য তাকিয়ে তারাতাড়ি করে চলে যায় মায়া। নিঝুম মায়ার চোখের পানি দেখতে পেয়েছে। মন ভাঙার মতো কষ্ট পৃথিবীতে হয়তো আর কিছুতে নেই। বার বার ভেঙে যাচ্ছে মন। এই মন ভাঙার বিচার কেন হয়না মানুষের? আমরা যাদের ভালোবাসি আপন ভাবি তারায় বার বার খুব যত্ন করে কাছে ডেকে মন ভেঙে দেয়। ভেঙেচুরে চুরমার করে দেয়। গুড়িয়ে দেয় অজস্র আশা ইচ্ছে, বাসনা, সপ্ন।

নিঝুম তার মায়ের কাছে যায়। মুনিয়া আহমেদ খাটের মাথায় হেলান দিয়ে বসে আছে চোখ বন্ধ করে।

– মায়াকে কি বলেছো আম্মু?
– যা বলার সেই গুলোই বললাম ওর বাচ্চামির জন্য দু পরিবারের সুখ নষ্ট করতে পারি না। এমন নয় যে আমি ওকে ভালোবাসি না আমি ওকে ভালোবাসি তবে এই খানে কিছু করার নেই।
– তুমি ভুলে কেন যাচ্ছো আম্মু আমি মায়াকে ভালোবাসি। ওর চোখে পানি আমি দেখতে পারি না। ওকে আমি ছোট থেকেই ভালোবাসে আগলে রেখেছি, তোমার কথায় আমি হয়তো ওকে ভুলে যাবার চেষ্টা করবো। আমান আমার ও ছোট ভাই ওর জন্য হয়তো আমি এতোটুকু করতে পারি, ওকে বুঝানোর চেষ্টা করবো আমানকে বিয়ে করতে তবে মায়ার কিছু হলে আমি কাউকে ছাড়বো না। সারা দুনিয়ায় আমি আগুন লাগিয়ে দিবো। আমার মায়া সুখে থাকবে এইটুকু দেখতে চাই আমি।

নিঝুমের চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে ভিতরে মনে হচ্ছে কোন ঝড় উঠেছে হঠাৎ। নিঝুম নিজেকে সামলে
– অফিসে যাচ্ছি আমি।
– কিছু খেয়ে যা।
– না মায়াদের ওখান থেকে নাস্তা করে এসেছি।

মায়া রুমে এসে দরজা লক করে দেয়। কার কাছে যাবে ও? সব আপন মানুষ গুলো ওর বিপক্ষে, হতবিহ্বল হয়ে বেল্কুনিতে তার খাচায় বন্দি পাখির কাছে যায়। এই পাখি দুইটা মায়াদেবের দেওয়া। মায়ার যখন ভীষন মন খারাপ হয় তখন পাখি গুলোর সাথে কথা বলে। মায়াদেবের দেওয়া সব কিছুই যে মায়ার কাছে দামী সেটা কষ্ট হোক বা পাখি দুটো।

মায়া আসতে আসতে পাখিগুলোর কাছে গিয়ে।

– আচ্ছা তোরা ই বল মায়াদেব কি আমায় ভালোবাসে না? আমার ভালোবাসা কি শুধুই একতরফা? আমি কি করলে মায়াদেবকে পাবো বলবি?
মায়া কান্নায় ভেঙে পরে
– কথা বলছিস না কেন? তোরা ও কথা বলবি না আমার সাথে? দেখনা মায়াদেব তার মায়াকে বুঝে না। আমার যে দম বন্ধ হয়ে যায় রে আমি কি করবো? আমানকে ভালোবাসার চেষ্টা করবো? চেষ্টা করে কি ভালোবাসা হয়? আমার কি মায়াদেবের সাথে সরাসরি কথা বলা উচিত? এমন বেহায়া কি ভাবে হবো ও তো বলেই দিয়েছে যাতে আমি আমানকে বিয়ে করে নেই।

চোখ মুছতে মুছতে

– কিরে তোরা কথা বলছিস না যে, মন খারাপ করেছিস? তোদের মালিকের নামে এসব শুনে? আচ্ছা মন খারাপ করতে হবে না চল তোদের একটা কবিতা শোনায়।

মেঘাচ্ছন্ন আমার একটুকরো রোদ
অবহেলায় আমার ভালোবাসা আর
কুয়াশায় ডাকা আমার অস্তিত্ববোধ।

বেঘোরে সবাই যখন নিশিত নিদ্রায়
নিদ্রাবিহীন আমার অনুভূতি তখন
দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্মৃতির মেলা জমায়।

একান্ত নিজের থাকা লুকানো অনুভুতি
অবেলায় কেন ছেড়ে যায় না নিয়েই অনুমতি?
চূর্ণন করেছে সে কবেই বেপরোয়া আবেগ
একটু ও কাজ করেনি তার অকেজো বিবেক।

এমন দহন তার নাই-বা হোক
যত ক্লেশ আছে সব আমার হয়েই রওক।
রুক্ষ অহংকারী কটু কথা নাই বা হলো শোনা
অন্বেষা যেনো না করতে হয় আমায়
ঈশ্বরের কাছে আমার এই আরাধনা।

দিনশেষে তবু ও বলবো তার নেই গলদ
শুধু একটাই আরজি আমি ভালোবাসি
বললে সে যেনো না করে বিমত।

দরজায় কেউ শব্দ করছে শুনে মায়া চোখের পানি মুছে দরজার দিকে যায়৷ দরজা খুলে দেখে মায়ার আম্মু (ঐশি শিকদার) দাঁড়িয়ে আছে।

– আর কতো কান্না করবি? মুনিয়া আপা না করে দিয়েছে নিঝুমকে বিয়ে করাবে না এখানে।
– জানি।
– সবাই হসপিটালে যাচ্ছি মুনিয়া আপা নিঝুম ও আসবে তোকে বলেছে নিয়ে যেতে সাথে।
– আমি যাবো না।
– কেনো যাবি না? দেখ আমান তো আমাদেরই ছেলে অনেক ভালো ছেলে তোকে ভালোবাসে অনেক।
– মা এখানে ভালো খারাপ কেনো আসবে? আমি ভালোবাসি মায়াদেব কে এখন অন্য কে ভালো কে খারাপ আমি দেখে কি করবো?
– এই গুলো ভালোবাসা না এই গুলো ছেলে বেলার আবেগ।
– তাহলে আমানের ভালোবাসা ও আবেগ।

ঐশি শিকদার একটু চুপ থেকে
– তর্ক করিস না। জলদি ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। তোর আব্বু, বড় আব্বু, বড় মা, মাহাদ ( মায়ার ভাই) আশা ( আমানের বোন) সবাই নিচে অপেক্ষা করছে।

মায়া কিছুক্ষণ বসে থেকে কি ভেবে যেনো উঠে ফ্রেশ হতে গেলো। তারপর রেডি হয়ে নিচে যায়।

মায়াকে দেখে মায়ার বড় আব্বু ( আশিক আহমেদ)
– এই তো মায়া মা চলে এসেছে।

মায়ার আব্বু ( শফিক আহমেদ)
– কিরে এতো দেরি করলি যে। ওইদিকে আমান হয়তো অপেক্ষা করতে করতে অস্থির হয়ে গেছে।

মায়ার আম্মু সবার এতো প্রশ্ন দেখে
– আচ্ছা এখন তারাতাড়ি চল সবাই। দেরি হয়ে যাচ্ছে।
দুই গাড়িতে সবাই উঠে পড়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার জন্য।
.
.
.
আমান শুয়ে আছে বেডে সবাই রুমের ভিতরে বসে আছে।
মায়া ভিতরে ডুকেনি দরজার পর্দা ধরে দাঁড়িয়ে আছে দূরে আমানের দিকে তাকিয়ে ।
আমানের আম্মু কান্না করছে আমানকে ধরে।
– কেনো এমন করলি তুই। তুই আমাদের আগে বলতে পারতি। আমরা একটা ব্যবস্থা করতাম।

আমান কিছু না বলে মায়াকে খুজঁছে সব জায়গায় চোখ বুলিয়ে দেখে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে তার মায়া………

চলবে………

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে