মায়া পর্ব-১০

0
1167

#মায়া
#পর্ব_১০
#ওয়াহেদ_মাহমুদ

হঠাৎ করেই আফসানা শ্বাশুড়ি কে বলে মেয়ে হবে শুনে তখন তো ঠিকই বলেছিলেন এবোরশন করে নিতে। প্রথমে তো আসলেন না। ছেলে হয়েছে শুনে এখন আসছেন। আমার ছেলেকে এখানে রেখে দিন। আমি চাই না আপনি আমার সন্তানকে কোলে নিন। প্রথমে নিজের মন ঠিক করবেন তারপর কোলে নিবেন।

শ্বাশুড়ি যখন কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই ওয়াহেদ দুজনকে চুপ করিয়ে দেয়। তোমরা দুজন কি শুরু করলে। এটা তোমাদের বাড়ি না এটা হাসপাতাল এখানে অত্যন্ত চুপ থাকো, তারপর বাসায় কি যা ইচ্ছা করিও। হাসপাতালে কয়েকদিন থাকার পর বাসায় চলে আসে আফসানা আর মেয়েকে নিয়ে।

রাতে ওয়াহেদ অফিস থেকে বাসায় ফিরে আসে। খাবার টেবিলে সবাই খাওয়া দাওয়া করছিল তখন ওয়াহেদের বোনের বাসা থেকে ফোন আসে যে, ওয়াহেদের বোন প্রেগন্যান্ট এসে দেখে যেতে। সবাই অনেক খুশি। ওয়াহেদের মা বলে মেয়েকে আমার এখানে নিয়ে আসবো। ওখানে থাকলে কাজ করতে হবে। এখানে থাকলে কাজ করা লাগবে না আমি সব সময় দেখে শুনে রাখব।

তখন আফসানা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে দোয়া করি আপনার মেয়ের শ্বাশুড়ি যেন, আপনার মতো না হয়। আপনার থেকে ভালো হবে আশা করি।

শ্বাশুড়ি তখন বলে আমার মতো বলতে কি বোঝাতে চাও তুমি, আর আমার থেকে ভালো মানে?

ও মা আপনি এখনো বুঝতে পারেন নাই। বলতে চাচ্ছি আপনার মেয়ের যদি মেয়ে হয় তাহলে আপনার মেয়ের শ্বাশুড়ি যাতে না বলে যে বোউ মা তুমি এবোরশন করে নাও। আর যদি বলে এবোরশন করতে, তাহলে তখন আপনি কি করবেন?

আফসানার শ্বাশুড়ি তখন আর কিছু বলে না চুপ করে থাকে। যেই শ্বাশুড়ি সব সময় চোখ উপরের তাকিয়ে কথা বলতো সেই শ্বাশুড়ি আজ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আর মুখে কোনো কথা নেই।

আফসানা তখন আবার হাসি দিয়ে বলে কি হলো শ্বাশুড়ি মা আর কোন কথা বলছেন না কেন?

শ্বাশুড়ি তখন খাবারের টেবিল থেকে উঠে চলে যায় আর বলে আজ আমার শরীর অনেক খারাপ। রেস্টের প্রয়োজন, চলে গেলাম আমি।

আজ পূর্ণতার বার্থডে। দেখতে দেখতে এক বছর পূর্ণ হয়ে গেল পূর্ণতার বয়স। আজকের এই দিনে জন্মগ্রহণ করে পূর্ণতা। আর আজকের দিনে স্বামীর অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় সুরাইয়া। সবকিছু যেন ধুলার সাথে মিশে যায় । আরো অনেক কথা চিন্তা করতে থাকে সুরাইয়া। কিন্তু এখন এসব কথা চিন্তা করে আর কি হবে। যা হয়েছে সবকিছু মানিয়ে নিতে হবে। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।

বার্থডে উপলক্ষে কেক বা পার্টি দেয়া হয়নি। সুরাইয়া নিজে, বাবা, পূর্ণতা, মারিয়া আর মারিয়ার স্বামী, সন্তান সবাই একটা পরিবারের মতো। সবাই মিলে একটা বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে সবার মাঝে খাবার পরিবেশন করেন পূর্ণতার জন্মদিন উপলক্ষ্যে। বৃদ্ধাশ্রমের মানুষের মধ্যে খুশি গুলো ভাগ করে নেই পরিবারের সাথে।

এভাবেই দেখতে দেখতে প্রায় আরো চার মাস চলে যায়। আজ সবাই মিলে ওয়াহেদের বোনের শ্বশুরবাড়ি গিয়েছে। ওয়াহেদের মা মেয়ের বাড়িতে গিয়ে জানতে পারে। তার মেয়ের মেয়ে সন্তান হবে।‌ শ্বশুর বাড়ি থেকে নির্যাতন করে সব সময়। তাদের ছেলে সন্তান চায় কিন্তু মেয়ে সন্তান হবে। ওয়াহেদের বোন বর্ষা কে তার শ্বাশুড়ি বলে এবোরশন করে নিতে। এটাই তার জন্য ভালো।

বর্ষার মা তখন বলে এবোরশন কেন করবে আমার মেয়ে। ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে এটা নির্ধারিত করে আল্লাহ। এখানে আমার মেয়ের দোষ কোথায় এখানে। আমি থাকতে আমার মেয়েকে এবোরশন করতে দিব না।

বর্ষার শ্বাশুড়ি তখন বলে বাহ ভুতের মুখে রাম রাম। লজ্জা করছে না এসব কথা বলতে। সবকিছু কি ভুলে গিয়েছেন। সুরাইয়া মেয়েটার উপর কত নির্যাতন করছেন আপনি শুধুমাত্র মেয়ে সন্তান হওয়ার জন্য। আর আফসানাকে তো বলেছিলেন এবোরশন করে নিতে। আপনার মেয়ের জন্য কত চিন্তা আর অন্যের মেয়ের জন্য শুধু নির্যাতন। আপনি একটাও কথা বলবেন না। বর্ষার এবোরশন তো হবেই। আজ বর্ষাকে এবোরশন করানো হবে।

বর্ষা মায়ের কাছে এসে অনেক কান্নাকাটি করে। বর্ষা মায়ের কাছে এসে বলে আমি এবোরশন করাতে চাই না কিন্তু তারা আমাকে জোর করে এবোরশন করাতে চায় আর সবকিছু তোমার দোষ। তুমি অন্যের মেয়ের উপর নির্যাতন করেছিলে বলে সেই পাপের শাস্তি আজ আমাকে ভোগ করতে হচ্ছে।

আজ বিকালে বর্ষাকে নিয়ে যেতে হবে এবোরশন করাতে। বর্ষার মা কান্না করছে। অনেক করে মানা করছে বর্ষার শ্বাশুড়ি কে, যাতে বর্ষার এবোরশন না করানো হয়। কিন্তু কোনো কথায় কাজ হচ্ছে না। ওয়াহেদের মা ওয়াহেদের কাছে গিয়ে বলে তুই তো কিছু বলতে পারিস, তোর বোন কে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে এবোরশন করাতে।

ওয়াহেদ তখন করুণ কন্ঠে বলে আমার কিছু করার নেই মা। আমাদের পাপের শাস্তি এখন আমার বোন তোমার মেয়েকে ভোগ করতে হচ্ছে। মনে আছে মা সুরাইয়ার কথা। দশ বছর পর মেয়ে সন্তান হয়েছিল। অনেক মানুষের তো সন্তান হয় না। আমাদের তো দশ বছর পরে হয়েছিল। কিন্তু মেয়ে সন্তান হওয়ার কারণে আমি আর একটা বিয়ে করি। তুমি তো অনেক নির্যাতন করেছিলে সুরাইয়ার উপরে।

আফসানা মেয়ে হবে যখন শুনেছিলে তখন তো আফসানা কে এবোরশন করতে বলেছিলে। আফসানার যখন সন্তান হয়েছিল তখন একেবারে জন্য দেখতে গিয়েছিলে না। তারাও তো কারোর মেয়ে কারোর বোন হয়। ঠিক তোমার আমার মতো।

এখন আমার কিছু করার নেই। তুমি যদি চাও বর্ষা এই বাড়িতে সুখে থাকুক তাহলে তারা যেভাবে করতে চায় করুক। সবকিছু মেনে নাও।

ঘন্টা দুয়েক পরে হাসপাতাল থেকে বর্ষার হাসব্যান্ড এর ফোন আসে বর্ষার শ্বাশুড়ির কাছে এটা বলার জন্য যে, বর্ষার এবোরশন ঠিক মতো হয়েছে। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বাসায় চলে আসবে। বর্ষার শ্বাশুড়ি এসে বর্ষার মা, ভাইয়া আর ভাবিকে বলে দেয় বর্ষার এবোরশন ঠিক মতো হয়েছে। চিন্তা না করতে।
বর্ষার মা, ভাইয়া আর ভাবি তখনই বাসায় চলে আসে। বর্ষার সাথে দেখা না করেই। বর্ষার মা কান্না করছে আর ভাবছে আমার পাপের শাস্তি আমার মেয়ের কপালে লেখা ছিল। আমি যদি সুরাইয়ার সাথে নির্মমভাবে ব্যবহার না করতাম, যদি সুরাইয়াকে নির্যাতন না করতাম, যদি খারাপ সময় সুরাইয়া পাশে থাকতাম, যদি ওয়াহেদের দ্বিতীয় বিয়েতে সম্মতি না দিতাম তাহলে আজ এই দিন দেখতে হতো না। আমি এসবের প্রতিবাদ করতে পারতাম তাহলে আমার মেয়ে সুখে থাকত। তার সন্তান পৃথিবীর মুখ দেখতে পারত। কিন্তু তা আজ হলো না। কিন্তু আমিই তো অপরাধী এসব প্রতি প্রতিবাদ করার মতো যোগ্যতা আমার নেই।

এর মাঝে প্রায় দশ মাস পার হয়ে যায়। এর মধ্যে বর্ষার সাথে কথা হয়নি বর্ষার মায়ের। বর্ষার মা অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। আফসানার সাথে খারাপ ব্যবহার করে না। সব সময় নরম সুরে কথা বলে। আর মাঝে মাঝে সুরাইয়ার জন্য আফসোস করে। কিন্তু কিছু করার নেই যে। দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম সবাই বুঝে না।

দুপুরে দিকে বর্ষার ফোন আসে মায়ের কাছে। ফোনের ওপাশ থেকে হেসে হেসে বর্ষা বলে মা আজ আমার মেয়ে হয়েছে সিজার করে, তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে আসো ভাইয়া আর ভাবির সাথে।
বর্ষার মা তখন বুঝতে পারছে না এবোরশন করার পরেও বাচ্চা কিভাবে হবে। ছয় মাস আগে তো এবোরশন করানো হয়েছিল বর্ষার। আর কিছু না ভেবে বর্ষার মা হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ওয়াহেদ আজ বাসায় ছিল না আফসানার সাথে শ্বশুরবাড়ি গিয়েছে। তাই বর্ষার মা একাই রওনা দেয়। কিন্তু যাওয়া পথে সেই বাসে করে যাচ্ছিল সেটা এক্সিডেন্ট করেছে।

বর্ষার তো এবোরশন করানো হয়েছিল তাহলে কিভাবে ছয় মাস পরে বাচ্চা হয়?

বর্ষার মা এক্সিডেন্ট করেছে তাহলে কি মারা যাবে নাকি বেঁচে থাকবে?

চলবে,,,,,,

বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে