মায়া পর্ব-০৭

0
1129

#মায়া
#পর্ব_০৭
#ওয়াহেদ_মাহমুদ

আফসানা তখন শয়তানি হাসি দিয়ে বলে। বাসায় সবার কাছে ভালো হওয়ার জন্য এমন করছে। কিন্তু সুরাইয়া আসলে একটা চোর। দেখো আবার বাসা থেকে কিছু চুরি করে পালিয়ে অন্য কোথাও চলে গিয়েছে কি?

ওয়াহেদ আফসানার কাছে গিয়ে চোখে চোখ রেখে বলে। একদম আজেবাজে কথা বলবে না। সে বাসায় সবার কাছে ভালো হওয়ার জন্য হোক বা এমনি হোক আল্লাহ তার উছিলায় তোমার আর তোমার সন্তানের জীবন বাঁচিয়েছে। কাল যদি সুরাইয়ার না থাকতো তাহলে তুমি আর তোমার সন্তান এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে না। উপকারের মূল্য দিলে সম্মান নষ্ট হয়ে যায় না। সে উপকার করছে তোমার তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।

ওয়াহেদের কথা শুনে নিচের তাকিয়ে আছে আফসানা। কিন্তু মুখে বিন্দু পরিমাণ লজ্জা বা অনুশোচনা নেই।

ওয়াহেদ আফসানার কাছে গিয়ে রাগান্বিত হয়ে বলে, সত্যি করে বলবে কোন প্রকার মিথ্যা বলবে না। আম্মার রুমে থেকে কানের দুল চুরি করে সুরাইয়ার বেডের নিচে কে রেখেছিল? তুমি রেখেছিলে?

আফসানা তখন বলে আমি কেনো এমন কাজ করবো। আমাকে চোর মনে হয় কি? আর আম্মার রুম থেকে কানের দুল চুরি করে সুরাইয়ার বেডের নিচে রেখে আমার লাভ কি হবে।
তখন ওয়াহেদ বলে সত্য কখনো চাপা থাকে না। একদিন না একদিন সত্য প্রকাশ পাবে। সেদিন আমি তাকে নিজ হাতে শাস্তি দিব।
আর কিছু না বলে ওয়াহেদ নিজের রুমে চলে যায় সুরাইয়ার লেখা চিরকুট নিয়ে।

আফসানা মনে মনে হাসতে থাকে‌। সুরাইয়া এই বাসা থেকে চলে গিয়েছে ভালো হয়েছে। এখন এই বাড়িতে সম্পূর্ণ নিজের স্বাধীনতা। নিজের মতো চলতে পারবে। ওয়াহেদ কে হারানো ভয় থাকবে না। সুরাইয়ার প্রতি ওয়াহেদের আর কোনো ভালোবাসা থাকবে না।

সুরাইয়ার বাবার ফোনে ওয়াহেদ ফোন দেয় কিন্তু ফোন যায় না। পরেরদিন সকালে ওয়াহেদ অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সুরাইয়ার বাসায় যায়। কিন্তু সুরাইয়ার বাসায় গিয়ে ওয়াহেদ হতাশ হয়। সুরাইয়া ওর বাবার বাসায় যায়নি। তাহলে কোথায় যেতে পারে। আর কোনো উপায় না পেয়ে সুরাইয়ার বাসা থেকে চলে যায় ওয়াহেদ। সুরাইয়ার ভালোবাসা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ওয়াহেদ। কিন্তু এখন উপলব্ধি করে কি লাভ। কথায় আছে না দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝে না। এখন এমন পরিস্থিতিতে আছে ওয়াহেদ।

কিন্তু কাল সকালে সুরাইয়া বাবার কাছে ছিল। ওয়াহেদের বাসা থেকে সোজা বাবার বাসায় আসে। বাবাকে সব ঘটনা খুলে বলে এতদিন যা হয়েছে।
তখন বাবা বলে তুই আমাকে কিছু বলিস নাই কেন মা? আমাকে একবার বলতে পারতি।আমি ওয়াহেদের সাথে কথা বলে ঠিক করে দিতাম। তুই এখানে থাক আমি ওয়াহেদের সাথে কথা বলে দেখি কিছু করতে পারি কি।

সুরাইয়া তখন বাবাকে বলে না বাবা আর কিছু করতে হবে না। আমি অনেক সহ্য করে ছিলাম। ওই বাসায় গিয়ে আমি আর নির্যাতিত হতে চাই না। তার থেকে আমি দূরে কোথাও চলে যায় আমার মেয়ে পূর্ণতাকে নিয়ে।

সুরাইয়ার বাবা তখন বলে দূরে কেন যাবি? আমার এখানে থাক। তোমার মা যদি বেঁচে থাকতো আজ, তাহলে তোকে দূরে কোথাও যেতে দিত না।

না বাবা আমি এখানে থাকতে পারবো না ওয়াহেদ আমাকে খুঁজতে নিশ্চয়ই এখানে আসবে। আমি আমার বান্ধবী মারিয়ার ওখানে থাকবো। পূর্ণতাকে নিয়ে ওখানে চলে যাব‌। কিছুদিন পরে একটা চাকরি পেলে আমি তোমাকে সাথে নিয়ে যাবো বাবা।

আমার একটা কথা রাখবে বাবা?

হ্যাঁ মা বল একটা কেন তোর সব কথা আমি রাখবো। কি কথা রাখতে হবে বল?

ওয়াহেদ যদি এখানে আমার খোঁজে আসে তাহলে তুমি বলবে না, আমি এখানে এসেছি। আর কোথায় আছি সেটাও বলবে না। আমার মনে হয় না ওয়াহেদ এখানে আমার খোঁজে আসবে। যদিও আসে তাহলে আমার কথা কিছু বলবে না তুমি।

পরের দিন সকালে ওয়াহেদ আসার আগে সুরাইয়া পূর্ণতার সাথে করে বান্ধবী মারিয়ার বাসায় চলে যায়। বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি সুরাইয়াকে কিছুদিন পরেই একটা চাকরি হয়ে যায় সুরাইয়ার। ইন্টার পরিক্ষার পরে সুরাইয়ার শ্বশুরি বাড়ি থেকেই অনার্স পাশ করে।

প্রথমে শ্বশুর বাড়ির কেউ রাজি ছিল না যে বাসার বোউ পড়াশোনা করুক। ওয়াহেদ বলেছিল তুমি পড়াশোনা কেনো করবে? নিশ্চয়ই চাকরি করার জন্য পড়াশোনা করবে। আমি থাকতে তুমি কেন চাকরি করবে?

ওয়াহেদের এই কথাটা মনে পড়লে সুরাইয়া মুচকি হাসি দেয়। সেদিন তো ঠিকই বলেছিল তোমার পড়াশোনা করে চাকরি করার দরকার নেই আমি তোমার পাশে আছি কিন্তু কথা রাখেনি আমার জীবন আমাকে তৈরি করে নিতে হচ্ছে। নিজেকে চাকরি করতে হচ্ছে। এখন আর ওয়াহেদ আমার পাশে নেই।

বাসায় যখন কেউ রাজি ছিল না, তখন সুরাইয়ার শ্বশুর সুরাইয়ার সাথে ছিল। সুরাইয়ার শ্বশুর তখন পড়াশোনা করার জন্য অনুমতি দেয়। তারপর থেকে সুরাইয়া পড়াশোনা করে। অনার্স শেষ করে। কিন্তু আজ যদি সুরাইয়ার শ্বশুর বেঁচে থাকতো তাহলে সুরাইয়াকে এমন খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। শ্বশুর মারা যাওয়ার পর থেকে শ্বাশুড়ির নির্যাতন সহ্য করতে হয় সুরাইয়া কে ।

বান্ধবী মারিয়ার বাসায় আসার প্রায় দশ দিন পরে একটা চাকরি পেয়ে যায় সুরাইয়ার বেতন খুব বেশি না হলেও মোটামুটি ভালোই চলে যাবে।

কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি। মাসে আট হাজার টাকা বেতন
আর টিউশনি করিয়ে প্রায় সাত আট হাজার টাকা পায়। সব মিলিয়ে ১৫ হাজার পেয়ে থাকে। দেখতে দেখতে এক মাস চলে গেল। বাবার সাথে ছাড়া আর কারো সাথে যোগাযোগ হয় না সুরাইয়ার।

এই মাসে প্রথম বেতন পেয়েছে সুরাইয়া। সবকিছু প্রয়োজন মিটিয়ে মাস শেষে হাতে আর তিন হাজার টাকা আছে। নিজের একটা ফোন ও নেই। যেটা ছিল সেটা আসার সময় ইচ্ছে করেই শ্বশুর বাড়িতে রেখে আসছে। বান্ধবী মারিয়ার ফোন দিয়ে বাবার সাথে মাঝে মাঝে কথা বলে। এই মাসের তিন হাজার টাকা অবশিষ্ট ছিল তার মধ্যে থেকে এক হাজার টাকা দিয়ে একটা ফোন কিনে নিয়ে আসে। অন্যের ফোন দিয়ে আর কতদিন চলবে।

আর বাকি টাকা রেখে দেয় পূর্ণতার জন্য, আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে, পূর্ণতার পিছনে খরচ বেশি হচ্ছে। কয়দিন পরে বাবাকে আনতে হবে । বাবা একা একা থাকে। অনেক সমস্যা হয়‌। পূর্ণতা বড় হলে এই বেতনে চলা প্রায় অসম্ভব। এই চাকরি টা করছে আর একটা নতুন চাকরি খুঁজছেন এর থেকে ভালো বেতনের।

সুরাইয়া পূর্ণতাকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে বিকালে। ঠিক এমন সময় সুরাইয়া বান্ধবী মারিয়া রুমে আসে। আর সুরাইয়ার উদ্দেশ্যে বলে অনেকদিন তো হলো তুই ওয়াহেদের ওখান থেকে চলে এসেছিস। ওয়াহেদকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিয়ে ডিভোর্স দিয়ে দিতে বল।তারপর তুই একটা বিয়ে করে ফেল ভালো ছেলে দেখে‌। এভাবে আর কতদিন চলবি বল। পূর্ণতা বড় হচ্ছে। তোর একার পক্ষে সামলানো অনেক কষ্ট হয়ে যাবে। তুই একটা বিয়ে কর তাহলে পূর্ণতা, বাবা মা দুজনের পরিচয়ে বড় হবে। আর যদি বিয়ে না করিস তাহলে শুধু মায়ের পরিচয়ে বড় হবে।‌ পূর্ণতার জন্য বাবার ভালোবাসা অনেক প্রয়োজন।

সুরাইয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বল না রে আর বিয়ে করব না। এভাবেই জীবন পার করে দিব। এখন থেকে পূর্ণতার মা আর বাবা দুজনেই আমি। আলাদা করে বাবার ভালোবাসা পাওয়ার দরকার নেই। দ্বিতীয় স্বামী ও যদি ওয়াহেদের মতোই হয় তাহলে কি হবে।

মারিয়া বলে তুই সব জানিয়ে তারপর বিয়ে করবি। তাহলে তো সমস্যা হবে না।

প্রথম প্রথম সবাই আশা ভরসা দিয়ে থাকে। কথা দিয়ে থাকে কিন্তু পূরণ করে না।

আজ অফিস ছুটির দিন। সকালে বারান্দায় বসে আছে ওয়াহেদ। আফসানাকে ডেকে এক কাপ চা দিতে বলে ওয়াহেদ। চা তৈরি করতে গিয়ে মাথা চক্কর দিয়ে উঠে আফসানার। কয়েকদিন থেকে এমন সমস্যা হচ্ছে। বিকালে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তার বলে রেস্ট নিতে আর কাজ করা যাবে‌।

ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে আলট্রাস্নোগ্রাফের মাধ্যমে জানতে পারে আফসানার..

চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে