মাফিয়ার_ভালোবাসা পর্বঃ ০৩

0
1900

মাফিয়ার_ভালোবাসা পর্বঃ ০৩
– আবির খান

অনেক ক্লান্ত হয়ে পরায় আবির একটা বেঞ্চে বসে আরাম করার জন্য। আরামের এক পর্যায় হঠাৎ আবিরের চোখ যায় ওর ডান পাশের বেঞ্চে।

আবির দেখে,

একটা মেয়ে বসে আছে। মানে রেস্ট নিচ্ছে। হয়তো এতোক্ষন জগিং করেছে তাই। আবির মেয়েটির শুধু বাম পাশটাই দেখতে পাচ্ছে। সে ভাবেই মেয়েটাকে অনেক অনেক সুন্দরী লাগছে। অনেক ফরসা আর মায়াবতী। মেয়েটার চোখগুলোও অনেক সুন্দর। পাশ থেকে বড় বড় চোখের পাপড়িগুলো যেন মেয়েটার চোখের সৌন্দর্য আরো ১০ গুন বাড়িয়েছে। আবির মেয়েটাকে দেখছে।

হঠাৎ কিছু ছোট ছোট বাচ্চারা মেয়েটার কাছে দৌড়ে চলে আসে। আবির শুধু দেখছে। বাচ্চা গুলো দেখতে অনেক গরীব আর নোংরা জামা কাপড় পরা। আবির ভেবে ছিলো হয়তো মেয়েটা বাচ্চা গুলোকে তাড়িয়ে দিবে। কিন্তু এরপর মেয়েটা যা করলো তা আবিরকে বেশ অবাক করেছে। সাথে মেয়েটার প্রতি আবিরের সম্মান আর ভালো লাগা হাজার হাজার গুন বাড়িয়ে দিয়েছে।

মেয়েটা সবচেয়ে নোংরা বাচ্চাটাকেই কোলে তুলে নিলো। বাকিদের ওর পাশে বসালো। তারপর মেয়েটা ওর ব্যাগ থেকে অনেক গুলো দামি দামি চকলেট ওই বাচ্চা গুলোকে দিলো। বাচ্চা গুলো চকলেট পেয়ে সে কি খুশি। তাদের হাসি দেখে মনে হচ্ছে অনেক গুলো মুক্তা একসাথে ঝরছে। আর মেয়েটার হাসি ছিলো সবচেয়ে সুন্দর আর মন কারা। আবির শুধু মুগ্ধ হয়ে ওদের দেখছে। মেয়েটাকেও যেন একটা বাচ্চা বাচ্চা লাগছে। সে এখন বাচ্চা গুলোর সাথে খেলা করছে। খেলার এক পযায় মেয়েটা আবিরের দিকে তাকায়। এতো সুন্দর আর হ্যান্ডসাম ছেলে যে ওর দিকে এভাবে এতোক্ষন তাকিয়ে ছিলো মেয়েটা তা বুঝতেই পারেনি। মেয়েটা যে ভদ্র এবং ভালো মনের অধিকারী তা আবির সে চাহনিতেই বুঝে গিয়েছে। কারণ মেয়েটা আবিরের দিকে শুধু একবার তাকিয়ে একটা মিষ্টি বা মন মুগ্ধকর হাসি দিয়ে বাচ্চাদের দিকে মনোযোগ দেয় আর আবিরের দিকে তাকায় না।

আবির সামনে তাকিয়ে ভাবছে,

এই মেয়ের মনে যদি খারাপি থাকতো তাহলে সে ওর দিকেই তাকিয়ে থাকতো। কিন্তু না সে তা করেনি। সে আবিরকে স্পেশাল পাত্তা দেয়নি। এই প্রথম আবিরকে কোনো মেয়ে পাত্তা দেয় নি। এখানে অবশ্য আবিরের অভিমান করার কথা কিন্তু এখানে আবিরের মনে চলছে অন্য কিছু। এই সেই মেয়ে, যে মানুষের বাইরের রূপকে পছন্দ করে না বরং ভিতরের আসল মানুষটাকে পছন্দ করে। আবির ভাবতেই পারছেনা আজও এরকম মেয়েরা আছে। যারা রূপ দেখে নয় মন দেখে মানুষকে পাত্তা দেয়। বাহ!! এই মেয়ের মনে লুকিয়ে আছে ১০১ টা রহস্য ঠিক আবিরের মতো। আবির চায় এই রহস্যের উদঘাটন সে একাই করবে অন্য কেউ নয়। তাই আবির এসব ভেবে যখন ঠিক করে মেয়েটার সাথে কথা বলে বন্ধুত্ব করবে, আবির পাশে তাকাতেই যেন বিশাল বড় এক ধাক্কা খায়। সেখানে একটা কাকও নেই। মানে আবির যখন মেয়েটির কথা ভাবছিলো হয়তো তখনই মেয়েটা চলে গিয়েছে।

আবিরের ভিষণ রাগ হচ্ছে। এরকম একটা কোহিনূর হারিয়ে ফেললো। আর কি পাবে এই কোহিনূরকে?? কোথায়ই বা খুঁজবে?? আবিরের মনটা অনেক খারাপ হয়ে যায়। বিষন্ন মন নিয়ে বাসায় ফিরে যায়।

রাফিঃ কিরে ভাই তোর কি মন খারাপ নাকি??

আবিরঃ দোস্ত পরে কথা বলি। জীবনে একটা কোহিনূর পেতে পেতেও হারায় ফেলছি। বিষন্ন কণ্ঠে।

আবির উপরে ওর রুমে চলে যায়। রাফি বলে,

রাফিঃ ও বললোটা কি?? এখানে কোহিনূর আসলোই বা কোথা থিকা। ধুর যাই।

সবাই খাবার টেবিলে,

শুভঃ কিরে আবির তোকে এতো রাগী আর গম্ভীর লাগছে কেন??

রাফিঃ ও নাকি কোহিনূর পেতে পেতেও হারিয়ে ফেলছে। মজা করে।

শুভঃ কিহহহ!!!! আশ্চর্য হয়ে।

আবিরঃ সবাই নাস্তা খা তাড়াতাড়ি। গম্ভীর কণ্ঠে।

সবাই চুপ হয়ে যায়।

রহিম চাচাঃ বাবা আবির তোমরা আজ থেকে….. এই ভারসিটিতে ভর্তি হয়েছো। ১১ টায় ক্লাস। তোমরা নাস্তা খেয়ে রওনা দিও। আর তোমাদের জন্য আমি স্পেশাল পারমিট সহ বুলেট প্রুফ স্পোর্টস গাড়ি আনিয়েছি। গাড়িতে আবিরের পছন্দের সব আর্মস আছে। সাথে রাফি আর শুভ এর জন্য। গাড়িটা মডিফাইড করা। আর হ্যাঁ আবির তোমার পছন্দের কালারেরই। মানে রেড কালারের।

আবিরঃ আঙ্কেল আপনিও পারেন বটে। এতো যত্ন যদি….. আবিরের মুখটা লাল হয়ে গেলো রাগে।

রহিম চাচাঃ থাক বাবা পুরনো কথা মনে করো না। আজ তোমার জন্য আমরা সবাই বেঁচে আছি। এই ঢেরবেশি বাবা। তুমি রাগ করো না।

শুভঃ দোস্ত পুরনো কথা। আর কত মনে করবি ভুলে যায়।

রাফিঃ হুম, শুভ ঠিক বলেছে দোস্ত।

আবিরঃ আমার খাওয়া শেষ আমি রেডি হতে যাচ্ছি। গম্ভীর কণ্ঠে।

আবির চলে যায়।

রাফিঃ বুঝলাম না, পার্ক থেকে আসার পরই দেখি ওর মনটা খারাপ। কি জানে কোন কোহিনূর হারাইছে।

শুভঃ হুম, ও কখনো মনের কথা কাউকে বলেও না। খালি নিজে নিজে কষ্ট পায়।

রহিম চাচাঃ হয়তো কেউ আসছে ওর মনের সব কথা শুনতে।

শুভঃ চাচা মন্দ বলেন নি। আর রাফি তোর সাথে তো আরো চ্যালেঞ্জ লেগেছে আবির। দেখ কি হয়। হা হা। মজা করে।

রাফিঃ আরে আমি আরো খুশি হবো ও একজনকে পেলে। কারণ ওতো বুড়ো হয়ে যাচ্ছে। হা হা। অনেক মজা করে।

রহিম চাচাঃ আরে আবির তুমি?? মজা করে।

রাফিঃ দোস্ত সরি সরি। আর এমন করবো না। মজা করছিলাম। সরি ভাই সরি। ভয়ে বলছে না দেখেই।

শুভ আর চাচা অট্টহাসি হাসা হাসছে রাফিকে দেখে। শুভতো পরেই যাচ্ছে হাসতে হাসতে। বেশ বোকা হয়েছে রাফি। রাফিও ওদের হাসি দেখে হেসে দেয়।

১০.৩০ ভারসিটিতে,

সব ছাত্র-ছাত্রীরা ক্যাম্পাসে ঘুরাঘুরি করছে। হঠাৎই অনেক পাওয়ার ফুল ইঞ্জিনের সাউন্ড পায় সবাই। মানে গাড়ির এক্সস্ট থেকে যে সাউন্ড আসে তা। সবাই গেটের দিকে তাকায়। আবির ফুল স্পিডে গাড়ি টেনে ড্রিফট দিয়ে গাড়ি পার্ক করে। আবির অনেক ভালো গাড়ি চালাতে পারে। অনেক বড় বড় পাওয়ারফুল স্পোর্টস কার চালিয়েছে বিদেশে। তার তুলনায় এটা কিছুই না। আবিরের গাড়ি আর এন্ট্রি দেখে সবাই হা করে আছে। এভাবে আজ পর্যন্ত কেউ ভারসিটিতে এসেছে কিনা সন্দেহ। আবির গাড়ি পার্ক করে গাড়ি থেকে নেমে বেড়িয়ে এলো। এবার হয়েছে আরেক কান্ড। কারণ এখন মেয়েরা সব আবিরকে দেখে অবাক।

আবির সম্পুর্ণ ব্লাক গেটাআপে এসেছে। ব্লাক জিন্স আর ডিজাইনার টি-শার্ট। পায়ে গুচি ব্রান্ডের জুতা। হাতে রোলেক্সের ঘড়ি। সবচেয়ে লেটেস্ট আর দামিটা। হীরা লাগানো। আর সাথে আবিরের সিক্স প্যাক বডিতো আছেই।

ভারসিটির সব মেয়েরা আবিরকে দেখে পুরা পাগল। পিছনে যে আরো দুজন ছেলে আছে তা আর কারোই যেন চোখে পরে না।

রাফিঃ শুভ দেখছিস অবস্থা?? আবির কি আজকে ক্লাসে যেতে পারবে না কি তার আগেই??হাহাহা।

শুভঃ দেখ কি হয়। হা হা।

আবির ওর বন্ধুদের পাশে নিয়ে হেটে ক্লাসের দিকে যায়। মেয়েরাও ওদের পিছু নেয়। আবির ক্লাসের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আর পিছনে তাকিয়ে দেখে ৩০টা মেয়েতো হবে। কি আর করার আস্তে আস্তে সবার সাথে পরিচয় হলো। কিন্তু কাউকেই আবিরের মনে ধরে নি। ধরেছে শুধু সকালের সেই মেয়েটা।

আবির রাফি আর শুভর সাথে ক্লাসের বাইরে করিডোর দাঁড়িয়ে কথা বলছে। কারণ ক্লাস শুরু হতে এখনো অনেক সময় বাকি।

শুভঃ দোস্ত রাফিতো হেরে গেলো রে।

আবিরঃ আমি কিছু জানি না। আমিতো বুড়ো।

রাফিঃ তুই এখনো বুড়ো। একটা প্রেমও এখনো করতে পারলি না।

আবিরঃ মাফিয়া…

শুভঃ আস্তে…

আবিরঃ একটা মাফিয়াকে কেইবা ভালোবাসবে বল?? আস্তে করে বলল।

শুভঃ বাসবে বাসবে দেখিস।

আবিরঃ আর দেখ…..

আবির যেন থমকে গিয়েছে। আবির অবাকের সাত আসমানে। আবিরের বিশ্বাসই হচ্ছেনা। ও এখানে??

রাফিঃ কি হয়েছে আবির এভাবে থমকে গেলি কেনো??

শুভঃ দেখ ও আমাদের পিছনে কারো দিকে তাকিয়ে আছে মনে হয়।

শুভ আর রাফি ওদের পিছনে মানে আবির যেদিকে তাকিয়ে আছে আরকি ওইদিকে তাকায়। ওরা দেখে একটা অপরূপ সুন্দরী মেয়ে এদিকে হেটে আসছে। শুভ আর রাফি একবার আবিরের দিকে একবার মেয়েটা দিকে তাকায়।

শুভঃ বন্ধু হয়ে গেছে মনে হয়। আমাদের মাফিয়ার প্রেমিকা মনে হয় পেয়ে গিয়েছি।

রাফিঃ তাইতো দেখছি। আজ পর্যন্ত আবিরকে এভাবে কোনো মেয়ের দিকে তাকাতে দেখেনি। এই প্রথম। মেয়েটার কপালে দূর্ভোগ আছে নিশ্চিত। হাহা।

শুভঃ আসলেই। ও জানে না যে ও কার চোখে পরেছে। হা হা।

এদিকে আবির যেন ৫১২ ভোল্টের সকড খেয়েছে। কারণ এই সে মেয়ে যাকে সকালে আবির পার্কে দেখেছিলো। ওকে এখানে দেখে আবির যেমন সকড তেমনিই অনেক খুশি। আবির দেখে মেয়েটা ওর ক্লাসেই ঢুকেছে। আবির আরো অনেক খুশি হয়ে যায়।

রাফিঃ দেখ দোস্ত আবিরের মুখটা কেমন খুশি খুশি লাগছে আর ব্লাস করছে।

শুভঃ হুম তাইতো। ব্যাপারটা কি রে?? চল ওকেই জিজ্ঞেস করি।

রাফিঃ হুম কর।

শুভঃ এই আবির…আবির.. এই বেটা।

আবিরের ঘোর রাফি আর শুভর ডাকে ভাঙে।

আবিরঃ কি??.

শুভঃ ব্যাপারটা কি বলতো ভাই??

রাফিঃ বলো বন্ধু।

আবিরঃ কিসের ব্যাপার??

শুভঃ মজা নিবি না। ওই মেয়েটার দিকে তুই এভাবে তাকিয়ে ছিলি কেন??

আবিরঃ আচ্ছা তোদের একটা প্রশ্ন করি??

রাফিঃ কর।

আবিরঃ ভারসিটির প্রায় সব মেয়েইতো আমার সাথে দেখা করলো কিন্তু এই মেয়েটাকে দেখেছিস?? আমি যে এখানে দাড়ানো একবারও আমার দিকে তাকায় নি। বুঝেছিস কিছু??

শুভঃ বলিস কি?? তোর মতো ছেলের দিকে তাকায় নি!! অন্ধ নাকি আবার?? মজা করে।

আবিরঃ ফাজলামি করবি না। ও সবার থেকে অনেক আলাদা। ওই সেই আমার হারিয়ে ফেলা কোহিনূর।

রাফিঃ ও…এর জন্যই এতো অবাক দেখাচ্ছিলো তোকে??

আবিরঃ হুম।

শুভঃ দোস্ত কাহিনিটা খুলে বলতো।

আবির সকালে সব খুলে বলল।

শুভঃ বাহ!! মেয়েটা মানে আমাদের ভাবি তাহলে অনেক স্পেশাল। যাহ এখন থেকে শুধু আমাদের মিশন হলো ভাবিকে সাথে করে নিয়ে যাওয়া। কি বলিস রাফি??

রাফিঃ আবার জিজ্ঞেস করতে হয়। ভাবির সামনে দাড়ালেই ভাবি ওর প্রেমে পরে যাবে।

আবিরঃ নাহ রে দোস্ত। ও এমন না। ওর মন জয় করতে হবে।

শুভঃ তাহলে আর কি চল ক্লাসে গিয়ে মিশন ভাবির মন জয় শুরু করি। হা হা।

আবিরঃ তোদের কাছে সব মিশন লাগে না??

রাফিঃ হ্যাঁ দোস্ত। তবে এটা খুবই কষ্টের মিশন হবে বুঝছি। এখন চল ক্লাসে।

আবির ক্লাসে ঢুকতেই…..

চলবে… ?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে