মাতৃত্বের স্বাদ পর্ব – ২

0
3408

#মাতৃত্বের স্বাদ
#পর্ব-২
#লেখায় নামিরা নূর নিদ্রা

৪.

“স্যার আজ ম্যাডামকে দেখলাম এক ভদ্রলোকের সাথে একটা ফার্মহাউসে যেতে!”

কথাটা শুনেই তানভীর ফাইল চেক করা বাদ দিয়ে সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তির দিকে তাকালো। তারপর হিম শীতল কন্ঠে বললো,

“আরাফাত তুমি কীভাবে দেখলে নন্দিনীকে অন্য একজনের সাথে ফার্মহাউসে যেতে?”

আরাফাত কিছুটা ইতস্তত করে বললো,

“আসলে স্যার আমি ঐদিকে আমার হবু বউয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তখনই দেখেছি।”

“ওহ্ আচ্ছা”

“জি স্যার। আপনি কিছু মনে না করলে একটা কথা বলবো?”

“হ্যা বলো।”

“স্যার ম্যাডামকে আমি প্রায়ই অনেকের সাথে বিভিন্ন নাইট ক্লাব, বার, রেস্টুরেন্টে যেতে দেখি। আমি ছাড়াও আমাদের অফিসের আরো অনেকে এসব দেখেছে। এখন তো আপনার আড়ালে সবাই এসব নিয়ে কানাঘুষা ও করে। আপনি একটু ম্যাডামকে দেখে রাখবেন স্যার।”

সবকিছু শুনে তানভীর কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললো,

“আচ্ছা তুমি যাও এখন। অনেক কাজ পেন্ডিংয়ে আছে। সেগুলো দেখো গিয়ে।”

“ঠিক আছে স্যার।”

কথাটা বলেই আরাফাত বের হয়ে গেল। তানভীর ডেস্কের উপর থেকে পানি নিয়ে ঢকঢক করে এক নিশ্বাসে সবটুকু পানি খেয়ে নিজেকে শান্ত করলো। এরপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পুনরায় কাজে মনোনিবেশ করলো। ওর মধ্যে যেন এসব নিয়ে কোনো ভাবান্তর নেই। নিজের বউ কখন, কোথায়, কী করছে সেটা ভাবার বিন্দুমাত্র আগ্রহ তার মধ্যে নেই। যেন যা হচ্ছে তা হতে দেওয়ায় শ্রেয়।

৫.

ঝর্ণার নিচে বসে আছে অজান্তা। ঝর্ণার পানি চোখেমুখে পড়তেই দুই চোখ বন্ধ করে নিলো অজান্তা। তখনই টুপ করে দু’ফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়লো ওর চোখ থেকে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। আবেগ-অনুভূতিশূন্য হয়ে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে দেওয়ালের দিকে। বিগত এক ঘন্টা ধরে এভাবেই ঝর্ণার নিচে বসে আছে সে। অনু বাইরে থেকে ওয়াশরুমের দরজা ধাক্কাচ্ছে। সেদিকে কোনো খেয়াল নেই অজান্তার।

“এই আপু কী হয়েছে তোর? সেই কখন ঢুকেছিস ওয়াশরুমে। এখনো বের হওয়ার নাম নেই। এতক্ষণ কী করছিস তুই ভেতরে? ঝর্ণার পানির আওয়াজ পাচ্ছি আমি। তার মানে এখনো তুই গোসল করছিস। এসব তো ঠিক না। তোর তো শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে। এত ভেজা তোর জন্য এক প্রকার নিষিদ্ধ। তাড়াতাড়ি বের হ বলছি।”

তখনই ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হয়ে এলো অজান্তা। চোখমুখ লাল হয়ে আছে। চোখ এখনো কিছুটা ভিজে আছে। অনু অজান্তাকে এমন অবস্থায় দেখে কিছু প্রশ্ন করবে তার আগেই অজান্তা এলোমেলো পা ফেলে বিছানায় গিয়ে কম্বল টেনে শুয়ে পড়লো। অনু আর কিছু না বলে রান্নাঘরে চলে গেল পাস্তা আর কফি বানানোর জন্য। অজান্তার কিছু হয়েছে যা ওও এখন বলতো চাচ্ছে না। এটা বুঝে গেছে অনু। তাই আর বেশি কথা বাড়ালো না। পরে এক সময় সবকিছু জানা যাবে। এই ভেবেই চুলায় আগুন জ্বালিয়ে কফি আর পাস্তা তৈরি করতে লাগলো।

৬.

“রাজ আমরা কবে বিয়ে করবো?”

রিংকির কথায় রাজ চিৎকার করে বললো,

“চুপ করবি তুই? আজ তোর জন্য আমি আমার বউকে হারিয়েছি। আর তুই বিয়ে নিয়ে পড়ে আছিস?”

রাজের এমন ব্যবহারে রিংকি ফুঁসে ওঠে বলে,

“তোমার ঐ বউ গেল নাকি থাকলো তাতে আমার কিছুই যায় বা আসে না। আমি তোমার সন্তানের মা হতে চলেছি। তাই এখন তোমার আমাকে বিয়ে করতেই হবে।”

“করবো না তোকে বিয়ে। কী করবি তুই?”

(নিদ্রা)

“বেশি কিছু না। শুধু থানায় গিয়ে রেপ কেইস করবো। তুমি একটা বছর আমার সাথে রিলেশনে গিয়ে এখন বলছো বিয়ে করবে না। আমার সাথে সম্পর্ক করার সময় তোমার বউয়ের কথা মনে ছিল না? এখন যখন আমি তোমার সন্তানের মা হতে চলেছি তখন তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলতে পারো না বুঝেছো।”

রিংকির কথায় রাগে রাজের মাথা ফেটে যাচ্ছে। মনে চাচ্ছে এখনই এই ঝামেলাকে শেষ করে দিতে। কিন্তু এখন কিছু করলে নিজেই ফেঁসে যাবে সে। তাই যা করার সব ঠান্ডা মাথায় করতে হবে।

“আচ্ছা শোনো আমার আরো কিছুদিন সময় লাগবে। তিন মাসের আগে ডিভোর্স কার্যকর হবে না। তাই যা করার সব তিন মাস পরই করতে হবে আমাদের।”

“কিন্তু আমরা রেজিস্ট্রি তো করে রাখতেই পারি তাইন?”

“হ্যা হ্যা সব হবে। কিছুদিন আগে অপেক্ষা করো। এতদিন যখন অপেক্ষা করলে। তখন আর কিছুদিন সবুর করো প্লিজ।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু মনে রেখো রাজ, আমি অজান্তা নই। আমি রিংকি নিজের জায়গা কাউকে দেই না। আমাকে এবং আমার অনাগত সন্তানকে যোগ্য সম্মান না দিলে তোমার বেঁচে থাকা কষ্টকর করে দিবো আমি। তাই যা করার ভেবেচিন্তে করবে। কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও।”

রিংকির এমন গা জ্বালানো কথা শুনে রাজের কপালের রগগুলো ফুলে উঠেছে। রিংকি কথাগুলো বলেই পাশ থেকে ওর ব্যাগ নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেল। রাজ চুপ করে বসে আছে। মাত্র একটা ভুলের জন্য আজ সব শেষ হয়ে গেল। নিজের ভালোবাসার স্ত্রীকে হারাতে হলো। এমন একজন অনন্যময়ীকে ছেড়ে এখন একটা চরিত্রহীন মেয়েকে বিয়ে করতে হবে ভাবতেই গা শিউরে উঠলো রাজের। নিজের গালে নিজেরই চার/পাঁচটা থাপ্পড় দিতে ইচ্ছা করছে।

৭.

“নন্দিনী তোর শশুর বাড়ির লোকজন তোকে কিছু বলে না এমন করে চলাফেরা করার জন্য?”

জেসিকার কথা শুনে নন্দিনী হাত থেকে ড্রিংকের বোতল রেখে অট্ট হেসে বললো,

“আরে ধুর। রাখ তো এসব কথা। আমাকে কে কী বললো তাতে আমার কিচ্ছু যায় বা আসে না বুঝলি। আমার জীবন আমি যেভাবে ইচ্ছা পরিচালনা করবো। তাতে কেউ হস্তক্ষেপ করতে আসলে আমি মেনে নিবো নাকি হুহ। যদিও আমার শাশুড়ি মা আজকাল একটু বেশিই বকবক করে। কিন্তু আমি এসব কথা গায়ে মাখি না। বিয়ে করেছি বলে কী আমার সমস্ত স্বাধীনতা শেষ নাকি? এমনিতেও তানভীর আমাকে একদমই সময় দেয় না। সব সময় শুধু কাজ নিয়ে পড়ে থাকে।”

“তুই এই ছেলের সাথে এখনো আছিস কেন বল তো? একটা আনরোমান্টিক ছেলে।”

(নিদ্রা)

“ভালোবাসি তাই। আমি বেপরোয়া হলেও তানভীরকে খুব ভালোবাসি রে। তাই ওকে ছাড়তে পারবো না আমি।”

“তুই আর ভালোবাসা? এটাও কী সম্ভব?”

কথাটা বলেই সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। নন্দিনী সবার দিকে রাগী স্বরে বললো,

“চুপ কর সবাই। আমি কী কাউকে ভালোবাসতে পারি না? এমন করে হাসার কী আছে হ্যা? আমি সত্যি তানভীরকে ভালোবাসি।”

“হয়েছে হয়েছে আর কিছু বলতে হবে না। বাসায় যাবি কখন?”

“কয়টা বাজে রে?”

“রাত দুইটা বাজে।”

আশফাকের কথায় নন্দিনী চমকে উঠে বললো,

“কী বলিস? এত সময় কীভাবে চলে গেল। এই আমাকে এখনই বাড়িতে যেতে হবে।”

“চল আমি তোকে পৌঁছে দিয়ে আসি।”

“আচ্ছা চল।”

কথাটা বলেই নন্দিনী রাজিবের সাথে চলে গেল। বাকি সবাই একেকজন একেকভাবে পড়ে রইলো মাতাল হয়ে। এটা এই “ব্লু বার্ড” গ্যাং এর রোজকার নিয়ম। বড়োলোক বাবা-মায়ের উচ্ছনে যাওয়া ছেলে-মেয়েরা প্রায় সবাই এই গ্যাং এ থাকবেই। ঢাকা সিটির সমস্ত অপকর্মের ঘটনায় এই “ব্লু বার্ড” এর কোনো না কোনো সদস্যের থাকতেই হবে। এ যেন এক অঘোষিত নিয়ম এখানকার সদস্যদের!”

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে