মন ফড়িং ২৮.

0
3827
মন ফড়িং ২৮.
নিদ্র স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে। এমন কোনো কথা বলা যাবেনা যার জন্য আরো বেশি কথা শুনতে হয় তাকে বা অদ্রিকে। দাদী সম্ভবত তার সাথে অদ্রির মেলামেশাটা পছন্দ করছেননা। কিন্তু কারণ শুধু ও বিধবা? মোটেও না। শুধু বিধবা জানলে অদ্রির প্রতি আলাদা একটা স্নেহ বা ভালোবাসা থাকতো। অদ্রি কি দাদীর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে?
এটা কোনো ভাবেই সম্ভব না।
অদ্রির সাথে দাদীর একবার কথা হয়েছে তাও দাদীই বেশি কথা বলেছে। অদ্রি শুধু হ্যাঁ, না উত্তর দিয়েছে।
আরেকটা ব্যাপার হতে পারে এই বাড়ির কেউ একজন অদ্রির নামে নেগেটিভ কিছু বলেছে। প্রতিবেশিরা এই বাড়িতে আসেইনা। রশীদ চাচা কিছু বলেছেন? বললেও নেগেটিভ কিছু বলবেনা?
নাস্তা শেষ করার পরে দুটো কাজ করতে হবে।
 ১. অদ্রি এখন বিধবা না।
২. দাদীকে নিয়ন্ত্রণ করা।
আসমা জামানকে নিদ্র নরম সুরে বললো
– দাদী এমন ব্যবহার করার কারণ টা জানা যাবে?
– অবশ্যই যাবে।
– তাহলে জানাও প্লিজ।
– ওই মেয়ের স্বামী সুইসাইড করেছে। কারণ স্ত্রীর পরকীয়া সহ্য করতে না পেরে।
নিদ্রের মাথা গরম হয়ে গেলো কথাটা শুনে কিন্তু প্রকাশ না করে বললো
– কে বলেছে তোমাকে?
– লিলি।
নিদ্রের চমকে গেলো! কীভাবে সম্ভব? এতো বড় একটা মিথ্যা এমন একজনের সম্পর্কে বলা যে নাকি নর্দমা থেকে উঠিয়ে এনে স্বাভাবিক জীবন দিয়েছে?
রশীদ সাহেব রেগে গিয়ে বললেন
– লিলি কই? ওর সাথে আজকে বোঝাপড়া হবে।
লিলি রান্নাঘর থেকে সব শুনছিলো। নিজ থেকেই বসার ঘরে এসে হাজির হলো।
সে দৃঢ়ভাবে বললো
– আমাকে ডেকেছেন?
রশীদ সাহেব চেচিয়ে বললো
– এই মেয়ে অদ্রির নামে কী বলেছিস খালাম্মার কাছে?
– আমি শুধু বলেছি আপা বিধবা।
আসমা জামান অবাক হলেন। এই মেয়ে তো তাকে শুধু এই কথাটা বলেনি আরও অনেক কিছুই বলেছে। এখন অস্বীকার করছে কেনো?
নিদ্র জিজ্ঞেস করলো
– আর কিছু বলো নাই?
লিলি কাঁদো কাঁদো গলায় বললো
– না ভাইজান আমি সত্যি বলতেছি। আর কিছুই বলি নাই।
রশীদ সাহেব আসমা জামানকে বললেন
– খালাম্মা ও কি ঠিক বলতেছে?
আসমা জামান শুধু মাথা নাড়িয়ে না বুঝালেন।
রশীদ সাহেব তার মোবাইল ঘেটে কুদ্দুস নামের কন্ট্যাক্ট নাম্বারে কল দিলেন।
প্রথম বারেই কল রিসিভ হলো। কুদ্দুস সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন
– ভালো আছেন ভাই?
সালামের উত্তর দিয়ে রশীদ সাহেব বললেন
– শোন আজকে দুপুরে এসে তোর মেয়েকে নিয়ে যাবি।
কুদ্দুস ভরকে গিয়ে বললেন
– কিছু করছে ভাইজান?
– কিছু করছে মানে? যে নুন খাইছে তারেই কোপ মারছে।
– মাফ কইরা দেন ওরে এবারের মতো।
– আজকেই আইসা ওরে নিয়ে যাবি। তা নাহলে আমিই ওরে দিয়া আসবো।
– আচ্ছা ভাইজান আমিই ওরে নিয়া যাবো।
লিলি ওর রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো। রশীদ সাহেব জোরে জোরে বললেন
– ব্যাগপত্র গুছায় ফেলা।
রীতা দুদিন আগেই রশীদ সাহেবকে লিলির ব্যাপারে বলেছিলেন। মেয়েটা খুব বেয়াদবি করে আজকাল। প্রথমে তিনি বিশ্বাস করেননি কিন্তু আজকের ঘটনা তাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছে।
এই দুনিয়ায় অকৃতজ্ঞ মানুষের অভাব নাই।
নিদ্র ভাবলেশহীন কণ্ঠে দাদীকে উদ্দেশ্য করে বললো
– আমি বিয়ে করেছি দাদী গতকাল। মেয়েটা কে জানো? অদ্রি। ও কিন্তু বিধবা না আর পর পুরুষের সাথেও হাসাহাসি করছিলোনা। নিজের বরের সাথেই হাসাহাসি করছিলো। গতকাল রশীদ চাচা, বাবা, আমি আর অদ্রি কাজী অফিসে গিয়েছিলাম। বুঝতেই পারছো।
আসমা জামানের মাথা ঘুরাচ্ছে। একের পর এক ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। কী বলবে বুঝতে পারছেন না।
নাজমুল সাহেব মুচকি হেসে বললেন
– আম্মা মনে হয় নিতে পারছেনা। নিদ্র তুমি বউমার কাছে যাও।
নিদ্র চলে গেলো।
আসমা জামান ছেলেকে হাসতে দেখে অবাক হলেন। নিজের ছেলেকে কেউ এরকম কাজে কেউ সায় দেয়?
রীতাও অবাক হলেন। অদ্রি এই ছেলেকে বিয়ে করলো শেষ মেষ? তাও ভালো বিয়ে করেছে। ছেলেটা মনে হয়না খারাপ।
অদ্রি বেশ ঝামেলায় পড়লো। নিদ্র তার ব্যাগপত্র নিয়ে অদ্রির রুমে উঠে এসেছে। নিদ্রের কথা
– যেহেতু সবাই জেনেই ফেলেছে আমরা বিয়ে করেছি সেহেতু একসাথে থাকতে সমস্যা কই?
– সমস্যা নাই কিন্তু মানুষ কী বলবে?
– বউ এর সাথে স্বামীই তো থাকবে। এতে এতো ভাবার কী আছে?
এরপর আর কী বলা যায়? ব্যাপারটা এমন না যে সে পুরুষ মানুষের সাথে এক রুমে থাকেনি। বিয়ে যেহেতু হয়েছিলো সেহেতু এক রুমে থাকাটা স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু এই মানুষটার সাথে এক রুমে থাকাটা কেমন সংকোচ হচ্ছে। রুমের মধ্যে সবসময় ঘোমটা দিয়ে থাকতে কষ্ট হয়।
নিদ্র বিরক্ত হয়ে বললো
– বুঝেছি আপনি আমাকে সহ্য করতে পারছেননা।
– না।
– লজ্জার কিছু নাই। আমার সামনেই তো থাকবেন। আর এমন না যে আপনি আমার সামনে কখনো আসেননি। গতকালও আপনাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়েছি।
– সেটা না। সবসময় ঘোমটা মাথায় রাখতে কষ্ট হয়।
নিদ্র হাসতে হাসতে বললো
– আমার সামনে আপনি ওড়না ছাড়াও ঘুরতে পারেন। আমার সামনে ওড়না ছাড়া আর ওড়না সহ একই ব্যাপার। বুঝেছেন?
– হুম।
দুপুরের দিকে কুদ্দুস এসে লিলিকে নিয়ে গেলেন। লিলি যাওয়ার সময় কিছুই বললো না। চোখ দুটো ফুলে লাল হয়ে আছে। হয়তোবা কেঁদেছিলো।
রাতের খাবার খাওয়া শেষ হওয়ার পরে নিদ্র বিছানায় শুয়ে অদ্রির জন্য অপেক্ষা করছে।
অদ্রি রান্নাঘরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। রীতা হেসে বললেন
– রুমে যাও।
– আমার কেমন যেন ভয় লাগছে। বিয়ে করাটা ঠিক হলো কি হলোনা বুঝতে পারছিনা।
– আল্লাহ তোমার ভাগ্যে এটাই লিখে রেখেছেন। এজন্যই বিয়েটা হয়েছে। আল্লাহ যা করেন সবার ভালোর জন্যই করেন।
– নিদ্রের দাদী তো মেনে নিতে পারছেননা।
– মেনে নিবে সমস্যা নেই। তুমি এখন ঘরে যাও। অতীত কে ভুলে যাও। মনে করবে অতীত তোমার শিক্ষক ছিলো। যে তোমাকে শিখিয়েছে কীভাবে ভুল গুলো শুধরে নিতে হয়।
বুঝেছো?
অদ্রি ঘাড় নাড়লো। অতীত টা এখনো তার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মনে পড়তেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে।
চলবে……!
© Maria Kabir
প্রিয় পাঠক আপনারা যদি আমাদের (গল্প পোকা ডট কম ) ওয়েব সাইটের অ্যাপ্লিকেশনটি এখনো ডাউনলোড না করে থাকেন তাহলে নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করে এখনি গল্প পোকা মোবাইল অ্যাপসটি ডাউনলোড করুন
??????

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে