মনোহরা পর্ব-০৮

0
1272

#মনোহরা
#পর্বঃ ৮
#লেখিকাঃনির্মলা

রুসাঃ আমি সব সময়ই ঠিক বলি
কথাটা বলেই রুসার হঠাৎ শানের হাতের দিকে খেয়াল গেলো।রুসা কফিটা নিচে রেখে শানের হাত টেনে বলল
রুসাঃ একি শান হাত কাঁটলো কি করে তোর।
শান রুসার কাছ থেকে তার হাতটা সরিয়ে বলল
শানঃ আরে কিছু না সামান্য কেঁটে গেছে
রুসা অস্থির হয়ে বলল
রুসাঃ এটাকে তুই সামান্য বলছিস চল তোর রুমে আমি মেডিসিন লাগিয়ে দেই
শানঃ আরে তুই ও না বলছিতো কিছু হয় নি
রুসাঃ তোর কোন কথা শুনবো না তুই যাবি নাকি টেনে নিয়ে যাবো
শানঃ ঠিকাছে চল

ওদিকে………….

ইশা মেঝেতে বসে বিছানায় মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। ইশার মা কয়েকবার ইশার রুমে দরজার কাছে এসে নক করে গেছে কিন্তু ইশা খুলে নি। ইশার মার বিষয়টা একটু কেমন কেমন লাগলো।কারন ইশা পরশু দিন ও বাড়িতে গেলো আজ আবার চলে এসেছে সে কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলো ভাবলো তার বোনকে ফোন করে জিজ্ঞেস করবে কিন্তু ফোনটাও সে খুজে পেলে না। এদিকে জিসান ও বাড়িতে নাই কখন ফিরবে তাও জানে না ইশার মা চিন্তায় তার মাথা ব্যাথা করছে। এভাবে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো।হঠাৎ করে কলিং বেল বেজে উঠলো
ইশার মা সোফায় বসে ছিলেন কলিং বেলের শব্দ শুনে দৌড়ে গেলেন। দরজা খুলতেই দেখলেন জিসান এসেছে।ইশার মা তার ছেলে দেখে বলে উঠলেন
ইশার মাঃ জিসান বাবা তুই এসেছিস (অস্থির হয়ে)
জিসান তার মায়ের এরকম অস্থিরতা দেখে বলে উঠলো
জিসানঃ কি হয়েছে মা
ইশার মাঃ কি হয়েছে তোর বোন সেই কখন থেকে দরজা লাগিয়ে আছে এত ডাকলাম খুললো না।
জিসান বাড়ির ভিতরে ডুকতে ডুকতে বলল
জিসানঃ মানে!!!! ইশা বাড়ি এসেছে,??
ইশার মাঃ হ্যাঁ তোর আঙ্কেল এসে দিয়ে গেছে আজ সকালে আমার মনে হয় কিছু একটা হয়েছে না হলে মেয়েটা এভাবে দরজা আটকে থাকবে
জিসান তার মায়ের মুখ থেকে এমন কথা শুনে বলল
জিসানঃ দাড়াও আমি দেখছি
এই বলে ইশার রুমের দিকে গেলো

ইশা হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো।সে চোখ ঢলতে ঢলতে পাশ থেকে তার মায়ের ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো ৭ টা বাজে সে ধপ করে উঠে দাড়ালো তারপর হাত মুখ ধুতে washroom এ গেলো। এদিকে জিসান তার মা ইশার দরজার কাছে এসে নক করতে লাগলো।আর জিসান ইশার নাম ধরে ডাকতে লাগলো।ইশান washroom থেকে বেড়িয়ে তাওয়াল দিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে বেড়িয়ে এসে দেখলো।তার ভাই ডাকাডাকি করছে। ইশা তাওয়ালটা কোন রকম বিছানার উপর রেখে দ্রুত পায়ে দরজার কাছে গিয়ে দরজাটা খুলে দিতেই তার মা আর ভাই ভিতরে ঢুকে বলল
জিসানঃ কিরে এভাবে দরজা বন্ধ করে রেখেছিন কেনো
ইশার মাঃ কি হয়েছে মা( ইশার গালে হাত দিয়ে)
ইশাঃ কি হয়েছে তোমরা এরকম করছো কেনো মা ভাইয়া
জিসানঃ কি হয়েছে!!! মা তোকে কখন থেকে ডেকে যাচ্ছে তোর দরজা নক ও করেছে। তুই দরজা খুলিস নি কেনো।
ইশা তার ভাইয়ের মুখ থেকে এমন কথা শুনে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো
ইশাঃ আমি তো ঘুমাচ্ছিলাম মা
জিসান ভাই আর মা আমার দিকে একটু অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে তারপর মা বলে উঠলো।
ইশার মাঃ দুপুর থেকে কিছুই খাস নি চলে আয় আমি খাবার বাড়ছি
ইশাঃ না মা আমি
ইশার মাঃ আর একটাও কথা শুনতে চাই না চলে এসো
জিসানঃ মা যা বলছে তাই কর
আমার মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলল

তারপর মা আর জিসান ভাই চলে গেলেন আমিও তাদের পিছনে পিছনে গেলাম।

খাবার টেবলি বসে বসে খাচ্ছিলাম আর ও বাড়ির কথা ভাবছিলাম। শান ভাইয়া কি কিছু খেয়েছে নাকি।মা আমাকে খাবার বেড়ে দিচ্ছিলো। আর ভাইয়া সোফায় বসে বসে গেইম খেলছিলো।আমি খেতে খেতে ভাইয়াকে বললাম
ইশাঃ ভাইয়া!!! ”
ভাইয়া একবার আমার দিকে তাকিয়ে গেইম এ মনযোগ দিতে দিতে বলল
জিসানঃ বল
ইশাঃ তুই খেয়েছিস,,,
জিসানঃ হুম,
ইশাঃ শোন না বলছিলাম ও বাড়িতে একটা কল কর না
জিসান ভাইয়া আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল
জিসানঃ কেনো
আমি ওর এমন ভাবে তাকানো দেখে একটা ঢোক গিলে বলল
ইশাঃ না মানে এমনি
এই বলে আমি খাবারের দিকে মনোযোগ দিলাম।হঠাৎ করে জিসান ভাই বলে উঠলো
জিসানঃ ইশা!!!!
ভাইয়ার এভাবে ডাক শুনে আমার বুকটা ধক করে উঠলো। আমি ভাইয়ার দিকে অপ্রস্তুত ভাবে তাকিয়ে বললাম
ইশাঃ কি
জিসানঃ ও বাড়িতে কিছু হয়েছে

আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম ভাইয়া কি কিছু জেনে গেছি। তারপর আবার ভাবলাম না না কে জানাব৷
জিসানঃ কি হলো বল
আমি আমতাআমতা করে বললাম
ইশাঃ না কি হবে, আমি তো এমনি বললাম
জিসানঃ হুম, তবে একটা কথা তুই পরশুদিন গেলি আবার আজই চলে এলি

ইশার মা পাশ থেকে বলে উঠলো
ইশার মাঃ হ্যাঁরে ইশা তোর আঙ্কেল কেও জিজ্ঞেস করলাম উনিও তো কিছু বললেন না কিছু কি হয়েছে
ইশাঃ না না কিছু হয় নি
এই বলে ইশা খাবার ছেড়ে উঠে গেলো
ইশার মা সেটা দেখে বলল
ইশার মাঃ কি হলো উঠলি যে
ইশাঃ আমার খাওয়া হয়ে গেছে আমি রুমে গেলাম
এই বলে ইশা চলে গেলো।এদিকে ইশার এরকম কথা ঘুরিয়ে চলে যাওয়া দেখে জিসান কিছুটা চিন্তাতো হয়ে পড়লো সাথে ইশার মা ও।

এদিকে

শানের বাবার সামনে শান, অহনা, রুসা, শানের মা দাড়িয়ে আছে। একটু আগেই শানের বাবা ফিরেছে। শান দৌড়ে তার বাবার কাছে গিয়ে হাতটা ধরে বলল
শানঃ বাবা sorry আর কখনও এমন কিছু হবে না।
শানের বাবাঃ সেটা আমি বিশ্বাস করবো কি করে শান( গম্ভীর কন্ঠে)
শানঃ বাবা তুমি বিশ্বাস করো ইশার সাথে থাকলে আমার সমস্ত রাগ কমে যাবে
শানের বাবা বলে উঠলো
শানের বাবাঃ মানে!!!

তখনই শানের মা বলে উঠলো
শানের মাঃ মানেটা আমি বলছি শান আমাকে সবটা বলেছে
শানের বাবাঃ কি
শানের মামাঃ শান চায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইশাকে এ বাড়িতে একে বারে নিয়ে আসতে এতে আমরা সবাই রাজি।এখন শুধু তুমি রাজি থাকলেই হবে।
শানের বাবা রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠলো
শানের বাবাঃ সেটা সম্ভব না
শান তার বাবার মুখ থেকে এমন কথা শুনেবলে উঠলো
শানঃ কেনো বাবা
শানের বাবাঃ কারন কাল যা হলো তারপর আমার এখন মনে হচ্ছে না যে ইশা মাকে এ বাড়িতে আনা যায়
বাবার মুখ থেকে এমন কথা শুনে শানের মুখ ছোট হয়ে গেলো। তারপর সে সেখান থেকে বাহিরে চলে গেলো।

________________——–_________-__-_——_
সকালে………………
ইশা ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলের কাছে যেতেই তার মা রান্না ঘর থেকে এসে তার হাতে ফোন ধরিয়ে দিলো। ইশা ফোন ধরতেই অপরপাশ থেকে বলে উঠলো
অহনাঃ congratulation
ইশা কিছুটা অবাক হয়ে বলল
ইশাঃ মানে!!!!
অহনা খুশি হয়ে বলল
অহনাঃ মানে অবশেষে তোমাদের বিয়েটা হচ্ছে,
ইশা তুতলিয়ে বলল
ইশাঃ কা……… কা……. কার বিয়ে
অহনাঃ তোমার আর ভাইয়ার
ইশা পুরো থমকে গেলো। কারন সে এমন কিছুর জন্য মোটেও প্রস্তু ছিলো না।সে ভাবতে লাগলে কাল তো আঙ্কেল বললো বিয়েটা হবে না যতদিন শান ভাইয়ার রাগ কো
কমবে তাহলে আজ হঠাৎ করে বিয়ে কথা। সব যেনো ওর মাথার উপর দিয়ে গেলো।ইশা ফোনটা রেখে ঘুরতেই দেখলো তার মা দাড়িয়ে আছে। তার মা তাকে দেখে বলে উঠলো
ইশার মাঃ তোমার বাবা এখনও এ বিষয়ে জানে না। তবে আমার মনে হয় না উনি আপত্তি করবেন।এখন তুমি রাজি থাকলেই হবে।
ইশাঃ কিন্তু মা সামনে তো আমার পরিক্ষা এখন বিয়ে
ইশার মাঃ সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না পরিক্ষা সময় এখানে এসে পরিক্ষা দিবে সমস্যা কোথায়
ইশাঃ কিন্তু এতে মা আমার পড়াশুনার ক্ষতি হবে

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে