#মনোহরা
#পর্বঃ৫
#লেখিকাঃনির্মলা
তবুও নিজেকে সামলে আমি দরজায় নক করলাম। কিন্তু ভিতর থেকে কোন সারা শব্দ পেলাম না।কোন সারা শব্দ না পেয়ে আমি ভাবলাম কি এমন কাজ করছে ওই মেয়েটার সাথে যে দরজায় নক করলাম কিন্তু কোন সারা শব্দ করলো না।ভাবলাম আর এক বার কি নক করবো। করেই দেখি যেই ভাবা সেই কাজ আমি নক করার জন্য হাত বাড়ালাম ঠিক তখনি শান ভাইয়া দরজা খুললো। আচৎমকা উনি দরজা খোলাতে আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম ট্রেটা আমার হাত খেকে পড়ে যেতে নিলেই উনি সেটা সাথে সাথে ধরে ফেলেন আর বললেন
শানঃ কি করছিস এখুনি তো পড়ে যেতো (কিছুট রেগে গিয়ে)
আমি উনার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর চোখ সরিয়ে নিয়ে মনে মনে বলতে লাগলাম। এত সময় তো খুব হেসে হেসে কথা বলা হচ্ছিলো রুসার সাথে ।আর এখন দেখে কেমন রেগে কথা বলছে আমার সাথে
শানঃ কি হলো কথা বলছিস না কেনো
উনার ধমকে আমার হুস ফিরলো আমি অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম
ইশাঃ আপনি হঠাৎ করে দরজা খোলাতে আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম তাই আর কি।
শানঃ হুম
উনি ট্রেটার থেকে হাত সরাতেই।আমি আবার ট্রেটা উনার দিকে বারিয়ে দিয়ে বললাম
ইশাঃ ভাইয়া আপনার কফি
উনি উনার হাত দুটো প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে বললেন
শানঃ ভেতরে আয়
আমি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলাম
ইশাঃ না!
উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললেন
শানঃ কেনো
আমি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বললাম
ইশাঃ এমনি
উনি সেটা দেখে গড় গড় করে ভেতরে ঢুকে গেলেন আর যেতে যেতে বললেন
শানঃ ভিতরে আয়
আমি উনার মুখ থেকে এমন কথা শুনে উনার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম এমন মানুষ আমি জীবনেও দেখি না যেমন রাগ তেমন জেদি হে আল্লাহ বেছে বেছে এমন একটা লোকের সাথে বিয়ে দেবার কি খুব দরকার ছিলো।
শানঃ কি হলো
উনার ডাকে আমার ভাবনায় ছেঁদ পড়লো। আমি একটা দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে ভিতরে ঢুকলাম।ভেতরে ডুকতেই দেখতে পেলাম।রুসা উনার বিছানা এক সাইডে বসে ফোন টিপছে । আর উনি গিয়ে সোফায় বসলেন।রুসা আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেখে ফোনটা সাইডে রেখে বলল
রুসাঃ hi
ইশাঃ হুম hi
আমি কফির ট্রেটা উনার রুমের সোফার সামনে টি টেবিল আছে সেখানে রেখে চলে আসতে নিলেই উনি বলে উঠলেন
শানঃ কোথায় যাচ্ছিস
আমি উনার দিকে ফিরে উওর দিলাম
ইশাঃ বড় আন্টির কাছে
শানঃ বস এখানে
ইশাঃনা এখানে আমি থাকলে তোমাদের কথা বলতে সমস্যা হবে ভাইয়া
আমাদের কথার মাঝখানে রুসা বলে উঠলো
রুসাঃ hey, তোমার নামটা যেনো কি
আমি উনার দিকে তাকিয়ে জবাব দিলাম
ইশাঃ ইশা
রুসাঃ ও
আমি এটা বলে চলে গেলাম।আমার কেনো জানি না মেয়েটাকে উনার ঘরে দেখে মোটেও ভালো লাগে নি।তাই সোজা অহনা আপুর রুমে চলে গেলাম।গিয়ে দেখি অহনা আপু কার সাথে ফোনে কথা বলছে আর হাসছে। সেটা দেখে আমি বলে উঠলাম
ইশাঃ আপু
অহনা আপু পেছনে ফিরে আমাকে দেখে ভূত দেখার মতন চমকে গেলো। সাথে সাথে ফোনটা কান থেকে নামিয়ে নিলো। সেটা দেখে আমি বলে উঠলাম
ইশাঃ কি হয়েছে আপু তুমি চমকে উঠলে কেনো
অহনাঃ ক…..ক…… কই কিছু না তো ভাবি, তুমি কখন এলে( কিছুটা তুতলিয়ে বলল)
আমি ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললাম
ইশাঃ কার সাথে কথা বলছিলে
অহনাঃ কা…..কার সাথে আবার আমার একটা বান্ধবীর সাথে
আমি বিছানার উপর বসতে বসতে বললাম
ইশাঃ ও, তোমার ফোনটা একটু দেবে
অহনাঃ হুম
এই বলে অহনা আপু তার ফোনটা আমার হাতে দিলো আর বলল
অহনাঃ কাকে ফোন করবে খালাকে
আমি ফোনটা নিয়ে বললাম
ইশাঃ না ভাইয়াকে
সাথে সাথে অহনা আপু আমার হাত থেকে ফোনটা কেঁড়ে নিলো।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।আপু কিছুটা অপ্রস্তু হয়ে বলল
অহনাঃ আমার কাছে তো জিসান ভাই এর নাম্বার নেই
ইশাঃ সমস্যা নেই ভাইয়ার নাম্বার আমার মুখস্থ দেও।
অহনাঃ ও হো আমার ফোনে টাকা নেই ভাবি। আমার তো মনেই ছিলো না
ইশাঃও
আমি খেয়াল করলাম অহনা আপু ঘেমে যাচ্ছে। আর কেমন জানি আপুকে খুব চিন্তিতো লাগছে। তবুও সেটাকে পাত্তা না দিয়ে আমি অহনা আপুকে বললাম
ইশাঃ নিচে চলো কাট্টুন দেখি
অহনাঃ চলো নিচে গিয়ে ভাইয়া অথবা মায়ের ফোন দিয়ে কল করো
ইশাঃ হুম চলো
অবশেষে আমরা দুইজন নিচে যাবার জন্য পা বাড়ালাম। নিচে যেতেই দেখলাম উনি আর রুসা দুজনে সোফায় বসে আছে আন্টিও পাশে বসে গল্প করছে।আমি আন্টির কাছে গিয়ে বললাম
ইশাঃ আন্টি তোমার ফোন কোথায় একটু দেও ভাইযার সাথে কথা বলবো
বড় আন্টিঃ আমার ঘরে ইশা মা
ইশাঃ ও তাহলে পরে কথা বলবো
তখনই পাশ থেকে রুসা বলে উঠলো
রুসাঃ কেনো তোমার ফোন নেই
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই অহনা আপু বলে উঠলো
অহনাঃ না নেই রুসা আপু
রুসাঃ এদেশের মেয়েরা তো এরকমই হয়
অহনাঃ তা আপনি কি বিদেশে জন্মেছেন (কিছুটা টিটকারি মেরে বলল)
রুসাঃনা!!! তবে বিদেশে পড়াশুনা করেছি
অহনাঃ আ……
বড় আন্টিঃ আহ্ তুই চুপ কর অহনা।রুসা মা আমাদের ইশা মা ফোন ব্যাবহার করতে পছন্দ করে না তাই
রুসাঃ ok
হঠাৎ করে শান ভাইয়া বলে উঠলো
শানঃ ইশা আমার ফোনটা নেও
ইশাঃ তার কোন দরকার নেই আমি পরে কথা বলে নিবো।
শানঃ মানে!!!!
ইশাঃ কিছু না, বড় আন্টি আমি একটু রুমে যাচ্ছি
বড় আন্টিঃ কেনো ইশা মা এখানে বসো
ইশাঃ না, আমার ভালো লাগছে না।আমি রুমে গেলাম।
যাওয়ার আগে আমি একবার উনার দিকে তাকালাম দেখলাম উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।আমি সেটাকে পাত্তা না দিয়ে রুমে দিকে পা বাড়ালাম।অহনা আপুও আমার পিছন পিছন চলে এলো।
আমি রুমে ঢুকতেই অহনা আপু বলে উঠলো
অহনাঃ মেয়েটা না কেমন জানো বিদেশে পড়ে একদম মাথা কিনে নিয়েছে
ইশাঃথাক না আপু বাদ দেও, চলো গল্প করি
অহনাঃ হুম চলো
কিছু সময় গল্প করলাম আমরা দুজন । অহনা আপু সাথে আমার ছোট বেলায় থেকে অনেক ভাব। কাজিনদের মধ্যে সব থেকে বেশি অহনা আপু আমি বেশি পছন্দ করে।
রাতে…..
রাতের খাবার খেয়ে আমি রুমের দিকে যাচ্ছিলাম।অহনা আপু আমার আগে রুমে গেছে। আমার একটু দেড়ি হলো যেতে কারন বড় আন্টি সাথে একটু সাহায্য করছিলাম।তারপর রুমের দিকে যেতে নিলেই কেউ আমার মুখ চেপে নিয়ে যেতে লাগলো। এটা এত দ্রুত হলো যে আমি চিল্লানোর সময় পেলাম না। আমাকে একটা রুমের ভিতর নিয়ে যাওয়া হলো। রুমটা ঘুটঘুটে অন্ধকারে। বুঝতে পারছিলাম না এটা কে করছে। আমাকে রুমের ভিতর নিয়ে ছেড়ে দিলো আমি হাঁপাতে লাগলাম।আমার মনে হলো আর একটু সময় যদি আমার মুখ চেপে ধরে রাখতো তাহলে আমি বোধহয় মরে যেতাম।আমি হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম
ইশাঃকে!!!!!
ঠিক তখনই রুমের লাইট জ্বলে উঠলো। আমি সামনে তাকিয়ে দাড়িয়ে থাকা ব্যাক্তি টাকে দেখে আমি বলে উঠলাম
ইশাঃ শান ভাইয়া আপনি
শান ভাইয়া কোন কথা না বলে আমার দিকে শুধু রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। সেটা দেখে আমি কিছুটা ভয় পেলেও নিজেকে সামলে বললাম
ইশাঃ আপনি আমাকে এভাবে এ ঘরে নিয়ে এসেছেন কেনো,
শানঃ তুমি আমার ফোনটা নেও নি কেনো
ইশাঃ এমনি
শান ভাইয়া কোন কথা না বলে আমার দিকে এগোতে লাগলো।আর আমি সেটা দেখে পিছতে লাগলাম।পিছতে পিছতে দেয়ালের সাথে আমার পিঠ ঠেকে গেলো।দেখতে দেখতে উনি আমার আমার কাছে চলে এলো। আমি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে করে নিলাম।উনার গরম নিশ্বাস আমার মুখে পড়তে লাগলো।ভয়ে আমার গাঁ হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো। উনি রাগি কন্ঠে বলে উঠলেন
শানঃ তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে না বলার (জোরে বলে উঠলো)
উনার এমন জোরে চিৎকার শুনে আমি কেঁপে উঠলাম। সেটা দেখে উনি আবার ও বলে উঠলে
শানঃ যখন আমাকে এতটাই ভয় পাও তাহলে এমন কাজ কেনো কেরো যাতে আমি রেগে যাই।আর তুমি ফোন কেনো ব্যবহার করো না সেটা আমি ভালো করে জানি।
আমি এমন কথা শুনে উনার দিকে তাকালাম। উনার চোখের দিকে তাকাতেই।আমি আরও ভয় পেয়ে গেলাম তবু বললাম
ইশাঃ ক…..কি…… জা…..জানেন (তুতলিয়ে)
উনি আমার দুই বাহু চেপে ধরে বললেন
শানঃ নেকা সাজা হচ্ছে তাই না। কিছু জানো না তাই না।
ইশাঃ আপনি কি বলছেন আমি বুঝতে পারছি না
উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে দুই কদম পিছিয়ে গিয়ে বললেন
শানঃ তুই কি চাস বলতো ইশা,!!!
চলবে……..