মনোহরা পর্ব-০৪

0
1190

#মনোহরা
#পর্বঃ৪
#লেখিকাঃনির্মলা

হঠাৎ করেই আমি দরজা আটকানোর শব্দ পেলাম।পেছন ফিরে দরজার দিকে তাকাতেই দেখলাম যা তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। কারন আমার সামনে শান ভাইয়া দাড়িয়ে আছে তাও রক্তিম বর্ণ চোখে। সেটা দেখে সাথে সাথে আমার হাতে থাকা তাওয়ালটা নিচে পড়ে গেলো।আমি সাথে সাথে তাওয়ালটা উঠিয়ে উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি এখন আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তা দেখে বললাম
ইশাঃ ভাইয়া আ…… আ… আপনি এখানে (তুতলিয়ে)
শান ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল
শানঃ হ্যাঁ আমি এখানে কেই তুই কি অন্য কাউকে আশা করেছিলি( দাঁতে দাঁত চেপে বলল আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে )
আমি উনার কথার আগা মাথা বুঝলাম।তবে এটা বুঝলাম উনি রেগে আছেন। উনার এই রাগটাকেই আমি ছোট বেলা থেকে ভয় পাই।কিছু হলেই উনি রেগে যায়।কিন্তু আজ কেনো রেগে আছেন আমি কি কিছু করছি। আমি বলে উঠলাম

ইশাঃ মানে!!! কি বলছেন এসব শান ভাইয়া
শানঃ কিছু জানো না তাই না অবুঝ তুমি
শান ভাইয়া আমার একদম কাছে আসতেই।আমি আমার পা পিছিয়ে নিতে গেলেই।নিচে আমার ভেজা চুলের পানি পড়ে ছিলো সেখানে পা পড়তেই আমি পড়ে যেতে নিলাম।সাথে সাথে আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম।কিন্তু হঠাৎ করে দুটো হাত এসে আমাকে ধরে ফেললো।আমি বুঝতে পারলাম এটা শান ভাইয়া।কিন্তু এখন আমি চোখ খোলার সাহস পাচ্ছি। কারন আমি জানি চোখ খুলেই উনার সেই রাগে ভর্তি চোখ দুটো দেখতে পাবো তাই বন্ধ করে ছিলাম। এভাবে কিছু সময় কাঁটানোর পর ।

আমি ভাবনায় পড়ে গেলাম আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম কি হলো উনি কিছু বলছে না কেনো। একবার চোখ খুলে দেখবো। না না ইশা এই ভুল করিস না চোখ খুলতেই যদি বকাবকি শুরু করে দেয় তাহলে না থাক। হঠাৎ শান ভাইয়া নরম কন্ঠে বলে উঠলেন
শানঃ ইশা***
উনার কন্ঠে এভাবে আমার নাম শুনে। আমার উপর দিয়ে যেনো ঠান্ডা একটা বাতাস বয়ে গেলো। কারন উনি এভাবে কখনও আমার নাম ধরে ডাকেনি। আমি সাথে সাথে চোখে খুলে উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম।উনি আমার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমাকে তাকাতে দেখে উনি আবারও বলে উঠলেন
শানঃ ঠিক আছো তুমি( নরম সুরে)
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম
উনি সেটা দেখে আমাকে আস্তে করে উঠিয়ে দিলেন।কিন্তু আমাকে ছাড়লেন না। সেটা দেখে আমি বলে উঠলাম
ইশাঃ ভাইয়া আমি ঠিক আছি ছাড়ুন
শানঃ যদি না ছাড়ি
কথা শোনা মাএ আমি উনার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম
সেটা দেখে উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন। আমি উনার কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে বলে উঠলাম
ইশাঃ আসলে ভাইয়া নিচে যেতে হবে আপনি কি কিছু বলবেন( নিচের দিকে তাকিয়ে)
শানঃ না (অভিমানের সুরে)
ইশাঃ ঠিকাছে
এই বলে উনাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম

দরজা খুলে বাহিরে বেড় হতেই দেখলাম অহনা আপু। আপুকে দেখে বলে উঠলাম
ইশাঃ আপু তুমি
অহনাঃ তোমাকেই ডাকতে এসেছি চলো নিচে চলো মা খেতে ডাকছে,
ইশাঃ হুম চলো
এই বলে আমারা দুজন এক সাথে চলে যেতে নিলেই অহনা আপু অচমকা দাড়িয়ে মাথায় হাত দিয়ে বলল
অহনাঃ ওহো
ইশাঃ কি হলো
অহনাঃ মা ভাইয়াকে আর ওই মেয়েটা কি যেনো নাম
ইশাঃ রুসা!!
অহনাঃ আরে তোমার তো দেখি মেয়েটার নাম বেশ ভালো মনে আছে।যাই হোক ওকেও ডাকতে বলেছে তুমি যাও আমি ভাইয়া আর রুসা কে ডেকে আনছি।
শান ভাইয়াকে ডাকার কথা শুনে আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম।কারন উনি তো উনার রুমে নেই। তখনই অহনা আপু আবার বলে উঠল
অহনাঃ তুমি নিচে যাও আমি এখুনি আসছি
আমি শুধু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে নিচে যাবার জন্য পা বাড়ালাম।

ওদিকে……শান………..
মেয়েটা সেই আগের মতন আমাকে ভয় পায়। শুধুমাএ আমার এই রাগের কারনে।ও শুধু আমার রাগটাই দেখলো এই রাগের পিছনে লুকিয়ে থাকা কিছু অনুভূতি আছে সেই টুকু দেখলো না।আমাকে এতটা কষ্ট দিয়ে ও কি পায় কথা গুলো ভেবেই শান দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়লো।তারপর অহনার রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমের কাছে যেতে দেখলো অহনাকে।অহনা এত সময় ওর ভাইয়াকে রুমে খুঁজে না পেয়ে বাহিরে বেড় হতেই শানকে দেখতে পেয়ে বললাম
অহনাঃ ভাইয়া কোথায় গিয়েছিলে তুমি
শানঃ ছাঁদে
অহনাঃ এই রোদে
শানঃ খুব ইচ্ছে করছিলো তাই গিয়ে ঘুরে আসলাম
অহনাঃ আচ্ছা শোন না ভাইয়া মা খেতে ডাকছে।
শানঃহুম,তুই যা আসছি
অহনাঃ না রুসাকে ডাকতে হবে তো
শানঃ অহনা রুসা তোমার বড় ওকে আপু বলবে (কিছুট রেগে বলল)
অহনাঃ sorry ভাইয়া, আমি রুসা আপুকে ডেকে আনছি (মাথা নিচু করে)
শানঃ তার কোন দরকার নেই তুই যা আমি ওকে ডেকে আনছি
অহনাঃ ঠিকাছে (মুখ গোমরা করে)

এই বলে অহনা নিচে চলে গেলো।নিচে গিয়ে দেখলো। তার মা আর ইশা দুজনে টেবিল সাজাচ্ছে।এমনিতেও ইশা তার বাড়িতে কোন কাজ করে না।হয় তো কলেজে যায় নয়তো সারাদিন টিভি দেখেই কাটিয়ে দেয়।তার মা আর একটা কাজের লোক রাখা আছে তারাই সব করে।একমাএ মেয়ে হওয়াতে ইশার বাবা মেয়েকে রাজকুমারীর মতন রাখে।তবে ইশা বাড়িতে যেমন থাকুক না কেনো কোথাও গেলে সবার সাথে সাথে কাজ করে।

অহনা তার মা আর ইশার সামনে গিয়ে মুখ গোমরা করে দাড়িয়ে রইলো। ইশা সেটা দেখে বলে উঠলো
ইশাঃ আপু কি হলো এভাবে মুখ গোমরা করে দাড়িয়ে আছো কেনো।
অহনাঃ ভাইয়া রাগ করছে
অহনা আপুর মুখ থেকে এমন কথা শুনে বড় আন্টি বলে উঠলো
বড় আন্টিঃ কেনো??
অহনাঃ ওই মেয়েটাকে রুসা বলার জন্য
ইশাঃ তাতে কি উনার নামতো রুসা
অহনাঃ ভাইয়া বলেছে নাম ধরে ডাকবে না। আপু বলে ডাকবে।
বড় আন্টিঃ এতে ও কোথায় রাগ করলো ঠিকই তো বলেছে শান।
অহনাঃ ভালো ভাবে বলতো রেগে বলার কি আছে মা
আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম আহারে অহনা আপু, আমি বুঝি না উনার এতো রাগ কিসের, নিশ্চই বড় আম্মু উনার হবার আগে বেশি বেশি ঝাল খেয়েছে তার জন্য মাথায় সব সময় রাগ থাকে। এসব ভাবছিলাম এরই মধ্যে দেখলাম।

উনি আর রুসা দুজনে নিচে নামছে।উহু শুধু নামছে না কি যেনো বলছে আর দুজনে হাসছে।সেটা দেখে আমার বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো কেনো সেটা আমার জানা নেই। হঠাৎ করে উনারা চোখের সাথে আমার চোখ পড়াতেই সাথে সাথে নামিয়ে নিলাম। দুজনে এসে টেবিলের কাছে দাড়ালো।বড় আন্টি উনাকে আর রুসাকে টেবিলে বসতে বলেই।উনি একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লে।আর রুসা গিয়ে উনার ঠিক পাশের চেয়ার টাতে বসলেন। আমি সেটা দেখে না দেখার ভান করে বড় আন্টিকে বলে উঠলাম
ইশাঃ বড় আন্টি আঙ্কেল কোথায়
শানঃ হ্যাঁ মা বাবা কোথায়
বড় আন্টিঃ আরে ইশা মা তোর আঙ্কেল খেয়ে অফিসে চলে গেছে কি একটা জরুরি মিটিং আছে
ইশাঃ ও
বড় আন্টিঃ তুই দাড়িয়ে আছিস কেনো বস, এই অহনা বস
অহনাঃ হুম
ইশাঃ তুমি খাবে না বড় আন্টি
বড় আন্টি আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে বলল
বড় আন্টিঃ খাবো মা, তোদের খেতে দি তারপর
তখনই শান ভাইয়া বলে উঠলো
শানঃ মা আমি কত দিন পর এসেছি আজ সবাই এক সাথে খাবো।
বড় আন্টিঃ আচ্ছা ঠিক আছে

সন্ধ্যায়………..
দুপুরের খাওয়ার পর শান ভাইয়া তার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গিয়ে ছিলো সাথে করে রুসা কে নিয়ে গেছে।আমি অহনা আপু দুপুরে খেয়ে দুজনে কিছু সময় গল্প করে ঘুমিয়ে গিয়ে ছিলাম।একটু আগে হাত মুখ ধুয়ে নিচে নামছিলাম তখন দেখলাম বড় আন্টি হাতে ট্রে নিয়ে উপরে যাচ্ছে আমি তাকে দেখে বলে উঠলাম।
ইশাঃ বড় আন্টি এগুলো কার জন্য
বড় আন্টিঃ আরে ইশা মা শান আর রুসার জন্য কফি
ইশাঃ ও আমাকে দেও আমি দিয়ে আসছি
বড় আন্টিঃ নে (হাসি মুখে)
ইশাঃ হুম
আমি ট্রেটা হাতে নিয়ে আমি গেলাম উনার রুমের উদ্দেশ্য।দরজার কাছে যেতেই দেখলাম দরজাটা চাঁপানো।আমি ভাবলাম নক করে ঢুকি নক করতে যাবো ঠিক সেই সময় আমি একটা মেয়ের হাসির শব্দ শুনলাম।আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না কে হতে পাড়ে।তবে আমার কিছুটা খারাপ লাগলো।তবুও নিজেকে সামলে আমি দরজায় নক করলাম।

চলবে……….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে