মধুরেণ সমাপয়েৎ পর্ব-১০

0
441

#মধুরেণ সমাপয়েৎ
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_১০
_________________
-“দেখ আমাকে ছেড়ে দে নাহলে কিন্তু তোদের বিপদ হয়ে যাবে।আমার কাছে বন্দুক আছে।”

আকিব বন্দুকটা হাতে নিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে বললো,

-“তোর কাছে নেই।এটা এখন আমার কাছে।”

মাহিদ তুষারের চেপে ধরে বললো,

-“এগুলো কেনো করলি তুই?”

-“কারণ সুরভি শুধু আমার।”

মাহিদ তুষারের নাক বরাবর একটা ঘুষি মেরে বললো,

-“তোর এই মুখ দিয়ে সুরভির নামও উচ্চারণ করবি না।”

তুষারকে ধরে সুরভিদের বাসায় নিয়ে গেল।বশির সাহেব অবাক হয়ে বললেন,

-“ও-কে এভাবে ধরে এনেছো কেনো?”

মাহিদ তুষারের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বললো,

-“এখনি সবটা বল নাহলে কিন্তু পুলিশে খবর দিবো।”

-“প্লিজ এমনটা করবেন না।বাবা দেশে নেই।এইসব জানতে পারলে খুব কষ্ট পাবে।”

বশির সাহেব কিছু বুঝতে না পেরে আবার জিজ্ঞেস করলেন,

-“কি হয়েছে একটু বুঝিয়ে বলবে আমাকে?”

নিচতলা থেকে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ পেয়ে সুরভি নিচে নেমে দেখলো সবাই দাঁড়িয়ে আছে।

-“কি হয়েছে?”

সুরভিকে দেখে মাহিদ বললো,

-“সবটা তুষারের মুখ থেকেই শুনো।”

তুষার সবটা বললো সে যা যা করেছে।সবটা শুনে সাহেরা বেগম ঠাস করে তুষারের গালে একটা চ*ড় মেরে বললো,

-“তোর মা মারা যাওয়ার পরে তোকে নিজের ছেলের মতো মানুষ করেছি।আর তুই আমার মেয়েকে মেরে ফেলতে চেয়েছিস!”

-“কাকি আমি সুরভিকে ভালোবাসি।আর আমি চাইনি ও যাতে অন্যকারো হোক।তাই এমনটা করে ফেলেছি।আমার ক্ষমা করে দেও।”

মাহিদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

-“তোমাকে লাস্ট চান্স দিলাম।এরপরে যদি কিছু করো সোজা কারাগারে যাবে।”

ইতিমধ্যে মাহিদের বাড়ির সবাই সুরভিদের বাড়িতে চলে এসেছে।তানিমা প্রশান্তির হাসি দিয়ে বললো,

-“যাক সব সমস্যা তো মিটেই গিয়েছে তাহলে আবার মাহিদ আর সুরভির বিয়ের আয়োজনটা করা হোক।আমিও ওদের বিয়েটা দেখে যেতে পারবো।”

-“নাহ্।”

সুরভি উচ্চস্বরে বলে উঠলো।সবার চোখ সুরভির দিকে।সুরভি নিশ্বাস ফেলে বললো,

-“আমি মাহিদকে বিয়ে করতে পারবো না।সবটা মিটে গেলেও যেই পাত্র একবার বিয়ে না করে চলে যায় তাকে আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না।”

সুরভি কথাগুলো বলে তার রুমের দিকে চলে গেল।সবাই নিশ্চুপ।নিরবতা ভেঙে মাহিদ বললো,

-“আপনারা চিন্তা করবেন না।বিয়েটা যখন আমিই ভেঙেছিলাম,বিয়েতে রাজি আমিই করাবো।”

______________
-“ডক্টর আরেক বার চেক-আপ করে দেখলে হয় না?”

বারেয়া বেগমের কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডাক্তার বললেন,

-“আপনারা যখন এতো করে বলছেন তাহলে আমরা ডাক্তাররা মিলে একটু মিটিং করে দেখি কিছু করা যায় নাকি!”

রাবেয়া বেগম গাড়ির কাছে গিয়ে দেখলেন তানিমা আনমনে বাইরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।

-“মন খারাপ তানি?”

রাবেয়া বেগমের কথায় ধ্যান ভাঙলো তানিমার।সে মৃদু হেসে বললো,

-“মন খারাপ করে কি আর হবে কাকি!জীবনে যা পাপ করেছি এটা তার শাস্তি।”

আকিব আইসক্রিম কিনে এনে রাবেয়া বেগম আর তানিমাকে দিয়ে বললো,

-“এখন কোনো মন খারাপ না করে আইসক্রিম খাও।যা গরম পড়েছে!”

আকিব কথাগুলো বলে গাড়ি চালানো শুরু করলো।

-“কাকি মাহিদকে বলো না তাড়াতাড়ি সুরভিকে বিয়েতে রাজি করাতে।মারা যাওয়ার আগে যেন ওদের বিয়েটা দেখে যেতে পারি।”

রাবেয়া বেগম তানিমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

-“এমন কথা বলিস না মা।আমারও তো কষ্ট হয়!”

-“আমার জন্য তুমি কষ্ট পাচ্ছো?”

-“সেই ছোট্ট থেকে তোকে বড় করেছি।আমার কষ্ট লাগবে না!”

তানিমা কিছু বলতে যাবে তাকে থামিয়ে আকিব বললো,

-“তানিমা আগের কথা বাদ দেন।যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে।”

_______________
-“তুমি সিওর যে আমাকে বিয়ে করবে না?”

-“এক কথা আমি আপনাকে কতবার বলব মাহিদ!”

-“আচ্ছা তাহলে আমি বরং অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলি।বয়স বাড়ছে তো।আর কতো কুমার থাকবো!”

মাহিদের কথাগুলো শুনে সুরভির কিছুটা রাগ হলো।তাও সে নিজেকে কন্ট্রোল করে বললো,

-“আপনার যা খুশি করুন।”

মাহিদ নিশার হাত ধরে বললো,

-“উইল ইউ ম্যারি মি নিশা?”

নিশা লজ্জামাখা মুখ করে বললো,

-“আপনি বিয়ে করতে চাইলে কি আর না করতে পারি আমি!”

সুরভি অবাক হয়ে বললো,

-“নিশা তুই না তুষারকে ভালোবাসিস?”

-“বাদ দে তো তুষারের কথা।মাহিদ জিজু না মানে মাহিদ কতো হ্যান্ডসাম!উনি বিয়ের প্রপোজাল দিচ্ছেন আর আমি উনাকে রিজেক্ট করবো?তা কখনোই হয় না।”

দূরে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে তুষার।সে চোখ রাঙিয়ে নিশার দিকে তাকিয়ে আছে।সে আর সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে চলে গেল।

-“তোরা আমাদের বাড়িতে বসে প্রেমালাপ শুরু করেছিস?দুজনে এই মুহূর্তে এখান থেকে চলে যাবি।”

সুরভি কথাগুলো বলে হনহন করে তার রুমের দিকে চলে গেল।সুরভি যেতে মাহিদ আর নিশা হেসে দিলো।

-“তোমার বান্ধবীর জন্য এটাই ঠিক আছে।”

-“আবার কোনো সমস্যা হবে না তো মাহিদ জিজু?”

-“নিশ্চিন্তে থাকো তুমি শালিকা।এবার ম্যাডাম বিয়েতে রাজি হবেই।আর হ্যাঁ তোমার রাস্তাও ক্লিয়ার হয়ে গেছে।তুষার দেখলাম দাঁড়িয়ে সবটা শুনেছে।তারপরে রেগে বের হয়ে চলে গেছে।”

-“আরে তুষার আমাকে কখনোই ভালোবাসবে না।আমি যা করতেছি শুধু আপনার আর সুরভির জন্য।”

-“থ্যাঙ্কিউ!দেখো আবার আমার জন্য তোমাদের বন্ধুত্বে যেন ফাটল না আসে!”

-“আমাদের বন্ধুত্ব এতোটাও দূর্বল না জিজু।”

মাহিদ আর কিছু না বলে মুচকি হেসে সুরভিদের বাড়ি থেকে চলে গেল।



সুরভি তার রুমে এসে মুখ গোমড়া করে বিছানায় বসে আছে।

-“কি লোক রে বাবা!আমি বিয়েতে রাজি হইনি দেখে আমার বান্ধবীকে পটিয়ে ফেলেছে।আসলেই এই লোক ভালো না।”

-“কি রে সুভি,তুই একা একা বিড়বিড় করছিস?”

নিশাকে দেখে সুরভি হাসি দিয়ে বললো,

-“আসেন মহারাণী।আপনার প্রেমের কাহিনী শোনার জন্য বসে আছি।”

-“আরে আমি আবার প্রেম করলাম কখন!উনি বিয়ের প্রপোজাল দিলেন তাই রাজি হয়ে গেলাম।এতো ভালো ছেলে হাত ছাড়া করা যায় নাকি!”

সুরভি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে নিশার মুখে একটা বালিশ মেরে ওয়াশরুমে চলে গেল।নিশা হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়লো।কিছুক্ষণ পরে উঠে ওয়াশরুমের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

-“আমি গেলাম।”

-“হ্যাঁ যা।”

নিশা মিটিমিটি হাসতে হাসতে সুরভিদের বাড়ি থেকে যেই বের হতে যাবে তখনি তুষার তাকে টানতে টানতে বাগানের দিকে নিয়ে গেল।তুষার নিশার হাত শক্ত করে চেপে ধরে আছে।

-“আহ্!তুষার আমার হাত ছাড়।ব্যথা লাগছে আমার।”

-“তুই আমাকে ভালোবাসিস?”

নিশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

-“বাসতাম কিন্তু এখন আর বাসি না।কারণ তুই তো শুধু সুরভিকেই ভালোবাসিস।তাই আমি ভাবলাম আমি বরং মাহিদকেই বিয়ে করে ফেলি।”

-“এই কথা আরেকবার বললে তোর গালের অবস্থা কি হবে তা তুই কল্পনাও করতে পারবি না।”

-“কেনো তোর কি হয়েছে?”

-“তুই সুরভি আর মাহিদ ভাইয়ের মাঝে আসবি না।”

-“তোর তো উপকারই হবে।তুই সুরভিকে পাবি!”

-“আমি চাই না সুরভিকে।ওর জন্য মাহিদ ভাই ঠিক আছে।”

-“তাহলে আমার কি হবে?”

-“আমি আছি তো!”

-“তোর মতো বেয়া*দব ছেলের দরকার নেই আমার।”

নিশা তুষারের হাতটা ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে সুরভিদের বাড়ি থেকে চলে গেল।

-“সুরভিকে পাইনি তো কি হয়েছে!তোকে তো রাজি করাতেই হবে।নাহলে সমাজে মুখ দেখাতে পারবো না!”

____________________
মাহিদের কথা শুনে হাসতে হাসতে সবাই লুটোপুটি খাচ্ছে।

-“ভাইয়া এতে কাজ হবে তো?”

মাইশার কথা শুনে মাহিদ বললো,

-“হবে না মানে!আলবাত হবে।সুরভির আজকেই যা রূপ দেখলাম।”

-“মাহিদ যত তাড়াতাড়ি পারিস সুরভিকে রাজি করিয়ে বিয়েটা কর।আমি যেন তোদের একসাথে দেখে যেতে পারি।”

-“তানিমা এইসব কথা বাদ দে।দেখবি তোর কিছু হবে না।”

তানিমা কিছু না বলে তাচ্ছিল্যের হাসি দিল।

হঠাৎ করে বাড়ির টেলিফোনে কল আসলো।মনোয়ার সাহেব এসে তা ধরে কথা বললেন।ফোন রেখে মনোয়ার সাহেব বললেন,

-“কালকে তানিমাকে আরেকবার চেকআপ করাতে হবে।উনারা এই বিষয়টা নিয়ে সিওর হতে চান।উনাদের মনে হচ্ছে রিপোর্টে কোনো সমস্যা হয়েছে।”

#চলবে____

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে