মধুবালা পর্ব-১৮+১৯

0
1143

#মধুবালা [১৮]
#ফারজানা_আক্তার

ছোঁয়া আমতা আমতা করছে। লিলি এক ছুটে চলে যায় সেখান থেকে। শুভ্র কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে লিলির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছোঁয়াকে জিজ্ঞেস করে লিলির এভাবে চলে যাওয়ার কারণ। ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা শ্বাস নেয় আর ভাবে এটাই সুযোগ যদি একবার শুভ্রকে বলে রাজি করানো যায় তবে আলিফ স্যারকে বড় আব্বুও মেনে নিবেন। শুভ্র ভাই বংশের একমাত্র ছেলে হওয়ায় শুভ্রর কথার গুরুত্ব দেয় সবাই। শুভ্রকে হারানোর ভয় আছে সবার বুক জুড়ে কারণ হলো শুভ্র ভাইয়ের জেদ। ছোঁয়ার থেকেও শুভ্র ভাইয়ের জেদ বেশি।

ছোঁয়া নরম কন্ঠে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বললো “চলো একটু বাহিরে যায়। সকালের হাঁটাহাঁটিও হয়ে যাবে আর আমাদের কথাও হবে।”

“কি ব্যাপার আজ যে কারো রেজাল্ট দিবে সে খবর কী আছে? কারো দেখি রেজাল্ট নিয়ে কোনো চিন্তা নেই।”

তারপর ছোঁয়া শুভ্র কে জায়েদা বেগমের বলা কথাগুলো বললো। কথা বলতে বলতে বাড়ির গেট ক্রস রে পিচঢালা রাস্তার পাশে হাঁটতে লাগলো দুজন।

“কিরে বল? তখন লিলি পালালো কেনো আর তোরা কার কথা বলছিলি যেনো?

ছোঁয়া সত্যি করে বল লিলি কারো প্রেমে পরেনি তো?”

শুভ্রর কথা শোনে হালকা একটা ঝা’ট’কা খেলো যেনো ছোঁয়া। এবার তো ছোঁয়ার মনে ভয় ঢুকে গেলো। শুভ্রকে সব কিভাবে গুছিয়ে বলবে সেই চিন্তায় মগ্ন হয়ে পরে ছোঁয়া। শুভ্র একটু জোরে ডাক দিতেই ছোঁয়া হুঁশে ফিরে।
তারপর আমতা আমতা করে বলে “ওই যে সামনে একটা পার্ক আছে, চলো ওখানে বসে বলি কথা।”

“হুম তা ঠিক আছে কিন্তু তুই এতো ঘামছিস কেনো হঠাৎ? ”

“তুমিওনা কিছুই বুঝোনা। একেতো গরম তারপর এতক্ষণ হাঁটলাম তাই ঘাম হয়েছে একটু।”

“মাথা ঠিক আছে তোর নাকি পাবনার পাগলা গারদে সিট একটা বুকিং করতে হবে?”

“ম ম মানে?”

“মানে এই শীতে তোর জন্য গরম আসলো কোন গ্রহ থেকে?। যাইহোক বাদ দে। চল বসি।”

ছোঁয়া আর ভনিতা না করে বসে পরলো একটা কাঠের বেঞ্চে। শুভ্র ছোঁয়ার পাশে বসে বলে “এবার বল সব ক্লিয়ার করে।”
ছোঁয়া চারপাশে চোখ বুলালো। কিছুটা দূরে একটা বাদামওয়ালা দেখতে পেলো ছোঁয়া। একটু ভেবে ছোঁয়া নরম কন্ঠে বলে “শুভ্র ভা…. না মানে আমি বলছিলাম কী বাদাম ওয়ালা।”

কথাটুকু বলেই ছোঁয়া একটা শুকনো ঢুক গিলে। শুভ্র ভ্যাবাছ্যাকা খেয় যায়। চোখ রাঙিয়ে শুভ্র বলে “যা বলার স্পষ্ট করে বল।”

“বাদাম খাবো। ওই যে বাদামওয়ালা।”

“তা বললেই তো হয়। এতো ন্যাকামু করার কী দরকার?”

বলেই শুভ্র বাদাম আনার জন্য বসে থেকে উঠে পা বাড়ায়। এর মাঝেই ছোঁয়ার ফোনে কল আসে তানহার। ছোঁয়া কল রিসিভ করতেই তানহার কান্নার শব্দ শুনতে পাই। হঠাৎ বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে ছোঁয়ার। ছোঁয়া নিজেকে সামলিয়ে বলে “এই তানহা কাঁদছিস কেনো এভাবে? কি হয়েছে বল আমায়।”

“রকি জার্মান চলে যাচ্ছে চিরদিনের জন্য। সেখানেই নাকি সেটেল হয়ে যাবে। আমাকে সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে ও আমায় কখনও ভালোবাসতে পারবেনা।

আমি আর পারছিনারে এভাবে বাঁচতে। রকিকে না পেলে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো। রকি তোকে এখনো প্রচন্ড ভালোবাসে, প্লিজ তুই বল একবার ওকে। ও নিশ্চয়ই তোর কথা শুনবে। আমার কোনো কথা-ই শুনছেনা রকি। আমি পাগল হয়ে যাবো রে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে কান্না থামা তুই আগে। আগামী তিন ঘন্টার মধ্যে রকি তোকে বিয়ের প্রস্তাব দিবে। তৈরি হয়ে থাক। আজকেই তোদের বিয়ে হবে। তোর মা বাবা তো এমনিতেই জানে রকিকে তুই ভালোবাসিস আর রকির মা বাবাকে রাজি করার দায়িত্ব আমার।”

এটা বলেই কল কে’টে দিলো ছোঁয়া। ছোঁয়া বুঝতেছেনা কি করবে এখন। দুই দুইটো দায়িত্ব নিয়ে বসে আছে অথচ মাথা শূন্য হয়ে আছে।
শুভ্র বাদাম নিয়ে এসে দেখে ছোঁয়া থ মে’রে বসে আছে। শুভ্র বাদামের ঠুঙা এগিয়ে দিয়ে বলে “কিরে হঠাৎ দেবদাসী হয়ে আছিস কেনো? তোর বয়ফ্রেন্ড রকি ছ্যাকা ট্যাকা দিলো নাকি?”
ছোঁয়া কিছু না বলে হা হয়ে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্র আবারো বললো “কিরে ছ্যাকা খেয়ে স্মৃতি হারিয়েছিস নাকি মধুবালা?”

“না মানে একটা কাজ আছে আমার। তুমি বাসায় যাও আমি সন্ধ্যায় চলে আসবো?”

“মানে কী? যাবি কই একা একা তাও সারাদিনের জন্য?”

ছোঁয়া আর কোনো পথ খোঁজে না পেয়ে শুভ্রকে সব খুলে বললো। শুভ্র কুটকুট করে হেঁসে ফেলে। কিন্তু রকির জন্য একটু মন খারাপও হয়। বেচারা রকির তো কোনো দোষ নেই। সে তো আর জানতোনা ছোঁয়ার জন্ম শুভ্রর জন্য। বড্ড বেশি বোকা রকি নামের ছেলেটা। শুভ্র ভাবছে আর হাসছে। শুভ্রর হাসিতে ছোঁয়া ভীষণ বিরক্ত।
************
ছোঁয়া রকির মা বাবাকে বুঝিয়ে রাজি করিয়েছে। শুভ্র বসে বসে দেখছে আর মুগ্ধ হচ্ছে। ছোঁয়ার প্রেমে যেনো শুভ্র নতুন করে পরছে আবারো। রকির মা বাবাকে রাজি করাতে তেমন কষ্ট করতে হয়নি কারণ তানহাকে আগে থেকেই চিনেন উনারা রকির ফ্রেন্ড হিসেবে। আর তানহার পরিবারও বেশ ভালো। তাই চট জলদি রাজি হয়ে যান রকির মা বাবা। তানহার পাগলামি গুলো কেনো জানি শুভ্রর মনে ধরেছে খুব। কতটা ভালোবাসলে একটা মেয়ে একটা ছেলের জন্য এমন পাগলামি করতে পারে শুভ্রর জানা নেই। সত্যিই শুভ্র খুব অবাক হচ্ছে রকির ভাগ্য দেখে। কয়জনের ভাগ্যেই বা জুড়ে এমন ভালোবাসা অথচ রকি পেয়েও হারাতে বসেছে।
**********
রকি নিজের রুমে কাপড়চোপড় টলিব্যাগে গুছিয়ে রাখছে। সন্ধ্যার আগে রওনা হতে হবে তাকে তাই দ্রতভাবে হাত লাগাচ্ছে সে। ছোঁয়া কয়েকবার টুকা দিতেই রকি বিরক্তিকর চাহনি নিয়ে দরজা খুলে ছোঁয়াকে দেখে অবাক। কাঁপা কাঁপা হাতে রকি দরজা বন্ধ করতে যেতেই শুভ্র তার নজরে পরে। শুভ্রকে রকি অনেকবার দেখেছে কলেজে তাই চেনাজানা আছে। হঠাৎ ছোঁয়া আর শুভ্রকে দেখে রকির কথা মুখে আঁটকে যাচ্ছে তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে বলে “কিরে ছোঁয়া বিয়ের দাওয়াত দিতে আসলি নাকি? কিন্তু দাওয়াত দিয়েও যে কোনল লাভ হবেনা। রাত নয়টাই আমার ফ্লাইট। জার্মান চলে যাচ্ছি, একটা ভালো কাজের অফার এসেছে তাই আর দেরি না করে চলে যাচ্ছি। জানা নেই ফিরবো কবে, হয়তো আর নাও ফিরতে পারি।”

“এখানে দাঁড়িয়েই কী সব কথা বলবি নাকী? ভেতরে যেতে ডাকবি না?”

“আরে কী বলিস ডাকবোনা কেনো? আয়। যাওয়ার আগে তোকে দেখবো ভাবতে পারিনি। ধন্যবাদ আসার জন্য। ”

“তা তুই যে চলে যাচ্ছিস পড়ালেখার কী হবে তোর? আজকে তো রেজাল্ট দিবে।”

“হু রেজাল্টের জন্যই তো রাতের টিকিট নিয়েছি। আমি জার্মানে একটা ভালো ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে সেখানেই করবো পড়ালেখা। আজ কলেজে যাবো, সবার সাথে শেষ দেখা করে আসবো। ৩০মিনিটের মধ্যে তো কলেজে যেতে হবে। যাবিনা তুই?”

“যাবো। কিন্তু তুই কোথাও যাচ্ছিস না। তুই দেশেই থাকবি। দরকার হলে তোর হাত পা বেঁ’ধে খাটের নিচে বন্দি করে রাখবো তোকে, তারপর দেখি জার্মান না ফার্মান কেমনে যাস তুই। শা’লা তুই জানিসনা তানহা তোর জন্য সন্যাসী হয়ে ঘুরছে? কীভাবে ওকে রেখে চলে যাচ্ছিস?

এতো সেতো কিছু বুঝিনা, তুই আজকেই তানহাকে বিয়ে করবি ব্যাস। আঙ্কেল আন্টি রাজি আর তুই যদি অমত করিস তবে তোর মাথায় গুনে গুনে পঞ্চাশ টা ডিম ভা’ঙ’বো আমি দেখে নিস।”

রকি আর শুভ্র দু’জনেই হা হয়ে আছে ছোঁয়ার কথা শোনে।
ছোঁয়া ওদের দু’জনের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে।
রকি হঠাৎ বলে উঠে “একজনে ভালোবেসে অন্যজনের সাথে ঘর বাঁধতে আমি পারবোনা। সরি, ক্ষমা করে দিস পারলে আমায়। আমি রাখতে পারবোনা তোর কথা।”

রকির কথা শোনে তেলে বেগুনে রে’গে উঠে ছোঁয়া থা’প্প’ড় দিতে হাত তুলতেই_____

#চলবে_ইনশাআল্লাহ

রি-চেক হয়নি। ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#মধুবালা [১৯]
#ফারজানা_আক্তার

ছোঁয়া থা’প্প’ড় দিতে হাত এগিয়ে নিতেই শুভ্র ছোঁয়ার হাত ধরে ফেলে শক্ত করে। এতে ছোঁয়ার বিরক্তি লাগে খুব। রকিকে মা’র’তে পারলেই যেনো ছোঁয়ার এই বিরক্তি কাঁ’ট’বে। রকিরও মন খারাপ হয়ে যায় ছোঁয়া শুভ্রর সামনে ওকে মা’র’তে চেয়েছে বলে। একটু লজ্জা আর অপমানবোধও লাগে রকির। শুভ্র দাঁত কিড়মিড় করে ছোঁয়াকে বলে “জোর করে মা’র’পি’ট করে ভালোবাসা হয়না বুঝিসনা তুই?”

“তো কি করবো? এই মাথা মোটা কী বুঝতেছে সে কি হারাতে যাচ্ছে? তানহা রকি আমি আমরা তো সেই স্কুল লাইফ থেকে ফ্রেন্ডস তাহলে রকি কেনো বুঝতেছেনা তানহার অনুভূতি গুলো? ও তো তানহাকে খুব ভালো করেই চিনে। শুধু মাত্র রকিকে ভালোবাসে বলে কোনো ছেলের দিকে চোখ তুলে তাকাইনি কখনো কথা বলা তো দূরের কথা।”

“আচ্ছা আচ্ছা শান্ত হ তুই। তুই রেগে আছিস, বস কিছুক্ষণ মাথা ঠান্ডা কর। আমি কথা বলতেছি রকির সাথে।”

এটা বলেই শুভ্র রকির হাত ধরে ওর বেলকনিতে নিয়ে যায়। রকিও বাধ্য ছেলের মতো গেলো শুভ্রর সাথে। রকির বেলকনিটা বেশ বড়সড়। একদম গুছানো পরিপাটি। দেখেই বুঝা যাচ্ছে রকি ছেলেটাও বেশ গুছানো। শুভ্র খানিক মুগ্ধ হয় রকির প্রতি। এমন গুছানো মানুষ শুভ্রর বেশ পছন্দ। রকি ভাবতে থাকে সেদিনের কথা যেদিন সে প্রথম দেখেছিলো ছোঁয়াকে। ক্লাস নাইনে থাকতে রকি স্কুল চেঞ্জ করে ছোঁয়াদের স্কুলে ভর্তি হয়েছিলো। রকি স্কুলে পা রাখতেই একটা কুটকুট হাসির শব্দ ওর কর্ণকুহরে প্রবেশ করে আর ও কিছু না ভেবেই ছোঁয়াকে গিয়ে বলে “মেয়ে হাসিটা খুব সুন্দর তোমার?”
আর সেই থেকেই ওরা বন্ধু। তানহা সেদিন আসেনি স্কুলে, অসুস্থ ছিলো তানহা বেশ। পরে কয়েকদিন পর তানহা স্কুলে আসলে তানহার সাথেও খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে যায় রকির। কলেজ লাইফে পা রাখতেই তানহা বুঝতে পারে সে রকির জন্য কিছু অনুভব করে কিন্তু বন্ধুত্বের সম্পর্ক নষ্ট হবে ভেবে সে কাউকে কিছু জানাইনি। হঠাৎ শুভ্রর কথায় হুঁশে ফিরে রকি।

“তা দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা কেনো আসলো তোমার মাথায়? কিছু মনে করোনা বয়সে ছোট হবে তাই তুমি করে বললাম।”

“যাকে আমি ভালবেসে আসছি ৬/৭ বছর ধরে সে নাকি ভালোবাসে অন্যকাউকে। কি করবো বলুন, জোর করে সব হলেও ভালোবাসা পাওয়া যায়না তাই চলে যাচ্ছি দেশ আর দেশের মানুষের মায়া কাটিয়ে।”

“তোমার ভালোবাসার মানুষ অন্য কাউকে ভালোবাসে বলে তুমি দেশ ছেড়ে যাচ্ছো। পারছোনা সহ্য করতে এমন অসহ্যকর কষ্ট। একবার ভাবো তো তানহার কথা। মেয়েটার কি অবস্থা হচ্ছে? তোমার মতো একই নৌকায় মেয়েটাও ভাসতেছে। ছোঁয়ার থেকে যতটুকু শুনলাম মেয়েটাও তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। নিজে যে কষ্ট পাচ্ছো সেই একই কষ্ট তুমি মেয়েটাকেও দিচ্ছো। এটা কিন্তু ঠিক নাহ।

আমি কোথায় জানি শুনছিলাম মন ভা’ঙা’র কষ্ট শুধু সেই বুঝে যার মনটাও ভে’ঙে’ছে কাউকে ভালোবাসে তাহলে তুমি কেনো বুঝতে চাইছোনা তানহার কষ্ট টা। তুমি পারোনি তোমার ভালোবাসার পূর্ণতা দিতে কিন্তু তুমি পারবে তানহার ভালোবাসার পূর্ণতা দিতে।
আর কষ্ট দিওনা মেয়েটাকে। বিয়েটা করে নাও। সম্পর্ক ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।
**********
সন্ধ্যায় ছোঁয়া আর শুভ্র বাসায় ফিরে। তানহা অনেক খুশি হয়েছে। দুই পরিবারের উপস্থিতিতেই তাদের বিয়েটা হয়ে গেলো। রকি মেনে নিতে পারেনি তবে তানহার ভালোবাসাকে সম্মান করতে বাধ্য হয়েছে।
শুভ্র ফোন করে বাসায় জানিয়ে দিয়েছিলো তারা ফিরতে দেরি হবে তাই কেউ আর কোনো প্রশ্ন করেনি। ছোঁয়া ফ্রেশ হয়ে বসতেই জায়েদা বেগম কফি নিয়ে হাজির হয়। ছোঁয়া এখন আবারও আগের মতো সন্ধ্যায় কফি খাই জায়েদা বেগমের হাতে। কিন্তু তবুও সেলিনা পারভীন এর জন্য মাঝে মাঝে একটু বেশিই মন খারাপ হয় ছোঁয়ার।

ছোঁয়াকে কফি দিয়ে জায়েদা বেগম চলে যান নিজের রুমে। গিয়ে দেখেন জীবন মির্জা কেমন জানি ছটপট করছেন। জায়েদা বেগম খুব ভয় পেয়ে যান। জীবন মির্জার বুকে জ্বালা করছে খুব। জায়েদা বেগম সবাইকে ডাকতে চাইলে জীবন মির্জা বাঁধা দেন, ডাক্তারকে ডাকতেও দিলেননা। জায়েদা বেগম সং হয় বসে আছেন। স্বামীর অবস্থা দেখে কষ্ট হচ্ছে খুব কিন্তু কিছু করার নেই উনার। কিছুক্ষণ পর জীবন মির্জা কিছুটা শান্ত হলেন, আগে থেকে একটু সুস্থতা অনুভব করছেন।
জায়েদা বেগমের হাত ধরে জীবন মির্জা অপরাধীর মতো বলেন “আজ একটা কঠিন সত্য বলবো তোমায়। অনেক বড় অন্যায় করেছি তোমার সাথে। পারবে তো ক্ষমা করতে আমায়?”

“কি বলছেন এসব? আপনি অসুস্থ, বিশ্রাম করুন কিছুক্ষণ। আমি আপনার জন্য স্যুপ বানিয়ে আনছি।”

“না কোথাও যেওনা। শুনে যাও জায়েদা প্লিজ। ”

“আচ্ছা বলুন।”

“আমি ইনজেকশন নিয়েছিলাম ছোঁয়ার মায়ের মৃত্যুর পর। যার কারণে তুমি মা হতে পারোনি এতোগুলা বছর এতো এতো চেষ্টা করেও। তোমার মাঝে কোনো সমস্যা নেই। আমি ইচ্ছে করেই করেছি এটা যাতে আর কখনো বাবা হতে না পারি। ছোঁয়ার প্রতি যাতে আমার স্নেহ কখনো কমে না যায়। বিশ্বাস করো আমি বিয়ে করতে চাইনি মা আমাকে জোর করে বিয়ে করিয়েছেন। আমি তোমার অপরাধী, তুমি যা শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নিবো।”

পরপর দুটো ধা’ক্কা তে একদম ভে’ঙে পরেছেন জায়েদা বেগম। কিছু বলতে পারছেননা তিনি। শুধু গাল বেয়ে নামছেন অশ্রকণা। নিজেকে খুব বেশিই অসহায় মনে হচ্ছে জায়েদা বেগমের, ভাগ্যের উপর রাগ হচ্ছে খুব। একটা সুন্দর পরিপূর্ণ জীবন পাওয়ার অধিকার কী তার ছিলোনা? মনের কাছে প্রশ্ন করছেন তিনি।
জীবন মির্জার বলা কথাগুলো জায়েদা বেগম ছাড়াও আরো একজন শুনেছে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে। ছোঁয়া জায়েদা বেগমের কাছে এসেছিলো চুলে তেল দেওয়ার বাহানায় আর এসেই এই কঠিন সত্য টা জানতে পারলো। জীবন মির্জা ওর জন্য এতো বড় ত্যাগ স্বীকার করেছেন এটা যেনো হজম হচ্ছে না ছোঁয়ার। ছোঁয়াও কাঁদতেছে। হঠাৎ জায়েদা বেগমের কানে শব্দ এলো হেঁচকির। জায়েদা বেগম শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ-মুখ ভালো করে মুছে দ্রুত দরজা খুলে দেখে ছোঁয়া কাঁদছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। জায়েদা বেগম মুহুর্তেই ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে, মেয়েটা যে বড্ড ইমোশনাল। জায়েদা বেগম বুঝতে পারে ছোঁয়া সব শুনে ফেলেছেন তাই ছোঁয়াকে রুমে এনে জীবন মির্জার পাশে বসায়। জীবন মির্জা এতক্ষণ শুয়ে থাকলেও মেয়েকে দেখে চট করে উঠে বসেন। ছোঁয়া মাথা নিচু করে কেঁদেই যাচ্ছে। জায়েদা বেগম নিজের কষ্ট গুলো চাপা দিয়ে ছোঁয়ার হাত শক্ত করে নিজের হাতের মুঠোয় ভরে বলেন “দেখো মা তোমার বাবা যা করেছেন তোমাকে ভালোবেসেই করেছেন। আর রেগে থেকোনা বাবার প্রতি মা। উনার ভুলের জন্য অনেক শাস্তি পেয়েছেন উনি। শেষ বয়সে কী একবার বাবা ডাক শোনার অধিকার দিবে তাকে?”

ছোঁয়া কিছু না বলেই কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরে জীবন মির্জাকে। বাবা মেয়ে দুজনেই কাঁদছে, এই কান্না যে সুখের কান্না।

মান্নান মির্জা খুব খুশি হয়েছেন ছোঁয়ার মুখে হাসি দেখে। ছোঁয়া যখন মান্নান মির্জাকে বলল আজ থেকে তার দুটো বাবা তখনই তিনি মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলেন “আজ থেকে কোনো চিন্তা নেই আমার। আমার মেয়ে খুশি থাকলেই আমি খুশি।”
**********
সন্ধ্যা ৬টা। আজ সারাদিন ছোঁয়া ঘুরেছে শুভ্রর সাথে। শুভ্রকক আজকেও অফিসে যেতে দেয়নি ছোঁয়া। এতে শুভ্র মোটেও বিরক্ত হয়নি বরং খুশি হয়েছে বেশ। এখনো দুজন কাউকে কেউ সরাসরি বলেনি ভালোবাসি তবুও দুজনকে ছাড়া যেনো দুজনের চলেনা।

মির্জা বাড়ির হলরুমে আজ আবার মেলা বসেছে। ছোট বড় সব সদস্য উপস্থিত। ছোট রা সবাই মিলে হৈ হুল্লোড় আড্ডা দিচ্ছে। ছোঁয়া হুট করে বলে উঠে “বালার প্রেমে অন্ধ আমি, স্বপ্ন সাজিয়েছি রোজ।
স্বপ্ন নগরে বালা জোড়া, কেউ কী রেখেছে খোঁজ? ”

ছোঁয়ার ছন্দ শুনে কুটকুট করে হেঁসে ফেলে সবাই। মির্জা বাড়ির হলরুম ভরে উঠেছে খুশির শব্দে। কারো উপর আর নেই কোনো অভিমান অভিযোগ কারো। সবাই আজ একতালে মেতে উঠেছে খুশির উৎসবে। সবাই আজ বসেছে ছোঁয়া আর শুভ্রর বিয়ের তারিখ ফিক্সড করার জন্য। তারিখ ঠিক হয়েছে সামনের শুক্রবার। বাড়ির ছোট রা সবাই নেচে উঠেছে এটা শুনে।
ছোঁয়া গম্ভীর মুখে বলে উঠে “আমার কিছু বলার আছে। আমি চাই আমার সাথে লিলিও বধু সাঁজুক।”

ছোঁয়ার কথা শুনে সবাই অবাক। আজ সোমবার মাত্র হাতে গুনা দিনে লিলির জন্য পাত্র কোথায় খুঁজবে প্রশ্ন করেছে বেলাল মির্জা।
মির্জা পরিববার যে অজানা তাদের জন্য সামনে অপেক্ষা করছে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত অতীত।

#চলবে_ইনশাআল্লাহ

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে