ভোরের শিশির পর্ব-০২

0
1116

#ভোরের শিশির
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২

হামিম ওয়াশরুমে গিয়ে যা দেখে তা দেখার পর হামিম খুব জোড়ো একটা চিৎকার দেয়।কারন তার সামনে আদিয়া আছে,আর আদিয়ার হাতে তার ল্যাপটপ।এতটুকু অবধি ঠিক ছিল কিন্তু তার ল্যাপটপের অবস্থা একদম নাজেহাল।ল্যাপটপ পানিতে চুপচুপে হয়ে আছে আর হয়ত ফ্লোরে পড়েছে তার জন্য কিছুটা ফেটেও গেছে।আর এসব দেখেই হামিম ওভাবে চিৎকার করে উঠে।হামিম ওয়াশরুমে প্রবেশ করার পরপরই আদিয়া পিছন ঘুরে যায়।আর হামিম খুব রেগে তেড়ে যায় আদিয়ার দিকে।হামিম এক ঝটকায় আদিয়ার হাত থেকে তার ল্যাপটপটা ছিনিয়ে নেয়।

“আমার ল্যাপটপের এ অবস্থা কীভাবে হল?কী করেছো তুমি এটার সাথে!”

খুব রেগে কথাগুলো বলে হামিম,আর আদিয়া ভয়ে গুটিয়ে রয়েছে।পিছনে হামিমের দিকে তাকাবার সাহস টুকু তার হচ্ছে না।আদিয়ার কোন সারা না পেয়ে হামিম আরো রেগে যায়।আর আদিয়ার হাত ধরে তার দিকে ঘুরায়,আদিয়ার দিকে তাকিয়ে হামিম অপ্রস্তুত হয়ে যায়।তাই হামিম আর কিছু না বলে গটগটিয়ে ওয়াশরুম থেকে একপ্রকার পালিয়ে যায়।সেটা দেখে আদিয়া যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে,কিন্তু তার এখন খুব লজ্জাও করছে।কী হল এখন,কীভাবে যাবে সে হামিমের সামনে!

অন্যদিকে হামিম সে তার রুম ত্যাগ করে সিড়ির কাছে এসে দাঁড়ায়।আর দুই হাত দিয়ে চুলগুলো টেনে ধরে,আর মনে মনে আদিয়ার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে চলেছে।

“ইডিয়েট একটা কোন সেন্স নেই নাকি,এভাবে একটা ছেলের ওয়াশরুমে!ইস্ ভাবতেই গায়ে কাটা দিচ্ছে,দরজা ভালো করে না আটকে ওয়াশরুমে শাড়ি পড়ছে।”

_____________________________________

অনেকক্ষণ পর আদিয়া শাড়িটা কোনমতে গায়ে পেচাতে পেরেছে।এবার বাইরে যাওয়ার পালা কিন্তু আদিয়া বাইরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না।তার খুব লজ্জা করছে তার সাথে ভয়ও করছে।

“এখন আমি বাইরে যাব কীভাবে!উনি হয়ত রুমেই আছেন!আর উনার ল্যাপটপের যেভাবে তেরোটা বাজিয়েছি তাতে করে উনি ত খুব রেগে আছে।সামনে পেলেই কাঁচা চিবিয়ে খাবে,পুরোই ডাইনোসর।”

এমন অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে আদিয়া ওয়াশরুমের দরজাটা হালকা খুলে উঁকি দিয়ে পুরো ঘরটায় একবার চোখ বুলিয়ে নেয়।নাহ,কোথাও হামিম নেই,আদিয়া এবার হাফ ছেড়ে বাঁচে।আর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে রুমের দরজাটা ভালো করে বন্ধ করে দেয়।আর বিছানায় গা এলিয়ে দেয়,আজ সে খুব ক্লান্ত।খুব ধকল গেছে আজ আদিয়ার উপর,আদিয়া চোখ বন্ধ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই কিছু একটা ভেসে উঠে।আর হুরমুরিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে।

“আল্লাহ তুমি সহায়,দেখো কোন বিপদ যাতে কারো না হয়।কোন নিস্পাপ মানুষের যাতে কোন ক্ষতি না হয়।”

কথাগুলো নিজ মনে আওড়ে আদিয়া গিয়ে ওজু করে আসে,আর তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে নেয়।

সকাল ৭টা বেজে ৫৬ মিনিট,আদিয়া এখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।হঠাৎ দরজায় কেউ নক করে,আদিয়া লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসে।কারন হামিম তাকে আগেই বলেছিল কেউ ডাকার আগেই যাতে ঘুম থেকে উঠে বাগানে যায়।আর বাগানের গাছগুলোতে যাতে সে পানি দেয়।কিন্তু আদিয়া সেটা পারে নি।আদিয়া তাড়াতাড়ি শাড়ি ঠিক করে বিছানা থেকে নামে এবং একপ্রকার দৌড়েই যায় দরজা খুলতে।আর দরজা খুলে দেখে তার সামনে হামিম দাঁড়িয়ে আছে পকেটে হাত গুজে।

“আসলে রাতে ঘুমাতে দেরি হয়ে গেছিল তাই সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে পারি নি।আপনি একটু বসুন আমি এক্ষুনি বাগানের গাছগুলোতে পানি দিয়ে আসছি।”

একদমে কথাটা বলেই আদিয়া ঘর থেকে বের হতে যায় আর হামিম ডেকে উঠে,,,

“আদিয়া।”

হামিমের এমন শান্ত স্বরে কথা বলাটা আদিয়াকে ভয় পাইয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।আদিয়া হামিমের সামনে দাঁড়ায় মাথা নিচু করে।

“আপনি আমাকে এর জন্য যে শাস্তি দিবেন আমি সেটাই মাথা পেতে নিব কিন্তু আপনি প্লিজ ওদের কোন ক্ষতি করবেন না।”

হামিম আদিয়ার কথার কোন পাত্তা না দিয়ে আদিয়ার হাত ধরে টেনে রুমে আনে।আর দরজাটা লাগিয়ে দেয়,আদিয়া ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে।হামিম আদিয়ার সামনে আসতে আসতে তার পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখটা বেঁধে নেয়।আদিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকায় হামিমের দিকে আর বুঝার চেষ্টা করছে হামিম কী করতে চাইছে।
হামিম আদিয়ার সামনে এসে আদিয়ার শাড়িটা একটানে খুলে ফেলে।আদিয়া চোখ বড়বড় করে হামিমের দিকে তাকায়।চোখ যেন বেরিয়ে আসবে এক্ষুনি এতটাই অবাক হয়েছে আদিয়া।হামিম শাড়িটা পড়িয়ে দেয়ার জন্য আদিয়ার গায়ে হাত দিতে গেলেই আদিয়া ছিটকে দূরে সরে যায়।

“আ-আমি পড়তে পারব,প্লিজ আপনি যান এখান থেকে।”

“বেশি কথা না বলে সামনে আসো নয়ত চোখের বাঁধন খুলে শাড়ি পড়াব।তারপরও শাড়ি আজ তোমাকে পড়িয়েই ছাড়ব আমি।”

আদিয়া হতভম্ব,কিন্তু আদিয়া বেশি সময় না নিয়ে হামিমের সামনে এসে দাঁড়ায় আর হামিম খুব সুন্দর করে শাড়িটা পড়িয়ে দেয়।শাড়ি পড়ানোর পর হামিম চোখের বাঁধন খুলে আদিয়াকে পা থেকে মাথা অবধি একবার দেখে নেয়।

“না সব ঠিকই আছে,ভালোই হয়েছে শাড়ি পড়ানো।”

আদিয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে,হামিমের কথার প্রতিউওরে আদিয়া কিছুই বলল না।

“এবার বলো আমার ল্যাপটপের ঐ অবস্থা কীভাবে করলে!কী করছিলে ল্যাপটপ নিয়ে ওয়াশরুমে!”

“শশাড়ি পড়তে।”

“ওয়াও,শাড়ি পড়ার জন্য তুমি ল্যাপটপের ঐ অবস্থা করেছো!খুব ইন্টারেস্টিং ত ব্যাপারটা।”

হামিম কথাটা বেশ শান্ত হয়েই বলে কিন্তু পরক্ষণেই খুব রেগে যায়।

“সত্যি কথা বলো আদিয়া ল্যাপটপ নিয়ে ওয়াশরুমে কী করছিলে!সত্যিটা না বললে আমি কী করতে পারি সেটা তুমি এতদিনে ভালোই বুঝে গেছো।এবার তাড়াতাড়ি সত্যিটা বলো কোন নাটক না করে।”

“আমি শাড়ি পড়তে পারি না,ততাই ভিডিও দেখে শাড়ি পড়ার জন্য ল্যাপটপটা নিয়েছিলাম।কারন আমার ফোনটা বাসায় ফেলে এসেছি।আর ল্যাপটপটা ভালো করে রেখেই শাড়ি পড়ছিলাম কিন্তু হঠাৎ করে কীভাবে যেন হাত লেগে ল্যাপটপটা নিচে পড়ে যায়।আর ফ্লোরে পড়ে থাকা পানিতে ভিজে যায়।”

“পাসওয়ার্ড জানলে কীভাবে?”

আদিয়া এবার খুব অস্বস্তিতে পড়ে যায়,এখন কী বলবে আদিয়া।

“বলো পাসওয়ার্ড জানলে কীভাবে?” (খুব রেগে)

“ববাগান,পানি দদিতে হবে।”

আদিয়া কথাটা বলে পাশ কাটিয়ে আসতে গেলেই হামিম বলে উঠে,,,

“নিজেকে এতটাও চালাক ভেবো না মিসেস আদিয়া, কথায় আছে অতি চালাকের গলায় দরি।কথাটা মাথায় রেখে চালাকি করো,আর ভুলে যেও না এখানে আমিও রয়েছি।”

কথাটা বলেই হামিম ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।আর আদিয়া হামিমের কথার মানে খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে।তাই আদিয়া ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে।আর গভীর ভাবনায় মগ্ন হয়ে পড়ে।

_____________________________________

হামিম খাবার টেবিলে বসে তার বোন নীলার সাথে কথা বলছে আর মিটমিটিয়ে হাসছে।সামনেই আদিয়া বসে আছে,আর হামিমের কথা শুনছে হামিম নীলা আপুর সাথে যেভাবে কথা বলছে সেটা একদমই হাসার মত নয়।লোকটা পাগল হবে হয়ত তাই ঐদিকে গম্ভীর হয়ে কথা বলছে আর এদিকে মিটমিটিয়ে হাসছে।বেশ কিছুক্ষন পর হামিম ফোন রেখে আদিয়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।

“আপনি আপুর সাথে ওভাবে কথা কেন বললেন?আর আপু এই বাড়িতে আসবে না ত কই যাবে!এটা যেমন আপনার বাবার বাসা তেমন ত উনারও বাবার বাসা।”

“তোমার থেকে আমি কিছু জানতে চেয়েছি?”

আদিয়া হামিমের কথায় থতমত খেয়ে যায়,আর মাথা নেড়ে না বুঝায়।

“তবে এত কথা কেন বলছো?বেশি কথা না বলে চুপচাপ খাওয়া কমপ্লিট করো।”

আদিয়া মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় আর দুজনেই খাওয়ায় মনোযোগ দেয়।খাওয়া শেষ হওয়ার পর আদিয়া হামিম কে বলে উঠে।

“একটা কথা বলার ছিল!”

“বলো।”(গম্ভীর হয়ে)

” আমি হসপিটালে যেতে চাচ্ছি।”

“ত যাও মানা কে করেছে!”

হামিমের কথাশুনে আদিয়া খুব খুশি হয় আর খুশিতে গদগদ হয়ে বলে উঠে।

“সত্যি যাব!”

“হ্যাঁ যাবে,তবে বাড়ির গাড়িতে যাবে আবার বাড়ির গাড়িতে করে বাসায় ফিরবে।বাড়ি টু হসপিটাল আর কোথাও যাবে না আমার অনুমতি ছাড়া।”

“ঠিক আছে আমি রাজি,আর আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।”

“আমাকে ধন্যবাদ দেয়ার কী হল,ডাক্তার তুমি আর ডাক্তারের কাজই হল মানুষের সেবা করা।এখন আমি ত তোমার কাজের আর মানুষের সেবা করার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারি না।”

“বাঁধা হয়ে না দাঁড়ানোর জন্যই ধন্যবাদ আপনাকে।”

কথাটা বলেই আদিয়া ছুটে তার রুমে চলে যায় রেডি হতে,হসপিটালে যাবে আজ।সেটা ভেবে খুব খুশি আদিয়া,আর হামিমের মুখে বাঁকা হাসি।

#চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে