ভেজা চুলে পর্ব-১৮+১৯ ( শেষ পর্ব)

0
1103

#ভেজা_চুলে
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-১৮

ওয়াহেদ দুহাতে মাথা চেপে ধরে বসে আছে৷ প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে তার। চোখ জ্বলে যাচ্ছে। তার এখন ঘুমের প্রয়োজন।
অথচ অর্ণি বাসায় মাথায় তুলে নিয়েছে। রুমের দরজা আটকে বসে আছে। এখন সে ডাকাডাকিও করতে পারছে না। কারণ বাড়ির মানুষ এত রাতে জেগে উঠলে সমস্যা হবে৷
এই দিকে মাধুর্য ধাক্কা দিয়ে আরহান কে সরিয়ে দিয়েছে। তার হাত-পা কাঁপছে। নার্ভাস এট্যাক হচ্ছে। আরহান জোর করে তাকে বসাতে গেলে মাধুর্যের চশমা ভেঙে গেলো।
আরহান ফোন রেখে বলল,

” Love তাকাও আমার দিকে। তাকাও বলছি। শান্ত হও। আমি দেখছি কী হয়েছে। তাকাও আমার দিকে?”

এক্সিডেন্টের পর মাধুর্যের মাথায় আঘাত লাগে। এরপর থেকে শুরু হয়েছে নানান সমস্যা।সে দূরের বস্তু চোখে কিছুটা কম দেখে তাই চশমা লেগেছে চোখে।
অতিরিক্ত টেনশন বা এক্সাইটেড হলেই সমস্যা হয়।

বাহিরে তখন কনকনে ঠান্ডা। ফায়ার প্লেসে আগুন জ্বালিয়ে পাশের দোলনায় মাধুর্য কে বসিয়ে দিলো আরহান।মাথার নিচে বালিশ দিয়ে পা থেকে তার জুতো খুলে দিলো।
মেয়েটা এখনো সম্পুর্ণ সুস্থ নয়৷ ঘুমের মেডিসিনের কারণে মাধুর্য তখন তন্দ্রাঘোরে।
আরহান প্রথমে হোস্টেলে কল দিয়ে আজ ওর বাহিরে থাকার পারমিশন নেয়, এরপর কল দেয় শয়ন কে।

“ভাবী কী বলছে এসব?”
“তুই কী জানিস ভাই?আমরা এই বাচ্চা মেয়েদের মধ্যে ফেসে গেছি?”

“মানে?”

“আগেই বলেছিলাম, এসব বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করে লাভ নেই। এরা কথার কথা কিছুই বুঝে না।”

“কী হয়েছে বলবি তো?”

“রুচি আজ পায়ে ব্যথা পেয়েছে। সামান্য নয় মারাত্মক। পায়ের গোড়ালিতে লেগেছে। ওয়াহেদ এর বাইকেই লেগেছে। এই অবস্থায় যেহেতু ওয়াহেদ দায়ী তাই ওকে আজ রাতের জন্য বাড়ি আনতে হলো।কারণ রুচির বাসায় কেউ নেই। এখন আবার এটা ভাববি রুচি ইচ্ছা করে করেছে? এমন নয়। যা হয়েছে সম্পূর্ণ দূর্ঘটনা মাত্র।ভাবী রুচিকে দেখে রাগারাগি না করলেও বেশ রাগ৷ ওয়াহেদ কে জিজ্ঞস করতেই ও বলেছে

” বিয়ে করে এনেছি। তোমার সতীন বানিয়ে এনেছি। যাও ওর সেবা করো।”

ব্যস শুরু হয়েছে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ।”

এক শ্বাসে কথাগুলো বলে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো শয়ন। ওদিকে আরহান স্বস্তির শ্বাস ফেলল।

মাধুর্যের যখন ঘুম ভাঙলো তখন তারা অসলো শহর ছাড়িয়েছে। আরহান ড্রাইভ করছে। ডক্টরের কাছে নিশ্চয় যাচ্ছে, এমন ধারণা ছিল মাধুর্যের। কিন্তু অবাক করা বিষয় যখন জানতে পারলো তারা ফিরে আসছে। এমনকি এতটা সময় সে ঘুমিয়ে কাটিয়েছে।

একটা কফিশপের সামনে গাড়ি পার্ক করে আরহান দ্রুত কফি নিয়ে এলো। মাধুর্য মুখে আষাঢ়ের মেঘ জমিয়েছে। বৃষ্টি নামলো বলে।
ঠিক তখন আরহান শয়নের সাথে কথা বলা কল রেকর্ড অন করে দিলো। সব’টা শুনে ধীরেধীরে মেঘ সরে দেখা দিলো এক টুকরো সূর্য।

চকলেট ডোনাটে কামড় দিয়ে মাধুর্য জিজ্ঞেস করলো,

“আপনারা ওয়াহেদ ভাইকে ভাই ডাকেন না কেনো?”

“কারণ আমরা সমবয়সী।”

” ভাইয়া তো বড়।”

“আমাদের সবার বয়সের পার্থক্য শুনবে?

ওয়াহেদ,শয়ন এবং আমার বয়সের পার্থক্য মাত্র মাস খানেক।অর্থাৎ আমরা একই মাসেই জন্মেছি৷
এবং আমাদের নয় মাসের ছোট ছিল সাবিহা৷ ইনহান আমাদের সবার ছোট৷ তাই ও সবাইকে ভাই ডাকে৷”

“আপনি তো তাহলে বেশ বয়স্ক।”

“তা বলতে পারো।”

“ঠিক সময় বিয়ে করলে আমার বয়সের মেয়ে থাকতো।”

বিড়বিড় করে কথ বলে বাহিরের দিকে তাকালো মাধুর্য । এদিকে ওয়াহেদ প্রায় ঘন্টা দুই পর রুমে প্রবেশ করে দেখতে পেলো অর্ণি চুপচাপ টেবিলে মাথা রেখে বসে আছে। সে ভেবেছিল ঘরে ঢুকতেই তুলকালাম বাজবে অথচ এমন কিছুই নয়৷
নারীর নীরবতা পুরুষের অন্তরকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়।
ওয়াহেদ সেই পথের পথযাত্রী। ক্লোজেট থেকে কাপর নিয়ে সে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখতে পেলো অর্ণি একই জায়গায়।
হয়ত ঘুমিয়েছে, কাছে এসে স্পর্শ করতেই হুংকার দিয়ে উঠলো সে।
ওয়াহেদ কিছু না বলে চুপচাপ শক্ত বাহু বন্ধনে তাকে আবদ্ধ করে নিলো। অর্ণি যে ছাড়ানোর চেষ্টা করেনি এমন নয় অথচ শক্তিতে পেরে উঠেনি। তাই চুপচাপ নিজেকে সপে দিয়েছে ওয়াহেদের দেহের বন্ধনে।
এক চোট বৃষ্টির পর যেমন আকাশ শান্ত হয়ে যায়, বাতাস হয় মৃদু। ঠিক তেমনভাবে ঘামে ভিজে যাওয়া অর্ণিকে নিজের কাছাকাছি টেনে নিয়ে ওয়াহেদ তাকে সব’টা বলল।
প্রতিউত্তরে অর্ণি কিছুই বলেনি। খুব শক্ত করে আঁকড়ে ধরে ওয়াহেদ কে। মুখ ডুবিয়ে দেয় ওয়াহেদের বুকে।

মাধুর্য-আরহানের সম্পর্কের কথা মাম্মাই শুরু থেকে জানতো। শুধু আরহানকে একটা কথা বলেছিল,

“আগুন, বারুদ পাশাপাশি রাখলে কিন্তু বিস্ফোরণ ঘটে৷ এতে শুধু ক্ষতিই হয়।বিয়ের আগে এমন কিছু করো না যাতে লোকে কিছু বলতে পারে।”

পুরো বছর খানেকের প্রেমে অসংখ্য বার মাধুর্যকে চুমু খেয়েছে আরহান।
চুমু না খেলে ভালোবাসা প্রকাশ পায়?পরিণয়ের প্রথম ধাপ চুমু। যে ব্যক্তি তার ভালোবাসার মানুষকে কখনো চুমু খায়নি, সে এখনো স্বর্গের অনুভূতি পায়নি।

আজ তাদের দেশে ফিরতে হচ্ছে। তাদের দেশে ফেরার সব’চে বেশি অপেক্ষা করছে ইনহান।
কারণ এবার এলে সে সম্পূর্ণ ভাবে বাঁধবে তার ধানী লংকা কে।
কোথাও যেতে দিবে না।একদম বুকের ভিতর ঢুকিয়ে রাখবে। যাতে কেউ নজর না দিতে পারে।

বিমানবন্দরে পা রাখার পর থেকে বেশ থমথমে অবস্থা আরহানের মুখে। মাধুর্য তার হাত ধরেই আছে। আরহান এক পলক তাকায় ওর দিকে।মেয়েটা বড্ড খুশী।সুখ সবে ধরা দিলো যে।
অথচ এই হাসিখুশি মেয়েটা জানতোই না যে তার জীবন থেকে ততক্ষণে হারিয়ে যেতে শুরু করেছে তার কাছের একজন।
দূর থেকে চলে যাচ্ছে বহুদূরে।

চলবে।

#ভেজা_চুলে
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-১৯

সি আই সি ইউ এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে মাধুর্য। পাশে তার ছোট মামা এবং আরহান।রাজধানীর অন্যতম একটি বিলাসবহুল প্রাইভেট হস্পিটালের কার্ডিয়াক ইউনিটের ওয়েটিং রুমে বসে থাকার সময় বার বার অস্বস্তি হচ্ছিলো মাধুর্যের। ফিরে এসে সরাসরি বাড়ি যায়নি। হোটেলে উঠেছে। ফ্রেশ হয়েই এসেছে এখানে।

দুজন মাত্র ভিতরে যাওয়ার অনুমতি পাবে। তবুও এক সাথে নয়। মাধুর্য বার বার জিজ্ঞেস করছে অথচ মামা বা আরহান জবাব দেয়নি। স্পেশাল ভাবে অনুমতি নিয়ে মাধুর্যকে ভিতরে যেতে দেওয়া হলো। যাওয়ার আগে তার ছোট মামা জানালেন ভিতরে আছেন মাধুর্যের জন্মদাতা পিতা।

মাধুর্য জেদ ধরে বসে রইল সে কিছুতেই সেই মানুষকে দেখতে যাবে না।যে সারাজীবন খোঁজ নেয়নি এখন কেন তাকে দেখতে যাবে?সে কিছুতেই যাবে না।কিন্তু তার মামার কথায় সে ভিতরে যায়। অক্সিজেন মাস্ক পড়িয়ে রাখা হয়েছে ভদ্রলোককে। ডক্টর জানালেন ওপেন হার্ট সার্জারী করা হয়েছে তবে তার লিভারে পানি ধরেছে। বার বার বমি হয় তেমন কিছুই খেতে পারে না৷
হয়তো অন্তিম সময় চলে এসেছে।

মাধুর্য পাশে গিয়ে বসতেই ভদ্রলোক নার্সকে ইশারায় বললেন বেড খানিকটা উঁচু করে দিতে। উঠে বসেই সে মাধুর্য কে ডাকলেন। এরপর তার এক হাত দিয়ে তার হাত ধরে ঝরঝরিয়ে কাঁদছিল। জন্মের পর বাবার স্পর্শ পায়নি মাধুর্য। এই সেই ব্যক্তি যার জন্য তার মা নেই।সে বড় হয়েছে মামার ঘরে। অপমান সইছে সব সময়। তবুও একবার এই মানুষ তার খোঁজ নেয়নি।আজ কেন কাঁদছে সে?

ভদ্রলোকের কন্ঠস্বর ডেবে গেছে। শুকিয়েছে অনেক।দাড়ি গোফে মুখের আদল খুব বোঝা যায় না তবে চোখ দুটো যেন মাধুর্যের।
দশ মিনিট ভদ্রলোক মেয়ের হাত ধরেই কাঁদলেন। শুধু বার বার মাফ চাইলেন।মাধুর্য চুপচাপ বসেছিল।কানে বাজছিল তারেকা বানুর অকথ্য গালাগালি, এক্সিডেন্টের দিনের কথা। এই মানুষটা তার মাথায় হাত রাখলে এত কিছু সইতে হতো না।
তবুও মানুষটা বাবা। মৃত্যু পদযাত্রী। মাধুর্য কাঠ কাঠ গলায় বলল সে মাফ করে দিয়েছে।
তার বাবা তার কাছে একটু পানি চাইলো, সে পানিটুক খাইয়ে দিতেই বলল,

“মা! মা গো! আমি খুব খারাপ গো মা। আমাকে তুমি মাফ করিয়ো। আমার কানে একটু কালেমা পড়বা? একটু হাত বুলিয়ে দিবা আমার মাথায়?”

ডক্টর নিষেধ করলেন। কারণ সে অসুস্থ। বাহিরের মানুষ তাকে স্পর্শ করতে পারে না।মাধুর্য তবুও বার দুয়েক হাত বুলিয়ে দিলো মাথায়। কানের কাছে পড়ল কালেমা।

ভদ্রলোক বললেন,
“মা তুমি চলে যাও। আমি একটু ঘুমাবো।”

এই ছিল ভদ্রলোকের শেষ কথা।বাহিরে এসে মামার কাছে শক্ত হয়ে বসেছিল মাধুর্য । যেন কান্না, শ্বাস আটকে রেখেছে সে। তার সামনেই বসেছিল তার বাবার স্ত্রী,সন্তানেরা। সাথে মাধুর্যের চাচাতো ভাই।
একজন অপরজনকে বলে উঠল
“এ তো দেখতে পুরাই মডেলদের মতো। কি ফিগার রে মাইরি!”

তাদের দিকে আরহান কটমটিয়ে তাকাতেই চোখ নামিয়ে নিলো তারা।মিনিট দশেক পর খবর এলো ভদ্রলোক আর নেই।
এবার মাধুর্য কাঁদলো। খুব কাঁদলো। তার কান্নায় সবাই অবাক হয়ে তাকিয়েছিল।ছোট মামা শক্ত করে তাকে ধরে রইলেও আরহান বলল,

“কাঁদতে দিন মামা।আজ ও কাঁদবেই।বাবা- মা মৃত্যুর শোক আজ না হয় কাটবে।আজ ও সত্যিকারের অর্থে এতিম হলো।সারা জীবন খোঁজ না নেওয়া বাবার মৃত্যু আজ ওর সকল কষ্ট দূর করবে।”

বাড়ি ফিরে মাধুর্য সবার সাথেই কথা বলল।বাবার লাশের সাথে তাকে যেতে দেয়নি।তার মামারা চায় না সে বাড়িতে যাক। মাধুর্য মেনে নিয়েছে।
সাকিব নরওয়ে থেকে ফিরে দক্ষিণ আফ্রিকা শান্তিরক্ষা মিশনে চলে যায়৷ কবে আসবে বা কোনো যোগাযোগ সে করে না।সব দায়িত্ব পালন করে। একজন ছেলে,ভাই, স্বামী হলেও সে যেন কই হারিয়েছে।
তারেকা বানু ব্রেইন স্ট্রোক করে বিছানায় প্যারালাইজড।

ঘরের একটা বিছানায় এখন তার সব। যে মুখে খই ফুটতো সেই মুখে এক গ্লাস পানি চাইবার ক্ষমতা নেই।

ইনহান প্রয়োজনীয় কাজে এলাকার বাহিরে ছিল।ফিরে এসে জানতে পারে মাধুর্য ফিরেছে। তাই দেরি না করে সে আগামীকাল তার মনের কথা জানিয়ে দিবে বলে ঠিক করেছে।
সে অনুযায়ী তার জন্য একটা কলাপাতা রঙের শাড়ি এবং কালো গোলাপ কিনেছে।
বাড়ি ফিরেই আরহান কে দেখে তার সাথে আলিংগন করে ইনহান।
তখন চায়ের আড্ডা চলছে। অর্ণির এখন সাত মাস চলে
।খুব দ্রুত নতুন অতিথি আসতে চলেছে।
ঠিক সে মুহূর্তে ইনহানের মা বলে উঠেন,

“কালকের কাল মাধুর্য কে এই বাড়ি নিয়ে আসবো।আগে চার হাত এক করবো এরপর সব। আমার ছেলের ইনকাম কম নয়। তার চাকরি না করলেও চলবে।”

মায়ের কথা শুনে বিষম খায় ইনহান।মা কী করে জানলো?সে তো কিছু জানায়নি। কিন্তু ভুল ভাংতে দেরি হলো না। বিয়ের কথাটা আরহান এবং মাধুর্যের চলছে।

এতদিন পর আরহান নিজের জীবন গুছিয়ে নিবে এটা ভেবে সবাই অনেক খুশি।সব’চে খুশি ইনহানের মা। কারণ তার মেয়ে মারা যাবার পর আরহান একদম ভেঙেছিল।বাহিরে কঠোর হলেও ভিতরে সে ফোকলা ছিল।

ইনহান চুপচাপ বসে আছে সে কী করবে বুঝতে পারছে না কারণ এই মাত্র সে জেনেছে আরহান-মাধুর্য রিলেশনশীপে আছে বছর খানেক।

দেখতে দেখতে সময় পার হয় এক সপ্তাহ। এই এক সপ্তাহ ইনহান বাসায় এসেছে নাম মাত্র। কিছু একটা তার গলায় আটকে আছে। সে খেতে পারে না, ঘুমাতে পারে না।
যে ছেলে সিগারেট হাতে নিতো না সেই ছেলে সাত দিনে চেইন স্মোকার হয়ে গেল।
সিগারেট ছাড়া সে এক কদম চলে না।
আজ বিকেলে মাধুর্য-আরহানের বিয়ে হয়েছে। চারপাশে আলোয় ভরপুর। সেই আলোয় মাঝেও অন্ধকারে দাঁড়িয়ে সিগারেট হাতে নিয়ে তার জীবনের সব’চে তেঁতো স্বপ্নের কথাটা ইনহান বলল
রৌদ্র এবং খুশবুকে।

আরহান ভেবেছিল মাধুর্য বারো হাত কাপড়ে তেরো হাত ঘোমটা দিয়ে অপেক্ষা করছে।কিন্তু রুমে এসে দেখলো সে বসে বসে সিগারেট ভাংছে।
একটা, দুটো, এক প্যাকেট সব প্যাকেট।
আরহান তার পাশে বসে বলল,

“কেন ভাংছো?”
“আজ থেকে খাওয়া বাদ।”
“একবারে বাদ হয় না।”
“হবে। হলেই হবে।”
“বাড়াবাড়ি হচ্ছে।”
“বিয়ের রাতেই ধমকাচ্ছেন?”
“নাহ্।”
“নেশা করা ভালো না।আপনাকে বাঁচতে হবে আমার জন্য।”

মাধুর্যের কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই আরহান তাকে কোলে তুলে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

“তুমি হও গহীন যমুনা। আমি ডুইবা মরি।”

সকালবেলা খুব ভোরে ইনহান সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে ছাদে বসে ছিল।সিগারেট টানছে তার দৃষ্টি তখন সামনের বারান্দায়।

সদ্যস্নাত এক রমনী চুলে গামছা প্যাচিয়ে খোপা করেছে।লাল সাদা হলুদ রঙের মিশেলে শাড়ি। নারী তার হাতের ভেজা তোয়ালে শুকাতে দিয়ে মেলে দিলো ভেজা চুল। মুক্ত চুলগুলো তখন অবাধ্য হয়ে খেলা করছে রমনীর কোমরের দিকে।
টুপটুপ করে ঝরে যাওয়া পানিতে নারীকে দেখছিল ইনহান। ঠিক যেন প্রথম দেখায় দেখেছিল।
হাতের গামছা রোদে মেলে দিতেই আরহান এগিয়ে এলো ঘর থেকে। ঘুমন্ত চেহারায় পিছন থেকে জড়িয়ে নিয়েছে মাধুর্যকে। পাশের দোলনায় তাকে বসিয়ে নিচে বসে পড়ে আরহান। মাথা রাখে মাধুর্যের কোলে।

ইনহান সেদিক থেকে সরে আসে। ফিরে তাকায় না সেদিকে। তাকে মেনে নিতে হবে। এই তার নিয়তি।
কারণ সে নিজ জীবন অভিজ্ঞতা থেকে জানে,

“প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে একটা দীর্ঘশ্বাস থাকে। কাউকে না পাওয়ার দীর্ঘশ্বাস। এই দীর্ঘ শ্বাস ভাটা পড়ে যায় নতুন কাউকে পাওয়ায়। সংসার, ক্যারিয়ার এসবের ভীড়ে না পাওয়া দীর্ঘশ্বাস শুধুই একান্ত হয়৷লুকানো থাকে হাজারো হাসির আড়ালে।”

সমাপ্ত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে