ভুল বুঝনা আমায় পর্ব-০৭

0
1015

#ভুল_বুঝনা_আমায়
[পর্ব – ৭]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

আমি স্যারের সাথে ক্লাসের ভিতরে যেতেই সবাই আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। এবার স্যার সবাইকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে চলে গেলো। আমি গিয়ে একটা ছেলের সাথে বসলাম। ছেলেটার নাম নিলয়। নিলয় আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল – হাই আমি নিলয়।

— হ্যালো আমি ঈশান।

— আপনি কি এই কলেজে নতুন এসেছেন?

— হুম।

— আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড ওকে?

— ঠিক আছে।

— বাসা কোথায় আপনার?

— আমরা না ফ্রেন্ড তো আপনি করে বলার কিছু নাই। তুই করেই বলতে পারেন।

— ঠিক আছে বাসা কই তোর?

আমি নিলয়কে আমার সব পরিচয় দিয়ে দিলাম। একটু পরে স্যার এসে ক্লাস শুরু করলো। স্যার আমাকে দেখে দাড় করিয়ে আমার পরিচয় নিয়ে নিলো। স্যার নিজের ক্লা শেষ করে চলে গেলো। এবার ক্লাসের ছেলে মেয়ে সবাই আমার সাথে পরিচয় হতে আসলো। সবার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে রইলো নুসরাত। একটা জিনিস খুব ভালো লাগলো যে এখানে সবাই খুব ফ্রেন্ডলী। আজকের মতো কোনো রকম ভাবে ক্লাস শেষ করে আমি আর নুসরাত কলেজ থেকে বেরিয়ে হাটতে শুরু করলাম। নুসরাত আমাকে বলল — এই শুনেন আপনি কিন্তু কোনো মেয়ের সাথে বেশি কথা বলতে পারবে না বলে দিলাম।

— কেন?

— জানি না বলবেন না বলছি বলবেন না।

আমি আর কোনো কথা বললাম না। দুজনেই বাসায় চলে গেলাম। বাসায় বসে রইলাম এমন সময় নুসরাত আসলো আমার রুমে বই নিয়ে।

নুসরাত এসে বলল — আমরা এক সাথে পড়াশোনা করবো।

— ঠিক আছে বসেন এখানে।

— এই শুনেন আপনি আমাকে আর আপনি আপনি করে বলবেন না কিন্তু।

— ঠিক আছে আপনিও বলবেন না।

— ওকে।

এবার আমরা দুজনেই পড়তে শুরু করে দিলাম। নুসরাতের পড়াশোনা দেখে আমি অবাক হলাম। ও পড়াশোনায় খুব একটা ভালো না। বার বার আমাকে প্রশ্ন করে। আমিও ওঁকে অনেক কিছুই বুঝিয়ে দিলাম। পড়াশোনা শেষ করে খেতে চলে গেলাম। খাওয়ার টেবিলে গিয়ে বসতেই আংকেল বলল — ঈশান কলেজ পছন্দ হয়েছে?

— জ্বী আংকেল।

— তো আজকে কেমন লাগছে কলেজ?

— খুব ভালো লেগেছে। আজকে প্রথম দিনেই অনেকের সাথে পরিচয় হলো। আমি ভাবছিলাম এখানকার ছেলে মেয়ে গুলা অন্যরকম হবে কিন্তু দেখি সবাই খুব ফ্রেন্ডলি।

— ভালো হলেই ভালো।

— আংকেল আমি যে একটা চাকরির কথা বলছিলাম সেটা?

— চাকরি করতে হবে কেন তোমার? কোনো চাকরি করতে হবেনা তোমাকে। তুমি শুধু মন দিয়ে পড়াশোনা করো।

— আংকেল আমার একটা চাকরি দরকার। আমার জন্য আপনারা আর কতো করবেন? আমার নিজের কাছেও খুব খারাপ লাগে। আমাকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিলে হবে।

— এতোই যখন চাকরি করতে চাও। তাহলে তুমি কাল থেকে আমার অফিসে যাবে। সকালে যেহেতু কলেজ আছে দুপুরের পরে তুমি অফিসে যাবে।

— ধন্যবাদ আংকেল।

— কিন্তু বাবা তুমি এতো চাপ নিতে পারবে? কয়েকমাস পরেই তো তোমার পরিক্ষা

— সমস্যা নেই আংকেল আমার কোনো সমস্যা হবে না। আমি ম্যানেজ করে নিতে পারবো।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে রাতে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বসে রইলাম। নুসরাত একটু পরে আমার রুমে আসে। আমি আর নুসরাত বেরিয়ে পড়লাম। আজকে বাসে করেই কলেজে চলে গেলাম। আজকে একটু তাড়াতাড়ি কলেজে পৌছে গেলাম। নুসরাত বলল — ক্লাস শুরু হতে তো এখনো অনেক সময় বাকি চলো আমরা একটু ঘুরে আসি।

আমিও রাজি হয়ে গেলাম। দু’জনে অনেক্ষন হাটাহাটি করলাম। নুসরাত আমাকে বলল — আচ্ছা তোমার কি কালার পছন্দ?

— আমার নীল আর কালো পছন্দ। আর তোমার।

— এখন থেকে এটাই আমারও পছন্দ।

— মানে?

— কিছু না।

— আচ্ছা ক্লাসের সময় হয়ে এসেছে চলো আবার লেট হয়ে যাবে।

— ঠিক আছে।

তারপর আমি আর নুসরাত এক সাথে কলেজে চলে গেলাম। ক্লাসে গিয়ে দেখি নিলয় আমার জন্য তার পাশে যায়গা রেখে দিয়েছে। আমি গিয়ে বসে পড়লাম। নিলয় আমাকে বলল — দোস্ত নুসরাত কি তোর গার্লফ্রেন্ড বাকি?

— আরে না। নুসরাত আমার ফ্রেশ শুধুই।

— ওহ আচ্ছা। দেখিস আবার ফ্রেন্ড থেকে যেনো অন্য কিছু না হয়ে যায়।

— কি যে বলিস। ওই রকম কোনো কিছুই হবে না।

কলেজে যতই যাচ্ছি ততই মানুষের সাথে পরিচয় বাড়ছে। এখান কলেজে আমার অনেক ফ্রেন্ড হয়ে গেছে। নুসরাত এখন আর আগের মতো আমার সাথেও কথা বলেনা। কলেজে আসে চুপচাপ থাকে। বাসায় ও তেমন কথা হয়না৷ কেন হঠাৎ করে মেয়েটা এতো চুপচাপ হয়ে গেলো বুঝতে পারছিনা। হঠাৎ করে নুসরাতের চুপচাপ হয়ে যাওয়ার বিষয় টা কেন জানি আমার কাছে খুব খারাপ লাগছে। যে মেয়ে সারাক্ষণ আমার সাথে বকবক করতো সে এখন আমার সাথে কথাও বলে না।

ক্লাসে গিয়ে নিলয় কে বললাম — দোস্ত নুসরাত দেখি চুপচাপ হয়ে গেছে। কিছুই বুঝলাম না।

— তুই তো বোকা কি বুঝবি?

— তোর কথাও আমি ঠিক বুঝলাম না।

— নুসরাত তোকে ভালোবাসে। তুই কি দেখিস না তুই যখন মেয়েদের সাথে আড্ডা দেস নুসরাত তোর দিকে কি ভাবে তাকিয়ে থাকে?

— আরে দূর এসব না। বাদ দে তো আমি নিজেই নুসরাতের সাথে কথা বলবো।

যেই ভাবা সেই কাজ। নুসরাতের পুরো কলেজে খুঁজতে শুরু করলাম। একটু পরেই নুসরাত কে দেখলাম একা একা মন মরা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি নুসরাতের কাছে গিয়ে বললাম — নুসরাত তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।

— কি কথা?

— তুমি হঠাৎ করে এমন চুপচাপ হয়ে গেলে কেন? কি হইছে তোমার?

— কই কিছুনা তো!

— সত্যি করে বলো কি হইছে তোমার? তুমি তো এমন ছিলে না আগে! যে মেয়ে সারাক্ষণ বকবক করতো সে এখন চুপচাপ হয়ে গেলো কি ভাবে?

— তোমার জন্য তো ভালো হলো। কেউ এখন আর তোমাকে বিরক্ত করছেনা। সবার সাথেই সময় কাটাতে পারছো।

— মানে?

— কিছু না। আর কিছু বলবে?

— তোমার এসব কথার মানে আমি ঠিক বুঝলাম না নুসরাত। মানেটা আমাকে ক্লিয়ার করো।

— তুমি কি বুঝনা অন্য কোনো মেয়ের সাথে কথা বললে আমার খারাপ লাগে? তুমি কি বুঝনা তোমাকে অন্য কোনো মেয়ের সাথে দেখলে আমার সহ্য হয়না৷ তুমি কি বুঝনা আমি তোমাকে ভালোবাসি।

নুসরাতের মুখে ভালোবাসার কথাটা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। মুখ দিয়ে আর কোনো কথা বলতে পারছিলাম না। আমি আর কোন কথা না বলে কলেজ থেকে সোজা বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে ভাবলাম এখান থেকে আমার চলে যাওয়া টা বেটার হবে। যারা আমাকে এখানে থাকতে দিলো তাদের সাথে আমি কি করে বেঈমানী করতে পারি? তারা যদি এসব যানে তারা তো আমাকে খারাপ ভাববে। আমি চাইনা কারোর বিশ্বাস ভেঙে দিতে। হুম নুসরাতকে আমারো ভালো লাগে কিন্তু আমি চাইনা আমার জন্য নুসরাতের বাবা-মা কোনো কষ্ট পায়। আমি একটা চিঠি লিখে বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলাম কাওকে কিছু না বলে। যে ভাবে খালি হাতে এই বাড়িতে আসছি যেই ভাবে খালি হাতে বের হয়ে গেলাম। শুধু মোবাইল টা রাখলাম। আমি আর ঢাকা থাকতে চাইনা। আমি এই শহর ছেড়েই চলে যাবো। তার জন্য আমি চলে গেলাম রেল স্টেশনে।

অন্য দিকে নুসরাত বাসায় গিয়ে আমকে খুজতে থাকে। পুরো বাসা খুজেও ঈশানকে কোথাও না পেয়ে নুসরাত ঈশানের রুমে আবার ফিরে আসে। এসেই দেখে খাটের উপরে একটা চিঠি।

নুসরাত দেরি না করে চিঠি টা পড়তে শুরু করে দেয়। চিঠিতে লেখা ছিলো,,

— নুসরাত পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। আংকেল আন্টিকেও বলবে আমকে ক্ষমা করে দিতে। দেখো আমি চাইলে তোমাকে মেনে নিতে পারতাম। কিন্তু আংকেল আন্টির বিশ্বাস আমি কি করে ভেঙে দিতে পারি? যারা আমাকে রাস্তা থেকে তুলে এনে তাদের বাসায় থাকতে দিয়েছে আমি তাদের সাথে বেঈমানী করতে পারিনা। ক্ষমা করে দিয়ো। আমি বাসা থেকে চলে গেলাম।

নুসরাত চিঠিটা পড়ে কান্না করতে শুরু করে দেয়৷ আর ঈশানকে ফোন দিতে থাকে। কিন্তু ঈশানের ফোন অফ। নুসরাত একটা এসএমএস দিয়ে নিজের হাত কেটে একটা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। নুসরাতের চিৎকারের শব্দ শুনে নুসরাতের আব্বু রুমে চলে আসে মেসে দেঝে নুসরাত ফ্লোরের উপরে পড়ে আছে। আর নুসরাতের পাশেই সেই চিঠি পড়ে আছে। উনি চিঠি হাতে নিয়ে দেখে এই অবস্থা। তাড়াতাড়ি করে নুসরাতকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। নুসরাত কে হাসপাতালে নিতে নিতে উনি ঈশানের নাম্বারে অনেক বার কল দিলো।

ঈশান ট্রেনের অপেক্ষা করে বসে আছে। এবার ঈশান পকেট থেকে ফোন বের করে আর ফোন চালু করে দেখে অনেক গুলো কল। একটা এসএমএস এসেছে। এসএমএস সিন করে দেখে নুসরাত একটা এসএমএস দিয়েছে। এবার আমি এসএমএস টা পড়তে শুরু করে দিলাম এসএমএস টা ছিল – ঈশান আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবোনা। তুমি ভালো থেকো আমি চলে যাচ্ছি তোমার থেকে অনেক দূরে।

আমি এসএমএস টা দেখে আর নিজের চোখের পানি আঁটকে রাখতে পারলাম না। হঠাৎ করে আমার ফোন বেজে উঠলো ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি আংকেল কল দিয়েছে। আমি ফোন রিসিভ করতেই আংকেল বলল — বাবা ঈশান তুমি কোথায়? নুসরাতের অবস্থা ভালো না ওঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসছি। তুমি তাড়াতাড়ি আসো।

— আংকেল কি হইছে নুসরাতের?

— ও নিজের হাত কেটে ফেলছে এখন আমরা ওঁকে নিয়ে হাসপাতালে আসছি। আমি তোমাকে ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি তুমি চলে আসো৷

আমি ফোন রেখে আংকেলের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী হাসপাতালের সামনে চলে গেলাম।

চলবে??

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে