ভাড়াটে বউ পর্ব-১৩ এবং শেষ পর্ব

0
2322

ভাড়াটে বউ
লেখকঃ সানভি আহমেদ সাকিব
পর্ব ১৩
শেষ পর্ব
.
রিহা সানভির দিকে তাকিয়ে দেখে
ছেলেটার চোখের কোনে জল চিকচিক
করতেছে। সানভি রিহার দিকে তাকিয়ে
আবার চোখ নামিয়ে নেয়।
রিহার প্রচন্ড পরিমান কান্না পাচ্ছে
কিন্তু সে তো ঠিক করেই নিয়েছে আর
আসবেনা। জেদ জিনিসটা বড্ড খারাপ
একটা জিনিস। এই জেদের কারনে জিবন
থেকে অনেক কিছু হারিয়ে যায়।
.
রিহা সানভিকে বলে,
– হ্যাপি বার্থডে স্যার।(রিহা)
– হুমম ধন্যবাদ।(সানভি)
– স্যার আমি আসি তাহলে। ভালো
থাকবেন।(রিহা)
– আচ্ছা যাও।(সানভি)
রিহা কিছুদুর যেতেই সানভি আবার ডাক
দেয়,
– রিহা…?(সানভি)
– হ্যা বলুন।(রিহা)
– তোমাকে কি বেতন দিছি(সানভি)
– জ্বি স্যার।(রিহা)
– আচ্ছা যাও।(সানভি)
.
রিহা বাসা থেকে বের হয়ে হাটতে থাকে।
মনের মধ্যে ঝড় হচ্ছে। বাংলা মুভির মতো।
সবকিছু তো ঠিকই ছিলো তবে কেনো এরকম
মনে হচ্ছে তার। সে তো নিজের ইচ্ছায়ই
আসছে। তবুও অদ্ভুত এক মায়া কাজ করছে
সানভির জন্য। রিহা নিজেকে বুঝানোর
চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু পারেনা।
হাটতে থাকে রিহা বাসার দিকে।
.
ওদিকে সানভি ভাবতেছে,
কি হলো এতোকিছু করে? নিজের সবটা
দিয়ে ভালোবাসার পরও সে দুরে চলে
যাচ্ছে। আমি আর এই শহড়ে থেকে কি
করবো। রিহা কেনো এমন করলো? কখনো
কোনো অন্যায় আবদার তো করিনি। একটু
ভালোবাসা চেয়েছি। একটু ভালোবাসতে
চেয়েছি। এইজন্যই এতোকিছু?
এতোকিছু ভেবে কি হবে? রিহা তো আর
আমার নাই। অবশ্য কখনো ছিলোও না। যাই
হোক one side love তো অনেক হয়। আমিও
নাহয় একাই ভালোবাসলাম।
.
চোখের কোনে জমা জলগুলা অঝোড়ে ঝড়তে
লাগলো।
কান্নার শব্দে পুরো রুমটা এক অন্যরকম
অবস্থার জানান দিচ্ছে। হালকা বাতাসে
শব্দটা আরো বেড়ে যায়।
রিহার রেখে যাওয়া নিল শাড়িটার দিকে
চোখ পড়তে আরো বেশি কান্না পায়
সানভির।
বারবার নিশ্চুপ হয়ে যায় সানভি,
নাহ আর কাদবে না সে। পরক্ষনেই আবারো
কেদে ফেলে।
ভালোবাসার মানুষ যখন অনেক দুরে চলে
যায় তখন এমনই হয়। নিজের থেকেও বেশি
ভালোবাসা মানুষটাকে যখন আর দেখতে
পাবোনা তখন এমনই হয়।
ইমোশন গুলা তো তাকে ঘিরেই। যদি সেই
না থাকে তাহলে তো এমন হবেই।
সবার কপালে ভালোবাসা থাকে না।
আমি কি তাহলে সেই মানুষদের দলেই??
হয়তোবা।
.
সানভি ড্রয়ারটা খুলে সিগারেট বের করে।
এতে কিছুটা হলেও ইমোশন কমবে।
সানভি সিগারেট খেতে থাকে।
ওদিকে রিহা বাসায় পৌছে আরেকটা
খুশির খবর পায়।
আগামি শুক্রবার তার বিয়ে।
নিজেকে খুব ভাগ্যবতি মনে হচ্ছে তার।
ছেলেটা ভালোই একটা জব করে।
বিয়ের পর রিহার মা আর বোনকে তার
নিজের বাড়িতেই রাখবে।
পুরো ফ্যামিলি সহ একটা বাসায়ই থাকবে।
সানভি কি এটা করতো না??
এই কথা তো সানভি তাকে আরো অাগেই
বলেছিলো।
রিহা ভাবতে থাকে আর নিরবে কাদতে
থাকে।

রিহা নিজেই বুঝতে পারতেছেনা কেনো
এমন করলো সে।
সানভিকে ভালবাসে তারপরও কেনো বলতে
এতো দ্বিধা?
কিসের এতো ভয়? যেখানে সানভি তাকে
ভালোবাসে।
নিজেকে প্রশ্ন করে কোনো উত্তর খুজে
পায়না রিহা।
নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে আগামি
শুক্রবার তার বিয়ে।

সারারাত কান্না করে রিহা।
দম বন্ধ হয়ে আসে তার। সানভিকে ছাড়া
বাচতে পারবে না সে। নিজের অজান্তেই
অনেকটা আপন করে নিয়েছে সানভিকে
সে। যা হয় হবে তবে সানভিকে ছাড়া
কাওকেই মেনে নিতে পারবেনা সে।
.
ওদিকে সানভি নিজেকে হাজারবার বলেও
বুঝাতে পারেনা যে রিহা তার ভাগ্যে
নাই। রিহা কখনো তার হবেনা। যখন তার
কিছুই ছিলোনা তখনো হয়নি আজ সব আছে
তারপরও হলোনা। তাহলে আর কিভাবে
হবে।
নেশায় ডুবে যায় সানভি।
.
ওদিকে রিহা ঠিক করে নিয়েছে
সানভিকেই ভালোবাসবে।
ওকে ছেড়ে কোথাও যাবেনা সে।
সকালবেলা উঠেই রওনা দেয় সানভির
বাসার দিকে।
রিহা তার আম্মুকেও বলে দিয়েছে সব।
তার মাও রাজি। রিহার খুব খুশি আজ তবে
তারপরও ভয় কাজ করেতেছে। যদি সানভি
না মেনে নেয় তাহলে??
.
সানভির বাসার সামনে এসে দেখে
দাড়োয়ান বসে বসে ঝিমুচ্ছে গেট খুলে।
রিহা প্রতিদিনের মতো দরজায় ধাক্কা
দেয় কিন্তু আজকে দরজা বন্ধ।
ভেতর থেকে না বাইরে তালা দেওয়া
খেয়াল করেনি সে।
.
– দড়জা বন্ধ কেনো?(রিহা)
– স্যার তো নাইই।(দাড়োয়ান)
– নাই মানে? কোথায় গেছে?? (রিহা)
– জানিনা তবে সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে গেছে
আর আসবেনা বলছে।(দাড়োয়ান)
– মানে? (রিহা)
– সকালবেলা গাড়ি বের করে চলে গেছে।
আমি আর কিছু জানিনা।(দাড়োয়ান)
.
রিহার মনের ভিতর ঝড় শুরু হয়ে গেছে।
তবে কি হারিয়ে ফেললো সে সানভিকে??
কল দিচ্ছে কিন্তু ফোন বন্ধ।
রিহা কান্নায় ভেঙে পড়ে।
নিজেকে নিজেই ধিক্কার দেয়।
নিজের দোষেই হারিয়ে ফেললো আজ
সানভিকে।
.
রিহা কাদতে কাদতে বাসার দিকে পা
বাড়ায়।
হঠাৎ কেও হাতটা চেপে ধরে।
রিহার হার্টবিট বেড়ে গেছে। পার্থনা
করতেছে যাতে পেছনে সানভি থাকে।
ভয়ে ভয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে
দাড়োয়ান।
সব আশা ভেঙে চুরমার হয়ে যায় রিহার।
মনটা আবারো ভেঙে যায়।
– এইটা আপনার জন্য।(দাড়োয়ান)
একটা চিরকুট।
রিহা চিরকুটটা খুলে দেখে তাতে লিখা,
– ছাদে আসো দাড়োয়ানের কাছে চাবি
আছে।(সানভি)
চিঠিটা পড়ামাত্রই রিহার মুখে হাসি ফুটে
উঠে।
দাড়োয়ানের কাছ থেকে চাবি নিয়ে
কিছুটা দৌড় দেয় রিহা।
প্রত্যেকটা সিড়ি যেনো জিবন বদলে
যাওয়ার একেকটা ধাপ।
এমন মনে হচ্ছে তার।
ভয় খুশি আর উত্তেজনায় নিজেকে হারিয়ে
ফেলেছে রিহা।
রিহা নিজের মধ্যে নেই। ছাদে উঠেই কি
হবে বা কি হচ্ছে কিছু না ভেবেই
সানভিকে জড়িয়ে ধরে রিহা।
কিন্তুু সানভি কোনো রেসপন্স করছেনা।
যেভাবে দাড়িয়ে ছিলো ঠিক সেভাবেই
দাড়িয়ে অাছে।
রিহা আবারো ভয় পেয়ে যায়।
তবে কি মেনে নিবেনা সানভি??
সানভি রিহাকে সড়িয়ে দেয়,
– আগামি শুক্রবার তোমার বিয়ে তাইনা?
(সানভি)
– হ্যা কিন্তু আপনি কিভাবে জানলেন??
(রিহা)
– ছেলের নাম জানো?(সানভি)
– না জানার প্রয়োজন মনে করিনি।(রিহা)
– কেনো??(সানভি)
– কারন সে যেই হোকনা কেনো আমি তাকে
বিয়ে করবোনা।(রিহা)
– কেনো করবেনা?(সানভি)
– জানিনা।(রিহা)
– জানতে হবে নইলে বিয়ে তোমাকে করতে
হবে।(সানভি)
– কারন আমি আপনাকে ভালোবাসি।
(রিহা)
– কি বললা বুঝিনাই??(সানভি)
– আমি আপনাকে ভালোবাসি আর
আপনাকেই বিয়ে করবো।জানেন গতকাল
সারারাত আমি কাদছি।আমি বুঝতে পারছি
আমি আপনাকেকে ছাড়া থাকতে
পারবোনা। প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন।
আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো শুধু একটু
ভালোবাসার সুযোগ দিয়েন।(রিহা)
– আমারো তো তোমাকে ভালোবাসার
ইচ্ছা ছিলো কিন্তু বিয়ে তো হবেনা।
(সানভি)
– কেনো হবেনা??(রিহা)
– তুমিইতো বললা সে যেই হোকনা কেনো
বিয়ে করবেনা।(সানভি)
– মানে??(রিহা)
– তোমার আম্মুকে ফোন দাও।(সানভি)
– কেনো??(রিহা)
– তোমার আম্মুকে ফোন দিয়ে পাত্রের
নাম জিজ্ঞেস করো।(সানভি)
.
রিহা কিছু বুঝতে পারতেছে না।
তবে আন্দাজ করতে পারতেছে কি ঘটবে
এরপর।
রিহা কাপা কাপা হাতে তার আম্মুর
নাম্বার ডায়াল করে।
.
সানভির দিকে তাকিয়ে দেখে মুচকি
হাসতেছে।
– হ্যালো।(রিহা)
– হ্যা মা কই তুই? সকাল থেকে উধাও।(মা)
– যেখানেই থাকি। তুমি যার সাথে বিয়ে
ঠিক করছিলা তার নাম কি??(রিহা)
– তুই তো মানা করলি বিয়ে করবিনা কাকে
নাকি ভালোবাসিস।(মা)
– আরে বলোতো।(রিহা)
– শাহরিয়ার।(মা)
.
রিহা ফোন কেটে দেয়।
– কি বললো?(সানভি)
– শাহরিয়ার।(রিহা)
– আমার নাম ভুলে গেছো??(সানভি)
– তুমিতো সানভি।(রিহা)
– আমি শাহরিয়ার সানভি।(সানভি)
.
রিহা মাথা নিচু করে ফেলে।
সানভির নামটা পর্যন্ত তার মনে নেই।
থাকারও কথা না।
লাস্ট ৪ বছরে এই নামটা কখনো মনে হয়নি
তার।
.
– বউ হবে??(সানভি)
– হুমম।(রিহা)
– ভাড়া করা বউ??(সানভি)
– না এইবার সত্তি সত্তি বউ হবো।(রিহা)
– হিহিহি।
.
সানভি রিহাকে জড়িয়ে ধরে।
রিহা কাপতে থাকে। শীত করতেছে তার।
সানভি রিহাকে জড়িয়ে নেয়
ভালোবাসার চাদরে।
অদ্ভুত রকমের ভালোলাগা কাজ করে
রিহার।
চোখ বন্ধ করে পরম শান্তিতে সানভির বুকে
মাথা রেখে হার্টবিট অনুভবব করে রিহা।
সানভি রিহার কপালে আলতো করে একটা
চুমু একে দেয়।

কিছুক্ষন এভাবে থাকার পর হঠাৎ সানভি
রিহাকে ঠাসস করে একটা চড় মারে,
রিহা হতবাক হয়ে যায়। বুৃঝতে পারেনা
কেনো মারলো তাকে।
গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে
থাকে সানভির দিকে।
চোখে জল আর প্রশ্ন কেনো মারলো তাকে।
– আরে কেনো মারছি শুনো।(সানভি)
– কেনো?(রিহা)
– এতোদিন কষ্ট দিছো তাই এই একটা চড় না
দিলে আমার পাঠকরা আমাকে পিটাইবো।
(সানভি)
– মানে? আমার চাইতে তোমার পাঠক বড়??
(রিহা)
– তা না। আসলে বুঝোই তো বিয়ের পর তো
আর মারতে পারবো না তাই এখনি মেরে
নেই।(সানভি)
– কুত্তা বিলাই বান্দর দাড়া আজকে তোরে
পিটাবো আমি।(রিহা)
.
রিহা সানভিকে ধাওয়া করে।
সানভি নিচে নেমে আসে।
রিহা সানভির কাছে আসতেই হাত চেপে
ধরে রিহার।
বাকিটা ইতিহাস।
কেও একজন বলছিলো হাত চেপে ধরা
দন্ডনিয় অপরাধ তাই আর লিখলাম না।

সমাপ্ত।।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে