ভালো লাগে ভালোবাসতে-পর্ব ৬

0
2285

#ভালো লাগে ভালোবাসতে
#পর্ব ৬
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

বিয়ে বাড়ি মানেই একরাশ হৈ হুল্লোড়,অযথা হাসাহাসি আর বাচ্চাদের ছোটাছুটি।কোনো কাজ ছাড়াই যদি বসে বসে এসবকিছু উপভোগ করা যায় তবে বিয়ে বাড়ি ব্যাপারটা মন্দ না।আমিও এখন এমনি একটি বিয়ে বাড়িতে বসে বসে মুড়ি মাখানো খাচ্ছি।শুধু পেয়াজকুঁচি,কাঁচা মরিচ আর সরিষার তেল দিয়ে বানানো।গাঁদা খানেক বানানোর জন্য সেই উপাদানগুলোও খুবই কম মাত্রার।কিছু করার নেই বলেই জানালার পাশে বসে ঘাসের মতো এগুলো চিবিয়ে যাচ্ছি।আমার খানিক দূরে সাফা বড় ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে একটি লেহেঙ্গার নিচের পার্ট কোমড়ে ধরে রেখে ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে দেখে যাচ্ছে।
সাফা আমার কুট্টি কালের ফ্রেন্ড।ওদের মূল বাড়ি ঢাকাতেই হওয়ায় ওর আমার মতো হোস্টেলে থেকে পড়তে হয় না।সাফার বাবা যখন গাজীপুরে পোস্টিং এ ছিল তখন থেকেই আমাদের দুজনের বন্ধুত্ব হয়।সাফার বড় ভাই সাজেদ ভাইয়ার বিয়ে।সেই সুবাদেই অ্যান্টি মানে সাফার মা আমাকে এক সপ্তাহ আগেই এখানে এনে রেখেছে।
সেই ঘটনার পর থেকে আমি আর নিদ্র ভাইয়ার সামনে বেশি পড়িনি।যেভাবে ছল করে আমাকে বিয়ে করে নিল সেকারণে তার প্রতি মনে এখন আরো দ্বিগুণ ভয় চেঁপে বসেছে।আবার আমাকে দিয়ে কখন না কি করায়!নিদ্র ভাইয়াও এখন খুব ব্যস্ত থাকে।হবারই কথা তাদের এখন পড়ালেখা জীবনের লাস্ট ইয়ার চলছে।তাই দেখা খুব কমই হয়।
কিন্তু মাঝে মাঝেই হুটহাট করে গভীর রাতে ফোন দিয়ে বলবে,’ফোনটা তোমার কানের কাছে পাঁচ মিনিট ধরে রাখো তো।আমি পড়তে পড়তে টায়ার্ড,আমার এখন একজন কথা বলার মানুষ দরকার।’
বেশিরভাগ সময়ই পাঁচ মিনিট হবার আগেই আমি ঘুমিয়ে পড়ি কিন্তু সকালে উঠে দেখি কল এখনো চলছে।আমি উঠে হ্যালো বলার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে ফোনটা কেটে দেওয়া হয়।
মানুষটা কি রোবট না কি বুঝি না।এত্ত পড়ে কিভাবে!

-‘এই সুপ্তি দেখতো লেহেঙ্গাটা দেখতে কি ভালো লাগছে?’
-‘হুম।’
সাফা মুখ ফুলিয়ে বলল,’কিসের হুম?লেহেঙ্গাটা তো ফিটই হয় নি!ঐ দর্জি ব্যাটাকে মন চাচ্ছে পঁচা পানিতে ধরে চুবাই।এখন আমি গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে এই ঢুলা ঢুলা এইটা কিভাবে পড়ে যাবো?’
-‘হুম।’
-‘আবারো হুম!তুই আমার কথা শুনছিস?’
-‘আরে একটুই তো ঢিলা।এতটুকুতে কি হয়?’
-‘এতটুকুতে কি হয় মানে!অনেক কিছু হয়।তোর তো এসব নিয়ে কিছুই যায় আসে না।তুই কি পরবি কিছু ঠিক করেছিস?আজকে কিন্তু মেয়ে বাড়িতে তুই একটা চমক পাবি।’
আমি আবারো হুম বলে বিছানায় গিয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম।সাফা হন্তদন্ত হয়ে এসে আমার কাঁথার কোণা ধরে টানাটানি শুরু করে দিল।আমিও আমার শেষ অবলম্বনের মত কাঁথাকে শক্ত করে ধরে রাখলাম।
সাফা বলতে লাগলো,’এই সুপ্তি তুই কি এখন ঘুমাবি নাকি!সন্ধ্যা বেলা ঐ বাড়ি যাবো গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে আর এখন তুই ঘুমাবি।চল না পার্লারে যাই।’.
অবশেষে আমার ঘুমের কাছে ব্যর্থ হয়ে সাফা হাল ছেড়ে দিল।এখন জেগে থাকলে এই মেয়ে জামা,জুয়েলারি নিয়ে আমার মাথা খারাপ করে দিবে।আর আমার ঘুমও পাচ্ছে বেশ।তাই যখন যাবো সেটা তখন এর উপর ছেড়ে দিয়ে আমি পাড়ি দিলাম ঘুমের রাজ্যে।

আমার ঘুম ভাঙলো শেষ বিকেলের একটু আগে।
ঘুম ঘুম চোখ হাত দিয়ে কঁচলে রুমের বাইরে গিয়ে দেখলাম সবাই সাজগোঁজে ব্যস্ত।আঙ্কেল মানে সাফার বাবা রাগে গজগজ করছে।ফুলের ঝুরিটা কার ধাক্কা লেগে যেন সব ফুল মাটিতে পড়ে গেছে সেটা নিয়েই সে চেঁচামেচি করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলছে।
আমি আঙ্কেলের সামনে পড়তেই সে মুখে হাসি এনে বলল,’মামণি তুমি এখনো রেডি হওনি কেনো?তাড়াতাড়ি করো যাও।ভালো করে সাজগোজ করতে হবে না!’
আমার জায়গায় এখন অন্য কেউ হলে আঙ্কেল ধমক দিয়ে তার কান বয়রা বানিয়ে ফেলতো।সে খুব বদমেজাজী।কিন্তু অদ্ভুত ভাবে আঙ্কেল আমাকে খুব স্নেহ করেন।সবসময় হাসি মুখে কথা বলে।
আমি গিয়ে রেডি হওয়া শুরু করলাম।সাফা সেই কখন থেকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একবার চুল খুলছে আবার বাঁধছে।দেরিতে আসলেও আমি ওর আগেই রেডি হয়ে গেলাম।আমি আজকে পড়েছি সোনালী রঙের মোটা পাড় দেওয়া হলুদ রঙের লেহেঙ্গা।উপড়ের জামাটাও পুরো সোনালী।
দুই হাত মুঠ করে গোল্ডেন কালার স্টোনের চুড়ি আর কানে পড়েছি গোল্ডেন কালারের স্টোনের মাঝারী সাইজের দুল।চুলগুলো মাঝখানে সিঁথি করে খোলা রেখেছি।সোনালী লেজ দিয়ে ঘেরা হলুদ ওড়নাটা ডান পাশে মেলে রেখে বাম দিকে অর্ধেক চুল সামনে এনে ঠোঁটে হালকা গোলাপী লিপস্টিক আর চোখে হালকা কাজল।ব্যাস,আমার সাজ কমপ্লিট।

সাফাকে বিরক্ত হয়ে বললাম,’তোর এখনো হয়নি?শুরু তো করেছিস আমার আগে!’
-‘দেখ না সুপ্তি,গোলাপী লিপস্টিক একদম ম্যাচ করছে না।লাল টা দিবো?’
-‘আমি যদি না ও বলি তবুও তো তুই দিবি।তাহলে এখনই দিয়ে ফেল।’
এরই মাঝে আঙ্কেল এসে সাফাকে দিল এক ধমক।বলল,’আজকে কি তোর বিয়ে দিতে যাচ্ছি যে সাজতে এতক্ষণ লাগে!দুই মিনিটের ভেতর নিচে না আসলে তোকে রেখেই কিন্তু চলে যাবো।’

মেয়ে বাড়িতে আমরা গিয়ে পৌঁছালাম সন্ধ্যার একটু পরেই।আমরা যেমন সবাই হলুদ রঙের পড়েছি তেমন এখানে সবাই পড়েছে টিয়া রঙ।
ডেকোরেশনও হালকা হলুদ আর টিয়া মিক্স করে করা হয়েছে।বাহারী রঙের লাইটের আলোয় চারপাশ খুব সুন্দর লাগছে।আমাদের সবাইকে বরণ করার জন্য দাঁড় করানো হলো প্রধান ফটকে।সাজেদ ভাইয়াকে তার শালা শালীরা বরণ করে নিচ্ছে।এই ফাঁকে সাফাও একটু আয়না দেখে ঠিকঠাক হতে লাগলো।আমি ওকে হাতে বারি দিয়ে থামালাম।সাফা বলল,
-‘আরে দোস্ত দাঁড়া একটু ঠিক হয়ে নেই।ভেতরে বেয়াইরা আছে না!তুই ও একটু ঠিকঠাক হয়ে নে,বলেছিলাম না তোর জন্য চমক আছে।’
আমি ওকে দাঁত ভেটকিয়ে একটা হাসি দিয়ে চুপ করে রইলাম।
কিছুক্ষণ পর বরণ শেষ হলে ভেতরে যাওয়ার পথে দেখলাম নিদ্র ভাই,তামিম ভাই,রাফি ভাইসহ আরো অনেকে ছেলেপক্ষের লোকের উপর ফুল আর গোলাপ জল ছিটাচ্ছে।নিদ্র ভাইয়াকে দেখে আমি একটুও চমকালাম না।যেনো তার এখানে থাকাটাই স্বাভাবিক।আমার সব চমক হওয়ার ক্ষমতা সে ভেঙে ফেলেছে।তার দ্বারা সবই সম্ভব।এই অচেনা বিয়ে বাড়িতে দাঁড়িয়ে ফুল ছিটানোও সম্ভব।
সাফা আমাকে পাশ থেকে খোঁচা দিয়ে বলল,’কি চমকে গেলি না!আরে নিদ্র ভাই আর তোর খুনসুটি ছাড়া কিছু জমে নাকি?ইশ!তোরা যদি সবসময় এভাবেই লেগে থাকতি।’
আমি সাফাকে চোখ গরম করে বললাম,’তার মানে তোর দোয়াতেই এসব হয়েছে,আমাকে এমন ঝামেলায় পেঁচাতে হলো।তোর খবর তো আমি পড়ে নিচ্ছি।আগে বল এরা এখানে কি করছে?’
সাফা লজ্জায় রাঙা হয়ে বলল,’তামিম ভাইয়ার ছোটো বোনই তো আমার ভাবী।’
-‘এই খবর আমাকে বললি না কেনো?’
-‘ঐ যে তোকে চমকে দিতে চাইছিলাম।’
তামিম ভাই সাফাকে উদ্দেশ্য করে বলল,’বেয়াইন,আপনাদের ঘরে তো মনে হয় কেউ রুটি খেতে পারে না তাই না?’
-‘পারবে না কেনো?’
-‘কারণ আপনাকে তো দেখে মনে হয় ঘরের সব আটা ময়দা আপনিই মুখে মাখেন।’
সব ছেলেরা হাসাহাসি শুরু করে দিল।সাফাকে আর পায় কে!মুখ ফুলিয়ে চলে গেল।
তামিম ভাইও চলে গেল ওর পিছু পিছু।আমার চোখ পড়ল নিদ্র ভাইয়ার উপর।সে আজ টিয়া রঙের পান্জাবীর উপড়ে হলুদ রঙের কোটি পড়েছে।পান্জাবীর হাতা ফোল্ড করে রাখা আর হাতে দামী ব্রান্ডের ঘড়ি।সবসময়ের মতই তাকে দেখতে ভীষণ ভালো লাগছে।দেখলাম নিদ্র ভাইয়া কেমন শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ফুল ছিটিয়ে যাচ্ছে।
তার দৃষ্টি শান্ত হলেও আমি বুঝে গেলাম সে আমার উপর রেগে আছে।আমি ভাবতে লাগলাম আমি এমন কি করেছি।ভাবনার কোনো কুল না পেয়ে সেখান থেকে কেটে পড়াটাই শ্রেয় মনে করলাম।আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছি কিন্তু তার আগেই নিদ্র ভাইয়া আমার সামনে এসে বলল,’তোমার যে একটা ফোন নামের কিছু আছে সেটা কি মাথায় আছে?’
আমি একটি ঢোক গিলে বললাম,’থাকবে না কেনো?’
-‘তাহলে কেউ ফোন করলে যে কষ্ট করে সেটা রিসিভও করতে হয় এটা কি ভুলে গেছো?’
আমি পার্স থেকে ফোনটা বের করে দেখলাম নিদ্র ভাইয়ার অনেকগুলো মিসডকল।
আমি বললাম,’স্যরি ভাইয়া।আমি আসলে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।’
-‘হ্যাঁ তোমারই তো ঘুমের সময়।আমার ঘুমের তো বারোটা বেজে গেছে।’
-‘ভাইয়া…..
এর মাঝেই সাফার একটা কাজিন এসে আমাকে বলল,’সুপ্তি তোমরা কি রিলেটিভ।’
তার কথা শুনে তো আমার আত্মা শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা।বুঝে ফেললো না তো যে আমাদের বিয়ে হয়েছে!
আমি বললাম,’কেন বলুন তো?’
-‘নাহ্ মানে তুমি ভাই ভাই করছো তাই আমি ভাবলাম হয়তো তোমরা ভাই বোন।’
এটা বলে সে চলে গেল।আমি তো স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লাম।বিয়ে হয়েছে জানার থেকে ভাই বোন জানাটাও বেটার।
নিদ্র ভাইয়া থমথম গলায় আমাকে বলল,’তুমি আমাকে এখনও ভাইয়া বলে ডাকো কেনো?আমাদের না বিয়ে হয়েছে!’
আমি চোখ গোল গোল করে বললাম,’আপনিই তো বলেছিলেন এটা এমনিই বিয়ে।’
-‘এমনি বিয়ে হলে কি বিয়ে তো!তোমার ভাইয়া ডাকের জন্য যে আমাদের সবাই ভাই বোন ভাবছে।’
-‘আমাদের যে বিয়ে হয়েছে এটা জানার থেকে তো ভাই বোন ভাবাও ভালো।’
-‘কেনো আমাদের বিয়ে হয়েছে এটা জানলে কি হবে?’
তার কথা শুনে মনে মনে বললাম,’হ্যাঁ জানলে কি হবে!তুমি তো তোমার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে আরামছে ফুটে যাবে আর মাঝখান থেকে আমার জীবনে আর ভালোবাসার মানুষ আসবে না।’
আমি তো যে করেই হোক কাউকে বুঝতে দিব না এই বিয়ের কথা।

সবাই একে একে বর কনেকে হলুদ লাগাতে লাগল।যারা কাপল তারা হলুদ একসাথে গিয়ে লাগাল।একসময় আমি গেলাম হলুদ লাগাতে।আমি যাওয়ার সাথে সাথেই নিদ্র ভাইয়াও আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল হলুদ নিয়ে।আমি ফিসফিস করে বললাম,’আপনি এখানে এখন আসলেন কেনো?’
সে আমার থেকেও বেশি ফিসফিস করে বলল,’চলো তো,এখন সময় নেই।সবাইকে তাড়াতাড়ি হলুদ লাগাতে বলেছে।’
আমি সাজেদ ভাইকে হলুদ লাগিয়ে কনেকে লাগাতে গেলাম।তার নাম দিয়া।দিয়া ভাবী আমার হাত ধরে মিষ্টি হেসে বলল,’তুমিই কি সেই সুপ্তি?’
সে এভাবে বলল যেনো আমি কোন সেলিব্রেটি।
আমি কিছুই বললাম না,শুধু একটা হাসি দিলাম।
দিয়া ভাবী হেসে বলল,’সুপ্তি,এটা কিন্তু ঠিক না আমি আজকে বউ আর আমার থেকে বেশি সুন্দর তোমাকে লাগছে।’
দিয়া ভাবী দুই হাত দিয়ে আমাদের দুজনের গালে একটু হলুদ লাগিয়ে দিল।
নিদ্র ভাইয়া দিয়া ভাবীকে হলুদ লাগিয়ে যেতে নিলে ভাবী তার পান্জাবীর কোনা ধরে বলল,’নিদ্র ভাইয়া আজকে কিন্তু নাচ গান দুটোই করতে হবে।আর তুমি কিন্তু এখনো নিজের মুখে বললে না।’
তারপর আমার দিকে একটু তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিয়ে হাতের আঙ্গুল তুলে চোখ দিয়ে ইশারা করে বোঝাল,’দারুণ চয়েজ।’
নিদ্র ভাইয়া মুচকি হেঁসে দিয়া ভাবীর মাথায় একটা টোকা দিয়ে চলে গেল।

সাজেদ ভাইকে ভাবীর পাশ থেকে উঠিয়ে আমরা মেয়েরা সব ভাবীর সাথে ছবি তুলতে লাগলাম।
এর মাঝে হঠাৎ মিউজিক বেঁজে উঠল।আমরা সবাই সেলফি তোলা বাদ দিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলাম নিদ্র ভাইয়া ডান্স ফ্লোরে নেমে এসেছে।
একে একে তার বন্ধুরাও সব যোগ দিল।মিউজিক প্লেয়ারে গান চলছে,
♪♪দো ন্যায়ন সিতারে হে চান্দ সা মুখড়া
কেয়া কেহনা উসকা….আফরিন!
দাওয়াত মে যেইসে হো শাহী টুকরা
উসকে যেসি না ক্যোয়ি নাজনীন
শাহী জোড়া পেহ্যান কে
আয়ী যো বান থান ক্যা
য়োহী তো মেরি সুইটহার্ট হে
শারমায়ী সি বাগাল মে
যো বেঠি হে দুলহান ক্যা
য়োহী তো মেরি সুইটহার্ট হে।♪♪

নিদ্র ভাইয়া খুব সুন্দর ডান্স করল।এতক্ষণে এটাকে একটা প্রকৃত বিয়ে বাড়ি মনে হচ্ছে।তানিয়া আপু এর মাঝে তাদের সাথে একটু যোগ দিতে গিয়েছিল কিন্তু নাঈম ভাইয়া তার পায়ে পাড়া দিয়েছে।এই নিয়ে তাদের আবার মান অভিমান পর্ব চলছে।
এত এত নাচ গানে হয়তো আমাদের সাজেদ ভাইয়ারও মন উৎসুক হয়ে উঠল।তাই সে একটু ড্যাশিং ভাব নিয়ে স্টেজে যাওয়ার আগেই পা পিছলে আঙ্কেলের উপর পড়ে গেল।আঙ্কেল দাঁত কড়মড় করে বললেন,’অপদার্থ।এখন নাচতে গিয়ে আমার অবশিষ্ট মান সম্মানও খুইয়ে আয়।’
তার ধমকে চুপসে গিয়ে সাজেদ ভাই আর নাচার সাহস করলো না।
সাজেদ ভাইয়ার এক বন্ধু আছে নাম মামুন।নিজেকে মহা হ্যান্ডসাম ভেবে মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করাই তার স্বভাব।সে আমাদের সব মেয়েদের মাঝে দাঁড়িয়ে ভাব দেখাতে লাগল।আমি মামুন ভাইকে বললাম,’কি ব্যাপার ভাইয়া,সবাই তো ডান্স করে স্টেজ কাঁপিয়ে ফেলছে।আপনি একটু ডান্স করছেন না কেনো?’
মামুন ভাই ব্যাপক ভাব নিয়ে বলল,’এটাই তো চিন্তা সুপ্তি,সবাই তো শুধু স্টেজ কাপাচ্ছে আমি গেলে স্টেজ ভেঙে যাবে।’
সোমা আপু বলে উঠল,’হ্যাঁ ডান্স না করে শুধু লাফালাফি করলে তো স্টেজ ভাঙবেই।’
আমরা সবাই হেসে দিলাম।
মামুন ভাই সেভাবে ভাব নিয়েই বলল,’মেয়েদের হাসলেই বেশি সুন্দর লাগে।তার জন্য তারা অর্থহীন জোকস ক্রিয়েট করে হাসতেই পারে,আই লাইক ইট।’
সাফা বলে উঠলে,’মামুন ভাই আপনার স্টেজের চিন্তা করতে হবে না।যান ডান্স না পারলে একটা গান গেয়ে শোনান।’
মামুন ভাই বলল,’ওকে গার্লস।তোমরা যেহেতু আমার পারফরমেন্স দেখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছো তোমাদের জন্য আমি এতটুকু করতেই পারি।’
মামুন ভাই স্টেজের মাঝ বরাবর দাড়িয়ে এই রাতের বেলা সানগ্লাস চোখে দিয়ে মাইক হাতে নিয়ে একটি হিপ হপ সং গাইতে লাগল।তার অদ্ভুত ভঙ্গিতে গাওয়া গান শুনে আমরা সব শুধু মুখ টিপে হাসছি।আঙ্কেল স্টেজ বরাবর পিঠ দিয়ে বসে জুস খাচ্ছিলো।মামুন ভাইয়ার গান শুনে না দেখেই ধমক দিয়ে বলে উঠল,’এমন ছাগলের মত ম্যা ম্যা করছে কে রে!কানটা ঝালাপালা করে দিল।’
সব মেয়েরা হো হো করে হেসে দিল।মামুন ভাই গান থামিয়ে মুখ ভার করে নিচে নেমে আমাদের কাছে এসে বলল,’এই ওল্ড পিপলদের নিয়ে এই সমস্যা!মডার্ণ সংয়ের কিছুই বুঝে না।’
আমরা আবার সবাই হেসে দিলাম।আমার হাসতে হাসতে চোখ পড়ল নিদ্র ভাইয়ার দিকে।সে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হসে ভ্রু উঁচা করে ইশারা করছে।আমিও অন্য দিকে তাকিয়ে একটু মুখ ভেঙ্গিয়ে দিলাম।
সবাই নিদ্র ভাইয়ার গান শুনার জন্য নিদ্র নিদ্র করছে।সবার রিকোয়েস্ট রাখতে সে স্টেজে উঠে গেল তার সেই কালো গিটার কাঁধে ঝুলিয়া।
গিটারে এক সুন্দর মিষ্টি সুর তুলে গাইতে
লাগল,
ভাললাগে হাঁটতে তোর হাত ধরে
ভাবনা তোর আসছে দিন রাত ভরে
এলোমেলো মনটাকে কি করে আর রাখে
কেন আমি এত করে তোকে চাই….
পারবো না.. আমি ছাড়তে তোকে
পারবো না.. আমি ভুলতে তোকে
পারবো না.. ছেড়ে বাঁচতে তোকে
হয়ে যা না রাজি একবার…..

ভাললাগে চাইলে তুই আড় চোখে
চাইছি তোর অই দু চোখ আর তোকে
এলোমেলো দিস করে,সারাটা দুপুর ধরে
বসে বসে বুনে চলি কল্পনায়…..
পারবো না..আমি ছাড়তে তোকে
পারবো না..আমি ভুলতে তোকে
পারবো না..ছেড়ে বাঁচতে তোকে
হয়ে যা না রাজি একবার….

লাইটিংয়ে পরিষ্কার আলো বন্ধ করে এখন হালকা নীল গোলাপী আলো ছড়াচ্ছে।পরিবেশটাই যেন মুহুর্তের মধ্যে বদলে গেল।তার গান শেষ হলে সবাই করতালিতে চারপাশ মুখরিত করে তুলল।
এমন সময় রাফি ভাইয়া বলে উঠল,
-‘ সব পারফরমেন্স কি শুধু মেয়েপক্ষরাই দিবে।ছেলেপক্ষরা কি কিছু করবে না?নাকি পারে না।’
সব হাসাহাসি শুরু করে দিল।তামিম ভাই বলে উঠল,’এদের জন্য বোলে চুড়িয়া গান ছেড়ে দে।এই গান ছাড়া মনে তো হয় না অন্য কোনো গানে নাচতে পারবে!’
ইশ!দেখে মনে হচ্ছে সবগুলো হাসিতে যেনো লুটিপুটি খাচ্ছে।আমরা যথেষ্ট অপমানিত বোধ করলাম।
আমি বলে উঠলাম,’সাফা গিয়ে গান ছেড়ে আয়।আমরাও দেখিয়ে দিব আমরা কি পারি আর না পারি।জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ।’
আমরাও উঠে এলাম স্টেজে সাফার কাজিনদের সাথে।
য়ো লাড়কি আখ মারে গানে আমরা নেচে যাচ্ছি।

সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।কারণ ডান্স আমরাও খারাপ পারি না।একে একে উপস্থিত সবাই যোগ দিতে লাগল নাচে।আমার ডান্সের মাঝে হঠাৎ হেঁচকা টানে কেউ আমায় বুকের সাথে মিশিয়ে নিল।পারফিউমের ঘ্রাণে বুঝে গেলাম নিদ্র ভাই।ঘটনার আকস্মিকতায় আর তার এভাবে জড়িয়ে ধরায় আমি কুঁকড়ে গিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলাম।তাকে একটু ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই সে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠল,’আস্তে,তোমার জামার পেছনে ফিতা খুলে গেছে।’
আমি চোখ বন্ধ করেই রইলাম।সে সেভাবে জড়িয়ে রেখেই পেছনে হাত দিয়ে আমার ফিতা বাঁধতে লাগল।
আমার একটু অস্বস্তিও লাগছিলো কেউ যদি আমাদের এভাবে দেখে ফেলে।সে হয়তো বুঝতে পারছিলো তাই বলল,’চোখ খুলে দেখো।লাইট অফ করাই আছে।’
আমি চোখ মেলে দেখলাম ঘুটঘুটে অন্ধকার। এই ছেলে সব কাজ গুছিয়েই করে।দ্বিতীয়বারের মতো তার সাথে এভাবে আলিঙ্গনে আবদ্ধ হলাম।প্রথমবারের থেকেও বেশি এইবার যেন হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে।আমার আর তারও।ফিতা বাঁধা শেষ হলে সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেল।আর সাথে সাথে লাইট অন হয়ে গেল।সবাই বিরক্তি থেকে রেহাই পেয়ে স্বস্তি পেল।তার ছোঁয়ায় আমি এখনো কুঁকড়ে আছি।সাফা আমার কাছে এসে বলল,’তোর আবার কি হয়েছে?এমন করে আছিস কেনো?’
আমি মুখ ঘুরিয়ে বললাম,’কিছু না।’

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে