ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা পর্ব-০৫

0
1957

গল্পর নাম : #ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_৫ : #Something_is_fishy
লেখিকা : #Lucky

আমি অপ্রস্তুত হয়ে বললাম,”কি করছেন! ছাড়ুন।”
ইথান আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে সিক্ত গলায় বলল, “কেনো? এখন ছাড়তে বলছ কেনো!”
আমার সারা শরীরে শীতল শিহরণ বয়ে গেল।
ইথান আমার কোমড়ে হালকা চাপ দিতেই আমি চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে বলে উঠলাম, “আহ! কি করছেন আপনি! লাগছে ত!”
“শাট আপ ইডিয়ট। বোকার মত চিল্লাচ্ছ কেনো?” গলার স্বর নামিয়ে দাতেদাত চিপে বলল ইথান।
আমি অত আস্তে আস্তে কথা বলতে পারিনা। তাই চোখ মুখ কুচকে স্বাভাবিক স্বরেই বলে উঠলাম, “চিল্লাবো না? লাগছে আমার। এভাবে কেউ চাপ দেয়!”
“আস্তে কথা বলতে পারছ না?” এক ধাপ বিরক্তি বাড়িয়ে নিয়ে বলল ইথান।
“না, পারছি না। আপনি আমার কোমড়ে এভাবে চাপ দিলেন কেন? আহ ব্যাথায় জ্বলে যাচ্ছে।”
-“তোমাকে বলেছি শব্দ না করতে।”
আমি রেগে গেলাম। আর ইচ্ছা করেই শব্দ করতে লাগলাম, “আহ~~ উহ~, আমি শেষ।”
ইথান এবার রেগে আমার মুখ চেপে ধরল আর বলল, “মাথা কি ফাপা তোমার?”
আমি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করলাম কিন্তু আওয়াজ বের হলো না।
শুধু ‘উম উম’ শব্দ বের হলো।
ইথান আমার চোখের দিকে তাকিয়ে সুন্দর করে থ্রেট দিয়ে বলল, “আর একটা টু শব্দ করলে খবর আছে তোমার।”
ইথান আমার মুখ ছেড়ে দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসল।
আমি মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে।
সত্যিই খুব রাগ হচ্ছে। আসলে রাগ না, অভিমান। উনি এত cold behave করেন কেন আমার সাথে এটাই আমি বুঝিনা।
ইথান আমার চোখের দিকে তাকালো। সাথে সাথে আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। ডিম লাইটের আবছা আলোতে মোটামুটি সবই দেখা যাচ্ছে।
“এখানে আসো।” গম্ভীর গলায় বলল ইথান।
আমি শুনেও না শোনার মত করে রইলাম।
ইথান একটা নিঃশ্বাস ফেলে আবার আমার কাছে এলো।
আমি ওর দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকালামই না।
রাগ করেছি আমি।
ইথান আমার এক বাহু ধরে আস্তে আস্তে বিছানার কাছে নিয়ে গিয়ে বসালো।
আমি এখনো মুখ ফুলিয়েই আছি।
“শোও।” বলল ইথান।
আমি এবারো মুখ ঘুরিয়ে রাখলাম।
“সমস্যা কি তোমার? কথা কানে যাচ্ছে না!” বলল ইথান।
আমি রাগ মিশ্রিত চোখে ইথানের দিকে তাকালাম। ভাল মত কথাই বলতে পারেনা আমার সাথে।
ইথান ইশারায় শুয়ে পরতে বলল।
আমি পাত্তা দিলাম না।
ইথান ধৈর্য হারিয়ে ফেলল। আর আমার এক হাত চেপে ধরে ঠেলে শুইয়ে দিল।
“আহ, লাগছে আমার।” বলে উঠলাম আমি।
“তোমাকে বলেছি এই ধরনের সাউন্ড না করতে আর আস্তে কথা বলতে।” চোখ পাকিয়ে বলল ইথান।
“ত ব্যথা পেলে কি করব? অহো কি আনন্দ! কি মজা! এগুলো বলব?” ব্যাঙ্গাত্বক সুরে বললাম আমি।
কান্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে ইথান বলল, “করতে থাকো যা ইচ্ছা। এত সময় বলে যেহেতু হয়নি, আরো বললেও হবে না। IQ low তোমার।”
আমি হা হয়ে বললাম, “আমাকে বোকা বললেন!”
ইথান আর কথা না বাড়িয়ে আমার পাশে গিয়ে শুয়ে উলটো দিকে ঘুরে রইল।
আমিও রেগে উল্টোদিকে ঘুরে শুয়ে পরলাম।
|
|
কোমড় ব্যথা এখনো হালকা হালকা রয়ে গেছে। যার জন্য হাটতে একটু সমস্যা হচ্ছে। তার উপর শাড়ি। অবস্থা বেহাল আমার।
আমার এই অবস্থা দেখে সবাই সান্ত্বনা কি দেবে! উলটো মুচকি মুচকি হাসছে।
এলমা জিজ্ঞেস করেছিলো, “কি হয়েছে?”
আমি বললাম, পরে গেছিলাম।
কিন্তু ওরা কেউই বিশ্বাস করছে না কেন!
উলটো বলছে হ্যা কত ব্যথা পেলি তা ত জানিই আমরা।
ওরা কি উল্লেখ করে এসব বলছে বুঝতে চেয়েও বুঝতে পারলাম না।

দুপুরের পর আবার ফিরে আসার জন্য তৈরি হলাম।
আমি গাড়িতে উঠে বসতে না বসতেই মেসেঞ্জারে মৃদুলের কল ঢুকলো।
আমার ভার্সিটির সিনিয়র এই মৃদুল। অনার্স ফোর্থ ইয়ার। আর আমি সেকেন্ড ইয়ারে মাত্র উঠলাম। অনেক বেশিই অসহ্য লাগে একে আমার। যদিও সে খারাপ ছেলে না। তার ভাব ভঙিতে বুঝি যে আমাকে পছন্দ করে সে। ফার্স্ট ইয়ার থেকেই করে। কিন্তু আমি করি না। তাই এড়িয়ে চলি সবসময়।
কিন্তু এই গাধা বুঝেনা। আমি মুখের উপর বলতেও পারিনা। সিনিয়র বলে কথা তাই একটা ভয় কাজ করে। তাছাড়া বলবই বা কি! সরাসরি ত প্রপোজ করেনি যে একেবারে রিজেক্ট করে দিব।

ফোন হাতে নিয়ে ভাবতে লাগলাম কি করব! হঠাৎই মনে এলো এখন ত আমার বিয়ে হয়ে গেছে। এখন ত আমাকে ওর জ্বালানো বন্ধ হয়ে যাবে যদি বলি আমি বিবাহিত।
এই কাজটা আরো সহজ হতো যদি ফেইসবুকে বিয়ের ছবিগুলো দিতে পারতাম। কিন্তু খেয়ালই ছিল না।
ভাবতে ভাবতেই ফোন কেটে গেলো। তখনি ইথান গাড়িতে ঢুকলো।
আমি ইথানের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম।
ইথান আমার পাশে বসে সিট বেল্ট পড়তে লাগল।
হঠাৎই আবার কল এসে গেল। আমি ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকালাম।
আবার মৃদুল!
আমি এক পলক ইথানের দিকে তাকালাম।
সে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি ফোন না তুলে কেটে দিলাম।
ইথান কিছুক্ষণ ওভাবেই তাকিয়ে তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলো।
একটু পরেই আমার মৃদুল কল দিল।
যত সময় না ধরব হয়ত দিতেই থাকবে। তাই আমি ফোন তুলে কানে দিলাম।

“কি করছিলা! এত সময় লাগলো কেনো!” মৃদুল ব্যস্ত হয়ে বলল।
আমি কিছু বলার আগেই সে বলতে শুরু করে দিল।
“যাই হোক শোনো। সামনে কলেজে নবীন বরন অনুষ্ঠান আছে। এবারে তুমি আর আমি পরিচালনা করব।” মৃদুল উৎসাহী কন্ঠে বলল।
আমি আড় চোখে ইথানের দিকে তাকালাম। সে সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভিং করছে। আর মাঝে মাঝে গম্ভীর মুখে আমার দিকে তাকাচ্ছে।

ইথানের কারণে আমি মৃদুলকে ওই কথাগুলো বলতেও পারছি না।
“কি চুপ কেনো?” প্রশ্ন করল মৃদুল।
“আ…আমি কাল ফোন দিব। বাই।” বলেই আমি ফোন কেটে দিলাম আর ডাটা কানেকশন অফ করে দিলাম। আর আড়চোখে ইথানের দিকে তাকালাম।
রীতিমতো সে বিরক্ত হয়ে আছে।
আমি চোখ সরিয়ে সামনের দিকে মনোযোগ দিলাম।
কিছুক্ষণ পর মৃদুল সরাসরি আমার ফোনেই ফোন করলো।
আমি মনে মনে বিরক্ত হয়ে ফোনের দিকে তাকালাম। এই লোক সত্যিই একটা অসহ্য।
আমি ফোন তুললাম।
“বলেন।” বিরক্ত হয়ে বললাম আমি।
“শাড়ি পরলে ভালো। আমি পাঞ্জাবি পরব। সাদা শাড়ি লাল পাড়। কেমন?”
“দেখুন আমি….পারব না।” বললাম আমি।
“আমি অলরেডি নাম দিয়ে দিয়েছি।” বলল মৃদুল।
শুনেই মাথা গরম হয়ে গেল আমার।
“আপনি আমাকে না বলেই কিভাবে দিয়ে দিলেন!” অবাক হয়ে বললাম আমি।
“আরে, মজা হবে করে দেখো।” বলল মৃদুল।
আমি আর কিছু বলার আগেই ইথান ব্রেক কষে দিলো। আমি হকচকিয়ে গেলাম।
ইথান এক টান দিয়ে আমার ফোন কেড়ে নিয়ে গেল। এতে আমি পুরো হা হয়ে গেলাম।
ইথান কলটা কেটে দিয়ে ফোনটা গাড়ির সামনের বক্সটার মধ্যে ঢুকিয়ে বক্সটা বন্ধ করে দিলো।
আমি হা করেই রয়ে গেলাম।
“আপনি এটা কি করলেন?” বললাম আমি।
“কেনো! কথা বলা হয়নি? কখন থেকে বকবক করে আমার মাথা ব্যাথা বানিয়ে দিয়েছ।” রেগে বলল ইথান।
আমি অবাক হয়ে গেলাম। এটুকু কথা বললাম তাতেই মাথা ব্যাথা হয়ে গেল।
ইথান আবার গাড়ি স্টার্ট দিলো। উনি অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে আছেন।
আমি ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে তারপর আবার সামনের দিকে তাকালাম। কিছুই বুঝতে পারছি না।
ওনার সমস্যা কি!
তখনি আবার আমার ফোন বেজে উঠল।
আমি ফোনটা বের করার জন্য হাত বাড়াতেই আবার গাড়ির ব্রেক কষল ইথান।
আমি হালকা সামনে ঝুঁকে পরলাম।
ইথান রেগে ফোনটা বের করে পুরো সুইচড অফ করে দিল।
আমি শুধু অবাক চোখে দেখতে লাগলাম। আর বুঝতে চেষ্টা করলাম যে উনি এত রেগে যাচ্ছেন কেনো!
ওনার কি মুড অফ! দুপুর অব্দি ত ভালই ছিল। কিন্তু এখন কি হলো আবার?

(চলবে…)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে