ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা পর্ব-১৩+১৪

0
1831

গল্পর নাম :#ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব-১৩+১৪ #miss_you_to_the_moon_and_back
লেখিকা : #Lucky

”দরজা আটকাচ্ছেন কেনো?” আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম।
“বলা ত যায় না, রাতে তোমার আবার কি করতে ইচ্ছে হয়! তুমি ত সুযোগ এর অপেক্ষা করতেই থাকো।” বলল ইথান।
উনি আমাকে নিয়ে আবার মজা করছেন। আসলে মজা না অপমান করছে।
আমার গা জ্বলে গেলেও আমি কিছু না বলে শুয়ে পরলাম। জীবনেও যাব না ওনার কাছে৷ এমন প্রতিশোধ নিব আমি যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।
.
সকাল সকাল ঘুম ভাঙতেই বুঝতে পারলাম যে আমি ইথানকে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথা গুজে আছি।
নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছে না!
শেষ পর্যন্ত আবার আমিই এসে তার বেডে শুয়ে পরলাম?
আমি মাথা তুলে ইথানের দিকে তাকালাম। সে ঘুমে ব্যস্ত।
তার ঘুমিয়ে থাকতে থাকতে আমার কেটে পরা উচিত। নাহলে আরেক দফা মজা নেবে।
কিন্তু আমার ত কেটে পরতেও ইচ্ছে করছে না।
কি সুন্দর জড়িয়ে ধরে আছে সে। এভাবেই থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে।
আমি মৃদু হেসে ইথানের মুখের দিকে তাকালাম।
কি শান্তিতেই না ঘুমাচ্ছে।
আমি মৃদু হাসির সাথে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
খানিক বাদে ইথান নড়েচড়ে চোখ খুলল।
সাথে সাথে আমার হাসি গায়েব হয়ে গেল।
আর আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।
ইথান স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ আমার দিকেই তাকিয়ে রইল। তারপর ওর এক হাত দিয়ে আলতো করে আমার গাল স্পর্শ করল।
আমি অবাক হয়ে ইথানের চোখের দিকে তাকালাম।
হার্টবিট দ্রুত গতিতে চলতে লাগল।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আমি ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম। আর নিজের অজান্তে ওর ঠোঁটের কাছে নিজের ঠোঁট এগিয়ে নিলাম।
তারপর নিজের চোখটা শক্ত করে বন্ধ করে ফেললাম।
ওর নিঃশ্বাস আমার মুখে পরতেই আমি ওর কাধের কাছের জামাটা আঁকড়ে ধরলাম।
ঠিক তখনি উল্লুক মার্কা এক নার্স এসে দরজায় নক করলো আর বলল, “এটা লক হলো কিভাবে!”
তাই ঝট করে ইথান এক হাত ধরে টেনে আমাকে বসিয়ে দিল আর নিজেও বসে পরলো।
দুইজনেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে গেলাম।
আমি চোখ নামিয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলাম। অল্প অল্প লজ্জাও লাগছে। কিন্তু যা হচ্ছিলো তা হতে দিলে কি হত!
নার্সের বাচ্চা নার্স। ওকে কেউ পারমানবিক বোমা দিয়ে উড়িয়ে দিত!
ইথান উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিল।
নার্সটা রুমে ঢুকে একবার আমার আর একবার ইথানের দিকে তাকাতে লাগল।
এমন ভাব করছে যেন দরজা আটকে আমরা কি করছিলাম সবই সে বুঝতে পারছে।
অসভ্য।
“আপনার কোনো কাজ আছে?” কপাল কুচকে বলে ফেললাম আমি।
“চেক আপ করার জন্যই। ফিভার।” একটু মেকি হেসে বলল নার্সটা।
শুনেই বিরক্ত লাগছে আমার। সুন্দর একটা মূহুর্ত নষ্ট করে চেক আপ করতে এসেছে।
আমি এক পলক ইথানের দিকে তাকালাম। সে গম্ভীর মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
চোখাচোখি হতেই আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।
“ইয়া সিওর।” বলে ইথান নিজের বেডে গিয়ে বসলো।
তখনি খেয়াল হলো যে আমি নিজের বেডেই ছিলাম। ইথান আমার বেডে এসেছিলো।
আমি ইথানকে কিছু বলার আগেই নার্সটা বলল, ম্যাম পালস চেক করব।
আমি নার্সের দিকে হাতটা এগিয়ে দিলাম। তখনি আমার মা হন্তদন্ত করে এসে কেবিনে ঢুকল।
আমি অনেক বেশিই অবাক হলাম।
তার চেয়ে বেশি খারাপ লাগল। কারণ মায়ের মুখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
হয়তো আমার অসুস্থতার কথা শুনে।
মা দ্রুত এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে নিল। প্রচন্ড ভয় পেয়ে আছে সে।
আমার এই সামান্য জ্বর জিনিসটাকে সে এত সিরিয়াস নিয়ে নিয়েছে বলার মত না।
আমাকে হারানোর ভয় সে বরাবরই পায়।
বাবা মারা যাওয়ার পর একমাত্র আমিই তার সব।
আর ছোট থেকে আমিও অনেক দুর্বল ছিলাম।
ঘন ঘন অসুস্থও হতাম। এজন্য সে আরোই চিন্তা করে।
“মা আমি একদম ঠিক আছি। দেখো।” আশ্বাস দিয়ে বললাম আমি।
মা আমাকে ছেড়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে অস্থির হয়ে বলল,”কত শুকিয়ে গেছিস! তাও বলিস ঠিক আছি?”
আমি কিছু বলার আগেই নার্সটা বলল,”উনি এখন সুস্থই আছে। শুধু একটু দুর্বল। খাওয়া দাওয়া ভাল মত করলেই ঠিক হয়ে যাবে।”
“মনে হচ্ছে সুস্থ কিন্তু আসলে তা না। ছোট বেলা থেকেই এমন। একটু অসুস্থ হলে সারতে অনেক সময় লাগে।” অস্থির হয়ে বলল মা।
এখন তাকে বোঝানো দায়। তার চিন্তা যা বলছে সেটাই সঠিক তার কাছে। হাজার বললেও বুঝবেই না।
তার মুখটা দেখেই মায়া লাগছে।
আমি মায়ের দুই গাল আমার দুই হাতে নিয়ে বললাম, “নিজের কি অবস্থা করেছ এটা? এত টেনশন নেওয়া ঠিক না।”
“বাড়ি নিয়ে যাব তোকে আমি। বলেছি স্বর্নাকে আমি। আমার চোখের সামনে সুস্থ হবি তারপর আবার শশুড়বাড়ি দিয়ে আসবো।” জলে চোখ ভিজে এসেছে কথা বলতে বলতে মায়ের।
স্বর্না মানে ত ইথানের মা। যেহুতু পারমিশন পেয়েই গেছে সেহেতু মা আমাকে বাসায় না নিয়ে ছাড়বেই না।
“উফ মা। আচ্ছা আচ্ছা, কেদো না। যাব আমি।” চোখের জল মুছে দিতে দিতে বললাম আমি।
“আজই নিয়ে যাব।” হালকা হাসির আভা নিয়ে বলল মা।
“হ্যা বাবা হ্যা, আজই নিয়ে যেও।” নরম গলায় বললাম আমি।
মা এবার যেন একটু সস্তি পেল।
কিন্তু এতটুকু সময়ে একজনের কথা ত আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। সেটা হলো ইথান।
মনে পরতেই ওর দিকে তাকালাম।
সেও আমার দিকে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আছে।
কত দিনের জন্য যাচ্ছি তাও ত জানিনা। আর এই মহাশয় আমাকে মিস করবে কি না জানিনা কিন্তু আমি ত মিস করবো।
“তুমিও অসুস্থ হয়ে গেছ?” মা ইথানকে দেখে অবাক হয়ে বলল।
“আমি সুস্থই আছি। একটা বেড লাগত তাই এভাবে ভর্তি হয়ে গেলাম।” মৃদু হেসে বলল ইথান।
আমার মা হেসে দিলো।
“আমি কয়েকদিনের জন্য ওকে নিয়ে যাই!” আমার মা বলল ইথানকে।
“সিওর।” গাম্ভীর্য ধরে রেখেই স্বাভাবিক ভাবে বলল ইথান।
আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম। সে নির্লিপ্ত ভাব নিয়ে আমার দিকে তাকালো।
বাহ! কি সুন্দর হ্যা বলে দিলো!
আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম। প্রচন্ড বিরক্তি কাজ করছে এখন।
“রেডি হয়ে নে।” বলল মা।
নার্সটা আমার পরনের জামাটা দিয়ে গেল। আমি কিছুক্ষনের মধ্যেই হস্পিটাল ড্রেস বদলে, সেটা পরে রেডি হয়ে গেলাম।
আমি বের হবার পর উনি রেডি হয়ে গেলেন।
উনি নিজেও রিলিজ হবেন।

পুরো সময়টা আমি ইথানের দিকে আর তাকালামই না। মায়ের সাথে সাথেই রইলাম। রাগ হচ্ছে প্রচুর।
গাড়িতে আগে আগে উঠে বসে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে সীটে মাথা হেলিয়ে দিলাম।
মা গাড়িতে ঢুকে বসতে বসতে বলল, “কিরে তুই ওকে কিছু বলবি না যাওয়ার আগে?”
আমি আগে থেকেই চোখ বন্ধ করে ছিলাম। তাই এখন এমন ভান করে রইলাম যেন ঘুমিয়ে গেছি।
মাও আর কিছু বলল না।
.
বাসায় এসে এখন উঠতে বসতে কিছুই ভাল লাগছে না। মা এনেছে আমাকে সুস্থ করতে। কিন্তু ইথানকে মনে করে করে আমি ত উলটো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।
না খেতে ভালো লাগছে, আর না ঘুমোতে।
মা মনে করছে আমি প্রচন্ড রকমের অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। কারণ আমার রুচি নেই খাওয়ায়।
এদিকে ইথানকে যে ফোন দিব নিজের ফোনও রেখে এসেছি।
একদিন ত হতে চলল। আর সহ্য হচ্ছে না। তার কি আদৌ আমাকে মনে পরে!
“তোর কি হয়েছে বল ত! এমন হলে ত স্যালাইন দিতে হবে।” বলল মা।
আমি মায়ের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আমতা আমতা করে প্রশ্ন করলাম, “ওই বাড়িতে কবে ফিরে যেতে বলেছে আন্টি?”
“স্বর্না? সে ত বলেছে যত ইচ্ছা থাকুক। এত টেনশন করিস না। সে বকা দিবে না।” বলল মা।
ধুর শাশুড়ী ত বলবেই। অসহ্য।
আমি একটু অসস্তির সাথেই ইনিয়েবিনিয়ে বলতে লাগলাম, “না মানে, আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে…. মানে…।”
মা এবার বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বলল, “ওহহহ, তাই ত বলি একদিনো হতে পারলো না, মেয়ে আমার শশুড়বাড়ি ফিরতে চায় কেন?”
আমি লজ্জায় ঠোঁট কামড়ে মাথা নিচু করে ফেললাম।
“ইথান ফোন করেছিলো। তুই ঘুমাচ্ছিলি বিকেলে যখন ঠিক তখন। তাই আর ডাকতে মানা করেছিলো।” মৃদু হেসে বলল মা।
আমি শুনে হা হয়ে মায়ের দিকে তাকালাম।
ইস তখনি ঘুমাতে হলো! অবশ্য সারারাত না ঘুমালে দুপুরে ত ঘুম আসবেই।
“আগের দিন করেছিল তখন গোসলে ছিলি। আমিই ভুলে গিয়েছিলাম বলতে। তখন ত আর বুঝি নি আমার পিচ্চি মেয়ের এখন স্বামীর কথা এত মনে পরতে পারে।” মৃদু হেসে আমার গাল টেনে দিয়ে বলল মা।
আমি মাথা নিচু করেই রইলাম।
“নে ফোন। তবে রাতে ফোন দিস। এখন ত অফিসে মনে হয়।” মা ফোনটা এগিয়ে দিলো।
আমি মায়ের ফোনটা নিয়ে নিজের কাছে রেখে দিলাম।
রাতে মা ঘুমিয়ে যাবার পর আমি আস্তে আস্তে উঠে নিজের রুমে এলাম। তারপর বিছানায় বসে ইথানকে ফোন দিলাম।
যতই হোক মায়ের পাশে শুয়ে কথা বলতে সাচ্ছন্দ্য বোধ হবেনা।
ফোন রিং হতেই ইথান ধরে নিলো। যেন সে ফোনের অপেক্ষাই করছিলো।
“এত রাতে ফোন করেছেন, কিছু কি হয়েছে?” ইথান উদ্ধিগ্ন হয়ে বলল।
মায়ের ফোন দিয়ে ফোন করায় উনি মনে করেছেন এটা মা।
তবে তার আওয়াজ শুনে এই কয়েক ঘন্টার অস্থিরতা সব চলে গেল।
আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। আর নিরব রইলাম।
“এরিন।” শীতল গলায় বলল ইথান।
সাথে সাথে আমি চোখ খুললাম। এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেল সারা শরীরে। আর চোখের কোণে অল্প জলও এসে পরেছে। কেন তা জানিনা।
“কি হয়েছে!” মৃদুস্বরে বলল ইথান।
“অনেক কিছু হয়ে গেছে, আমি অনেক অনেক অনেক মিস করছি আপনাকে।” কাদো কাদো গলায় বললাম আমি।
প্রতিউত্যুরে ওপাশ থেকে ইথান কিছুই বলল না।
“আপনি অনেক খারাপ। আসার সময় আমাকে একবার আটকানও নি। আর আটকাবেনই বা কেনো! আপনি ত আমাকে মিসই করেন না।” অভিমানী সুরে বলে গেলাম আমি।
ইথান এবারো কিছু বলল না।
“চুপ করে আছেন কেন?” একটু তেজী গলায় বললাম আমি।
ইথান মুখ দিয়ে একটা নিঃশ্বাস বের করে দিয়ে নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললো, “তোমার মা যেভাবে টেন্সড হয়ে গেছিলো তাতে আমি কি করে বাধা দিতাম? তাছাড়া তুমি নিজেই যেতে চেয়েছো।”
আমি নিজের বোকামি বুঝতে পেরে একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে ইনিয়েবিনিয়ে বললাম, “হ..হ্যা, ব…বলে ত ছিলাম। তা…তাও আপনার ত মানা করা…উ….উচিত ছিল।”

“আরকি ঘুরে ফিরে সব দোষ আমারই!” একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল ইথান।
“হ্যা আপনারই।” বলেই আমি মুচকি হেসে মাথা নিচু করলাম।
“কবে আসবা তুমি?”
এই সামান্য প্রশ্নটা যেন আমার মনের মধ্যে তোড়পাড় শুরু করে দিল। ইচ্ছে করছে এখনি ছুটে চলে যাই।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললাম, “যদি না আসি?”
“মানে?” উনি প্রশ্নসূচক কন্ঠে বললেন।
আমি আরেকটু শয়তানি করার জন্য বললাম, “মা বলেছে এক মাস অব্দি ত থাকতেই হবে।”
“কিন্তু আমাকে যে বলল কাল চাইলে কালই আমি তোমাকে নিয়ে যেতে পারবো!” মুচকি হাসির সাথেই বললেন উনি।
“মিথ্যা কথা।” কটাক্ষ করে বললাম আমি।
“কালই বুঝতে পারবা মিথ্যা না সত্যি।”
এই কথটা শোনার সাথে সাথে আমার হার্টবিট বেড়ে যেতে লাগল।
“আপনি…আমাকে… নিয়ে কেনো যেতে চান?” থেমে থেমে বললাম আমি।
“Because I miss you to the moon and back.” মৃদুস্বরে বলল ইথান।
আমি কয়েক সেকেন্ডের জন্য ফ্রিজড হয়ে গেলাম।
“See you tomorrow. Good night.”
ফোন কাটার পর আমি খুশিতে লাফাতে লাগলাম।

সকাল হওয়ার অপেক্ষাই করছিলাম আমি। কিন্তু সে এখনো আসে নি।
ধুর ভাল্লাগে না।
কখন যে আসবে!
অপেক্ষা করতে করতে বিকেল গড়িয়ে গেল।
এখন সত্যিই রাগ লাগছে। সাথে অভিমানও হচ্ছে।
উনি কি আসবেনই না!
মিথ্যা কেনো বললেন তাহলে!
আমি মুখ ফুলিয়ে বিছানায় উঠে বসলাম। আর দুই হাত দিয়ে হাটু জড়িয়ে ধরে মাথা নিচু করে রাখলাম।
অনেক সময় পর দরজা আটকানোর আওয়াজ কানে আসতেই আমি অবাক হয়ে মাথা তুললাম।
সাথে সাথে আমার অবাক হওয়ার মাত্রা আরো বেড়ে গেল।
ইথান দরজার কাছে বুকে হাত গুজে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। তার মেরুন রঙের শার্টে তাকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। সে আমার দিকেই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আমি অবাক হলেও পরক্ষণেই নিজের চোখ মুখ শক্ত করে নিলাম।
এতক্ষণে তার আসার ইচ্ছে হয়েছে!
আমি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকালাম।
“কি হয়েছে?” উনি ভাবলেশহীন ভাবে প্রশ্ন করলেন।
আমার গা রিরি করে জ্বলে উঠল। আমি কোনো উওর দিলাম না এমনি ঘুরেও তাকালাম না।
ইথান একটা নিঃশ্বাস ফেলে আমার সামনে এসে বসল।
আমি চোখ পাকিয়ে তাকালাম তারপর আবার মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
“কাল আসব বলেছি তাই খুশিতে লাফিয়ে বেড়াচ্ছিলে। আর এখন আমি এসেছি, কিন্তু মুখ ফুলিয়ে আছ?”
আমি কিছুই বললাম না। আর তাকালামও না।
“ওকে, যেহেতু কথাই বলবা না, চলে যাচ্ছি আমি।” বলেই ইথান উঠে দাড়ালো।
সাথে সাথে আমি অস্থির হয়ে ওর হাত ধরে নিলাম।
তার মুখের হাসিই বলে দিচ্ছে যে, সে জানত আমি তাকে আটকাবই।
“হাসবেন না একদম রাগ করেছি আমি।” আমি ওর হাত ছেড়ে দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম।
ইথান আবার আমার সামনে বসতে বসতে বলল,”কেনো?”
এমন ভাব করছে যেন আমার রাগ করাটা উচিত না।
“দেরি করেছেন কেনো? সকাল থেকে বসে আছি।” চোখ পাকিয়ে বললাম আমি।
“আমি ত বলিনি আমি সকালে আসবো!” ইথান কুঞ্চিত চোখে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল।
আমি রেগে ফুলতে লাগলাম। ভালই মজা নিচ্ছে আমার।
আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম আর বললাম, “যাবই না আমি আপনার সাথে।”
ইথান একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,”একচুয়ালি আমি তোমাকে নিয়ে যেতে আসিনি।”
আমি শোনার সাথে সাথে হতবুদ্ধি হয়ে ওর দিকে তাকালাম।
“একটা কাজে দুই সপ্তাহের জন্য আমাকে আজই চিটাগং যেতে হত। আমি সেটা কালকে পিছিয়ে নিয়েছি। সো আমার কাছে বেশি সময় নেই।”
শুনেই আমার মন খারাপ হয়ে গেল। আমি মাথা হালকা নিচু করে নিলাম।
উনি দেখেই বুঝতে পারলেন। তাই আমার দুই গাল উনি নিজের হাতে আলতো করে ধরে নিয়ে সিরিয়াস হয়ে বললেন, “খুব দরকার না হলে আমি যেতাম না। আর তোমাকে নিয়ে যেতে পারলে অবশ্যই নিয়ে যেতাম। কিন্তু সারাদিন আমি এত বিজি থাকবো যে তোমার খেয়ালও রাখতে পারব না। এমনিও তুমি এখনো পুরোটা সুস্থ না। তাছাড়া আমি তোমাকে নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চাইনা।”
“আমি এখন পুরোই সুস্থ।” অভিমানী সুরে বললাম আমি।
“তোমার গা এখনো গরম।” ভ্রু উঁচু করে বলল ইথান।
আমি সাথে সাথে ইথানের হাত আমার গাল থেকে সরিয়ে নিয়ে বললাম, “একদম না। আমি সুস্থ সত্যি বিশ্বাস করেন। আমি যেতে পারব।”
ইথান ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল,”না।”
“তাহলে আমি পিছু নিয়ে নেব আপনার।” সরু চোখে তাকিয়ে বললাম আমি।
“না মানে না।” রেগে গেল ইথান।
“প্লিজ আমি যাব। অসুস্থ হব না।” মিনতিপূর্বক বললাম। কিন্তু ইথান বিশ্বাস করল না। কারণ গালে হাত দিয়েই বুঝে গেছে সে।
ইস! এই জ্বরটাকে পিটিয়ে বিদায় করতে পারতাম। তাহলে হানিমুনে যাওয়া যেত।
“চুপচাপ শুয়ে পরো।” বলতে বলতে ইথান আমার গায়ে কম্বল টেনে দিতে লাগল।
এখন শুয়ে টাইম নষ্ট করব? অসম্ভব!
আমি ইথানের হাত ধরে থামিয়ে দিলাম।
ইথান প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো।
আমি একটু মুড নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি তাহলে আর কত ঘন্টা আছেন?”
“মানে?!”
“মানে আপনি চলে যাবেন কত ঘন্টা পরে?”
ইথান নিজের হাতের ঘড়িতে সময় দেখতে দেখতে বলল, “ষোলো ঘন্টা বলা যায়। কেনো?”
আমি এক হাত দিয়ে ইথানের শার্টের কলারটা চেপে ধরে ওনাকে হালকা টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলাম।
উনি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন।
“তাহলে এই ষোল ঘন্টা আপনি শুধু আমার কথা শুনবেন। শুধু আমার কথা। তার বিনিময়ে আমিও আপনার কথা একান্ত বাধ্য মেয়ের মত মেনে নেবো। Deal?” ঠোঁটের কোনে বাকা হাসির সাথে বললাম।
ইথান কুঞ্চিত চোখে আমার ধরে রাখা শার্টের কলারের দিকে তাকিয়ে তারপর আমার দিকে তাকালো।
“কিহলো! জলদি জলদি রাজি হন। নাহলে আমিও আপনার…।”
“Deal.” আমার কথা শেষ হবার আগেই বলে দিল ইথান।
আমার মুখে সঙ্গে সঙ্গে একটা হাসি চলে এলো। কারণ এই ষোলো ঘন্টায় আমি ওনাকে এমন জ্বালাতে চাই যা ষোলো বছরেও ওনাকে কেউ জ্বালাতে পারবে না।
দরজায় কিছু একটা বাড়ি লাগার মত আওয়াজ হতেই আমরা দুজনে মুখ ঘুরিয়ে তাকালাম।
“সরি সরি ভুল সময়ে এসে গেছি।” বলেই আলিয়া তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে গেল।
আমি সাথে সাথে ইথারের কলার ছেড়ে দিলাম।
সে হয়ত দরজার কাছে এসে আমাদের এভাবে দেখে ভুল বুঝেছে। তাই হয়তো তাড়াহুড়োতে প্রথমবার দরজায় বাড়ি খেয়েছে।
ভুল বুঝারই কথা। ইথানের কলার টেনে ধরার কারণে সে একদম আমার দিকে ঝুকে ছিলো।

ইথান সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নিজের কলার ঠিক করতে করতে বলল, “রেস্ট নেও।”
“উহু। এখন রেস্ট নেব না। তাছাড়া এই ষোল ঘন্টায় আপনার কোনো হুকুম চলবে না। চলবে আমার হুকুম। তাহলে এখন আপনার প্রথম টাস্ক।” দুষ্টু হাসি দিয়ে বললাম আমি।
“কি?” সরু চোখে তাকিয়ে বলল ইথান।
হস্পিটালে আমাকে অনেক জ্বালিয়েছ বাছা।
এখন ত তোমার রাতদিন করব ভাজাভাজা।
মনে মনে বললাম আমি।

(চলবে…)

গল্পর নাম :#ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা (২)
#পর্ব_৩ : #ষোলো_ঘন্টা
লেখিকা : #Lucky

“শাড়ি সুন্দরভাবে পড়াবেন।” বললাম আমি।
ইথান কুচি ঠিক করতে করতে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।
আমি অনেক কষ্টে নিজের হাসি আটকে রেখেছি।
মনে মনে ঠিক করেছি জীবনেও শাড়ি পড়া শিখব না। ইথানকে দিয়েই পড়াবো।
কত মনোযোগ দিয়ে পড়াচ্ছে। দেখেই মন ভরে যায়।
আজও ইউটিউব দেখেই পড়াচ্ছে।
আশা করি আরো কয়েকবার পড়ালে আর ইউটিউব দেখতে হবেনা ওনার।
“জলদি করেন এত সময় কেন নিচ্ছেন? পাঁচ মিনিটের বেশি হয়ে গেলে হবে না।”
ইথান কড়া নজরে আমার দিকে তাকালো।
আমি নিজের হাসি ঠোঁট চিপে থামিয়ে রেখে ভাব নিয়ে বললাম, “এটুকুতেই হাপিয়ে গেলেন! এখনো পনেরো ঘন্টা আটচল্লিশ মিনিট ছয় সেকেন্ড বাকি। সাথে নিয়ে গেলে এত কিছু হত না। ভেবে দেখুন।”
“না মানে না।” নিজের হাটু ভাজ করে কুচির দিকে মনোযোগ রেখে বলল ইথান।
“ঘাড় ত্যাড়া একটা।” বিড়বিড় করে বললাম আমি।
ইথান আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, “তোমার ভাল চাওয়াই ভুল হয়েছে আমার।”
“হ্যা হয়েছেই ত। ভাল চাইতে বলেছি?” কটাক্ষ করে বললাম আমি।
ইথান আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আবার কুচি ঠিক করতে লাগল।
আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম, “আপনার কিছু করতে ইচ্ছে করে না?” আমি এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
“যেমন?” কুচিতে সেফটি পিন মারায় মনোযোগ রেখে বলল ইথান।
“যেমন আমাকে…।”
কথা শেষ হবার আগেই ইথানের ফোন বেজে উঠল।
উফ কি অসহ্য।
গুরুত্বপূর্ণ টাইমেই এগুলোর আসতে হবে! একবার নার্স আসে, একবার আলিয়া আসে, একবার ফোন আসে।
ইথান ফোনের দিকে তাকিয়ে কুচিটা নিজেই গুজে দিল।
সাথে সাথে আমি কেপে উঠলাম।
উনি নিজেও বুঝতে পেরে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে গেলেন।
“শেষ।” বলে উনি নিজের ফোন কানে দিয়ে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।
সেই ফাকে আমি চুল ঠিক করে নিলাম।

তারপর ওনার কথা শেষ হতেই বললাম,”গাড়ি বের করেন, যান।”
“Why?”
“কোনো কারণ জানানোর নেই। আমি যা বলব তাই-ই করবেন, কোনো প্রশ্ন ছাড়া।”

আমি ওনার পাশের সিটে বসলাম। আমার পড়নে কালো ব্লাউজের সাথে মেরুন রঙের শাড়ি।
আর ওনার গায়ে সেই মেরুন রঙের শার্ট।
“কোথায় যাব আমরা?” সীটবেল্ট বাধতে বাধতে বললা ইথান।
“গ্রামে।”
“গ্রামে? কেনো?”
“হাওয়ায় ভাসতে। সময় নষ্ট একদমই করতে চাইনা। দ্রুতো চলুন।”
“তুমি এমনিই অসুস্থ, তার উপর কি শুরু করেছ?” ইথান রেগে বলল।
“আপনি কথা দিয়েছেন আমার সব কথা শুনবেন।” মুখ ফুলিয়ে বললাম আমি।
“যদি অসুস্থ হও এসব করে তাহলে সিরিয়াসলি আমি তোমাকে ওখানেই ফেলে রেখে আসব।” ইথান রাগী চোখে একপলক আমার দিকে তাকিয়ে তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলো।
এসব কথা আমি গায়ে মাখালাম না। কারণ যে কিনা “I miss you to the moon and back” কথাটা বলেছে সে এমনটা করতেই পারবে না।

গন্তব্যে পৌছাতে আমাদের দুইঘন্টা মত সময় লাগলো।
জ্যাম না থাকলে এত সময় লাগে না।
গাড়িটা একটা পুরাতন গ্যারেজে রেখে আমরা গ্রামের পথে হাটতে লাগলাম।
চারিদিকে সবুজে ভরা। এজন্যই গ্রাম আমার এত পছন্দ। গাড়ি পেপু শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যায় শহরে।

আমি উপচে পরা খুশিতে বললাম, “আজ রাতে আমরা এখানেই থাকবো।”
“মানে? এখানে তোমার রিলেটিভ আছে কোনো?” সরু চোখে তাকিয়ে বলল ইথান।
“কেনো খোলা মাঠে ঘুমাবো।”
“আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল যে তুমি নতুন পাগলামি শুরু করবা।”
“ষোলো ঘন্টা আপনার কিছুই করার নেই। এখন আসুন আমার সাথে।” একটু ভাব নিয়ে বললাম আমি।
“কোথায় যাব আবার! আর তুমি সিরিয়াসলি এখানে থাকতে চাও আজ?” অবাক হয়ে বলল ইথান।
“হ্যা। এত টেনশন কেন করছেন! আমরা ভোরেই ফিরে যাব আবার।”
ইথান আর কিছু বললো না।
দুইজন একসাথে একটা সরু রাস্তা দিয়ে হাটতে লাগলাম আর ওনার দিকে তাকাতে লাগলাম।
সেও আমার দিকে তাকিয়ে আমার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় ধরে নিলো।
সাথে সাথে আমি দাঁড়িয়ে পরলাম আর হালকা লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলাম।
“তুমি লজ্জাও পাও?”
শুনেই আমি রাগমিশ্রিত কন্ঠে বললাম, “মানে কি বলতে চাচ্ছেন?! আমার লজ্জা নেই?”
“I Just asked. সেরকম কিছু ত বলিনি।” ভ্রু উঁচু করে এমন ভঙ্গিতে বলল যেন আমিই ভুল বুঝেছি।
“হাত ছাড়েন, কথা বলেবেন না আমার সাথে। যান।” মুখ ফুলিয়ে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম।
কিন্তু সে ছাড়লো না।
মৃদু হাসির সাথে হাত ধরেই রইল।
কিন্তু আমি ত হাত ছাড়াবই। আমাকে অপমান করেছেন উনি।
কিন্তু হাত আর ছাড়াতেই পারছি না। তবে চেষ্টা করতে ব্যস্ত হয়ে রইলাম।
হঠাৎই উনি আমার কাছে চলে এলেন।
সাথে সাথে আমার বুকের ভিতরে ধুকপুক শুরু হয়ে গেল।
আমি চোখের দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম।
ইথান অন্য হাত দিয়ে আমার গালের পাশ দিয়ে পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিল।
আমি শুকনো একটা ঢোক গিলে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
উনি ওই হাত দিয়ে আমার গাল টেনে দিয়ে বললেন,”চলো এখন। নাকি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবা?”
“আহ লাগছে।” ভ্রুকুটি করে বলেই আমি গাল থেকে ওনার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে নিজের গাল ঘষতে লাগলাম।
উনি চোখের ইশারায় সামনে এগুতে বললেন।
আমরা দুজন দুজনের হাত ধরেই এগিয়ে যেতে লাগলাম।

ছোট বেলা থেকে আমি অনেক বার এসেছি এই গ্রামে। তাই মোটামুটি অনেকজনকেই চিনি।
তাই রাস্তায় অনেক জনের সাথেই কথা হলো। এটা আমার মায়ের গ্রাম। যদিও মায়ের নিজেদের বাড়িটা আজ নেই। জমিটা ফাঁকা পরে আছে।

আমরা পরিচিত এক মহিলার বাসায় এসে থামলাম। তিনি অনেক বয়স্ক। আমার নিজের ঠাকুমার মতই তিনি।
দেখা হওয়ার সাথে সাথেই আমি তাকে জড়িয়ে ধরে নিলাম। সে আমাকে দেখে খুশিতে আটখানা হয়ে গেল।
“তোর বর?” ইথানের দিকে তাকিয়ে বললেন উনি।
আমি মৃদু হেসে মাথা নাড়লাম।
ইথান মৃদু হেসে ঠাকুমার দিকে এগিয়ে আসতেই ইথানকে তিনি জড়িয়ে ধরে নিলেন।
ইথান একটু অবাক হয়ে ওনার পিঠে হাত রাখল।
.
আজ গ্রামে থেকে যাওয়ার বিষয় নিয়ে বেশি কাঠখড় পোহাতে হলো না। ঠাকুমার সামনে বললাম থাকার কথা।
ঠাকুমাও বলল যে আজ উনি ছাড়বেন না আমাদের।
ইথানকেও তাই রাজি হতেই হলো।
সন্ধ্যা গড়িয়ে গেছে অনেক আগেই। একটা হেরিকেন ঘরের মধ্যে জ্বলিয়ে রাখা আছে। গ্রামেই এটা দেখা যায়। কি সুন্দর পরিবেশই না তৈরি হয়েছে। অন্ধকারে টিমটিমে আলোর হারিকেন।
আপাতত আমি মেঝেতে পাতানো বিছানায় বসে বাদাম চিবুচ্ছি। খাট নেই। আর ইথান একটা কাঠের চেয়ারে বুকে হাত গুজে বসে কড়া চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
এভাবে তাকালেও লাভ নেই। আজ রাতে এখানে থাকা ত লাগবেই। কিচ্ছু করার নেই। তাছাড়া ষোল ঘন্টার দোহাই ত আছেই। তাই সে মানতে বাধ্য।
আমার মিটমিটে হাসি দেখে সে রাগমিশ্রিত চোখ তাকিয়ে বলল,”What’s so funny?”
আমি কিছু না বলে বাদাম খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম।
বেচারা হাত দিয়ে আশেপাশের মশা তাড়াতে তাড়াতে ঘরটায় চোখ বুলিয়ে নিল।
তার যে প্রচুর গরম লাগছে তা বুঝাই যাচ্ছে। আমার নিজেই ত লাগছে। তবে অত বেশি না।
উনি উপরের দিকে তাকিয়ে ভ্রুকুটি করে ফেললেন।
“ফ্যান নেই।” বললাম আমি।
“অদ্ভুত। এলাকায় ইলেক্ট্রিসিটি আছে, তাও তারা লাইন নেয় নি!” ইথান বলল।
“লাইন নিলে বিল দিতে হবে। সবাই কি আপনার মতো বড়োলোক?”
ইথান আমার দিকে তাকালো কিন্তু আর কিছু বলল না। হয়তো বুঝেছে কেন নেয় নি লাইন।
“বেশি গরম লাগলে গোসল করে নেন৷ পুকুর আছে।আবার কল পাড়েও করতে পারেন চাইলে৷ ঠান্ডা পানি। গরম পালিয়ে যাবে। তবে বাথরুম নেই। এমনি শুধু টয়লেট আছে। আপনার যদি টয়লেট পেয়ে থাকে যেতে পারেন..।
” চুপচাপ নিজের কাজ করো।” তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল ইথান।
আমি হাসি আটকে বাদাম ছিলতে লাগলাম।
সে বিরক্ত হয়ে অন্যদিকে তাকালো।
“বেশি গরম লাগলে সিমাদের বাসায় যান। বাথরুম আছে ওদের গোসল করতে পারবেন শান্তিতে। আমি গামছা দিচ্ছি।” বললাম আমি।
“গামছা!”
“এখানে তোয়ালে নিয়ে কেউ বসে নেই। পরিষ্কার টাই দেব। বেশি সন্দেহ হলে গামছা ধুয়ে নিবেন।”
উনি আর কিছু বললেন না। অতিরিক্ত গরম লাগছে হয়তো।
আমি তাকে ঠেলে সিমাদের বাসার বাথরুমে ঢুকিয়ে দিয়ে এলাম।
তারপর বাহিরে অপেক্ষা করতে লাগলাম।
সিমাদের বাড়ির উঠোনের সামনে সব বাপ দাদারা বসে গল্প করছে সাথে বোতল থেকে ঢেলে ঢেলে কি যেন খাচ্ছে। পরক্ষনেই মনে পড়ল। যা খাচ্ছে তা নাকি কি একটা ফল দিয়ে বানায়। খেতেও নাকি মজা আর খেলে মন মেজাজ ফুরফুরে হয়ে যায়।

ছোট বেলায় মায়ের অগোচরে একবার একটু খাওয়ার জন্য নিয়েছিলাম। কিন্তু ধরা পরে গেলাম এই ঠাকুমার কাছে।
তারপর খেলাম কান মলা। তবে আজ সুযোগ হাতছাড়া করবই না।
আমি এগিয়ে গিয়ে তাদের সাথে বসে পরলাম।
তারা প্রত্যেকে অনেক ফুরফুরে মেজাজে গল্প করছিল। আমাকে দেখে আমাকেও গল্পে নিয়ে নিল।
তাদের সাথে কথার ফাকে আমিও এক গ্লাস খেয়ে নিলাম।
এত স্বাধ যা বলার বাহিরে।
তাই আমি আরো নিলাম। নিতে নিতে এক বোতল খেয়ে নিলাম।
তারপর ওদের থেকে আরো একটা বোতল চুরি করে নিয়ে কেটে পরলাম।
সত্যিই মনটা ফুরফুরে হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে আমি দুনিয়ায় সব থেকে সুখী মানুষ।
এবার আমি চাই এই বোতলটাও খেতে।
তবে ইথানের সাথে।
আমি মেঝের বিছানায় বসে এদিক ওদিক হেলতে হেলতে অপেক্ষা করতে লাগলাম।
ইথান মাথা মুছতে মুছতে ঘরে ঢুকল।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে কপাল কুচকে বলল, পাগলের মতো করছ কেনো?
আমি বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে বললাম, এই দেখুন কি এনেছি!
“কি?”
“জুস।”
ইথান সন্দেহের চোখে তাকিয়ে আমার কাছে এগিয়ে দুই পায়ে ভর দিয়ে বসল। তারপর বোতলের দিকে তাকিয়ে তার কুচকে থাকা কপাল সোজা হয়ে গেল।
“তুমি এসব কোথায় পেয়েছ?” অবাক হয়ে বলল ইথান।
আমি হাত উঁচু করে বামদিকে ইশারা করে বললাম, ওইদিকে।
“এখনি ফেরত দিবা। চলো।” তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেই ইথান হাত বাড়ালো বোতলের দিকে।
আমি সাথে সাথে সরিয়ে নিয়ে বাচ্চাদের মত করে বললাম,”না।”
তারপর চোখ বন্ধ করে বোতলটা জড়িয়ে ধরে নিলাম।
ইথান কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে বলল, “তুমি কি এগুলো অলরেডি খেয়েও নিয়েছ?”
আমি হেসে হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম তারপর হেলেদুলে বললাম, “এখন আপনিও খাবেন। একসাথে খাব। মজা হবে। তারপর আকাশে উড়ব।”
“Shut up.” ধমক দিয়ে বলল ইথান।
আমি লাফিয়ে উঠে ওর দিকে তাকালাম। পরক্ষণেই ভ্যা করে কেদে দিলাম।
ইথান চমকে আমার মুখ চেপে ধরে গলার স্বর নামিয়ে বলল, “কি শুরু করেছ!”
আমি এক হাত দিয়ে মুখ থেকে হাতটা নামিয়ে নিয়ে বললাম, “তাহলে আপনিও খান।”
“অসম্ভব।”
সাথে সাথে আমি আবার ভ্যা দিয়ে কান্না জুড়ে দিলাম।
সাথে সাথে আবার ইথান আমার মুখ চেপে ধরল আর রাগমিশ্রিত কন্ঠে বলল, “কয় গ্লাস খেয়েছ? হিতাহিত জ্ঞান ত কিছুই ছিলো না, এখন ত আরোই নেই। একটা টু শব্দ করলে খবর আছে তোমার।”
ইথান আমার মুখ ছেড়ে উঠে দাড়ালো।
আমি মুখ ফুলিয়ে বোতলটা খুলতে লাগলাম।
ইথান এক থাবা দিয়ে এবার বোতলটা নিয়েই গেল।
সাথে সাথে আমি রেগে হাত পা ছোড়াছুড়ি শুরু করে দিলাম আর বললাম, অনেক খারাপ আপনি। দিন ওইটা।
“What the hell! কি শুরু করেছ!”
“দিন দিন দিন। অইটা আমার।” জোড় গলায় বলতে বলতে আমি হাত পা ছুড়তে লাগলাম।
ইথান বোতলটা রেখে এগিয়ে এসে আবার আমার মুখ চেপে ধরল।
ফলতঃ আমি তার হাতে কামড় বসিয়ে দিলাম।
“উফ।” বলে ইথান হাত সরিয়ে আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকালো।
আমি মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে বললাম, “ষোল ঘন্টা আপনি আমার কথা শুনবেন বলেছেন। তাও শুনছেন না। আমি কিন্তু আপনার সাথে কাল যাবই।”
“হ্যা তোমার কথামতো এসব খাই তারপর টাল হয়ে থাকি?! এটাই চাচ্ছ?”
“হ্যা।” প্রশান্তি হাসি দিয়ে বললাম।
“কোনোদিনো না।”
শোনার সাথে সাথে আমি বোতলটা এক হাতে ধরে হেলেদুলে উঠে দাড়ালাম আর বাহিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।
এতে ইথান খপ করে আমার হাত ধরে নিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,”কোথায় যাচ্ছ?”
“যেদিকে দুইচোখ যায় সেদিকে।” বলতে বলতে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম।
কিন্তু পারলাম না।
“পাগলামি বন্ধ করো। কত গুলো খেয়েছো তুমি?”
কথার ফাকে ইথানের হাত আলগা হতেই আমি ছুটে বাহিরে বের হয়ে গেলাম।
ইথানও একরাশ বিরক্তি নিয়ে আমার পিছনে বের হলো।
আমি উঠানের এক কোনায় গিয়ে ধপ করে বসে পড়লাম।
ইথান আমার পাশে এসে দাড়িয়ে হতাশ গলায় বলল, “কি শুরু করেছ?”
“এখানে বসেন।” আমি পাশের জায়গা দেখিয়ে দিলাম।
উঠানের অপর কোনে বসা ঠাকুমা আর কয়েকজন মহিলা মিটমিটিয়ে হাসছে। এতে ইথান আরো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পরে গেছে।
বিব্রতবোধ করতে করতে সে বসলো।
আমি তার দিকে ঘুরে বোতলটা খুলতে খুলতে বললাম, এখন আপনার পালা। অনেক মজা বিশ্বাস করেন।
ইথান কিছু না বলে সরু চোখে তাকিয়ে রইল।
“কি!” ঠোঁট উলটে বললাম আমি।
“চুপচাপ রুমে আসো।” ঠান্ডা গলায় বলে ইথান আমার এক হাত ধরল।
“আর না গেলে?” মুচকি হেসে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বললাম।
সে একটা নিঃশ্বাস ফেলে অন্যদিকে তাকালো।
আমিও খপ করে তার কলার ধরে নিজের কাছে টেনে নিলাম।
ইথান অবাক হয়ে সরু চোখে আমার দিকে তাকালো।
“এই ইথান আপনি এত হট কেনো?” কন্ঠের খাদ নামিয়ে বললাম আমি।
এটুকুতেই তার অবাক হওয়ার মাত্র বেড়ে গেলো।
“আপনাকে না মাঝে মাঝে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।” ঠোঁট উলটে বলে তাকে আরো কাছে টেনে নিলাম।
আর অন্য হাত দিয়ে তার গাল স্পর্শ করলাম।
ইথান আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল।
আমি ওর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে হালকা এগিয়ে যেতেই উনি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললেন, “কি?”
সাথে সাথে আমি এক আঙুল ওনার ঠোঁটের উপরে রেখে তাকে চুপ করিয়ে দিলাম।
সে বাকা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।

“লজ্জাশরমের মাথা খাইছস ছেমড়ি?” বলল সেই ঠাকুমা।
সাথে সাথে ইথান নিজের কলার ছাড়িয়ে নিল আর ঠোঁটের উপর থেকে আমার হাতও সরিয়ে দিল।
আমি বিরক্ত হয়ে ঠাকুমার দিকে তাকিয়ে বললাম, “উফ, আমার রোম্যান্সে এত মানুষ হাত পা ঢুকায় কেন?”
“যা করার ঘরের দরজা লাগাই কর ছেমরি।” রসিকতা করে বলল ঠাকুমা।
“আমি এখানেই করব।” চোখ পাকিয়ে বললাম।
“উল্টাপাল্টা বকা বন্ধ করো আর রুমে চলো।” তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল ইথান।
আমি নিঃশ্বাস ফেলে অন্যদিকে তাকালাম আর করুন গলায় বললাম, “পানি খাব।”
“হ্যা রুমে চলো দিচ্ছি।”
“না কলের ঠান্ডা ঠান্ডা পানি খাব।”
ইথান একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল “চলো।”

কলের কাছে এসে আমি কলের মুখে হাত পেতে রইলাম।
ইথান ভ্রুকুচকে তাকিয়ে কল চাপতে লাগল।
আমি পানি খেতে খেতে কলের নিচে মাথা পেতে দিলাম।
আর মুহুর্তেই মাথা সহ শরীরের অর্ধেক ভিজে গেল।
ইথান আমার এমন কাজে রেগে গেল আর এক হাত ধরে আমাকে হালকা সরিয়ে নিয়ে এলো।
“জ্বর এখনো পুরো ঠিক হয়নি তোমার। এরমধ্যেই কি শুরু করেছ?”
আমি তাকে পাত্তা না দিয়ে বললাম, “উফ! থামলেন কেনো? গরম লাগছিলো অনেক। আমি আরো গোসল করব।”

(চলবে…)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে