ভালোবাসি পর্ব-০৭

0
853

#ভালোবাসি
#পর্ব_৭
#সুমাইয়া_জাহান

প্রতিটা সম্পর্কের ভিতরেই ভুলবোঝাবুঝি নামক ব্যাপার টা ঢুকবেই ঢুকবে!এই ভুলবোঝাবুঝি নমক ব্যাপার না ঢুকলে কি এমন ক্ষতি হয়? সেটা নিয়েই রেহান ঘন্টা দুইয়েক ভার্সিটির বট গাছ টার নিচে বসে বসে গবেষণা করছে। কিন্তু কোনো উত্তরই বের করতে পারেনি ও।কোথায় ভেবেছিলো আজ ওর মিহু পাখি কে ওর মায়ের সাথে দেখা করাবে আর শ্বশুর বাড়ি উফ’স হবু শ্বশুর টাও দেখাবে তা-না এই ভুলবোঝাবুঝি টা তার ভিতর বাহাত টা ঢুকিয়ে দিলো।তবে ওর জানা নেই ভুলবোঝাবুঝি নামক ব্যাপার টার বাহাত বা আদেও কোনো হাত আছে কিনা! তবুও ঢুকেছে তো এটাই বড়ো ব্যাপার শুধু বড়ো না ইয়া বড়ো ব্যাপার হুম! এখন ওর ইচ্ছে করছে এই ভুলবোঝাবুঝি নামক ব্যাপার টাকে ক্রিকেট বল বানিয়ে ছক্কা মেরে দেয়ালের ওপারে পাঠাতে। কিন্তু আফসোস সেটা সম্ভব না।তাই মন খারাপ করে গাছের নিচেই বসে আছে।

রনিত রেহান কে মিহির ডিটেইলস দিয়ে দুই ঘন্টা যাবত মনের আনন্দে কয়েকটা জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছে।এই দুইদিনে মিহি নিখোঁজ হওয়ায় রেহানের অবস্থা দেখে রনিতও খুব কষ্টে ছিলো।বন্ধুর এমন অবস্থা দেখলে কোনো বন্ধু বন্ধু কি ঠিক থাকতে পারে?আজ অনেক কষ্টে মিহির খোঁজ নিয়ে রেহান দিয়েছে।আজ রেহান কে নিশ্চয় খুব খুশি থাকবে। বন্ধু কে খুশি করতে পেরে রনিতও আজ ভিষণ খুশি। তাই মনের আনন্দে জায়গায় জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। দু’ঘন্টা ঘোরাঘুরির পর ও এখন ক্লান্ত তাই ভার্সিটি ফিরে এসেছে।এখানে একটা কাজ আছে তাই!ভার্সিটি ঢুকতে ঢুকতে ও গান ধরলো,

” আহা কি আনন্দ আকাশে বাতা………”

রনিতের নজর বট গাছ টার দিকে যেতেই গান থেমে গেলো কারন ওখানে রেহান মন মরা হয়ে গালে এক হাত দিয়ে একধ্যানে বসে আছে।দেখে মনে হচ্ছে রেহান নয় রেহানের কোনো মুর্তি এখানে বসানো আছে এক বিন্দুও নড়াচড়া করছে না।রনিতের কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে এটা রেহান তাই কয়েকবার হাত দিয়ে চোখ ডলে নিলো তারপর তাকিয়ে একই দৃশ্য দেখছে কোনো পরিবর্তন নেই।নাহ আবার মনে হচ্ছে এটা রেহানই।কিন্তু ও এখানে এমন ভাবে বসে আছে কেন?ওর তো এখন মিহির সাথে ওর বাড়িতে থাকার কথা আর তার থেকেও বড়ো বিষয় হচ্ছে ও এমন মনমরা কেন? ওর তো আজ সবথেকে বেশি খুশিতে থাকার কথা!এমন হাজার টা প্রশ্ন মননে নিয়েই চরম অবাক চোখেই রনিত রেহানের দিকে এগিয়ে গেলো।রেহানের কাছে যেতেই ওর কাঁধে আস্তে করে হাত রাখলো।

রেহানের কাঁধে কারো হাতের ছোঁয়া অনুভব করতেই ওই দি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।তাকিয়ে রনিত কে দেখে মনমরা হয়েই বললো,

—- ” ওহ্ তুই!”

রনিত অবাক চোখেই জবাব দিলো,

—- ” হ্যা আমি। কিন্তু তোর এমন অবস্থা কেন তোর তো এখন তোর মিহু পাখি আই মিন মিহির সাথে থাকার কথা।আর এমন মন খারাপ করে বসে আছিসই বা কেন?”

—- ” কি করবো বল ভাই ভুলবোঝাবুঝি নামক জিনিস টা যে আমার আর মিহু পাখির মধ্যে বাহাত ঢুকিয়ে বসে আছে। ”

রেহানে এমন দ্বারা কথা রনিতের মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেছে।আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারছে না ও।তাই কিছুক্ষণ ভেবে রেহানের দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বললো,

—- ” ওই ব্যাটা! আমাকে কি পাবনা পাঠাবি বলে ঠিক করে রেখেছিস?এই দুই দিনে প্রায় পাগল বানিয়ে দিয়েছিস।আজ ভাবলাম তোর থেকে মুক্তি পেয়ে গেছি।কিন্তু আমার ভাবনায় বালতি বালতি পানি ঢেলে আমাকে পাবনা পাঠানোর ব্যাবস্থা করছিস!যা বলবি সোজাসুজি ক্লিয়ার ভাবে বলবি নাহলে আজ থেকে আর কথাই বলবি না!”

কথাটা বলে রনিত রেহানের দিকে একটা রাগি লুক দিলো।ওর এমন করাতে ফুস করে একটা শ্বাস নিয়ে তখনকার সব বললো।বলেই রেহান মুখ ভার করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।এদিকে রনিত কিছুক্ষণ সবকিছু ভালোভাবে ভেবে রেহানের পাশে বসে বললো,

—- ” আমার মনে হয় দুদিন আগে মিহির সাথে ওর যেদিন শেষ দেখা হয়েছিলো মানে দুইদিন আগে আমরা সবাই তোর গান শোনার জন্য আড্ডা দিচ্ছিলাম তখনকার কিছু কথা মিহি শুনেছে আর অর্ধেক কথা শুনেই ও চলে গেছে তাই হয়তো ও তোকে ভুলবুঝেছে!”

রেহান একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,

—- ” হুম আমারও তাই মনে হয়।”

—- ” তাহলে তুই ওকে পুরো সত্যি টা বলছিস না কেন?তোর উচিৎ ছিলো ওকে সাথে সাথেই বলে দেওয়া!তা না করে এখানে বসে আছিস কেন?”

রনিতের কথা শুনে রেহান অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলতে লাগলো,

—- ” ও আমাকে তখন একটুও সময় দেয়নি কথা বলার আসলে ওর মুখ থে এসব শুনে আমি অবাক হয়ে গেছিলাম তাই কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম।আর সেই সুযোগই ও ওখান থেকে চলে যায়।আর আমি ওকে খুব ভালো করেই চিনি ওর মনে একবার আমি যখন খারাপ হয়েছি তখন ও আর আমার একটাও কথা শুনবে না। ও এমনই খুব চাপা স্বভাবের নিজের মনের কষ্ট গুলো কাউকে বলবেও না আবার কারো কথা শুনবেও না।শুধু নিজে নিজেই কষ্ট পেয়ে যাবে।ও এখন মনে মনে খুব কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু মুখে তা একবিন্দুও প্রকাশ করবে না।”

রনিত রেহানের কথা শুনে অবাক।ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়?একজনের মনে কি চলছে না চলছে সব জানতে পারে! আসলে রনিত ভালোবাসায় বিশ্বাস করে না।তাই রেহানের মুখে এগুলো শুনে ও ভালোবাসার সংজ্ঞা খুজতে লাগলো। রেহান এর দিকে খেয়াল করতেই দেখে রেহানের চোখ গুলো প্রায় ভিজে উঠেছে।হয়তো প্রিয়সীর কষ্টে ওর চোখেও পানি চলে এসেছে।তাই রেহান কে শান্ত করতে তাড়াতাড়ি রনিত বলে উঠলো,

—- ” ঠিক আছে আমি মিহি কে সব বুঝিয়ে বলবো!দেখবি তোদের মধ্যের সব কিছু ঠিক হয়ে আগের মতো হয়ে যাবে।”

রেহান উঠে দাড়িয়ে একটা শ্বাস ফেলে বললো,

—- ” ও এখন কারো কথাই বিশ্বাস করবে না।কিন্তু আমি তো ওকে ছাড়বো না সব ভুলবোঝাবুঝির অবসান আমি ঘটাবোই!”

কথাটা বলেই হনহন করে হেটে গেলো।আর ওর যাওয়ার দিকে একপলাক ভাবে তাকিয়ে রইলো রনিত।

শাওয়ার নিয়ে বের হতে না হতেই ফোনটা বেজে উঠলো। তাই একরাস বিরক্তি নিয়েই ফোনটা রিসিভ করলাম।ওপাস থেকে একটা পুরুষালী কন্ঠে বলে উলেন,

—- কেমন আছিস মা?

মুহূর্তেই আমার বিরক্তি ভাবটা কেটে হাসি ফুটে উঠলো মুখে।কারন ওপাসের লোকটা আমার বাবা যাকে আমি সবথেকে বেশি ভালোবাসি। যাকে ভালোবাসা ভালোবাসলে কখনো ঠোকবো না।বাবাও আমাকে ভিষণ ভালোবাসে।আমি নরম গলায় জবাব দিলাম,

—- ” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আমি ভালো আছো বাবা? শরীর সুস্থ আছে ঠিক মতো!ঔষধ খাচ্ছো তো!”

ওপাস থেকে আমার একনাগাড়ে কথাগুলো বলাতে হেসে দিলেন।তারপর বললেন,

—- ” আমিও আলহামদুলিল্লাহ একদম ঠিক আছি ঔষধও ঠিক সময় মতো খাচ্ছি। নাহলে যে আমার মাটার হাতে আচ্ছামতো বকা খেতে হবে!”

কথাটা বলে আবারও হেসে দিলেন।আমিও একটা মুচকি হাসি দিলাম।হাসি বন্ধ করে আবারও বললেন,

—- ” শোন মা আজকে অর্ক আর ওর বাবা মা এসেছিলো বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে।

অর্ক হলো সেই ছেলে যার সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা।কিন্তু সেটা তো আমার ভার্সিটি শেষ হওয়ার পর ওরা এখন কেন বিয়ের কথা বলতে এসেছে আর বিয়ের কথা শুনে বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো কৌতূহল মেটাতে বাবাকে প্রশ্ন করালাম,

—- ” কিন্তু বাবা বিয়ে তো আমার ভার্সিটি শেষ হওয়ার পরে হওয়ার কথা তাহলে ওরা এখন কেন কথা বলতে এসেছে?”

বাবা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললেন,

—- ” হ্যাঁ!কিন্তু অর্কের নাকি একটা কাজে বিদেশে যেতে হবে তিন বছরের জন্য।তাই বিয়েটা বিদেশ যাওয়ার আগেই বিয়ে টা দিতে চান উনারা।উনারা বলেছেন বিয়ের পরেই অর্ক বিদেশ চলে যাবে আর তুই এখানে থেকেই তোর পড়ালেখা চালিয়ে যাবি।ওর বিদেশ থেকে ফিরতে ফিরতে তোর ভার্সিটিও শেষ হয়ে যাবে।তুইকি এ বিয়েতে রাজি না?তুই রাজি নাহলে কিন্তু আমি এখনি ওদের না বলে দিবো।তোর অনিচ্ছায় আমি কিছু করতে চাই না! তোর যদি কাউকে পছন্দ থেকে থাকে তাহলে বল!তোর ইচ্ছা টাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি দামি!”

দুদিন আগে হলে আমি এখন রাজি হতাম না হয়তো এখনি রেহানের কথা বলতাম।কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস যখন আমার থেকে ভালোবাসার মানুষ কে পাওয়ার সুযোগ দিয়েছে তখন আমি বলতেই পারছি না তার কথা।ওই দিনের কথাগুলো মনে পরতেই বাবাকে চোখ বন্ধ করে বললাম,

—- ” বাবা আমি এই বিয়েতে রাজি ওদের বলে দিও।”

কথা টা বলেই ফোনটা কেটে দিয়ে বিছানার উপর ছুরে ফেলে দিয়ে কাঁদতে লাগলাম।নিজেকে খুব অসহায় লাগছে আজ।

চলবে,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে