ভালোবাসি পর্ব-০৪

0
841

#ভালোবাসি
#পর্ব_৪
#সুমাইয়া_জাহান

আমি বেলকনিতে চলে আসার পর তিহাও আমার পিছু পিছু বেলকনিতে এসে আমার সামনে দাড়িয়ে আমার কাঁদে ওর দুই হাত রেখে আমাকে ঝাকিয়ে বলতে লাগলো,

—- ” তুই এতোটা নিষ্ঠুর কবে থেকে হয়ে গেলি? একটা লোক তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে আর তুই তাকে বারবার ফিরিয়ে দিস!উনার জন্য তোর বিন্দুমাত্র ফিলিংস নেই তাই না!কিভাবে পারলি উনাকে এইভাবে কষ্ট দিতে?জানিস উনি তোকে কতোটা ভালোবাসে?তুই আজ ওখান থেকে চলে আসার পর কি হয়েছে জানিস?”

আমি অন্য দিকে মুখ ফিরেয়ে বললাম,

—- ” যা খুশি হোক তাতে আমার কিছু আসে যায় না।”

তিহা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,

—- ” হ্যা তোর কেন আসবে যাবে!একটা লোক তোকে ভালোবাসে তার প্রানটাই দিয়ে দিলো তাতে তোর কি তুই তো তাকে ভালোই বাসিস না।আমার একটা অনুরোধ রইলো তুই মানুষ টাকে নাই ভালোবাাসতে পারিস কিন্তু একটা মানুষ হিসেবে শেষ ইচ্ছে টা পুরোন করতে পারিস!”

ওর কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,

—- ” শ শ শেষ ই ইচ্ছে মানে?”

তিহা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,

—- ” থেকে চলে আসার পর রেহান ভাইয়া নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন।এক কথায় আত্মহত্যা করছেন।বুঝতে পেরেছিস তুই!শেষ নিশ্বাস ফেলার আগে উনি বলেছেন একবার তুই উনাকে ভালোবাসি কথাটা শুনতে চান।একটা মৃত মানুষ কে একটি বার ভালোবাসি কথাটা বলতেও কি তোর সমস্যা! ”

ওর কথা শুনে ধপ করে ফ্লোরে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম। আমার দিকবিদিক শুন্য হয়ে হয়ে গেছে। উনি এমন কিছু করবেন আমি কখনো ভাবতেও পারিনি। আমি তো উনার সাথে এমন ব্যবহার করেছি যাতে উনি আমার থেকে দুরে চলে যান।কিন্তু উনি যে এতো দুরে চলে যাবেন…..না না না উনি কোথাও যাবেন না! উনার কিচ্ছু হবে না!দই হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে ওঠে দাঁড়ালাম আর তিহাকে জিজ্ঞেস করলাম,

—- “উনি কি এখনো ওখানেই আছেন?”

তিহার হ্যাঁ বলার সাথে সাথে দৌড়ে বেরিয়ে আসলাম।চারিদিকে বারবার চোখ বোলাচ্ছি একটা কোনো গাড়ি পাওয়ার আশায়। কিন্তু পুরো রাস্তা ফাঁকা একটা গাড়ি দেখা যাচ্ছে না।কথায় আছে না বিপদ আসলে সব দিক থেকেই আসে।আমার হয়েছে ঠিক সেই অবস্থা! কোনো কিছু না পেয়েে পায়েই হাঁটা ধরলাম।কিছুক্ষণ হাটার পর পায়ে ব্যাথা অনুভব করলাম পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি তারাহুরোই আসতে গিয়ে জুতাই পরা হয়নি।আর খালি পায়ে রাস্তায় হাঁটার রাস্তার ইট পাথরের সাথে ব্যাথা পাচ্ছি। আমি ওদিকে তোয়াক্কা না করে আবার হাঁটার দিকে মন দিলাম।

পাঁচ মিনিটের রাস্তা পনেরো মিনিটে পৌঁছালাম। পার্কের ভিতর ঢুকেই চারিদিকে তাকাতে লাগলাম।একটু আগে যেখানে বাচ্চাদের হইচইতে ভরপুর ছিলো সেখানে এখন একদম ঠান্ডা পরিবেশ। কোনো শব্দ নেই কোনো আওয়াজ নেই শুধুই শুন্যতায় ভরা।সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি যেখানে রেহান একটু আগে আমাকে ভালোবাসি কথাটা বলেছিলো সেখানেই চোখ বন্ধ করে শুইয়ে আছেন।

দৌড়ে রেহানের কাছে গেলাম।উনাকে এভাবে পরে থাকতে দেখে আমার চারিদিকে অন্ধকার দেখতে লাগলাম।উনার পাশে বসে পরলাম।কিছুক্ষণ ফেলফেল করে উনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।কিছুক্ষণ পর শান্ত গলায় বললাম,

—- ” এভাবে কেন শুইয়ে আছেন আপনি? তারাতাড়ি উঠে তিহাকে আচ্ছা মতো বকা দিয়ে দেন তো ও আপনাকে নিয়ে কি সব বলছে!আপনার ঘুম পাচ্ছে! তাই ঘুমিয়ে আছেন! কিন্তু কেউ কি পার্কের ভিতর এভাবে ঘাসের উপর ঘুমায়?কেউ আপনাকে এভাবে দেখলে কিন্তু পাগল বলবে।তারাতাড়ি উঠুন!”

এতো বার করে বলার পরও উনি উঠছেন না।মেজাজটা এবার গরম হয়ে গেলো।তাই রাগের সাথে উনার শার্ট খামছে ধরে জোরে চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলাম,

—- ” উঠতে বলছি না আমি! শুনতে পাচ্ছেন না আপনি!উঠুন বলছি!নাহলে কিন্তু খারাপ হবে বলে দিলাম।আমার সাথে মজা করছেন আপনি!আমি কিন্তু এখন একদম মজা করার মুডে নেই।ওকে আমার সাথে মজা করতে চাচ্ছেন তো?দেখুন আমি খুব ভয় পেয়ে গেছি। এবার তো উঠুন!প্লিজ উঠুন না!আমার ভিষন ভয় করছে……..ওকে ফাইন আপনি জানতে চান তো আমি আপনাকে ভালোবাসি কি-না! হ্যাঁ হ্যাঁ আমি আপনাকে পাগলের মতো ভালোবাসি।এবার তো আপনার উত্তর পেয়ে গেছেন প্লিজ এবার উঠুন! ”

কথা গুলো বলতে বলতেই উনার বুকের উপর মাথা রেখে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম।হঠাৎ আমার মাথার উপর একটা হাতের স্পর্শ পেলাম আর সাথে সাথেই কারো দমফাটানো হাসির শব্দ কানে এলো।দুটো জিনিস একসাথে হওয়ার অবাকের সপ্তম আকাশে পৌঁছে গেলাম।মাথা তুলে দেখি রেহান এমন ভাবে হাসছে।আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনি শোয়া থেকে উঠে বসে কিছুক্ষণ দমফাটা হেসে নিয়ে নিজেকে সামলিয়ে বললো,

—- ” সিরিয়াসলি মিহু তুমি এমন রিয়েক্ট করবে আমি ভাবতেও পারিনি।তুমি তো সিনেমাকেও হার মানিয়ে দিলে।এতোক্ষণ বহু কষ্টে হাসি থামিয়ে রেখেছিলাম।”

কথাটা বলেই আবারও উনার দমফাটানো হাসিতে মেতে উঠলেন।আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এতোক্ষণ সব কিছু সাজানো নাটক ছিলো।তবে এটা জেনে খুশি হয়েছি যে উনার কিছু হয়নি।ভেবেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম।আমার সাথে এমন ফাজলামো করার যোগ্য জবাব তো এদের দিতে হবে।ঝাঁঝালো কন্ঠে বললাম,

—- ” মশকরা হচ্ছে! আমাকে কি আপনি জোকার পেয়েছেন যে আমার সাথে এমন নাটক করছেন?এসব নাটকের মানে কি?”

উনি ভ্রু উঁচু করে বললেন,

—- ” তাহলে কি সত্যি কারে মরে গেলে ভালো হতো!”

উনার কথা শেষ হওয়ার আগেই উনার মুখ চেপে ধরলাম আর চোখ রাঙিয়ে বললাম,

—- ” কি শুরু করেছেন আপনি?একবার এসব নাটক করছেন তো আরেকবার এসব উল্টো পাল্টা কথা বলছেন!আর একবার যদি এমন করেন তাহলে কিন্তু একদম ভালো হবে!”

রেহান ঠোঁট উল্টে বাচ্চাদের মতো করে বললো,

—- ” আমার কি দোষ তুমি তো বললা নাটক কেন করছি তাই তো ভাবলাম সত্যি কারে হলে তুমি খুশি হতা!”

একে তো প্রচন্ড মাথা গরম হয়ে আছে তার উপর উনার এমন কথা বার্তার রাগ আমার সপ্তম আকাশে চলে গেছে। দাতে দাত চেপে চোখ বন্ধ করে রাগটাকে কন্ট্রোল করে শান্ত গলায় বললাম,

—- ” একটু আগে দেখে নিয়েছেন তো আমার কিরকম অবস্থা হয়েছিলো।সো নেক্সট টাইম এরকম মজা আর করবেন না।”

কথাটা বলেই উঠে দাড়াতে লাগলাম।কিন্তু উঠে দাঁড়ানোর আগেই রেহান আমার হাত টা ধরে আবার বসিয়ে দিলো আর বলতে লাগলো,

—- ” যাকে পাগলের মতো ভালোবাসো। যার কোনো কিছু হলে পুরো পাগল হয়ে যাও তাকে ছেড়ে কোথায় যাচ্ছো?আর এবার কিন্তু বলতে পারবে না ভালোবাসো না একটু আগেই কিন্তু নিজের মুখে শিকার করেছো আমায় কতোটা ভালোবাসো।তাহলে কেন ছেড়ে যেতে চাচ্ছো?”

আমি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম।তার পর বলতে লাগলাম,

—- ” আমি তোমার মতো বড়োলোক বাড়ির মেয়ে না।আমি খুবই মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে।আমরা দু বোন।ছোট থেকেই দেখে এসেছি বাবা খুব কষ্ট করে আমাদের দুবোনের পড়ালেখা চালিয়েছে।বাবার টাকা কম থাকলেও আমাদের কোনো ইচ্ছেই কখনো অপুর্ন রাখেন নি।সবসময় আমরা কিসে খুশি থাকবো তা চিন্তা করেছেন।নিজের স্বপ্ন গুলো কে জলাঞ্জলি দিয়েও আমাদের স্বপ্ন গুলোকে সফল করার পথে এগিয়ে দিয়ে গেছেন।এমনি আমাকে এখানে ভর্তি করাতেও বাবার অনেক কষ্ট হয়েছে তবুও হাসি মুখে আমায় এখানে ভর্তি করিয়েছেন।কখনো নিজের কষ্ট গুলোকে আমাদের বুঝতে দেননি। সবসময়ই হাসি মুখে আমাদের থেকে কষ্ট গুলো কে আরাল করে রাখেন।তাই আমিও ঠিক করেছি বাবার পছন্দেই আমি বিয়ে করবো।নিজের পছন্দে নয়।তাই আমি আপনাকে ভালোবাসলেও তার পুর্নতা দিতে পারবো না।”

আমার কথা শুনে রেহান হাসতে লাগলো।আমি ভ্রু কুঁচকে প্রশ্নত্মাক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।কিছুক্ষণ পর হাসি থামিয়ে বললেন,

—- ” এই একটা কারনে তুমি আমায় প্রতিদিন রিজেক্ট করতে?তোমার কোন দিক থেকে মনে হয় তোমার বাবার আমাকে পছন্দ হবে না?আমি কি এতোটাই খারাপ বলে তোমার মনে হয়।”

—- ” এখানে আপনাকে পছন্দ হওয়ার না হওয়ার প্রশ্ন আসছে না।আসলে আমাদের গ্রামেরই একটা ছেলেকে আমার জন্য পছন্দ করে রেখেছেন বাবা।আর আমার ভার্সিটি শেষ হলেই উনার সাথে আমার বিয়ে ডেট ঠিক করে রেখেছেন।”

রেহান আমার কথাটা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার বললেন,

—- ” ওকে নো প্রবলেম।আমি তোমার বাবাকে পটিয়ে ফেলে ওই বেটাকে তোমার আমার মাঝখান থেকে সরিয়ে ফেলবো।তাতে তো আমাকে ভালোবাসতে কোনো সমস্যা নেই।”

কথাটা বলেই উনি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন।আমিও আর না করতে পারলাম না।কারণ আমি তো উনাকে ভিষণ ভালোবেসে ফেলেছি।তাই আমি উনার হাতের উপর হাত রেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে মাথা নারিয়ে সম্মতি জানালাম। তাতেই উনার মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো।

একটু আগেই রেহান আমাকে হোস্টেলের সামনে নামিয়ে দিয়ে গেছে।এখন আমি বসে আছি আমার মহামান্য বেস্টির সামনে।উনি এখন এমন একটা ভাব করে চিপস গিলছেন যেন এতোক্ষণ কিছুই হয়নি আর উনি কিছুই জানেন না।

—- ” তুই কি করে আমার সাথে এমন টা করতে পারলি?তুই কি আমার বন্ধু না উনার?”

গম্ভীর গলায় কথাটা বলে ওর উত্তরের অপেক্ষায় ওর দিকে সরু চোখে তাকিয়ে আছি আমি। আর উনি তো উনার মতো করে চিপস গিলতে ব্যাস্ত জেন আমার কথা উনার কান পর্যন্ত পৌছাছেই না।তাই ওর হাত থেকে চিপসের প্যাকেট টা ছোঁ মেরে নিয়ে ঝাঁঝালো গলায় বললাম,

—- ” আমার কথা তোর কানে যাচ্ছে না?নাকি কানা হয়ে গেছিস!”

ও আবারও আমার হাত থেকে চিপস টা নিয়ে পুরো প্যাকেট শেষ করে হাত জেরে বললো,

—- ” হ্যাঁ কি জেনো বলছিলি?”

আমি চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই একটা বেক্কেল মার্কা হাসি দিয়ে বললো,

—- ” আমি তো দুটো ভালোবাসার মানুষ কে এক করলাম।কোথায় আমায় থ্যাংকস দিবি ট্রিট দিবি তা না…..”

আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই ফোনটা বেজে উঠলো।তাকিয়ে দেখি স্কিনে রেহানের নাম টা ভেসে উঠছে তা দেখে তিহা বলতে লাগলো,

—- ” যাও যাও এখন তো বেস্টু কে ছেড়ে প্রেমিকের সাথে প্রেম আলাপ করতে ব্যাস্ত থাকেবি।”

—- ” তোকে তো আমি পরে দেখে নিবো।”

চোখ গরম করে তিহা কে কথাটা বলেই ফোনটা নিয়ে বেলকনিতে চলে আসলাম।

চলবে,,,,,,,আমি বেলকনিতে চলে আসার পর তিহাও আমার পিছু পিছু বেলকনিতে এসে আমার সামনে দাড়িয়ে আমার কাঁদে ওর দুই হাত রেখে আমাকে ঝাকিয়ে বলতে লাগলো,

—- ” তুই এতোটা নিষ্ঠুর কবে থেকে হয়ে গেলি? একটা লোক তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে আর তুই তাকে বারবার ফিরিয়ে দিস!উনার জন্য তোর বিন্দুমাত্র ফিলিংস নেই তাই না!কিভাবে পারলি উনাকে এইভাবে কষ্ট দিতে?জানিস উনি তোকে কতোটা ভালোবাসে?তুই আজ ওখান থেকে চলে আসার পর কি হয়েছে জানিস?”

আমি অন্য দিকে মুখ ফিরেয়ে বললাম,

—- ” যা খুশি হোক তাতে আমার কিছু আসে যায় না।”

তিহা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,

—- ” হ্যা তোর কেন আসবে যাবে!একটা লোক তোকে ভালোবাসে তার প্রানটাই দিয়ে দিলো তাতে তোর কি তুই তো তাকে ভালোই বাসিস না।আমার একটা অনুরোধ রইলো তুই মানুষ টাকে নাই ভালোবাাসতে পারিস কিন্তু একটা মানুষ হিসেবে শেষ ইচ্ছে টা পুরোন করতে পারিস!”

ওর কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,

—- ” শ শ শেষ ই ইচ্ছে মানে?”

তিহা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,

—- ” থেকে চলে আসার পর রেহান ভাইয়া নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন।এক কথায় আত্মহত্যা করছেন।বুঝতে পেরেছিস তুই!শেষ নিশ্বাস ফেলার আগে উনি বলেছেন একবার তুই উনাকে ভালোবাসি কথাটা শুনতে চান।একটা মৃত মানুষ কে একটি বার ভালোবাসি কথাটা বলতেও কি তোর সমস্যা! ”

ওর কথা শুনে ধপ করে ফ্লোরে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম। আমার দিকবিদিক শুন্য হয়ে হয়ে গেছে। উনি এমন কিছু করবেন আমি কখনো ভাবতেও পারিনি। আমি তো উনার সাথে এমন ব্যবহার করেছি যাতে উনি আমার থেকে দুরে চলে যান।কিন্তু উনি যে এতো দুরে চলে যাবেন…..না না না উনি কোথাও যাবেন না! উনার কিচ্ছু হবে না!দই হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে ওঠে দাঁড়ালাম আর তিহাকে জিজ্ঞেস করলাম,

—- “উনি কি এখনো ওখানেই আছেন?”

তিহার হ্যাঁ বলার সাথে সাথে দৌড়ে বেরিয়ে আসলাম।চারিদিকে বারবার চোখ বোলাচ্ছি একটা কোনো গাড়ি পাওয়ার আশায়। কিন্তু পুরো রাস্তা ফাঁকা একটা গাড়ি দেখা যাচ্ছে না।কথায় আছে না বিপদ আসলে সব দিক থেকেই আসে।আমার হয়েছে ঠিক সেই অবস্থা! কোনো কিছু না পেয়েে পায়েই হাঁটা ধরলাম।কিছুক্ষণ হাটার পর পায়ে ব্যাথা অনুভব করলাম পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি তারাহুরোই আসতে গিয়ে জুতাই পরা হয়নি।আর খালি পায়ে রাস্তায় হাঁটার রাস্তার ইট পাথরের সাথে ব্যাথা পাচ্ছি। আমি ওদিকে তোয়াক্কা না করে আবার হাঁটার দিকে মন দিলাম।

পাঁচ মিনিটের রাস্তা পনেরো মিনিটে পৌঁছালাম। পার্কের ভিতর ঢুকেই চারিদিকে তাকাতে লাগলাম।একটু আগে যেখানে বাচ্চাদের হইচইতে ভরপুর ছিলো সেখানে এখন একদম ঠান্ডা পরিবেশ। কোনো শব্দ নেই কোনো আওয়াজ নেই শুধুই শুন্যতায় ভরা।সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি যেখানে রেহান একটু আগে আমাকে ভালোবাসি কথাটা বলেছিলো সেখানেই চোখ বন্ধ করে শুইয়ে আছেন।

দৌড়ে রেহানের কাছে গেলাম।উনাকে এভাবে পরে থাকতে দেখে আমার চারিদিকে অন্ধকার দেখতে লাগলাম।উনার পাশে বসে পরলাম।কিছুক্ষণ ফেলফেল করে উনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।কিছুক্ষণ পর শান্ত গলায় বললাম,

—- ” এভাবে কেন শুইয়ে আছেন আপনি? তারাতাড়ি উঠে তিহাকে আচ্ছা মতো বকা দিয়ে দেন তো ও আপনাকে নিয়ে কি সব বলছে!আপনার ঘুম পাচ্ছে! তাই ঘুমিয়ে আছেন! কিন্তু কেউ কি পার্কের ভিতর এভাবে ঘাসের উপর ঘুমায়?কেউ আপনাকে এভাবে দেখলে কিন্তু পাগল বলবে।তারাতাড়ি উঠুন!”

এতো বার করে বলার পরও উনি উঠছেন না।মেজাজটা এবার গরম হয়ে গেলো।তাই রাগের সাথে উনার শার্ট খামছে ধরে জোরে চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলাম,

—- ” উঠতে বলছি না আমি! শুনতে পাচ্ছেন না আপনি!উঠুন বলছি!নাহলে কিন্তু খারাপ হবে বলে দিলাম।আমার সাথে মজা করছেন আপনি!আমি কিন্তু এখন একদম মজা করার মুডে নেই।ওকে আমার সাথে মজা করতে চাচ্ছেন তো?দেখুন আমি খুব ভয় পেয়ে গেছি। এবার তো উঠুন!প্লিজ উঠুন না!আমার ভিষন ভয় করছে……..ওকে ফাইন আপনি জানতে চান তো আমি আপনাকে ভালোবাসি কি-না! হ্যাঁ হ্যাঁ আমি আপনাকে পাগলের মতো ভালোবাসি।এবার তো আপনার উত্তর পেয়ে গেছেন প্লিজ এবার উঠুন! ”

কথা গুলো বলতে বলতেই উনার বুকের উপর মাথা রেখে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম।হঠাৎ আমার মাথার উপর একটা হাতের স্পর্শ পেলাম আর সাথে সাথেই কারো দমফাটানো হাসির শব্দ কানে এলো।দুটো জিনিস একসাথে হওয়ার অবাকের সপ্তম আকাশে পৌঁছে গেলাম।মাথা তুলে দেখি রেহান এমন ভাবে হাসছে।আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনি শোয়া থেকে উঠে বসে কিছুক্ষণ দমফাটা হেসে নিয়ে নিজেকে সামলিয়ে বললো,

—- ” সিরিয়াসলি মিহু তুমি এমন রিয়েক্ট করবে আমি ভাবতেও পারিনি।তুমি তো সিনেমাকেও হার মানিয়ে দিলে।এতোক্ষণ বহু কষ্টে হাসি থামিয়ে রেখেছিলাম।”

কথাটা বলেই আবারও উনার দমফাটানো হাসিতে মেতে উঠলেন।আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এতোক্ষণ সব কিছু সাজানো নাটক ছিলো।তবে এটা জেনে খুশি হয়েছি যে উনার কিছু হয়নি।ভেবেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম।আমার সাথে এমন ফাজলামো করার যোগ্য জবাব তো এদের দিতে হবে।ঝাঁঝালো কন্ঠে বললাম,

—- ” মশকরা হচ্ছে! আমাকে কি আপনি জোকার পেয়েছেন যে আমার সাথে এমন নাটক করছেন?এসব নাটকের মানে কি?”

উনি ভ্রু উঁচু করে বললেন,

—- ” তাহলে কি সত্যি কারে মরে গেলে ভালো হতো!”

উনার কথা শেষ হওয়ার আগেই উনার মুখ চেপে ধরলাম আর চোখ রাঙিয়ে বললাম,

—- ” কি শুরু করেছেন আপনি?একবার এসব নাটক করছেন তো আরেকবার এসব উল্টো পাল্টা কথা বলছেন!আর একবার যদি এমন করেন তাহলে কিন্তু একদম ভালো হবে!”

রেহান ঠোঁট উল্টে বাচ্চাদের মতো করে বললো,

—- ” আমার কি দোষ তুমি তো বললা নাটক কেন করছি তাই তো ভাবলাম সত্যি কারে হলে তুমি খুশি হতা!”

একে তো প্রচন্ড মাথা গরম হয়ে আছে তার উপর উনার এমন কথা বার্তার রাগ আমার সপ্তম আকাশে চলে গেছে। দাতে দাত চেপে চোখ বন্ধ করে রাগটাকে কন্ট্রোল করে শান্ত গলায় বললাম,

—- ” একটু আগে দেখে নিয়েছেন তো আমার কিরকম অবস্থা হয়েছিলো।সো নেক্সট টাইম এরকম মজা আর করবেন না।”

কথাটা বলেই উঠে দাড়াতে লাগলাম।কিন্তু উঠে দাঁড়ানোর আগেই রেহান আমার হাত টা ধরে আবার বসিয়ে দিলো আর বলতে লাগলো,

—- ” যাকে পাগলের মতো ভালোবাসো। যার কোনো কিছু হলে পুরো পাগল হয়ে যাও তাকে ছেড়ে কোথায় যাচ্ছো?আর এবার কিন্তু বলতে পারবে না ভালোবাসো না একটু আগেই কিন্তু নিজের মুখে শিকার করেছো আমায় কতোটা ভালোবাসো।তাহলে কেন ছেড়ে যেতে চাচ্ছো?”

আমি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম।তার পর বলতে লাগলাম,

—- ” আমি তোমার মতো বড়োলোক বাড়ির মেয়ে না।আমি খুবই মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে।আমরা দু বোন।ছোট থেকেই দেখে এসেছি বাবা খুব কষ্ট করে আমাদের দুবোনের পড়ালেখা চালিয়েছে।বাবার টাকা কম থাকলেও আমাদের কোনো ইচ্ছেই কখনো অপুর্ন রাখেন নি।সবসময় আমরা কিসে খুশি থাকবো তা চিন্তা করেছেন।নিজের স্বপ্ন গুলো কে জলাঞ্জলি দিয়েও আমাদের স্বপ্ন গুলোকে সফল করার পথে এগিয়ে দিয়ে গেছেন।এমনি আমাকে এখানে ভর্তি করাতেও বাবার অনেক কষ্ট হয়েছে তবুও হাসি মুখে আমায় এখানে ভর্তি করিয়েছেন।কখনো নিজের কষ্ট গুলোকে আমাদের বুঝতে দেননি। সবসময়ই হাসি মুখে আমাদের থেকে কষ্ট গুলো কে আরাল করে রাখেন।তাই আমিও ঠিক করেছি বাবার পছন্দেই আমি বিয়ে করবো।নিজের পছন্দে নয়।তাই আমি আপনাকে ভালোবাসলেও তার পুর্নতা দিতে পারবো না।”

আমার কথা শুনে রেহান হাসতে লাগলো।আমি ভ্রু কুঁচকে প্রশ্নত্মাক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।কিছুক্ষণ পর হাসি থামিয়ে বললেন,

—- ” এই একটা কারনে তুমি আমায় প্রতিদিন রিজেক্ট করতে?তোমার কোন দিক থেকে মনে হয় তোমার বাবার আমাকে পছন্দ হবে না?আমি কি এতোটাই খারাপ বলে তোমার মনে হয়।”

—- ” এখানে আপনাকে পছন্দ হওয়ার না হওয়ার প্রশ্ন আসছে না।আসলে আমাদের গ্রামেরই একটা ছেলেকে আমার জন্য পছন্দ করে রেখেছেন বাবা।আর আমার ভার্সিটি শেষ হলেই উনার সাথে আমার বিয়ে ডেট ঠিক করে রেখেছেন।”

রেহান আমার কথাটা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার বললেন,

—- ” ওকে নো প্রবলেম।আমি তোমার বাবাকে পটিয়ে ফেলে ওই বেটাকে তোমার আমার মাঝখান থেকে সরিয়ে ফেলবো।তাতে তো আমাকে ভালোবাসতে কোনো সমস্যা নেই।”

কথাটা বলেই উনি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন।আমিও আর না করতে পারলাম না।কারণ আমি তো উনাকে ভিষণ ভালোবেসে ফেলেছি।তাই আমি উনার হাতের উপর হাত রেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে মাথা নারিয়ে সম্মতি জানালাম। তাতেই উনার মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো।

একটু আগেই রেহান আমাকে হোস্টেলের সামনে নামিয়ে দিয়ে গেছে।এখন আমি বসে আছি আমার মহামান্য বেস্টির সামনে।উনি এখন এমন একটা ভাব করে চিপস গিলছেন যেন এতোক্ষণ কিছুই হয়নি আর উনি কিছুই জানেন না।

—- ” তুই কি করে আমার সাথে এমন টা করতে পারলি?তুই কি আমার বন্ধু না উনার?”

গম্ভীর গলায় কথাটা বলে ওর উত্তরের অপেক্ষায় ওর দিকে সরু চোখে তাকিয়ে আছি আমি। আর উনি তো উনার মতো করে চিপস গিলতে ব্যাস্ত জেন আমার কথা উনার কান পর্যন্ত পৌছাছেই না।তাই ওর হাত থেকে চিপসের প্যাকেট টা ছোঁ মেরে নিয়ে ঝাঁঝালো গলায় বললাম,

—- ” আমার কথা তোর কানে যাচ্ছে না?নাকি কানা হয়ে গেছিস!”

ও আবারও আমার হাত থেকে চিপস টা নিয়ে পুরো প্যাকেট শেষ করে হাত জেরে বললো,

—- ” হ্যাঁ কি জেনো বলছিলি?”

আমি চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই একটা বেক্কেল মার্কা হাসি দিয়ে বললো,

—- ” আমি তো দুটো ভালোবাসার মানুষ কে এক করলাম।কোথায় আমায় থ্যাংকস দিবি ট্রিট দিবি তা না…..”

আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই ফোনটা বেজে উঠলো।তাকিয়ে দেখি স্কিনে রেহানের নাম টা ভেসে উঠছে তা দেখে তিহা বলতে লাগলো,

—- ” যাও যাও এখন তো বেস্টু কে ছেড়ে প্রেমিকের সাথে প্রেম আলাপ করতে ব্যাস্ত থাকেবি।”

—- ” তোকে তো আমি পরে দেখে নিবো।”

চোখ গরম করে তিহা কে কথাটা বলেই ফোনটা নিয়ে বেলকনিতে চলে আসলাম।

চলবে,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে