ভালোবাসায় তুমি আমি পর্ব-৫+৬

0
1052

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি_পর্ব_৫
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পরছে নীলা আর প্রাপ্তি ভিজেই যাচ্ছে। ভিজে একেবারে একাকার হয়ে গেছে দুজনেই। ওদের ব্যাগ দুটো একটা দোকানের ব্রেঞ্চে রেখে ভিজে যাচ্ছিল।

নীলার প্রথম প্রাপ্তির কথা রাজি না হলেও এখন বেশ উপভোগ করছে সে বৃষ্টি। একবার জোরে হচ্ছে আবার আস্তে বৃষ্টির পানিতে যেন সাথে তার জীবনটাও পাল্টে যাবে। সব দুঃখ-কষ্ট যেনো ধুয়ে মুছে যাচ্ছে।

নীলা দুহাত মেলে চোখ দুটো বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে । বৃষ্টি হওয়ার জন্য বেশি গাড়ি ছিলো না রাস্তায়। মাঝে দু একটা গাড়ি শনশন শব্দ করে জোরে চলে যাচ্ছে।

শুভ্র জোরে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলো। এতো বৃষ্টির কারনে শুভ্রর গাড়িটা ঠিক মতো চালাতে পারছিলো না তাও চালিয়ে যাচ্ছিলো তখনি একটা গর্তের মধ্যে শুভ্রর গাড়িটা আটকে পরে।

শুভ্র কিছুতেই গাড়িটা তুলতে পারলো না। বৃষ্টির কারনে তেমন কোনো লোক ও দেখা যাচ্ছে না।শুভ্র বিরক্তি নিয়ে গাড়ির স্টিয়ারিং এ জোর একটা ঘুশি দিলো আর বললো এই গাড়িটাকেও এখনি গর্তে পরতে হলো। ডেম ইট।

শুভ্র কিছু না ভেবে গাড়ি থেকে নেমে পরে সামনেই একটা দোকান দেখা যাচ্ছে।

। ওখানে যায় যদি কাউকে পায় তাহলে হেল্প নেওয়া যায়। শুভ্র গাড়ি থেকে নেমে দেখলো রাস্তার পরিবেশ টা তো খুব সুন্দর যাকে বলে দেখার মতো।

শুভ্র প্রায় দৌড়ে চলে গেলো ঔ দোকান টাই।গিয়ে নিজের শরীর থেকে পানি গুলো ঝারছিলো।

তখনি একটা জায়গায় তার চোখ আটকে যায়। রাস্তার অপর পাশে দুটো মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে। শুভ্রর যেনো পাশের মেয়েটার দিকে চোখ আটকে যায়।ব্যঞ্জনহীন ভাবে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আমি তার দিকে। এই প্রথম কোনো মেয়েকে দেখে আমার পৃথিবীটা যেনো থমকে গেছে!!!

এক সাইড করে বিনুনি করা।কিন্তু বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে আকাশ পানে চোখ দুটো বন্ধ করে আছে মেয়েটা।কপাল,চোখ, ঠোঁট চুইয়ে পানি পরছে। মেয়েটার ঠোঁটের দিকে তাকাতেই যেনো আমার নিশ্বাস আটকে যাচ্ছে।

হঠাৎ পাশের মেয়েটা ধাক্কা দিতেই সে দৌড়ে চলে আসছে। একি মেয়ে দুটো তো এদিকেই আসছে। এখন কি করবো। শুভ্র এতোই মুগ্ধ ভাবে দেখছিল যে সে নরতে পারছিল না সে যে কখন বসে পরেছে নিজেও খেয়াল করেনি।মেয়ে দুটো সামনে এসে বলে—

এক্সকিউজ মি ভাইয়া পাশের মেয়েটা বলে –আমি এখনো সেই মেয়েটার দিকেই তাকিয়ে আছি এক ধ্যানে।

প্রাপ্তিঃএইযে মশাই সামনে হাত নেড়ে হ্যাঁলো মিস্টার,,এই যে–

নীলাঃআজব লোক তো বাবা। কখন থেকে ডাকছিস শুনছে না কেনো কালা নাকি।

শুভ্র সেই এক ভাবে তাকিয়েই আছে।হটাৎ কারোর জোরে চিল্লিয়ে ডাকায় তার ধ্যান ভাঙে।

নীলাঃ এই যে মিস্টার -সেই কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাননি নাকি উঠুন আমরা চলে যাবো।

শুভ্র দেখলো মেয়েটা তার কমল ঠোঁট দুটো নাড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে কথা বলছে।শুভ্রর যেনো নেশা লেগে যাচ্ছে ওই কোম্ল ঠোঁট জোড়ায়।

শুভ্র নিজেকে সামলে নিয়ে হালকা গলাটা কে খেকিয়ে নিয়ে কলারের টাই ঠিক করলো আর বললো

শুভ্রঃ তো যান আপনাদের কি আমি আটকে রেখেছি নাকি আজব তো একটা ভাব নিয়ে শুকনো ঢুক গিলে।

নীলাঃ হ্যাঁ – আটকে রেখেছেন তো –উঠুন

শুভ্রঃ এই মেয়েটা কি বুঝতে পেরে গেলো নাকি যে আমি চাইছি না যে মেয়েটা এখান থেকে যাক (মনে মনে) তারপর একটু নড়েচড়ে –তা কিভাবে আপনাকে আটকে রেখেছি বলুন তো–

প্রাপ্তিঃ আরে মিস্টার আগে আপনি উঠুন তারপর বলছি।

নীলা কমড়ে হাত দিয়ে চোখ কোনা করে তাকিয়ে আছে শুভ্রর দিকে

শুভ্র এতোক্ষনে বুঝতে পারলো যে সে কিছু একটার উপর বসে আছে তারপর সে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলো যে সে একটা ব্রেঞ্চে উপর দুটো ব্যাগের উপর বসে আছে। শুভ্র তারাতারি করে উঠে দাঁড়িয়ে —

শুভ্রঃ স্যরি–আ-আ-সলে খে-খেয়া-ল করিনি। তোতলাতে তোতলাতে বললো শুভ্র। নীলার দিকে এক ভাবে তাকিয়ে থেকে ব্যাগ দুটো এগিয়ে দিলো নীলার দিকে–এই নিন আপনার ব্যাগ।

প্রাপ্তি তখন থেকে খেয়াল করে যাচ্ছে লোকটা নীলার দিকে কিভাবে তাকিয়ে আছে –তাই সে বললো—

প্রাপ্তিঃ হুম তাই তো কিভাবে খেয়াল করবেন।আপনি তো তাকিয়ে থাকতে ব্যাস্ত ছিলেন। এই বেটা আপনার মতলব টা কি হ্যাঁ বলুন তো। আমার বান্ধুবীকে ওইভাবে দেখছেন কেনো —

শুভ্রঃ মানে ক -ক-কি বলতে চাইছেন আপনি আমি কেনো আপনার বান্ধুবীকে দিকে তাকিয়ে থাকতে যাবো।

প্রাপ্তির কথা শুনে নীলা ফট করে প্রাপ্তির দিকে তাকালো —

নীলাঃ-এই তুই এসব কি বলছিস হ্যাঁ।তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি।আমরা আজই লোকটা কে দেখলাম আর তুই এসব কি আবল তাবল বকছিস। বাজে কথা বাদ দে- এখান থেকে চল এখন —
প্রাপ্তির কিছুটা কাছে ঘেসে চাপা স্বরে বললো নীলা।

প্রাপ্তিঃএই তুই চুপ কর দেখছিস না এই লোকটা তকে কেমন কেবলার মতো দেখছে।
এই বেটা কি হলো কথা বলছেন না কেনো। ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো– প্রাপ্তি

শুভ্র চোখ নামিয়ে ঢোক গিলে মনে মনে বললো শুভ্র এদেরকে বুঝতে দিলে হবে না কন্ট্রোল কন্ট্রোল।।

শুভ্রঃ দেখুন আপনি কিন্তু একটু বেশিই বলছেন আপনি জানেন আমি কে? কাকে কি বলছেন।

নীলাঃ এই প্রাপ্তি তুই কি যাবি নাকি আমরা এখানে ব্যাগ নিতে এসেছি ওই অচেনা লোকটার সাথে ঝগড়া করতে নয় এই চল এইবার আর কথা না। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে এরপর যদি আরও দেরি হয় তাহলে খুব খারাপ হবে।

এই বলে নীলা প্রাপ্তিকে এক প্রকাত টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো তখনি— পিছনে কারোর ডাকে তাকালো দুজনেই

শুভ্রঃ আসলে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি আপনারা চাইলে আমি আপনাদের লিফট দিতে পারি সামনেই আমার গাড়ি আছে।

নীলা আর প্রাপ্তি দুজনেই অবাক এই লোক টা বলে কি।

নীলাঃ আমরা আপনার গাড়িতে কেন যাবো আপনাকে চিনি না জানি না আজব তো। নীলা একটু বিরক্ত হয়ে বললো।

প্রাপ্তিঃ দেখেছিস তোকে বললাম না এই লোকটার মতলব ভালো না । এখন আবার নিজের ইচ্ছায় বলছে লিফট দিবে।
নীলাঃনা লাগবে না– থ্যাংক ইউ। আমরা চলে যাবো
এই বলে দুজনেই হাটা ধরে জোরে জোরে।

আর শুভ্র ওদের দুজনের যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো।

শুভ্র মনে মনে ভাবতে লাগলো যে করেই হক এই মেয়েটার খোঁজ আমাকে নিতেই হবে।

এই বলে সে গাড়ির দিকে যাবে তখনি একটা লোক আসলো আর বললো —

লোকঃ আজ্ঞে স্যার মহাসয় আপনার কি কোনো সমস্যা হয়েছে? প্রশ্ন করে তাকিয়ে আছে শুভ্রর দিকে।

লোকটা মনে হয় দোকানের মালিক হবে শুভ্র মনে মনে বললো।

শুভ্রঃ হ্যাঁ আসলে সামনে আমার গাড়িটা আটকে গেছে একটা গর্তে একটু যদি ধাক্কা দিতেন তাহলে খুব উপক্রিত হতাম।

লোকঃ ঠিক আছে স্যার চলুন।
শুভ্র আর লোকটা চললো গাড়ির দিকে।

শুভ্র গাড়ির কাছে যেতেই গাড়ির চাবিটা ঢুকিয়ে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে।

লোকটার সাথে শুভ্রও ধাক্কা দিয়ে গাড়িটা তুলে ফেললো আর গাড়িতে গিয়ে বসে পরে।
লোকটা চলে যেতে নিলে শুভ্র লোকটাকে ডেকে বেশ কিছু টাকা দিলেন।

আরে আরে কি করতেছেন স্যার টাকা লাগতো না মানুষই তো মানুষের উপকারে আসে।

শুভ্রঃ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু আমি আপনাকে এই জন্য টাকা দিচ্ছি না। ওই দোকান টা কি আপনার। আপনাকে একটা ইনফরমেশন দিতে হবে পারবেন

লোকঃ হ্যাঁ ওই দোকান টা আমার কিন্তু স্যার কি ইনফরমেশন দিতে হবে বলুন।

শুভ্র লোকটার হাতে জোর করে টাকা গুলো হাতে ধরিয়ে দিলো—আর বললো একটা মেয়ের খোঁজ দিতে হবে আমার মনে হয় এই দিক দিয়েই মেয়েটা কলেজ বা ভার্সিটি যায়। মেয়েটির লাল খয়েরী রঙের একটি ব্যাগ আছে। আর খুব সাদা সিদে সাধারণ মেয়েটি দেখবেন শুধু কখন কোথায় যায়।

লোকঃ ওকে স্যার রাখবো।

শুভ্রঃ থ্যাংকস!! এই নিন আমার কার্ড রেখে দিন যেকোনো খবর আমাকে দিবেন। মেয়েটা কোথায় থাকে এভরিথিং সব খবর আমাকে জানাবেন ঠিক আছে। এই বলে শুভ্র চলে গেলো।

লোকটা খুব খুশিই হলো তার এই টাকা উপকার হলো। লোকটা শুভ্রর গাড়ির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো যতক্ষণ দেখা যাচ্ছিলো।
——————————————————— নীলা তরিঘরি করে প্রায় কাপতে কাপতে ঘরে ঢুকছে আর ভাবছে আজকে হবে তার। আজকেও নিশ্চয়ই তাকে মার খেতে হবে। এই সব ভেবে ভেবে ঘরে ঢুকতে যাবে তখনি নীলার চোখ পরলো একটা ছেলের দিকে।

খুব সুন্দর দেখতে ছেলেটা দেখেই মনে হচ্ছে খুব আভিজাত্য পরিবার থেকে বিলং করে। এই নিশ্চয় জীনিয়া আপুর ফিয়্যেন্সি হবে সাথে জীনিয়া আপুও আছে ছেলেটার হাত জড়িয়ে ধরে ।

মিসেস খানও আছেন। হেসে হেসে কথা বলছেন ছেলেটার সাথে

নীলা কিছুটা শব্দ করে গলাটা পরিষ্কার করে ঘরে ঢুকছে অমনি সবাই গল্প করা বাদ দিয়ে দরজার দিকে তাকায়–

মিসেস খান তো অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকায় নীলার দিকে।

আর ফাহিমও নীলার দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে রইলো। এমন ভাবে তাকিয়ে আছে ফাহিম নীলার দিকে মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই গিলে খাবে —

নীলা বুঝতে পারছে তার কপালে শনি আছে। না জানি কখন এসেছে ছেলেটা আস্তে আস্তে নীলা ঘরে ঢুকছে —

তখনি ফাহিম বলে মিসেস খানকে জিজ্ঞেস করে আন্টি এই মেয়েটা কে — নীলার দিকে তাকিয়ে—

চলবে—–

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্বঃ(৬)
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

ফাহিমঃ আন্টি এই মেয়েটা কে? একে তো চিনতে পারলাম না। কে এই মেয়েটা ? নীলার দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো ফাহিম।

রিশিকাঃ আরে বেটা তুমি বাদ দাও তো এসব কথা। ও আমাদের বাড়িতেই থাকে ছোট বেলা থেকেই।
ওই মেয়েটা এই বাড়ির অবৈধ সন্তান। আমাদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছি। খেতে পারতো না রাস্তায় থাকতো যদি আমরা আশ্রয় না দিতাম। তুমি তো জানোই ফাহিম বেটা তোমার আংকেল কেমন মানুষ । উনি নিজের দায়িত্ব কখনো এড়িয়ে যায় না। লেখা পড়া খাওয়া থাকা সবকিছুর দায়িত্ব নিয়েছেন তোমার আংকেল ওর। এক সাথে সব কথা বলে থামলো রিশিকা।

ফাহিমঃ এই মেয়েটা আংকেলের অবৈধ সন্তান । বাট দেখে তো মনে হচ্ছে না। আবার লেখাপড়াও করাচ্ছেন আংকেল। বাহ আজকাল আশ্রিতদেরও কি কপাল।জীনিয়া বেব তুমি তো এর কথা আগে কোনদিন বলো নি!!জীনিয়ার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো জিজ্ঞেস করলো ফাহিম।

জীনিয়াঃ অফফহ জান তুমি এসব নিয়ে ভেবো না তো। তুমি আমাকে নিয়ে ভাবো। আর ও কে এই বাড়ির? অবৈধ সন্তান অর কথা তোমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করিনি। আর তুমি শুধু আমাকে নিয়ে ভাববে আর কাউকে নিয়ে ভাবতে হবে না।আমরা বসি না চলো জান। বসে কথা বলি।

ফাহিমঃ ওকে বেব চলো আমরা বসি এখন।

নীলা শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে সবকিছু। বাড়ির অবেধ সন্তানের সাথে এখন আশ্রিতাও হয়ে গেলাম। হাইরে কপাল। ওদের আর কি দোষ। আসলেই তো আমি এই বাড়িতে কাজের লোকের মতো থাকি। এই ভেবে নীলার চোখ পানিতে ভরে উঠছে বার বার কিন্তু সামলে নিচ্ছে নিজেকে।

রিশিকাঃ এই কি হলো তুই কি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি যাহ। ভিজে গেছিস দেখছি । যাহ গিয়ে চেঞ্জ করে নিচে আয়। ফাহিমকে কফি দে। ছেলেটা অনেক্ষন হলে এসেছে।

ফাহিম বেটা তোমরা গল্প করো আমি উপরে যাচ্ছি। ফাহিমের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে চলে গেলো রিশিকা।

নীলাও কিছু বললো না বিনিময়ে। তারপর উপরে তার চিলেকোঠার ঘরে চলে গেলো আস্তে আস্তে। নীলা উপরে গিয়ে চেঞ্জ করে নিলো। তারপর নিচে এসে রান্না ঘরে গিয়ে কফি বানিয়ে নিয়ে আসে জীনিয়া আর ফাহিমের দিকে এগিয়ে দেই কফির কাপ দুটো।

নীলাকে ফাহিম এখনো সেই বাজে ভাবে দেখছিল শকুনের দৃষ্টিতে এক ধ্যানে । এমন ভাবে দেখছিল যে মনে হয় কোনো দিন মেয়ে দেখেনি এর আগে। মনে হচ্ছিল চোখ দিয়েই গিলে খাবে

নীলার রুপ যেনো দিগুন হয়ে গেছে। চুলগুলো ভেজা থাকার কারনে ছেড়ে দিয়েছে । মায়া ভরা সেই চোখ। আর কমল গোলাপি ঠোঁট। কি যে অপুর্ব লাগছিল।

নীলা ফাহিমের দৃষ্টি বুঝতে পেরে দ্রুত ওখান থেকে চলে আসে রান্না ঘরে।

জীনিয়াঃ কি হলো ফাহিম খাও কফিটা ঠান্ডা হয়ে যাবে তো।

ফাহিমঃ হ্যাঁ হ্যাঁ খাচ্ছি তুমিও খাও।

এদিকে জীনিয়াও কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে ভাবছে সেও খেয়াল করেছে ফাহিমকে নীলার দিকে বাজে ভাবে তাকিয়ে থাকতে।

না না ফাহিমের নজর যেনো ওই বেগডেটেড মেয়েটার দিকে কোনো ভাবেই না পড়ে। আমাকেই কিছু একটা করতে হবে এইসব ভাবছে মনে মনে।

ফাহিমঃ জীনিয়া এখন আবার তোমার কি হলো।কি ভাবছো এতো। আচ্ছা তুমি আন্টিকে ডাকো কথা বলেই চলে যাবো।

জীনিয়াঃ না কিছু না তো কি ভাববো। তুমি বলা আমি মমকে ডেকে দিচ্ছি। এই বলে জীনিয়া চলে গেলো।

জীনিয়া যাওয়ার সাথে সাথেই ফাহিম সেই সুযোগ বুঝে নীলাকে খুজতে থাকলো। উঁকি ঝুঁকি দিয়ে দেখলো কোথায় গেলো মেয়েটা। রান্না ঘরে দেখতে পেলো তারপর এগিয়ে গেলো নীলার দিকে।

নীলা এক মনে কাজ করছিলো তখনি কেউ তার পেটে হাত দিলো খুব জোরে চেপে ধরেছে। সেটাও খুব বাজে ভাবে নীলা চমকে যায়। পিছনে ঘুরে সে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় আর বলে— একি আপনি এটা কি করছেন। ছাড়ুন বলছি ছাড়ুন আমাকে।

নীলার কথা না শুনেই ফাহিম নীলাকে জোরে নিজের কাছে টেনে নিলো জোর করে নীলার মুখের দিকে নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে

ফাহিমঃ আরে সুন্দরী এতো কথা কেন বলছো। যেটা করছি করতে দাও না। তোমাকে পুষিয়ে দিবো। এইযে তোমার এতো কষ্ট কোনো টাই থাকবে না। তোমাকে শুধু আমার কথা মতো চলতে হবে।

নীলা নিজেকে ছাড়ানোর বৃথাই চেষ্টা করছে সে কিছুতেই নিজেকে এই লোকটার কাছ থেকে ছাড়াতে পারলো না । হাত দিয়ে বুকে কিল ঘুশি দিচ্ছে। কিন্তু একটা ছেলের কে কি একটা মেয়ের শক্তি কিছুই না।এই নোংরা লোকটার বাজে কথা গুলো শুনে চোখের পানি চলে এসেছে টপটপ করে পানি পরছে নীলার চোখ দিয়ে।

ফাহিম নীলার দিকে জোর করেই তার মুখ এগিয়েই নিয়ে যাবে তখনি তখনি—

হঠাৎ নীলার হাত চলে যায় ফাহিমের গালে।নীলা সপাটে একটা থাপ্পড় মেরে ফেলেছে।

ফাহিম নীলার দিকে রেগে আবার জোর করতে যাচ্ছিল তখনি—-

জীনিয়াঃ নীলা– জোরে চেচিয়ে এসব কি হচ্ছে এখানে হ্যাঁ!
নীলা তুই এসব কি করছিস। এই তুই আমার ফাহিম কে নিজের কাছে টানার চেষ্টা করছিস। তোর সাহস তো কম না এই বলে একটা চর মারতে যাবে

তখনি ফাহিম জীনিয়ার হাত ধরে ফেলে।

ফাহিমঃ তুমি ভুল বুঝছো –আমরা তো যাস্ট একটু পরিচিত হচ্ছিলাম আর কিছু না।

ঘাবড়ে গেলেও বুঝতে দিলো না জীনিয়াকে।

জীনিয়া ফাহিমকে আরও কিছু বলতে যাবে তখনি–

মিসেস খান রান্না ঘরে সামনে গিয়ে বলে আহ জীনিয়া কি হচ্ছে কি হুম তুমি ফাহিমকে ভুল বুঝছো।

জীনিয়া চুপ করে যায় আর রাগ করে গটগট করে উপরে চলে যায়। নীলার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে থেকে

রিশিকাঃ ফাহিম বেটা তুমি জীনিয়ার কথায় কিছু মনে করো না। আমার মেয়েটা এমনি।
একটু পরেই আবার তোমার কাছে ঠিক ফোন করে স্যরি বলবে।

ফাহিমঃ না না আন্টি আমি জানি তো। ওকে আন্টি আমি আজ আসছি।

এই বলে ফাহিম নীলার দিকে একবার দেখে চলে গেলো।

নীলা গুটি শুটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চোখ মুখ কুচকে অনেক ভয় পেয়েছে সে
নীলার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরে যাচ্ছে।

রান্না ঘরের এক কোনায় দাঁড়িয়ে কাপছে সে ভয়ে।সে যেনো ফ্রিজড হয়ে গেছে কোনো রকম নড়ে ঘুরে যেই সেই চলে যেতে নেই তখনি তার গালে অনেক জোরে চর খেলো!
নীলা মাটিতে পরে যেতে নিলে সামলে নেই কোনো রকম।

নীলার গালটা যেনো জলে যাচ্ছে।

ফাহিম যেতেই রিশিকা নীলার কাছে গিয়ে এতো জোরে নীলাকে চর মারে। সেই অবস্থাতেই রিশিকা নীলাকে চেপে ধরে একটা ঘরের ভেতর টেনে নিয়ে গেলো। দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে রিশিকা ঘুরে দাড়ালো এবং নীলার দিকে রাগী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন।
———————————————————
শুভ্রর এখনো যেনো সেই ঘোর লাগানো মুহুর্তের মধ্যেই ডুবে আছে। শুভ্র বাড়িতে এসেই ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে বসে আছে। আর ভাবছে সেই চোখ সেই ঠোঁট এখনো যেনো শুভ্রর নেশা কাটেনি। দ্যা শুভ্র চৌধুরী — যে কি না একটা মেয়েকে ভুলতে পারছে না। যে কিনা কোনো দিন কোনো মেয়ের দিকে তাকায় নি আর আজ কি না সামান্য একটা মেয়েকে নিজের মন থেকে সরাতে পারছে না। কি হচ্ছে তার সাথে — সব কিছু যেনো হঠাৎ হঠাৎ করেই হয়ে আজকাল তার সাথে

তখনি বাবা বাবা বলে ছুটে আসে ফিহা। ফিহা শুভ্রর কোলে উঠে বসে।

শুভ্রর ধ্যান ভেঙে যায়। আর বলে –একি একি কি করছো তুমি আমার কোলে কেনো উঠছো।

শুভ্র মেয়েটার দিকে তাকায়। কি মায়াবী মেয়েটার মুখে।

শুভ্র কিছুতেই বুঝতে পারে না এই বাচ্চা মেয়েটার প্রতি অদ্ভুত মায়া কেনো কাজ করে। সে কিছুতেই বুঝতে পারে না।

এই মেয়ে কি চাই তোমার।কি সমস্যা তোমার ? তুমি আমাকে কেনো বাবা ডাকছো।

ফিহা খটখট শব্দ করে হেসে উঠে আর বলে বাবা তুমি তো আমার বাবা। তাই বাবা ডাকছি। আর কেনো এই বলে আবার হাসতে থাকে।

শুভ্র ফিহার দিকে তাকিয়ে আছে। কি মিস্টি মেয়েটা কি সুন্দর লাগছে মেয়ে টা কে হাসছে। হাসিটা কি সুন্দর।

ফিহা হাসিটা থামিয়ে শুভ্রকে বলে কেনো বাবা তুমি খুব পচা আমাকে একটুও ভালোবাসো না। তুমি কি খুশি হও নি আমাকে পেয়ে। মুখ টা বাকিয়ে গোমড়া করে —

তিন বছরের এই বাচ্চাটি এতো কথা কি ভাবে জানে এই এক রত্তি মেয়েটা– যেন কথা গুলো অকে কেউ শিখিয়ে দিয়েছে। শুভ্র কিছু একটা বলতে যাবে

তখনি কেউ ফিহা ফিহা বলে ডেকে ঘরে ঢুকছে ইজি হুইল চেয়ারের চাকা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ভেতরে ঢুকছে —-

চলবে—

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে