ভালোবাসায় তুমি আমি পর্ব-১৮+১৯

0
969

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব১৮
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

শুভ্র গিয়ে দেখে তার কেবিনে থাকা এক্যুইরিয়াম টা ভেঙে পড়ে আছে। কাচের একটা টুকরো নিয়ে
নীলা নিজের হাত কাটার জন্য বসিয়েছে ।

নীলাআ এটা তুমি কি করছো। হাত থেকে ওটা ফেলে দাও। (বিচলিত হয়ে)

নীলা শুভ্রর ডাক শুনে মাথা তুলে তাকায়। এগোবেন না– একদম আমার কাছে আসবেন না। দুরে থাকুন হাতে থাকা কাচ টা দিয়ে ইশারা করে।আমি কিন্তু কেটে ফেলবো হাত কাছে আসবেন না।
শুভ্র আর কাকন দুজনেই হতদরিদ্রের মতো হয়ে দাঁড়িয়ে পরল ।

ঠিক আছে আমরা আসছি না।তুমি প্লিজ ওটা ফেলে দাও। হাত থেকে ফেলো।

শুভ্র একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে নীলার দিকে।

দেখুন ভাবি এমন করবেন না প্লিজ কাচ টা সরান প্লিজ। আল্লাহর দহায় লাগে সরান।

তুমি কি পাগল হয়ে গেছো। আর ইউ ম্যাড ফেলো বলছি হাত থেকে ওটা।নীলা এমন পাগলামো করো না প্লিজ ফেলে দাও।

এর মধ্যেই নীলা নিজের হাতে কাচ বসিয়ে দিয়েছে কাটার জন্য শুভ্র প্রায় লাফিয়ে গিয়ে নীলার হাত শক্ত করে ধরে ফেলে। হাত থেকে কাচটা নিয়ে ফেলে দেই।

ছাড়ুন আমাকে আমি বাঁচতে চায় না। মরে যাবো আমি বাঁচব না। শুভ্রর হাত থেকে ছুটার চেষ্টা করছে।জোরাজোরি করছে ছোটার জন্য।

নীলা একদম পাগলের মতো করছে। নীলা চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে শুভ্রকে ধরে বসে পরে। হাউমাউ করে কেদে যাচ্ছে।

কাকনকে চোখ দিয়ে ইশারা করে চলে যেতে বললো শুভ্র।কাকন লম্বা একটা স্বস্তীর নিশ্বাস ফেলে মাথা নাড়লো তারপর সেখান থেকে চলে গেলো।

শুভ্র নীলাকে শক্ত করে জাপ্টে ধরেছে। তুমি কি পাগল হয়ে গেছো হ্যাঁ। এরকম কেউ করে। আমি যদি আসতে আর একটু দেরি করতাম কি হতো তাহলে। আমি তোমাকে ছাড়া কি করে থাকতাম বলো। আমার কথা কি একবারও মনে পরলো না।

নীলা শুভ্রর বুকের মধ্যে মুখ গুজে কেদে যাচ্ছে। বলতে পারেন শুভ্র আমার সাথেই কেন এমন হয় সবসময়। ছোট বেলা থেকেই এতো যন্ত্রণা আর কষ্ট সহ্য করে আসছি। একটু বড় হওয়ার সাথে সাথে কত লোকের বাজে নজর উপেক্ষা করে চলেছি।আচ্ছা একটু ভালো দেখতে হওয়া টাও আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো। টর্চার– হ্যারাসমেন্টে মানুষের কুদৃষ্টির স্বীকার হতে হয়েছে। আজ নিজের সৌন্দর্য টাকেও নিজের কাছে অভিশপ্ত মনে হচ্ছে। আমাকেই কেন আল্লাহ এতো কষ্ট দিচ্ছে। আজকের এই অপবাদ টা কি করে মানবো কি করে। নিজের জীবনটা বিস্বাদময় হয়ে উঠেছে। বাঁচার ইচ্ছে টাই মরে গেছে।রাস্তায় চলাচলের সময় যুবক থেকে একটা বুড়ো লোক পর্যন্ত শুকনের দৃষ্টিতে দেখেছে।আমি আর কত সহ্য করবো। এই টুকু লাইফে এতো কিছু দেখেছি যে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে নিজেকে খুবই তুচ্ছ মনে হচ্ছে। বলতে বলতেই হুহুকার করে কেদে উঠে নীলা।

নীলা এখনো একটা ছোট্ট বাচ্চার মতো শুভ্রর বুকে গুটিয়ে আছে। সে তার মধ্যে থাকা এতো দিনের জমানো কষ্টগুলোকে যেনো এক সাথে উগরে দিচ্ছে।

চুপ —চুপ একদম চুপ করো আর একটাও কথা না। কিচ্ছু হয়নি আমি আছি তো। আমি থাকতে তোমার কিচ্ছু হতে দেবো না। শুভ্রর থেকে টপটপ করে পানি পরছে।শুভ্র খুব ভয় পেয়ে গেছিলো। সে তার ভালোবাসার মানুষ টাকে হারাতে বসেছিল। কেউই তার ভালোবাসার মানুষের এমন করুন পরিনতী দেখতে পারে না। শুভ্রর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে সে কিছুতেই মানতে পারছে না।

শুভ্র নীলার মুখ দুই হাত দিয়ে তুলে সমানে চুমু খেয়ে যাচ্ছে। কপালে গালে ঠোঁটে এলোপাতাড়ি ভাবে চুম যাচ্ছে।

নীলা কেবিনের সবকিছু ভাঙ্গচুর করেছে। কেবিনের সবকিছু ভেঙে ফেলেছে। শুভ্র আর কাকন এসে দেখে নীলা কেবিনের টেবিলের উপরে যা কিছু ছিলো সবকিছু তছনছ করে ফেলেছে।

কোনো মেয়েই নিজের সম্মানে আঘাত লাগলে তা সহ্য করতে পারে না।প্রত্যেক মেয়ে তার নিজের সম্মানের বিষয়ে খুবই অবগত। যদি তার সম্মানে কেউ বিনা দোষে কেউ আঘাত হানে তাহলে সেই নারী যতই শান্ত সৃষ্ট মেয়েই হক না কেন তার রুপ ভয়ংকর থেকে ভয়ংকর হয়ে উঠে। একটা মেয়ের কাছে তার সেল্ফ রেস্পেক্ট টাই সবচেয়ে বড়। সে আঘাত সহ্য না করতে পেরে কেউ নিস্তেজ হয়ে নিজের জীবন দিয়ে দেই আর না হলে হয়ে উঠে হিংস্র। যেমন নীলার ক্ষেত্রেও হয়েছে।

নীলাকে একদম পাগল পাগল লাগছে। চুল গুলো উস্কোখুসকো হয়ে গেছে। চোখ গুলো রক্ত বর্ন ধারণ করেছে। কেদে কেটে একেবারে একাকার হয়ে গেছে। খুবই অসহায় লাগছে মেয়েটাকে।

নীলা আর চোখ খুলে রাখতে পারলো না। কিছু একটা অস্ফুট স্বরে বলেই চোখ বন্ধ করে ফেলে নিস্তেজ হয়ে যায়। শরীর ছেড়ে দেই।

শুভ্র দেখলো নীলা শরীর ছেড়ে দিয়েছে। শুভ্র নীলার গালে আস্তে আস্তে চাপর দিলো মুখ হালকা ভাবে ঝাকালো।

নীলা চোখ খুলো প্লিজ। শুভ্র অস্থির হয়ে কাকন কে জোরে জোরে ডাকতে থাকে।

কাকন কেবিনের বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিল। শুভ্রর ডাকে সে তড়িঘরি করে ভেতরে ঢুকে।

কি হয়েছে শুভ্র ডাকছিস কেন। ভাবির কিছু হয়েছে।

ও অজ্ঞান হয়ে গেছে তারাতাড়ি ডক্টরকে বাসায় আসতে বল কুইক।শুভ্র আর বসে ন থেকে নীলাকে কোলে তুলে নেই।

ঠিক আছে তুই জলদি ভাবিকে গাড়িতে নিয়ে যা আমি ডক্টর কে ডাকছি।
শুভ্র আর দেরি না করে নীলাকে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসাই।

কাকন ডক্টরকে ফোন করে চৌধুরী বাড়িতে ডাকে।সেও গাড়িতে বসে পরে।
ফুল স্পীডে গাড়ি চালিয়ে বাসায় চলে আসে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা বাসায় চলে আসে। কাকন কলিং বেল বাজায় কয়েকবার এক সাথে।

মোল্লিকা এসে দরজা খুলে দেই। তারপর নীলার এই অবস্থা দেখে তিনি অনেক বিচলিত হয়ে যায়।
কি হয়েছে নীলার। ও অজ্ঞান হলো কি করে

সব বলছি মা ওকে আগে ঘরে নিয়ে যায়। শুভ্র তারাতাড়ি নীলাকে ঘরে নিয়ে গিয়ে শুয়ে দেই।

মোল্লিকাও ছেলের পিছনে যায় তার ঘরে।
আজকে সারাদিন তিনি যে কিভাবে ফিহাকে সামলেছে তিনিই জানেন।মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য একেবারে কান্নাকাটি করে খাওয়া দাওয়া সব ছেড়ে দিয়েছে। অনেক কষ্টে কিছুক্ষণ আগে ঘুম পাড়িয়েছেন।

কিছুক্ষণের মধ্যেই তরিঘরি করে মাঝ বয়সি একজন ডক্টর শুভ্রর ঘরে ঢুকলেন সাথে কাকন উনার চিকিৎসার ব্যাগ নিয়ে আসছে।

ডক্টর নীলার বিপি দেখলেন। ডক্টর দেখে বললেন উনার শরীর খুব দুর্বল। বিপি খুব লো। উনি নিশ্চয়ই আজ কিছুই খাননি। সারাদিন না খেয়ে থাকায় আর ব্রেইনের অতিরিক্ত চাপ ও মানসিক ভাবে খুবই প্রেসারাইস হয়েছেন। উনাকে সব সময় হাসি খুশি রাখার চেষ্টা করবেন। আমি একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে দিচ্ছি।কিচ্ছুক্ষণ পর উনার জ্ঞান ফিরবে।আর কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি এগুলো আনিয়ে নিবেন।

ঠিক আছে মিস্টার চৌধুরী তাহলে আমি আসি।আপনার ওয়াইফ খেয়াল রাখবেন।উনাকে ভালো রাখার দায়িত্ব কিন্তু আপনার।

থ্যাংক ইউ ডক্টর আপনি এতো কষ্ট করে এসেছেন। চলুন ডক্টর আমি আমি আপনাকে এগিয়ে দিচ্ছি।

কাকন ডক্টর কে এগিয়ে দিতে গেলেন।

মোল্লিকা গিয়ে নীলার পাশে বসে আছে। নীলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।

শুভ্র কোনো কথায় বলছে না। আজকের এই ঘটনার জন্য কোনো না কোনো ভাবে তো আমিই দায়ী। আমার সচেতন হওয়া উচিত ছিলো।
আর আজ যদি নীলার কিছু হয়ে যেতো কি করে ক্ষমা করতাম নিজেকে।

তবে তোমাকে যারা কষ্ট দিয়েছে আমি তাদের প্রত্যেক কে তাদের ভুলের শাস্তি পাইয়েই ছারবো।কাউ কে ছারবো না। এইসব ভেবেই শুভ্রর চোয়াল শক্ত করে নেই।

চলবে—–

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব১৯
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

মোল্লিকা সবটা শুনে থমকে যায়।তিনি আজকে সারাদিন ফিহাকে নিয়ে এতো টাই ব্যাস্ত ছিলেন যে টিভির সামনে বসেন নি। হিয়াকে ফিহার কাছে রেখে এসেছে। আর হিয়া তো আগে থেকেই টিভি দেখে না।তাই কোনো ভাবেই এত কিছু ঘটে গেছে জানতে পারেন নি।অনেক কান্নাকাটি করলেন তিনি।

শুভ্র একটু আগে তার মাকে জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছি অনেক রাত হয়েছে। নীলার জ্ঞান ফিরলে আমি ওকে সামলে নিবো। শুভ্র নীলার মাথার কাছে বসে আছে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

কাকন কিছুক্ষন আগে চলে গেছে নিজের বাসায়।ওর মা একা একা আছে । অর বাবা নেই। শুভ্রর বাবা আর কাকনের বাবা খুব ভালো বন্ধু ছিলেন।কাকন মাকে নিয়ে একাই থাকে। অনেক সংগ্রাম করে বড় হয়েছে ছেলেটা। শুভ্র ওকে প্রানের থেকেও বেশি ভালোবাসে আর কাকন ও।তাই শুভ্র তাকে নিজের পার্সনাল এসিস্ট্যান্ট বানিয়ে নিজের কাছেই রেখেছে।

শুভ্র নিজের চোখ বন্ধ করে মাথা উপর করে নীলার এক হাত ধরে আছে আর এক হাত মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে।চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে।

নীলা পিটপিট করে চোখ খুলছে। জ্ঞান ফিরে চারিদিকে চোখ বুলাচ্ছে।বুঝার চেষ্টা করছে সে এখন কোথায়।তার বুঝতে একটু সময় লাগছিল সে এখন বাড়িতে আছে।
পরক্ষণেই সে দেখতে পেলো তার হাত কেউ শক্ত করে ধরে আছে।আর মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে।
নীলা ভালো করে তাকিয়ে দেখলো তার পাশে থাকা মানুষ টাকে। দেখেই সে অবাক হয়ে গেলো শুভ্রর চোখে পানি কেন। আমি তো কোম্পানিতে ছিলাম। এখানে আমাকে কে নিয়ে এলো।হঠাৎ মাথায় একটা কিঞ্চিৎ ব্যাথা অনুভব করছে আর সন্ধ্যার ঘটে যাওয়া ঘটনা মাথায় আসতেই সে জোরে উঠে বসলো।

শুভ্র হঠাৎ নিজের হাতে টান পরতেই সে চোখ খুলে দেখলো নীলা উঠে বসে হাপাচ্ছে।শুভ্র ভয় পেয়ে গেল আর অস্থির হয়ে কি হলো কিচ্ছু হয়নি তুমি উঠছো কেন তোমার শরীর এখন ঠিক নেই।।
রিলেক্স নীলা।
তুমি প্লিজ শুয়ে পড়ো উঠবে না।

পানি খাবো পানি দিন প্লিজ। হাঁপাতে হাঁপাতে পানি চাইলো শুকনো একটা ঢোক গিলে।

ওকে দিচ্ছি তুমি শান্ত হও। শুভ্র জলদি গিয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে নীলার সামনে ধরলো।
আস্তে,, আস্তে খাও

নীলা পানি নিয়ে ঢকঢক করে গিলে খেয়ে ফেললো।খেয়েই গ্লাস টা এগিয়ে দিলো।

শুভ্র নীলাকে দেখছিলো।তার খুব কষ্ট হচ্ছিল। নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলো না শুভ্র। সে আচমকা গিয়ে নীলাকে জড়িয়ে ধরলো।

আচমকা এরকম হওয়ায় নীলা বেশ ঘাবড়ে গেলো।নীলার অদ্ভুত একটা শিহরণ ফীল করতে লাগলো। হঠাৎ নীলা তার কাধে তরল কিছু পরতেই বুঝলো শুভ্র কান্না করছে।কিন্তু কেন শুভ্র কি তবে আমাকে ভালোবাসে!!নীলা না চাইতেও শুভ্রর পিঠে হাত দিলো।

তুমি জানো আমি কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম।আমার ঠিক কি অবস্থা হয়েছিল। মনে হচ্ছিল আমি আমার সবচেয়ে দামী জিনিস হারাতে বসেছিলাম। তোমার কিছু হলে আমি কীভাবে বাঁচতাম বলো তো।কান্না জড়ানো কন্ঠে কথা গুলো বললো শুভ্র।

নীলা শুভ্রর কান্না ভেজা কন্ঠ শুনে বুঝলো শুভ্র সত্যিই খুব চিন্তায় ছিলো। এরকম একটা মানুষকে এইভাবে কাদতে দেখতে একদম ভালো লাগে না। উনাকে দেখে যা মনে হয় একদমই সেরকম নয়। বাইরে থেকে যেমন টা কঠিন মনে হয় ভেতরে ভেতরে ততটাই নরম।তাহলে কি আমি ঠিকই ভাবছি শুভ্র আমাকে ভালোবাসে।

নীলা হাত শুভ্রর পিঠ থেকে হাত সরিয়ে আস্তে আস্তে কাধ ধরে নিজের থেকে ছাড়িয়ে শুভ্রর চিবুকে আলতো করে হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দিলো।

শুভ্রকে একদম বাচ্চাদের মতো দেখতে লাগছে। কান্নার ফলে চোখ কিছুটা লাল হয়ে গেছে।

কি হলো কাঁদছেন কেন। আমি ঠিক আছি তো। এইত আমি আপনার সামনে একদম সুস্থ আছি।

শুভ্র ফেল ফেল করে তাকিয়ে আছে নীলার দিকে। আজকে তার একদমই কোনো সংকোচ লাগছে না। মনে হচ্ছে নিজের মনের কথা গুলো বলে দিই এক্ষুনি।

শুভ্র নীলার থেকে সরে আসলো কিছুটা। উঠে দাঁড়ালো।।নিজেকে সামলে নিলো। দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে নিজেকে স্বাভাবিক করল।
খুব নরমালী বললো —-ডক্টর বলেছে নীলাকে হাসি খুশি রাখতে।তাই সে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো।
আর ইউ ওকে। এখন তোমার কেমন লাগছে।
নীলার দিকে হালকা হাসি দিয়ে।

নীলা নিজের পেটে হাত বোলাচ্ছে। তার মনে হচ্ছে তার পেটে ছুচোড়া ছোটাছুটি করছে। খিদে পেয়েছে তার বাট সে বলতে পারছে না কিছু একটা ভেবে।

ইয়াহ আম ওকে। স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিলো নীলা।

ঠিক আছে তুমি বসো আমি আসছি। একদম উঠবে না বিছানা থেকে।

আপনি কোথায় যাচ্ছেন? নীলা শুভ্রর দিকে হালকা একটু তাকিয়ে বললো।

বললাম তো তুমি বসো আমি আসছি। চুপচাপ বসে থাকবে। ঠিক আছে।

এই বলেই সে চলে গেলো।

নীলা শুভ্রর যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো।মাথাটা ভার ভার লাগছে তার।

শুভ্র বুঝতে পেরেছে নীলার খিদে পেয়েছে। তাই সে তারাতাড়ি রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো একজন পরিচারিকা জেগেই আছে।সে পরিচারিকা কে খাবার দিতে বললো। পরিচারিকা টি খাবার বেরে দিলো।

শুভ্র তারাতাড়ি খাবার টা নিয়ে উপরে চলে গেলো। গিয়ে দেখলো নীলা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।

নীলা শুভ্রর উপস্তিতি টের পেয়ে চোখ খুলে তাকালো। হাত দুটো খাটের উপর হালকা ভর দিয়ে উঠতে যাবে তখনি শুভ্র এসে ওকে ওর কাধ ধরে সুন্দর করে বসিয়ে দিলো।

বসো শান্ত হয়ে!। আমি খাবার এনেছি খেয়ে নিবে। শুভ্র চোখের পাতা হালকা নিচের দিকে করে।
খেয়ে নাও আমি আসছি। এদিকে শুভ্র ভাবছে নীলা তার সামনে খেতে সংকোচ করতে পারে। তাই সে উঠে আসতে নেই।

আমি খেতে পারবো না নিজের হাত দিয়ে।আমি তো অসুস্থ আমাকে একটু খাইয়ে দিন না।

আপনি খাইয়ে দিলে খাবো না হলে খাবো না বলে দিলাম। যদিও নীলার এই মুহূর্তে খুবই খিদে পেয়েছে তবুও সে এই কথাটা বললো। এখন যদি শুভ্র না খাইয়ে দেই তো আমাকে যে না খেয়েই থাকতে হবে তখন।

শুভ্র চুপ করে আছে।কিছুই বলছে না। সে এর আগে কখনো কাউকে খাইয়ে দেইনি আজকে কি করে। তবুও ট্রাই করতে কি সমস্যা। নীলার এই ছোট্ট একটা আবদার রাখাই যায়।

কি হলো খাইয়ে দিবেন না বুঝি। ঠিক আছে তাহলে নিয়ে যান এগুলো। খাব না আমি।মুখ গোমড়া করে অন্যদিক মুখ ঘুরিয়ে নিলো।

হা করো।

নীলা একটু চমকে তাকায়। সত্যিই খাওয়াতে এসেছে দেখি। নীলা মনে মনে অনেকটা খুশি বাট প্রকাশ করলো না।

কি হলো হা করো। আমি কতক্ষন এভাবে খাবার ধরে থাকবো।

নীলা হা করে খাবার টা মুখে নিয়ে নিলো।

আর কোনা চোখে শুভ্রকে দেখতে থাকলো।

শুভ্র খুবই সুন্দর করে ভাত মেখে নিচ্ছে। বাট মনে হচ্ছে না সে কোনো দিন কাউকে খাইয়েছে।

সোজা হও অই দিকে মুখ করে রাখলে খাওয়াতে অসুবিধা হয়।

নীলা সোজা হয়ে বসলো।

শুভ্র আবার আরেক লোকমা দিতেই তরল কিছু ওর হাতে লেগে যায়। ওর অদ্ভুত লাগছে।বাট কিছুই বললো না। চুপচাপ নীলাকে খাইয়ে দিলো। নীলাও সুন্দর মতো সবটা খাবার খেয়ে নিলো।

পানি খাইয়ে দিয়ে শুভ্র নিজের হাত ধুয়ে নিলো।

নীলা শুভ্রর পানে চেয়ে আছে অপলক নয়নে।
এই মানুষটার মধ্যে সে এখন অনেক কেয়ারিং আর ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছে।

এখন তুমি শুয়ে পড়ো। তোমার রেস্টের প্রয়োজন আছে।

আর আপনিও শুয়ে পরুন।আপনারও রেস্টের প্রয়োজন। আর হ্যাঁ বিছানায় শুবেন ঠিম আছে।

ঠিক আছে তুমি শুয়ে পড়ো আমিও শুয়ে পরছি।

নীলা শুয়ে পড়লো।

শুভ্র লাইট অফ করে দিয়ে বারান্দায় গিয়ে একজনকে ফোন করলো।

রিং হতে অপর পাশের মানুষটি ফোন রিসিভ করলো।

হ্যাঁলো তুহি তুই কিছুদিনের জন্য আমার বাসায় আসতে পারবি।

হ্যাঁ আসবো। বাট কি হয়েছে তোর হঠাৎ এতো রাতে ফোন করেছিস।

তোকে আমার কিছু কাজ করে দিতে তার জন্য তোর এখানে আসা খুব দরকার। তুই আয় তারপর সবটা বলবো কি কি কর‍তে হবে।

ওকে ওকে আমি কালই সকালেই চলে আসবো।রাখছি।

এই বলে সে ফোন রেখে দিলো।

শুভ্র এসে দেখলো নীলা সাউন্ড স্লিপে ঘুমাচ্ছে।সে গিয়ে আর বিছানায় না শুয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো।

—————–+++++——–

এদিকে জীনিয়া বাসায় এসে নিজের ঘরের সবকিছু ভেঙে তছনছ করে ফেলেছে।রাগে গজগজ করছে। এই চোখ দিয়ে যেন কাউকে ভষ্স করে দিবে।

রিশিকা ভাংচুরের শব্দ পেয়ে জীনিয়ার রুমে চলে এসেছে।

আরে জীনিয়া বেটা কি হয়েছে। তুমি এরকম করছো কেন কি হয়েছে। ফাহিম কিছু বলেছে তোমাকে।আমি ফাহিমকে বুঝিয়ে বলবো যাতে তোমার সাথে ভাব করে নেই।

জীনিয়া বড় বড় শ্বাস ফেলে বলে। না আমার ফাহিমকে নয় এখন আমার শুভ্রকে চাই।মম তুমি আজকের টিভি নিউজ দেখো নি হ্যাঁ কি হয়েছে। আর এর পরেও তুমি বলছো কি হয়েছে।

হ্যাঁ আমরা সবাই দেখেছি।ওই নীলার মতো মেয়েকে শুভ্র চৌধুরীর মতো একজন লোক কি করে বিয়ে করতে পারলো।আর কিভাবেই হলো সবকিছু আমাকে জানতেই হবে।তবে তোমার বাবাকে দেখে মনে হলো তিনি খুব খুশি হয়েছে আর তোমার ছোট বোন আর অই বুড়িটাও খুব খুশি।

বাট জীনিয়া ফাহিমের সাথে তো তোমার এঙ্গেজম্যান্ট ডেট ফিক্সড হয়ে আছে।সেটার কি হবে।আর তোমার বাবাও কথা দিয়েছেন ফাহিমের বাবাকে।উনাদের সাথে আমাদের বিজনেসের একটা ডিল হয়েছে। ডিল টা ফাইনাল না হলে আমাদের কোম্পানির অনেক লস হবে।

নো মম অই লোকটা আমার বাবা নয়।তাই অই লোকটার কিসে লাভ কিসে ক্ষতি আমার তাতে কিচ্ছু না।আমার বাবা অনেক আগেই মারা গিয়েছে। আমি মন থেকে কোনো দিনও অই লোকটাকে বাবা বলে মানি না।আর আজকে নীলা যেখানে সেখানে শুধুই আমাকে মানায়।আমি অকে কিছুতেই সুখি হতে দিবো না কিছুতেই না।ফাহিমকে আমি বুঝিয়ে বলবো।সেটা আমার উপর ছেড়ে দাও ওকে কি করে বুঝাতে হয় সেটা খুব ভালো করেই জানি।
বাকা হেসে চোখ থেকে পানি মুছে ছিটকে ফেলে দিলো সে।

ছোট বেলা থেকেই জীনিয়ার সব আবদার রিশিকা পুরন করছে। আর আমি কি তোমার কোনো কিছুতেই কখনো বাধা দিয়েছি।আর আমিও চাই না ওই নীলা সুখি হোক।আমি তোমার সাথে আছি বেটা।
তুমি কেদো না শুধু। শুভ্র চৌধুরীর তোমাকে রিজেক্ট করতেই পারবে না জীনিয়া বেটা। রুপে গুনে তুমি নীলার থেকে অনেক বেটার।

কাধে হাত রেখে বললো রিশিকা।ওকে গুড নাইট বেটা ঘুমিয়ে পরো তুমি নিশ্চিন্তে।
এই বলে রিশিকা চলে গেলো।

আজ আমার ঘুম আসবে না। আমি ততো দিন ঘুমোতে পারবো না যতো দিন তুই সুখে আছিস। আমি আসছি তোর সংসারে আগুন লাগাতে। এই বলেই শয়তানি হাসি হাসে সে।

চলবে—–

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে