ভালোবাসার লুকোচুরি পর্ব-১০

0
943

#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#লেখনী_আলো_ইসলাম

“১০”

–” তোমাদের অভিযোগ না থাকলেও আমার মা। রুহির এমন কথায় উপস্থিত সবাই চমকে উঠে অবাক হয়ে তাকায় রুহির দিকে। রোহান অসহায় চোখে রুহির দিকে তাকায়।
–” এই সব কি বলছিস রুহি। তোর কি অভিযোগ রোহানের উপর। রোহানকে বিয়ে করতে তোর আপত্তি আছে? রুহির মা বলে।

– হ্যাঁ আছে। আমি চাই না ভাইয়াকে বিয়ে করতে। রুহির কথায় রোহানের বুকে মোচড় দিয়ে উঠে। বাকিদের সবার মুখ মলিন হয়ে আসে।
— আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি আমার নিজের একটা মতামত আছে। মানছি এই বাড়িতে সব কিছু ভাইয়ার কথা মতো হয় তাই বলে আমার জীবনের এত বড় সিদ্ধান্ত তার নেওয়ার কোনো অধিকার নেই। আমাকে যে বিয়ে করেছে তার আগে কি একবারও জানিয়েছে আমাকে সেটা। আমার সাথে যেগুলো করেছে মানছি তার সব অধিকার ভাইয়ার আছে তবে সেটা আমার অজান্তে বাহ।

– যার মধ্যে আমাকে নিয়ে এক বিন্দু পরিমাণ বিশ্বাস নেই তার সাথে অন্তত সম্পর্ক হয়না। ভাইয়া খুব ভালো করে জানতো আমি তাকে ভালোবাসি মনে মনে অনেক পছন্দও করি কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে পারিনি ভয়ে। তাই বলে ভাইয়ার যা ইচ্ছে করবে আমাকে নিয়ে আমি তাই মেনে নেবো না। আসিফকে নিয়ে আমাকে কটুক্তি শুনিয়ে এখন ভালোবাসা দেখাবে তা আমি মেনে নেবো ভাবলে কি করে মিষ্টার শেখ রোহান। রোহানের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে রুহি। রুহির ভীষণ রাগ হচ্ছে আজ রোহানের উপর। সেটা এই জন্য যে সেদিন আসিফকে নিয়ে অনেক বাজে কথা বলেছে রোহান যার প্রতিটি শব্দ রুহির বুকে বিধে আছে এখনো।

– মানছি আমি ভুল করেছি অন্যায় করেছি। তাই বলে তোকে অবিশ্বাস করি এটা বলিস না। আমি জানতাম তুই আমাকে ভালোবাসিস কিন্তু সেটা কখনো প্রকাশ করার সুযোগ আমি তোকে দেইনি। সব সময় তোর সামনে নিজেকে হার্ড রাখার চেষ্টা করেছি। যাতে তোর পড়াশোনা ক্যারিয়ারের কোনো ক্ষতি না হয়। বিয়ে করে রেখেছি এটাও তোকে বলতাম আমি সময় হলে। কারণ তোকে ছাড়া তো আমি অসম্পূর্ণ তোকে তো বলাই লাগতো সব। তোকে হারানোর ভয় আমাকে তাড়া করে বেড়াতো সব সময় তাই আমি এমন একটা কাজ করতে বাধ্য হয়।
–” সেদিন তোর আর আসিফের এমন ঘনিষ্ঠ ছবি দেখে আমার অনেক রাগ হয়ে গিয়েছিলো। মাথায় রক্ত চেপে গিয়েছিলো কারণ আসিফ ছেলেটা ভালো না। ও জেদের বশে আমাকে হারানোর নেশায় তোর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করে। তোর সাথ সম্পর্কে জড়ায়। রোহানের কথায় রুহি অবাক হয় একটু কিন্তু সেটা নিয়ে এখন ভাবতে চাই না আর।

– আমি সব কিছুর জন্য মাফ চাচ্ছি তোর কাছে। প্লিজ আমাকে ভুল বুঝিস না। আমার থেকে দূরে যাস না রুহি। আমি তোকে ভালোবাসি ভীষণ ভালোবাসি রুহি৷ রোহানের মুখে ভালোবাসি কথাটা শুনে থমকে যায় রুহি। মনের মধ্যে এক ঝাক সুখের পাখির আনাগোনা শুরু হয়। শীতল দমকা হাওয়া যেনো রুহিকে ছুঁয়ে যায়। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে সুখের কান্না। দুইহাত মুঠো করে দুইপাশের ওড়না চেপে ধরে। রোহানের মুখ থেকে এমন ভাবে ভালোবাসার কথা শুনবে কখনো ভাবেনি রুহি.।

– রুহি, রোহানের বাবা মায়ের মুখে এক চিলতে হাসি এখন। কিন্তু তারপরও সবাই উৎসুক হয়ে রুহির কথা শোনার জন্য।
– রুহি চোখের পানি মুছে নিজেকে শক্ত করে নিয়ে বলে আমি তোমাকে ভালোবাসি না আর না স্বামী হিসেবে মানি। আমার যে ভালোবাসা আমার মন জুড়ে ছিলো সেটা একান্ত আমার আর আমারই থাকবে সেটা।। সেখানে আর কাউকে লাগবে না আমার। কাউকে না বলে রুহি কান্না করতে করতে ছুটে তার ঘরে চলে যায়। রোহানের চোখও ছলছল হয়ে উঠে। করূণ দৃষ্টিতে রুহির চলে যাওয়া দেখে।
– রুহির রাগ করাটা স্বাভাবিক। সেদিন অনেক বাজে কথা বলেছে রোহান যেটা পরে বুঝতে পারে তার এমন সব বলা ঠিক হয়নি। কিন্তু রোহান একবার রেগে গেলে তার মধ্যে আর কোনো জ্ঞান থাকে না। যার জন্য সেদিন রুহিকে ও বাজে উক্তি দিতেও পিছুপা হয়নি।

— রুহি না বলা পর্যন্ত তোমাদের বিয়ে হবে না রোহান। বাবার এমন কথায় তার দিকে তাকায় রোহান। রুহি’মা অনেক কষ্ট পেয়েছে বুঝতে পারছি। রুহির মনে কতটা আঘাত পেয়েছে ভাবো একবার। আর সব কিছু হয়েছে তোমার জন্যই। তাই সবতোমাকেই ঠিক করতে হবে। যদি রুহি রাজি হয় তোমাকে বিয়ে করতে তোমাকে মাফ করে দিয়ে তবে আমরা এই নিয়ে ভাববো তার আগে না বলে রায়হান শেখ চলে যায়। রুহির বাবা রোহানের কাধে হাত রেখে আশ্বস্ত করে সেও চলে যায়। রাজিয়া বেগম আর আমিনা বেগম থেকে যায় ড্রয়িং রুমে।

— তুমি পারবে রোহান। আমার মেয়েটা বড্ড অভিমানী, জেদি কিন্তু সে অভিমান তুমি পারবে একমাত্র খন্ডন করতে। তাই এখন থেকে তোমার কাজ হলো আমার মেয়েটার মন ভালো করা৷ সব কিছু শেষ করে নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করা। রুহির মায়ের কথায় ভরসা পায় রোহান। মুখে একটু হাসি নিয়ে আসার চেষ্টা করে।

– আমরা আছি তোর সাথে রোহান। রুহির রাগ অভিমান কমাতে আমরাও সাহায্য করবো তোকে। মায়ের কথায় জড়িয়ে ধরে রোহান মাকে। আমি পারবো মা রুহির মন জয় করতে আমাকে যে পারতে হবে৷ ওই পাগলীটাও যে কষ্ট পাচ্ছে অনেক। বাইরে নিজেকে শক্ত রাখলেও ভেতর টা যে ওর দগ্ধ হচ্ছে বুঝতে পারছি মা। আমি সব ঠিক করব আবার দেখো। এবার রুহি অন্য রোহানকে দেখবে। তোমার মেয়ে রোহানের ভালোবাসায় ডুবে যাবে এবার ছোটমা বলে রোহান ঘরে চলে যায়। রাজিয়া আর আমিনা বেগম দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে একটা প্রাপ্তির হাসি দেয়।

–“রুহি ঘরে এসে চিৎকার করে কান্না করতে থাকে। রোহানের ভালোবাসা পাওয়ার পর যেখানে তার আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে থাকার কথা সেখানে আজ বিষের কাটার মতো বিধছে যেনো তার বুকে। কষ্ট হচ্ছে রুহির ভীষণ। সেদিনের করা প্রতিটি ব্যবহার রুহিকে এখনো যন্ত্রণা দেয়। রোহানকে মুখের উপর না করে দিয়েও অনেক কষ্ট পাচ্ছে রুহি। কিন্তু কি করবে। মন থেকে যে সবটা মেনে নিতে পারছে না রুহি।

– সেদিন রাতে আর কারোরই খাওয়া দাওয়া হয়না। যে যার ঘরে বসে থাকে মন খারাপ করে। রুহি তারপর আর ঘর থেকে বের হয়নি আর। রোহানও তার ঘরে বসে আছে চুপচাপ মন খারাপ করে।

–“” চারিদিকে ভোরের আলো ফুটে উঠেছে। পাখিরা তাদের কলরবে মুখরিত করে তুলেছে চারিপাশ। ভোরের হিমেল হাওয়া বয়ছে সুনিপুণে। প্রতিটি বৃক্ষ যেনো মাথা চারা দিয়ে উঠছে জেগে। ফুলেরা বাতাসের তালে দোল খাচ্ছে। ব্যস্তময় শহরে কোলাহল বেড়েই চলছে৷ সব কিছু উপেক্ষা করে ঘুম ভাঙে রুহির। পিটপিটে চোখে আলতো করে তাকায় চারিদিক। উঠে বসে আড়মোড়া ভেঙে ঘরের চারিদিকে তাকাতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। রুহি দুইহাত দিয়ে ভালো করে চোখ কচলিয়ে দেখে সারা ঘরময় লাল বেলুনের ভরা আর তাতে সুন্দর করে লেখা আছে “সরি বউ” সরি ফর এভরিথিং। বউ লেখাটা দেখে মুচকি হাসে রুহি। অনেক ভালো লাগা কাজ করে এই একটা শব্দে। সেটা আবার যদি হয় প্রিয় মানুষের।

– রুহি এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে দেখে না। ঘরের দরজাও বন্ধ তাহলে এই সব করলো কখন আর আসলো কিভাবে ঘরে রুহির মাথায় এই ভাবনা আসে। কাজটা যে রোহানের রুহি এটা খুব ভালো করে জানে আর তার দ্বারা কোনো কিছু অসম্ভব না এটাও জানে রুহি। তাই সে সব কিছু উপেক্ষা করে উঠে চলে যায় ওয়াসরুমে। এইদিকে নিজের ঘরে বসে সব দেখছিলো রোহান। রুহির রিয়াকশন কেমন হয় উঠে সব দেখার পরে তা দেখার জন্য কিন্তু রুহিকে আগের মতো স্বাভাবিক দেখে হতাশ হয় রোহান। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে বউটা আমার সত্যি বড্ড অভিমানী।

–” রুহি ফ্রেস হয়ে একবারে রেডি হয়ে বের হয় রুমে থেকে। নাস্তা করে কলেজে যাবে সে। রুহি রুম থেকে বের হয়ে সিড়ি বেয়ে আসতেই সামনে তাকিয়ে দেখে তার মা বাবা বড়মা বড়বাবা দাঁড়িয়ে আছে এবং তাদের হাতেও একটা করে লাল বেলুন আর তাতে লেখা আছে সরি রোহানের তরফ থেকে “রোহানের বউ’ এটা দেখার পর রুহির লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে।

– ডেভিলটা এদেরও বাদ দেয়নি ছি। লাজ লজ্জা সব যেনো গিলে খেয়ে ডেভিলটা সাথে আমার লাজ সরমও খাচ্ছে।

– রুহি তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে এসে সবার হাতের বেলুন গুলো ফাটিয়ে দিয়ে বলে কি শুরু করেছো তোমরা। ওই সাইকোটার সাথে তোমরাও যোগ দিয়েছো বাবা।
– কি করবো বল মা।।আমি তো জামাইয়ের কষ্টটা বুঝছি। বেচারা না পারছে কিছু করতে আর না পারছে বলতে তাই একটু সাহায্য করছি। জত হোক আমিও তো একজনের স্বামী। বউ পানিশমেন্ট দিলে কেমন ফিল হয় আমি জানি অসহায় ফেস করে বলে রুহির বাবা।

– বাবার মুখে এমন কথা শুনে রুহির চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। অবাক হয় ভীষণ। কাদের দেখছে রুহি। আর কেমন নির্দ্বিধায় সব বলে দিলো নিজের মেয়েকে।
– রুহি নিজেকে সামলে নিয়ে বলে এই সব কি বলছো বাবা। কে তোমার জামাই। তাছাড়া আমি তোমার মেয়ে এখনো বিয়ে হয়নি আর জামাই নিয়ে চিন্তা করছো। তোমরা সবাই সিক হয়ে গেছো।

– হুম তা ঠিকই বলেছিস। তোর স্বামী আমাদের এমন সিক করে দিয়েছে। কাল রাত থেকে মাথা খাচ্ছে৷ সব কিছু শেষ করে আমাদের ক্ষেমা দে মা আমিনা বেগম বলে।

– কি স্বামী স্বামী করছো তোমরা। আমার কোনো স্বামী নেই। আর না আমি কাউকে স্বামী বলে মানি। প্লিজ তোমরা এই গুলো করো না বলে রুহি বেরিয়ে যায় দ্রুত পায়ে। উপর থেকে রোহান সবই দেখছিলো।এবারও একটা হতাশার শ্বাস ছাড়ে।

–” কলেজে এসে বসে আছে রুহি। মুড তার হাই হয়ে আছে। সকাল সকাল মেজাজটাই বিগড়ে গেছে।

– কি রে এমন ভেটকি মেরে আছিস কেনো। মনে হচ্ছে খুব রেগে আছিস। ব্যাপারকি একটু খুলে বলতো আনিতা বলে। পায়েলও জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে আছে রুহির দিকে।

– আর বলিস না ওই ডেভিলটা সবার ব্রেন ওয়াশ করেছে। সবাইকে হাতে করে নিয়েছে। লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে ওদের দিয়ে ছি আমার তো ভাবতে ভীষণ লজ্জা লাগছে। আমি ওদের সামনে দাড়াবো কোন মুখ নিয়ে বলতো। রুহির কথার আগামাথা কিছুই বুঝে না ওরা। তাই বিরক্ত নিয়ে বলে কি নিয়ে কথা বলছিস একটু ক্লিয়ার করে বলবি না হলে বুঝবো কেমন করে বাপ।

– রুহি এবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সব খুলে বলে গত দুদিনের ঘটনা। আনিতা পায়েল শুনে তো পুরো হা হয়ে যায়। অবাকের উপর অবাক।

– পায়েল আমি যা শুনলাম তুইও কি তাই শুনলি রে। নাকি স্বপ্ন দেখছি আমি এখানে বসে বসে। সব কেমন ঘোরলাগা লাগছে ।
– আনিতার কথা শুনে পায়েলও বলে সেম অবস্থা আমারও আফা। মনে হচ্ছে আমার শরীর ভালো নেই।

– ওদের এমন রিয়াকশন দেখে রুহি বিরক্ত নিয়ে ভ্রু কুচকে বলে কি শুরু করেছিস তোরা। আমি মরছি আমার জ্বালায় তার মধ্যে তোরা আবার টাসকি খাইস।

– তো কি করব। রোহান ভাইয়া যে এত রোমান্টিক আগে জানা ছিলো না। আমরা তো সব সময় উনার রাগী রুক্ষ রাক্ষস রুপটাই দেখেছি কিনা। কিন্তু তার মধ্যে যে এত ভালোবাসা ছিলো বুঝতেই পারিনি।

– আমি তার আশেপাশে থেকেই কিছু বুঝতে পারিনি তো তোরা। তবে আমি মানবো না। আমাকে কষ্ট দেওয়া তার সব শোধ আমি নেবো।

– কেনো অযথা ঝামেলা করছিস ভাই। মেনে নে না৷ এমন হ্যান্ডসাম ড্যাশিং বয় কেনো হাত ছাড়া করছিস। আমি হলে তো নাচতে নাচতে গিয়ে গলা জড়িয়ে বলতাম আই লাভভভভ বাকিটা বলার আগেই পায়েল থেমে যায় সামনে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে । পায়েলের এমন অবস্থা দেখে অনিতা রুহিও সামনে তাকিয়ে দেখে তিনজন ছেলে হাতে বেলুন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর তাতেও লেখা আছে “সরি জান” প্লিজ। এটা দেখে রুহি রেগে যায়। উঠে দাঁড়িয়ে আশেপাশে রোহানকে খুজতে থাকে। কারণ রোহান যে আশেপাশে আছে রুহি জানে সেটা।

– এদিক ওদিক দেখতে থাকে তখনই পেছন থেকে কানের পাশে মুখ নিয়ে একজন বলে উঠে আমাকে খুজছিলে বুঝি রুহি সোনা। এতে রুহি চমকে উঠে সামনে ঘুরে তাকায়।

চলবে…

( ❌কপি করা নিষেধ ❌ ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে