ভালোবাসার লুকোচুরি পর্ব-০৬

0
973

#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#লেখনী_আলো_ইসলাম

” ৬ ”

–” রোহান রুহির দিকে এগিয়ে যায় আস্তে আস্তে। রুহির পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। রুহি তো তার ভাবনাতে মত্ত হয়ে আছে। রোহান এতখনে বুঝতে পারে রুহি নাসিমাকে কেনো খুঁজতে ছিলো।

– রোহান এবার দুইহাত তুলে রুহির লেহেঙ্গার হুক লাগাতে যায়। হঠাৎ স্পর্শে হাল্কা কেঁপে চমকে ঘুরে দাঁড়ায় রুহি। অবাক হয়ে রোহানের দিকে তাকায় এক সাইডে থাকা চুল গুলো পিঠের উপর ছড়িয়ে দিয়ে৷ রুহির এমন বিহেভে ভ্রু কুচকে তাকায় রোহান। সাথে রাগও আসে কিছুটা।

– ঘুরে দাঁড়ালি কেনো ইডিয়ট ধমকের স্বরে বলে রোহান। রোহানের কথায় রুহি আরো অবাক হয়ে বলে এএ।
– তুই কি এভাবে বিয়ে বাড়ি যেতে চাস রাগান্বিত হয়ে বলে রোহান। রোহানের কথা শুনে রুহি জোরে জোরে দুইপাশে মাথা নাড়িয়ে না বলে।
– তারপর মাথা নিচু করে নুয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে এই জন্য তো নাসিমাকে খুঁজতে ছিলাম আমি।। আম্মু বড়মা কেউ নেই৷ নাসিমাও নেই। এখন আমি কার থেকে লাগিয়ে নেবো। অনেক দেরি হয়ে গেছে অলরেডি।

– রুহির কথায় রোহান বিরক্ত হয়ে মুখ দিয়ে চ শব্দ করে বলে তোকে নিয়ে কখনো কোনো কাজ হয়েছে বলে তোর মনে হয়। রোহানের কথায় রুহি অসহায় ফেস করে তাকায়।

– ঘুরে দাঁড়া আমি লাগিয়ে দিচ্ছি। রোহানের মুখে এই কথা শুনে রুহি চরম অবাক হয়ে চোখ বড় করে তাকায়। তাই দেখে রোহান বলে এমন পেঁচার মতো তাকিয়ে আছিস কেনো। কি বললাম কানে যায়নি।

— খারুস ডেভিল একটা মুখ দিয়ে কখনো ভালো কথা আসে মনে মনে বলে রুহি । তারপর মুখে হাসি এনে বলে থাক ভাইয়া আমি লাগিয়ে নেবোনি৷ আমি বরং ঘরে যায় বলে হাঁটা দিতে গেলে রোহান ধমক দিয়ে বলে এক পা বাড়ালে খবর আছে তোর। ঘুরে দাড়া কুইকলি। অলরেডি অনেক লেট তুই। কোনো কাজ তো সময় মতো করতে পারিস না। ইররেস্পন্সিবল গার্ল শেষের কথাটা আস্তেই বলে রোহান।

– রুহি উপায় না পেয়ে ঘুরে দাঁড়ায় রোহানের দিকে পিঠ করে। রোহান রুহির চুল গুলো সরিয়ে দিলে রুহি কেঁপে উঠে লেহেঙ্গার দুইপাশ খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলে। তাই দেখে রোহান মুচকি হেসে লেহেঙ্গার হুক লাগাতে থাকে। চোখ খিচে বন্ধ করে আছে রুহি। শ্বাসরুদ্ধ ভাবে দাড়িয়ে আছে। এক অদ্ভুত অনুভূতি জাগে যেটার মানে রুহির জানা নেই। রোহান তার কাজ শেষ করে আর এক মুহুর্ত দাঁড়ায় না সেখানে। নিজ ঘরের দিকে হাঁটা দেয়। আর রুহি যেনো এতখনে স্বস্তি পায়। টানা শ্বাস ছেড়ে সামনে ঘুরে রোহানের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

–” রাগী লুকে আগুন জ্বালানো চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে রোহান হাতে থাকা ছবির দিকে। মাথা গরম হয়ে যায় রোহানের রুহির সাথে অন্য ছেলেকে এত ঘনিষ্ঠ ভাবে দেখে। রোহান রুহিকে চোখে চোখে রাখার জন্য, রুহির সকল কাজ কর্মের আপডেট রাখার জন্য একজন কে রেখেছে যে রুহিকে সব সময় ফলো করে রুহি বাইরে গেলে। রুহি আজ কিছুদিন ধরে আসিফের সাথে মেলামেশা করছে। অনেক জায়গা যাচ্ছে৷ হাসি মজা ইত্যাদি সব ছবিতে আবদ্ধ করে নিয়ে আসে রোহানের রাখা লোক। ছবি গুলো দেখে রোহানের মাথায় আগুন জ্বলে উঠে। একটা ছবিতে আসিফ রুহিকে আইস্ক্রিম খাওয়াই দিচ্ছে আর রুহি হাসি মুখে খাচ্ছে। এটা দেখার পর রোহান নিজের রাগকে আর সংযত করতে পারে না। সামনে থাকা ল্যাপটপকে ছুড়ে ফেলে দেয় মাটিতে। টেবিলে থাকা সকল কিছু হাত দিয়ে ছুড়ে মারে। তাই দেখে রোহানের রাখা লোক চমকে উঠে ভয়ে সিটিয়ে দাঁড়ায়।

– দুইহাতে নিজের চুল টেনে ধরে পেছনে রাগ কোন্ট্রল করার চেষ্টা করছে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে। কিন্তু বারবার ছবির দেখা ওই দৃশ্য সামনে চলে আসছে তার।

– থ্যাংকস মিষ্টার রিয়াজ বলে একটা টাকার বান্ডিল ছুড়ে দেয় তার দিকে। রিয়াজ টাকাটা ক্যাচ ধরে বলে তাহলে আমি আসি স্যার। রোহান মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বললে তিনি বেরিয়ে যায় । রোহান এবার গটগটে পায়ে বেরিয়ে আসে অফিস থেকে। রাগে আগুনের গোলা ছুটছে যেনো চোখ দিয়ে।

–” রুহি সবে কলেজ থেকে ফিরে ফ্রেস হয়ে ফোন নিয়ে বারান্দায় বসেছে। এখন প্রায় বিকেল। বিকেলের পরিবেশটা অনেক ভালো লাগে রুহির। তাই এই সময় কানে হেডফোন লাগিয়ে পছন্দের গান শুনে আর বিকেলের পরিবেশ অনুভব করে। রুহি হেডফোনটা কানে লাগাতে যাবে তখনই তার ঘরের দরজা আটকানোর শব্দ আসে৷ রুহি হুড়মুড়িয়ে উঠে ঘরে এসে দেখে রোহান দরজা বন্ধ করছে। তাই দেখে রুহি অবাক হয়ে বলে একি ভাইয়া দরজা বন্ধ করছো কেনো। রুহির কথা শুনে রোহান রুহির দিকে ফিরলে রুহির আত্না কেঁপে উঠে রোহানের চোখ দেখে । ভয়ে গুটিয়ে যায় রুহি। রোহান এবার আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় রুহির দিকে৷ তাই দেখে রুহিও পিছু যেতে থাকে।

– রোহান রুহির খুব কাছাকাছি চলে আসলে রুহি ভয়ার্ত চোখে তাকায় রোহানে দিকে।রোহানের হঠাৎ এমন ব্যবহার করার কারণ বুঝতে পারে না রুহি।

– আমি কি আবার কোনো ভুল করেছি। তার জন্য কি রেগে আছে ভাইয়া। কিন্তু আমি তো তেমন কিছু করিনি আমার জানা মতে। তাহলে ভাইয়া এমন করছে কেনো নিজের মনের সাথে বলে কথা গুলো রুহি।

– রুহি পিছু সরতে সরতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। তাতে চমকে উঠে এদিক ওদিক তাকিয়ে পালানোর পথ খুঁজতে থাকে। কিন্তু রোহান এত কাছে চলে এসেছে যে রুহি আর কোনো দিকে যেতে পারে না। রাগী চোখে তাকিয়ে আছে রোহান এখনো। কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো শব্দ করেনি এখনো পর্যন্ত। রোহানের এমন চুপ থাকা আরো ভীতো করে দিচ্ছে রুহিকে।

– ভাইয়া কি হয়েছে আমি.. সম্পুর্ন কথা বলার আগেই রুহির গলা চেপে ধরে রোহান। রাগে থরথর করে কাঁপছে যেনো রোহানের শরীর। রুহি রোহানের হাত সরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে।

– খুব সখ না বাইরে ছেলেদের সাথে মেলামেশা করার৷ তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার। শরীরের সাথে শরীর লাগিয়ে চলা খুব ভালো লাগে তাই না। রোহানের মুখে এই সব বাজে কথা শুনে রুহির ভীষণ রাগ আসে। সাথে ঘিনঘিন করে উঠে তার শরীর। কিন্তু বেশি কিছু ভাবতে পারে না রুহি আর৷ কারণ রোহান তার গলাটা এমন ভাবে চেপে ধরেছে যে আর একটু পরে প্রানপাখি উড়াল দিবে। চোখ লাল হয়ে যায় রুহির। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। চোখ দিয়ে দরদরিয়ে পানি পড়ে আপন মনে। তাই দেখে রোহানের হুস আসে। রুহিকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে যায়। আর রুহি ছাড়া পেয়ে কাশতে শুরু করে গলায় হাত দিয়ে৷ জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা হয়ে গেছে তার।

– রুহিকে এমন ছটফট করতে দেখে শান্তি লাগে যেনো রোহানে। এত কিছুর পরেও যেনো রোহানের রাগ কমছে না ।
– খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি রুহি সোনা। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তাই না। অদ্ভুত আচরণ করে বলতে থাকে রোহান। তাই দেখে রুহি অবাকিত চোখে তাকিয়ে আছে রোহানের দিকে। এই রোহানকে রুহি চিনে না। না আগে কখনো দেখেছে।

– তোকে বারবার নিষেধ করার পরও তুই ছেলেদের সাথে মিশেছিস। তাদের সংস্পর্শে এসেছিস বলে ছবি গুলো ছুড়ে দেয় রুহির দিকে। রুহির সামনে ছিটিয়ে পড়ে ছবি গুলো। ছবির দিকে তাকাতেই চমকে উঠে রুহি। তার আর আসিফের সব ছবি দেখে ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে আরো। এতখনে বুঝতে পারে রোহান কেনো এমন করছে তার সাথে।

— রোহান এবার রুহিকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে তোর শরীরের খুব জ্বালা তাই না। তাই ছেলেদের আশেপাশে থাকতে তোর খুব ভালো লাগে কি ঠিক বলছি না আমি? রাগের বশে কি বলছে না বলছে কোনো হিতাহিত জ্ঞ্যান নেই যেনো রোহানের। কিন্তু রুহির শরীর গুলিয়ে আসে যেনো রোহানের কথা শুনে৷ এত বাজে মনোভাব কি করে করতে পারছে রোহান তাকে নিয়ে সেটাই ভাবছে অবাক হয়ে। রোহানের উপর যে সম্মান ছিলো রুহির সেটা যেনো দূরে সরে যাচ্ছে রোহানের ব্যবহারে।

– কি হলো বল৷ তোর ছেলেদের ছোঁয়া খুব ভালো লাগে। তাই কলেজ যাওয়ার নাম করে ফষ্টিনষ্টি করে বেরাস বাইরে। রুহি নিরব হয়ে রোহানের সকল অভিযোগ শুনে যাচ্ছে৷ চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রুপাত। রোহানের কথার পরিপ্রেক্ষিতে তার কি বলা উচিত জানা নেয়।

– তুই আমাকে বলতে পারতি৷ আমি তোর সকল যৌবন জ্বালা মিটিয়ে দিতাম৷ আমাকে কি তোর ছেলে মনে হয়না। নাকি আমাকে দিয়ে তোর হবে না স্পিক আপ ড্যামিট চিৎকার করে বলে রোহান এবার৷ রুহি যেনো অনুভূতি শুন্য হয়ে গেছে। বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
— রুহিকে এমন চুপ থাকতে দেখে রোহানের রাগটা আরো বেড়ে যায়। রুহিকে সামনে ঘুরিয়ে চুল গুলো মুঠো করে নিয়ে রুহির ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে দেয় রোহান। রোহানের এমন কাজে রুহি শকড হয়ে যায়। রসগোল্লার ন্যায় চোখ করে তাকায়।
– রোহান তার যত রাগ এবার রুহির ঠোঁটের উপর তুলতে থাকে। রুহি ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে চোখ বন্ধ করে খিচে। রোহানের শার্টের দুই অংশ ধরে দূরে সরানোর চেষ্টা করে কিন্তু রোহান আরো শক্ত করে ধরে রুহিকে। উপায় না পেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে সব কিছু।
— একটু পর রোহান রুহির ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। রুহি এবার কোনো রিয়াকশন দেখায় না। কারণ সে জানে এতে কোনো লাভ আসবে না। রোহানে রুহির গলায় জোরে একটা কামড় বসিয়ে দেয় তাতে রুহি কেঁপে উঠে রোহানের দুই হাত খামচে ধরে ব্যথা সহ্য করার চেষ্টা করছে।

– রোহান মুখ তুলে বলে এতে হবে তোর নাকি আরো কিছু লাগবে। এর বেশি কিছু লাগলে বল আমায়। ওয়েট আমি নিজ থেকে তোকে সাহায্য করছি বলে রুহির ওড়নাটা টেনে ফেলে দেয় রোহান। তাই দেখে রুহি এবার জোরে কেঁদে উঠে দুইহাতে নিজেকে আবদ্ধ করে।

– রুহির এমন কান্নায় থমকে যায় রোহান। ওড়না টা গলায় জড়িয়ে দিয়ে বেরিয়ে আসে। আর রুহি ওইখানেই বসে পড়ে কান্না করতে করতে।

– রোহান বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে রুহির মা আর রোহানের মা ছুটে আসে রুহির কাছে। রোহানকে রেগে রুহির ঘরের দিকে আসতে দেখেই তারা বুঝে গিয়েছিলো রুহি কিছু একটা করেছে। যার জন্য রোহান বেশ রেগে আছে রুহির উপর কিন্তু রোহান এসে ঘরের দরজা বন্ধ করলে অবাক হয়ে যায় তারা৷ রোহানের বের হওয়ার অপেক্ষা করতে ছিলো বাইরে। তার আগে রোহানকে ডাকলে কোনো কাজ হতো না তাই তাদের অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় ছিলো না।

–” রুহি হাটু মুড়ে বসে কান্না করছে। রুহিকে এমন বিধস্ত দেখে তারা চমকে উঠে। আমিনা বেগম রুহির কাছে গিয়ে বুকে আগলে নিয়ে বলে কি হয়েছে রুহিমা৷ তোকে এমন লাগছে কেনো। আমার ছেলেটা কি করেছে তোর সাথে। রুহির মা কান্না করে রুহিকে এমন দেখে। রুহির ঠোঁট দিয়ে রক্ত পড়ছে। রোহান এমন করে কামড় দেয় যে রুহির ঠোঁট কেটে তখনই রক্ত ঝরতে শুরু করেছিলো। গলার পাশটাও কালচে দাগ পড়ে গেছে। রুহির এমন অবস্থা দেখে আমিনা বেগম আন্দাজ করতে পারে রুহির সাথে কি করেছে রোহান। নিজের ছেলের কাজে অনুতপ্ত হয় আমিনা বেগম। রোহানের উপর ভীষণ রাগ আসে তার।

– রাজিয়া বেগম রুহিকে জড়িয়ে ধরে বলে তোর কি হয়েছে রুহি৷ রোহান তোর সাথে এমন ব্যবহার কেনো করলো। কি করেছিস তুই?
মায়ের কথায় ডুকরে কেঁদে উঠে রুহি। মুখ দিয়ে যেনো কোনো কথায় আসছে না তার। ঠোঁট জ্বালা করছে ভীষণ। সাথে গলার পাশটাও খুব জ্বালা করছে। কিন্তু এই সব ব্যথার থেকে বেশি জ্বালা দেয় রোহানের করা ব্যবহারে। রুহি যেনো কিছুতেই মানতে পারছে না রোহানের করা কাজ গুলো। রুহি তার মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। আর আমিন বেগম রেগে হাঁটা দেয় রোহানের ঘরের দিকে৷ অনেক প্রশ্ন আছে তার আজ রোহানের কাছে।

— চলবে….

( ❌কপি করা নিষেধ ❌ ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে