ভালোবাসার প্রজাপতি পর্ব – ৯

0
888

#ভালোবাসার প্রজাপতি
#তাসনিম তামান্না
#পর্ব-৯

স্নিগ্ধ সকাল মিষ্টি রোদ আফরা মুখে শিরশির অনুভব হতেই পিটপিট করে চোখ খুললো। ঘুমুঘুমু ঝাপসা চোখে ইশরাককে দেখে আবার চোখ বন্ধ করে নিয়ে ঘুম কন্ঠে বলল

-‘আপনি আবার এসেছেন আমাকে না জ্বালালে আপনার পেটের ভাত হজম হয় না’

-‘না গো বউ’

আফরার আর কোনো কথা বলল না হয়ত আবার ঘুমিয়ে গেছে। ইশরাক আফরাকে জ্বালানোর জন্য মুখে ফুঁ দিলো। গাল, নাক, চুল টানছে। আফরা ব্যাথা পেয়ে চোখ মুখ কুচকে পিটপিট করে আবার চোখ খুলে ইশরাককে দেখে বোঝার চেষ্টা করছে সত্যি নাকি স্বপ্ন দেখছে। তন্দ্রাভাবটা এখনো কাটে নি ওর। আফরাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশরাক ব্যাপারটা বুঝতে পেরে। আফরার মনে কি চলছে তাই ইশরাকও আফরার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আফরার পাতলা গোলাপী ঠোঁটের দিকে আটকে যায় একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায় ধীরে ধীরে আফরার দিকে এগিয়ে গিয়ে আফরা ছোট চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে আফরার ঠোঁটে আলত করে ঠোঁট ছুঁয়ে কানে ফিসফিসিয়ে বলল…

-‘আমি স্বপ্ন নয় সত্যি এসেছি বউ’

আফরার কয়েক সেকেন্ড লাগলো ব্যাপারটা বুঝতে। ইশরাককে ধাক্কা দিয়ে উঠে বসে রেগে ঠোঁট মুছতে মুছতে বলল

-‘ছিঃ কি করলেন এটা? আপনারা সব ছেলেরাকে শুধু মেয়েদের সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন? ওমনি সুযোগ পেলেন আর আমাকে….ছিঃ! আপুর মতো আমাকে দূর্বল ভাববেন না। যে বিয়ে ছাড়ায় আমাকে ছুতে দিবো এতোটাও লো মেন্টালিটির আমার নয়। যা করেছেন করেছেন আর একটু আমাকে ছোঁয়া চেষ্টা করবেন না। বেড়িয়ে যান রুম থেকে একটা অবিবাহিত মেয়ের রুমে এসে তার সাথে অস্যভতামি করতে বিবেকে বাঁধে না? এটা কেউ জানলে তো আপনার কিছুই হবে না চরিত্রে কালি তো আমার-ই লাগবে’

কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে দিলো আফরা। ইশরাক আফরার কথায় ধাক্কা খেলো আফরা এতো’টা রিয়াক্ট করবে ইশরাক ভাবে নি। কিছু না বলে উঠে চলে গেলো। কি-ই বা সব দোষ-ই তো ওর না ও আফরাকে কিস করত না এমন কিছু হতো। ভাগ্যিস দরজাটা লাগানো ছিল আর রুমটা সাউন্ডপ্রুভ ছিল না হলে এতোক্ষণে সবাই যেনে যেত।

আফরা কিছুক্ষণ কান্না করে ফ্রেশ হয়ে আসলো। সকালের শুরু’টা-ই খারাপ সারাদিন কেমন করে যাবে কে জানে। আফরা রুমের বাইরে আসলো উদ্দেশ্য আরাকে খোঁজা আজ-কাল মেয়েটাকে একটুও সময় দিতে পারে না বললেই চলে। আরা রাতে অয়নের সাথে ঘুমাই আফরা রাত করে পড়তে হয় সেজন্য আরাকে নিজের কাছে রাখে না। আজ শুক্রবার সেজন্য বাসায় আজ রান্নাঘরে আসতেই দেখলো মা, ইশরাককের মা আর চাচি মিলে তোড়জোড় শুরু করছে। সারাবাড়ি খাবারের গন্ধে ম-ম করছে। আফরা ইশরাককের মা’কে দেখে একটু থমকালো সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করে আফরার মা বলল

-‘আফরা এতোদেরি করে ঘুম থেকে কেউ উঠে? যা আয়রাকে রেডি করে দে দেখ মেয়েটার গোসল হয়ে গেছে মনে হয় ইশারা ও আছে যা তারাতাড়ি কাজি আসবে’

আফরা অবাক হয়ে বলল

-‘কাজী?’

-‘হ্যাঁ রে কাল রাতে আয়রা বলল আজকেই অয়নকে বিয়ে করবে আয়রা মতি কি গতি হুটহাট পাল্টে যায় তাই আর দেরি না করে বিয়ে দিয়ে দিবো তুই ঘুমিয়ে পড়ছিলি তাই তোকে বলা হয় নি।’

নিমিষেই আফরার মুড ভালো হয়ে গেলো আর কোনো প্রশ্ন না করে ছুটল আয়রার রুমে। আফরা আয়রার রুমে গিয়ে খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরলো। আয়রা মুচকি হেসে সেও জড়িয়ে ধরলো।

-‘আপু তুই নিজের ইচ্ছেতে বিয়ে করছিস তো না-কি আমার ঔ কথাগুলাতে কষ্ট পেয়ে?’

-‘দূর পাগল মেয়ে তোর কথায় কষ্ট পাই নি। আর আমি নিজের ইচ্ছেতেই বিয়ে করছি তুইতো চোখটা খুলে দিলি’

-‘বাবা আমাকে কেউ জড়িয়ে ধরে না’

আফরা আয়রাকে ছেড়ে দিয়ে ইশারার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিয়ে বলল

-‘তুমি তো দেখছি হিংসুটে’

-‘অবশ্যই ভাবি’

আফরা থামকালো ইশারার মুখে ভাবি ডাক শুনে। আয়রা ভ্রু কুচকে বলল

-‘ভাবি?’

আফরা ইশারা অস্বস্তিতে পড়ে গেলো। ইশারাকে আমতা আমতা করে বলল

-‘আ আরে ভাবি তোমাকে ভাবি বলে ডাকছি কেননা তুমি আর কিছুক্ষণের মধ্যে অয়ন ভাইয়ার বউ হবে যেহেতু অয়ন ভাইয়া আমার ভাই হয় সেহেতু তুমি আমার ভাবি হবে তাই ভাবি বলে ডাকলাম তোমাকে’

-‘ওহ আমি ভাবলাম তুমি আফরাকে ভাবি বলে ডাকলে’

-‘আরে কি সব বলিস আপু ইশারা কেনো আমাকে ভাবি বলবে? আজব চল রেডি হয়ে নিবি কাজী চলে আসবে।’

আয়রা কিছু বলল না। আফরা আয়রার চোখ ফাঁকি দিয়ে ইশারার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো ইশারাও কম না চোখ টিপ দিয়ে দিলো। আফরা না চাইতেও হেস ফেললো। ইশরাককের ছোট বোন কি না দুষ্টু তো হবেই এবার এসএসসি দিবে।

অয়ন আর আয়রাকে বসানো হয়েছে। ওদের মাঝে আরা বসে আছে। আফরার বাবা ইশরাককের বাবা আর কাজী কথা বলছে। অয়নের কয়েক’টা ফেন্ড আসছে। ইশরাক গম্ভীর মুখে দাড়িয়ে আছে আফরার দিকে ভুলেও তাকাছে না। আফরা সেটা খেয়াল করেছে। ইশরাককের মা’র মুখটাও থমথমে। কিছুক্ষণের মধ্যে আয়রা আর অয়নের বিয়ে হয়ে গেলো অয়নের মুখে তৃপ্তির হাসি। আফরার দাদি রাহেলা বেগম যে খুশি হয়েছেন নাকি কষ্ট পেয়েছেন কিনা কিছু বোঝা যাচ্ছে না তার মুখ দেখে।

দুপুরে সবাইকে খেতে দিলো আফরা আরা’কে খাইয়ে দিচ্ছে সে আজ বড্ড খুশি আয়রা তাকে আর মারে না আদর দেয় সেও আয়রাকে আদর দেয় এই নিয়ে তার মুখে কত-শত বুলি ফুটেছে। খুশি মনে সেগুলা বলছে আফরার সাথে আফরাও সেগুলা শুনছে মন দিয়ে ইশারা একটু পর পর আরাকে খোঁচাচ্ছে কখনো চিমটি দিচ্ছে তো কখনো কাতুকুতু দিচ্ছে। এটা নিয়ে আবার আরা মহা বিরক্ত হয়ে কথার মাঝে ইশারাকে বোকে দিচ্ছে কিন্তু তাতে অবশ্য বিশেষ লাভ হচ্ছে না। উল্টো হেসে কুটিকুটি হচ্ছে।

আফরা খেয়াল করলো বড়রা সবাই রুমে কি নিয়ে যেনো আলোচনা করছে। আফরা সেদিকে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করলো না। কি নিয়ে আলোচনা করছে সেটা ও পরে জানতে পারবে তাই ওদিকে না গিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো। এসে দেখলো আরা আর ইশারা শুয়ে ফোনে কার্টুন দেখছে। আফরার ওদের পাশে শুয়ে পড়লো। ইশারা কার্টুন দেখতে দেখতে হঠাৎ প্রশ্ন করলো

-‘হবু ভাবি তুমি আমাদের বাসায় কবে পার্মানেন্ট ভাবি হয়ে যাবে গো?’

আফরা কিছুক্ষণ চুপ থেকে গম্ভীর কণ্ঠে বলল

-‘আমি তোমার হবু ভাবি এটা কে বলল তোমাকে?’

-‘কেনো ভাইয়া! ভাইয়া তো বলেই দিয়েছে তোমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবে না’

-‘আমি কিন্তু কাউকে ইভেন্ট তোমার ভাইয়াকেও বলি নাই আমি তাকে বিয়ে করবো। তাহলে তোমার ভাইয়া কেন বলল সে আমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবে না? ‘

-‘কি জানি। হয়ত ভালোবাসে বলে’

-‘এই পিচ্চি তুমি ভালোবাসা মানে বুঝো’

-‘এই তুমি আমাকে পিচ্চি বললে কেনো? জানো আমি ট্রেনের চেয়ে ফাস্ট তাই সব বুঝি’

-‘ও বাবা তাই নাকি মেয়ে তাহলে তো বড় হয়ে গেছে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে দেখছি’

-‘ও ভাবি তুমি তো দেখছি আমার মনের কথা বলে দিলে দাও দাও আমাকে বিয়ে দিয়ে দাও কতদিনের শখ আমি বিয়ে করবো কিন্তু কেউ বিয়ে দেয় না’।

আফরা বোকা বনে গেলো। ইশারার কথা শুনে আরাও বলল

-‘আমিও বিয়ে কলবো’

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে