ভালোবাসার দূরত্ব পর্ব-০৪

0
718

#ভালোবাসার_দূরত্ব (পর্ব: 4)
#লেখনীতে_নাফিসা_আনজুম
,,
,,
,,
সামির ভাইয়া তুমি কি জানো, মামি আর আম্মু তোমার আর আমার বিয়ে দিতে চায় ।

এসব কি বলছিস রশনি

হুম ঠিকি বলছি, কিন্তু আমি এ বিয়ে করতে পারবো না,ভাইয়া আমি তোমাকে সবসময় বড় ভাই হিসেবেই দেখছি,তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব না আমার।

আমিও তোকে ছোট বোনের নজরেই দেখেছি রশনি,আমিও চাই না এ বিয়ে হোক।

তার মানে তুমিও রাজি না

না

আমি আর কি না কি ভেবেছিলাম। যে তুমি বুঝি রাজি।

আচ্ছা আমি আম্মুর সাথে কথা বলে দেখছি,বলে নিচে নেমে আসলাম।

আম্মু আমাকে না জানিয়ে এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো।
আম্মু চল বাড়িতে যাবো

সে কি একটু আগেই তো আসলি বাবা, আজ থেকে যা(ফুপি)

না ফুপি অফিসে গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ আছে,আমাকে অফিস যেতে হবে।

তার আগে আমার কিছু কথা আছে সামির

হ্যাঁ আম্মু বলো

আমি তোর আর রশনির বিয়ে দিতে চাই,তোর ফুপা ফুপি রাজি, শুধু তোর বাবাকে বলবো। আর আমার বিশ্বাস তোর বাবাও এ বিয়েতে অমত করবে না। তোর মতামত জানতে চাইছি আমি।

সরাসরি এমন প্রশ্নে কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম। সবার সামনে কি বা বলবো। কিন্তু আমার মনে নেহা ছাড়া আর কারো জায়গা নেই,
তাই বলেই দিলাম,আম্মু আমি এ বিয়ে করতে পারবো না

উপস্থিত সবার মুখ কালো হয়ে গেলো। দূর থেকে দেখলাম শুধু রশনির মুখে হাসি।

কিন্তু কেনো সামির বাবা, আমার মেয়েকে কি তোমার পছন্দ না(রশনির আব্বু)

তেমন কিছু না ফুপা,আসলে ছোট থেকে রশনিকে ছোট বোনের মতোই দেখে আসছি

তাতে কি হয়েছে, ও তোমার নিজের বোন নয়

আম্মু এখন বাড়িতে চলো,পরে এ নিয়ে কথা হবে।বলেই সবাইকে সালাম দিয়ে বের হয়ে আসলাম। এখানে এক মুহূর্ত ভালো লাগছিলো না। নেহার মুখটা বার বার ভেসে উঠছিলো। মনে হচ্ছে পাগলিটাকে কতদিন থেকে দেখি না।

,,
পরেরদিন,,
নেহা ভার্সিটি গেছিলো আজ।বাড়িতে এসে শুনতেছে আজ নাকি সবাইকে মামার বাড়িতে ডেকেছে। সব খালামনি ফুপি সবাই আসবে।
একদম যেতে মন চাচ্ছে না ঐ বাড়িতে। কিন্তু মায়ের আদেশ যেতেই হবে। আর হীরা আপু,মিরা আপু সবাই আসতেছে, সবার সাথে দেখা হবে ভেবে মন একবার করে চাচ্ছে যেতে।
কিন্তু ঐ বাড়িতে গেলেই পূরোনো সৃতি গুলো চোখেঁর সামনে ভেসে উঠবে।আর কষ্ট হবে।

না আমি আবার কেনো ভাবছি ওনার কথা, আর ভাববো না। চোখঁ মুছে রেডি হয় নিলাম। মা তারাতারি বের হওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছে। আকাশ খারাপ যে কোনো সময় বৃষ্টি আসবে। বৃষ্টির আগেই পৌছাতে হবে।
নেহা আজ সাদা থ্রিপিস এর সাথে নেভি-ব্লু জিন্স আর কোটি পরেছে। কেনো জানি না আকাশ খারাপ দেখলে সাদা ড্রেস পরতে মন চায়(লেখিকার)

মামা বাড়ি পোছাতে না পৌছাতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।তুমুল বেগে বৃষ্টি হচ্ছে। সামির ভাইয়া এখনো অফিস থেকে বাড়িতে আসে নি।

ছোট বড় সবাই ড্রইংরুমে বসে আছে। মামা মুখ কালো করে বসে আছে। মামার সাথে কথা বলার সময় দেখলাম চোখঁ দুটো কেমন ছলছল করছে। কি হয়েছে বুঝতে পারছি না।

একটু পর মামি বললো,আমি সামির আর রশনির বিয়ে দিতে চাই। সামিরের বাবাও রাজি। সবাইকে কথাটা বলার জন্যই ডাকা হয়েছে।

সবাই খুশি, আর খুশি হবেই না কেনো,রশনি দেখতে সুন্দরী, সামির ভাইয়ার সাথে মানাবে ভালো।
সবাই ইতিমধ্যে বিয়ে নিয়ে নানা রকম প্লান শুরু করেছে।
শুধু রশনিটা এক দৃষ্টিতে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে।

মামির মুখ থেকে এই কথা শুনে আমার দম আটকে যাওয়ার উপক্রম, রশনির সাথে মানে। এটা কিভাবে সম্ভব উনি তো ঐ নীলাকে ভালোবাসে।

আহিরা বেগম ছলছল নয়নে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে, আর কেউ না বুঝুক তিনি বুঝতেছে মেয়ের মনে কেমন ঝড় বইছে। প্রথমে তো সামিরের কেয়ার, যত্ন সব দেখে তিনিও ভেবে নিয়েছিলেন যে সামির ও নেহাকে ভালোবাসে।

এমন সময় সামির বাড়িতে আসে। গাড়িতে এসেছে জন্য ভেজে নি। কিন্তু চুলগুলো কেমন এলোমেলো,চোখঁ লাল, মানুষটাকে কেমন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে।
নেহার মনে হাজারটা প্রশ্ন উকি দিচ্ছে আর বুকটা কেমন ধুকবুক করছে। নীলাকে যদি ভালোবাসে তাহলে রশনির সাথে কেনো বিয়ে।

এইতো সামির এসে গেছে

মামির কথায় ধ্যান ভাঙ্গলো, সামনে তাকিয়ে দেখি সামির ভাইয়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার মুখের দিকে।আবারো চোখঁ সরিয়ে নিলাম।
কেনো তাকিয়ে আছে আমার দিকে,না জানি কতোজনকে ঐ মন দিয়ে আসছে কে জানে। এখন কম বয়সি রশনিটাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে। লুচ্চা মানুষ।

এই চোখেঁ তাকানোর সাহস তোর নেই নেহা, একবার গভীর ভাবে তাকিয়ে দেখলে বুঝতে পারতি,তোর অনুপস্থিতিতে কতোটা ঝড় বইছে এ মনে।
কাল যদি আম্মু কসম না কাটাতো, তাহলে কিছুতেই এ বিয়েতে রাজি হতাম না আমি। দূরে চলে যেতাম অনেক দূরে।

হ্যাঁ,কাল অনেক রাতে বাড়ি ফিরে সামির। বাড়িতে আসতেই দেখে ওর বাবা মাথা নিচু করে বসে আছে। আর ওর মা ওকে বলে রশনিকে বিয়ে করবে কি না। না করলে উনি বাড়ি থেকেই চলে যাবে। সবাই জানে যে সাবিনা বেগম নিজির ছেলের প্রতি খুব সিরিয়াস।ছেলের জন্য আর কোনো সন্তান নেন নি।সামিরও জানে ওর মা ওর জন্য অন্য কোনো ভাই বোন নেন নি।তাই মাকে কষ্ট দেওয়ার ইচ্ছে ওর নেই। তবে নেহা যদি ওকে ভালোবাসতো তাহলে প্রানপন চেষ্টা করতো মা কে রাজি করানোর।

সবাই সামিরের মতামত জানতে চাইলে, মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,আম্মু যা বলবে তাই হবে।

,,
এক সাইডে দাড়িয়ে ছিলাম, রশনি এসে টেনে এক রুমে নিয়ে গেলো,
নেহা আপু (কেঁদে দিছে মেয়েটা)
কি হয়েছে রশনি তুই কাঁদছিস কেনো

নেহাপু আমি এ বিয়ে করতে পারবো না

এসব কি বলতেছিস তুই, সবাই বিয়ে ঠিক করে ফেলছে আগে কেনো বলিস নি

আমি আম্মু আব্বু কে বলেছিলাম,কিন্তু ওরা আমার কথা শোনে নি। আর সামির ভাইয়াও তো রাজি ছিলো না, কিন্তু এখন যে কেনো বললো রাজি

তুই ওনাকে চিনিসনা রশনি,উনি সবার মন নিয়ে খেলতে পারে কাউকে ভালোবাসার মতো মন ওনার নয়। কথাগুলো মনে মনেই থাকলো। যে আর কয়েকদিন পর ওনার বউ হবে তাকে এসব কথা বলা মানে অশান্তি। আর আমি চাই না উনি আমার জন্য কোনো ঝামেলায় পরুক।
তুই কেনো এ বিয়ে করতে চাস না রশনি, উনি তো সব দিয়েই পারফেক্ট, গুড লুকিং, হ্যান্ডসাম বড় বিজনেস ম্যান। সবাই তো খুব খুশি।

কিন্তু নেহাপু আমি একজনকে ভালোবাসি

কিইহহ

এখন আমি কি করবো নেহাপু, মিশু আপু ও আমার কথা শুনলো না। বাবা মা ওকে বিয়ে না দিয়ে আমার বিয়ে দিচ্ছে কেনো।

এমন সময় আবার রুমের মধ্যে চিল্লাচিল্লি শুরু হলো,গিয়ে দেখলাম সবাই রাসেল ভাইয়া কে ঘিরে আছে। আর নীলা মেয়েটা এসেছে। মুখে লজ্জা রাঙা হাসিঁ, সামির ভাইয়ার বিয়ে তাও আবার অন্য একটা মেয়ের সাথে,এই মেয়েটার কি কষ্ট হচ্ছে না।

এই নেহা এই দিকে আয়, আরেকটা খবর তো মিস করে গেলি রে

মীরা আপুর কথায় এগিয়ে গেলাম, কি খবর আপু

রাসেল ভাইয়ার বিয়ের খবর

ওমা তাই নাকি,একটু মিথ্যে হাসিঁ আনার চেষ্টা করলাম।

হুমম, কার সাথে জানিস, এই নীলা আপুর সাথে

কিইহহ

হ্যাঁ রে ,আমাদেরকে না জানিয়ে এতোদিন লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করে গেছে, এখন একসাথে দুটো বিয়ে।

কি হচ্ছে কিছুই তো মাথায় ঢুকছে না, নীলার বিয়ে রাসেল ভাইয়ার সাথে মানে, আমার ভাবনার মাঝে নীলা সামির ভাইয়াকে কে কংগ্রেস করে আমার দিকে এগিয়ে এসে আমাকেও কংগ্রেস করলে সবাই বলে ওঠে যে আমার বিয়ে না, রশনিকে দেখে দেয়।

নীলা অবাক হয়ে সামির ভাইয়ার দিকে তাকায়,

নীলা এই দিকে শোন তো একটু

একটু একপাশে গিয়ে, এসব কি হচ্ছে সামির, তুই তো সেদিনো আমাকে বললি যে তুই নেহাকে ভালোবাসিস।
আর আমি এটাও জানি যে তুই অনেক আগে থেকেই ওকে ভালোবাসিস।

সব ভালোবাসা পূর্নতা পায় না রে, তাই হয়তো আমার ভালোবাসাও পেলো না। ও যদি ওন্য কাউকে ভালোবাসে আমার কি করার আছে।

কিন্তু সামির তোর কোথাও ভূল হচ্ছে, আমি নেহার চোখেঁ তোর জন্য ভালোবাসা দেখেছি।

নীলার কথা শুনে ছোট ছোট করে তাকালাম

হ্যাঁ আমি একটা মেয়ে, আমার আর রাসেলের রিলেশন চলাকালিন রাসেল কারো সাথে কথা বললে আমার সহ্য হতো না, সেদিন তোর অফিস থেকে বের হবার সময় আমি স্পষ্ট দেখেছি ওর চোখেঁ রাগ ছিলো, আবার অভিমানে চোখঁ ছলছল করছিলো।

এসব কি বলছিস তুই

ঠিকি বলছি, তুই পারলে ওকে জিজ্ঞেস করে নিস ওর ভালোবাসার মানুষটা কে।আর নিজের ভালোবাসাকে এভাবে ছেড়ে না দিয়ে আগলে রাখতে হবে।

যদি তোর দেখা মিথ্যে হয়

হতেই পারে না, আচ্ছা তোর বলতে হবে না আমি জিজ্ঞেস করে নেবো।
,,

রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ। এখন বৃষ্টি নেই,তবে আকাশে মেঘ আজে। সবাই বাড়িতে চলে যাবো।সবাই খুব খুশি একসাথে দুটো বিয়ে, কতই না আনন্দ করবে সবাই। কে কি করবে প্লান করছে। মুখে হাসিঁ নেই শুধু আমার আর রশনির।

কেনোনা রশনিও ওর ভালোবাসার মানুষটাকে হারাতে বসেছে,আমিও।

নেহা এইদিকে একটু শোনো

নীলার ডাকে এগিয়ে গেলাম ওর দিকে, কিছু বলবে আপু

নেহা তুমি সামিরকে ভালোবাসো না

আমার ভালোবা,,,,,

হ্যাঁ অথবা না

মাথা নিচু করে ফেললাম,খুব কান্না পাচ্ছে এই মেয়েটা আমাকে কেনো জিজ্ঞেস করছে এসব।

দেখো নেহা ভালোবাসা গোপন রাখতে নেই, নাহলে ভালোবাসা বোঝা যায় না। তোমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসো অথচ দূজনি ভূল বুঝে বসে আছো।

দুজন দুজনকে ভালোবাসি মানে। সামির ভাইয়া কি আমাকে ভালোবাসে।

হুমম ঐ পাগলটা তোমাকে ভালোবাসে,আর অনেক আগে থেকেই।

সামির ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে, কথাটা মনে আসতেই মুখে আপনাআপনি হাসিঁ চলে আসলো।

নেহা (পাশ থেকে ডেকে উঠলো)

হুমম

তুই আমাকে ভালোবাসিস বলিস নি কেনো

তুমিও তো বলনি

আমি ভেবেছিলাম তুই বুঝে নিবি, কিন্তু তুই যে এতো বোকা কে জানতো

আচ্ছা সেদিন অফিসে নীলাকে যে বলেছিলে যে,আমি রেডি আছি তুই বিয়ের জন্য তৈরি হয়ে নে।

ওরে পাগলি রে সেটা মনে আছে, সেদিন তো বলছিলাম আমি বিয়ে খাওয়ার জন্য রেডি, আর রাসেল আর ওর বিয়ের জন্য তৈরি হওয়ার কথা বলেছি।

ওওও

এতোক্ষনে মনে হচ্ছে বুকের ওপর থেকে একটা পাথর নেমে গেলো।

চলবে,,

ভূল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে