ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-৩১ এবং শেষ পর্ব

0
1309

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৩১(অন্তিম পর্ব)

কাব্য আর লিজাকে ইচ্ছেমত মেরে চলেছে সাদাফ আর সাবিহা।আর এমন দৃশ্য নিলয় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।এভাবে অনেকক্ষণ মারার পর সাদাফ আর সাবিহা দুজনেই হাঁপিয়ে উঠে।অন্যদিকে লিজা আর কাব্য রক্তাক্ত অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে আছে।সাবিহা এবার হাটু গেড়ে তাদের সামনে বসে আর কাব্যর গাল চেপে ধরে বলে উঠে।

“ভেবেছিলাম তদের বিয়ে দিয়ে ছেড়ে দিব কিন্তু তোরা আজ যা করেছিস তার জন্য তোদের মারতেও আমার হাত কাঁপবে না।বল আপুকে কই রেখেছিস?নয়ত এখানেই মেরে পুঁতে ফেলব।”

“আআআমি জা-জানি না।”

সাবিহা এবার নিলয়ের কোমড় থেকে গানটা নিয়ে কাব্যর মাথায় ধরে।কাব্য সেটা দেখে ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে।সাবিহা এবার রেগে চিৎকার করে বলে উঠে,,,

“ভালোয় ভালোয় বলে দে আপু কোথায়?”

“ববলছি,শী-শীলা কোথায় আ-আছে সেটা ল-লিজা জানে।”

আমি এবার লিজার সামনে গিয়ে দাঁড়াই,আর লিজার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেই।

“আপুকে কোথায় রেখেছিস?”

লিজা আমার কথার কোন উওর না দিয়ে হেঁসে উঠে।

“বলব না,তোর যা করার করে নে।”

“শেষবারের মত জানতে চাইছি আপু কোথায়?” (চিৎকার করে)

“তোর কপাল ভালো তোর বোনকে এখনও খুন করি,,,
আহহহহ।”

লিজা আর কিছু বলার আগেই লিজার পায়ে সুট করি আমি।আর লিজা ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে,নিলয় ভাইয়া আমার থেকে গানটা নিতে আসলে সাদাফ ভাইয়া আটকে দেয়।আমি এবার লিজার পায়ের ক্ষতস্থানে দাঁড়াই,লিজা যন্ত্রণায় ছটফট করছে।

“আমাকে মেরে ফেলার কথা বলে পাড় পেয়েছিস বলে আমার বোনকে নিয়ে এমন কথা বলবি সেটা কিছুতেই মেনে নিব না আমি।তাড়াতাড়ি বল আপু কোথায়?”

“আ-আমার বাড়িতে।”

লিজার বাড়িতে আপু আছে শুনে আমি নিলয় ভাইয়ার দিকে তাকাই।তখন উনি আমাকে আস্বস্ত করে উনি লোক পাঠাচ্ছেন সেখানে আপুকে নিয়ে আসতে।আমি এবার কিছুটা নিশ্চিন্ত হই এটা ভেবে যে আপু ঠিক আছে।

“আমাকে হসপিটালে নিয়ে যাও তাড়াতাড়ি,আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।আমি এত তাড়াতাড়ি মরতে চাই না,প্লিজ বাঁচাও আমাকে।”

“মৃত্যুকে এতটা ভয় পাস তবে মৃত্যুর পরের জীবনটাকে কেন ভয় পাস না।মৃত্যুর পরের জীবনটা ভয় করলে ত তোর দ্বারা এতগুলো খারাপ কাজ হত না।”

“আমাকে মাফ করে দেও,আমি আর কখনও এমন করব না।দয়াকরে বাঁচাও আমাকে,আমাকে হসপিটালে নিয়ে চলো কেউ।”

লিজার কথাশুনে আমি লিজা আর কাব্যর দিকে তাকাই।দুজনের শরীরের অবস্থাই নাজেহাল, দুজনকে হসপিটালে পাঠাতে হবে।তাই কিছুক্ষণের মধ্যেই দুজনকে হসপিটালে পাঠিয়ে দেই।আর আমরা আমাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য রওনা হই।গাড়িতে সবাই চুপচাপ বসে আছি,নিরবতা ভেঙ্গে নিলয় ভাইয়া বলে উঠে,,,

“আমি ত কিছুই বুঝলাম না,শীলাকে কিডন্যাপ করল কেন অরা?আর তোরাই বা বুঝলি কীভাবে যে অরা কিডন্যাপ করেছে?”

তখন সাদাফ ভাইয়া বাঁকা হেঁসে বলে উঠে,,,

“এসবই সাবিহার কান্ড,আসলে কাব্য আর লিজাকে সাবিহার কথাতে আমি আটকে রেখেছিলাম তাদের বিয়ে দিব বলে।কিন্তু কাব্য আর লিজা পালিয়ে যায় কোনভাবে,আর শীলাকে কিডন্যাপ করে নেয়।।যাতে করে তারা সাবিহাকে ব্যাক মেইল করে যা খুশি তাই করাতে পারে আর তার থেকে প্রতিশোধ নিতে পারে।শীলাকে যখন খুঁজে পাওয়া যায় না তখন সাবিহা কাব্য আর লিজার খোঁজ লাগায়।আর সাবিহা যখন জানে যে কাব্য আর লিজা পালিয়েছে তখন তার প্রথমেই সন্দেহ হয় কাব্য আর লিজার উপর।তাই ত তোর সাহায্য নিয়ে ওদের খুঁজে বের করে ইচ্ছেমত কেলাইছি।আর যার ফল শীলাকে খুঁজে পেলাম আমরা।”

“মানতে হবে বস,সাবিহা কিন্তু মহিলা ভয়ংকরী।”

কথাটা বলেই দুজনে হেঁসে উঠল,আর আমি চুপ করে বসে আছি।

____________________________________

দেখতে দেখতে আপু আর মেঘ ভাইয়ার বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়ে যায়।খুব ভালো করেই ওদের বিয়েটা সম্পূর্ণ হল।আপুকে বিদায় দিয়ে আমি আর সাদাফ ভাইয়া আমাদের বাড়িতে চলে এলাম।বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে আমি ব্যালকনিতে চুপচাপ বসে আছি।পিছন থেকে সাদাফ ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে।আমি সেটা বুঝতে পেরেও কিছু বললাম না।উনি এবার আমাকে উনার দিকে ঘুরিয়ে বলে উঠে,,,

“তখন থেকে দেখছি এমন মনমরা হয়ে আছো।কী হয়েছে তোমার?”

“মানুষ কতটা খারাপ হলে নিজের ফুপাত বোনদের সাথে এমন করতে পারে!”

“এটা নিয়ে যত ভাববে তত খারাপ লাগবে।ত এসব নিয়ে একদম ভেবো না,শুধু এটা ভাবো কীভাবে ওদের শাস্তি দিবে।”

“ওদেরকে আমি পুলিশের হাতে তুলে দিব।”

“অরা এতগুলো অন্যায় করল আর তুমি ওদের নিজে কোন শাস্তি দিবে না!”

“না দিব না,এ পর্যন্ত যতটুকু ওদের শাস্তি দিয়েছে ততটুকুই যথেষ্ট।বাকিটা চৌদ্দ শিকের ভিতরেই পেয়ে যাবে অরা।আর আমি যদি ওদের মত ছলনা করে অন্যায় করি তবে ওদের আর আমার মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে না।”

“ওরে আমার বউটারে কত কিছু আছে যে এই ছোট্ট মাথায়।”

“হুম,ধন্যবাদ আপনাকে এভাবে আমার পাশে থাকার জন্য।”

“ধন্যবাদে আজ কাজ হচ্ছে না মেডাম,আমার ত অন্যকিছু চাই।”

“কী চাই বলুন!”

“ভালবেসে কাছে রাখতে চাই।”

আমি লজ্জায় উনার বুকে মুখ লুকাই।উনিও আমাকে উনার বুকে আগলে নেয়।

____________________________________

তিন বছর পর,,,

ওটির সামনে সাদাফ সমানে পাইচারি করে চলেছে।একটু পরপর নিলয়কে জিজ্ঞেস করছে।

“দোস্ত আমার সাবিহার কষ্ট হচ্ছে খুব।ওদের বল না আমাকে সাবিহার কাছে যেতে দিতে।”

আর নিলয় প্রতিনিয়ত সাদাফকে শান্ত করার চেষ্টা করে চলেছে।

আজ সাবিহার ডেলিভারির জন্যই সবাই হসপিটালের ওটির সামনে জড়ো হয়েছে।এখানে সবাই উপস্থিত আছে,সাবিহা আর সাদাফের পুরো পরিবার।নিলয় আর হিয়াও আছে এখানে,তাদের বিয়ে হয়েছে দুই বছর আগে।তাদের কোন সন্তান নেই।অন্যদিকে মেঘ আর শীলার একটা দুই বছরের ছেলে আছে।
কাব্য আর লিজা বর্তমানে জেলে আছে,জেল থেকে বের হবার মত কোন পথ খোলা রাখে নি সাদাফ।তাই তারা আপাতত জেলেই রয়েছে।

দীর্ঘ এক ঘন্টা পর ডাক্তার কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে।এবং তার পিছনে একটা নার্স সাদা তোয়ালো জড়িয়ে ফুটফুটে একটা মেয়েকে নিয়ে এসে সাদাফের কোলে দেয়।খুশিতে সাদাফের চোখে পানি চিকচিক করছে।সাদাফ তার মেয়ের কপালে একটা চুমু দিয়ে উত্তেজিত হয়ে ডাক্তারকে বলে।

“আমার বউ মানে সাবিহা কেমন আছে?”

“উনি ভালো আছে,দেখা করতে পারবেন উনার সাথে।”

ডাক্তার কথাটা বলতে দেরি কিন্তু সাদাফের যেতে দেরি হয় নি।সাদাফ তার মেয়েকে কোলে নিয়ে সাবিহার কাছে আসে।এসে দেখে সাবিহা শুয়ে আছে,সাদাফ সাবিহার পাশে বাবুকে শুইয়ে দিয়ে সাবিহার সারামুখে ভালবাসার পরশ একে দেয়।সাবিহা সাদাফের এমন কাজে মুচকি হাসে।

“ধন্যবাদ আমার জীবনে এসে জীবনটা এত সুখের করার জন্য,ধন্যবাদ ভালবেসে আমার পাশে থাকার জন্য,ধন্যবাদ আমাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখ দেয়ার জন্য।”

সাদাফের কথার পরিবর্তে সাবিহা শুধু একটা কথাই বলল,,,

“ভালবাসি আপনাকে।রাখবেন কী আমাকে ভালবেসে আপনার কাছে?”

সাবিহার মুখে ভালবাসি কথাটা শুনে সাদাফ খুব খুশি হয়ে যায়।কারন এই তিন বছরে আজ এই প্রথম সাবিহা তাকে ভালবাসি বলল।আজকের দিনটা সাদাফের জীবনে শ্রেষ্ঠ একটা দিন হয়ে থাকবে।সাদাফ খুশিতে সাবিহাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলে উঠে।

“আমিও তোমাকে খুব ভালবাসি।আর সারাজীবন তোমাকে ভালবেসে রাখব কাছে।”

★★★★★★★★সমাপ্ত★★★★★★★★

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে