ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-২৬+২৭

0
1118

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২৬

আর মাত্র তিনদিন পর আপুর বিয়ে,আর সাদাফ ভাইও পাগলামি করছে আপুর বিয়ের দিন বিয়ে করার জন্য।কিন্তু আমার মন সায় দিচ্ছে না,এখনই বিয়ে করতে চাইছি না আমি।উনি প্রতিনিয়ত আমাকে বিয়ের জন্য পেশার দিচ্ছে।উনি এত কথা বলে চলেছে কিন্তু আসল কথাই বলছে না।আমার লাইফ রিস্ক আছে মানে কী?কে আমার ক্ষতি করতে চায়?গরিলা মার্কা মহিলা নাকি কাব্য ভাই?মাথায় কিছু ধরছে না আমার।আমি যখন এসব ভাবনায় মগ্ন তখন কেউ আমার রুমে প্রবেশ করে।আমি তাকিয়ে দেখি কাব্য ভাই,উনাকে দেখেই রাগটা মাথা চারা দিয়ে উঠে।

“আপনার সাহস কী করে হল আমার রুমে আসার?বেরিয়ে যান আমার রুম থেকে,নয়ত খুব খারাপ হয়ে যাবে।”

“সাবিহা আমি তোর কোন ক্ষতি করব না,তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।ত দয়াকরে আমার কথাটা ঠান্ডা মাথায় শোন।আমি কথাটা বলেই চলে যাব, প্লিজ আমার কথাটা শোন।”

“আমি আপনার কোন কথা শুনতে চাই না,চলে যান এখান থেকে।”

“দুই মিনিট শুধু দুই মিনিট সময় দে আমাকে।আমি আমার কথা শেষ করেই চলে যাব।প্লিজ দয়াকরে আমার কথাটা শোন।”

আমি কিছুক্ষণ ভেবে,বলে উঠলাম।

“বলুন কী বলতে চান?”

আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া খুশি হয়ে যায়।আর হাসিমুখেই বলে উঠে।

“থ্যাংকস ইয়ার,অবশেষে তোর সাথে কথা বলার সুযোগ পেলাম।এ কয়টা দিন খুব চেষ্টা করেছি তোর সাথে কথা বলার জন্য।কিন্তু প্রতিবারই তুই কিছু না কিছু করে আমাকে বলার সুযোগই দিস নি।”

“এসব বলার জন্য এখানে এসেছেন আপনি?”

“আরে না,আমি ত,,,,

” বেশি কথা না বলে কাজের কথা বলুন।”

“আসলে,আমি তোর কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি।এতদিন তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি তার জন্য আমি অনুতপ্ত।তোকে এতটাই কষ্ট দিয়েছি যে এখন আমি প্রতিনিয়ত শাস্তি পাচ্ছি।আমার পরিবার থেকেও নেই,যাকে ভালবেসেছিলাম সেও ধোঁকা দিলো আমাকে।আমাকে তুই ক্ষমা করে দে,নয়ত আমি মরেও শান্তি পাব না।”

কাব্য ভাইয়ের কথাশুনে আমি হু হা করে হেঁসে উঠলাম।কথাগুলো বলার সময় উনার চোখে পানি টলমল করছিল।আমার হাসির আওয়াজে চোখে জল নিয়েই তাকায় আমার দিকে।

“তুই হাসছিস?”

“ত কী করব?নাচব নাকি কাঁদব?আপনার এসব ফালতু নাটক দেখার সময় নেই আমার।আপনি আসতে পারেন।”

“আমি কোন নাটক করছি না সাবিহা।বিশ্বাস কর আমাকে আমি সত্যি অনুতপ্ত।দয়াকরে ক্ষমা করে দে আমাকে।”

“আমি এত দয়ালু নই যে আপনার মত অমানুষ, পাষানকে ক্ষমা করে দিয়ে সবকিছু ভুলে যাব!আপনি কী ভাবছেন আপনার করা এত অন্যায় শুধু ক্ষমা চাওয়াতেই সেটা ভুলে গিয়ে ক্ষমা করে দিব?এমনটা ভাবলে ভুল ভাবছেন আপনি।আমি আপনাকে কখনও ক্ষমা করব না, আমি আর একটা কথাও শুনতে চাই না আপনার মুখে।বেরিয়ে যান আমার রুম থেকে।”

আমার কথাশুনে কাব্য ভাই আমার দিকে এগিয়ে আসে আর আমার হাত তার মুঠোয় নিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠে।

“ক্ষমা করতে না পারিস,অন্তত আমাকে একটা সুযোগ দে ভালো হওয়ার।আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দিস না,আমি জীবনটা গুছিয়ে নিতে চাই।”

উনি হাতটা বেশ ভালো করেই ধরেছে যার জন্য ছাড়াতে পারছি না।তারপরও হাত ছাড়াবার চেষ্টা চালাচ্ছি।

“হাত ছাড়ুন আমার,হাত ছেড়ে কথা বলুন।”(রেগে)

” না আমি ছাড়ব না,আগে তুই বল আমাকে একটা শেষ সুযোগ দিবি?”

“হাতটা ছাড়ুন আমার।”

“তুই ত আমাকে ভালবাসিস,ত ভালবাসার মানুষটাকে একটা শেষ সুযোগ কী দেয়া যায় না?তুই আমাকে এই শেষ সুযোগটা দিয়ে দেখ আমি আমার করা সব অন্যায় শুধরে নিব।জীবনটা নতুন করে সাঁজাব তোর সাথে।ভালবাসব তকে,ভালবেসে রাখব কাছে।প্লিজ একটা সুযোগ দে আমাকে।”

আমি কাব্য ভাইয়ের কথার পরিবর্তে কিছু বলব তার আগেই সাদাফ ভাই হাত তালি দিতে দিতে ঘরে প্রবেশ করে।আমি সেটা দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকাই উনার দিকে,আর কাব্য ভাই আমার হাতটা ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়।

“বাহ!বাহ!বাহ!ভালোই ত চলছে রোমান্টিক সিন।তা বন্ধ করলে কেন চালিয়ে যাও।”

“বাজে কথা কম বলুন।”

“তোমরা এখানে হাত ধরাধরি করে রোমান্টিক কথা বলছো,ভালবাসার কথা বলছো আর আমি কিছু বললেই বাজে কথা হয়ে গেলো!”

“পুরো কথা শুনে তারপর কথা বলুন,না জেনে কথা বলবেন না।”

“একদম চুপ,একটা কথাও বলবা না তুমি।এখন আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি তুমি কেন আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছো না।আমারই বুঝার উচিত ছিল যে মেয়ে কাব্য বলতে পাগল সে মেয়ে হঠাৎ আমাকে ভালবাসতে চাইবে কেন?তার পিছনে নিশ্চয়ই কোন কারন আছে নয়ত সে এত তাড়াতাড়ি একজনকে ভুলে গিয়ে আরেকজনকে ভালবাসতে চাইবে কেন?আমার অনুভূতি নিয়ে খেলছো তুমি।আমাকে ঝুলিয়ে রেখে আরেকজনের সাথে প্রেমালাপ করছো।আমি তোমাকে সেফ রাখার জন্য এতকিছু করছি আর তুমি কী না এসব করছো?নেহাত তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারব না নয়ত তোমার মুখও দেখতে চাইতাম না আমি।কিন্তু সেটা ত পারব না তাই তোমাকে সারাজীবনের মত নিজের করে নিব আজ।যাতে আমি ছাড়া আর কারো হতে না পারো তুমি।”

কথাটা বলেই সাদাফ ভাই আমার হাত টেনে নিয়ে যাচ্ছে,কাব্য ভাই আটকাতে চাইছে কিন্তু উনি ছাড়ছে না।

“সাদাফ সাবিহাকে নিয়ে তুমি কোথায় যাচ্ছো?ছাড়ো সাবিহাকে।ফুপি,ফুপা দেখে যাও সাবিহাকে নিয়ে সাদাফ কোথায় যেন যাচ্ছে!”

সাদাফ ভাই কোন দিকে পাত্তা না দিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।আমি ছাড়াতে চাইলে উনি আমাকে কোলে তুলে নেয়।

“ভুল করছেন আপনি,ছাড়ুন আমাকে।”

উনি কোন কথা না বলে হেঁটেই চলেছে।উনি আমাকে গাড়িতে বসিয়ে আমার গলার উর্না দিয়ে হাত বেঁধে দেয়,আর উনার রুমাল দিয়ে মুখ বেঁধে দেয়।পিছন থেকে আপু আর কাব্য ভাই ছুটে আসছে আটকাতে।আর বাবা বুকে হাত গুজে দাঁড়িয়ে থেকে সবটা দেখছে,পাশেই মা দাঁড়িয়ে আছে।তাদের ভাব এমন যেন কিছুই হচ্ছে না।

অনেকক্ষণ পর সাদাফ ভাইয়া একটা কাজি অফিসের সামনে গাড়ি থামায়।সেটা দেখে আমার চোখ বড়বড় হয়ে যায়,আমি উনার দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে বুঝাচ্ছি এমনটা না করতে।কিন্তু উনি কোন কথা কানে না নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আমার হাতের বাঁধন খুলে উর্নাটা গায়ে দিয়ে আবারও কোলে তুলে নেয়।আমি উনাকে কিল,ঘুসি দিয়েই চলেছি ছাড়ানোর জন্য কিন্তু উনি ছাড়ছেই না।সাদাফ ভাই আমাকে ভিতরে নিয়ে এসে একটা চেয়ারে বসিয়ে দু’পাশে হাত দিয়ে বলে উঠে।

“একদম ছটফট করবে না,চুপচাপ বিয়েটা করে নিবা।”

উনার কথাশুনে এবার ঠাস করে উনার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেই।

“একবার বাল্যবিবাহ করে কী তোর শখ মিটে নি,আবার বাল্যবিবাহ করতে তুলে নিয়ে এসেছিস।”

কথাটা বলেই উনাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম বাইরে আসার জন্য।কিন্তু উনি এবার আমার হাত ধরে আটকে দেয়,আর টান দিয়ে উনার বুকের উপর ফেলে,জড়িয়ে ধরে শক্ত করে।আমি ছোটার জন্য ছটফট করলে উনি আমার গাড়ে কিছু একটা করে।আমি গাড়ে হাত দিয়ে উনার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ডলে পড়ি উনার বুকে।উনি সেটা দেখে আমাকে বুকে আগলে নিয়ে কপালে একটা চুমু একে দেয়।আর আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,,,

“জানতাম তুমি এখন বিয়ে করতে কখনও রাজি হবে না।তাই আজ বাড়ি থেকে প্রস্তুতি নিয়েই বেরিয়েছি। তুমি আজ বিয়েতে রাজি না হলে তুলে নিয়ে বিয়ে করব এমনটা ভেবেই এসেছিলাম।কিন্তু এসেই কাব্যর সাথে তোমাকে ওভাবে দেখি,আর তাতে করে মেজাজ আরো বিগড়ে যায়।আর কাব্যর বলা কথাগুলো শুনে তোমাকে হারানোর ভয়টা আবারও ঝেকে বসে মাথায়।তাই আজ যেভাবেই হোক তোমাকে নিজের করেই নিব।তুমি আমার আর আমার কাছেই থাকবে।হোক সেটা ভুল রাস্তার,কিন্তু আমি তোমার জীবন নিয়ে আর কোন রিস্ক নিতে পারব না।আর না পারব তোমাকে হারাতে।আর তখন রাগ দেখিয়ে অনেক কথা বলে ফেলেছি,তার জন্য হয়ত তুমি আমার উপর খুব রাগ করে আছো।কিন্তু আপাতত আমার কিছু করার নেই,এখন আমার একটাই কাজ তোমাকে নিজের করে নেয়া।”

কথাগুলো বলে সাদাফ সাবিহার কানের লতিতে আরেকটা চুমু দিয়ে কোলে তুলে নেয়।আর একটা চেয়ারে বসে সাবিহাকে নিজের বুকে আগলে নেয়।ফোনটা হাতে নিয়ে কাউকে ফোন লাগায় আর সাবিহার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,,,

“তিন ঘন্টার জন্য নিশ্চিন্ত তার মধ্যে সব রেডি চাই।”

কথাটা বলেই সাদাফ ফোনটা পকেটে রেখে দেয়।আর সাবিহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে।

#চলবে,,,

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২৭

যখন জ্ঞান ফিরে তখন নিজেকে বউ সাজে সাদাফ ভাইয়ের রুমে আবিষ্কার করি।আমি হুরমুরিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসি,আর সামনেই দেখতে পাই সাদাফ ভাই একটা চেয়ার নিয়ে বসে আছে।উনার দৃষ্টি আমাতেই আবদ্ধ,আমাকে উঠে বসতে দেখে উনি আমার কাছে এগিয়ে এসে পাশে বসে।

“এসবের মানে কী?আমি এখানে কেন?আর এই সাজেই বা কেন?”

“বউ সাজে না তোমাকে খুব হট লাগছে,ইস্ ইচ্ছে করছে বিয়ের আগেই বাসরটা সেরে ফেলি।”

“বাজে কথা না বলে যেটা জানতে চেয়েছি সেটা বলুন।”

“এখনও বুঝতে পারছো না সাবুপরি?”

“হেয়ালি না করে ভালোয় ভালোয় উওর দিন আমি এখানে আর এই সাজে কেন?”

“আজ ত আমাদের বিয়ে,আর বিয়ের দিন বউ ত বউ সাজেই থাকবে তাই না!”

“মানেহ?”

“এত মানে টানে বুঝাতে পারব না।এখন উঠো ত তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”

“আবার কীসের সারপ্রাইজ?”

“চলো গেলেই দেখতে পাবে।”

“আমি যাব না আপনার সাথে।আর না আপনাকে বিয়ে করব আমি।আপনি ত আমাকে বিশ্বাসই করেন না ত আপনাকে বিয়ে করে লাভ নেই।”

“তুমি কী ভেবেছো তুমি না করলে আমি শুনব?মোটেও নয় আমি যখন বলেছি আজ আমাদের বিয়ে ত আজই আমাদের বিয়ে।”

কথাটা বলেই উনি আমাকে কোলে তুলে নেয়,আর বাড়ির বাইরে নিয়ে আসে আমাকে।আমি বাইরে এসে অবাকের চরম সীমানায়।বাগানটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।আর সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হল আমার পরিবার,সাদাফ ভাইয়ের পরিবার,মেঘ ভাইয়ার পরিবার আরো অনেকে এখানে উপস্থিত রয়েছে।তার মানে সবটা আগেই প্লান করা ছিল?আমাদের এভাবে আসতে দেখে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।আমিও লজ্জার মাথা খেয়ে সবার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছি।আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমার বাবা কানে হাত দিয়ে সরি বলল।আমি কিছু না বলে মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেই।সাদাফ ভাই আমাকে সোফায় বসিয়ে আমার পাশে বসে।

“কী কেমন লাগল সারপ্রাইজ?”

আমি কিছু না বলে গাল ফুলিয়ে বসে আছি।উনি সেটা দেখে বাঁকা হেঁসে কানের কাছে গিয়ে আস্তে করে বলে উঠল।

“এখন চুপ করে থাকো সমস্যা নাই কিন্তু কবুল বলার সময় কবুলটা বলে দিও।”

আমি উনার কথায় পাত্তা না দিয়ে চুপ করে বসে আছি।তখন কেউ আমাকে জড়িয়ে ধরে আর আমি তাকিয়ে দেখি হিয়া আর অর পাশেই নিলয় ভাইয়া দাড়ানো।

“বইনরে বইন তুমি তলে তলে বিয়ে অবধি এগিয়ে গেছো আর আমি কিছুই জানলাম না?আজ সাদাফ ভাই বিয়ের দাওয়াত না করলে ত জানতেই পারতাম না।”

আমি হিয়াকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলে উঠলাম,,,

“তুমিও ত তলে তলে টেম্পু চালাইতাছো সেটা কী আমাকে বলছো?”

আমার কথা শুনে হিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়,আমতা আমতা করে বলে।

“ককী বলছিস এএসব?”

“কী বলছি তুই ভালো করেই বুঝতে পারছিস,তুই যে নিলয় ভাইয়ের সাথে রিলেশনে আছিস সেটা আমি জানি না ভেবেছিস?”

আমার কথা শুনে নিলয় ভাইয়ার কাশি উঠে যায়,উনি কাশতে কাশতে সেখান থেকে টুপ করে সরে যায়।আর হিয়া লজ্জা পেয়ে সেখান থেকে কেটে পড়ে।হিয়া ভাবতেও পারে নি আমি কথাটা বলে ফেলব।।আসলে নিলয় ভাইয়া হিয়াকে হসপিটালে সেদিন দেখে প্রেমে পড়ে যায়।আর হিয়াকে সেটা জানালে হিয়াও রাজি হয়ে যায়।কিন্তু আমাকে সেসব কিছুই জানায় নি,আমি অবশ্য গোপন সূত্রে কথাটা জেনেই ফেলেছি।

“দিলে ত দুজনকে ভাগিয়ে,বেচারি একটু আসছিল মজা করতে আর তুমি ওদের লজ্জা দিয়ে ভাগিয়ে দিলা।”

আমি কিছু না বলে চুপ করে আছি,যাই হয়ে যাক উনার সাথে আমি কথা বলছি না।উনি আমাকে তখন কতগুলো কথা শুনিয়ে দিলো সবটা না জেনে।আমার উওর না পেয়ে উনি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আমার বাবার কাছে গিয়ে কিছু একটা বলে।আর বাবা আমার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠে।

“মামনিটা রাগ করেছে আমাদের উপর তাই না?”

“একদম কথা বলবে না আমার সাথে।আমাকে তাড়ানোর জন্য যদি এতই তাড়া তোমাদের,আমাকে বলতে আমি চুপচাপ চলে যেতাম।এসব করার কী খুব প্রয়োজন ছিল?”(অভিমানও স্বরে)

“হ্যাঁ রে মা প্রয়োজন ছিল,তুই হয়ত এখন বুঝবি না কিন্তু সময় হলে ঠিক বুঝবি যে আমরা ভুল কিছু করি নি।শুধু জেনে রাখ কোন বাবা মা চায় না তাদের সন্তানের ক্ষতি হোক।তেমনি আমরাও চাই না,ত আমাদের কথা ভেবে বিয়েটা করে নে মা।এতে তোরও ভালো,আমাদেরও ভালো।”

কথাটা বলে বাবা চলে যায়,আর আমি হিসেব মেলাতে ব্যাস্ত।সবাই কেমন রহস্য রেখে রেখে কথা বলছে আমার সাথে।কী এমন রহস্য লুকিয়ে আছে যেটা সবাই জানে শুধু আমি জানি না?আমি জানলে কী ক্ষতি হবে?কিছুই মাথায় আসছে না আমার।

“এই যে ভাবনা কুমারি এত ভেবে লাভ নেই সময় মত সবটা জেনে যাবেন।এখন ছোট্ট মাথায় এত চাপ দিয়ো না ত।”

সাদাফ ভাই পাশে বসতে বসতে কথাটা বলল।আমি উনার দিকে একবার তাকিয়ে মুখটা অন্য দিকে ফিরিয়ে আবারও ভাবনার জগতে পা বাড়াই।কিছুক্ষণ পর কাজির কথায় ধ্যান ভাঙ্গে আমার।কবুল বলার জন্য বলছে কিন্তু আমি শুনেও না শোনার ভান করে বসে আছি।তখন সাদাফ ভাই আমার কানের কাছে এসে বলে।

“কবুল বলে দাও সাবুপরি,নয়ত সবার সামনে চুমুতে ভরিয়ে দিব তোমাকে।”

আমি উনার কথাশুনে চোখ বড়বড় করে তাকাই উনার দিকে।উনি সেটা দেখে চোখ টিপ মারে,আমি আর কিছু না ভেবে কবুল বলে দেই।বেশ ভালো ভাবেই বিয়েটা সম্পন্ন হয় আমাদের।কিন্তু পুরো সময়টাতে কোথাও কাব্য ভাই কিংবা গরিলা মার্কা মহিলাকে দেখতে পাই নি।সবাই যখন আছে ওদেরও ত থাকার কথা কিন্তু নেই কেন?

___________________________________

বাসর ঘরে বউ সাজে বসে অপেক্ষা করছি সাদাফ ভাইয়ার জন্য।রাত ১২ টা বাজতে চলল তার খবর নেই,মহাশয় আজ আসুক অনেক কাজ বাকি আছে।আজ যদি উনাকে আলুর বর্তা না বানাইছি তবে আমার নামও সাবিহা না।

বেশ অনেকক্ষণ পর সাদাফ রুমে আসে,সাবিহা সেটা ঘোমটার ভিতরে থেকেই আড়চোখে সাদাফের দিকে তাকায়।সাদাফকে দেখেই মনে হচ্ছে ভয় পেয়ে রুমে ডুকছে।অবশ্য ভয় পাওয়ারই কথা যার সাবিহার মত বউ আছে সে ভয় না পেয়ে যাবে কোথায়।তার উপর আবার তুলে এনে জোর করে বিয়ে করেছে।সাদাফের কপালে দুঃখ লিখা আছে বাসর রাতে।

সাদাফ ভাইকে দেখে আমি ধীরে ধীরে খাট থেকে নামি।আর লজ্জার পাওয়ার মত মুখ করে উনার সামনে দাঁড়াই আর উনার পায়ের সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসি সালাম করার জন্য।উনি সেটা দেখে খুশি হয়ে যায় আর বলে উঠে।

“আরে আরে সালাম করতে হবে না,আমার দোয়া এমনি তোমার উপরে সবসময়,,,

আর কিছু বলতে পারল না তার আগেই সাদাফ ধপাস করে নিচে পড়ে যায়।আর সাবিহা খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠে।আসলে সাবিহা সাদাফের পায়ে টান দিয়ে ফেলে দেয়।সাদাফ কোমড়ে হাত দিয়ে কাচুমাচু মুখ করে বলে উঠে,,,

” এই ছিল তোমার মনে?শেষমেষ বাসর রাতে নিজের একমাত্র জামাইকে সালাম করার নামে এভাবে ফেলে দিলে?আমার কোমড়টা ভেঙ্গে গেলো গো,কেউ আমারে উঠাও।”

আমি হাসতে হাসতেই সাদাফ ভাইয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে দেই,উনি আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাত না ধরেই উঠার চেষ্টা করে।তারপর আমি জোড় করেই উনাকে তুলে খাটে বসাই আর উনার পাশেই পা ঝুলিয়ে বসে পড়ি।

” কী ভেবেছিলেন অন্য সবার মত সুন্দর করে সালাম করব আপনাকে?তেমনটা ভাবলে ভুল,কারন সাবিহা মানেই নতুনত্ব।তাই নিউ স্টাইলে সালাম করলাম আপনাকে।”

কথাটা বলেই আবারও হেঁসে ফেললাম আমি,উনি এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি হাসি থামিয়ে আবারও বলে উঠি,,,

“আমাকে বিয়ে করার খুব শখ ত আপনার তাই না?এবার সেই শখটা সুধে আসলে পূরন করব আমি।সারাজীবন জ্বালিয়ে মারব।”

“তুমি আমার কাছে সারাজীবন থাকলে আমি তোমার সবকিছু হাসিমুখে মেনে নিব,খুব ভালবাসি তোমাকে।”

“হুম জানি জানি কতটা ভালবাসেন আপনি।ভালবাসলে তখন ওভাবে রিয়েক্ট করে তুলে আনতেন না আমাকে।”

“সাবিহা আমি তোমাকে সত্যি খুব ভালবাসি,আর তোমাকে কাব্যর সাথে ওভাবে দেখে আমি রাগ করি নি।রাগ করেছি কাব্য তোমার হাত ধরেছিল বলে,আমি ছাড়া অন্য কোন পুরুষ তোমাকে ছুঁলে আমার শয্য হয় না।বুকের ভিতর আগুন জ্বলে তাই ওভাবে রিয়েক্ট করেছি।আর তুলে এনে বিয়ে করার কথা বললে বলব ওটা আগে থেকেই প্লান করা ছিল।এটার জন্য তুমি আমাকে যে শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নিব কিন্তু আমাকে ছেড়ে যেও না।”

“শাস্তি ত অবশ্যই দিব তবে সেটা তখনকার বাজে আচরনের জন্য,তুলে এনে বিয়ে করার জন্য নয়।তুলে এনে বিয়ে করার জন্য আপনাকে এত্তগুলা থানকু।”

“মানে?”

“মানে হল আমার স্বপ্ন ছিল আমার যে স্বামী হবে সে আমাকে তুলে এনে জোড় করে বিয়ে করবে।সাইকো টাইপের গল্প পড়তে পড়তে এই ইচ্ছেটা জাগে আমার।”

উনি আমার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকায়,আমি উনার অবস্থা দেখে টুপ করে উনার গালে একটা চুমু দিয়ে দেই।উনি এবার অবাকের চরম পর্যায়ে,গালে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে অবাক চোখে।আমি এবার আমার কাজে নিজেই বোকা বনে যাই,কী করে ফেললাম এটা?লজ্জা সরম কই গেলো আমার,ছিঃ সাবিহা তুই কীভাবে পারলি এটা করতে?নিজেকে নিজে বকে চলেছি,তখন সাদাফ ভাইয়া আমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে শয়তানি হাসি হেঁসে বলে উঠে।

“আমার বউটা ত হেব্বি রোমান্টিক,তা বউ বাসরটা সেরেই ফেলি হুম!”

আমি উনাকে এক ঝটকায় নিজের থেকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়াই।

“বাসর করার খুব শখ না আপনার,এবার করুন বাসর একা একা।তখন বাজে আচরন করার শাস্তি হল একা একা বাসর রাত পালন করা।আর সেটাই করুন,নয়ত দাঁত ভেঙ্গে ইঁদুর দের খাওয়াব।”

তারপর আমি মিটিমিটিয়ে হাসতে হাসতে একটা থ্রি পিছ নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যাই।অন্যদিকে সাদাফ গালে হাত দিয়ে বসে ভাবছে,,,

“কপাল করে একখানা বউ পাইছি,জল্লাদ বউ একটা।কেন যে তখন রাগ দেখিয়ে ওসব বলতে গেলাম!তখন ওভাবে না বললে হয়ত একা একা বাসর রাত পালন করতে হত না।ফিলিং দুঃখু দুঃখু,বাসর রাত বউ বীহিন পালন করিন।”

#চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে