ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-১৮+১৯

0
1082

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১৮(ধামাকা স্পেশাল পর্ব)

সাদাফ ভাই কোমড়ে হাত দিয়ে আমার দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে,আর আমি নিচে পড়ে গিয়ে ভালোই ব্যাথা পেয়েছি কোমড়ে।তবে ততটাও ব্যাথা পাই নি যে কাঁদব কিন্তু সাদাফ ভাইয়ের নাকে কামড় দিয়ে এখন নিজেরই কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে।তাই এই বিষয়টা ঘুরানোর জন্য কেঁদে বলে উঠি,,,

“আল্লা গো আমার কোমড়টা গেলো গো।ও বাবা গো,তোমার মেয়ের কোমড়টা আজ ভেঙ্গেই গেলো গো।এখন আমাকে কে বিয়ে করবে গো😭।”

কথাটা বলেই ন্যাকা কান্না শুরু করে দেই,আর আড়ে আড়ে সাদাফ ভাইয়ার দিকে তাকাই।দেখি উনি এখন কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে,নাটকটা কী কাজে লাগল না নাকি!কথাটা ভেবেই আরো জোড়ে জোড়ে কেঁদে ফেললাম।আর উনি একবার আশেপাশে তাকিয়ে আমাকে অবাক করে দিয়ে কিছু না বলেই নিচু হয়ে আমাকে আবারও কোলে তুলে নেয়।আমি কান্না ভুলে চোখ বড়বড় করে উনার দিকে তাকাই,কিন্তু উনি আমার দিকে তাকাচ্ছেই না।আমি উনাকে কিছু বলব কিন্তু কিছুক্ষণ আগের ঘটনাটা ভেবে চুপ করে যাই।এবার আর ছোটার জন্য কোন কায়দা করি নি,কে জানে আগের মত এবারও পড়ে গিয়ে না সত্যি সত্যি কোমড়টা ভাঙ্গি।এসব ভেবে সাদাফ ভাইয়ের গলাটা চেপে ধরি,উনি সেটা দেখে মুচকি হাসে।কিন্তু সে হাসিটা আমার দৃষ্টিগোচর হলো না।
কিছুক্ষণ পর উনি আমাকে নিয়ে বাইরে চলে আসে লুকিয়ে,আর মামুদের বাগানে একটা বেঞ্চে আমাকে বসিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আমার সামনে।তারপর উনি শান্ত গলায় বলতে শুরু করে,,,

“খুব ব্যাথা পেয়েছো?”

উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে উঠে,আমিও উনার চোখের দিকে তাকাই।কত মায়া লুকিয়ে আছে ঐ চোখে।উনার চোখের দিকে তাকিয়ে কেমন যেন একটা অনুভব হচ্ছে,ইচ্ছে করছে না মিথ্যা বলতে।তাই আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বুঝাই যে ব্যাথা পাই নি।উনি সেটা দেখে আমার গালে হাত দিয়ে আবারও বলে উঠে,,,

“সত্যি!”

আমি আবারও মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বুঝাই,উনি এবার দাঁড়িয়ে ধমকে বলে উঠে আমাকে,,,

“ত তখন ওভাবে কাঁদছিলে কেন?তুমি জানো আমি কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম!কিন্তু তখন কেউ জেগে যাওয়ার ভয়ে কিছু বলতে পারি নি।”

উনার ধমকটা আমার ঠিক হজম হল না,তাই আমিও রেগে বলে উঠি,,,

“আপনাকে ত কেউ বলে নি আমার জন্য এত চিন্তা করতে,তবে এত চিন্তা কেন করছেন?”

“কারো জন্য চিন্তা করতে হলেও কী কারো পারমিশন নিতে হবে!আর আমরা যাকে ভালবাসি তার প্রতি চিন্তাটা এমনি এমনি এসে যায়।কারো বলার অপেক্ষায় থাকে না যে সে বলবে তারপর চিন্তা করব।”

” ভাইয়া ভালবাসি কথাটা আমার কাছে বলবেন না দয়াকরে,ভালবাসা আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে।আর ভালবাসা শব্দটার প্রতিও ঘৃনা জন্মে গেছে।আপনি আমাকে অনেক ভালবাসেন কিন্তু আমি আপনার ভালবাসার সঠিক দাম দিতে পারব না।সুতরাং আপনি আমাকে ভুলে নতুন কাউকে খুঁজে নিন আর তাকে ভালবেসে সুখে সংসার করুন।”

আমার কথা শুনে উনার চেহারার রং পাল্টে যায়, চোখের কোনে পানি জমা হয়।কিন্তু উনি নিজেকে সামলে ধরা গলায় বলে উঠে,,,

“আমি কী বখাটে ছেলে?আর ভালবাসা কী কোন পন্য যে একজন নিলো না আরেকজনকে দিয়ে দিব!আরে তুমি ভালবাসতে নাই পারো কিন্তু আমার ভালবাসা নিয়ে কথা কেন বলো?অন্তত আমার ভালবাসাকে সম্মান করো,আমাকে আমার মত ভালবাসতে দেও না তোমাকে।তুমি ত আমাকে ভালবাসো না তবে কেন এভাবে কষ্ট দেও?বিশ্বাস করো খুব কষ্ট হয় আমার।

কথাগুলো বলার পর উনার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে,উনি তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে এবার রেগে চিৎকার করে বলে উঠে,,,

” আর তুমি ত সারা দুনিয়ার কাছে বুঝদার মেয়ে আর আমার কাছে এসেই তোমার যত বাচ্চামি।তুমি আমার ফিলিংসটা বুঝেও বুঝতে চাইছো না।যে তোমাকে ভালবাসে তাকে দাম দেও না আর যাকে তুমি ভালবাসো সে তোমাকে দাম দেয় না।আর তুমি তারই পিছনে পড়ে থাকো যে তোমাকে কখনও ভালবাসবে না,কষ্ট ছাড়া কিছুই দিবে না।আর আমাকে দেখো তোমাকে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে আছি,কিন্তু পাত্তাই পাচ্ছি না।আমার ভালবাসার কোন দামই দিচ্ছো না,আরে একবার শুধু বলো তুমি আমার হবে দেখো সারাজীবন বুকে আগলে রাখব।ভালবাসার উপর থেকে ঘৃনার পর্দা সরিয়ে নতুন করে ভালবাসতে শিখাবো তোমায়।সারা পৃথিবীর সুখ এনে দিব তোমাকে।”

উনি একটু থেমে আবারও বলে উঠে,,,

“অবশ্য তুমি বলো আর নাই বলো,মানো আর না মানো তুমি অতীতেও আমার ছিলে,এখনও আছো,ভবিষ্যতেও থাকবে।তুমি আমার,শুধু আমার,আমার অর্ধাঙ্গিনী তুমি।”

শেষের কথাটা একটু জোড়েই বলে উনি।আর আমি এবার উনার কথাশুনে থমকে যাই,কী বলছে উনি এসব পাগলের মত!অর্ধাঙ্গিনী মানে?

“ভাইয়া আপনি পাগলের মত এসব কী বলছেন?”(অবাক হয়ে)

আমার কথাশুনে উনি খুব রেগে যায়,তেড়ে আসে আমার কাছে।আর গাল চেপে ধরে দাঁড় করিয়ে বলে উঠে,,,

“এই এত কীসের ভাই ভাই করিস হে!আমি তোর কোন জন্মের ভাই লাগি?তোর এই কথায় কথায় ভাই বলাটা আমার মনে রক্তক্ষরণ করে প্রতিনিয়ত কিন্তু এতদিন শয্য করেছি।শুধুমাত্র এটা ভেবে যে তুই একদিন বুঝবি আমাকে,আমার ফিলিংস বুঝবি একদিন।কিন্তু তুই ত বুঝেও বুঝিস না,আমার ফিলিংসের কোন দামই দিস না।
আমি তোর কোন ভাই টাই লাগি না,স্বামী হই তোর।কান খুলে শুনে রাখ আমি তোর স্বামী হই।তুই যখন ক্লাস ফোরে পড়িস আর আমি ক্লাস নাইনে তখন তকে বিয়ে করেছি আমি।সেটা শুধু তোর বাবা,মা আর আমার পরিবারের লোক জানে আর কেউ জানে না।এতদিন তোর বড় হওয়ার অপেক্ষায় তকেও কিছু জানাই নি কিন্তু আর নয়।এবার তকে বউ সাজিয়ে ঘরে তুলব আমার,ভালবেসে রাখব কাছে খুব যত্ন করে।তোর এত অবহেলা আমার আর শয্য হচ্ছে না,বুকের ভিতরটা জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে রে।বুকের ভিতরে প্রতিনিয়ত তোকে হারানোর ভয় তাড়া করে।তখন ইচ্ছে করে তকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে বলতে,ভালবেসে রাখব কাছে দূরে যেতে দিব না তকে।কিন্তু পারি নি,আমি সেই সুখটা পাই নি রে।প্রতিনিয়ত তোকে হারানোর ভয়ে মনের আগুনে পুড়েছি আমি।যে আগুন নিভাতে তোর প্রয়োজন ছিল কিন্তু তুই কাছে থাকার পরও কাছে পাই নি।প্রতিনিয়ত তোর অবহেলার পাত্র হয়েছি,কিন্তু আর পারছি না আমি।পারছি না তোর অবহেলা শয্য করতে।এবার আমার ভালবাসা চাই তোর ভালবাসা চাই,তকে চাই নিজের করে।তোর ভালবাসা দিয়ে দূরে করে দে না আমার সমস্ত কষ্ট।আমি যে তোর ভালবাসার কাঙাল,একটু ভালবাস না আমায়।”

কথাগুলো বলেই উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে হাঁটু গেঁড়ে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।আমি এক পলকে উনার দিকে তাকিয়ে রয়েছি,আমার চোখেও পানি।উনি আমার স্বামী,আর উনি আমাকে এতটা ভালবাসে।কেউ কাউকে এতটা ভালো কীভাবে বাসতে পারে,মনের ভিতর কেমন যেন একটা সুখের হাওয়া বইছে।আমাকে কেউ এতটা ভালবাসে, আমাকে পাওয়ার জন্য এতটা মরীয়া হয়ে আছে!আমি ত ভাগ্যবতী উনার মত একজনের ভালবাসা পেয়ে।উনার ভালবাসার কাছে ত কাব্য ভাইয়ের প্রতি আমার ভালবাসা তুচ্ছ।উনি আমার এত অবহেলার পরও আমাকে পাগলের মত ভালবাসে।আমি এমন একজনকে রেখে এতদিন মরীচিকার পিছনে ছুটে এসেছি।জীবনকে কী ২য় সুযোগ দেয়া যায় না! উনার ভালবাসায় কী আমি নিজেকে রাঙাতে পারি না!পারি না সবটা ভুলে উনার ভালবাসায় সারা দিতে?পারি না নতুন করে ভালবাসতে?

কথাগুলো ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম,উনাকে ফিরিয়ে দিব না।উনার ভালবাসায় সারা দিব আমি।কথাটা ভেবেই আমি উনার সামনে হাঁটু গেড়ে বসি আর উনার গালে হাত দেই আর কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠি,,,

“পারবেন আমাকে নতুন করে ভালবাসা শিখাতে?”

উনি আমার দিকে অবাক চোখে তাকায়,আমি সেটা দেখে আবারও বলে উঠি,,,

“ভালবাসতে চাই আপনাকে।”

আমার কথাশুনে সাদাফ ভাইয়ার মুখে এক চিলতে হাসির আবাস দেখা যায়।আর সাথে সাথে ঝড়ের গতিতে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।এই কান্না সুখের কান্না।আমিও চোখ বন্ধ করে উনাকে বাহুডোরে আগলে নেই।আমি আমার উওর পেয়ে গেছি।

#চলবে…

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১৯

সাদাফ ভাই এবার আমাকে ছেড়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে উঠে,,,

“কখনও আমাকে ছেড়ে যাবে না ত!”

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই যে যাব না।সাদাফ ভাইয়া মুচকি হেঁসে বলে উঠে,,,

“আমাকে ছেড়ে যেতে চাইলেও যেতে দিব না তোমাকে,তুমি সারাজীবন আমার সাথে থাকবে,আমার পাশে থাকবে।কখনও ছেড়ে যাওয়ার কথা ভুল করেও ভেবো না তবে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।”

আমি উনার কথা শুনে এবার একটু মজা করে বলে উঠি,,,

“সম্মতি দিতে না দিতেই ঠান্ডা গলায় থ্রেট মারছেন?”

উনার সোজাসাপ্টা কথা।

“হু মারছি ত!”

“ত মানে কী!এমন করলে খেলব না আমি থুক্কু থাকব না আমি।”

“তোমাকে খেলতে কে বলেছে!আর তুমি চাইলে না থাকতেই পারো কিন্তু আমি ত রাখব।”

কথাটা বলে উনি এবার আমার কানের কাছে এসে আস্তে করে বলে উঠে,,,

“ভালবেসে রাখব কাছে।”

সারা শরীরে আলাদা এক শিহরন বয়ে গেলো আর উনার কথাটা কেমন নেশা ধরিয়ে দিয়েছে।আমি আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলি,উনি এবার আমার কানে হালকা একটা কামড় বসিয়ে দেয়।আমার মুখ দিয়ে তখন বেরিয়ে আসে,,,

“আহহ্ সাদাফ ভাই লাগছে ত।”

উনি কথাটা শুনে আবারও একই কাজ করে,এবার একটু জোড়েই কামড় বসিয়ে দেয়।আমি এবার উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠি।

“বলছি ব্যাথা লাগছে তারপরও একি কাজ করে যাচ্ছেন আপনি?”

“বলছি ভাই ভাই না করতে তারপরও ভাই ভাই করে যাচ্ছো তুমি।”

মাটিতে বসে দুই হাত গালে দিয়ে গাল ফুলিয়ে সাদাফ ভাই কথাটা বলে উঠল।উনার কথাশুনে আমার বুঝতে বাকি রইল না যে উনি কেন এমন করেছে!আমি উনাকে আরেকটু রাগানোর জন্য বলে উঠি।

“বাহ্ রে এতবছর ভাই ভাই করে গলা শুকিয়ে ফেললাম আর আপনি এখন হঠাৎ করে এসে বলছেন ভাই না বলতে।সেটা ত হবে না,আমি ভাই বলেই ডাকব।”

সাদাফ ভাই এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নেয়।

“এতদিন ত জানতে না আমি তোমার স্বামী হই কিন্তু এখন ত জানো ত এখন এত ভাই ভাই করবে না।তুমি ভাই বলে ডাকলে নিজের বাচ্চাদের মুখে মামা ডাক শুনতে হবে।নাউজুবিল্লাহ এমনটা আমি চাই না,তাই ভাই বলা বারন।নয়ত লাভ টর্চার চলবে তোমার উপর,সো সাবধান প্রেয়সী।”

উনি আমার গালে উনার নাক ঘসে কথাগুলো বলেছে।উনার এমন ছোয়ায় আমি একদম ফ্রিজড হয়ে রয়েছি।কিন্তু তারপর নিজেকে সামলে উনার থেকে ছোটার চেষ্টা করতে করতে উনাকে প্রশ্ন করি।

“সব কথা সবদিকে কিন্তু আমাকে এটা বলেন ত এত ছোট বয়সে আমাদের বিয়ে হল কেন?তখন ত দুজনেই খুব ছোট ছিলাম,আর আপু ত আমার বড়।ত সে অনুযায়ী আপুর আগে বিয়ে হত কিন্তু আপুর আগে বিয়ে না হয়ে আমার সাথে আপনার বিয়ে কেন হল?”

সাদাফ ভাইয়ের এবার আমার কথাটা শোনার পর উনার মুখের রং পাল্টে যায়।উনি আমাকে ছেড়ে পিছন ঘুরে দাঁড়ায়,আমি বুঝার চেষ্টা করছি কী চলছে উানর মনে।হঠাৎ এমন মুড চেন্জ হল কেন বুঝতে পারছি না।আমি উনার কাঁধে হাত রাখতেই উনি পিছন ফিরে বলে উঠে,,,

“এখন বলা যাবে না,এটা সিক্রেট তাই এই সিক্রেটটা স্পেশাল দিনে স্পেশাল ভাবেই বলব।”

“সেই স্পেশাল দিনটা কবে?”

“খুব শীঘ্রই আসতে চলেছে,এবার তুমি শান্ত হয়ে বসো ত।ছোট মাথায় এত চাপ দিও না,সময়মত সব জানতে পারবে।”

আমি উনার কথাশুনে চুপ করে ভাবতে থাকি কী এমন কারন আছে যেটা উনি এখন বলতে চাইছে না।উনি এবার আমাকে বসিয়ে আমার পাশে বসে এক হাতে জড়িয়ে ধরে আরেক হাতে আমার হাত উনার মুঠোয় নিয়ে বলে উঠে,,,

“তা মিসেস সাদাফ বড় বোনকে কিডন্যাপ করিয়ে বিয়ে দিলেন আর আমাকে জানালেন না কেন?”

আমি উনার কথাশুনে অবাক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকাই,উনি জানল কীভাবে?

“আপনি জানলেন কী করে?আমি যে আপু আর মেঘ ভাইয়াকে বিয়ে দিয়েছি।”

“আমি সব জানি মেডাম,কিন্তু তুমি আমাকে দাওয়াত না দিয়ে বিয়ে দিয়েছো এটা একদম ঠিক করো নি।পাঠকগনও অভিযোগ করেছে তুমি তাদের বিরিয়ানির ট্রিট দেও নি।”

“কথা না ঘুরিয়ে বলুন আপনি কীভাবে জানলেন?”

কথাটা হালকা রেগেই বলে উঠি,উনি সেটা দেখে আমাকে উনার আরেকটু কাছে টেনে নিয়ে আমার হাতে একটা চুমু দিয়ে বলে উঠে।

“বলছি না বলেই কত রাগ আর বললে যে কী করবা সেটাই ভাবছি আমি।”

“কথাটা বলে দিলেই আমাকে রাগ দেখাতে হয় না।”

“আচ্ছা বলব,কিন্তু প্রমিস করো কথাটা বললে তুমি আবার তোমার তায়কোয়ন্দোর স্পেশাল আইটেম গুলো এপ্লাই করবে না আমার উপর।”

“তায়কোয়ন্দো এপ্লাই করার মত কাজ করলে অবশ্যই এপ্লাই করব,তাই তাড়াতাড়ি বলুন।”

“না বাবা তবে বলা যাবে না,মাইর খাওয়ার শখ জাগে নি এখন আমার।”

“বলুন বলছি,নয়ত নাকে ঘুসি দিয়ে নাক বোঁচা করে ফেলব।”

উনি হাসল আমার কথায়।আমি উনার হাত থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে উনার বুকে হালকা করে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে বলে উঠলাম।

“বলুন বলছি।”

উনি আমার হাতটা উনার বুকে চেপে ধরে আকাশের দিকে স্থীর দৃষ্টিতে তাকায়,আমি ছাড়াতে চাইলে শক্ত করে চেপে ধরো।

“ছোটার চেষ্টা করে লাভ নেই,আমি না চাইলে,না ছাড়লে ছুটতে পারবে না।”

“এত কথা বলতে পারছেন আর যেটা জিজ্ঞেস করছি সেটা বলতে পারছেন না!আমার রাগ হচ্ছে এবার,তাড়াতাড়ি বলুন নয়ত আমি রেগে গেলে ভালো হবে না একদম।”

“তোমার উপর ২৪ ঘন্টা একজন আড়ালে থেকে নজর রাখে।”

“মানেহ?কিন্তু কেন?”(অবাক হয়ে)

” আমি বলেছি তাই।”

“সেটাই কেন বলেছেন?”

“এমনি।”

আমার দিকে তাকিয়ে ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে কথাটা বলে উঠে।উনার এমন ভাব দেখে রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে আমার।

“ঐ মিয়া ছাড়ুন ত আমাকে,আপনার এত হেয়ালি ভালো লাগছে না এখন।ভালো করে বলুন ত,এত রহস্য ভালো লাগছে না।”

“তবে শোন,তোমার লাইফ রিক্স আছে।আর তোমার সেফটির জন্যই এসব করা।তুমি হয়ত নিজেকে রক্ষা করতে পারবে কিন্তু তারপরও আমি চিন্তায় থাকি তোমাকে নিয়ে।তাই আমি যাতে তোমার সব খবর পেতে পারি তার জন্য লোক লাগিয়েছি।”

“লাইফ রিক্স!আমার?”

“হে তোমার,এখন দয়াকরে আর কোন প্রশ্ন করো না আমাকে।সময় হলে আমিই তোমাকে সবটা জানিয়ে দিব।তবে একটা কথা মনে রেখো আমি যা করব তোমার ভালোর জন্যই করব।আর আমি তোমার কোন ক্ষতি হতে দিব না,তোমাকে কেউ আঘাত করতে চাইলে আগে আমাকে ফেস করতে হবে।”

উনার কথাশুনে চিন্তা হচ্ছে,কী হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।আমার লাইফ রিস্ক!কিন্তু কার থেকে?আর কেন!এমন অনেক প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরে চলেছে।সাদাফ ভাই আমাকে চিন্তা করতে দেখে কথা ঘুরানোর জন্য বলে উঠে,,,

“কাল বাড়িতে কীভাবে মেনেজ করবে?”

উনার কথাশুনে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসি,আর মাথায় নতুন করে অনেক চিন্তারা ভর করে।সত্যিই ত কাল বাবাকে কীভাবে মেনেজ করব?বাবা যে রাগী জানলে ত দু বোনকেই কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসাইয়া দিব।কিন্তু ঐদিক দিয়ে ত আপুকেও বড় মুখ করে বলেছি বাবাকে মেনেজ করে আপুর সাথে কথা বলিয়ে সব ঠিক করে ফেলব।কিন্তু এখন কী হবে?কী করব?কীভাবে বাবাকে মেনেজ করব?
সাদাফ ভাইয়া এবার আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলে উঠে,,

“কোথায় হারালে?”

আমি আনমনেই বলে উঠি,,,

“না ভাবছি বাড়িতে কীভাবে মেনেজ করব?”

“মানেহ!তুমি ভাবো নি কীভাবে বাড়িতে মেনেজ করবে!”(অবাক হয়ে)

আমি মাথা নেড়ে না জানালে উনি এবার বসা থেকে দাঁড়িয়ে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে,,,

“না ভেবে এত বড় একটা কাজ কীভাবে করলে তুমি?আঙ্কেল জানতে পারলে কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়ে দিবে।”

আমি চিন্তায় হাতের নখ কামড়াচ্ছি,সত্যি এত বড় একটা কাজ করার আগে আমার ভেবে নেয়া উচিত ছিল।এখন ত চিন্তার জন্য কিছু ভাবতেও পারছি না।কেউ একজন ঠিকই বলেছিল “ভাবিয়া করিও কাজ করিও না ভাবিও না”।কথাটা যে কতটা ঠিক তা এখন হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছি।

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে