ভালবাসি শুধু তোমায় আমি পর্ব-০৯

0
1025

#ভালবাসি_শুধু_তোমায়_আমি
#পর্ব:৯
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

আরনিয়া হতভম্ব হয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। পড়ে যাওয়ার ভয়ে গলা জড়িয়ে ধরে। আরনিয়াকে গাড়িতে বসিয়ে ফাস্ট এইড বক্স এনে ছিলে যাওয়া জায়গাটা সেভলন দিয়ে পরিষ্কার করে আলতো হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়। আরনিয়া শুধু অবাকই হচ্ছে অপরিচিত ছেলেটার কেয়ার দেখে। যেখানে ছেলেটার তাকে ঝারি মারার দরকার সেখানে ছেলেটা তার কেয়ার করছে। আরনিয়াকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ছেলেটি ঠোঁট কামড়ে আলতো হেসে বলে,

এভাবে তাকিয়ে থাকলে প্রেমের পড়ার চান্স ১০০%।

আপনি কোন উগান্ডার প্রেসিডেন্ট যে আপনার প্রেমে পড়তে যাবো? আমি স্পর্শিয়া আহম্মেদ আরনিয়া কারো প্রেমে পড়ি না সবাই আমার প্রেমে পড়ে।

আপনি বুঝি উগান্ডার প্রেসিডেন্টের বউ?

একদম কথা প্যাচানোর চেষ্টা করবেন না। এটা আমি একদমই পছন্দ করি না। বাই দা রাস্তা আপনি কে বলোনতো?

তুমি আমাকে চিনো না?

আপনি কি কোনো সেলিব্রেটি যে আপনাকে চিনতে হবে?

আরনিয়ার কথা শুনে ছেলেটি মুচকি হেসে আরনিয়ার দিকে ঝুঁকে কানে কানে বলে,

আমি সব মেয়েদের কল্পনার রাজকুমার আদনান আহম্মেদ স্পর্শক।

স্পর্শকের নাম শুনে আরনিয়ার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। সে ভাবতেই পারছে না স্পর্শকের মতো একজন লোক তার এতো কেয়ার করছে। আরনিয়া চোখ বড় বড় করে স্পর্শকের দিকে তাকায়।

আপনি সত্যি বলছেন আপনি আদনান আহম্মেদ স্পর্শক? ( অবাক হয়ে)

এতো অবাক হবার কী আছে?

আপনি জানেন আপনাকে না দেখে শুধু মাত্র আপনার কথা শুনেই আমি আপনার ওপর ক্রাশিত। ( মুখ ফসকে)

আরনিয়া কথাটা বলে দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে। আরনিয়ার কথা শুনে স্পর্শক মুচকি হাসে। স্পর্শক হাত দিয়ে চুলগুলো নড়াচড়া করতে বলে,

দেখলেন তো আমি কোন উগান্ডার প্রেসিডেন্ট।

হুহ।

আপনার ঠিকানা বলেন আপনাকে বাসায় ড্রপ করে দিয়ে আসি।

খান ভিলা।

টুকটাক কথা বলতে বলতে স্পর্শকের গাড়ি এসে থামে খান ভিলার সামনে। আরনিয়া কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে যাচ্ছিলো। স্পর্শক আরনিয়ার হাত ধরে টেনে আবার সিটে বসিয়ে দেয়।

আপনার মতো অকৃতজ্ঞ আমি জীবনে দেখি নাই।

আপনার কোন দিক দিয়ে আমাকে অকৃতজ্ঞ মনে হচ্ছে?

সব দিক দিয়ে। আপনার জন্য আমি এতকিছু করলাম আর আপনি আমাকে সামান্য ধন্যবাদটুকুও জানালেন না।

আমি আপনাকে কিছু করতে বলেছিলাম? আপনি নিজের ইচ্ছেয় করছেন। তাই মন থেকে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা আসছে না। ইউ নো না মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো কিছু করতে নেই।

হুম। ধন্যবাদ না দিলেন এটলিস্ট নাম্বারটা তো দিয়ে যান।

কেনো?

আপনি আমার গাড়ির সামনে এক্সিডেন্ট করলেন ফোন দিয়ে আপনার খোঁজ খবর নেওয়া তো আমার কর্তব্য। তাই না?

আরনিয়া কিছু না বলে ফোন নাম্বার দিয়ে চলে যায়। আরনিয়ার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে স্পর্শক মুচকি হেসে নিজের গন্তব্যে পাড়ি জমায়। স্পর্শক আর আরনিয়ার মাঝে মাঝে ফোনে টুকটাক কথা হতো। কেটে কিছু দিন। আস্তে আস্তে তাদের সম্পর্কের গভীরতা বাড়তে থাকে। সদ্য প্রেমে পড়া প্রেমিক প্রেমিকাদের মতো সারা রাত জেগে ফোনলাপ। ঘুরাঘুরি করা সব মিলিয়ে তাদের দিন ভালোই কাটতে থাকে। কিন্তু কেউ কাউকে নিজের অনুভূতির কথা বলে না। একদিন স্পর্শক আরনিয়াকে প্রোপোজ করে। সেদিন আরনিয়া ভীষণ অবাক হয়। কারণ সে কল্পনাও করেনি যে স্পর্শকের মতো কেউ তাকে প্রোপোজ করতে পারে। প্রথম সে স্পর্শককে ফিরিয়ে দেয়। পরে স্পর্শকের পাগলামির কাছে হার মেনে স্পর্শকের ভালোবাসা গ্রহণ করতে হয়। স্পর্শক আর আরনিয়ার ভালোবাসার দিনগুলো ভালোই কাটতে থাকে। এভাবে কেটে যায় কয়েকটা বছর। হঠাৎ করেই এহসান খান আরনিয়ার বিয়ে ঠিক করে।

__________________

আরনিয়া অতীত থেকে বের হয়ে শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। কিন্তু রুমের কোথাও স্পর্শককে দেখতে পায় না। আরনিয়া আর কিছু না ভেবে টাওয়ালটা বেলকনিতে মেলে দেয়। রুমে এসে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমে যায়। কিন্তু স্পর্শককে দেখতে পায় না। পা বাড়ায় অনুর রুমের উদ্দেশ্যে। এখন তো দিনের বেশির ভাগ সময়ই স্পর্শক অনুর রুমে থাকে। আরনিয়াকে আর কষ্ট করে অনুর রুমে যেতে হয় না তার আগেই অনুর সাথে তার দেখা হয়ে যায়।

অনু আপু স্পর্শক কোথায়?

কিছুক্ষণ আগেই তো স্পর্শক তাড়াহুড়া করে কোথাও বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার আগে শুধু বলে গেছে তোমাকে বলতে স্পর্শকের আসতে দেরি হবে।

ওহ। ( মন খারাপ করে )

অনু ফোন স্ক্রল করতে করতে চলে যায়। আরনিয়া রুমে চলে আসে। স্পর্শকের এতোটা চেইন্জ আরনিয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। স্পর্শক কখনোও তাকে না বলে কোথাও যেতো না। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে যায় কিন্তু স্পর্শক একবারের জন্যও তাকে ফোন দেয়নি। আরনিয়া ছাতক পাখির মতে অপেক্ষা করছিলো স্পর্শকের ফোনের জন্য। কিন্তু স্পর্শক ফোন দেয়নি। অপেক্ষা করতে করতে আরনিয়া ঘুমিয়ে পড়ে।

__________________

আরনিয়ার ঘুম ভাঙে বিকেলে। ফোন চেক করে দেখে স্পর্শক ফোন দেয়নি। আরনিয়া মাথায় সাদা উড়না জড়িয়ে মন খারাপ করে ছাদে চলে যায়। ছাদে আরনিয়ার হাতে লাগানো একটা বেলিফুল গাছ আছে। বিয়ের আগে স্পর্শকের সাথে আরনিয়া মাঝে মাঝেই এই বাড়িতে আসতো। আরনিয়া বেলিফুল ছোঁয়ে ছোঁয়ে দেখছে আর স্পর্শকের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো ভাবছে। প্রত্যেকটা মুহূর্ত ছিল মধুর। সন্ধ্যার দিকে আরনিয়া ছাদ থেকে নিচে নেমে আসে।

অনুর রুম ক্রস করে যখন নিজের রুমে যাচ্ছিলো তখন অনু আর স্পর্শকের কথা শুনতে পায়। আধখোলা দরজাটা সম্পূর্ণ খোলে ফেলে। দরজা খোলে আরনিয়া স্তব্ধ হয়ে যায়। স্পর্শক অনুকে কিস করছে। দরজা খোলার আওয়াজে স্পর্শক আর অনু দুজনই দরজার দিকে তাকায়।

আরনিয়া চোখে পানি টলমল করছে। স্পর্শক কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরনিয়া কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে রুম থেকে চলে যায়। স্পর্শক ও আরনিয়ার পিছনে যায়। স্পর্শক বাইরে বের হওয়ার আগেই আরনিয়া গেইট দিয়ে বাড়ির বাইরে চলে যায়। আরনিয়া দৌড়াতে দৌড়াতে রাস্তায় চলে আসে পিছন থেকে একটা ট্রাক এসে আরনিয়াকে ধাক্কা মারে। আরনিয়া ছিটকে গিয়ে স্পর্শকের পায়ের কাছে পড়ে।

চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে