ভালবাসা_ও_বাস্তবতা

0
1915

ভালবাসা_ও_বাস্তবতা

#লেখক-মাহমুদুল হাসান মারুফ

#সাব্বির_অর্নব

ঢাকা শহরে এত জ্যাম, বিকালটা শেষ হতেই যেন থমকে যায় রাস্তা গুলো। এত মানুষ,  এত গাড়ি তার উপর আবার মেট্রোরেলের কাজ।
এই জ্যামের মাঝে বসে আছি আমি,
ওহ আমার তো পরিচয়ই দেয় হল নাহ আমি সাব্বির অর্ণব- পড়ালেখা শেষ করে জব করছি। জব ঢোকার সাথে সাথে যা হল বাবা- মা জোড় করে,  তাদের পছন্দ মত মেয়ে সাথে বিয়ে করিয়ে দিল। বাবা- মা সাথে বৌ নিয়ে শহরে বাসায় থাকি। আমার বৌয়ের নাম মেঘা।
আচ্ছা এসব কথা পড়ে হবে?
কথা বলতে বলতে জ্যাম শেষ হয়ে গেছে, আবহাওয়ার অবস্থা ভাল নাহ, যেকোনো মূহুর্তে বৃষ্টি আসতে পারে।
আহ্ কি রোমান্টিক ওয়েদার ?
হঠাৎ গাড়ির জানালার দেখি একটা কিউট পিচ্ছি মেয়ে তিনটা কালো গোলাপ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। এমনিতে কালো গোলাপ আমার পছন্দ তার উপর আর মেয়ে এত কিউট দেখেই মায়া লেগে গেল।
গাড়ি থামিয়ে গোলাপ গুলো কিনে নিলাম,  দুইটা গোলাপ  ছোট মায়াবতীকে দিয়ে দিলাম। এখন কেন জানি নিজেকে রোমান্টিক লাগতেছে?
বাসার সামনে এসে গাড়ি লক করে নামলাম, বাসায় গিয়ে চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে কেমন জানি মনে হচ্ছে। বিয়ে পর আজকে প্রথম এত তাড়াতাড়ি বাসায় আসলাম।  বাসায় টিভি চলতে, চুলায় রান্না হচ্ছে,  কিচেনে গিয়ে দেখলাম মেঘা নাই। বেডরুমের দিকে গেলাম,  কালো গোলাপটি পিছনে রাখলাম,  আজকে সারপ্রাইজ দিব।

বেডরুমে দরজা ধাক্কা দিয়ে যা দেখলাম, দাড়ানো থেকে ফ্লোরে বসে গেলাম। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি নাহ, এএএএটটটটা ককককিকি দেদদদখখললামম আআআমমমি ??। ছিঃ ছিঃ অন্য একটা পর পুরুষের সাথে, এটাকে কি পরকিয়া বলে?? আমার জানা নেই। আমার সময়গুলো যেন থমকে আছে, চোখে ঝাপসা দেখা শুরু করলাম।
( কিভাবে একটা স্ত্রী তার স্বামীকে ধোঁকা দেয়, কোনো ধর্ম কি এটাকে মেনে নেয়। এখানে ধোঁকা যে কেউ দিতে পারে,  শুধু যে স্ত্রী দেয় এমনটা নাহ স্বামীরা ও দেয়। আমার সমাজে এসব প্রতি নিয়তই হচ্ছে,  পত্রিকার পাতায় নিত্য দিন এসব খবর আসছে)
(বিয়ে শুধু দুই জনকে এক করে নাহ, দুটি পরিবারকে এক করে। আর সংসার হয় – স্বামী স্ত্রীর ভালবাসা, বিশ্বাস,  শ্রদ্ধা, সুখ দুঃখের অংশীদারীতে।  বিয়ে যার সাথেই হোক না কেন,  সুন্দর ভাবে দাম্পত্য জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।)
এখন আমার করনীয় কি? আমি জানি নাহ, মাথাটা পুরো হ্যাং হয়ে আছে। ভাবছিলাম কি করব, এমন সময় অনুভব করলাম আমার পুরে শরীর ভিজে গেছে। হালকা করে চোখ গুলো খুলে দেখি,  চোখ গুলো লাল লাল ভয়ংকর রাগী ভাবে আমার দিকে চেয়ে আছে?  এতক্ষণ কি আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিলাম!!!
(আমার তো বিয়েই হয় নাই কয়েকদিন পর আমার বিয়ে মেঘার সাথে। গতরাতে হিন্দি ব্ল্যাকমেল ছবিটা দেখে ঘুমাতে দেরি হয়ে গেছিলো। তাই ঘুমের মধ্যে এমন স্বপ্ন দেখছি) আমি চোখ খোলার সাথে সাথে,

মেঘা- তুই কি উঠবি, নাকি আরো এক বালতি পানি তের উপরে ঢালব। আমি দুই ঘন্টা ধরে তোর জন্য রাস্তায় দাড়িয়ে ছিলাম,  কত গুলো কল দিছি একটা ও রিসিভ করিস নাই।  এএএইই তোর ঘুম কবে শেষ হবে রে।

( যা দেখলাম এটা স্বপ্ন,  আল্লাহ তুমি মহান এমন যেন কখনো করো সাথে নাহ হয়, মনে মনে বললাম আমি। মেঘা আমার কাজিন, আমার থেকে বছর তিনেক ছোট, ছোট থেকেই আমরা দুজন দুজনকে পছন্দ করি , দেখতে মাশাল্লাহ,  এত মায়াবী, এত  কিউট,  এত মিষ্টি, সব সময় আমার কেয়ার করে কিন্তু সমস্যা একটাই রাগলে চেহারা লাল হয়ে যায় আর আমার সাথে রাগলে তুমি থেকে তুই এ চলে যায়। আসলে আমাদের বিয়ে ঠিক হয়েছে, আর চার দিন পর বিয়ে,  আজকে সকাল আটটায় শপিং যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু আমি তো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিলাম?)

আমি- আরে তুমি কখন আসলে,  তুমি বসো আমি দুই মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে আসছি।

উঠে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে গেলাম,  কোনোরকম ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে কালো কালারের শার্ট আর কালো প্যান্ট পড়ে তাড়াতাড়ি নিচে গেলাম। আরো লেট করলে ঘটনা খবর বাদ দিয়ে একশন ছবিতে ঘুরে যাবে। আমি বাসার নিচে নামতেই দেখি মেঘা রাস্তার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। মেঘা আমাকে আগেই বলেছিল রিকশা করে যাবে। ওর নাকি রিকশায় ঘুরতে ভালো লাগে।  আমি রিকশা ডাকতেই মেঘা আমার দিকে না তাকিয়ে রিকশায় উঠে গেল। আমিও ওর সাথে বসলাম কিন্তু ও আমার দিকে একবার ও তাকালো নাহ। রিকশা চলতে শুরু করলো,  প্রায় দশ মিনিট পর মেঘা রিকশা দাড়া করালো ।  আশেপাশে তাকিয়ে দেখি কোনো শপিং মল নেই,  একটা বড় রেস্টুরেন্ট।  মেঘা নেমেই চলে গেল,  আমি রিকশা ভাড়া দিয়ে মেঘা পিছু নিলাম। রেস্টুরেন্ট এর শেষে দিকে গিয়ে মেঘা বসল,  আমি ওর সামনা সামনি বসলাম।  মেঘা একটা কাচ্চি আর একটা ফালুদার দিতে বলল ওয়েটার কে। আমি বাসা থেকে নাস্তা করি নাই দেখে এখানে নিয়ে আসলো আমি বুঝতে পারলাম।
আমি- সরি, মেঘা?
মেঘা-…….
আমি- সরি তো পাখি ?
মেঘা-…….
আমি- পাখি আর এমন ভুল হবে নাহ, প্লিজ মাফ করে দেও?
মেঘা-???
আমি- মেঘা পাখি তুমি কথা নাহ বললে আমি খাব নাহ কিন্তু বলে দিলাম!
মেঘা- আচ্ছা তুমি কি চেঞ্জ হবা নাহ, এতো কেমনে ঘুমাও,  আমি না গেলে তো মনে হয় উঠতে নাহ। লাস্ট বার ক্ষমা করে দিলাম, বুঝলা?
আমি-?? আর হবে নাহ মেঘা পাখি, বিয়ের পর তো রাতে আর ঘুমাবো নাহ?
মেঘা- কিহ ?
আমি- আরে শুধু তোমাকে দেখবো, আল্লাহ তোমাকে এত সুন্দর করে বানিয়েছেন।  তোমার চোখ গুলো দেখলে মনে হয় আমি অজানায় হারিয়ে যাই, তোমার মুক্তো জরা হাসি দেখলে আমার বুকের বাম পাশটায় ব্যথ্যা শুরু হয়,  তোমার মিস্টি রসালো ঠোঁট গুলো দেখলে ¿

মেঘা- লজ্জায় লাল হয়ে বলল প্লিজ তোমার কথা বন্ধ করে তাড়াতাড়ি খাও?

খাওয়া শেষে আমরা শপিংমলে গেলাম,  মেঘা ওর মত মত কিনা কাটা করছে,  আমি শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি।  মাঝে মাঝে কিছু কাপড় দেখিয়ে বলে কেমন আমি বলি ভাল হয়েছে। মেঘা ওর আর আমার জন্য শপিং করল। বাকী সবার শপিং দুই পরিবার থেকে আগামীকালকে এসে করবে। শপিং শেষে রিকশায় উঠলাম,  আমার এক হাতে শপিং ব্যাগ।  অন্য হাতটি মেঘা হাতের কাছে নিয়ে ওর নরম মোলায়েম হাতটি ধরলাম,  মেঘা মুচকি হেসে আমার হাতটি ভালো ভাবে ধরল। আহা!  কি ফিল,  বলে বুঝানো যাবে নাহ।
মেঘা ফুসকার দোকান দেখে ফুসকা খাওয়ার বায়না করল,  আমার গেলাম ফুসকা দোকানে।  মেঘাকে চেয়ারে বসিয়ে,  ব্যাগ গুলো রেখে গেলাম ফুসকা আনতে। ফুসকা  প্লেট মেঘার সামনে ধরে, প্রপোজ করার স্টাইলে বসে মেঘাকে বললাম-

আমি- মেঘা পাখি,  অনেক ভালবাসি তোমাকে,  তোমাকে আমার জীবনে পেয়ে আমার জীবন ধন্য?

মেঘা- আমি ও তোমাকে অনেক ভালবাসি, অর্নব?

আমি- তুমি আমি ফুলের কলি,
ফুটব একসাথে।
তোমার আমার দেখা হবে ফুলশয্যা রাতে,
তুমি দিবে কিছু আমি দিব কিছু,  তা থেকে জন্ম নিবে নতুন একটা শিশু ??

মেঘা- এটা কি বললা তুমি ? কখন কোনটা বলতে হয় এটাও জান না?

আমি- ( এটা কি ভুল বললাম) আচ্ছা এটা কখন বলতে হবে??

মেঘা- ফুলশয্যা রাতে ??

—সমাপ্ত

(সবাইকে বিয়ের দাওয়াত। এটা আমার প্রথম গল্প, কেমন হল জানাবেন?)