ভালবাসার ঘর ২য় পর্ব

0
1469

#ভালবাসার_ঘর।
#বিন্দু_মালিনী।
#২য়_পর্ব।

_বিন্দুউউউ,কলিজা আমার দরজা টা খোলো প্লিজ।
আজ না আমাদের ২য় বাসর?
_তুই বারান্দায় বসে বসে বাসর কর বান্দর ছেলে।
আমি ঘুমালাম।
_না প্লিজ,এমন করেনা সোনা,কি হয়েছে আমাকে বলবে তো?
বউ আমার এত ক্ষেপলো কেন আমার উপর?

আমি কোন কথা না বলে চুপচাপ শুয়ে আছি।
হঠাৎ আমার চোখ লেগে গেলো।যখন ঘুমের মধ্যে আমার রণর কথা মনে হলো আমি তড়িঘড়ি করে যেন লাফিয়ে উঠে বসে পড়লাম।
মোবাইলে টাইম দেখি রাত তিন টা।
ও আল্লাহ্‌।রাত তিন টা বাজে আর আমি রণকে এত ক্ষণ পর্যন্ত বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছি।কিন্তু রণর তো কোন সারা শব্দ নেই।ও কি আমাকে ডাকে নি আর।তাড়াতাড়ি করে দরজা খুললাম।খুলে দেখি রণ গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে।আমি কোন কথা বললাম না।
কি বলবো বুঝতেও পারছিলাম না।

রণ প্রচন্ড রাগী একটা ছেলে।জেদ উঠলে খবর আছে।কিন্তু আজ এত চুপচাপ কেন।কিছুই বুঝতে পারছিনা।আমি দরজা খুলে দিয়ে রুমে ঢুকে গেলাম।যাতে ও একাই রুমে আসে।
কিন্তু ও তো আসছেনা।আমারো কেমন যেন নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।

আবার গেলাম বারান্দায়,গিয়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলাম রুমে।

ও এলো ঠিকই কিন্তু কোন কথা না বলেই একটা বালিশ নিয়ে ও পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো।

কি ভাবলাম আর কি হলো আল্লাহ্‌।ভেবেছি আমি নিজেই দুই তিন দিন রাগ করে ফুলে থাকবো রণর সাথে আর রণ আমাকে আদর করে রাগ ভাঙাবে।এক্সট্রা ভালবাসা পাওয়া যাবে।কিন্তু এ কি হয়ে গেলো।এখন তো দেখছি আমারই আমার বরের রাগ ভাঙাতে হবে।

আমিও পাশ ফিরে শুয়ে আছি।ভাবলাম কিছু ক্ষণ চুপ থাকি,দেখি কি করে ও।
মোবাইলে টাইম দেখি, বাজে রাত তিন টা ত্রিশ।
ও মারাত্মক রাগ করেছে,তা আমার বুঝা শেষ।আমি ওর অনেকটা কাছে গিয়ে বললাম,
_ও কলিজা!জান পাখি,ও আমার সোনা পাখি।সরি তো।

তার কোন সাড়াশব্দ নেই।

চুল গুলায় হাত বুলিয়ে আদর করতে করতে বললাম,
বাবুই,ও বাবুই,চুপ কেন তুমি।কথা বলো।
না মানে,আজ না আমাদের ২য় বাসর?

তবুও তার মুখে কোন কথা নেই।

কি করবো যে এখন আমি,
ওকে টান দিয়ে এ পাশে ঘুরালাম।কিন্তু সে আমার পাশে ঘুরলো না।ফ্যানের দিকে তাকিয়ে শুয়ে রইলো।

আর আমি সঙ্গে সঙ্গে ওর বুকের বাঁ পাশ টায় মাথা রাখলাম।
শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।তবুও তার কোন রিয়েকশন নেই।কি আর করার কপালে চুমু দিয়ে বললাম,সরি সোনা।
এত্ত গুলো সরি তো।ভুল হয়ে গেছে বউটার।ক্ষমা করে দাওনা প্লিজ।

রণ তবুও কথা বলছেনা আমার সাথে।শেষমেস এমন বদ রাগীই জুটলো আমার কপালে।যার সাথে কিনা প্রতিটা স্টেপ শান্ত ভাবে চলতে হবে।কোন ভাবেই রাগানো যাবেনা।রাগলেই খবর হয়ে যাবে।

তবুও কথা বলছেনা দেখে ওর বুক থেকে সরে গিয়ে খাটে বসে পড়লাম।বসেই দিলাম কান্না শুরু করে।

আর আমার রণ লাফিয়ে বসে পড়েছে।
_কলিজা,কলিজারে কাঁদছিস কেন তুই?তুই জানিস না তুই কাঁদলে আমার বুকের ভেতর ব্যথা করে?
কাঁদিস না প্লিজ।এই যে আমি কানে ধরেছি।সরি।বউ রে কাঁদিস না প্লিজ।তোর কান্না আমার সহ্য হয়না।

আমি আরো জোরেশোরে কাঁদতে লাগলাম।
রণ আমাকে ওর বুকের সাথে লেপ্টে জড়িয়ে নিলো।
আমার চোখের জলে ওর বুক ভিজে যাচ্ছে।

হঠাৎ ই ও আমাকে ছেড়ে দিলো।

মনে মনে ভাবলাম,আমার চোখের জলে ওর সমস্যা?টিশার্ট ভিজে যাচ্ছে বলে আমাকে সরিয়ে দিলো।

কান্না এদিকে আরো বেড়ে গেলো।

এখন দেখি ও খাট থেকে নেমে গেলো।নেমেই ড্রেসিংটেবিলের ড্রয়ার খুলে কি যেন করে আবার আমার কাছে চলে এলো।

_কান্না বন্ধ করে চোখ বন্ধ করো।
_না করবোনা।
_করোনা প্লিজ।
_উঁহু করবোনা।
_আচ্ছা চোখ বন্ধ করতে হবেনা।এই নাও।
_কি এটা?
_খুলেই দেখো।
_না খুলবোনা।
_আরে বাবা খুলে দেখোইনা।
_পারবোনা।
_আচ্ছা আমিই খুলছি।

রণ বক্স খুলেই আমার হাত টা ধরলো।
আর আমার আঙুলে একটা আংটি পরিয়ে দিলো।

_আসলে এটা তোমার বাসর রাতের গিফট।শুনেছি বাসর রাতে নাকি নতুন বউকে কিছু দেয়া লাগে।
তাই আরকি।

দিতে চেয়েছিলাম কাল রাতেই কিন্তু তোমাকে পেয়ে আমি সব ভুলে গেছি।এত কষ্টে পাওয়া বউ আমার।বউটাকে পেয়ে আমি দুনিয়া সহ গিফটের কথাও ভুলে গেছি।সরি ফর লেইট কলিজা।

আমি রণকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম।আরো কাঁদতে লাগলাম।
আহারে আমার বর টা আমাকে কত ভালবাসে।আর আমি কিনা ওকে কত ভুল বুঝেছিলাম।আসলে ভাবীদের কথা আর বান্ধবী গুলার কথা আমার শোনাই উচিৎ ছিলোনা।কতই না কষ্ট দিলাম আমি আমার রণকে।

_হয়েছে তো।আর কত কাঁদবে রে আমার বউ।থামনারে এখন কলিজা।

রণ আমার কপালে গালে নাকে চুমু দিলো আর আমি চুপ হয়ে গেলাম।

লজ্জা টা তো সারাদিন ছিলোনা।
এখন কেন আবার লজ্জারা উঁকি দিচ্ছে।
আমি লজ্জায় রণর বুকে মুখ লুকিয়ে নিলাম।আর রণ জড়িয়ে নিলো আমায় ওর বাহুডোরে।

এখন আমার সকাল শুরু হয় ওকে ভেজা চুলের ঝাপটায় ঘুম ভাঙিয়ে।
আর দিন শেষ হয় ও ঘুমিয়ে গেলে ওর কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে নিজেও ঘুমিয়ে পড়ে।

এখন আমি টুকটাক রান্না শিখছি ভাবীদের কাছ থেকে মায়ের কাছ থেকে রণকে রান্না করে সারপ্রাইজ দিবো বলে।

কিন্তু রান্না পারে এমন বরের সাথে সংসার করা শুনেছি অনেক কষ্টকর।
কারণ তারা নাকি বউদের রান্নায় অনেক ভুল ধরে।

অথচ আমার রণ খুব ভালো রান্না জানা সত্ত্বেও কোন দিন আমার রান্নার ভুল ধরেনা।

ও এখন প্রায়ই অফিস থেকে ফেরার সময় আমার জন্য গোলাপ ফুল,চকোলেট,আইসক্রিম নিয়ে আসে।

আমি ওকে বলি,কেন তুমি প্রায়ই আমার জন্য এগুলো নিয়ে আসো বলো তো?

ওর উত্তর‍,
আমার বউ এর মুখে এই অদ্ভুত রকমের সুন্দর মিষ্টি হাসিটা দেখার জন্য।

রণ প্রায়ই সুযোগ পেলে যখন তখন আমাকে এসে জড়িয়ে ধরে।

_আচ্ছা বউ তে যার এ্যালার্জি,সেই ছেলেটা এখন এত রোমান্টিক হলো কি করে শুনি?আর কিভাবে এত সে তার বউকে ভালবাসে?
_এ আবার কঠিন কিছু নাকি,তোমার ভালবাসায় মাটি পানি হয়ে যাবে,আর আমি তো মানুষ।
_থাক থাক হয়েছে হয়েছে।

আমি আর রণ মিলে সাজিয়ে নিয়েছি আমাদের ভালবাসার ঘর।গুছিয়ে নিয়েছি আমাদের সংসার।

দেখতে দেখতে আমাদের দুষ্টু মিষ্টি সংসারের এক বছর হয়ে যাচ্ছে আজ রাত ১২ টা বাজতেই।

তাই আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি রাত ১২ টার জন্য।

কিন্তু রণ দেখি আজ তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ছে,

_ঘুম পাচ্ছে রে বউটা।ঘুমালাম আমি।
_এখনি?
_রাত ১১.৩০।সকালে অফিস আছে না?তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো।উম্মাহ ঘুমালাম আমি।

আমিও পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম।
মনে মনে বলতে লাগলাম,ভালবেসেছো,আমাকে পেয়েছো,পাওয়া হয়ে গেছে।তাই এখন সব শেষ।
ম্যারেজ ডের কথা টাও মনে নাই।

অথচ বিয়ের আগে রোজ ডে থেকে শুরু করে আমার বার্থ ডে পর্যন্ত মনে থাকতো।
উইশ করতো।

আর আজ প্রথম বিবাহ বর্ষিকী টার কথা মনে নেই।
কাঁদতে কাঁদতে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।

আর একটু পরেই অনুভব করি কপালে আমার বরের ঠোঁটের স্পর্শ।

_হ্যাপী ম্যারেজ এ্যানিভার্সারি বউটা।

আমি রণকে জড়িয়ে ধরলাম।একটা চুমু দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

_তোমার মনে ছিলো?
_এটা কি বললে তুমি?এত সাধনার পর আজকের দিন টায় আমি আমার কলিজাটাকে পেয়েছি।
আজকের দিন টাকে কি আমি কোন দিন ভুলতে পারি?
_আই লাভ ইউ রণ।
_আই লাভ ইউ টু বউটা।

রণ একটা প্যাকেট খুলে একটা নীল রঙের শাড়ী খুলে আমার মাথায় পরিয়ে দিয়ে বল্লো।

_নীল শাড়ীতে আমার বউকে দারুণ লাগছে।

দিনে এটা পরে নিও।

_থ্যাংক ইউ সো মাচ রণ।
_উম্মাহ,লাভ ইউ।

সন্ধ্যা বেলা রণর বাসায় আমাদের বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে ছোট একটা পারিবারিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

আমাদের বাসার লোকজনকেও আমন্ত্রণ করা হয়।

আব্বু আম্মু আর বেলা (ছোট বোন)ও এসেছে।

সবাই মিলে আমাকে আর রণকে কেক কাটতে বলছে।

আমি রণর দেয়া নীল শাড়ীটা পরেছি আজ।

রণকে পাঞ্জাবিতে দারুণ লাগছে।নজর না লাগে কারো আমার বরটার উপর।

রণ আর আমি কেক কাটার জন্য সামনে গেলাম।আর সবাই চারিদিক থেকে আমাদের ঘিরে দাঁড়িয়েছে।

রণ আর আমি ছুড়ি ধরেছি,
মাত্রই কেক কাটবো।
আর সেই মুহূর্তে আমার মাথাটা একটা চক্কর দিয়ে উঠে আর আমার চোখ মুখ ঝাপসা হয়ে যায় আর আমি রণর উপর ঢলে পড়ি।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে